• free web stats
  • At-Tahreek
    চিন্তাধারা

    ইসলামে বন্ধুত্বের স্বরূপ

     

    মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর পার্থিব জীবনে চলার কাউকে না কাউকে সঙ্গী বা বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করাটাই স্বাভাবিক। বস্ত্ততঃ বন্ধুত্ব একটি পবিত্র, উন্নত, অকৃত্রিম, স্বচ্ছ, শক্তিশালী এবং সর্বজনবিদিত অনন্য সম্পর্ক। দ্বীনী বন্ধুত্ব দুনিয়াবী বন্ধুত্বের চেয়ে অনেক উত্তম ও টেকসই। কেননা এ বন্ধুত্বের সিঁড়ি হলো ঈমান আর এর ভিত্তি হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ প্রদত্ত এ বন্ধুত্বের শেষ ঠিকানা হলো জান্নাত। এই মহামূল্যবান সম্পর্কের সঠিক মূল্যায়ন মানবজাতির মধ্যে উন্মুক্ত করাই মহান আল্লাহ তা‘আলার কাম্য। নিশ্চয় মু‘মিনরা একে অপরের বন্ধু। আর মু’মিনদের বন্ধু আল্লাহ নিজেই। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ- وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ- ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ। যারা ছালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং তারা হয় বিনয়ী। আর যে ব্যক্তি বন্ধুত্ব রাখে আল্লাহর সাথে, তাঁর রাসূলের সাথে ও মুমিনদের সাথে (সে আল্লাহর দলভুক্ত হ’ল এবং) নিশ্চয়ই আল্লাহর দলই বিজয়ী’ (মায়েদাহ ৫/৫৫-৫৬)

    তাই বন্ধুত্ব স্থাপনের ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর বিশ্বাসী বান্দার সাথেই ভালোবাসা স্থাপন করতে হবে ও তার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। পারস্পরিক বন্ধুত্বের শর্ত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের ব্যতীত অন্যদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। যারা তোমাদের ক্ষতি করতে আদৌ ত্রুটি করবে না। তারা চায় তোমরা কষ্টে পতিত হও। বিদ্বেষ তাদের যবান দিয়েই বেরিয়ে আসে। আর তাদের বুকের মধ্যে যা লুকিয়ে আছে, তা আরও মারাত্মক। আমরা তোমাদের জন্য আয়াত সমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করলাম, যদি তোমরা বুঝ’ (আলে ইমরান ৩/১১৮)

    মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَيَبْتَغُونَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا- ‘যারা মুমিনদের ছেড়ে কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে? অথচ যাবতীয় সম্মান কেবল আল্লাহর জন্য’ (নিসা ৪/১৩৯)

    অন্যত্র আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের পিতা ও ভাইদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমানের মুকাবিলায় কুফরকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই সীমালংঘনকারী’ (তাওবাহ ৯/২৩)

    আল্লাহ আরো বলেন, وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ- ‘আর মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজে নিষেধ করে। তারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান’ (তাওবাহ ৯/৭১)

    মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنْتُمْ وَمَنْ يَفْعَلْهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ- ‘হে মুমিনগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছো, অথচ তারা তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখান করেছে। তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের কারণে তারা রাসূল (ছাঃ) ও তোমাদেরকে বহিষ্কার করেছে। আর যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যে আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাক, তবে তোমরা তাদেরকে কেন বন্ধুরূপে গ্রহণ করছো? তোমরা যা গোপন কর এবং তোমরা যা প্রকাশ কর সে বিষয়ে আমি সম্যক অবগত। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এটা করবে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে (মুমতাহিনাহ ৬০/১)

    হাদীছে এসেছে,

    عَنْ أَبِى سَعِيدٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِىّ-

    আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘মু’মিন ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধু বানাবে না এবং তোমার খাদ্য যেন আল্লাহভীরু লোক ছাড়া অন্য কেউ না খায়’।[1]

    আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব করা :

    হাদীছে এসেছে, عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ لِأَبِي: " يَا أَبَا ذَرٍّ، أَيُّ عُرَى الْإِيمَانِ أَوْثَقُ؟ " قَالَ: اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: " الْمُوَالَاةُ فِي اللهِ، وَالْحُبُّ فِي اللهِ، وَالْبُغْضُ فِي اللهِ-  আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) আবু যার (রাঃ)-কে বললেন, ‘হে আবু যার! ঈমানের কোন শাখাটি অধিক মজবুত? তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। রাসূল (ছাঃ) বললেন, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব স্থাপন করা, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে কাউকে ভালবাসা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাউকে ঘৃণা করা’।[2]

    আল্লাহ তা‘আলার ভালবাসা যাদের জন্য ওয়াজিব হয় :

    হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَجُلاً زَارَ أَخًا لَهُ فِى قَرْيَةٍ أُخْرَى فَأَرْصَدَ اللَّهُ لَهُ عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا فَلَمَّا أَتَى عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيدُ قَالَ أُرِيدُ أَخًا لِى فِى هَذِهِ الْقَرْيَةِ. قَالَ هَلْ لَكَ عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا قَالَ لاَ غَيْرَ أَنِّى أَحْبَبْتُهُ فِى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ. قَالَ فَإِنِّى رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি তার কোন এক মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছায় রওনা করল যিনি অপর গ্রামে ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা রাস্তায় তার অপেক্ষায় একজন ফেরেশতা বসিয়ে দিলেন। সে যখন সেখানে পৌঁছল ফেরেশতা জিঙ্গেস করল, কোথায় যেতে ইচ্ছ করেছ? সে বলল, ঐ গ্রামে আমার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছা করেছি। ফেরেশতা বলল, তার কাছে তোমার কোন অনুগ্রহ পাওনা আছে যে তুমি তা আনবে? সে বলল, না; আমি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাকে ভালবাসি। তখন ফেরেশতা বলল, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কাছে প্রেরিত হয়েছি। আল্লাহ তোমাকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলাও তোমাকে অনুরূপ ভালোবাসেন যে রূপ তুমি তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবেসেছ’।[3] 

    আরশের ছায়ার নিচে স্থান :

    বেহেশতে প্রবেশের পূর্বে সূর্য যখন মাথার নিকটবর্তী হবে। তেজদ্বীপ্ত সূর্যরশ্মি বিকিরণ করতে থাকবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তার মহা গৌরবে ভালোবাসা স্থাপনকারীগণকে আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন।

    হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلاَلِى الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِى ظِلِّى يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّى. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, সেই লোকেরা কোথায়? যারা আমার ইয্যতের খাতিরে একে অপরকে ভালোবাসত। আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় জায়গা দিব। আজ আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া নেই’।[4]

    মু’মিন ও কাফির বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য :

    হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِى مُوسَى رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم  قَالَ مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً . আবু মুসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সৎ লোকের সহচর্য ও অসৎ লোকের সহচর্য যথাক্রমে কস্ত্তরি ও কর্মকারের হাপরে ফুঁৎকার দেওয়ার মতো। কস্ত্তরি বিক্রেতা হয় তো তোমাকে এমনিতেই কিছু দান করবে। আর অন্ততপক্ষে কিছু না দিলেও তার সুঘ্রাণ তোমার অন্তর ও মস্তিষ্ক সঞ্চারিত করবে। পক্ষান্তরে হাপরে ফুঁৎকার দানকারী তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে। আর কিছু না হলেও তার দূর্গন্ধ তুমি পাবে’।[5]

    শেষকথা : হাসান বছরী (রহ.) বলেন, ‘দ্বীনী বন্ধু হলো আমাদের পরিবার ও সন্তাদের চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয়। কেননা আমাদের পরিবার দুনিয়া চায়, কিন্তু দ্বীনী ভাই আখেরাত’।[6] পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি হে আল্লাহ! আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশে এবং সৎ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করতে পারি সে তাওফীক দান করুন-আমীন!

    [লেখক : অনার্স ৪র্থ বর্ষ, সরকারী কলেজ, সাতক্ষীরা]

    [1]. তিরমিযী হা/৩৫৭৪।

    [2]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/ ৯৯৮; শু‘বুল ঈমান হা/৯০৬৮।

    [3]. মুসলিম হা/৬৭১৪।

    [4]. মুসলিম হা/৬৭১৩।

    [5]. বুখারী হা/৫৫৩৪; মুসলিম হা/৬৮৬০; মিশকাত হা/৫০১০।

    [6]. আবু তালিব মাক্কী, কুওওয়াতুল কুলুব ২/৩৬৭ পৃঃ।

     


    HTML Comment Box is loading comments...