পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের করণীয়
(৪র্থ কিস্তি)
পিতা-মাতার সাথে অবাধ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তির আগমন :
পিতা-মাতার সব থেকে নিকটতম আত্মীয়। তাদের সাথে কোন সময় সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না বা কোন খারাপ আচরণ করা যাবে না। তা করলে আল্লাহ দুনিয়ায় শাস্তি দ্রুত প্রদান করার পাশাপাশি আখিরাতেও শাস্তি দিবেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى بَكْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجِّلَ اللَّهُ لِصَاحِبِهِ الْعُقُوبَةَ فِى الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِى الآخِرَةِ مِنَ الْبَغْىِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ-
আবূ বাকরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, (ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ ও রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তা‘আলা যার সাজা পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন’।[1] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرَ أَنْ يُعَجِّلَ الله تَعَالَى لِصَاحِبِهِ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا مَعْ مَا يَدَّخِرُهُ لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ قَطِيعَةِ الرَّحِمِ وَالْخِيَانَةِ وَالْكَذِبِ وَإِنَّ أَعْجَلَ الطَّاعَةِ ثَوَاباً لَصِلَةُ الرَّحِمِ حَتَّى أَنَّ أَهْلَ الْبَيْتِ لَيَكُونُوا فَجَرَةً فَتَنْمُو أَمْوَالُهُمْ وَيَكْثُرُ عَدَدُهُمْ إِذَا تَوَاصَلُوا-
আবূ বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা, খিয়ানত করা ও মিথ্যা বলার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তা‘আলা যার সাজা পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন। আর যে ভালো কাজ বা আনুগত্যের জন্য দ্রুত ছওয়াব দেওয়া হয় তা হ’ল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। এমনকি যদি ঘরের লোকেরা যদি দরিদ্র হয় আর তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে তাহ’লে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি বৃদ্ধি পাবে’।[2] দুনিয়ায় শাস্তির ধরণ এমন হতে পারে যে, আল্লাহ তাকে সম্পদ দিবেন না, খাবারে বরকত দিবেন না, সন্তান অনুগত হবেনা বা বংশ বৃদ্ধিতে বরকত হবেনা। এমনকি সন্তানেরা পাপাচারী হ’তে পারে’।[3] সব থেকে কাছের আত্মীয় মা ও বাবা। এই আত্মীয়ের সাথে কোন ভাবেই সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না যদি বাবা ও মা অমুসলিম হন। তবে তারা যদি ইসলামের বিরুদ্ধে কোন আদেশ দেন তাহ’লে তা পালন করা যাবে না। কিন্তু তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। হাদীছে আরো এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَعَلَّمُوا مِنْ أَنْسَابِكُمْ مَا تَصِلُونَ بِهِ أَرْحَامَكُمْ فَإِنَّ صِلَةَ الرَّحِمِ مَحَبَّةٌ فِي الْأَهْلِ مَثْرَاةٌ فِي الْمَالِ مَنْسَأَةٌ فِي الْأَثَرِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা নিজেদের বংশধারার ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন কর, যাতে করে তোমাদের বংশীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে পার। কেননা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় থাকলে নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালবাসা তৈরী হয় এবং ধন-সম্পদ ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়’।[4]
পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি অভিশপ্ত :
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَلْعُونٌ مَنْ عَقَّ وَالِدَيْهِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পিতা-মাতার অবাধ্যতা করল সে অভিশপ্ত’।[5] আর এই অভিশাপ আল্লাহ, তাঁর রাসূল, ফেরেশতাকুল এবং সকল সৃষ্টি জগতের পক্ষ থেকে। যে ব্যক্তি অভিশপ্ত হয় সে সবার কাছে ঘৃণার পাত্র।
পিতা-মাতার সাথে অসদ্ব্যবহারের পরকালীন শাস্তি : পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি দুনিয়াতে বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও শারীরিক শাস্তি পাওয়ার পাশাপাশি আখিরাতেও শাস্তি পাবে। কিছু পাপ রয়েছে যেগুলোর শাস্তি দুনিয়াতে হয়ে গেলে পরকালে হয়না। কিন্তু পিতা-মাতার অবাধ্য এত বড় পাপ যে দুনিয়াতে এর শাস্তি হয়ে গেলেও ক্ষমা পাবে না। পরকালে আবার পূর্ণ শাস্তি পেতে হবে। এই শাস্তি বিভিন্ন ধরনের হ’তে পারে। জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া, আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি না পাওয়া, নবী-রাসূল, ছিদ্দীকীন ও শুহাদাদের সঙ্গ না পাওয়া, ইবাদত কবুল না হওয়া ইত্যাদি।
পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না :
হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: ثَلاَثَةٌ لاَ يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ، وَالدَّيُّوثُ. وَثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ : الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمُدْمِنُ عَلَى الْخَمْرِ، وَالْمَنَّانُ بِمَا أَعْطَى-
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিনে তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দিবেন না। তারা হচ্ছে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষের বেশ ধারণকারিণী নারী ও বাড়ীতে বেহায়াপনার সুযোগ প্রদানকারী। আর তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হচ্ছে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদ পানকারী ও দান করে খোঁটা দানকারী’।[6]
পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি শহীদ, ছিদ্দীক ও নবীগণের সঙ্গী হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে :
হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ الْجُهَنِيِّ رضي الله عنه قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ، شَهِدْتُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ ، وَأَنَّكَ رَسُولُ اللهِ ، وَصَلَّيْتُ الْخَمْسَ ، وَأَدَّيْتُ زَكَاةَ مَالِي ، وَصُمْتُ شَهْرَ رَمَضَانَ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : مَنْ مَاتَ عَلَى هَذَا كَانَ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ هَكَذَا وَنَصَبَ إِصْبَعَيْهِ مَا لَمْ يَعُقَّ وَالِدَيْهِ-
আমর ইবনু মুররা আল-জুহানী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক লোক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আগমন করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সাক্ষ্য দেই যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল, আমি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করি, আমার মালের যাকাত দেই, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করি। রাসূল (ছাঃ) তা শুনে বললেন, যে ব্যক্তির উপরে (এরূপ কথা ও আমলের উপর) মারা যাবে সে ক্বিয়ামতের দিন নবীগণ, ছিদ্দীক ও শহীদগণের সাথে অবস্থান করবে যদি না পিতা-মাতার অবাধ্যতা করে’-এভাবে তিনি তার আঙ্গুল দাঁড় করালেন’।[7] কালেমা, ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ ও যাকাত সবই ঠিক থাকলেও পিতা-মাতার সাথে খারাপ আচরণ করলে জান্নাত পাওয়া যাবে না।
পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তির ফরয বা নফল কোন ইবাদত কবুল হবে না :
হাদীছে এসেছে,
عن أبي أمامة عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ثلاثةٌ لا يَقْبَلُ الله مِنْهُمْ يَوْمَ القِيامَةِ صَرْفاً ولا عَدْلاً عاقٌّ وَمَنَّانٌ ومُكَذِّبٌ بالقَدَر-
আবু ওমামাহ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির ফরয ও নফল কোন ইবাদত আল্লাহ কবুল করবেন না। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দানে খোঁটাদানকারী ব্যক্তি ও তাকদীরকে অস্বীকারকারী’।[8] যার ইবাদত কবুল হবে না তার জান্নাত পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
পিতা-মাতার অবাধ্যতার কারণে জাহান্নামী ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-এর বদদো‘আ :
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أُبَىِّ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ : مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا ثُمَّ دَخَلَ النَّارَ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ فَأَبْعَدَهُ اللَّهُ وَأَسْحَقَهُ-
উবাই বিন মালেক হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পিতা-মাতা উভয়কে বা একজনকে জীবিত অবস্থায় পেল তারপরেও জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন এবং তাঁর রহমত থেকে বিদূরিত করুন’।[9]
পিতা-মাতার সাথে খারাপ ব্যবহারের নমুনা
পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া কবীরা গুনাহ :
হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ কবীরা গুনাহসমূহের একটি হলো নিজ পিতা-মাতাকে গালি দেয়া। ছাহাবীগণ বলেন, কেউ কি নিজ পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে? তিনি বলেন, সে অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দিবে, প্রতিশোধ স্বরূপ ঐ ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালি দিবে’।[10] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عبد الله عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُولُ: مِنَ الْكَبَائِرِ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى أَنْ يَسْتَسِبَّ الرَّجُلُ لِوَالِدِهِ-
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রহঃ) বলেন, পিতা-মাতাকে গালি শুনানো আল্লাহর নিকট একটি কবীরা গুনাহ’।[11] শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন,
إذَا شَتَمَ الرَّجُلُ أَبَاهُ وَاعْتَدَى عَلَيْهِ فَإِنَّهُ يَجِبُ أَنْ يُعَاقَبَ عُقُوبَةً بَلِيغَةً-
‘যখন কোন ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেবে এবং এক্ষেত্রে সীমালংঘন করবে তাকে কঠিন শাস্তি প্রদান করা আবশ্যক হয়ে যায়’।[12] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ قَالَ: سُئِلَ عَلِيٌّ: هَلْ خَصَّكُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَيْءٍ لَمْ يَخُصَّ بِهِ النَّاسَ كَافَّةً؟ قَالَ: مَا خَصَّنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَيْءٍ لَمْ يَخُصَّ بِهِ النَّاسَ، إِلَّا مَا فِي قِرَابِ سَيْفِي، ثُمَّ أَخْرَجَ صَحِيفَةً، فَإِذَا فِيهَا مَكْتُوبٌ: لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ سَرَقَ مَنَارَ الْأَرْضِ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا-
আবু তোফায়েল (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, নবী করীম (ছাঃ) কি কোন বিশেষ ব্যাপারে আপনাকে বলেছেন যা সর্বসাধারণকে বলেননি? তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) অন্য কাউকে বলেননি এমন কোন বিশেষ কথা একান্তভাবে আমাকে বলেননি। অবশ্য আমার তরবারির খাপের মধ্যে যা আছে ততটুকুই। অতঃপর তিনি একখানি লিপি বের করলেন। তাতে লেখা ছিল- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অপর কারো নামে পশু যবাই করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি জমির সীমানা চিহ্ন চুরি করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয় তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ’।[13]
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া কাবীরা গুনাহ : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ تَعَالَوْاْ أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا- তুমি বল, এস আমি তোমাদেরকে ঐ বিষয়গুলো পাঠ করে শুনাই যা তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর হারাম করেছেন। আর তা হ’ল এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে (আন‘আম ৬/১৫১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا-
আর যখন আমরা বনু ইস্রাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারু দাসত্ব করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে (বাক্বারাহ ২/৮৩)। হাদীছে এসেছে,
عَنِ الْمُغِيرَةِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الأُمَّهَاتِ، وَمَنْعَ وَهَاتِ ، وَوَأْدَ الْبَنَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ –
মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপসন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা’।[14] হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى بَكْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم :أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلاَثًا. قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ: الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ. وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ: أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ. قَالَ: فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا لَيْتَهُ سَكَتَ-
আবু বাকরাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ কোনটি সে বিষয়ে খবর দিব না? তারা বলল, বলুন হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। এ সময় তিনি ঠেস দিয়ে ছিলেন। অতঃপর উঠে বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা ও মিথ্যা সাক্ষ্য। কথাটি তিনি বলতেই থাকলেন। আমরা ভাবছিলাম, তিনি আর থামবেন না’।[15] অত্র হাদীছে বুঝা যায় যে, শিরকের পরেই মহাপাপ হ’ল পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। এরপরে মহাপাপ হ’ল মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।
অন্যত্র এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কবীরা গুনাহসমূহ কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তারপর পিতা-মাতার অবাধ্যতা। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তারপর মিথ্যা কসম করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মিথ্যা শপথ কি? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি (শপথের সাহায্যে) মুসলিমের ধন-সম্পদ হরণ করে নেয়। অথচ সে এ শপথের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারী’।[16] হাদীছে আরো এসেছে,
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ حَدَّثَهُ وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ أَنَّ رَجُلاً سَأَلَهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مَا الْكَبَائِرُ فَقَالَ: هُنَّ تِسْعٌ. فَذَكَرَ مَعْنَاهُ زَادَ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ الْمُسْلِمَيْنِ وَاسْتِحْلاَلُ الْبَيْتِ الْحَرَامِ قِبْلَتِكُمْ أَحْيَاءً وَأَمْوَاتًا-
উবায়েদ ইবন উমায়ের (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, তার সাথে বর্ণনাকারীর সখ্যতা ছিল। তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করে হে আল্লাহর রাসূল! কবীরা গুনাহ কোনগুলো? তিনি (ছাঃ) বলেন, তা নয়টি। তখন তিনি উপরোক্ত হাদীছে বর্ণিত গুনাহগুলোর উল্লেখ করেন এবং অতিরিক্ত এও বলেন, মুসলমান পিতা ও মাতাকে কষ্ট দেওয়া এবং আল্লাহর ঘরকে সম্মান না করা, যা তোমাদের জীবনে ও মরণে কিবলা’।[17]
পিতা-মাতাকে অস্বীকার করা যা বড় অবাধ্যতা ও কবীরা গুনাহ :
পিতা-মাতা মানুষের পৃথিবীতে আসার একমাত্র মাধ্যম। অনেকে ভাল চাকুরী করার সুবাদে বা অন্য কোন কারণে বাবা-মায়ের পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। কেউবা বাবা-মাকে অস্বীকার করে বসে। এগুলো ইসলামী শরী‘আতে হারাম ও কবীরা গুনাহ। বরং কেউ বাবা-মাকে অস্বীকার করলে তার স্থান হবে জাহান্নাম। যেমন হাদীছে এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : إِنَّ أَعْظَمَ النَّاسِ فِرْيَةً لَرَجُلٌ هَاجَى رَجُلاً فَهَجَا الْقَبِيلَةَ بِأَسْرِهَا وَرَجُلٌ انْتَفَى مِنْ أَبِيهِ وَزَنَّى أُمَّهُ-
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে-ই যে কোন ব্যক্তির নিন্দা করল। অতঃপর সে (জওয়াবে) পুরো বংশের নিন্দা জ্ঞাপন করল এবং ঐ ব্যক্তি যে তার পিতাকে অস্বীকৃতি জানাল। (অর্থাৎ পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল) এবং তার মাকে যেনার অপবাদ দিল’।[18] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ سَعْدٍ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ وَهْوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ –
সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করে অথচ সে জানে যে সে তার পিতা নয়, জান্নাত তার জন্য হারাম’।[19] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : لاَ تَرْغَبُوا عَنْ آبَائِكُمْ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ أَبِيهِ فَهُوَ كُفْرٌ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না (অর্থাৎ তাকে অস্বীকার করো না)। কারণ যে লোক নিজের পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় (অর্থাৎ পিতাকে অস্বীকার করা) তা কুফরী’। [20] হাদীছে আরো আছে,
عَنْ أَبِى ذَرٍّ رضى الله عنه أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : لَيْسَ مِنْ رَجُلٍ ادَّعَى لِغَيْرِ أَبِيهِ وَهْوَ يَعْلَمُهُ إِلاَّ كَفَرَ، وَمَنِ ادَّعَى قَوْمًا لَيْسَ لَهُ فِيهِمْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ-
আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘কোন লোক যদি নিজ পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে তার পিতা বলে দাবী করে তবে সে আল্লাহ্কে অস্বীকার করল এবং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সঙ্গে বংশ সম্পর্কিত দাবী করল যে বংশের সঙ্গে তার কোন বংশ সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল’। [21]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অপর ব্যক্তিকে বাপ বলে পরিচয় দেয়, সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। অথচ সত্তর বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুবাস পাওয়া যাবে’। [22]
এসকল হাদীছ দ্বারা প্রমাণীত হয় যে পিতা-মাতাকে অস্বীকার করা কবীরা গুনাহ যার কারণে জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। এজন্য পিতা-মাতা যেই মর্যাদার হৌক, যেই কর্মের হৌক বা যেই পেশার হৌক তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে।
পিতার উপর মায়ের অগ্রাধিকার :
পিতা-মাতার ক্ষেত্রে কারো মর্যাদার খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা কোনটার ক্ষেত্রে পিতা এগিয়ে আবার কোনটার ক্ষেত্রে মা এগিয়ে ঠিক পরীক্ষার মত পিতা অংকে ভাল তো মা ইংরেজীতে আবার পিতা হাদীছে ভাল তো মা কুরআনে।তবে গর্ভধারণ, প্রসব করণ ও দুগ্ধপান করা কেবল মায়েরাই করে থাকেন যাতে পিতার কোন অংশদারিত্ব নেই। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা মাকে তিনগুণ মর্যাদা বেশী দান করেছেন। এর পরের ক্ষেত্রগুলোতে পিতা-মাতার সমান অবদান থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ-
‘আর আমরা মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করেছে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। অতএব তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (মনে রেখ, তোমার) প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই’ (লোক্বমান ৩১/১৪)। নিম্নে আমরা মায়ের বিশেষ মর্যাদাগুলো আলোচনা করব।
মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত :
হাদীছে এসেছে,
عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ جَاهِمَةَ السُّلَمِىِّ أَنَّ جَاهِمَةَ جَاءَ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَرَدْتُ أَنْ أَغْزُوَ وَقَدْ جِئْتُ أَسْتَشِيرُكَ. فَقَالَ : هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ ؟. قَالَ نَعَمْ. قَالَ : فَالْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ رِجْلَيْهَا-
মু‘আবিয়াহ বিন জাহেমাহ আস-সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জাহেমাহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জিহাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পরামর্শ করার জন্য এসেছি। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি মা আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘তুমি তার নিকটে থাক। কেননা জান্নাত রয়েছে তার পায়ের নীচে’।[23] কোন বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বললেন, তোমার কি পিতা-মাতা আছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, الْزَمْهُمَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ أَرْجُلِهِمَا ‘তুমি তাদের নিকটে থাক। কেননা জানণাত রয়েছে তাদের পায়ের নীচে’।[24] অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাহেমাহ আস-সুলামী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ডান দিক থেকে ও বাম দিক থেকে দু’বার এসে বলেন, আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাত কামনা করি। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমার মা কি বেঁচে আছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ارْجِعْ فَبَرَّهَا ‘ফিরে যাও। তার সাথে সদাচরণ কর’। অবশেষে তৃতীয় বার সম্মুখ থেকে এসে একই আবেদন করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন তোমার মা কি জীবিত আছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, وَيْحَكَ الْزَمْ رِجْلَهَا فَثَمَّ الْجَنَّةُ ‘তোমার ধ্বংস হৌক! তার পায়ের কাছে থাক। সেখানেই জান্নাত’।[25]
মায়ের মর্যাদা তিনগুণ বেশী : মা সন্তানের প্রতি অতি দয়াশীল হওয়ায় আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক মহিলা আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে এলে তিনি তাকে তিনটি খেজুর দেন। সে তার ছেলে দু’টিকে একটি করে খেজুর দেয় এবং নিজের জন্য একটি রেখে দেয়। তারা খেজুর দু’টি খেয়ে তাদের মায়ের দিকে তাকালো এবং অবশিষ্ট খেজুরটি পেতে চাইল। মা খেজুরটি দুই টুকরা করে প্রত্যেককে অর্ধেক অর্ধেক দিল। নবী (ছাঃ) ঘরে আসলে আয়েশা (রাঃ) তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। তখন তিনি বলেন, এতে তোমার বিস্মিত হওয়ার কি আছে। সে তার ছেলে দুইটির প্রতি দয়াপরবশ হওয়ার কারণে আল্লাহ তার প্রতি দয়াপরবশ হয়েছেন’।[26] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ! مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِى قَالَ: أُمُّكَ . قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ: أُمُّكَ . قَالَ: ثُمَّ مَنْ قَالَ: أُمُّكَ . قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ: ثُمَّ أَبُوكَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক লোক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল, অতঃপর কে? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, অতঃপর তোমার বাবা’। [27] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ! مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ الصُّحْبَةِ قَالَ: أُمُّكَ ثُمَّ أُمُّكَ ثُمَّ أُمُّكَ ثُمَّ أَبُوكَ ثُمَّ أَدْنَاكَ أَدْنَاكَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক লোক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার বাপ, তারপর যে তোমার সবচেয়ে নিকটবর্তী’।[28] অন্যত্র এসেছে,
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّ اللَّهَ يُوصِيكُمْ بِأُمَّهَاتِكُمْ ثَلاَثًا - إِنَّ اللَّهَ يُوصِيكُمْ بِآبَائِكُمْ إِنَّ اللَّهَ يُوصِيكُمْ بِالأَقْرَبِ فَالأَقْرَبِ-
মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, তিনবার বললেন। অতঃপর তোমাদের পিতাদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর নৈকট্যের ক্রমানুসারে নিকটাত্মীয় সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন’।[29]
কবীরা গোনাহ মোচনে মায়ের সেবা :
হাদীছে এসেছে, ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। সে আমাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করলো। অপর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে তাকে বিবাহ করতে পসন্দ করল। এতে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগলে আমি তাকে হত্যা করি। আমার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? তিনি বলেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বলল, না। তিনি বলেন, তুমি মহামহিম আল্লাহর নিকট তওবা করো এবং যথাসাধ্য তার নৈকট্য লাভে যত্নবান হও। (আতা‘ (রহঃ) বলেন) আমি ইবনে আববাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তার মা জীবিত আছে কিনা তা আপনি কেন জিজ্ঞেস করলেন? তিনি বলেন, إِنِّي لَا أَعْلَمُ عَمَلًا أَقْرَبَ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ بِرِّ الْوَالِدَةِ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচারণের চেয়ে উত্তম কোন কাজ আমার জানা নাই’।[30] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেন,
أَلَكَ وَالِدَانِ حَيَّانِ أَوْ أَحَدُهُمَا؟ قَالَ: لَا، قَالَ: تَقَرَّبْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَا قَدَرْتَ عَلَيْهِ، فَقُلْنَا لَهُ بَعْدَ مَا خَرَجَ، فَقَالَ: لَوْ كَانَ حَيَّيْنِ أَبَوَاهُ أَوْ أَحَدُهُمَا رَجَوْتُ لَهُ أَنَّهُ لَيْسَ شَيْءٌ أحطَ لِلذُّنُوبِ مِنْ بِرِّ الْوَالِدَيْنِ-
‘তোমার পিতা-মাতা বা তাদের একজন কি জীবিত আছেন? সে বলল, না। তিনি বললেন, যথাসাধ্য তার নৈকট্য লাভে যত্নবান হও। লোকটি বের হয়ে যাওয়ার পর আমরা তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তার পিতা-মাতা বা তাদের একজন যদি জীবিত থাকত! তাহ’লে তার জন্য আশা করতাম। কারণ পিতা-মাতার সাথে সদাচারণ অপেক্ষা গুনাহ মোচনকারী আর কিছুই নেই’।[31]
খালা মায়ের মর্যাদায় স্থলাভিষিক্ত :
মায়ের সম্মানে খালাদের তার স্থলাভিসিক্ত করা হয়েছে। মায়ের পরেই খালাগণ সন্তানদের দেখাশুনা ও আদর যত্ন করে থাকেন। তাদের সর্বাধিক কাছের মানুষ হয়ে থাকেন। এজন্য মায়ের মৃত্যু হলে খালারা সে সম্মান পাবে’।[32] হাদীছে এসেছে,
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ-
বারা’আ ইবনু আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, খালা হলো মাতৃস্থানীয়’।[33] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: أَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، رَجُلٌ، فقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أَذْنَبْتُ ذَنْبًا كَبِيرًا، فَهَلْ لِي مِنْ تَوْبَةٍ؟، فقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَكَ وَالِدَانِ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَلَكَ خَالَةٌ؟، قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَبِرَّهَا إِذًا-
ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো মহাপাপ করে ফেলেছি। আমার জন্য কি ক্ষমার দরজা খোলা আছে? রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তোমার কি মা-বাবা জীবিত আছেন? সে বলল, না। তিনি বললেন, তোমার খালা জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে তার সাথে সদাচরণ কর’। [34] অন্যত্র এসেছে,
عَنْ كُرَيْبٍ مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ مَيْمُونَةَ بِنْتَ الْحَارِثِ رضى الله عنها أَخْبَرَتْهُ أَنَّهَا أَعْتَقَتْ وَلِيدَةً وَلَمْ تَسْتَأْذِنِ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم ، فَلَمَّا كَانَ يَوْمُهَا الَّذِى يَدُورُ عَلَيْهَا فِيهِ قَالَتْ أَشَعَرْتَ يَا رَسُولَ اللهِ أَنِّى أَعْتَقْتُ وَلِيدَتِى قَالَ: أَوَفَعَلْتِ. قَالَتْ نَعَمْ . قَالَ: أَمَا إِنَّكِ لَوْ أَعْطَيْتِيهَا أَخْوَالَكِ او أَخَوَاتِكِ كَانَ أَعْظَمَ لأَجْرِكِ-
মায়মূনাহ বিনতে হারিছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর অনুমতি ব্যতীত তিনি আপন দাসীকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তার ঘরে নবী করীম (ছাঃ)-এর অবস্থানের দিন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি জানেন না আমি আমার দাসীকে মুক্ত করে দিয়েছি? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ? মায়মূনাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, শুন! তুমি যদি তোমার মামা-খালাদের বা বোনদের এটা দান করতে তাহ’লে তোমার জন্য বেশী নেকীর কাজ হত’।[35]
(ক্রমশ:)
[ লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ]
পর্ণোগ্রাফীর আগ্রাসন ও তা থেকে মুক্তির উপায়
[1]. তিরমিযী হা/২৫১১; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৭; মিশকাত হা/৪৯৩২; ছহীহাহ হা/৯১১।
[2]. ইবনু হিববান হা/৪৪০; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩৪৫৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৩৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭০৫।
[3]. আত-তানভীরু শারহু জামে‘ ছাগীর ৬/৪৬৬।
[4]. তিরমিযী হা/১৯৭৯; মিশকাত হা/৪৯৩৪; ছহীহাহ হা/২৭৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৬৫।
[5]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৮৪৯৭; শু‘আবুল ঈমান হা/৫৪৭২; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫১৬; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১২৬৩৬।
[6]. নাসাঈ হা/২৫৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৬৩; ছহীহাহ হা/৬৭৪।
[7]. আহমাদ হা/৮১; ইবনু খুযায়মা হা/২২১২; মাজাম‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩৪২৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/৭৪৯,২৫১৫।
[8]. মু‘জামুল কাবীর হা/ ৭৫৪৭; ছহীহাহ হা/১৭৮৫; যিলালুল জান্নাহ হা/৩২৩।
[9]. আহমাদ হা/১৯০২৭; ছহীহাহ হা/৫১৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৪৯৫।
[10]. বুখারী হা/৫৯৭৩; মুসলিম হা/৯০; মিশকাত হা/৪৯১৬।
[11]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৮।
[12]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৪৯২।
[13]. আদাবুল মুফরাদ হা/১৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১১২।
[14]. বুখারী হা/২৪০৮; মুসলিম হা/৫৯৩; মিশকাত হা/৪৯১৫।
[15]. বুখারী হা/৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫০৮।
[16]. বুখারী হা/৬৯২০; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৮৩১; বুলুগুল মারাম হা/১৩৬৬।
[17]. আবুদাউদ হা/২৮৭৫; হাকেম হা/৭৬৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৬০৫।
[18]. ইবনু মাজাহ হা/৩৭৬১; ইবনু হিববান হা/৫৭৮৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৮৭৪; ছহীহাহ হা/১৪৮৭।
[19]. বুখারী হা/৬৭৬৬; মুসলিম হা/৬৩; মিশকাত হা/৩৩১৪।
[20]. বুখারী হা/৬৭৬৮; মুসলিম হা/৬২; মিশকাত হা/৩৩১৫।
[21]. বুখারী হা/৩৫০৮; মুসলিম হা/৬১; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৩৩।
[22]. আহমাদ হা/৬৫৯২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯৮৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯৮৮।
[23]. নাসাঈ হা/৩১০৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৪৮৫।
[24]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/২২০২; ছহীহ আত-তারগীব হা/২০৮৫।
[25]. ইবনু মাজাহ হা/২৭৮১; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৪৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৪৮৪।
[26]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৮৯; হাকেম হা/৭৩৪৯, সনদ ছহীহ ।
[27]. বুখারী হা/৫৯৭১; মুসলিম হা/২৫৪৮; মিশকাত হা/৪৯১১।
[28]. মুসলিম হা/২৫৪৮; মিশকাত হা/৪৯১১; ছহীহুল জামে‘ হা/১৩৯৯।
[29]. ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬১; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬০; ছহীহাহ হা/১৬৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯২৪।
[30]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/১৯৭।
[31]. শু‘আবুল ঈমান হা/৭৯১৩।
[32]. ফাৎহুলবারী ৭/৫০৬।
[33]. বুখারী হা/২৬৯৯; তিরমিযী হা/১৯০৪; আবুদাউদ হা/২২৮০; মিশকাত হা/৩৩৭৭।
[34]. ইবনু হিববান হা/৪৩৫; ছহীহু আত-তারগীব হা/২৫০৪,২৫২৬; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮৬৪।
[35]. বুখারী হা/২৫৯২; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫২৬।