নফল ইবাদতের গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি জ্বিন ও ইনসানকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’। ‘আমি তাদের থেকে কোন রূযি চাই না এবং আমি চাই না যে তারা আমাকে খাওয়াবে’। ‘নিশ্চয় আল্লাহই রূযিদাতা এবং প্রবল পরাক্রমশালী’ (যারিয়াত ৫১/৫৬-৫৮)। আর এই ইবাদতের দু’টি ভাগ লক্ষ্য করা যায় যথা- (১) ফরয বা আবশ্যকীয় যা অবশ্যই করতে হবে; যা সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ। (২) নফল (সুন্নাত) বা অতিরিক্ত ইবাদত। যদিও সুন্নাতের মধ্যে কিছু নির্দেশসূচক সুন্নাত রয়েছে। যেগুলো নিয়মিত পালন করা যরূরী। এ সকল ইবাদত কখন কিভাবে কত পরিমাণে করতে হয় তা কুরআন ও হাদীছে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ইবাদত জেনে-বুঝে করতে পারলে অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যায়। ফরয ও নফল ইবাদতের মধ্যে নিহিত, গূঢ় তত্ত্ব, মাহাত্ম্য, গুরুত্ব, মর্যাদা বা ফযীলতের কথা জানতে পারলে উক্ত ইবাদতে মন বসে, তা সম্পাদনে হৃদয় আগ্রহী হয় ও ইচ্ছা শক্তি প্রবল হয়। এজন্য কুরআন ও হাদীছে বিভিন্ন ইবাদতের ফযীলত পৃথক পৃথকভাবে বর্ণিত হয়েছে।
ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেককে সর্বপ্রথম ছালাতের হিসাবে দিতে হবে। যদি ছালাতের সঠিক হিসাব দিতে পারে তাহ’লে সে সফলকাম হবে। আর যদি ফরয ছালাতে কোন ত্রুটি পাওয়া যায় তাহ’লে আল্লাহ তা‘আল বান্দার নফল ছালাত দিয়ে ফরযের ত্রুটি মিটিয়ে দিবেন। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি দয়া করবেন ও মানুষকে কঠিন বিপদ হ’তে মুক্ত করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ النَّاسُ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ أَعْمَالِهِمُ الصَّلاَةُ قَالَ يَقُولُ رَبُّنَا جَلَّ وَعَزَّ لِمَلاَئِكَتِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ انْظُرُوا فِى صَلاَةِ عَبْدِى أَتَمَّهَا أَمْ نَقَصَهَا فَإِنْ كَانَتْ تَامَّةً كُتِبَتْ لَهُ تَامَّةً وَإِنْ كَانَ انْتَقَصَ مِنْهَا شَيْئًا قَالَ انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِى مِنْ تَطَوُّعٍ فَإِنْ كَانَ لَهُ تَطَوُّعٌ قَالَ أَتِمُّوا لِعَبْدِى فَرِيضَتَهُ مِنْ تَطَوُّعِهِ ثُمَّ تُؤْخَذُ الأَعْمَالُ عَلَى ذَاكُمْ-
‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষের আমলসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম তাদের ছালাতের হিসাব নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের মহান রবব ফিরিশতাদের বান্দার ছালাত সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করবেন, দেখো তো সে তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি তাতে কোন ত্রুটি রয়েছে? অতঃপর বান্দার ছালাত পূণার্ঙ্গ হ’লে পূণার্ঙ্গই লিখা হবে। আর যদি তাতে ত্রুটি থাকে তাহ’লে মহান আল্লাহ ফিরিশতাদের বলবেন, দেখো তো আমার বান্দার কোন নফল ছালাত আছে কিনা? যদি থাকে তাহ’লে তিনি বলবেন, আমার বান্দার ফরয ছালাতের ঘাটতি তার নফল ছালাত দ্বারা পরিপূর্ণ কর। অতঃপর সকল আমলই এভাবে গ্রহণ করা হবে’।[1]
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয় অর্থাৎ ত্রুটি থাকাটাই স্বাভাবিক ব্যাপার তবে সেই ত্রুটি থেকে রক্ষা পাওয়ার একামাত্র উপায় হ’ল নফল ইবাদত। সে লক্ষ্যে ইবাদতের দিকে আমাদের মন যাতে আকৃষ্ট হয় এবং জান্নাত লাভের মাধ্যম হয়। সে জন্য কতিপয় নফল ইবাদতের গুরুত্ব কুরআন ও হাদীছের আলোকে তুলে ধরা হ’ল।
নফল ছালাতসমূহ :
ওযু করে নিয়মিত দু’রাকআত ছালাত আদায় করা :
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ-
‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে অন্তর ও স্বীয় মুখমন্ডলকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’।[2]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একদিন ফজরের ছালাতের পর রাসূল (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন হে বেলাল! মুসলমান হওয়ার পর তুমি কি এমন আমল করো যার নেকীর আশা তুমি অধিক পরিমাণ কর? কেননা আজ রাতে জান্নাতে আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। বেলাল (রাঃ) বললেন, মুসলিম হওয়ার পর আমি এমন কোন আমল করিনি যা আমার নিকট অধিক নেকীর কারণ হ’তে পারে। তবে আমি রাতে অথবা দিনে যখনই ওযূ করি তখনই সে ওযূ দ্বারা ছালাত আদায় করি, যা আদায় করার তাওফীক আল্লাহ আমাকে দেন’।[3]
ইশরাক্ব : ইশরাক্ব অন্যতম নফল ছালাত আল্লাহ রাসূল (ছাঃ) এটি পড়তেন।
চাশতের ছালাত : চাশতের নফল ছালাত যা মুমিন জীবনের বড় পাথেয়। যা রাসূল (ছাঃ)-এর নিজের আমলী যিন্দেগীর একটি অংশ ছিল। সুতরাং অধিক নেকীর জন্য এটি আদায় করা উচিৎ।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
فِى الإِنْسَانِ ثَلاَثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصِلاً فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ فِى كُلِّ يَوْمٍ بِصَدَقَةٍ. قَالُوا وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ النُّخَاعَةُ تَرَاهَا فِى الْمَسْجِدِ فَتَدْفِنُهَا أَوِ الشَّىْءُ تُنَحِّيهِ عَنِ الطَّرِيقِ فَإِنْ لَمْ تَقْدِرْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ-
‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হ’ল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে ছাদাক্বা করা। ছাহাবীগণ বললেন, কার শক্তি আছে এই কাজ করার, হে আল্লাহর নবী? তিনি বললেন, থুথু ইত্যাদি যা মসজিদে দেখবে তা দাফন করবে এবং কষ্টদায়ক বস্ত্ত যা রাস্তায় দেখবে তা সরিয়ে ফেলবে। যদি তা করতে না পার তাহলে চাশতের দু’রাক‘আত ছালাতই এজন্য যথেষ্ট’।[4]
দিনে রাতে ১২ রাক‘আত :
রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَلَّى فِىْ يَوْمٍ وَ لَيْلَةٍ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِى الْجَنَّةِ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ- ‘যে ব্যক্তি দিবারাত্রিতে ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে। যোহরের পূর্বে চার, পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই ও ফজরের পূর্বে দুই’।[5]
রাতে ছালাত আদায় করা :
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الأَرْحَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ -
‘হে মানুষ! তোমরা সালামের প্রচলন কর, খাদ্যদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কর, এবং লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা ছালাত পড়। এতে তোমরা নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।[6] হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ فِى الْجَنَّةِ غُرَفًا تُرَى ظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا وَبُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا. فَقَامَ أَعْرَابِىٌّ فَقَالَ لِمَنْ هِىَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ لِمَنْ أَطَابَ الْكَلاَمَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَدَامَ الصِّيَامَ وَصَلَّى لِلَّهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ.
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে একটি কক্ষ আছে, যার বাইরের অংশ ভিতর থেকে এবং ভিতরের অংশ বাহির থেকে দেখা যাবে। একজন বেদুঈন দাঁড়িয়ে বললেন, সে কক্ষ কার জন্য হবে হে রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি উত্তম কথা বলে, খাদ্যদান করে, নিয়মিত ছিয়াম পালন করে এবং রাত জেগে ছালাত আদায় করে যখন মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে’।[7]
ছালাতের পরে যিকর বা দো’আ পাঠ করা : ছালাতের পরে যিকির-আযকার পাঠ করার প্রভূত নেকী রয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِى جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ-
‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে পড়ে, অতঃপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে বসে থাকে, অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ ও ওমরাহর নেকী হয়।[8]
এছাড়া অনেকগুলো দো’আ রয়েছে যেমন, আবু হুরাইরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছালাতের পরে سُبْحانَ الله সুবহা-নাল্লাহ ৩৩ বার, اَلْحَمْدُ لله আলহামদু লিল্লা-হ ৩৩ বার, اَللهَ أَكْبَر আল্লা-হু আকবার ৩৩ বার সর্বমোট ৯৯ বার এবং ১০০ পূরণ করার জন্য (লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর) দো’আ পাঠ করবে, তার সমুদ্রের ফেনা বরাবর পাপ হ’লেও মাফ হয়ে যাবে’।[9]
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ছালাতের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করতে কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’।[10]
নফল ছিয়াম পালন :
নফল ছিয়ামসমূহ মুমিন জীবনের বড় সম্বল যা তাকে বেহেশতের কুঞ্জ-কাননে পোঁছিয়ে দিতে সক্ষম। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ صَامَ يَوْمًا فِى سَبِيلِ اللَّهِ بَعَّدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একদিন ছিয়াম পালন করবে আল্লাহ জাহান্নামকে তার নিকট হ’তে সত্তর বছরের পথ দূর করে দিবে’।[11]
মাসে তিনটি ছিয়াম :
রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَامَ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ فَذَلِكَ صِيَامُ الدَّهْرِ- ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম রাখে তা যেন সারা বছর ছিয়াম রাখার সমান’।[12]
শাওয়ালের ছিয়াম :
হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى أَيُّوبَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه أَنَّهُ حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ. আবু আইয়ূব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রামাযানের (ফরয) ছিয়াম রাখার পরে শাওয়াল মাসের ছয়টি ছিয়াম পালন করে, সে ব্যক্তি পূর্ণ এক বছরের ছিয়াম পালন করার সমান নেকী লাভ করে’।[13]
আরাফার ছিয়াম :
আরাফার দিন হ’ল বান্দার ক্ষমা লাভের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিনে ক্ষমার শুভক্ষণ নিয়ে হাযির হন। তাই আরাফার দিন প্রতিটি মুমিনকে এ সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। হাদীছে আছে,
عَنْ أَبِى قَتَادَةَ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّى أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ.
আবু কাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে আরাফার দিনের ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হ’লে, তিনি বলেন, উক্ত ছিয়াম গত এক বছর ও আগামী এক বছরের কৃত পাপ মিটিয়ে দেয়’।[14]
মুহাররমের ছিয়াম :
হাদীছে এসেছে,عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ. আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘রামাযানের ছিয়ামের পরে শ্রেষ্ঠ ছিয়াম হ’ল মুহাররমের ছিয়াম। আর ফরয ছালাতের পরে শ্রেষ্ঠ ছালাত হ’ল তাহাজ্জুদের ছালাত’।[15]
শা’বানের ছিয়াম :
রামাযানের পূর্বে শা‘বান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। রামাযানের প্রস্ত্ততি পর্ব এ মাস থেকে শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে বান্দার আমলসমূহ এ মাসেই আল্লাহ নিকট পেশ করা হয়। এজন্য রাসূল (ছাঃ) এ মাসে অধিকহারে ছিয়াম রাখতেন।
হাদীছে এসেছে,
أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَمْ أَرَكَ تَصُومُ شَهْرًا مِنَ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ.قَالَ ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِى وَأَنَا صَائِمٌ-
হযরত উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি বললাম হে রাসূল (ছাঃ)! আপনাকে শা’বান মাসে যত ছিয়াম রাখতে দেখি তত ছিয়াম অন্য মাসে রাখতে দেখিনা তার কারণ কি? রাসুল (ছাঃ) বললেন, এটা সেই মাস যে মাসে বান্দার আমল সমূহ আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। আর আমি আশা করি যে, আমার আমলসমূহ ছিয়াম অবস্থায় আল্লাহর নিকট পেশ করা হোক’।[16]
মিসওয়াক করা :
মুখপরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মিসওয়াক। মিসওয়াকের মাধ্যমে মুখের দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় এবং দন্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মিসওয়াক করা সুন্নাত। হাদীছে এসেছে,عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ- ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) এরশাদ করেন, মিসওয়াক হ’ল মুখ পরিস্কারকারী ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়’।[17] রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِى لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوء- ‘যদি আমি আমার উম্মতের উপরে কষ্টকর মনে না করতাম, তাহ’লে প্রত্যেক ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[18]
‘আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) মিসওয়াক করার নির্দেশ দেন এবং তিনি বলেন, নিশ্চয়ই বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাতে দাঁড়ায় তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়। অতঃপর ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা তার ক্বিরাতের নিকটবর্তী হয়। এমনকি ফেরেশতা তার মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে দেয়। তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয় তা ফেরেশতার পেটের ভিতর প্রবেশ করে। অতঃপর তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মিসওয়াক কর’।[19]
এমনকি ছিয়াম অবস্থায়ও ডাল বা পেস্টযুক্ত ব্রাশ দ্বারা মিসওয়াক করা যাবে। অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَسْتَاكُ، وَهُوَ صَائِمٌ مَا لاَ أُحْصِى أَوْ أَعُدُّ- ‘আমের ইবনু রাবী‘আ (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে ছিয়াম অবস্থায় অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি’।[20](চলবে)
লেখক : অনার্স ৪র্থ বর্ষ, সরকারী কলেজ, সাতক্ষীরা।
[1]. তিরমিযী, আবু দাঊদ হা/৮৬৪।
[2]. মুসলিম হা/৫৮৬; মিশকাত হা/২৮৮।
[3]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩২২; তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩২৬।
[4]. আবু দাউদ হা/৫২৪৪।
[5]. মুসলিম, মিশকাত হা/১১৫৯।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৪; মিশকাত হা/১৯০৭।
[7]. তিরমিযী হা/২১১২; মিশকাত হা/১২৩২।
[8]. তিরমিযী হা/৫৮৯।
[9]. মুসলিম হা/ ১৩৮০; মিশকাত হা/৯৬৭।
[10]. সিলসিলা ছহীহা হা/৯৭২।
[11]. বুখারী হা/২৮৪০।
[12]. তিরমিযী হা/৭৬৭।
[13]. মুসলিম হা/২৮১৫।
[14]. তিরমিযী হা/৭৫৪।
[15]. তিরমিযী হা/৪৪০; মিশকাত হা/ ২০৩৯।
[16]. নাসাঈ হা/২৩৫৭।
[17]. বুখারী তা‘লীক হা/১৯৩৪; নাসাঈ হা/৫; মিশকাত হা/৩৮১।
[18]. বুখারী তা‘লীক হা/১৯৩৪; মুসনাদে আহমাদ হা/১০৮৮০।
[19]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২১৩।
[20]. বুখারী হা/২৭ ।