• free web stats
  • At-Tahreek
    কুরআন ও হাদীছের পথ-নির্দেশিকা

    চোগলখোরী

    আল-কুরআনুল কারীম :

    1-  يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ-

    (১) ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না; এবং একে অপরের গীবত করো না তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পসন্দ করবে? তোমরা তো তা অপসন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু’  (হুজুরাত ৪৯/১২)

    2- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَُ-

    (২) ‘হে ঈমানদারগণ! কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হ’তে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম এবং কোন নারীরাও যেন অন্য নারীদের বিদ্রূপ না করে, হ’তে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না, তারাই তো যালেম’ (হুজুরাত ৪৯/১১)

    3- وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ-الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ-يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ- كَلَّا لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ-

    (৩) ‘দুর্ভোগ প্রত্যেক সম্মুখে ও পিছনে নিন্দাকারীর জন্য। যারা সম্পদ জমা করে ও তা গণনা করে। সে ধারণা করে যে, তার মাল তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে কখনোই না। সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুত্বামাহর মধ্যে’(হুমাযাহ  ১০৪/১-৪)

    4- فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِينَ- وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ-وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ-  هَمَّازٍ مَشَّاءٍ بِنَمِيمٍ-مَنَّاعٍ لِلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ-

    (৪) ‘অতএব আপনি মিথ্যারোপকারীদের আনুগত্য করবেন না। তারা চায় যদি আপনি নমনীয় হন, তবে তারাও নমনীয় হবে। আর আপনি তার আনুগত্য করবেন না যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত। যে পশ্চাতে নিন্দা করে ও একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়। যে ভালকাজে বাধা দেয়, সীমালংঘনকারী ও পাপিষ্ঠ’(ক্বলাম  ৬৮/৮-১২)

    5- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ-

    (৫) ‘হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসেক তোমাদের নিকট কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহ’লে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশংকায় যে, তামরা অজ্ঞতাবশতঃ কোন সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে’ (হুজুরাত ৪৯/৬)

    হাদীছে নববী :

    6- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ إِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَالَ أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِىَ النَّمِيمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ. وَإِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الرَّجُلَ يَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ صِدِّيقًا وَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ كَذَّابًا-

    (৬) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নিশ্চয় মুহাম্মাদ (ছাঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদের হুঁশিয়ার করবনা, চোগলখোরী কি? তা হচ্ছে কুৎসা রটনা করা, যা মানুষের মধ্যে বৈরিতার সৃষ্টি করে। নিশ্চয় মুহাম্মাদ (ছাঃ) আরোও বলেছেন, নিশ্চয়ই কোন ব্যক্তি সত্য কথা বলায় সত্যবাদী লিপিবদ্ধ হয়; আবার কেউ মিথ্যা কথা বলায় মিথ্যাবাদী লিপিবদ্ধ হয়’।[1]

    7- عَنْ هَمَّامِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ مَرَّ رَجُلٌ عَلَى حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ فَقِيلَ لَهُ إِنَّ هَذَا يُبَلِّغُ الأُمَرَاءَ الْحَدِيثَ عَنِ النَّاسِ. فَقَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ. قَالَ سُفْيَانُ وَالْقَتَّاتُ النَّمَّامُ-

     (৭)  হাম্মাম ইবনুল হারিছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)-কে একজন লোক অতিক্রম করে যাচ্ছিল। তাকে বলা হ’ল, এই লোক জনসাধারণের  কথা প্রশাসকদের কানে পৌঁছিয়ে দেয়। (একথা শুনে) হুযাইফা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ) বলতে শুনেছি, চোগলখোর জান্নাতে যেতে পারবে না। সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, ক্বত্তাতু হ’ল নাম্মাম-চোগলখোর’।[2]

    8- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِى بِالنَّمِيمَةِ. ثُمَّ أَخَذَ جَرِيدَةً رَطْبَةً، فَشَقَّهَا نِصْفَيْنِ، فَغَرَزَ فِى كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، لِمَ فَعَلْتَ هَذَا قَالَ لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا-

    (৮) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (ছাঃ) একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তিনি বললেন, এদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে, কোন গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেয়া  হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব হ’তে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত। তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙ্গে দু’ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের উপর একখানি গেড়ে দিলেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল!  কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, আশা করা যেতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি শুকিয়ে না যায় তাদের শাস্তি কিছুটা হালকা করা হবে’।[3]

    9- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم  تَجِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللَّهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ، الَّذِى يَأْتِى هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ-

    (৯) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন তুমি আল্লাহর কাছে ঐ লোককে সব থেকে খারাপ পাবে, যে দু’মুখো। সে এদের সম্মুখে এক রূপ নিয়ে আসত, আর ওদের সম্মুখে অন্য রূপে আসত’।[4]

    10- عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبْغِضُ الْبَلِيغَ مِنَ الرِّجَالِ الَّذِى يَتَخَلَّلُ بِلِسَانِهِ تَخَلُّلَ الْبَاقِرَةِ بِلِسَانِهَا.

    (১০) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব লোককে ঘৃণা করে যারা বাকপটুত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহবাকে দাঁতের সঙ্গে লাগিয়ে বিকট শব্দ করে, যেমন করে গরু তার জিহবা নেড়ে থাকে’।[5]

    মনীষীদের বক্তব্য :

    ১. ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন, চোগলখোরী কুরআন-হাদীছের দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম ও  কাবীরা গুনাহর অর্ন্তভুক্ত।[6]

    ২. ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) চোগলখোরী একটি ভয়ানক বিষয় যাতে বড় ধরণের সামাজিক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। আর চোগলখোরী গীবতের চেয়ে মারাত্মক। কেননা গীবত শুধুমাত্র কারো কথার পুনরাবৃত্তি মাত্র কিন্তু চোগলখোরী তার  চেয়ে বিশ্রী’।[7]

    ৩. জাহেয (রহঃ) বলেন,  চোগলখোরী হ’ল কোন মানুষের অপ্রিয় ও অসত্য কথা অন্য কারো কাছে পোঁছিয়ে দেয়া। আর তা কোন গোপনীয় বা প্রকাশ্যে  উভয়টিই হ’তে পারে’।[8]

    ৪. জুরজানী (রহঃ) বলেন,  চোগলখোর হ’ল ঐ ব্যক্তি যে কোন  ব্যক্তির অপ্রিয় কথা বলে বেড়ায়। আর ব্যক্তির গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেয় আর সেটি হ’তে পারে কথা, ইশারা বা অন্য কিছুর মাধ্যমে’।[9]

    সারবস্ত্ত :

    ১. চোগলখোরী হ’ল জাহান্নামের পথ।

    ২. দু’জনার মাঝে শক্রতার আগুন ছড়িয়ে দিয়ে দু’টি পরিবারকে শেষ করে দেয়া।

    ৩. অশান্তি, বিশৃঙ্খলার ও সমাজ জীবনের বিষবৃক্ষ হ’ল চোগলখোরী।

    ৪. আপাতত দৃষ্টিতে ভাল মনে হ’লেও এর শেষ পরিণতি অত্যন্ত খারাপ।

    ৫. চোগলখোরী সমস্ত ভালবাসা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সমস্ত ইবাদতকে বিলোপকারী।

    [1]. মুসলিম হা/১০২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৩০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৪৬; ।

    [2]. আহমাদ হা/২৩৯৪৮; বুখারী হা/৬০৫৬; তিরমিযী হা/২০২৬।

    [3]. বুখারী হা/২১৮; মিশকাত হা/৩৩৮

    [4]. বুখারী হা/৬০৫৮; মিশকাত হা/৪৮২২।

    [5]. আবুদাউদ হা/৫০০৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৮০।

    [6]. আল-কাবায়ের ১৬০ পৃঃ ।

    [7] . যাওয়াজির ৩৯৫ পৃঃ

    [8] . তাহযীবুল আখলাক্ব  ৩১ পৃঃ

    [9] . আত-তা‘রিফাত  ২৬৭ পৃঃ

     

     


    HTML Comment Box is loading comments...