• free web stats
  • At-Tahreek
    তাবলীগ

    পবিত্র মাহে রামাযান ও তার শিক্ষা

    ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। তন্মধ্যে ছিয়াম অন্যতম। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‘ইসলামের স্তম্ভ ৫টি। (১) আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। (২) ছালাত কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) হজ্জ সম্পাদন করা এবং (৫) রামাযানের  ছিয়াম পালন করা’।[1]

    রামাযান আরবী মাস সমূহের মধ্যে নবম মাস। রামাযান শব্দের অর্থ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া। বিশিষ্ট অভিধানবিদ আল্লামা ফিরোযাবাদী এ মাসের নাম রামাযান হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। যেমন-(১) অত্যধিক গরমের সময় এ মাস পড়েছিল বলে। (২) এ মাসে ছিয়াম পালনকারীর পেটের জ্বালা বেশী হয় বলে। (৩) ছিয়াম দ্বারা পাপরাশি ভস্মীভূত হয় বলে।[2]

    ছিয়াম-এর পরিচয় :

    ছিয়ামের শাব্দিক অর্থ :

    صوم শব্দটি اسم جامد একবচন, বহুবচন اصوام। এটা বাবে نَصَرَ এর মাসদার  অর্থ হ’ল ক. বিরত থাকা, খ. নিবৃত থাকা, গ. আত্মসংযম ইত্যাদি। আবু উবায়দা (রাঃ) বলেন, كُلُّ مُمْسِكٍ عَلَى طَعَامٍ اَوْ كَلاَمٍ অর্থাৎ সকল প্রকার পানাহার ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা।

    পারিভাষিক অর্থ :

    আল্লামা জুরজানী বলেন, هو الإمساك عن الأكل والشرب والجماع مِنَ الصُّبْحِ اِلَى الْمَغْرِبِ مَعَ النِّيَّةِ- অর্থাৎ নিয়তের সাথে ছুবহে ছাদেক হ’তে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম ছিয়াম। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরীব সকল প্রাপ্ত বয়ষ্ক মুসলমানদের উপর রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা ফরয।

    মহান আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হ’ল, যেমন তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হ’তে পার। ২য় হিজরীতে মদীনায় অত্র আয়াত নাযিলের মাধ্যমে মুসলমানদের উপর সর্বপ্রথম রামাযান মাসের ছিয়াম ফরয করা হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ‘অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসের ছিয়াম রাখে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)

    ছিয়ামের নিয়ত :

    নিয়ত অর্থ মনন করা বা সংকল্প করা। অতএব মনে ছিয়ামের সংকল্প করাই যথেষ্ট। হজ্জের তালবিয়া ব্যতীত ছালাত, ছিয়াম বা অন্য কোন ইবাদতের শুরুতে আরবী বা বাংলায় নিয়ত পড়ার কোন দলীল কুরআন ও হাদীছে নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى ‘সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে’।[3]

    সাহারী খাওয়া :

    পবিত্র রামাযান মাসে ছায়েম শেষ রাতে ছুবহে ছাদেকের পূর্বে ছিয়াম পালনের যে নিয়তে খাবার খায় তাকে সাহারী বলে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় সাহারীর আযান বেলাল (রাঃ) দিতেন এবং ফজরের আযান অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাক্বতূম (রাঃ) দিতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِىَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ. ثُمَّ قَالَ وَكَانَ رَجُلاً أَعْمَى لاَ يُنَادِى حَتَّى يُقَالَ لَهُ أَصْبَحْتَ أَصْبَحْتَ ‘বেলাল রাত্রে আযান দিলে তোমরা খানাপিনা কর, যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাক্বতূম ফজরের আযান দেয়’।[4]

    বুখারী গ্রন্থের ভাষ্যকার হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, বর্তমানকালে সাহারীর সময় লোক জাগানোর নামে আযান ব্যতীত (সাইরেন বাজানো, ঢাক-ঢোল পিটানো ইত্যাদি) যা কিছু করা হয় সবই বিদ‘আত’।[5]  

    সাহারী খাওয়া সুন্নাত। কেননা সাহারী খাওয়াতে বরকত রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) সাহারী খাওয়ার ব্যাপারে তাকীদ দিয়েছেন। হাদীছে এসেছে,عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً- আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা সাহারী খাও। কেননা সাহারীতে বরকত রয়েছে’।[6] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেন,فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَرِ ‘আমাদের ও আহলে কিতাবের (ইহূদী ও খৃষ্টান) সওমের পার্থক্য হ’ল সাহারী খাওয়া’।[7] অন্যত্র এসেছে,

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ أَحَدُكُمْ وَالْإِنَاءُ فِي يَدِهِ فَلَا يَضَعْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ-

    ‘আবু হুরায়রা হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, (সাহারী খাবার সময়) তোমাদের কেউ ফজরের আযান শুনতে পেলে সে যেন হাতের পাত্র রেখে না দেয়। যে পর্যন্ত না সে তা হ’তে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে’।[8]

    ইফতার :

    ইফতারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ আর শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে যথেষ্ট হবে। তবে ইফতার শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্য দো‘আ পড়েছেন।  ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) ইফতার করার পর বলতেন, عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَفْطَرَ قَالَ ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ (যাহাবায যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল উরূকু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লাহ)। অর্থ পিপাসা দূরীভুত হ’ল ও শিরাগুলি সঞ্জীবিত হ’ল এবং আল্লাহ চাহে তো পুরষ্কার ওয়াজিব হ’ল’।[9]

    ইফতারের দো‘আ হিসাবে প্রসিদ্ধ দো‘আ اللَّهُمَّ لَكَ صَمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ এই হাদীছটি মুরসাল হিসাবে বর্ণিত হওয়ায় তা অগ্রহনীয়। সুতরাং ইফতার শেষে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত দো‘আ পড়া যায়। সূর্যাস্তের সাথে সাথে ছায়েম ইফতার করবে। সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পর সতর্কতামূলক কয়েক মিনিট দেরীতে ইফতারের প্রচলিত রেওয়াজ ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَاهُنَا وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَاهُنَا وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ ‘যখন ওদিক থেকে রাত (পূর্ব দিক হ’তে) নেমে আসে, আর এদিক থেকে (পশ্চিম দিকে) দিন চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখনই ছায়েম ইফতার করবে’।[10] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ ‘মানুষ ততদিন কল্যাণের সাথে থাকবে, যতদিন তারা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে’।[11] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেছেন, لَا يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ، لِأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ ‘দ্বীন চিরদিন বিজয়ী থাকবে, যতদিন লোকেরা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কেননা ইহূদী-নাছারারা ইফতার দেরীতে করে’।[12]

    যদি কোন ব্যক্তি ছিয়াম পালনকারীকে ইফতার করায় তাহ’লে তার সমপরিমাণ নেকী তার আমলনামায় লেখা হয়। অথচ ছিয়াম পালনকারীর ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا أَوْ جَهَّزَ غَازِيًا فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ ‘যে ব্যক্তি ছায়েমকে ইফতার করাবে অথবা কোন যোদ্ধাকে (যুদ্ধের সামগ্রী দিয়ে) সুসজ্জিত করে দেবে, তার জন্যই সমপরিমাণ ছওয়াব রয়েছে’।[13]

    ছিয়ামের পবিত্রতা :

    রামাযান মাসে অনর্থক কথা-বার্তা বলা, মিথ্যা কথা বলা, গালি-গালাজ করা, গীবত করা, যুলুম করা ও অশ্লীল কার্যকলাপ সহ যাবতীয় অন্যায়-অনাচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা এবং সে অনুযায়ী কার্যকলাপ পরিত্যাগ করেনি, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’।[14]

    ছিয়ামের গুরুত্ব :

    আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ  وَفِي رِوَايَةٍ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ وَفِي رِوَايَةٍ فُتِحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ ‘যখন রামাযান মাস আরম্ভ হয় তখন আসমানের দরজা-সমূহ খুলে দেয়া হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শিকলবন্দী করা হয়। অপর এক বর্ণনায় এসেছে রহমাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়’।[15]

    আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন রামাযান মাস শুরু হয় তখন আহবানকারী ঘোষণা দেন। بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ ‘হে কল্যাণ অনুসন্ধানকারী! আল্লাহর কাজে এগিয়ে দাও। হে অকল্যাণ ও মন্দ অনুসন্ধানী! অল্যাণ কাজ হ’তে) থেমে যাও। এ মাসে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন এবং এটা (রামাযান মাসের) প্রত্যেক রাতেই হয়ে থাকে’।[16]

    عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ، يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ إِنِّي مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ، وَيَقُولُ الْقُرْآنُ: مَنَعْتُهُ النُّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ، فَيُشَفَّعَانِ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ছিয়াম এবং পার্থিব কুরআন বান্দার জন্য শাফা‘আত করবে। ছিয়াম বলবে হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফা‘আত কবুল কর। কুরআন বলবে হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুফারিশ গ্রহণ কর। অতঃপর উভয়ের সুফারিশ গ্রহণ করা হবে’।[17]

    ছিয়ামের ফযীলত :

    গুনাহ মাফের একটি বড় মাধ্যম হ’ল ছিয়াম। যে ব্যক্তি পূর্ণ ইখলাছের সাথে ছিয়াম পালন করে তার যাবতীয় গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা কর দেন। এ মর্মে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় রামাযানে ছিয়াম পালন করে তার বিগত সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়’।[18] অন্য হাদীছে এসেছে,

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ  صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى  إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي، لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ، فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ، وَلَخُلُوفِ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ: إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ-

    ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমলের দশগুণ হ’তে সাতশত গুণ ছওয়াব প্রদান করা হয়। আল্লাহ বলেন, কিন্তু ছওম ব্যতীত। কেননা ছওম কেবল আমার জন্যই (রাখা হয়) এবং আমিই তার পুরষ্কার প্রদান করব। সে তার যৌনাকাঙ্খা ও পানাহার কেবল আমার জন্যই পরিত্যাগ করে। ছিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি ইফতারকালে, অন্যটি তার প্রভুর সাথে দীদারকালে। তার মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকটে মিশকে আম্বরের খোশবুর চেয়েও সুগন্ধিময়। ছিয়াম (অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে) ঢাল স্বরুপ। অতএব যখন তোমরা ছিয়াম পালন করবে, তখন মন্দ কথা বলবে না ও বাজে বকবে না। যদি কেউ গালি দেয় বা লড়াই করতে আসে তখন বলবে, আমি ছায়েম’।[19]

    সাহল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম ছাঃ) বলেছেন,

     إِنَّ فِى الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ، فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ-

    ‘জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে ক্বিয়ামতের দিন ছওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর  কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশে করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, ছিয়াম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে’।[20]

    অসুস্থ হ’লে বা সফর থাকলে তার ছিয়াম :

    রামাযান মাসে যদি কেউ রোগাক্রান্ত হয় কিংবা সফরে থাকে এমতাবস্থায় তাকে ছিয়াম পালনের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে হবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ  ‘অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পীড়িত হবে অথবা সফরে থাকবে, সে যেন এটি অন্য সময় পালন করে’ (বাক্বারা ২/১৮৪)

    হাদীছে এসেছে,عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ إِنَّ حَمْزَةَ بْنَ عَمْرٍو الْأَسْلَمِيَّ قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصُومُ فِي السَّفَرِ؟ وَكَانَ كَثِيرَ الصِّيَامِ، فَقَالَ إِنْ شِئْتَ فَصُمْ وَإِنْ شِئْتَ فَأَفْطِرْ ‘আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, হামযাহ ইবনু আমর আসলামী (রাঃ) অধিক ছিয়াম পালনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি নবী (ছাঃ)-কে বললেন, আমি সফরেও কি ছিয়াম পালন করব? তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে তুমি ছিয়াম পালন করতে পার অথবা ইচ্ছা করলে নাও করতে পার’।[21] 

    অতি বৃদ্ধ যারা ছিয়াম পালনে অক্ষম তাদের বিধান :

    শক্তিহীন, অতিবৃদ্ধ ও দুর্বলদের জন্য শারঈ বিধান হচ্ছে ফিদইয়া প্রদান করা। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ‘আর যাদের জন্য এটি খুব কষ্টকর হবে, তারা যেন এর পরিবর্তে একজন করে অভাবীকে খাদ্য দান করে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৪)। ছাহাবী আনাস (রাঃ) গোস্ত-রুটি বানিয়ে একদিন ৩০জন মিসকীন খাইয়ে ছিলেন। ইবনু আববাস (রাঃ) গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনী মাহিলাদেরকে ছিয়ামের ফিদইয়া আদায় করতে বলতেন’।[22]

    স্ত্রী সহবাসের বিধান :

    রামাযান মাসে দিনের বেলায় যৌন সম্ভোগ করা হারাম। এতে ছিয়াম ভঙ্গ হয় এবং কাফফা্রা আদায় করতে হয়। কাফফা্রা হ’ল একটি ক্রীতদাস মুক্ত করা অথবা একটানা দু’মাস ছিয়াম পালন করা অথবা ৬০ (ষাট) জন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো। এমর্মে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَجُلاً وَقَعَ بِامْرَأَتِهِ فِى رَمَضَانَ، فَاسْتَفْتَى رَسُولَ اللَّهِ  صلى الله عليه وسلم فَقَالَ هَلْ تَجِدُ رَقَبَةً قَالَ لاَ قَالَ هَلْ تَسْتَطِيعُ صِيَامَ شَهْرَيْنِ  قَالَ لاَ قَالَ فَأَطْعِمْ سِتِّينَ مِسْكِينًا ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, এক লোক রামাযানে স্ত্রীর সাথে যৌন সম্ভোগ করে ফেললো। তারপর রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ফৎওয়া জানতে চাইল। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, একটি গোলাম আযাদ করার সামর্থ্য তোমার আছে কি? সে বলল না। তিনি বললেন, তাহ’লে একাধারে দু’মাস ছিয়াম পালন করতে পারবে কি? সে বলল, না; তিনি বললেন, তাহ’লে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াও।[23]

    তবে রামাযান মাসে রাতে স্ত্রী সহবাস করা বৈধ। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ ‘ছিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রীগমন সিদ্ধ করা হ’ল। তারা তোমাদের পোষাক এবং তোমরা তাদের পোষাক’ (বাক্বারাহ ২/১৮৭)

    লায়লাতুল ক্বদর :

    মাহে রামাযান মাসে মর্যাদাপূর্ণ একটি রাত রয়েছে। যা ক্বদরের রাত। এ রাতের ইবাদত ও নেক আমল হাযার হাযার মাসের রাতের তুলনায় উত্তম।

    এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ   ‘ক্বদরের রাত্রি হাযার মাস অপেক্ষা উত্তম’ (ক্বদর ৯৭/৩)

    এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত্রিতে ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় ছালাতে রত থাকবে, আল্লাহ তার বিগত সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন’।[24] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেন,

     فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ-

    ‘রামাযান মাসে একটি রাত আছে, যা হাযার মাসের চাইতে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হ’ল সে (আল্লাহর বিশেষ রহমত থেকে) বঞ্চিত রইল’।[25] 

    এ রাতের বিশেষ একটি দো‘আ রয়েছে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলে দিন, আমি যদি ক্বদরের রাত পাই তাহ’লে কি দো‘আ করব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি এই দো‘আ পড়বে, اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعَفُ عَنِّي ‘হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা পসন্দ কর। অতএব আমাকে তুমি ক্ষমা কর’।[26] 

    লায়লাতুল ক্বদর কোন তারিখে হয়ে থাকে সে বিষয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ ‘তোমরা রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলিতে লায়লাতুল ক্বদর সন্ধান কর’।[27]

    বিভিন্ন ছহীহ হাদীছে এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে যার আলোকে বিদ্বানগণ এক একটির উপরে জোর দিয়েছেন। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সমস্ত হাদীছ একত্রিত করলে এ রাত্রিতে নির্দিষ্ট করার কোন উপায় নেই। সুতরাং নির্দিষ্ট একটি দিনে নয় বরং রামাযানের শেষ দশকে বেজোড় রাত্রিগুলিতে লায়লাতুল ক্বদর লাভের আশায় সাধ্যমত চেষ্টা চালাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আমল সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) বলেন, كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ ‘শেষ দশক হাযির হ’লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সারা রাত জাগতেন, পরিবারের সবাই জাগাতেন এবং খুব কষ্ট করতেন ও কোমরে কাপড় শক্ত করে বেঁধে নিতেন’।[28]

    রামাযানের শিক্ষা : 

    (১) মুত্তাকবী হওয়া : মাহে রামাযান মাস আসে বান্দাকে পাপ, পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করে মুত্ত্বাকী করার জন্য। মহান আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হ’ল, যেমন তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হ’তে পার’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)

    যে যত তাক্বওয়াশীল আল্লাহর নিকট সে তত সম্মানিত; এম মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)

    (২) কুরআন তেলাওয়াত করা :

    কুরআন নাযিলের মাস হ’ল রামাযান। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ ‘রামাযান হ’ল সেই মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। যা মানুষের জন্য সুপথ প্রদর্শক ও সুপথের স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)। কুরাআন তেলাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، أَلْفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষরও পাঠ করবে, সে নেকী পাবে। আর নেকী হচ্ছে আমলের দশগুণ। আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মীম একটি অক্ষর। বরং ‘আলিফ’ একটি অক্ষর, ‘লাম’ একটি ও ‘মীম’ একটি অক্ষর’।[29]

    (৩) দান ছাদাক্বাহ করা :

    মহান আল্লাহ বলেন, وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ ‘আর আমরা তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা খরচ কর তোমাদের কারু মৃত্যু আসার আগেই’ (মুনাফিকুন ৬৩/১০)

    ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রামাযানে জিবরাঈল (আঃ) যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রামাযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী করীম (ছাঃ) তাকে কুরআন শোনাতেন। জিবরাইল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন’।[30] 

    রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেছেন, مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلَّا مَلَكَانِ يَنْزِلَانِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الْآخَرُ: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا ‘প্রতিদিন ভোরে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দানশীলকে তুমি বিনিময় দাও। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ কৃপণকে ধ্বংস করে দাও’।[31]

    (৪) ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা :

    ছিয়াম মানুষকে ভাতৃত্ববন্ধনের শিক্ষা দেয়। ধনী-দরিদ্র সবাই একসাথে পায়ে পা মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ও তারাবীহর ছালাত জামা‘আতে আদায় করা। একজন আরেকজনকে ইফতার করানো। ফলে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ، يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا وَشَبَّكَ أَصَابِعَهُ ‘একজন মুমিন আরেকজন মুমিনের জন্য ইমারত স্বরূপ যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলি একটার মধ্যে আরেকটা প্রবেশ করিয়ে দেখালেন’।[32] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেন, وَاللَّهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ ‘আল্লাহ বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’।[33]

    (৫) হালাল রূযী :

    ইবাদত কবুল হয় না হালাল রুযী ছাড়া। রামাযান মাসে বান্দা হালাল রুযী ভক্ষণের চেষ্টা করে। বিশেষ করে ইফতার ও সাহারীতে। কেননা ছিয়াম পালনের কষ্ট যেন বৃথা না যায়। ফলে রামাযান মাসে হারাম বর্জন করে হালাল গ্রহণের মানসিকতা তৈরী হয়। হালাল রুযী ভক্ষণের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا ‘হে মানব জাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর’ (বাক্বারাহ ২/১৬৮)

    পরিশেষে বলা যায়, রামাযান মাস আত্মশুদ্ধির মাস। রামাযান মাস প্রশিক্ষণের মাস। মাসব্যাপী ছিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পরিশুদ্ধ করে প্রকৃত মুমিন হিসাবে গড়ে তোলা কর্তব্য। এ মাসের শিক্ষা আগামী দিনের পথচলার পাথেয় হিসাবে গ্রহণ করুন। আল্লাহ আমাদের পবিত্র মাহে রামাযান এর ছিয়াম সাধনার তাওফীক দান করুন এবং জান্নাতের অসীলা হিসাবে কবুল করুন- আমীন!

      [লেখক : কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]

     

    [1]. বুখারী হা/৮; মুসলিম হা/১৬, মিশকাত হা/৪।

    [2]. মাসিক আত-তাহরীক, আগষ্ট ২০১০ পৃ. ২০।

    [3]. বুখারী হা/১; মিশকাত হা/১।

    [4]. বুখারী  হা/৬১৭।

    [5]. মাসিক আত-তাহরীক, মে ২০১৬, পৃ.৩২।

    [6]. বুখারী হা/১৯২৩; মুসলিম হা/১০৯৫; মিশকাত হা/১৯৮২।

    [7]. মুসলিম হা/১০৯৬; মিশকাত হা/১৯৮৩।

    [8]. আবুদাঊদ হা/২৩৫০; মিশকাত হা/১৯৮৮।

    [9]. আবুদাঊদ হা/২৩৫৭; মিশকাত হা/১৯৯৩।

    [10]. বুখারী হা/১৯৫৪; মুসলিম হা/১১০০; মিশকাত হা/১৯৮৫।

    [11]. বুখারী হা/১৯৫৭; মুসলিম হা/১০৯৮; মিশকাত হা/১৯৮৪।

    [12]. আবুদাঊদ হা/২৩৫৩; মিশকাত হা/১৯৯৫।

    [13]. তিরমিযী হা/৮০৭; ইবনু মাজাহ হা/১৭৪৬; মিশকাত হা/১৯৯২।

    [14]. বুখারী হা/১৯০৩; মিশকাত হা/১৯৯৯।

    [15]. বুখারী হা/১৮৯৯, ৩২৭৭; মুসলিম হা/১০৭৯; মিশকাত হা/১৯৫৬।

    [16]. তিরমিযী হা/৬৪২; ইবনু মাজাহ হা/১৬৪২; মিশকাত হা/১৯৬০।

    [17]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/১৯৬৩।

    [18]. বুখারী হা/৩৮,১৯০১,২০১৪; মিশকাত হা/১৯৫৮।

    [19]. বুখারী হা/১৯০৪; মুসলিম হা/১১৫১; মিশকাত হা/১৯৫১।

    [20]. বুখারী হা/১৮৯৬; মুসলিম হা/১১৫২।

    [21]. বুখারী হা/১৯৪৩; মুসলিম হা/১১২১; মিশকাত হা/২০১৯।

    [22]. মাসিক আত-তাহরীক, মে২৯০১৬, পৃ.৩২।

    [23]. বুখারী হা/১৯৩৬, ২৬০০, ৫৩৬৮, ৬০৮৭, ৬৮২১; মিশকাত হা/২০০৪। 

    [24]. বুখারী হা/৩৫,২০০৪; মিশকাত হা/১৯৫৮। 

    [25]. আহমাদ হা/৭১৪৮, ৮৯৭৯; নাসাঈ হা/২০০৬; মিশকাত হা/১৯৬২। 

    [26]. আহমাদ হা/২৫৪২৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫০;  মিশকাত হা/২০৯১। 

    [27]. বুখারী হা/২০১৭; মিশকাত হা/২০৮৩। 

    [28]. বুখারী হা/২০২৪; মুসলিম হা/১১৭৪; মিশকাত হা/২০৯০। 

    [29]. তিরমিযী ২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭। 

    [30]. বুখারী হা/১৯০২। 

    [31]. বুখারী হা/১৪৪২; মিশকাত হা/১৮৬০। 

    [32]. বুখারী হা/৪৮১, ২৪৪৬, ৬০২৬। 

    [33]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪। 

     


    HTML Comment Box is loading comments...