অমুসলিমদের প্রতি আচরণবিধি (শেষ কিস্তি)

আসাদুল্লাহ আল-গালিব 564 বার পঠিত

৯. যিম্মী অমুসলিমদের সাথে আচরণ :

চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমদের সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের কিছু সন্তান তাদের পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যারা ছিলেন পরস্পর ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেন, أَلاَ مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوِ انْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘সাবধান! যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তির উপর যুলুম করবে বা তার প্রাপ্য কম দিবে কিংবা তাকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে ও ক্বিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হব’।[1]

অপর এক হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার এক ইহুদী তার কিছু দ্রব্য সামগ্রী বিক্রির জন্য পেশ করছিল, তার বিনিময়ে তাঁকে এমন কিছু দেওয়া হ’ল যা সে পসন্দ করল না। তখন সে বলল, না! সেই সত্তার কসম! যে মূসা (আঃ)-কে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। এ কথাটি একজন আনছারী (মুসলিম) শুনলেন, তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন, আর তার (ইহুদীর) মুখের উপর এক চড় মারলেন। আর বললেন, তুমি বলছ, সেই সত্তার কসম! যিনি মূসাকে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন অথচ নবী করীম (ছাঃ) আমাদের মাঝে বিদ্যমান। তখন সে ইয়াহুদী লোকটি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গেল এবং বলল, হে আবুল কাসিম! নিশ্চয়ই আমার জন্য নিরাপত্তা এবং আহাদ রয়েছে। অর্থাৎ আমি একজন যিম্মী। অতএব অমুক ব্যক্তির কি হ’ল, কি কারণে সে আমার মুখে চড় মারল? তখন নবী করীম (ছাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তুমি তার মুখে চড় মারলে? আনছারী ব্যক্তি ঘটনাটি বর্ণনা করল। তখন নবী করীম (ছাঃ) রাগান্বিত হ’লেন। এমনকি তার চেহারায় তা প্রকাশ পেল’।[2]

১০. উত্তম পন্থায় বিতর্ক :

অযথা কারোর সাথেই বিতর্ক করা জায়েয নয়। কখনও যদি কোন অমুসলিমের সাথে বিতর্ক করার প্রয়োজন হয় তাহ’লে তা উত্তম পন্থায় হ’তে হবে। যেমন আললাহ বলেন, وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ‘তোমরা কিতাবধারীদের সঙ্গে বিতর্ক করবে না উত্তম পন্থা ব্যতীত’ (আনকাবূত ২৯/৪৬)

১১. অমুসলিদের সাথে ক্রয়-বিক্রয় :

অমুসলিমদের সাথে ক্রয়-বিক্রয় ইসলামে নিষেধ নয়। বরং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বয়ং এক ইহুদীর কাছ থেকে একটি ছাগল ক্রয় করেছিলেন।

হাদীছে এসেছে, আব্দুর রহমান ইবনু আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন এক সফরে) নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে আমরা একশ ত্রিশজন লোক ছিলাম। সে সময় নবী করীম (ছাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কারো সাথে কি খাবার আছে? দেখা গেল, এক ব্যক্তির সঙ্গে এক ছা কিংবা তার কমবেশী পরিমাণ খাদ্য (আটা) আছে। সে আটা গোলানো হ’ল। তারপর দীর্ঘ দেহী এলোমেলো চুল বিশিষ্ট এক মুশরিক এক পাল বকরী হাকিয়ে নিয়ে এল। নবী করীম (ছাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, বিক্রি করবে, না, উপহার দিবে? সে বলল না, বরং বিক্রি করব। তিনি তার কাছ থেকে একটা বকরী কিনে নিলেন। একশ ত্রিশজনের প্রত্যেককে তিনি সেই বকরীর কলিজার কিছু কিছু করে দিলেন। যে উপস্থিত ছিল, তাকে হাতে দিলেন; আর যে অনুপস্থিত ছিল, তার জন্য তুলে রাখলেন। তারপর দু’টি পাত্রে তিনি গোশত ভাগ করে রাখলেন। সবাই তৃপ্তি সহকারে খেলেন। আর উভয় পাত্রে কিছু উদ্বৃত্ত থেকে গেল। সেগুলো আমরা উটের পিঠে উঠিয়ে নিলাম’।[3] 

১২. অমুসলিমদের সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা :

হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে বদর যুদ্ধে যোগদ এছাড়া অন্য কিছু বিরত রাখেনি যে, আমি এবং আমার পিতা হুসায়েল ঘর থেকে বেরিয়েছিলাম। এমন সময় কুরায়শ কাফির আমাদের ধরে বসে ও বলে যে, তোমরা অবশ্যই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কাছে যেতে মনস্থ করেছ। জবাবে আমরা বললাম, مَا نُرِيدُ إِلاَّ الْمَدِينَةَ ‘আমরা মদীনায় গমন ব্যতীত অন্য কিছু ইচ্ছা করি না’। তখন তারা আল্লাহর নামে আমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিল যে, আমরা অবশ্যই মদীনায় ফিরে যাব এবং তার সাথে মিলে যুদ্ধ করব না। তারপর আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম এবং সে সংবাদ তাকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, انْصَرِفَا نَفِى بِعَهْدِهِمْ وَنَسْتَعِينُ اللَّهَ عَلَيْهِمْ ‘তোমরা ফিরে যাও। আমরা তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করব এবং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য চাইব’।[4]

১৩. অমুসলিমদের সাথে চুক্তি :

সুলায়ম ইবনু আমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু‘আবিয়া (রাঃ) ও রোমবাসীদের মধ্যে একটি (মেয়াদী) চুক্তি হয়েছিল। পরে তিনি (তাঁর বাহিনীসহ) তাদের এলাকার নিকটবর্তী স্থানে গিয়ে উপনীত হ’লেন এবং চুক্তির মেয়াদ যখন শেষ হ’ল তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে অতর্কিত হামলা চালালেন। হঠাৎ শোনা গেল একজন অশ্বারোহী বর্ণনান্তরে ভারবাহী পশুর উপর আরোহী ব্যক্তি বলেছেন, اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَفَاءٌ لاَ غَدْرٌ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়াদা রক্ষা করতে হবে। ওয়াদা ভঙ্গ করা যাবে না’। দেখা গেল তিনি হ’লেন আমর ইবনু আবাসা (রাঃ)। মু‘আবিয়া (রাঃ) তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কারো যদি কোন সম্প্রদায়ের সাথে চুক্তি থাকে তবে সেই চুক্তি ভঙ্গ করা যাবে না এবং তার বিপরীত করা যাবে না যতক্ষণ না এর মেয়াদ শেষ হয় বা সমান সমানভাবে যুদ্ধ ঘোষণা না করা হয়। তখন মু‘আবিয়া তাঁর বাহিনীসহ ফিরে চলে এলেন’।[5]

১৪. কখনও অমুসলিমদের সুফারিশ কবুল করা :

জুবাইর ইবনু মুতঈম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বদরের যুদ্ধ বন্দীদের ব্যাপারে বলেন, لَوْ كَانَ الْمُطْعِمُ بْنُ عَدِيٍّ حَيًّا ثُمَّ كَلَّمَنِي فِي هَؤُلَاءِ النَّتْنَى لَتَرَكْتُهُمْ لَهُ ‘যদি মুতঈম ইবনু আদী (রাঃ) জীবিত থাকতেন আর আমার নিকট এ সকল নোংরা লোকের জন্যে সুফারিশ করতেন, তবে আমি তাঁর সম্মানার্থে এদের মুক্ত করে দিতাম’।[6]

১৫. অমুসলিম শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া :

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, (হিজরতের সময়) আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) বনূ দীল ও বনু আব্দ ইবনু আদী গোত্রের একজন অত্যন্ত সচেতন ও অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শক শ্রমিক নিয়োগ করেন, এ লোকটি আস ইবনু ওয়াইল গোত্রের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল আর সে কুরাইশী কাফিরদের ধর্মাবলম্বী ছিল। তাঁরা দু’জন [নবী (ছাঃ) ও আবু বকর (রাঃ)] তার উপর আস্থা রেখে নিজ নিজ সাওয়ারী তাকে দিয়ে দিলেন এবং তিন রাত পর এগুলো সাওর পাহাড়ের গুহায় নিয়ে আসতে বলেন, সে তিন রাত পর সকালে তাদের সওয়ারী নিয়ে তাঁদের কাছে উপস্থিত হ’ল। তারপর তাঁরা দু’জন রওয়ানা করলেন। তাঁদের সঙ্গে আমির ইবনু ফুহাইরা ও দীল গোত্রের পথপ্রদর্শক সে ব্যক্তিটিও ছিল। সে তাঁদেরকে (সাগরের) উপকূলের পথ ধরে নিয়ে গেল।[7]

১৬. অমুসলিমদের নিকট থেকে হাদিয়া গ্রহণ :

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আলী ইবনু আবু তালিব (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে হাসান ও হুসায়েন (রাঃ)-কে ক্রন্দনরত দেখতে পান। তিনি তাদের কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। ফাতিমা (রাঃ) বলেন, তারা ক্ষুধায় অস্থির হয়ে কাঁদছে। আলী (রাঃ) ঘর হ’তে বের হয়ে যান এবং বাযারে একটি দীনার পতিতাবস্থায় পান। তিনি তা ফাতিমা (রাঃ)-এর নিকট নিয়ে আসেন এবং তাকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি (ফাতিমা) বলেন, এটা নিয়ে আপনি অমুক ইহূদীর নিকট যান এবং আমাদের জন্য কিছু আটা খরিদ করে আনুন। অতঃপর তিনি (আলী) উক্ত ইহূদীর নিকট গিয়ে তা দিয়ে আটা খরিদ করেন। ঐ ইহূদী বলে, أَنْتَ خَتَنُ هَذَا الَّذِى يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ ‘আপনি তো ঐ ব্যক্তির জামাতা, যিনি বলেন যে, ‘তিনি আল্লাহর রাসূল’ আলী (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ’।

তখন ইহূদী বলে, فَخُذْ دِينَارَكَ وَلَكَ الدَّقِيقُ ‘আপনি আপনার দীনার ফেরত নেন আর এই আটাও (বিনা মূল্যে) নিয়ে যান। অতঃপর আলী (রাঃ) তা নিয়ে ফাতিমা (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। ফাতিমা (রাঃ) আলী (রাঃ)-কে বলেন, আপনি এখন অমুক কসাইয়ের নিকট যান এবং আমাদের জন্য এক দিরহাম মূল্যের গোশত খরিদ করে আনুন। তখন তিনি গমন করেন এবং দীনারটি বন্ধক রেখে এক দিরহাম মূল্যের গোশত খরিদ করেন। অতঃপর তিনি তা নিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। ফাতিমা (রাঃ) আটার রুটি তৈরী করেন এবং গোশত পাকানোর জন্য চুলার উপর হাড়ি বসান এবং নবী (ছাঃ)-কে খবর দেন। তিনি তাদের নিকট আগমন করেন। ফাতিমা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আমি আপনার নিকট দীনারের ঘটনা ব্যক্ত করব। যদি আপনি তা আমাদের জন্য হালাল মনে করেন, তবে আমরা তা ভোগ করব এবং আমাদের সাথে আপনিও তা খাবেন। আর ব্যাপার এইরূপ।

সবকিছু শ্রবণের পর তিনি বললেন, তোমরা সকলে তা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ভক্ষণ কর। তারা সকলে তা আহার করছিলেন, এমন সময় এক যুবক আল্লাহ ও ইসলামের নামে শপথ উচ্চারণ পূর্বক দীনারের অন্বেষণ করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ডাকার নির্দেশ দেন এবং তাকে ঐ দীনার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। সে বলে, তা আমার নিকট হ’তে বাযারে হারিয়ে গিয়েছে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, হে আলী! তুমি ঐ কসাইয়ের নিকট যাও এবং তাকে বল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আপনাকে দীনারটি আমার নিকট ফেরত দিতে বলেছেন এবং দিরহাম তিনি দেবেন। কসাই ঐ দীনারটি ফেরত দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা ঐ যুবককে ফেরত দেন’।[8]

৪টি কারণে অমুসলিমদের হত্যা করা যায়েজ :

১. মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে :

মহান আল্লাহ বলেন, وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ ‘আর তোমরা লড়াই কর আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে, যারা লড়াই করে তোমাদের বিরুদ্ধে এবং এতে বাড়াবাড়ি কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালবাসেন না’ (বাক্বারাহ ২/১৯০)

২. কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করলে :

মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنْ نَكَثُوا أَيْمَانَهُمْ مِنْ بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ إِنَّهُمْ لَا أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنْتَهُونَ ‘পক্ষান্তরে যদি অঙ্গীকারের পর তারা তাদের শপথ সমূহ ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অপবাদ দেয়, তাহ’লে কাফের নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। এমতাবস্থায় তাদের জন্য কোন অঙ্গীকার নেই। এর ফলে হয়তবা তারা বিরত হবে’ (তওবাহ ৯/১২)

৩. ইলাহী দাওয়াতের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে :

মহান আল্লাহ বলেন, وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ‘আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফেৎনার (কুফরীর) অবসান হয় এবং আনুগত্য স্রেফ আল্লাহর জন্য হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত্ত হয়, তবে যালেমদের ব্যতীত অন্যদের প্রতি কোন প্রতিশোধ নেই’ (বাক্বারাহ ২/১৯৩)

৪. অত্যাচারিতের সাহায্যার্থে :

মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا ‘আর তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছ না? অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা ফরিয়াদ করে বলছে, হে আমাদের প্রতিপালক! এই অত্যাচারী জনপদ থেকে আমাদের বের করে নাও এবং তোমার পক্ষ হ’তে আমাদের জন্য অভিভাবক নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ হ’তে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও’ (নিসা ৪/৭৫)

উপসংহার :

ইসলাম মানুষকে সর্বদা কল্যাণকামিতার দিকে উৎসাহ প্রদান করে থাকে। যদি কোন অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে তাহ’লে তার জন্য রয়েছে ক্ষমা। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَكَفَّرْنَا عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأَدْخَلْنَاهُمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ ‘যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনত ও আল্লাহভীতি অবলম্বন করত, তাহ’লে আমরা অবশ্যই তাদের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা করে দিতাম এবং তাদেরকে নে‘মতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাতাম’(তাওবাহ ৫/৬৫)

যদি সে ইসলাম গ্রহণ নাও করে তবুও তার সাথে আমাদের সেই সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতে হবে যাতে তারা ইসলামের পরশ ছায়ায় আগ্রহী হয়। যদিও কাফের, হিন্দু-বৌদ্ধ ইহূদী, খৃস্টানদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। মহান বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিনদের ছেড়ে কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না’ (নিসা ৪/১৪৪)। অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহূদী-নাছারাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তারা তাদের মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না’ (মায়েদাহ ৫/৫১)

আল্লাহ আমাদেরকে মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব ও অমুসলিমদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণের তাওফীক দান করুন-আমীন!

-আসাদুল্লাহ আল-গালিব

[লেখক : কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]


[1]. আবুদাঊদ হা/৩০৫২; মিশকাত হা/৪০৪৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৫৫।

[2]. বুখারী হা/৩৪১৪।

[3]. বুখারী হা/২৬১৮।

[4]. মুসলিম হা/১৭৮৭; আহমাদ হা/২৩৪০২।

[5]. আবু দাঊদ হা/২৭৫৯; আহমাদ হা/১৭০৬৬; মিশকাত হা/৩৯৮০।

[6]. বুখারী হা/৩১৩৯; আহমাদ হা/১৬৭৭৯; মিশকাত হা/৩৯৬৫।

[7]. বুখারী হা/২২৬৩।

[8]. আবু দাঊদ হা/১৭১৬, হাদীছ হাসান।



আরও