• free web stats
  • At-Tahreek
    কুরআন ও হাদীছের পথ-নির্দেশিকা

    ছিয়াম

    আল-কুরআনুল কারীম :

    1- يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيامُ كَما كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُون-

    (১) ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হ’ল, যেমন তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাক্বী বা আল্লাহ ভীরু হ’তে পার’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)

    2- أَيَّامًا مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْعَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَوَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَخَيْرٌلَهُ وَأَنْ تَصُومُواخَيْرٌلَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ-

    (২) ‘গণিত কয়েকটি দিন মাত্র। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পীড়িত হবে অথবা সফরে থাকবে, সে যেন এটি অন্য সময় পালন করে। আর যাদের জন্য এটি খুব কষ্টকর হবে, তারা যেন এর পরিবর্তে একজন করে অভাবীকে খাদ্য দান করে। যদি কেউ স্বেচ্ছায় বেশী দেয়, তবে সেটা তার জন্য উত্তম হবে। আর যদি তোমরা ছিয়াম রাখ, তবে সেটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝ’ (বাক্বারাহ ২/১৮৪)

    3- شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ-

    (৩) ‘রামাযান হ’ল সেই মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। যা মানুষের জন্য সুপথ প্রদর্শক ও সুপথের স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসের ছিয়াম রাখে। তবে যে ব্যক্তি পীড়িত হবে অথবা সফরে থাকবে সে এটি অন্য সময় গণনা করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, কঠিন চান না। যাতে তোমরা (এক মাসের) গণনা পূর্ণ কর। আর তোমাদের সুপথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)

    4- أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيامِ الرَّفَثُ إِلى نِسائِكُمْ هُنَّ لِباسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِباسٌ لَهُنَّ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتابَ عَلَيْكُمْ وَعَفا عَنْكُمْ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا ما كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عاكِفُونَ فِي الْمَساجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلا تَقْرَبُوها كَذلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آياتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ-

    (৪) ‘ছিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রীগমন সিদ্ধ করা হ’ল। তারা তোমাদের পোষাক এবং তোমরা তাদের পোষাক। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা খেয়ানত করেছ। তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতএব এখন তোমরা স্ত্রীগমন কর এবং। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা সন্ধান কর। আর তোমরা খানাপিনা কর যতক্ষণ না রাতের কাল রেখা থেকে ফজরের শুভ্র রেখা তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়। অতঃপর ছিয়াম পূর্ণ কর রাত্রির আগমন পর্যন্ত। আর তোমরা স্ত্রীগমন করো না যখন তোমরা মসজিদে ই‘তেকাফ অবস্থায় থাক। এটাই আল্লাহর সীমারেখা। অতএব তোমরা এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ স্বীয় নিদর্শন সমূহ বর্ণনা করেন মানুষের জন্য, যাতে তারা (সীমালংঘন থেকে) বাঁচতে পারে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৭)

    5- إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا-

    (৫) ‘নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও নারী, বিশ^াসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, ছিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহান প্রতিদান প্রস্ত্তত রেখেছেন’ (আহযাব ৩৩/ ৩৫)

    হাদীছে নববী :

    6- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَىْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِى فِيهِ- وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِى فِيهِ فَيُشَفَّعَانِ-

    (৬) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছিয়াম এবং কুরআন ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। ছিয়াম বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে দিনে তার খাদ্য ও প্রবৃত্তি হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি রাতে তাকে ঘুম থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতএব উভয়ের সুপারিশ বকুল করা হবে’।[1]

    7- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّه  صلى الله عليه وسلم قَالَ الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَجْهَلْ وَإِنِ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّى صَائِمٌ . مَرَّتَيْنِ ، وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ يَتْرُكُ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِى ، الصِّيَامُ لِى ، وَأَنَا أَجْزِى بِهِ  وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا-

    (৭) ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি ছিয়াম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই ছাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ  আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। ছিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ’।[2]

    8-  عَنْ سَهْلٍ رضى الله عنه  عَنِ النَّبِىِّ  صلى الله عليه وسلم- قَالَ  إِنَّ فِى الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ ، فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ- 

    (৮) সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে ক্বিয়ামতের দিন ছাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, ছাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।[3]

    9- عَنْ قَالَ حُذَيْفَةُ أَنَا سَمِعْتُهُ يَقُولُ  فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِى أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَجَارِهِ تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ-

    (৯) হুযাইফাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশীই মানুষের জন্য ফিৎনা। ছালাত, ছিয়াম এবং ছাদাক্বা-এর কাফফারা হয়ে যায়।[4]

    10- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ  رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ  صلى الله عليه وسلم  قَالَ  مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ-

    (১০) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদর ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ ছওয়াবের আশায় রামাযানে ছিয়াম পালন করবে, তারও অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করা হবে।[5]

    মনীষীদের বক্তব্য :

    ১. আলী (রাঃ) বলেন, ছিয়াম শুধু খাবার ও পানাহার থেকে বিরত থাকা নয় বরং অন্যায়, অসত্য ও অন্যায় কর্মকান্ডকে থেকে বিরত থাকা।[6]

    ২. আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, দ্বীনের ভিত্তি হ’ল ছালাত, যাকাত, হজ্জ ও ছিয়াম। তবে এদের মধ্যে সর্বোত্তম আমল হ’ল ছাদাক্বা এবং ছিয়াম।[7]

    ৩. ইমাম বাগাবী বলেন, রামাযান হ’ল ছবর তথা হাবসের মাস, যা যাবতীয় লোভনীয় খাদ্যসমূহ ও মুখরোচক অখাদ্য থেকে ছবর করতে শেখায়।

    ৪. ভারত গুরু শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী ছিয়ামের হাকবীকাত সর্ম্পকে বলেন, ফেরেশতা প্রবৃত্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ্অর্জন করা এবং পশু প্রবৃত্তিসমূহ পরিত্যাগ করা।[8]

    ৫. মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন, ছিয়ামের বিস্ময়কর দিক হ’ল- এ ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা ‘ছিয়াম কেবল আমারই জন্য’।[9]

    সারবস্ত্ত :

    ১. ছিয়াম হ’ল শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা।

    ২. গরীব, দুস্থদের ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করা।

    ৩. রিয়ামুক্ত তাক্বওয়াপূর্ণ ইবাদতের অনুপম দৃষ্টান্ত ও জান্নাত লাভের গুরুত্বপূর্ণ সোপান।

    [1]. বায়হাক্বী, আহমাদ, মিশকাত হা/১৯৬৩।

    [2]. বুখারী হা/১৮৯৪।

    [3]. বুখারী হা/১৮৯৬।

    [4]. বুখারী হা/১৮৯৫।

    [5]. বুখারী হা/১৯০১।

    [6]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৪২২।

    [7]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১১/৪৬।

    [8]. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, আবওয়াবুছ ছিয়াম ১/১৫৬।

    [9]. যাদুছ ছায়েম, পৃ. ২০।

     


    HTML Comment Box is loading comments...