সাংবাদিকতায় আহলেহাদীছ জামা‘আতের অবদান
(৩য় কিস্তি)
তৃতীয় প্রকার সাহিত্য ও ইতিহাস সম্পর্কিত, যার সংখ্যা ১৬টি :
১. ইত্তিহাদ (উর্দূ) পাক্ষিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল ১৯০৪ খৃঃ। এই পত্রিকাটি কাব্য রুচিসম্পন্ন ছিল। এতে সূক্ষ্ম কল্পনা থাকত। কিন্তু বেশী দিন চলেনি। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে যায়।
মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল ২. পর্দায়ে ইছমত (উর্দূ) পাক্ষিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক ১৯০০ খৃঃ।[1]
৩. পরওয়ানা (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল মীরাঠ, সম্পাদক মাওলানা আহমাদ শওকত মীরাঠী, প্রকাশকাল অজ্ঞাত। এই পত্রিকাটি কবিতা ও কাব্য-চর্চার ফুলের পাপড়ি ছিল। এতে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কবিদের কবিতা থাকত। বিশেষ করে তাঁর শিষ্যদের, যেগুলি তিনি সংশোধন করে দিতেন এবং সমালোচনাও করতেন।
৪. পায়ামে ইয়ার (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল জুন ১৮৮২ খৃঃ। এটি গবেষণাধর্মী, সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক পত্রিকা ছিল। এটি ইংরেজী মাসের শেষ দিনগুলিতে প্রকাশিত হত। এতে তিনটি অংশ থাকত। প্রথম অংশে সাহিত্যিক, নৈতিক, ঐতিহাসিক ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ এবং সাধারণ কবিতাসমূহ, দ্বিতীয় অংশে যোগ্য কবিদের নির্বাচিত কবিতা এবং তৃতীয় অংশে উপন্যাস থাকত।
মূলতঃ এই পত্রিকার পরিচালক ছিলেন মুন্সী নেছার আহমাদ এবং সম্পাদক হিসাবে তার নামই উল্লেখ থাকত। কিন্তু যাবতীয় কাজ মাওলানা শারার করতেন। মাওলানা শারার লিখেছেন, ‘মুন্সী নেছার আহমাদকে তার পত্রিকা সম্পর্কে যা কিছু গদ্যে লিখতে হত, তা আমিই লিখে দিতাম। বরং ‘পায়ামে ইয়ার’-এর বিন্যাস ও প্রকাশ মূলতঃ আমিই করতাম’।[2]
৫. তাহযীব (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল পাটনা, সম্পাদক মাওলানা সুহাইল আহমাদ আযীমাবাদী, প্রকাশকাল জানুয়ারী ১৯৫২ খৃঃ। এই পত্রিকাটি সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ রাজনৈতিক দিশারী আব্দুল কাইয়ূম আনছারীর (বিহার) তত্ত্বাবধানে চালু হয়েছিল। এর সম্পাদনা পরিষদে সুহাইল আযীমাবাদীর সাথে আব্দুল কাইয়ূম আনছারীও ছিলেন। ইলম ও আদবের অত্যন্ত মূল্যবান খিদমত আঞ্জাম দিয়ে এটি ১৯৫৪ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
৬. দিল আফরূয (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, প্রকাশকাল এপ্রিল ১৯১৫ খৃঃ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার। ৩১ পৃষ্ঠার এই পত্রিকায় শুধু উপন্যাস ছাপা হত এবং প্রত্যেক ইংরেজী মাসের ৩০ তারিখে প্রকাশিত হত। এতে কমপক্ষে দু’টি চিত্তাকর্ষক উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হত। তন্মধ্যে একটি কাল্পনিক ও নৈতিক এবং অন্যটি ঐতিহাসিক হত।
৭. দিলগুদায (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল জানুয়ারী ১৮৮৭ খৃঃ। এটি উর্দূ ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষণামূলক, সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক পত্রিকা ছিল। এতে রাজনৈতিক প্রবন্ধ কম এবং ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ বেশী থাকত। শারার ছাহেব লিখেছেন, ‘দিলগুদায সেই পত্রিকা যেটি সাহিত্য হিসাবে উর্দূর জগতে শুধু নিজেই খ্যাতি অর্জন করেনি; বরং উর্দূকে পূর্ণতার সর্বোচ্চ স্তরে এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী অবস্থায় পৌঁছিয়ে দিয়েছে’।[3]
এই পত্রিকায় শুধু শারার ছাহেবেরই প্রবন্ধ সমূহ থাকত। প্রথমে এটি শুধু ষোল পৃষ্ঠায় বের হত। যখন এর প্রচার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং ১৮৮৮ সালে দিলগুদায প্রেস খোলা হয়, তখন উপন্যাসের জন্য আরো ত্রিশ পৃষ্ঠা বৃদ্ধি করা হয়। কয়েক বছর পর ইতিহাসের আরো একটি অংশ বৃদ্ধি করা হয়। অতঃপর পরবর্তীতে জীবনীর জন্য আরো একটি অংশ বৃদ্ধি করা হয়। এবার এটি ৫৬ পৃষ্ঠাব্যাপী হত। ১৩৪৫ হিজরীর ১৭ই জুমাদাল আখেরাহ মোতাবেক ১৯২৬ সালের ২৪শে ডিসেম্বরে মাওলানার মৃত্যু হলে তাঁর বড় ছেলে মুহাম্মাদ ছিদ্দীক হাসান এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন এবং এই স্মৃতিকে একটা সময় পর্যন্ত জাগরুক রাখেন। ১৯৩২ সালে এই পত্রিকাটি হায়দারাবাদ, দাক্ষিণাত্য থেকে বের হতে শুরু করে। কেননা মুহাম্মাদ ছিদ্দীক স্থায়ীভাবে হায়দারাবাদে অবস্থান করছিলেন।
৮. রিসালায়ে সুখুনে সাঞ্জ (উর্দূ) ত্রৈমাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল ১৯১৭ খৃঃ। প্রথমে এই পত্রিকাটি ১৬ পৃষ্ঠায় পরিব্যাপ্ত ছিল। পরে আরো ১৬ পৃষ্ঠা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এই পত্রিকাটি তিনটি অংশে বিভক্ত ছিল : (১) প্রবন্ধমালা (২) পদ্য (৩) গদ্য। প্রবন্ধ অংশে ভারত বিজয়ী মুসলিম বীরদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থাকত এবং পদ্যাংশে বড় বড় কবিদের কবিতা থাকত। সাথে সাথে এই শর্ত থাকত যে, একজন কবির একসাথে মাত্র ৭টি কবিতাই প্রকাশিত হবে।
৯. রিসালায়ে মাহশার (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল ১৮৮২ খৃঃ। এটি রঙিন এবং কাব্যরুচিসম্পন্ন পত্রিকা ছিল। এতে সূক্ষ্ম কল্পনা থাকত। একটা সময় পর্যন্ত এতে ‘যামানায়ে জায়েযাহ’ শিরোনামে একটি ভিন্নধর্মী প্রবন্ধ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হত। উর্দূতে এটি নতুন রং ছিল। সাধারণভাবে সকল মানুষ এবং বিশেষভাবে ইংরেজী শিক্ষিতরা এই প্রবন্ধকে বেশী পসন্দ করে।
মাওলানা শারার তাঁর এক বন্ধু আব্দুল বাসিত মাহশারের নামে এ পত্রিকাটি বের করে তাকেই এই পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে যাহির করেছিলেন। মাওলানা শারার লিখেছেন, ‘১৮৮২ সালে মাহশার নামে আমি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা মৌলভী আব্দুল বাসিত মাহশারের নামে বের করি’।[4]
১০. যারীফ (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, প্রকাশকাল অজ্ঞাত, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার।[5]
১১. আল-ইরফান (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল ১৯০৬ খৃঃ। এ পত্রিকাটিও মাহশারের মতো ছিল। ‘ইত্তিহাদ’ পত্রিকার স্থলে এটি চালু করেছিলেন। কিন্তু এটিও বেশী দিন চলেনি। এক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। মাওলানা শারার এ পত্রিকাটি মৌলভী সাঈদুল হকের নামে চালু করেছিলেন। প্রবন্ধ সব মাওলানা শারারেরই থাকত।
১২. ‘আন্দালীব (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল মীরাঠ, সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ শু‘আইব আহমাদ কুদরাত মীরাঠী, প্রকাশকাল ১৯১২ খৃঃ। এটি একটি সাহিত্যিক পত্রিকা ছিল। এতে ভারতের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের প্রবন্ধসমূহ ছাড়াও গযল থাকত। বেশী দিন চলেনি। এক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়।
১৩. লিসানুছ ছিদক (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ২০শে নভেম্বর ১৯০৩ খৃঃ। এই পত্রিকায় গবেষণামূলক, নৈতিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রবন্ধমালা ছাড়াও আরো চারটি বিষয়ে প্রবন্ধ সমূহ প্রকাশিত হত। (১) মুসলমানদের সমাজ ও রসম-রেওয়াজ সংস্কার করা (২) উর্দূ ভাষার গবেষণাধর্মী সাহিত্যের পরিধি বিস্তৃত করা (৩) উর্দূ রচনাবলী পর্যালোচনা করা। ১৯০৫ সালের জানুয়ারীতে ‘ইছলাহে খিয়ালাত’ নামে আরো একটি বিষয় বৃদ্ধি করা হয় এবং সাথে সাথে ধর্মীয় প্রবন্ধ সমূহকেও স্থান দেয়া হয়।
এই পত্রিকাটি পুরা ১৮ মাস চলে। কয়েকবার দুই মাসের জন্য শুধু একটি সংখ্যা বের হয়। যেমন ১৯০৩ সালের নভেম্বর মাসের পরে ডিসেম্বর সংখ্যা বের হলে সেখানে প্রথম বর্ষ পূর্ণ হওয়ার ঘোষণা ছিল। ১৯০৪ সালের পুরা বছরে শুধু ৯টি সংখ্যা বের হয়। এর শেষ সংখ্যাটি ১৯০৪-এর আগস্ট ও সেপ্টেম্বর যৌথ সংখ্যা ছিল। এর মাধ্যমে দ্বিতীয় বর্ষ শেষ হয়ে যায়। ১৯০৫ সালে মাত্র একটি সংখ্যা বের হয়, যেটি এপ্রিল ও মে যৌথ সংখ্যা ছিল। অতঃপর চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
১৪. মিছবাহ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল শাশহানিয়া, সিদ্ধার্থনগর (ইউপি), সম্পাদক মাওলানা আব্দুল জলীল রহমানী, প্রকাশকাল অক্টোবর ১৯৫১ মোতাবেক মুহাররম ১৩৭১ হিঃ। ধর্মীয় ও সামাজিকের সাথে সাথে এই পত্রিকাটিও সাহিত্যিক ও গবেষণামূলক ছিল। এতে ‘তাসহীলুল কুরআন’ শিরোনামে মাওলানা রহমানীর একটি প্রবন্ধ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হত। যেটি ছিল কুরআন মাজীদের আয়াত সমূহের অনুবাদ ও তাফসীর। সাধারণ ও বিশেষ সবার জন্যই সমানভাবে উপকারী ছিল। এটি ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত চালু থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারী থেকে দ্বিতীয়বার চালু হয়। মাওলানা লিখেছেন, ‘কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর মাসিক মিছবাহ-এর প্রথম সংখ্যা কল্যাণ ও বরকতের পবিত্র মাসে পাঠকবৃন্দ হাতে পাচ্ছেন’।[6]
১৫. মুছহাফ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল ওমরাবাদ (মাদ্রাজ), সম্পাদক কাসেম শরীফ, প্রকাশকাল অজ্ঞাত। এই পত্রিকাটি ধর্মীয় ও সামাজিক ছাড়াও সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক ছিল এবং জামে‘আ আরাবিয়াহ দারুস সালাম ওমরাবাদ থেকে প্রকাশিত হত।
১৬. মুয়ার্রিখ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল ১৯১৬ খৃঃ। এই পত্রিকায় কোন না কোন দেশের নির্ভরযোগ্য ও বিস্তারিত ইতিহাস প্রকাশিত হ’ত। প্রথম দিকে মাওলানা শারারের প্রসিদ্ধ রচনা ‘তারীখে আরযে মুক্বাদ্দাস’-এর ৪৮ পৃষ্ঠা প্রকাশিত হয়েছিল।
১৭. মুহাযযাব (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার, প্রকাশকাল ১৯৯০ খৃঃ। বিষয়বস্ত্তর দিক থেকে এটি উচ্চাঙ্গের পত্রিকা ছিল। এতে সম্পাদকীয়, নির্দিষ্ট বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা এবং প্রবন্ধমালাকে বেশী স্থান দেয়া হত। এতে গবেষণামূলক, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক এবং সামাজিক প্রবন্ধ সমূহ ছাপানো হত। মাওলানা শারার লিখেছেন, ‘আমাদের ইচ্ছা রয়েছে যে, প্রাচীন বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী আলোচনা করার একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখব। আমাদের প্রাচীন বুযর্গ ও বিগত খ্যাতিমান ব্যক্তিরা এমন উচ্চমর্যাদার অধিকারী ছিলেন যে, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা তো রয়েছেই তাদের নামের মধ্যে এই প্রভাব রয়েছে যে, যখন তাদের নাম মুখে আসে তখন অন্তরে একটা জোশ সৃষ্টি হয়। এজন্য উত্তম হবে যে, আমরা আমাদের পত্রিকার প্রত্যেক সংখ্যাকে অতীতের কোন না কোন বিখ্যাত ব্যক্তির নামে উৎসর্গ করব। হয়তঃ তাদের বরকতে আমরাও সফলতা লাভ করব...’। এ উদ্দেশ্যে মুহাযযাব নিজের কাঁধে এই দায়িত্ব নেয় যে, যতদূর সম্ভব বিস্তারিতভাবে সালাফের কর্মকান্ড বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরবে।[7]
চতুর্থ প্রকার সাহিত্য ও রাজনীতি এবং চরিত্র সংশোধন সম্পর্কিত, যার সংখ্যা ১৬টি :
১. ইত্তিহাদ (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল অমৃতসর, পাঞ্জাব, সম্পাদক মুন্সী মাওলা বখশ কিশতা। এই পত্রিকার প্রকাশকাল জানা যায়নি। ১৯২১ সালে চালু ছিল। এটি একটি সাহিত্যিক, গবেষণামূলক এবং রাজনৈতিক পত্রিকা ছিল। এটি দেশীয় খবরাখবরও প্রকাশ করত।
২. আল-ইকদাম (উর্দূ), প্রকাশকাল অজ্ঞাত, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ১৯২৭ খৃঃ (নয়ারঙ্গে আলাম)।
৩. আল-বালাগ (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ১২ই নভেম্বর ১৯১৫ খৃঃ। আল-বালাগ-এর প্রথম তিন সংখ্যা তো নিয়মিত প্রকাশিত হয়। এরপর যৌথ সংখ্যা সমূহের সিলসিলা শুরু হয়। ৪র্থ ও ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এবং ৮ম ও ৯ম সংখ্যা যৌথ সংখ্যা হিসাবে বের হয়। শুধু ১০ম, ১১তম ও ১২তম সংখ্যা আলাদাভাবে বের হয়। কিন্তু এরপর দুই সংখ্যায় এমন অনিয়মতান্ত্রিকতা চলে আসে যে, ১৩ ও ১৪ সংখ্যা যৌথ ছিল এবং শেষ সংখ্যা ১৫, ১৬ ও ১৭ যৌথ সংখ্যা ছিল। আল-বালাগের সর্বশেষ সংখ্যা নং ১৭। কিন্তু মূলতঃ ১২ই নভেম্বর ১৯১৫ থেকে ৩১শে মার্চ ১৯১৬ পর্যন্ত এর মাত্র ১১টি সংখ্যা বের হয়। আল-হিলাল-এর মতো এটি একটি সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক পত্রিকা ছিল।
৪. পয়গাম (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯২১ মোতাবেক ২০শে মুহাররম ১৩৪০ হিজরী শুক্রবার। মাওলানা আযাদের তত্ত্বাবধানে এবং মাওলানা আব্দুর রাযযাক মালীহাবাদীর সম্পাদনায় এই পত্রিকাটি বের হওয়া শুরু হয়। এর সর্বমোট ১১টি সংখ্যা বের হয়। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯২১ সালে এর সর্বশেষ সংখ্যা বের হয়। এটিও সাহিত্যিক, সংস্কারধর্মী এবং রাজনৈতিক পত্রিকা ছিল।
১৭ই নভেম্বর ১৯২১ সালে ওয়েলসের রাজকুমার ভারতে আসেন। তার আগমনের পূর্বে দেশে তাকে অভ্যর্থনা জানানো বয়কট করার আন্দোলন চালানো হয়। পয়গামও এতে পুরোদমে অংশগ্রহণ করে। যে কারণে প্রথমে সম্পাদক হিসাবে মাওলানা আব্দুর রাযযাক মালীহাবাদী গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা হয় এবং দু’বছর কারাদন্ডের সাজা শুনানো হয়। এরপর ১০ই ডিসেম্বরে মাওলানা আযাদকে গ্রেফতার করা হয় এবং এক বছর সশ্রম কারাদন্ডের সাজা হয়। মাওলানা আযাদের জেলে যাওয়ার কারণে পয়গাম বন্ধ হয়ে যায়। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯২১ সালে এর সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সর্বমোট ১১টি সংখ্যা বের হয়েছিল। এ পত্রিকাটি খেলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলনের বিষয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। মাঝে মাঝে গবেষণামূলক প্রবন্ধমালা, তাফসীরুল কুরআনের কিছু আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তর পর্বও থাকত।
৫. খুদাঙ্গে নযর (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, মালিক মুন্সী নওবত রায়, প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর ১৮৯৬ খৃঃ (নায়রঙ্গে আলম)। লাক্ষ্ণৌ থেকেই মুন্সী নওবত রায় পত্রিকাটি বের করেছিলেন। প্রথমে তিনি এর সম্পাদকও ছিলেন। এর তিনটি অংশ ছিল। একটি গযলের, দ্বিতীয়টি গবেষণামূলক ও নৈতিক প্রবন্ধমালা এবং সাধারণের বোধগম্য কবিতার, তৃতীয়টি উপন্যাসের। এতে আল্লামা ইকবাল ও মুহসিন কাকূরাবীর প্রবন্ধসমূহ ছাপা হত। ১৯০৩ সালের শেষের দিক থেকে এর সাহিত্যাংশের সম্পাদনার দায়িত্বও মাওলানাকে সোপর্দ করা হয়।
৬. দারুস সালতানাত (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ১৯০৬ খৃঃ। এটি অন্যতম একটি প্রাচীন উর্দূ পত্রিকা। প্রথমে এর নাম ছিল ‘উর্দূ গাইড’। এর সম্পাদক ছিলেন মাওলানা আব্দুল বারী। কিছুদিন এটি বন্ধ ছিল। মাওলানা আবুল কালাম আযাদ যখন ‘ওয়াকীল’ (অমৃতসর) পত্রিকা থেকে আলাদা হয়ে কলকাতায় আসেন, তখন এর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অতঃপর পুনরায় প্রকাশিত হতে শুরু করে। কিন্তু পত্রিকার মালিকদের সাথে মাওলানার বনিবনা হয়নি। তারা কিছুটা সরকারের অনুগত টাইপের এবং সরকারের ইশারা-ইঙ্গিতের দিকে ভ্রূক্ষেপকারী ছিলেন। এজন্য মাওলানা দ্রুতই পত্রিকা থেকে আলাদা হয়ে যান।
৭. কওমী তানযীম (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল পাটনা, সম্পাদক ড. আব্দুল হাফীয সালাফীর ভাই ওমর ফরীদ, প্রকাশকাল অজ্ঞাত। এটি একটি রাজনৈতিক পত্রিকা ছিল। এতে বর্তমান পরিস্থিতির খবর সমূহ প্রকাশিত হত।
৮. আল-মিছবাহ (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ২৪শে জানুয়ারী ১৯০১ খৃঃ। এটি রাজনৈতিক, গবেষণামূলক এবং ঐতিহাসিক পত্রিকা ছিল। ১৯০১ সালের জানুয়ারীতে প্রকাশ হতে শুরু করে এবং ৪ মাস চালু থাকার পর বন্ধ হয়ে যায়। মাওলানা আযাদ লিখেছেন, ‘এতে গবেষণামূলক প্রবন্ধের জন্যও এক পৃষ্ঠা বরাদ্দ রেখেছিলাম। এক পৃষ্ঠা ইতিহাস ও জীবনীর জন্য বরাদ্দ ছিল। ইমাম গাযালী, নিওটন এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রভৃতি প্রবন্ধগুলো ঐ পৃষ্ঠাগুলির জন্য লিখেছিলাম’।[8]
৯. মুহাম্মাদিয়াহ (উর্দূ) প্রকাশস্থল কানপুর, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ১৯০১ খৃঃ (নায়রঙ্গে আলাম)।
১০. আন-নাদওয়া (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল অজ্ঞাত। এই পত্রিকাটি শিবলী নো‘মানীর সম্পাদনায় নাদওয়াতুল ওলামা লাক্ষ্ণৌ থেকে বের হয়েছিল। অক্টোবর ১৯০৫ থেকে মার্চ ১৯০৬ পর্যন্ত মাওলানা আবুল কালাম আযাদ এর সাথে যুক্ত ছিলেন। এরপর কোন কারণে সেখান থেকে আলাদা হয়ে যান।
১১. নায়রঙ্গে আলাম (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল নভেম্বর ১৮৯৯ খৃঃ। কবিতা ও ছন্দ চর্চা করার জন্য তিনি এ পত্রিকাটি চালু করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। এর মাত্র ৮টি সংখ্যা বের হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
১২. ওয়াকীল (উর্দূ) দু’দিন অন্তর, প্রকাশস্থল অমৃতসর, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ১৯০৬ খৃঃ। এই পত্রিকার মালিক ছিলেন শেখ গোলাম মুহাম্মাদ। এটি সপ্তাহে তিনবার প্রকাশিত হত। ‘আন-নাদওয়া’ থেকে আলাদা হওয়ার পর এপ্রিল ১৯০৬ সালে মাওলানা আযাদ অমৃতসরে পৌঁছে যান এবং এর সম্পাদনা শুরু করে দেন। অতঃপর ভাইয়ের মৃত্যুর কারণে নভেম্বর ১৯০৬ সালে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। এ পত্রিকায় তিনি সমগ্র পৃথিবীর রাজনীতি এবং মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে থাকেন। অতঃপর আগস্ট ১৯০৭ সালে তিনি অমৃতসরে আসেন এবং দ্বিতীয়বার ‘ওয়াকীল’-এর সম্পাদনা শুরু করেন। অতঃপর ১৯০৮ সালের জুলাই/আগস্টে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে চাকুরীচ্যুত হন।
১৩. হাযার দাবিস্তান (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল হায়দারাবাদ, দাক্ষিণাত্য, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম শারার। ১৮৮৪ সালের কথা। নওল কিশোর প্রেসের মালিকের নিকট মাওলানা শারার চাকুরীরত ছিলেন। প্রেসের মালিক তার বিশেষ প্রতিনিধি করে তাঁকে হায়দারাবাদ, দাক্ষিণাত্য পাঠান। সেখানে সাইয়িদ হাসান ‘হাযার দাবিস্তান’ নামে পত্রিকা বের করতেন। যার সম্পাদক ছিলেন সাইয়িদ মুহাম্মাদ সুলতান আকিল দেহলভী। সম্পাদক-মালিক দ্বন্দ্বে পত্রিকাটি বন্ধ ছিল। পত্রিকার মালিকের অনুরোধে মাওলানা শারার এক মাস এটির সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অতঃপর লাক্ষ্ণৌ চলে আসেন।
১৪. আল-হেলাল (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, প্রকাশকাল ১৩ই জুলাই ১৯১২ খৃঃ। এটি একটি সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক পত্রিকা ছিল। মুসলমানদের মাযহাবী নীচুতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্কার এর উদ্দেশ্য ছিল। যে ব্যাপারে আল-হেলাল পুরাপুরি সফল ছিল। দুই বছরে এর প্রচার সংখ্যা ২৬ হাযারে পৌঁছে গিয়েছিল। সে যুগের শিক্ষার অবস্থা এবং আল-হেলালের উচ্চ ইলমী মানদন্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠকদের এই সংখ্যা বিস্ময়কর ছিল।[9] কিন্তু ইংরেজ সরকারের প্রকাশনা আইনের কোপানলে পড়ে ১৮ই নভেম্বর ১৯১৪ সালের সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার ১০ই জুন ১৯২৭ সালে চালু হয় এবং ৬ মাস পর পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় (নায়রঙ্গে আলাম)।
১৪ই নভেম্বর ১৯১৪ সালের ৫ম বর্ষ ২০ সংখ্যা বের হওয়ার পর আল-হেলালের প্রকাশনার প্রথম পর্ব শেষ হয়ে যায় এবং এর তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ের ১ম সংখ্যা ১০ই জুন ১৯২৭ সালে বের হয়। মাওলানা আযাদ লিখেছেন, ‘যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। আল-হেলাল-এর প্রথম সংখ্যা ১৯১২ সালের জুনে প্রকাশিত হয়েছিল। (আল-হেলালের প্রথম সংখ্যায় ১৩ই জুলাই ১৯১২ লিখিত আছে)। ১৯১৪ সালে এর শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
অতঃপর নভেম্বর ১৯১৫ থেকে ‘আল-বালাগ’ নামে দ্বিতীয় প্রকাশনার ধারাবাহিকতা শুরু হয় এবং মার্চ ১৯১৬ সালে শেষ হয়ে যায়। এবার এটা প্রকাশনার তৃতীয় পর্ব। যেটি পুরা ১ বছর পর সম্পূর্ণ নতুনভাবে শুরু হয়। ৯ই ডিসেম্বর ১৯২৭ সংখ্যা ষান্মাসিকের শেষ সংখ্যা। আশা ছিল যে, ৭ই জানুয়ারী ১৯২৮ থেকে নতুন ষান্মাসিকের যাত্রা শুরু হবে। কিন্তু এটি কখনো বাস্তবে রূপ লাভ করেনি।
১৫. হিন্দে জাদীদ (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রাযযাক মালীহাবাদী, প্রকাশকাল ১৯২৯ খৃঃ (আনুমানিক)। এটি একটি রাজনৈতিক, সাহিত্যিক ও গবেষণামূলক পত্রিকা ছিল। সাধারণ মানুষের মাঝে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ছিল। এই পত্রিকার কিছু সংখ্যা জামে‘আ সালাফিইয়াহ বেনারসের গ্রন্থাগারে মওজুদ রয়েছে। ২০শে মার্চ ১৯৩৯, ১০ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা এখন আমার সামনে রয়েছে।
১৬. ইনকিলাব (উর্দূ) দৈনিক, প্রকাশস্থল লাহোর, সম্পাদক মাওলানা গোলাম রসূল মেহের, প্রকাশকাল রামাযান ১৩৪৫ হিঃ। এই পত্রিকায় দ্বীনী এবং দুনিয়াবী দু’ধরনের প্রবন্ধ এবং বিশ্বমানের দেশীয় খবর সমূহ প্রকাশিত হত। কিছু খবরের সমালোচনা ও পর্যালোচনাও থাকত এবং বছর পূর্তিতে ‘সালগিরাহ নম্বর’ নামে এর বার্ষিক সংখ্যা বের হত।
১৯২৯ সালের বার্ষিক সংখ্যা আমার সামনে আছে। ‘গুযারিশে আহওয়াল’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে মোহর ছাহেব লিখেছেন, ‘আজ ইসলামী মাস ও বছরের হিসাবে ইনকিলাব-এর জীবনের দু’বছর শেষ হচ্ছে এবং তৃতীয় বছরের দোরগোড়ায় এর পদযুগল পৌঁছে গেছে। ১৩৪৫ হিজরীর বরকতময় রামাযান মাসের শেষ দিন ছিল (যে মাসে এটি চালু হয়েছিল)। এটি ইনকিলাব-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সংখ্যা। গত বছরের বার্ষিক সংখ্যায় মুসলিম জাহানের ঐ সকল বুযর্গ ও মহান ব্যক্তিদের জীবনী বিশেষভাবে সংকলন করা হয়েছিল, যারা তাদের উন্নত কর্মকান্ডের কারণে তাওহীদের মানসপুত্রদের সম্মান ও গর্বের সবচেয়ে বড় ধন ছিলেন। ঐসব জীবনীগুলির সাথে বিভিন্ন মুসলিম দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনীগুলিও বিবৃত করা হয়েছিল। যাতে মুসলমানরা বিভিন্ন দেশের মুসলিম উম্মাহর জীবনসঞ্চারী ঘটনা সমূহ অবগত হয়ে যায়। এবার ঐ সকল মুজাহিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনীর প্রতি বিশেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যারা বিভিন্ন যুগে ও সময়ে ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য জিহাদ ও সংগ্রামের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন’।[10]
পঞ্চম প্রকার ধর্মীয়, সংস্কারমূলক ও নৈতিক বিষয় সম্পর্কিত, যার সংখ্যা ২০টি :
১. আফতাবে মেওয়াত (উর্দূ) পাক্ষিক, প্রকাশস্থল শুকরাওয়াহ, সম্পাদক মাওলানা হেকিম আব্দুশ শুকূর শুকরাবী, প্রকাশকাল ১৯২৮ খৃঃ। এই পত্রিকাটি ৮ বছর ধারাবাহিকভাবে চালু ছিল। অতঃপর মাঝখানে কিছু সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কয়েক মাস পরেই দ্বিতীয়বার চালু হয় এবং ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবে দ্বীনী খিদমত আঞ্জাম দিতে থাকে। এরপর চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এটি ধর্মীয় ও সংস্কারমূলক পত্রিকা এবং অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ মেওয়াত, পাঞ্জাব-এর মুখপত্র ছিল। এর শেষ পৃষ্ঠাগুলিতে সাংগঠনিক এবং দেশীয় খবর সমূহ প্রকাশিত হত।
২. ই‘তিদাল (উর্দূ) দ্বিমাসিক, প্রকাশস্থল ডুমুরিয়াগঞ্জ, সিদ্ধার্থনগর, সম্পাদক মাওলানা আবুল ‘আছ ওয়াহীদী, প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৮৮। এই পত্রিকাটি যেলা জমঈয়তে আহলেহাদীছ সিদ্ধার্থনগর ও বাস্তীর মুখপত্র ছিল। এতে ধর্মীয় ও সংস্কারমূলক প্রবন্ধমালা প্রকাশিত হত। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন মাওলানা আব্দুল ওয়াহিদ মাদানী। আগস্ট ১৯৮৯ মোতাবেক যিলহজ্জ ১৪০৯ হিজরী পূর্ণ এক বছর প্রকাশিত হওয়ার পর পুরা এক বছর এর প্রকাশনা বন্ধ থাকে। দ্বিতীয়বার আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ১৯৯০ মোতাবেক মুহাররম ও ছফর ১৪১১ হিজরীতে প্রকাশিত হয় এবং মাওলানা আবুল ‘আছ ওয়াহীদী সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
৩. ইনস্টিটিউট গেজেট (উর্দূ) দৈনিক, প্রকাশস্থল পাটনা, সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক বিন হেকিম ইরাদাত হুসাইন, প্রকাশকাল ১লা জুলাই ১৮৮৬ খৃঃ। এটি একটি সংস্কারধর্মী পত্রিকা ছিল। এর এক কলামে উর্দূ এবং বিপরীত কলামে ইংরেজী থাকত। এটি স্কুলের ছাত্রদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ছিল। এই পত্রিকাটি পাটনা এজুকেশনাল কমিটির মুখপত্র ছিল। প্রথমে সাপ্তাহিক ছিল। পরবর্তীতে ছাত্রদের জোরাজুরিতে দৈনিক করা হয়েছিল।
৪. আনওয়ার (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল পুরসা ইমাদ, সিদ্ধার্থনগর, সম্পাদক মাওলানা হামীদুল্লাহ সালাফী, প্রকাশকাল মে ১৯৮৬ খৃঃ মোতাবেক শা‘বান ১৪০৬ হিঃ। এই পত্রিকায় ধর্মীয়, সংস্কারমূলক এবং ইতিহাস ও জীবনীধর্মী প্রবন্ধমালা, মুসলিম বিশ্বের বিশেষ বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ খবরসমূহ, আধুনিক যুগের সমস্যাগুলির উপর পর্যালোচনা এবং ধর্মীয় কবিতা সমূহ প্রকাশিত হত। এর মাত্র একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
৫. আহলেহাদীছ (উর্দূ) পাক্ষিক, প্রকাশস্থল দিল্লী, সম্পাদক মাওলানা সাইয়িদ তাকরীয আহমাদ সাহসোয়ানী, প্রকাশকাল ১লা ফেব্রুয়ারী ১৯৫১ খৃঃ মোতাবেক ২৩শে রবীউল আখের ১৩৭০ হিঃ। ১৯৪৮ সালে ‘আহলেহাদীছ’ (অমৃতসর) বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) স্মরণে লেখক সংঘ (ইদারাতুল মুআল্লিফীন), দিল্লীর তত্ত্বাবধানে এই পত্রিকাটি বের করা হয়েছিল। এটি আহলেহাদীছ মাসলাকের মুখপত্র ছিল এবং ইংরেজী ১ ও ১৫ তারিখে প্রকাশিত হত। এটি একটি ধর্মীয় ও সংস্কারমূলক পত্রিকা ছিল। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল : (১) ইসলাম ধর্ম ও সুন্নতে নববীর প্রচার-প্রসার (২) সাধারণভাবে মুসলমানদের এবং বিশেষভাবে আহলেহাদীছদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী খিদমত করা। (৩) সরকার ও মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক সুরক্ষা করা এবং মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে পারস্পরিক সহযোগিতা শক্তিশালী করা। (৪) আহলেহাদীছ জামা‘আতকে তাদের স্বতন্ত্র গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য সমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং মানুষদের মাঝে সুন্নতে নববীর রূহ ফুঁকে দেয়া।
এর শেষে ‘ইনতিখাবুল আখবার’ (নির্বাচিত সংবাদ সমূহ) নামে স্বদেশ ও বিদেশের খবর সমূহ প্রকাশিত হত এবং ‘মুলকী মুত্তালা’ (দেশীয় সংবাদ) শিরোনামে দেশের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর পর্যালোচনাও থাকত। ‘মুতাফার্রিকাত’ (বিবিধ) শিরোনামে সাংগঠনিক খবরাখবর, দরসে হাদীছ এবং পৃথক শিরোনামে ফৎওয়া প্রকাশিত হত।
এই পত্রিকাটি চালু করার জন্য আহলেহাদীছ জামা‘আতের হাতেম তাঈ খ্যাত মরহূম হাফেয হামীদুল্লাহ ছাহেব সাইয়িদ তাকরীয আহমাদকে ১৯৫০ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর ৫০০ রূপী এবং ২২শে ডিসেম্বর মাওলানা আব্দুল লতীফ সালাফী দেহলভীর মাধ্যমে আরো ৫০০ রূপী প্রেরণ করেছিলেন। যার ভিত্তিতে ১৯৫০ সালের জানুয়ারী থেকে এটি চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কোন কারণে ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে এটি চালু হয় (তারাজিমে ওলামায়ে আহলেহাদীছ মেওয়াত)।
মাওলানা সাইয়িদ তাকরীয আহমাদের মৃত্যুর পর ১৯৬৮ সালের জুনে এর সম্পাদক হন মাওলানা আব্দুল জলীল রহমানী। ১৯৭৫ সালের আগস্টে মাওলানা মুখতার আহমাদ নাদভী অতঃপর ১৯৭৭ সালের জানুয়ারীতে হাফেয মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া এর সম্পাদক হন। এরপর ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এর সম্পাদক হন হেকিম আজমল খাঁ। কয়েক মাস ঐ নামেই হেকিম ছাহেব এটি চালু রাখেন। অতঃপর নাম কিছুটা পরিবর্তন করে ‘মাজাল্লায়ে আহলেহাদীছ’ রাখা হয়। যেটি অদ্যাবধি জারী আছে।
৬. আহলুস সুন্নাহ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল মাদরাসা দারুল কুরআন ওয়াল হাদীছ, কলকাতা, সম্পাদক মৌলবী আব্দুন নূর কলকাত্তাবী, প্রকাশকাল ১৯২৪ খৃঃ মোতাবেক ১৩৪২ হিঃ। কলকাতার ব্যবসায়ী হাজী শেখ আব্দুল ওয়াহ্হাবের নির্দেশনা অনুযায়ী এই পত্রিকাটি চালু হয়েছিল। এতে মাসের ধারাবাহিকতা ঠিক থাকত না। শুধু পত্রিকার সংখ্যা নম্বর উল্লেখ থাকত। এটি একটি ধর্মীয় পত্রিকা ছিল। এর কভারপেজে بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ آيَةً ‘একটি আয়াত হলেও আমার পক্ষ থেকে প্রচার করো’[11] লিখিত থাকত। ইসলামের সঠিক বিধান সমূহের তাৎপর্য ব্যাখ্যা, প্রশ্নোত্তর এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবনী আলোচনা করা এর উদ্দেশ্য ছিল।
৭. তাওহীদ (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল অমৃতসর, সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ দাঊদ গযনভী, প্রকাশকাল এপ্রিল ১৯২৭ মোতাবেক ২৭শে রামাযান ১৩৪৫ হিঃ। এটি একটি ধর্মীয় পত্রিকা ছিল। এর কভারপেজে লিখিত ছিলوَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘আর তোমরা হীনবল হয়ো না, চিন্তান্বিত হয়ো না। তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও’ (আলে ইমরান ৩/১৩৯)। এতে বিরোধীদের সমালোচনা সমূহের জবাব এবং ফৎওয়া প্রকাশিত হত। মুসলমানদের রাজনৈতিক ও দেশীয় বিষয়েও আলোচনা থাকত। পুরা সপ্তাহের সংবাদগুলির সারমর্ম এবং আরবী পত্র-পত্রিকা থেকে নির্বাচিত অংশের অনুবাদও প্রকাশ করা হত। এই পত্রিকার সাথে পরিশিষ্ট হিসাবে ‘ওয়াসীলা’ নামেও একটি পত্রিকা বের হত।
৮. আল-জামে‘আহ (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রাযযাক মালীহাবাদী, প্রকাশকাল ১লা এপ্রিল ১৯২৩ খৃঃ। এ পত্রিকাটি সচিত্র ছিল। এটি মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যের আহবান জানাত। মাত্র ৬ মাস চলে বন্ধ হয়ে যায়।
৯. যাদে আখিরাত (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল হায়দারাবাদ, দাক্ষিণাত্য, সম্পাদক মাওলানা শুকরুল্লাহ রহমানী, প্রকাশকাল ১৯৭২ খৃঃ। এই পত্রিকায় সীরাতে নববী এবং খেলাফতে রাশেদার ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও নছীহতমূলক প্রবন্ধমালা প্রকাশিত হত। এর কভারপেজে লিখিত থাকত وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ ‘প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা’ (হাশর ৫৯/১৮)।
১০. ছওতুল হাদীছ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল মুম্বাই, সম্পাদক যহীরুদ্দীন সালাফী, প্রকাশকাল মার্চ ১৯৮৮ খৃঃ। এই পত্রিকাটি আহলেহাদীছ মাসলাকের মুখপত্র ছিল। এতে গবেষণাধর্মী, সংস্কারমূলক ও সামাজিক প্রবন্ধ সমূহ প্রকাশিত হত। এর সর্বমোট প্রকাশকাল ৩ বছর ৬ মাস। আগস্ট ১৯৯১ ৪র্থ বর্ষ ৮ম সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
১১. আল-ফালাহ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল বেনারস, সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সবূর গোন্ডাবী, প্রকাশকাল ১৯৫৮ খৃঃ। এই পত্রিকায় দলীলপুষ্ট ধর্মীয়, সংস্কারমূলক ও সামাজিক প্রবন্ধমালা প্রকাশিত হত। এর কভারপেজে إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘অথচ মুমিনদের কথা তো কেবল এটাই হতে পারে যে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয় তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দেওয়ার জন্য, তখন তারা বলবে আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আর এরাই হল সফলকাম’ (নূর ২৪/৫১) লিখিত থাকত। কয়েক বছর চালু থাকার পর চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
১২. মুবাল্লিগ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল অমৃতসর, পাঞ্জাব, সম্পাদক মাওলানা ইসহাক হানীফ অমৃতসরী, প্রকাশকাল রামাযান ১৩৫৪ হিঃ। এতে সংস্কারমূলক, ধর্মীয় ও নৈতিক প্রবন্ধসমূহ প্রকাশিত হত। এই পত্রিকাটি সাধারণভাবে মুসলমানদেরকে এবং বিশেষভাবে আহলেহাদীছদেরকে জাতীয় ঐক্যের প্রতি উৎসাহিত করত। সালাফে ছালেহীন এবং উত্তম আদর্শের শিক্ষা দিত। পত্রিকার শেষাংশে স্বদেশ ও বিদেশের নির্বাচিত খবর সমূহ প্রকাশ করত।
১৩. মাজাল্লায়ে সালাফিইয়াহ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল দারভাঙ্গা, বিহার, সম্পাদক ড. সাইয়িদ আব্দুল হাফীয গিয়াবী, প্রকাশকাল ছফর ১৩৫৩ হিজরী মোতাবেক জুন ১৯৩৪ খৃঃ। এই পত্রিকাটি দারুল উলূম আহমাদিয়া সালাফিইয়াহ, দারভাঙ্গার পক্ষ থেকে বের হত। এতে ধর্মীয় ও সংস্কারমূলক প্রবন্ধ সমূহ থাকত। এতে অধিকাংশ প্রবন্ধ উক্ত মাদরাসার ছাত্রদের থাকত। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল : (১) ইসলামের সঠিক শিক্ষার প্রসার (২) সালাফ বা পূর্বসূরীদের আসল অবস্থা জাতির সামনে তুলে ধরা (৩) দারুল উলূম আহমাদিয়া সালাফিইয়াহ-এর অবস্থা সম্পর্কে জাতিকে অবগত করা (৪) ছাত্রদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের প্রতিনিধিত্ব করা এবং মুসলমানদের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা। সাথে সাথে ছাত্রদের মাঝে ইলম ও আদবের সঠিক রুচি সৃষ্টি করা।
১৪. মুহাদ্দিছ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লী, সম্পাদক মাওলানা নাযীর আহমাদ রহমানী আমলুবী, প্রকাশকাল ১৯৩৩ খৃঃ মোতাবেক ১৩৫২ হিঃ। এই পত্রিকাটি দারুল হাদীছ রহমানিয়ার মুখপত্র ছিল। এটি সকল ক্রেতার কাছে ফ্রী পাঠানো হত। এটি প্রত্যেক ইংরেজী মাসের ১ তারিখে প্রকাশিত হত। এতে ফির্কাবাযী মাযহাবী মতভেদ সমূহের উল্লেখ থাকত না। আর না কোন ব্যক্তি বা জামা‘আতের মনে কষ্ট দেয়া হত। বরং সাধারণ ইসলামী মাসআলা-মাসায়েল এবং ইসলামের নির্ভেজাল শিক্ষা সমূহের ব্যাপারে প্রবন্ধমালা প্রকাশিত হত। এতে সীরাতের শিক্ষণীয় ঘটনা সমূহও থাকত। সাধারণ সংস্কারমূলক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোকপাত করা হত এবং মুসলমানদেরকে দ্বীন ও দুনিয়ার বহু বিপদ সম্পর্কে অবগত করা হত। এতে দারুল হাদীছ রহমানিয়া দিল্লীর ছাত্রদের প্রবন্ধই বেশী থাকত। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন মাওলানা আব্দুল হালীম নাযিম। ১৯৩৫ সালের ২২শে আগস্ট তাঁর মৃত্যু হলে ১৯৩৫ সালের অক্টোবর থেকে মাওলানা নাযীর আহমাদ রহমানী এর সম্পাদনার দায়িত্ব সামলান। তাঁর সম্পাদনার সময় এতে চার পৃষ্ঠা বৃদ্ধি করা হয়েছিল এবং মে ১৯৪০ থেকে এতে ‘ফাতাওয়া’ নামে একটি নতুন কলাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। প্রশ্নের উত্তর সমূহ সাধারণতঃ শায়খুল হাদীছ ওবায়দুল্লাহ রহমানী দিতেন। ৩রা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে হিটলার যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘোষণা দেন, তখন কাগজ না পাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে জানুয়ারী ১৯৪৩ থেকে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। পুরা তিন বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় এপ্রিল ১৯৪৬ সাল থেকে চালু হয় এবং এপ্রিল ১৯৪৭-এর সর্বশেষ সংখ্যা বের হয়ে চিরদিনের জন্য মরহূম হয়ে যায়।
১৫. মুসলমান (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল সোহদারাহ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মজীদ খাদেম, প্রকাশকাল ১৯২০ খৃঃ। এই পত্রিকাটি মুসলমানদের নিত্যদিনের সমস্যাসমূহের সমাধান পেশ করত। ১৯৩৮ সাল থেকে সোহদারাহ-এর পরিবর্তে লাহোর থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল। এতে ধর্মীয় ও গবেষণামূলক প্রবন্ধমালা ছাড়াও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রবন্ধ সমূহও প্রকাশিত হত। এতে তাফসীরুল কুরআনের জন্যও একটা কলাম থাকত।
১৬. মেও গেজেট (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল শুকরাওয়াহ, সম্পাদক হেকিম মুহাম্মাদ আজমল খাঁ, প্রকাশকাল ১৯৫৮ খৃঃ। এটি ধর্মীয়, সংস্কারমূলক এবং নৈতিক পত্রিকা ছিল। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এটি নিয়মিতভাবে জামা‘আতী খিদমত আঞ্জাম দিতে থাকে। কিছু সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
১৭. নূরুল ঈমান (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল দিল্লী, সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ দাঊদ রায, প্রকাশকাল ডিসেম্বর ১৯৬৬ মোতাবেক রামাযান ১৩৮৬ হিঃ। এই পত্রিকাটি মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আরাভীর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হত। ধারাবাহিকভাবে ১৫ বছর এটি তাবলীগে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করতে থাকে। এতে ফৎওয়া এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সহ পবিত্র হাদীছের বোধগম্য ও সাবলীল অনুবাদ প্রকাশিত হত। বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত তাবলীগী ও দাওয়াতী সভা-সমাবেশের রিপোর্টও প্রকাশ করত। এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে মাওলানা রায লিখেছেন যার সারমর্ম এই যে, ‘আজ থেকে কমবেশী এক শতাব্দী পূর্বে দিল্লীতে শায়খুল কুল ফিল কুল মিয়াঁ নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভী অলিউল্লাহর মসনদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হেদায়াতের প্রদীপ জ্বালিয়ে ছিলেন। এই পত্রিকাটি সেই হেদায়াতের প্রদীপের আলোতে ঘুমন্ত জাতিকে জীবনের পয়গাম শোনায়’। এতে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও টীকা-টিপ্পনী সহ ছহীহ বুখারীর উর্দূ অনুবাদ নিয়মিত প্রকাশিত হত। উপরন্তু মিয়াঁ নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভীর দুর্লভ ফৎওয়া সমূহ প্রকাশিত হত। এটি ১৯৮১ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হত। তাঁর পর তাঁর পুত্র নাযীর আহমাদ এর কতিপয় সংখ্যা বের করেন। অতঃপর চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
১৮. নূরে তাওহীদ (উর্দূ) পাক্ষিক, প্রকাশস্থল লাক্ষ্ণৌ, সম্পাদক মাওলানা আকীল মউবী, প্রকাশকাল মুহাররম ১৩৭০ হিঃ। এই পত্রিকায় ধর্মীয় ও সংস্কারমূলক প্রবন্ধমালা প্রকাশিত হত।
১৯. আল-হেলাল (উর্দূ) ত্রৈমাসিক, প্রকাশস্থল তুলসীপুর (গোন্ডা), সম্পাদক মাওলানা আবুল ‘আছ ওয়াহীদী, প্রকাশকাল আগস্ট-অক্টোবর ১৯৮৯ মোতাবেক মুহাররম-রবীউল আউয়াল ১৪১০ হিঃ। এটি ধর্মীয় ও সাহিত্যিক পত্রিকা ছিল। এর অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদেরকে জিহাদ এবং জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে উৎসাহিত করা। ২/৩ সংখ্যা বের হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়।
২০. আল-হেলাল (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লোহারমান বাজার, বাস্তী, সম্পাদক মাওলানা হামিদ আনছারী আঞ্জুম। এটি একটি ধর্মীয় ও সংস্কারমূলক পত্রিকা ছিল। এর প্রকাশকাল জানা যায়নি। এর ডিসেম্বর ১৯৫৭ সংখ্যাটি আমার নিকট মওজুদ রয়েছে।
ষষ্ঠ প্রকার আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ সম্পর্কিত, যার সংখ্যা ২টি :
১. আল-মুজাহিদ (উর্দূ-ফার্সী) প্রকাশস্থল আফগানিস্তান সীমান্ত, সম্পাদক মাওলানা নূরুল হুদা, প্রকাশকাল ১৯৪০ খৃঃ। জামা‘আতে মুজাহিদীন-এর পক্ষ থেকে এই পত্রিকাটি চালু হয়েছিল। এটি মাওলানা মুহাম্মাদ বশীর শহীদের স্মরণে বের হত। এতে এটাও লিখিত ছিল যে, ‘শহীদে মিল্লাত গাযী মুহাজির মৌলভী মুহাম্মাদ বশীরের স্মরণে’। এই পত্রিকায় জিহাদের ফাযায়েল এবং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত প্রবন্ধমালা প্রকাশিত হত। এ প্রবন্ধগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উর্দূ ও ফার্সীতে এবং কখনো কখনো পশতু ভাষাতেও প্রকাশিত হত।
২. আল-মুহার্রিয (উর্দূ-ফার্সী), প্রকাশস্থল আফগানিস্তান সীমান্ত, সম্পাদক মাওলানা নূরুল হুদা, প্রকাশকাল ডিসেম্বর ১৯৩৮ খৃঃ। জামা‘আতে মুজাহিদীন-এর পক্ষ থেকে এই পত্রিকাটি চালু হয়েছিল। এর কভারপেজে লিখিত ছিল يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ ‘হে নবী! তুমি মুমিনদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ কর’ (আনফাল ৬৫)। এতে জিহাদ সম্পর্কিত প্রবন্ধমালা বের হত।
নোট : উপরোল্লেখিত পত্র-পত্রিকা ছাড়াও আহলেহাদীছ জামা‘আতের আরো কিছু পত্র-পত্রিকা রয়েছে, যা নিম্নে উল্লেখ করা হচ্ছে। সেগুলির কোন পত্রিকার হদিস আমি পাইনি। শুধু সেগুলির নাম ও বিজ্ঞপ্তি বই-পুস্তক এবং পত্র-পত্রিকায় পাওয়া যায়। অবশ্য ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর শুধু সেগুলির সম্পাদকবৃন্দ এবং প্রকাশস্থল জানতে পেরেছি।
- আফতাবে মাযহারে ছাদাকাত (উর্দূ) দৈনিক, প্রকাশস্থল চান্দূস, সম্পাদক মাওলানা মানযূর রহমানী।
- আখবারে মুহাম্মাদী (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মুহাম্মাদ আকরম খাঁ, প্রকাশকাল ১৯১০ খৃঃ।[12]
- ইশারা (উর্দূ) দৈনিক, প্রকাশস্থল ছাদেকপুর, পাটনা, সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম খিযির।
- ইশা‘আতুল ইসলাম (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল মুযাফফরপুর, বিহার, সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ আববাস বিদ্যার্থী, সংস্কৃত।
- পায়ামে হিন্দ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল সিউনী, সম্পাদক মাওলানা মাকবূল আহমাদ।
- তারজুমানুল হক (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল শ্রীনগর, কাশ্মীর।
- তাওহীদ (বাংলা) মাসিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবু তাহের বর্ধমানী।[13]
- রিয়াযে তাওহীদ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল দিল্লী, সম্পাদক মাওলানা ওবায়দুর রহমান পয়গম্বরপুরী, প্রকাশকাল ১৯৩৬ খৃঃ।
- আর-রায়হান (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল দিল্লী, সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ দাঊদ রাগেব।
- ছহীফায়ে হক্কানী (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল অমৃতসর, সম্পাদক বাবু মুহাম্মাদ ইসহাক।
- আযীয (উর্দূ) সাপ্তাহিক, প্রকাশস্থল করনল, সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল আযীয করনলবী রহমানী।
- কায়ছারে হিন্দ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল ফয়যাবাদ, সম্পাদক মুন্সী মুহাম্মাদ ফয়যাবাদী, প্রকাশকাল ১৯১৩ খৃঃ।
- আল-কালাম (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল মুম্বাই, সম্পাদক মাওলানা ওবায়দুর রহমান ক্বামার মুবারকপুরী, প্রকাশকাল ১৯৫০ খৃঃ।
- মুহাম্মাদী (বাংলা) মাসিক, প্রকাশস্থল কলকাতা, সম্পাদক মাওলানা আবু তাহের বর্ধমানী।[14]
- আল-মুরশিদ (মালায়ালাম) মাসিক, প্রকাশস্থল কেরালা, সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ আল-কাতেব।
- মিশকাতুল হুদা (মালায়ালাম) মাসিক, প্রকাশস্থল কেরালা, সম্পাদক আব্দুস সালাম দ্বীন।
- মা‘আরিফুল কুরআন (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল কানপুর, সম্পাদক মুহাম্মাদ আসলাম কানপুরী।
- মিল্লাত (উর্দূ) দৈনিক, প্রকাশস্থল দিল্লী, সম্পাদক সাইয়িদ জা‘ফর।
- হান্টার (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল লাহোর, সম্পাদক মোল্লা মুহাম্মাদ বখশ লাহোরী।
- নাযযারাহ (উর্দূ) মাসিক, প্রকাশস্থল মীরাঠ, সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মজীদ হামীদ মীরাঠী।
[লেখক : সাবেক শায়খুল জামে‘আহ, জামে‘আ সালাফিইয়াহ, বেনারস, ভারত। অনুবাদক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং ভাইস প্রিন্সিপাল, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী]
[1]. রাম বাবু সাক্সেনা, তারীখে আদাবে উর্দূ, গদ্যাংশ; হিস্ট্রি অব উর্দূ লিটারেচার।
[2]. (মাওলানা শারার, ‘আপবীতী’, দিলগুদায, লাক্ষ্ণৌ, জানুয়ারী ১৯৩৪।
[3]. মুহাযযাব, ১লা আগস্ট ১৮৯০ খৃঃ।
[4]. মাওলানা শারার, ‘আপবীতী’, দিলগুদায, জানুয়ারী ১৯৩৪।
[5]. রাম বাবু সাক্সেনা, তারীখে আদাবে উর্দূ, গদ্যাংশ; হিস্ট্রি অব উর্দূ লিটারেচার।
[6]. মিছবাহ, জানুয়ারী ১৯৬৪।
[7]. মুহাযযাব, বর্ষ ১, সংখ্যা ১, ১লা আগস্ট ১৮৯০ খৃঃ।
[8]. আযাদ কী কাহানী খোদ আযাদ কী যবানী, পৃঃ ২৭৫।
[9]. আত-তাওঈয়াহ, নয়াদিল্লী, এপ্রিল ১৯৯৪।
[10]. ইনকিলাব, বার্ষিক সংখ্যা ১৯২৯।
[11]. বুখারী হা/৩৪৬১।
[12]. উক্ত নামে মাওলানা আকরম খাঁ-র কোন পত্রিকা ছিল না। বরং তিনি উর্দূ দৈনিক ‘যামানা’-এর সম্পাদক ছিলেন।- অনুবাদক
[13]. মাওলানা বর্ধমানী বাংলাদেশে চলে আসার পর এর সম্পাদক হন মাওলানা আইনুল বারী। তিনি পত্রিকাটির নাম পরিবর্তন করে সাপ্তাহিক ‘আহলে হাদীস’ রাখেন।- অনুবাদক
[14]. দু’পাতাবিশিষ্ট এই মাসিক ও পরে সাপ্তাহিক পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন মাওলানা আববাস আলী (১৮৫৯-১৯৩২)। তারপর মাওলানা আকরম খাঁ (১৮৬৮-১৯৬৮)। মাওলানা বর্ধমানী এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে এর সম্পাদক ছিলেন না। - অনুবাদক