কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমানের শাখা
(শেষ কিস্তি)
(৬৩) হাঁচিদাতার জন্য দো‘আ করা :
হাদীছে এসেছে, سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشَمِّتُوهُ فَإِنْ لَمْ يَحْمَدِ اللَّهَ فَلاَ تُشَمِّتُوهُ- (আবু মূসা (রাঃ)) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন হাঁচির পর আল-হামদুলিল্লাহ পড়ে তখন তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে (দো‘আ কর) আর যদি আলহামদুলিল্লাহ না পড়ে তাহ’লে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে জবাব দিওনা’।[1]
(৬৪) কাফের এবং ফিৎনা-ফাসাদকারীদের থেকে দূরে থাকা আর তাদের প্রতি কঠোর হওয়া :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ ‘মুমিনগণ যেন মুমিনদের ছেড়ে কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে তোমরা যদি তাদের থেকে কোন অনিষ্টের আশংকা কর। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর (প্রতিশোধ গ্রহণ) সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন। আর আল্লাহর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে’ (আলে ইমরান ৩/২৮)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী-নাছারাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তারা তাদের মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না (মায়েদা ৪/৫১)। তিনি আরো বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছে, তাদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্ত্ত মনে করে তাদের ও কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক’ (মায়েদাহ ৪/৫৭)।
মহান আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফিরদের সাথে যুদ্ধ কর। তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহ সর্বদা মুত্তাক্বীদের সঙ্গে থাকেন’ (তাওবাহ ৬/১২৩)। মহান আল্লাহ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنْتُمْ وَمَنْ يَفْعَلْهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করিও না, অথচ তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তা তারা অস্বীকার করেছে এবং রাসূলকে ও তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে এজন্য যে তোমরা তোমাদের রব আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছ। তোমরা যদি আমার পথে সংগ্রামে ও আমার সন্তুষ্টির সন্ধানে বের হও (তবে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না।) তোমরা গোপনে তাদের সাথে বন্ধুত্ব প্রকাশ কর অথচ তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর তা আমি জানি। তোমাদের মধ্যে যে এমন করবে সে সরল পথ হ’তে বিচ্যুত হবে’ (মুমতাহিনা ৬০/১)।
মহান আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের পিতা ও ভাইদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমানের মুকাবিলায় কুফরকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই সীমালংঘনকারী’ (তাওবাহ ৬/২৩)। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لاَ تَبْدَؤُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى بِالسَّلاَمِ، فَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ فِي طَرِيقٍ فَاضْطَرُّوهُ إِلَى أَضْيَقِه-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ইহুদী এবং নাছারাদের প্রথমে সালাম দিয়ো না। তোমাদের সাথে তাদের কারো রাস্তায় সাক্ষাৎ হলে রাস্তা সংকীর্ণ করতে বাধ্য কর’।[2] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِىٌّ.
‘তোমরা বন্ধু যেন মুমিন ব্যক্তি হয় আর তোমার খানা যেন মুমিন ব্যক্তি, মুত্তাক্বী ব্যক্তি খায়’।[3]
(৬৫) প্রতিবেশীর সম্মান করা :
মহান আল্লাহ বলেন,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا-
‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং আত্মীয়-পরিজন, ইয়াতীম, মিসকীন, আতমীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, পথের সাথী ও তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক (দাস-দাসী, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও গর্বিতকে ভালবাসেন না’ (নিসা ৪/৩৬)। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا زَالَ يُوصِينِى جِبْرِيلُ بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ-
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমাকে জিবরীল (আঃ) সর্বদা প্রতিবেশীর ব্যাপারে ওছীহত করতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয়, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীর ওয়ারিছ করে দিবেন’।[4]
(৬৬) মেহমানের সম্মান করা :
عَنْ أَبِى شُرَيْحٍ الْعَدَوِىِّ قَالَ سَمِعَتْ أُذُنَاىَ وَأَبْصَرَتْ عَيْنَاىَ حِينَ تَكَلَّمَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ قَالَ وَمَا جَائِزَتُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أَيَّامٍ، فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهْوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ-
আবু শুরায়হ আদাবী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন কথা বলেছিলেন তখন আমার দু’কান শুনছিল ও আমার দু’ চোখ দেখছিল। তিনি বলছিলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান দেখায় তার প্রাপ্যের বিষয়। জিজ্ঞেস করা হ’ল মেহমানের প্রাপ্য কি হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)? তিনি বললেন একদিন একরাত ভালভাবে মেহমানদারী করা আর তিনদিন হলে সাধারণ মেহমানদারী আর তার চেয়েও অধিক হলে তা হ’ল তার প্রতি দয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[5]
(৬৭) পাপীর পাপ দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখা :
মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ- ‘যারা ‘মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। বস্ত্ততঃ আল্লাহ জানেন কিন্তু তোমরা জানো না’ (নূর ২৪/১৯)।
عن ابن عمر رضى الله عنهما أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِى حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِى حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-
আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না এবং তাকে যালেমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার দোষ ত্রুটি ঢেকে রাখবেন’।[6]
(৬৮) বিপদ-আপদ-মুছীবতে ধৈর্যধারণ করা :
মহান আল্লাহ বলেন, وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ ‘তোমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা কর ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে। আর তা অবশ্যই কঠিন কাজ, তবে বিনীত বান্দাগণ ব্যতীত’ (বাক্বারাহ ২/৪৫)। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ- الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ- أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ- ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যাদের কোন বিপদ আসলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাব। তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে রয়েছে অফুরন্ত দয়া ও অনুগ্রহ। আর তারাই হ’ল সুপথপ্রাপ্ত’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫-৫৭)। মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ يَاعِبَادِ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ- ‘বল, হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। (মনে রেখ,) যারা এ দুনিয়ায় সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আর আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলগণ তাদের পুরষ্কার পাবে অপরিমিতভাবে’ (যুমার ৩৯/১০)।
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ رضى الله عنه أَنَّ نَاسًا مِنَ الأَنْصَارِ سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَعْطَاهُمْ، ثُمَّ سَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ، حَتَّى نَفِدَ مَا عِنْدَهُ فَقَالَ مَا يَكُونُ عِنْدِى مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ أَدَّخِرَهُ عَنْكُمْ، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللَّهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ، وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللَّهُ، وَمَا أُعْطِىَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে কিছু সংখ্যক আনছারী ছাহাবী আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন, পুনরায় তাঁরা চাইলে তিনি তাদের দিলেন। এমনকি তার নিকট যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আমার নিকট যে মাল ছিল তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখিনা। তবে যে চাওয়া হ’তে বিরত থাকে আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। আর যে পরমুখাপেক্ষী হয় না; আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ তাকে ছবর দান করেন। ছবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নে’মত কাউকে দেয়া হয়নি’।[7]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ يُوعَكُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ تُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا قَالَ أَجَلْ إِنِّى أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلاَنِ مِنْكُمْ قُلْتُ ذَلِكَ أَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ قَالَ أَجَلْ ذَلِكَ كَذَلِكَ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا سَيِّئَاتِهِ، كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا-
আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমাদের দু’জন ব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয় আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম, এটি এজন্য যে আপনার জন্য দ্বিগুন ছওয়াব। তিনি বললেন, হ্যাঁ; তাই। কেননা যে কোন মুসলিম দুঃখ কষ্টে পতিত হয় তা একটা কাঁটা কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলিকে মুছে দেন, যেমন গাছ থেকে পাতাগুলি ঝরে পড়ে’।[8]
(৬৯) সংযমী হওয়া, আশা-প্রত্যাশা কমানো :
মহান আল্লাহ বলেন, فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً فَقَدْ جَاءَ أَشْرَاطُهَا فَأَنَّى لَهُمْ إِذَا جَاءَتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ ‘সুতরাং তারা কি কেবল এই অপেক্ষা করছে যে, ক্বিয়ামত তাদের উপর আকস্মিকভাবে এসে পড়ুক? অথচ ক্বিয়ামতের আলামতসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং ক্বিয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৮)।
عَنْ سَهْلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ هَكَذَا وَيُشِيرُ بِإِصْبَعَيْهِ فَيَمُدُّ بِهِمَا সাহল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আমাকে পাঠানো হয়েছে ক্বিয়ামতের সঙ্গে এরকম ভাবে। এ বলে তিনি তার দু’আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে সে দু’টিকে প্রসারিত করলেন’।[9]
মহান আল্লাহ বলেন, وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ- ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে রয়েছে। আর ক্বিয়ামতের ব্যাপারটি তো চোখের পলকের ন্যায় বা তার চাইতে নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাশালী’ (নাহল ১৬/৭৭)।
حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، فَإِذَا رَآهَا النَّاسُ آمَنَ مَنْ عَلَيْهَا، فَذَاكَ حِينَ لاَ يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا، لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে আর লোকজন তা দেখবে, তখন সকলেই ঈমান আনবে’।[10]
এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণী : هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا أَنْ تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا قُلِ انْتَظِرُوا إِنَّا مُنْتَظِرُونَ- ‘তারা কি কেবল এই অপেক্ষায় রয়েছে যে, তাদের কাছে (মৃত্যুর) ফেরেশতা আসবে কিংবা স্বয়ং তোমার প্রতিপালক আসবেন (অর্থাৎ তাঁর গযব আসবে) অথবা তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে। (মনে রেখ) যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন (যেমন ক্বিয়ামত প্রাক্কালে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠা) এসে যাবে, সেদিন তাদের ঈমান কোন কাজে আসবে না, যারা ইতিপূর্বে ঈমান আনেনি অথবা তাদের ঈমান দ্বারা কোন সৎকর্ম করেনি। বলে দাও যে, তোমরা অপেক্ষায় থাক, আমরাও অপেক্ষায় রইলাম’(আন‘আম ৮/১৫৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ نَشَرَ الرَّجُلاَنِ ثَوْبَهُمَا بَيْنَهُمَا فَلاَ يَتَبَايَعَانِهِ وَلاَ يَطْوِيَانِهِ، وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدِ انْصَرَفَ الرَّجُلُ بِلَبَنِ لِقْحَتِهِ فَلاَ يَطْعَمُهُ، وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَهْوَ يَلِيطُ حَوْضَهُ فَلاَ يَسْقِى فِيهِ، وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ رَفَعَ أُكْلَتَهُ إِلَى فِيهِ فَلاَ يَطْعَمُهَا-
‘ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে (এ অবস্থায়) যে, দু’জন ব্যক্তি (বেচা- কেনার) জন্য পরস্পরের সামনে কাপড় ছড়িয়ে রাখবে কিন্তু তারা বেচা কেনার সময় পাবে না। এমনটি তা ভাঁজ করারও সময় পাবে না। আর ক্বিয়ামতের (এমন অবস্থায়) অবশ্যই সংঘটিত হবে যে কোন ব্যক্তি তার উষ্ট্রীর দুধ দোহন করে রওয়ানা হবে কিন্তু তা পান করার সুযোগ পাবে না। আর ক্বিয়ামত (এমন অবস্থায়) সংঘটিত হবে যে কোন ব্যক্তি (তার পশুকে পানি পান করানোর জন্য) চৌবাচ্চা তৈরী করবে কিন্তু সে এ থেকে পানি পান করানোর সময়ও পাবেনা। আর ক্বিয়ামত (এমন অবস্থায়) ক্বায়েম হবে যে, কোন ব্যক্তি তার মুখ পর্যন্ত লোকমা উঠাবে কিন্তু সে তা খাওয়ার সময় ও সুযোগ পাবে না’।[11]
অতএব মানব জাতির উচিত দুনিয়ার পিছে না ছুটে সুস্থ অবস্থায় এবং অবসর সময়গুলি কল্যাণকর কাজে লাগানো যাতে করে পরকালের জন্য পাথেয় জমা হয়।
عَنْ أَبِيهِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ، الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এমন দু’টি নে’মত আছে যে দু’টোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। তা হচ্ছে সুস্থতা আর অবসর (সময়)’।[12]
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِى إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِى النِّسَاءِ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, দুনিয়া হচ্ছে সুন্দর সবুজ-শ্যামল, জাকজমকপূর্ণ, আল্লাহ তা‘আলা সেখানে তোমাদের প্রতিনিধি করেছেন, তোমরা কেমন আমল করছো সেটা তিনি দেখবেন। অতএব দুনিয়ার (ফিৎনা থেকে) বেঁচে থাক এবং মহিলাদের ফিৎনা থেকেও বেঁচে থাক, কেননা যে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম যে ফিৎনাটা পতিত হয়েছিল সেটি হচ্ছে মহিলাদের ফিৎনা’।[13]
(৭০) আত্মমর্যাদাবোধ রক্ষা করা এবং হারাম কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা :
মহান আল্লাহ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, যারা আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়’ (তাহরীম ৬৬/৬)। মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ-وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাযত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত। আর তারা যেন তাদের মাথার কাপড় বক্ষদেশের উপর রাখে (অর্থাৎ দু’টিই ঢেকে রাখে)। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজ পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগিনীপুত্র, নিজেদের বিশ্বস্ত নারী, অধিকারভুক্ত দাসী, কামনামুক্ত পুরুষ এবং শিশু যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অবহিত নয়, তারা ব্যতীত। আর তারা যেন এমন ভাবে চলাফেরা না করে যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’ (নূর /৩০-৩১)।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللَّهِ، مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ، وَمَا أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ الْمَدْحُ مِنَ اللَّهِ- আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদা শীল কেউ নয় এবং এ কারণেই তিনি সকল অশ্লীল কাজ হারাম করেছেন আর (আল্লাহর) প্রশংসার চেয়ে আল্লাহর অধিক প্রিয় কিছু নেই’।[14]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ إِنَّ اللَّهَ يَغَارُ وَغَيْرَةُ اللَّهِ أَنْ يَأْتِىَ الْمُؤْمِنُ مَا حَرَّمَ اللَّهُ আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে আল্লাহ তা‘আলার আত্মমর্যাদা বোধ আছে এবং আল্লাহর আত্মমর্যাদাবোধ এই যে, যেন কোন মু’মিন বান্দা হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে না পড়ে’।[15]
(৭১) নারীর বেশধারী পুরুষের নিকট নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ عِنْدَهَا وَفِى الْبَيْتِ مُخَنَّثٌ، فَقَالَ الْمُخَنَّثُ لأَخِى أُمِّ سَلَمَةَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِى أُمَيَّةَ إِنْ فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الطَّائِفَ غَدًا أَدُلُّكَ عَلَى ابْنَةِ غَيْلاَنَ ، فَإِنَّهَا تُقْبِلُ بِأَرْبَعٍ وَتُدْبِرُ بِثَمَانٍ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يَدْخُلَنَّ هَذَا عَلَيْكُنَّ- উম্মু সালামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী (ছাঃ) তার কাছে থাকাকালে সেখানে একজন মেয়েলী পুরুষ ছিল। ঐ মেয়েলী পুরুটি উম্মু সালামার ভাই আব্দুল্লাহ ইবনু আবু উমাইয়াকে বলল, যদি আগামীকাল আপনাদের কে আল্লাহ তায়েফ বিজয় দান করেন, তবে আমি আপনাকে গায়লানের মেয়েকে গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা সে এমন (মেদবহুল) যে সে সম্মুখ দিকে আগমন করলে তার পেটে চার ভাঁজ পড়ে আর পিছু ফিরে যাবার সময় আট ভাঁজ পড়ে। এ কথা শুনে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, সে যেন কখনো তোমাদের কাছে আর না আসে’।[16]
(৭২) বাতিল কথা বর্জন করা :
মহান আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ- وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হবে মুমিনগণ। যারা তাদের ছালাতে তন্ময়-তদ্গত। যারা অনর্থক ক্রিয়া-কলাপ থেকে নির্লিপ্ত’ (মু’মিনূন ২৩/১-৩)। মহান আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا ‘যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন আসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়। তখন ভদ্রভাবে সে স্থান অতিক্রম করে’ (ফুরক্বান ২৫/৭২)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ ‘তারা যখন অসার বাক্য শ্রবণ করে তখন তা উপেক্ষা করে এবং বলে, আমাদের কাজ আমাদের ও তোমাদের কাজ তোমাদের। তোমাদের প্রতি সালাম (অর্থাৎ পরিত্যাগ)। আমরা মূর্খদের সাথে কথায় জড়াতে চাই না ’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৫)? অতএব সকল খারাপ কথা বাজে কথা বার্তা যাতে কোন কারো উপকার হবে না তা পরিত্যাগ করা।
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ব্যক্তির উত্তম ইসলাম হ’ল যে কথায় তার কোন উপকার নেই তা পরিত্যাগ করা’।[17]
(৭৩) উদার ও দানশীল হওয়া :
মহান আল্লাহ বলেন, وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ - الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ- ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য। যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৩৩-১৩৪)। বখীল-কৃপণদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا ‘যারা কৃপণতা করে ও লোকদের কৃপণতা করার আদেশ দেয় এবং আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদের যে সম্পদ দান করেছেন, তা গোপন করে। আর আমরা অবিশ্বাসীদের জন্য অপমানজনক শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (আন-নিসা ৪/৩৭)। মহান আল্লাহ বলেন, هَاأَنْتُمْ هَؤُلَاءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنْكُمْ مَنْ يَبْخَلُ وَمَنْ يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ ‘তোমরাই তো তারা, তোমাদের আহবান করা হচ্ছে যে তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে। অথচ তোমাদের কেউ কেউ কার্পণ্য করছে। তবে যে কার্পণ্য করছে সে তো নিজের প্রতিই কার্পণ্য করছে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের ছাড়া অন্য কোন সম্প্রদায়কে স্থলাভিষিক্ত করবেন, এরপর তারা তোমাদের অনুরূপ হবে না’(মুহাম্মাদ ৪৭/৩৮)। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম’(হাশর /৯)।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা প্রেরণ করে। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। অপর জন বলেন, হে আল্লাহ ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন’।[18]
(৭৪) ছোটদেরকে সেণহ করা আর বড়দের সম্মান করা :
عَنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ لاَ يَرْحَمُ لاَ يُرْحَمُ ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন না যে মানুষের প্রতি রহম করে না’।[19]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ جَعَلَ اللَّهُ الرَّحْمَةَ مِائَةَ جُزْءٍ، فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ جُزْءًا، وَأَنْزَلَ فِى الأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا، فَمِنْ ذَلِكَ الْجُزْءِ يَتَرَاحَمُ الْخَلْقُ، حَتَّى تَرْفَعَ الْفَرَسُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةَ أَنْ تُصِيبَهُ- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি আল্লাহ রহমাতকে একশ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার মধ্যে নিরানববই ভাগ তিনি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন। আর পৃথিবীতে একভাগ পাঠিয়েছেন। ঐ একভাগ পাওয়ার কারণেই সৃষ্ট জগতে পরস্পরের প্রতি দয়া করে। এমনটি ঘোড়া তার বাচ্চার উপর থেকে পা উঠিয়ে নেয় এই আশংকায় যে সে ব্যাথা পাবে’।[20]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِىّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের সেণহ করলো না এবং আমাদের বড়দের হক্ব জানলো (সম্মান করলো না) সে আমাদের মধ্যে নয়’।[21] নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, كَبِّرِ الْكُبْرَ তুমি বড়দের ইজ্জত করবে’।[22]
عَنْ أَبِى قِلاَبَةَ عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فِى نَفَرٍ مِنْ قَوْمِى فَأَقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ لَيْلَةً، وَكَانَ رَحِيمًا رَفِيقًا، فَلَمَّا رَأَى شَوْقَنَا إِلَى أَهَالِينَا قَالَ ارْجِعُوا فَكُونُوا فِيهِمْ وَعَلِّمُوهُمْ وَصَلُّوا، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْبَرُكُمْ- মালিক ইবনু হুয়াইরিছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আমার গোত্রের কয়েকজন লোকের সঙ্গে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এলাম এবং আমরা তার নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) অত্যন্ত দয়ালু ও বন্ধু বৎসল ছিলেন। তিনি যখন আমাদের মধ্যে নিজ পরিজনের নিকট ফিরে যাওয়ার আগ্রহ লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি আমাদের বললেন, তোমরা পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর, আর তাদের দ্বীন শিক্ষা দিবে এবং ছালাত আদায় করবে যখন ছালাত উপস্থিত হয়, তখন তোমাদের কেউ আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে ইমামতি করবে’।[23]
(৭৫) মানুষের মাঝে ইছলাহ করা পারস্পরিক সম্পর্ক সঠিকরূপে গড়ে তোলা :
মহান আল্লাহ বলেন,لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا- ‘তাদের অধিকাংশ শলা-পরামর্শে কোন মঙ্গল নেই। কিন্তু যে পরামর্শে তারা মানুষকে ছাদাক্বা করার বা সৎকর্ম করার কিংবা লোকদের মধ্যে পরস্পরে সন্ধি করার উৎসাহ দেয় সেটা ব্যতীত। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সেটা করে, সত্বর আমরা তাকে মহা পুরস্কার দান করব’ (নিসা ৪/১১৪)। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ৪৯/১০)। মহান আল্লাহ বলেন, يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘লোকেরা তোমাকে প্রশ্ন করছে যুদ্ধলব্ধ গণীমতের মাল বণ্টন সম্পর্কে। বলে দাও, গণীমতের মাল সবই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পরস্পরে আপোষ মীমাংসা করে নাও। আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক’ (আনফাল ৮/১)।
عَن أُمِّ كُلْثُومِ بِنْتِ عُقْبَةَ بْنِ أَبِي مَعِيطٍ، رَضِيَ الله عَنْهَا, قَالَتْ سَمِعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِى يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ، فَيَنْمِى خَيْرًا، أَوْ يَقُولُ خَيْرًا- উম্মুল কুলছুম বিনতু উক্ববাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে তিনি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয় যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভাল কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভাল কথা বলে’।[24]
(৭৬) নিজের জন্য যা ভালোবাসবে তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তাই ভালবাসবে, নিজের জন্য যা অপসন্দ করবে তার ভাইয়ের জন্য তাই অপসন্দ করবে :
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ঈমানের ষাট বা সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে, আর সর্বোত্তম শাখা হ’ল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা (আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বুদ নেই) আর সর্বনিম্ন হ’ল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূর করা, আর লজ্জা হ’ল ঈমানের একটি শাখা’।[25]
عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পসন্দ করবে যা তার নিজের জন্য পসন্দ করে’।[26]
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-বাযালী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছি ছালাত কায়েম করার, যাকাত প্রদান করার, এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার’।[27]
[লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, সঊদীআরব]
[1]. আহমাদ হা/১৯৭১১; মুসলিম হা/২৯৯২।
[2]. মুসলিম হা/২১৬৭।
[3]. আবু দাঊদ হা/৪৮৩২; তিরমিযী হা/২৩৯৫; সনদ ছহীহ।
[4]. আহমাদ হা/৫৫৫৭; বুখারী হা/৬০১৪; মুসলিম হা/২৬২৫।
[5]. আহমাদ হা/১৬৩৭৪; বুখারী হা/৬০১৯; মুসলিম হা/৪৮।
[6]. আহমাদ হা/৫৬৪৬; বুখারী হা/২৪৪২; মুসলিম হা/২৫৮০।
[7]. আহমাদ হা/১১৮৯০; বুখারী হা/১৪৬৯; মুসলিম হা/১০৫৩।
[8]. আহমাদ হা/৩৬১৮; বুখারী হা/৫৬৪৮; মুসলিমহা/২৫৭১।
[9]. আহমাদ হা/২২৭৯৬; বুখারী হা/৬৫০৩; মুসলিম হা/২৯৫০।
[10]. বুখারী হা/৪৬৩৫।
[11]. আহমাদ হা/৮৮২৪; বুখারী হা/৬৫০৬; মুসলিম হা/২৯৫৪।
[12]. আহমাদ হা/২৩৪০; বুখারী হা/৬৪১২; ।
[13]. আহমাদ হা/১১১৬৯; মুসলিম হা/২৭৪২।
[14]. আহমাদ হা/৪০৪৪; বুখারী হা/৫২২০; মুসলিম হা/২৭৬০।
[15]. আহমাদ হা/১০৯২৮; বুখারী হা/৫২২৩; মুসলিম হা/২৭৬১।
[16]. আহমাদ হা/২৬৪৯০; বুখারী হা/৫২৩৫; মুসলিম হা/২১৮০।
[17]. তিরমিযী হা/২৩১৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৬; ছহীহুল জামে‘হা/৫৯১১।
[18]. বুখারী হা/১৪৪২; মুসলিম হা/১০১০।
[19]. আহমাদ হা/১৯১৬৯; বুখারী হা/৭৩৭৬; মুসলিম হা/২৩১৯।
[20]. বুখারী হা/৬০০০; মুসিলম হা/২৭৫২।
[21]. আবু দাউদ হা/৪৯৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৪০।
[22]. আহমাদ হা/১৭২৭৬; বুখারী হা/৬১৪২-৬১৪৩; মুসলিম হা/১৬৬৯।
[23]. আহমাদ হা/১৫৫৯৮; বুখারী হা/৬২৮; মুসলিম হা/৬৭৪।
[24]. আহমাদ হা/২৭২৭২; বুখারী হা/২৬৯২; মুসলিম হা/২৬০৫।
[25]. আহমাদ হা/৯৩৬১; বুখারী হা/৯; মুসলিম হা/৩৫।
[26]. আহমাদ হা/১২৮০১; বুখারী হা/১৩; মুসলিম হা/৪৫।
[27]. আহমাদ হা/১৯১৯১; বুখারী হা/৫৭; মুসলিম হা/৫৬) ঈমান বায়হাক্বী শুয়াবিল ঈমান ১৩/৪৫৩।