আমল বিনষ্টকারী পাপসমূহ (শেষ কিস্তি)
আসাদ বিন আব্দুল আযীয
আসাদ বিন আব্দুল আযীয 878 বার পঠিত
ঘ. পবিত্র কুরআনে বর্ণিত গুনাহ মাফের আমলসমূহ :
আল্লাহ তার বান্দার প্রতি রহমশীল। তিনি বান্দার গুনাহ সমূহ মাফ করতে চান। গুনাহগার বান্দারা যাতে আল্লাহর রহমত হ’তে নিরাশ না হয় এজন্য নবী করীম (ছাঃ)-কে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ বলছেন, قُلْ يَاعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ- ‘বল, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (যুমার ৩৯/৫৩)। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বান্দার গুনাহ মাফের নানাবিধ আমল পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
১. পরিপূর্ণ ঈমান আনায়ন ও তাক্বওয়া অবলম্বন :
আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান আনায়ন করা একজন মুমিন বান্দার জন্য গুনাহ মাফের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَكَفَّرْنَا عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأَدْخَلْنَاهُمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ- ‘যদি আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো ও আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করত, তাহ’লে আমরা অবশ্যই তাদের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা করে দিতাম এবং তাদেরকে নে‘মতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাতাম’ (মায়েদাহ ৫/৬৫)।
ঈমানের সাথে তাক্বওয়া অবলম্বন অপরিহার্য বিষয়। কেননা তাক্বওয়া না থাকলে ঈমানের পূর্ণতা লাভ হয় না। সুতরাং ঈমান ও তাক্বওয়ার বলে বলিয়ান মুমিন বান্দার গুনাহ মাফের বিষয়ে মহান আললাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ- ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহভীরু হও, তাহ’লে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দিবেন এবং এর ফলে তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হলেন মহা অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ৮/২৯)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا- ‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার পাপসমূহ মোচন করেন ও তাকে মহা পুরষ্কারে ভূষিত করেন’ (ত্বলাক্ব ৬৫/৫)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيَجْعَلْ لَكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি স্বীয় অনুগ্রহে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরষ্কার দিবেন। তিনি তোমাদেরকে দিবেন নূর। যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াবান’ (হাদীদ ৫৭/২৮)।
২. ঈমান ও সৎআমল :
ঈমান আনায়নের পরই সৎআমল করতে হবে। কেননা ঈমানের সাথে সৎআমল করলে মন্দ আমল আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা মিটিয়ে দেন। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَحْسَنَ الَّذِي كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে অবশ্যই আমরা তাদের মন্দকর্মগুলি মিটিয়ে দেব এবং তাদের কাজের উত্তম ফল দান করব’ (আনকাবুত ২৯/৭)।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّهِمْ كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ ‘পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে এবং মুহাম্মাদের উপর তার প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে যা নাযিল হয়েছে যা সত্য, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে; আল্লাহ তাদের মন্দকর্ম সমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللهِ وَيَعْمَلْ صَالِحًا يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ‘অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তিনি তার পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর সেটাই হ’ল মহা সফলতা’ (তাগাবুন ৬৪/৯)।
৩. ধৈর্য ও সৎ আমল :
ধৈর্য ধারণ একটি মহৎগুণ। যা একজন মুমিনের জন্য যরূরী। সুতরাং একজন মুমিন বান্দা ধৈর্য ধারণ ও সৎ আমলের বিনিময়ে কৃত অপরাধের ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার অর্জন করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ ‘কিন্তু তারা ব্যতীত যারা ধৈর্য ধারণ করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। এমন লোকদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার’ (হুদ ১১/১১)।
৪. শিরক থেকে মুক্ত থাকা :
শিরক একটি গুরুতর অপরাধ। কোন ব্যক্তি যদি শিরক থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে তাহ’লে সে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার ক্ষমা লাভ করবে। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالاً بَعِيدًا- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এটা ব্যতীত যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে থাকেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে ব্যক্তি দূরতম ভ্রষ্টতায় নিপতিত হ’ল’ (নিসা ৪/১১৬)।
৫. কাবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা :
শিরক ব্যতীত অন্যান্য কাবীরা গুনাহ রয়েছে। যেমন যাদু করা, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, সূদ খাওয়া, স্বতী-স্বাধ্বী নারীর উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি। যে ব্যক্তি এসমস্ত নিষিদ্ধ পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে সে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার ক্ষমা লাভে ধন্য হবে। মহান আল্লাহ বলেন, إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا- ‘তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে, তার মধ্যে যা গুরুতর (পাপ) তা থেকে বিরত থাকলে আমি তোমাদের লঘুতর পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবো’ (নিসা ৪/৩১)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ- ‘যারা বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কর্ম সমূহ হ’তে বেঁচে থাকে ছোটখাটো পাপ ব্যতীত, (সে সকল তওবাকারীর জন্য) তোমার প্রতিপালক প্রশস্ত ক্ষমার অধিকারী’ (নজম ৫৩/৩২)।
৬. বিশুদ্ধ তাওবাহ :
মানুষ মাত্রই ভুলকারী। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে কখনও ভুল হ’লে আল্লাহ তা‘আলা তওবার মাধ্যমে সংশোধনের পথ রেখেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيمًا- ‘তবে তারা ব্যতীত, যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)।
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়’ (তাহরীম ৬৬/৮)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ عَمِلُوا السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَحِيمٌ- ‘অতঃপর যারা অজ্ঞতাবশে কোন অন্যায় কাজ করে, অতঃপর তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে নেয়, তোমার পালনকর্তা এসবের পর তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল ও করুণাময়’ (নাহল ১৬/১১৯)।
তিনি আরো বলেন,وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِمَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى- ‘আর আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির প্রতি, যে (শিরক হ’তে) তওবা করে এবং (আল্লাহর উপরে) ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। অতঃপর আমৃত্যু সৎপথে অবিচল থাকে’ (ত্বহা ২০/৮২)।
মহান আল্লাহ বলেন,إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ- ‘তবে যারা তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে নেয় এবং সত্য প্রকাশ করে দেয়, আমি তাদের তওবা কবুল করি। বস্ত্ততঃ আমি সর্বাধিক তওবা কবুলকারী ও দয়ালু’ (বাক্বারাহ ২/১৬০)।
এছাড়াও মহান আল্লাহ বলেন,فَمَنْ تَابَ مِنْ بَعْدِ ظُلْمِهِ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللهَ يَتُوبُ عَلَيْهِ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ- ‘কিন্তু যে ব্যক্তি সীমালংঘনের পর তওবা করে ও সংশোধিত হয়, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (মায়েদাহ ৫/৩৯)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى اللهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ- ‘এরপরেও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না (অর্থাৎ তওবা করবে না) ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (মায়েদাহ ৫/৭৪)।
৭. ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা :
গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে নেয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হ’ল আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ-أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ- ‘যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করলে কিংবা নিজের উপর কোন যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে। অতঃপর স্বীয় পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কে আছে? আর যারা জেনেশুনে স্বীয় কৃতকর্মের উপর হঠকারিতা প্রদর্শন করে না’। ‘ঐসব লোকদের জন্য প্রতিদান হ’ল তাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে ক্ষমা ও জান্নাত। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। সৎকর্মশীলদের জন্য কতইনা সুন্দর প্রতিদান!’ (আলে ইমরান ১৩৫-১৩৬)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَمَنْ يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّهَ يَجِدِ اللَّهَ غَفُورًا رَحِيمًا- ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে’ (নিসা ৪/১১০)।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,فَاسْتَغْفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُجِيبٌ- ‘অতএব তোমরা তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর দিকেই ফিরে চল বা তওবা কর। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক একান্ত নিকটে এবং দো‘আ কবুলকারী’ (হূদ ১১/৬১)।
৮. আল্লাহর ভালবাসা ও নবীর আনুগত্য :
কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহকে ভালবাসে এবং নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য রাখে তাহ’লে তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আলে ইমরান ৩/৩১)।
৯. ক্ষমা-মার্জনা :
গুনাহ ক্ষমা করে নেওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হ’ল মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا يَأْتَلِ أُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ أَنْ يُؤْتُوا أُولِي الْقُرْبَى وَالْمَسَاكِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ فِي سَبِيلِ اللهِ وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ- ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঐশবর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন এমন শপথ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজনকে, অভাবগ্রস্তদেরকে এবং আল্লাহর পথে যারা গৃহত্যাগ করেছে, তাদেরকে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাদের মার্জনা করে ও দোষ-ত্রুটি এড়িয়ে যায়। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াবান’ (নূর ২৪/২২)।
মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ- ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানাদির মধ্যে তোমাদের শত্রু রয়েছে। অতএব তাদের থেকে সাবধান হও। এক্ষণে যদি তোমরা তাদের মার্জনা কর ও দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর ও ক্ষমা কর, তাহ’লে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াবান’ (তাগাবুন ৬৪/১৪)।
১০. আল্লাহর পথে সংগ্রাম :
আল্লাহর পথে যারা সংগ্রাম চালায়, সমাজ সংস্কারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ- تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ- يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদের এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে?’। ‘সেটা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে তোমাদের মাল ও জান দিয়ে । এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। (বিনিময়ে) তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন এক উদ্যানে, যার পাদদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয় এবং (প্রবেশ করাবেন ‘আদন’ নামক) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহসমূহে। আর এটাই হ’ল মহা সাফল্য’ (ছফ ৬১/১০-১২)।
মহান আল্লাহ বলেন,فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ثَوَابًا مِنْ عِنْدِ اللهِ وَاللهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ- ‘অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের দো‘আ কবুল করলেন এই মর্মে যে, পুরুষ হৌক নারী হৌক আমি তোমাদের কোন কর্মীর কর্মফল বিনষ্ট করব না। তোমরা পরস্পরে এক (অতএব কর্মফলে সবাই সমান)। অতঃপর যারা হিজরত করেছে ও নিজ বাড়ী থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে এবং আমার রাস্তায় নির্যাতিত হয়েছে। যারা লড়াই করেছে ও নিহত হয়েছে, অবশ্যই আমি তাদের দোষ-ত্রুটিসমূহ মার্জনা করব এবং অবশ্যই আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। এটি আল্লাহর নিকট হ’তে প্রতিদান। বস্ত্ততঃ আল্লাহর নিকটেই রয়েছে সর্বোত্তম পুরস্কার’ (আলে ইমরান ৩/১৯৫)।
১১. সঠিক ও সত্য কথা বলা :
মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا- يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْوَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’। ‘তাহ’লে তিনি তোমাদের কর্মসমূহকে সংশোধন করে দিবেন ও তোমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করবেন’ (আহযাব ৩৩/৭০-৭১)।
১২. কাফফারার বিনিময়ে :
কোন ব্যক্তি যদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে দুনিয়ায় শাস্তি ভোগ করে, তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করে দেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত কয়েকটি কাফফারা উল্লেখ রয়েছে।
ক. ক্বিছাছের কাফফারা :
মহান আল্লাহ বলেন,وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ- ‘আর আমরা তাদের উপর বিধিবদ্ধ করেছিলাম যে, জীবনের বিনিময়ে জীবন, চোখের বদলে চোখ, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সেটি তার জন্য কাফফারা হয়ে যায়। বস্ত্ততঃ যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফায়ছালা করে না, তারা যালেম’ (মায়েদাহ ৫/৪৫)।
খ. শপথ ভঙ্গের কাফফারা :
মহান আল্লাহ বলেন,لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ- لِلَّذِينَ يُؤْلُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ تَرَبُّصُ أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ فَإِنْ فَاءُوا فَإِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ- ‘অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদের ধরবেন না। তবে ঐসব শপথের জন্য তিনি তোমাদের পাকড়াও করবেন, যা তোমরা মনের সংকল্প অনুযায়ী করে থাক। বস্ততঃ আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও সহনশীল’। ‘যারা স্ত্রীগমণ থেকে শপথ করে, তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে। যদি এর মধ্যে তারা ফিরে আসে, তাহ’লে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (বাক্বারাহ ২/২২৫-২২৬)।
গ. যিহারের কাফফারা আদায়ে :
মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا ذَلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ- فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ذَلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللهِ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ- ‘যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে নেয়, তারা তাদের স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করবে। এর দ্বারা তোমাদের উপদেশ দেওয়া হ’ল। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সবই খবর রাখেন’। ‘কিন্তু যারা এর সামর্থ্য রাখে না, তারা পরস্পরে স্পর্শ করার পূর্বে একটানা দু’মাস ছিয়াম রাখবে। আর তাতে অক্ষম হ’লে ষাটজন মিসকীন খাওয়াবে। এটা এজন্য (যাতে ঐ বাজে কথা হ’তে তওবা করে) তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর (পুরোপুরি) ঈমান আনতে পার। বস্ত্ততঃ এটি হল আল্লাহর নির্ধারিত দন্ডবিধান। একে (প্রত্যোখ্যানকারী) কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’(মুজাদালাহ ৫৮/৩-৪)।
১৩. মুসলিম নারী-পুরুষ-আল্লাহকে স্মরণকারী নারী-পুরুষ :
মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا- ‘নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনীত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, ছিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, এদের জন্য আল্লাহ প্রস্ত্তত রেখেছেন ক্ষমা ও মহা পুরস্কার’ (আহযাব ৩৩/৩৫)।
১৪. উপদেশ গ্রহণ ও আল্লাহকে ভয় করা :
এক কথা সত্য যে, উপদেশ দেওয়া লোকের অভাব নেই। কিন্তু উপদেশ মানা লোকের বড়ই অভাব। যে ব্যক্তি কুরআন ছহীহ সুন্নাহর আলোকে কোন উপদেশ পেল এবং আল্লাহকে ভয় করল, এমন ব্যক্তির জন্য রয়েছে ক্ষমা। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمَنَ بِالْغَيْبِ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَأَجْرٍ كَرِيمٍ- ‘তুমি কেবল তাকেই সতর্ক করতে পার, যে উপদেশ মেনে চলে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় করে। অতএব তুমি তাদেরকে (আল্লাহর) ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের সুসংবাদ দাও’ (ইয়াসীন ৩৬/১১)।
১৫. দাঈদের দাওয়াত কবুল করা :
যখন কোন দাঈর সঠিক ও বিশুদ্ধ দাওয়াত কারো কাছে পৌঁছবে তখনই তাকে তা কবুল করতে হবে। কেননা এর বিনিময়ে আল্লাহ ক্ষমা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللَّهِ وَآمِنُوا بِهِ يَغْفِرْ لَكُمْ مِنْ ذُنُوبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ- ‘হে আমাদের সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর পথে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দাও এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন’ (আহক্বাফ ৪৬/৩১)।
১৬. গোপনে ছাদাক্বা প্রদান :
গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হ’ল গোপনে ছাদাক্বা করা। মহান আল্লাহ বলেন,إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ- ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে কর ও অভাবীদের প্রদান কর, তবে তোমাদের জন্য তা আরও উত্তম। এবং (এর দ্বারা) তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করে দিবেন। আর তোমরা (গোপনে) যা কিছু কর, আল্লাহ তা খবর রাখেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭১)।
মহান আল্লাহ বলেন,إِنْ تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তাহ’লে তিনি তোমাদের জন্য সেটি বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। তিনি গুণগ্রাহী, সহনশীল’ (তাগাবুন ৬৪/১৭)।
১৭. সৎ কাজ :
ভাল কাজ দ্বারা ব্যক্তি জীবনের গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন,وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ ‘আর তুমি ছালাত কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তে ও রাত্রির কিছু অংশে। নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ মন্দ কর্মসমূহকে বিদূরিত করে। আর এটি (অর্থাৎ কুরআন) হ’ল উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য (সর্বোত্তম) উপদেশ’ (হূদ ১১/১১৪)। [ক্রমশ]
-আসাদ বিন আব্দুল আযীয
লেখক : কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ