ফযীলতপূর্ণ চারটি যিকর
নাজমুল আহসান
উপস্থাপনা :
মহান আল্লাহ পবিত্র। সমস্ত প্রশংসা তারই। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি সর্বোচ্চ। তিনি তাঁর বান্দাকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। সুতারাং বান্দারা ফরয ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত ও যিকর-আযকারের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারে। জান্নাতে যাওয়ার জন্য স্বল্প পরিশ্রমে অধিক নেকী অর্জনে এমন কতক যিকির রয়েছে যার ফযীলত অত্যাধিক। নিম্নে ফযীলতপূর্ণ ৪টি যিকর ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’ প্রসঙ্গে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহর প্রিয়তম বাক্য :
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বাক্য চারটি। সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি। (১) سُبْحَانَ اللهِ ‘সুবহানাল্লাহ’ (২) الْحَمْدُ لِلَّهِ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (৩) لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ (৪) اللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লাহু আকবার। এই চারটি কালেমার যে কোন একটি (আগ-পিছ করে) প্রথমে বললে কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[1]
সূর্যালোকিত সকল বস্ত্তর চেয়ে উত্তম :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لأَنْ أَقُولَ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ- ‘আমার এই বাক্যমালা ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করা সেই সমস্ত বস্ত্ত অপেক্ষা অধিক প্রিয়, যার উপর সূর্যোদয় হয়’।[2]
১০০টি কুরবানীর পশু, ১০০টি আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহৃত ঘোড়া ও ১০০টি গোলাম আযাদের চেয়ে উত্তম :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে সেটা তার জন্য ১০০টি কুরবানীর পশুর চাইতেও উত্তম হবে’। যে ব্যক্তি সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে সেটা তার জন্য আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহৃত ১০০টি ঘোড়ার চাইতেও উত্তম হবে’। যে ব্যক্তি সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে সেটা তার জন্য ১০০টি গোলাম আযাদের চাইতেও উত্তম হবে’।[3]
সমূদ্রের ফেনাতুল্য পাপ মোচন :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত ছালাতের শেষে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার আর এভাবে নিরানববই বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা-লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’ তার গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মত অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেয়া হয়’।[4]
গ্রীষ্মকালীন গাছের পাতা ঝরার ন্যায় গুনাহ মাফ :
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি শুকনা পাতাওয়ালা গাছের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তার লাঠি দিয়ে তাতে আঘাত করলে পাতাগুলো ঝরে পড়ে। অতঃপর তিনি বললেন, إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ لَتُسَاقِطُ مِنْ ذُنُوبِ الْعَبْدِ كَمَا تَسَاقَطَ وَرَقُ هَذِهِ الشَّجَرَةِ- কোন বান্দা ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ‘আল্লাহু আকবার’ বললে তা তার গুনাহসমূূহ অনুরূপভাবে ঝরিয়ে দেয় যেভাবে এই গাছের পাতাসমূহ ঝরে পড়েছে’।[5]
জান্নাতে বৃক্ষ রোপন :
ইবনু মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মিরাজের রাতে আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মাতকে আমার সালাম পৌঁছিয়ে দিন এবং তাদেরকে জানান যে, أَنَّ الْجَنَّةَ طَيِّبَةُ التُّرْبَةِ عَذْبَةُ الْمَاءِ وَأَنَّهَا قِيعَانٌ وَأَنَّ غِرَاسَهَا سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ- জান্নাতের যমীন অতীব সুগন্ধি সমৃদ্ধ এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তা একটি সমতল ভূমি এবং তার গাছপালা হ’ল ‘সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদু লিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’।[6]
অধিক পাঠকারী জান্নাতে অগ্রগামী :
আব্দুললাহ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার বনু উযরার তিন ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তোমাদের মাঝে কে এদের দায়িত্ব নিতে পারে? তালহা (রাঃ) বললেন, আমি। (শাদ্দাদ বলেন,) অতএব তারা তালহা-এর কাছে থাকতে লাগল, এরপর এক সময় নবী করীম (ছাঃ) কোন এক অভিযানে একদল সৈন্য পাঠালেন, তখন তাদের একজন ঐ সেনাদলের সাথে বের হ’ল এবং যুদ্ধে শহীদ হয়ে গেল। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) অন্য একটি সেনাদল পাঠালেন। এ দলের সাথেও দ্বিতীয় একজন বের হ’ল এবং সেও শহীদ হ’ল। এরপর (একদিন) তৃতীয়জন (স্বাভাবিক অবস্থায়) নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করল। বর্ণনাকারী (ইবনু শাদ্দাদ) বলেন, তালহা (রাঃ) বললেন, এরপর আমি এক সময় উক্ত তিন ব্যক্তিকে (স্বপ্নযোগে) জান্নাতের মধ্যে দেখতে পেলাম এবং এটাও দেখলাম যে, স্বীয় বিছানায় মৃত ব্যক্তিটি তাদের সামনে রয়েছে এবং দ্বিতীয় অভিযানে শহীদ ব্যক্তিটি রয়েছে তার পিছনে, আর এর পিছনে রয়েছে প্রথম ব্যক্তি। তালহা (রাঃ) বলেন, তাদের এ ক্রমিক আমার মনে একটি সন্দেহ জাগল। অতএব এ কথাটি আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেন,وَمَا أَنْكَرْتَ مِنْ ذَلِكَ؟ ! لَيْسَ أَحَدٌ أَفْضَلَ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَمَّرُ فِي الْإِسْلَامِ لِتَسْبِيحِهِ وَتَكْبِيرِهِ وَتَهْلِيلِهِ ‘কিসে তুমি আশ্চর্যান্বিত হলে? (জেনে রাখো!) যে ঈমানদার ইসলামের মধ্যে থেকে তাসবীহ, তাকবীর ও তাহলীল আদায় করার জন্য অতিরিক্ত বয়সের অবকাশ পেয়েছে এমন মুমিন অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অন্য কেউ উত্তম নয়’।[7]
জান্নাত লাভে ধন্য :
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে কোন মুসলিম দু’টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখবে, সে নিঃসন্দেহে জান্নাতে যাবে। জেনে রাখো, এ বিষয় দু’টি বিষয় অত্যন্ত সহজ, কিন্তু এর আমলকারী কম। তার কারণ হ’ল- প্রথমত : ‘প্রত্যেক ছালাত আদায়ের পর পড়বে ‘সুবহানাল্লাহ’ দশবার, ‘আল হাম্দুলিল্লাহ’ দশবার, ‘আল্লহু আকবার’ দশবার। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এ দো‘আ পড়ার সময় হাতে গুণতে দেখেছি। তিনি বলেন, এ দো‘আ মুখে (পাঁচ বেলায়) একশ পঞ্চাশবার পড়া ক্বিয়ামতে মীযানের (পাল্লায়) এক হাযার পাঁচশবার।
দ্বিতীয়ত : আর যখন বিছানায় যাবে, সুবহা-নাল্ল-হ, আলহাম্দুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার (তিনটি দো‘আ মিলিয়ে) একশবার পড়বে। এ দো‘আ মুখে একশবার বটে; কিন্তু মীযানে একহাযার বার। অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ একদিন এক রাতে দু হাযার পাঁচশ গুনাহ করে?
ছাহাবীগণ বললেন, আমরা কেন এ দু’টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে পারব না? তিনি বললেন, এজন্য পারবে না যে, তোমাদের কারো কারো কাছে ছালাত আদায় অবস্থায় শয়তান এসে বলে, ঐ বিষয় চিন্তা করো, ঐ বিষয় স্মরণ করো। এভাবে (শয়তানের) ওয়াস্ওয়াসা চলতে থাকে ছালাত শেষ করা পর্যন্ত। অতঃপর সে হয়ত তা (পরিপূর্ণ) না করেই উঠে যায়। এভাবে শয়তান তার ঘুমানোর সময় এসে তাকে ঘুম পাড়াতে থাকবে, যতক্ষণ না সে তা (আদায় না) করে ঘুমিয়ে পড়ে।[8]
পাপ মোচন ও নেকী অর্জন :
চারটি বাক্য আল্লাহর নিকট প্রিয় হওয়ার প্রমাণ মেলে নিম্নোক্ত হাদীছ থেকে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বাক্য থেকে চারটি বাক্য চয়ন করেছেন। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার। যে ব্যক্তি সুবহানাল্লাহ বলবে তার জন্য ২০টি নেকী লেখা হবে এবং ২০টি গুনাহ মোচন করা হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহু আকবার বলবে, তার জন্য অনুরূপ। যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার জন্যও অনুরূপ ফযীলত রয়েছে। আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠতার সাথে অন্তর থেকে আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন বলবে, তার জন্য ৩০টি নেকী লেখা হবে এবং ৩০টি পাপ মোচন করা হবে’।[9]
অসংখ্য নেকী অর্জন :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآنِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ- ‘আলহামদুলিল্লাহ মানুষের আমলের পাল্লাকে ভরে দেয় এবং সুবহানাল্লাহাহি ওয়াল হাম্দুলিল্লাহ ছওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয় অথবা বলেছেন, আকাশমন্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তা পরিপূর্ণ করে দেয়’।[10]
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আর এক বর্ণনায় এসেছে, لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ تَمْلَآنِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ- ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আসমান ও যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে সব পরিপূর্ণ করে দেয়’।[11]
জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন বললেন, তোমরা বাঁচার জন্য ঢাল ধর। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! শত্রু বাহিনী কি এসে পড়েছে? তিনি বললেন, না; বরং তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ঢাল ধর। তোমরা বল, ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা’ আল্লাহু আকবার’ কেননা এই বাক্যগুলি তোমাকে ক্বিয়ামতের মাঠে রক্ষা করবে। তোমাকে অগ্রগামী রাখতে এই বাক্যগুলো হবে ফলদায়ক সৎকর্ম’।[12]
আল্লাহর নিকট পাঠকারীর নাম উচ্চারণ :
নু’মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তাসবীহ, তাহলীল ও তাহমীদ-এর মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর যে মহিমা বর্ণনা করো তা মৌমাছির গুঞ্জনের ন্যায় শব্দ করে আরশের চারপাশে ঘুরতে থাকে। সেগুলো নিজ নিজ প্রেরকের কথা উল্লেখ করতে থাকে। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করে না যে, আল্লাহর নিকট অনবরত তার উল্লেখকারী কেউ থাকুক?[13]
মীযানের পাল্লায় ভারী :
আবূ সালামা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি শুনেছেন,‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, بَخٍ بَخٍ لِخَمْسٍ مَا أَثْقَلَهُنَّ فِي الْمِيزَانِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَسُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ وَالْوَلَدُ الصَّالِحُ يُتَوَفَّى لِلْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فَيَحْتَسِبُهُ- বাঃ! বাঃ! পাঁচটি জিনিস মীযানে কতই না ভারী! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ; আর নেক সন্তান, যে মারা গেলে মুসলিম (মা-বাপ) তাতে ছওয়াব কামনা করে’।[14]
ছাদাক্বার সমতুল্য :
আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, নবী (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের কয়েকজন নবী (ছাঃ)-কে বললেন, يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالأُجُورِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّى وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ قَالَ أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُونَ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ وَفِى بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِى أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِى حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِى الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ- ‘হে আল্লাহর রাসূল! বিত্তবানরা ছওয়াব নিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের মত ছালাত আদায় করেন, আমাদের মত ছিয়াম পালন করেন এবং তারা নিজেদের ধন সম্পদ হ’তে কিছু দান করে থাকেন। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কী আল্লাহ তা‘আলা ছাদাক্বা করার ব্যবস্থা করেননি? প্রতিটি তাসবীহ ছাদাক্বা, প্রতিটি তাকবীর ছাদাক্বা, প্রতিটি তাহমীদ ছাদাক্বা, প্রতিটি তাহলীল ছাদাক্বা, সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎকাজ হ’তে বিরত রাখা ছাদাক্বা এবং স্ত্রীর সঙ্গে মিলনও ছাদাক্বা। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেউ যদি স্ত্রী মিলন করে এতেও কি সে ছওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে স্ত্রী গমন করে হালাল পথে, তবে সে ছওয়াব পাবে’।[15]
অক্ষম ব্যক্তির জন্য কুরআন পাঠের পরিবর্তে যথেষ্ট :
আব্দুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাঃ)-এর নিকট এক লোক এসে বলল, আমি কুরআন মুখস্ত করতে পারি না। অতএব আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা কুরআনের পরিবর্তে যথেষ্ট হবে। নবী (ছাঃ) বললেন, তুমি বল, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহ আকবার ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা তো মহা সম্মানিত আল্লাহর জন্য, আমার জন্য কি? নবী (ছাঃ) বললেন, তুমি বল, আল্লাহুম্মা ইরহামনী, ওয়ারযুক্বনী, ওয়া আফিনী ওয়াহদিনী। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি এই বাক্যগুলো হাতের অঙগুলিতে গণনা করল। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, এই লোক তার হাতকে উত্তম বস্ত্ত দ্বারা পরিপূর্ণ করেছে’।[16]
উপসংহার :
সুন্নাতী পন্থায় যিকর-আযকার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল। মানুষের অন্তরের খাবার হল যিকর-আযকার। সুতরাং যিকর-আযকারের মাধ্যমে নেকীর পাল্লা ভারী করার এই সুযোগ যেন আমরা গ্রহণ করি। যখনই সুযোগ পাই, আল্লাহর স্মরণে যিকর-আযকারে রত থাকি। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদের প্রত্যেককে পরকালীন নাজাতের জন্য তাঁর স্মরণে অধিক পরিমাণে যিকর-আযকারে রত থাকার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!
[1]. মুসলিম হা/২১৩৭; মিশকাত হা/২২৯৪।
[2]. মুসলিম হা/২৬৯৫।
[3]. নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০৫৮৮; ছহীহুত তারগীব হা/৬৫৮।
[4]. মুসলিম হা/৫৯৭; মিশকাত হা/৯৬৭।
[5]. তিরমিযী হা/৩৫৩৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬০১।
[6]. তিরমিযী হা/৩৪৬২; ছহীহাহ হা/১০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৫২।
[7]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৪০১; ছহীহাহ হা/৬৫৪; মিশকাত হা/৫২৯৩।
[8]. তিরমিযী হা/৩৪১০; আবূদাঊদ হা/৫০৬৫; মিশকাত হা/২৩০৬।
[9]. আহমাদ হা/ ৮০১২; হাকেম হা/১৮৬৬; ছহীহুল জামে’ হা/ ১৭১৮।
[10]. মুসলিম হা/২২৩; মিশকাত হা/২৮১।
[11]. দারেমী হা/৬৫৩; মিশকাত হা/২৮/১।
[12]. হাকেম হা/১৯৮৫; নাসাঈ, আমালিল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইল হা/৮৪৮; ছহীহুল জামে হা/৩২১৪।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/৩৮০৯; ছহীহাহ হা/৩৩৫৮।
[14]. শু‘আবুল ঈমান হা/৯৭৫৫; ত্বাবারানী, মু‘জামুল কাবীর হা/৮৭৩, ইবনে হিববান হা/৮৩৩; ছহীহুত তারগীব হা/ ১৫৫৭।
[15]. মুসলিম হা/২৩৭৬, ১০০৬।
[16]. আবু দাউদ হা/৮৩২।