সমাজ সংস্কারে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর অবদান
অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন
মফীযুল ইসলাম 9952 বার পঠিত
অশ্লীলতায় যোগানদাতাদের পরিণতি :
অশ্লীলতার সাথে যারা জাড়িত তারা অধিকাংশই সঠিকপথ থেকে বিচ্যুত। কাজেই তাদের তৈরীকৃত অশ্লীলতা দেখে বা তাদের অনুসরণ করে ভ্রষ্টপথে পরিচালিত হলে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি। মহান আল্লাহ বলেন,
قَالَ ادْخُلُوا فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ فِي النَّارِ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَعَنَتْ أُخْتَهَا حَتَّى إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآَتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِنَ النَّارِ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَكِنْ لَا تَعْلَمُونَ-
‘তোমাদের আগে জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে, তোমরা ও তাদের মাঝে প্রবেশ কর। যখনই একটি দল প্রবেশ করবে, তখন তারা অন্যদলকে অভিসম্পাত করবে। অবশ্যই যখন তারা ভিতরে একত্রিত হবে, তখন প্রত্যেকটি পরবর্তী দল আগের দল সম্পর্কে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক। ওরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে, কাজেই ওদেরকে আগুনে দ্বিগুণ শাস্তি দাও। আল্লাহ বলবেন প্রত্যেকের শাস্তি দ্বিগুণ করা হয়েছে। কিন্তু তোমরা তা জাননা’ (আ‘রাফ ৭/৩৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ-
‘যারা পসন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার ঘটুক তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে। আল্লাহ জানেন কিন্তু তোমরা জান না’ (আম্বিয়া ২৪/১৯)। আপনি যেই হোন না কেন অশ্লীলতা প্রসারকারী সকলকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ)বলেন,
إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُونَ-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত লোক হলো ছবি প্রস্ত্তত কারীগণ’।[1] অন্যত্র তিনি বলেন, كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ ‘প্রত্যেক ছবি প্রস্ত্ততকারী জাহান্নামী।[2] যারা মুসলিম বিশ্বে নোংরামি ছড়াচ্ছে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তি পাবে। তাছাড়া যত মানুষ তাদের নোংরামির ভোক্তা তাদের পাপের ভাগীদারও তারা হবে। আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُنْ لَهُ كِفْلٌ مِنْهَا-
‘যে পাপ কাজের সুপারিশ করবে তাতে তার অংশ আছে’ (নিসা ৪/৮৫)।
ধ্বংসাত্মাক ছোবল :
এক্ষেত্রে নিমণ হাদীছগুলি স্মরণ যোগ্য রাসূল (ছাঃ) বলেন,
كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ ‘প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী’।[3] একদা তিনি আলী (রাঃ) কে বলেছিলেন, يَا عَلِىُّ لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ ‘হে আলী! একবার নযর পড়ে গেলে আর দ্বিতীয়বার তাকিয়ে দেখো না। প্রথম বারের (অনিচ্ছাকৃত) নযর তোমার জন্য বৈধ। কিন্তু দ্বিতীয়বারের নযর নয়’।[4] তিনি আরো বলেন,
أَلَا لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ-
‘যখনই কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে নির্জনতা অবলম্বন করে। তখনই শয়তান তদের তৃতীয় সাথী হয়’।[5] মহানবী (ছাঃ) আরো বলেন, إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ ‘তোমরা বেগানা নারীদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক’।[6] তিনি আরো বলেন,
لَأَنْ يُطْعَنَ فِي رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّ امْرَأَةً لَا تَحِلُّ لَهُ-
‘কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা খোঁচা যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ, তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়’।[7] মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ‘মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত করে রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গ হেফাযত করে’ (নূর-২৪/৩০)।
অশ্লীলতার ধ্বংসাত্মক ছোবল সম্পর্কে কিছু মনীষীর মন্তব্য তুলে ধরা হ’ল-
মুহাম্মাদ মনযুর হোসেন খান বলেন, ‘অশ্লীলতা চারিত্রিক ও সামাজিক সমস্যা। এটা মানুষকে পাশবিক শক্তিতে বন্দি করে। ফলদায়ক কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখে’।[8]
ড. সুলাইমান বলেন, ‘অশ্লীলতা যুবক-যুবতীর মানসিক ও স্বাস্থ্যগত মারাত্মক ক্ষতি করছে। এরই প্রভাবে যৌন অপরাধ দেদারছে বেড়ে চলছে’।[9]
অধ্যাপক সুসান গ্রিন বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে এই সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমের সাইটগুলো আমাদেরকে মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায় ছোট শিশুদের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছোট শিশু যেমন কোন শব্দ ও উজ্জ্বল কিছু দেখে আকৃষ্ট হয়। এখনকার মানুষও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের নোটিফিকেশন দেখে আকৃষ্ট। তাদের দিনের একটা বড় অংশ এই ঘটনাগুলোতে ব্যয় করে’।[10]
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন নেটওয়াকিং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। আর অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়িয়ে দেয় ক্যান্সারের ঝুঁকি। মানুষ যতই ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে ততই তারা পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এরই ফলে মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা ও একাকিত্ব বাড়ছে। তাই বলা যায়, বর্তমান যুগের প্রযুক্তি মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।
ড. ভূন বলেন, ‘নিষ্পাপতার দিন শেষ। মানুষ এখন ইন্টারনেটে অনেক কিছু জানতে পারে । এটা হচ্ছে ঘরে হিরোইন রেখে বাচ্চাকে ছেড়ে দেয়ার ন্যায়’।[11]
পর্ণোগ্রাফীর আগ্রাসন থেকে বাঁচার উপায় :
আল্লাহকে ভয় করা :
পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে কিবয়ামত অবধি মানুষের দ্বারা এই ধরাধমে যত অন্যায়, অত্যাচার, পাপাচার সংঘটিত হবে বা হচ্ছে তার মূলে রয়েছে মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতির অভাব। আল্লাহভীতির অভাবে মানুষ আজ একে অপরকে পশুর মত যবাই করে, পাখির মত গুলি করে, সাপ পিটার মত পিটিয়ে নিঃশঙ্ক চিত্তে হত্যা করছে। আল্লাহভীতির অভাবে মানুষ আজ তাঁরই নে‘মত খেয়ে-পরে তাঁরই ইবাদত বন্দেগী, বিধি-বিধান মানার ক্ষেত্রে বেপরোয়া থাকছে। আল্লাহভীতির অভাবে মানুষ তাঁরই যমীনে থেকে, তাঁর চোখের সামনে টিভির সিনেমা, নাটক ও মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট ইন্টারনেটের নোংরা, অশ্লীল পর্ণো নিয়ে মগ্ন থাকছে। অথচ মহান আল্লাহ এমন একক সত্ত্বা যিনি নিমিষেই সুনামি, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতির মাধ্যমে ধ্বংস করতে পারেন গোটা পৃথিবী। কাজেই সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহকে ভয় করা যরূরী। মহান আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে ভয় করার কথা বলেছেন। যেমন তিনি বলেন, وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। জেনে রেখ নিশ্চয়ই আল্লাহ মুক্তাক্বীদের সঙ্গে থাকেন’ (বাকারাহ ২/১৯৪)। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তাওবা ৯/১১৯)। মহান আল্লাহ বলেন, أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاتَّقُونِ ‘আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর’ (নাহল ১৬/২)। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’ (আহযাব ৩৩/৭০)। তিনি আরো বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ‘হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন’ (নিসা ৪/১)। আল্লাহর ভয়ে সকল পাপাচার থেকে বেঁচে থাকায় রয়েছে বিরাট উপকারিতা। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ বের করে দেন’ (ত্বালাক ৬৫/২)। আল্লাহ আরো বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন’ (ত্বালাক ৬৫/৪)। আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের জ্ঞান লাভ করতে পারে। ফলে আধুনিক জাহেলিয়াত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। তিনি বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহভীরু হও, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দিবেন এবং এর ফলে তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হলেন মহা অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ৮/২৯)। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ٌ ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাক্বওয়া সম্পন্ন’ (হুজরাত ৪৯/১৩)। মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِلَّهِ وَالرَّسُولِ مِنْ بَعْدِ مَا أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ ‘যারা নিজেরা যখমপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে ও আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে মহান পুরস্কার’ (আলে-ইমরান ৩/১৭২)। আর সেই বিরাট পুরষ্কার হ’ল চিরসুখের স্থান জান্নাত। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَكَفَّرْنَا عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأَدْخَلْنَاهُمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ ‘আহলে কিতাবগণ ঈমান আনতো ও আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করত, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা করে দিতাম এবং তাদেরকে নে‘মতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাতাম’ (মায়েদা ৫/৬৫)। যারা আল্লাহভীরু তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। হে পর্ণো ভোক্তা প্রিয় বন্ধু! জান্নাতের পবিত্র সঙ্গিনী পেতে দুনিয়ার নোংরা সঙ্গিনী ত্যাগ কর।
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটি হবে আল্লাহর পক্ষ হ’তে আতিথেয়তা। আর আল্লাহর নিকটে যা রয়েছে, সৎকর্মশীলদের জন্য তা অতীব উত্তম’ (আলে ইমরান ৩/১৯৮)।
তিনি আরো বলেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি বিশ্বাস স্থাপন করত ও আল্লাহভীরু হ’ত, তাহলে আমরা তাদের উপর আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করল। ফলে তাদের কৃতকর্মের দরুণ আমরা তাদেরকে পাকড়াও করলাম’ (আরাফ ৭/৯৬)। এমর্মে পরিশেষে বলতে চাই আল্লাহভীরু মানুষের জন্যই জান্নাত প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে। কাজেই পর্ণোগ্রাফী, নোংরামি, অশ্লীলতা দেখা বন্ধ করে ঐ জান্নাতের দিকে ছুটে আসুন, যা মুত্তাকী মানুষের জন্য প্রস্ত্তত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য’ (আলে-ইমরান ৩/১৩৩)।
একমাত্র আল্লাহকেই ভয় কর :
অনেক পর্ণোভোক্তা আছেন যারা পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের আড়ালে নোংরামি, অশ্লীল তা উপভোগ করেন। তারা এটা দেখে ফেলেন অপমানিত, লাঞ্ছিত, হেয়প্রতিপন্ন হতে হবে এরই ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে নোংরামি দেখেন। অথচ আল্লাহ বলছেন, ‘আমি তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর’ (মুমিনূন ২৩/৫২)। অতএব সকল ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করতে হবে ।
আমলে ছালেহ কর :
টিভিতে, কম্পিউটারে, স্মার্ট ফোনে, ল্যাপটপে সিনেমা, পর্ণোগ্রাফী দেখা নিঃসন্দেহে পাপের কাজ। তাই এগুলি উপভোগ করা বন্ধ করে আমলে ছালেহ করায় মনেনিবেশ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘পুরুষ হৌক নারী হৌক মুমিন অবস্থায় যে সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের ওয়াদা করেছেন’ (মায়েদা ৫/৯; ফাতহ ৪৮/২৯)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ ‘যারা অবিশ্বাস করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্মাদি সম্পাদন করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার’ (ফাতির ৩৫/৭)। وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُونَ فِيهَا بِغَيْرِحِسَابٍ ‘যে মন্দকর্ম করবে, সে তার অনুরূপ ফলাফল পাবে। আর যে সৎকর্ম করবে এমতাবস্থায় যে সে ঈমানদার, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে যেখানে তাদেরকে অগণিত রিযিক দেয়া হবে’ (মুমিন ৪০/৪০)। وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِأَنْفُسِهِمْ يَمْهَدُونَ ‘আর যে ব্যক্তি (ঈমান আনে ও) সৎকর্ম করে, তারা তাদের জন্য (জান্নাতের পথ) সুগম করে’ (রূম ৩০/৪৪)। وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَى ‘আর যে ব্যক্তি তাঁর নিকটে মুমিন অবস্থায় হাযির হয়, যে সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা সমূহ’ (ত্বোয়াহা ২০/৭৫)।
ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া :
বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ শিক্ষা ব্যবস্থাই হ’ল নীতি-নৈতিকতা সারশূন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অহি-র অভ্রান্ত সত্যের আলো না থাকায় মানুষ হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষামুক্ত সনদ প্রাপ্ত ও সত্যের আলো বিচ্যুত গোমরাহ-পথভ্রষ্ট। যার ফলে তারা যে কোন অন্যায়-পাপাচার করে চলছে। এ শ্রেণী মানুষ দ্বারাই দেশে দুর্নীতি ও অবিচার সংঘটিত হয়। অথচ একমাত্র ইসলামী শিক্ষাই পারে মানুষের হাত, পা, চোখ, কান, মন, ও মস্তিষ্ককে আল্লাহর অনুগত করতে। তাই বলা যায়, ইন্টারনেটের নোংরামিসহ যাবতীয় পাপাচার থেকে বাঁচতে ইসলামী শিক্ষার জুড়ি নেই।
চোখ দিয়ে দেখতে হবে :
চোখ দিয়ে ন্যায় জিনিস দেখতে হবে, অন্যায় হারাম জিনিস দেখা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী হবে নারী।[12] মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا ‘আমরা বহু জ্বিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য। যাদের হৃদয় আছে কিন্তু বুঝে না। চোখ আছে কিন্তু দেখে না। কান আছে কিন্তু শোনে না। ওরা হল চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চাইতে পথভ্রষ্ট। ওরা হ’ল উদাসীন’ (আরাফ ৭/১৭৯)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যে অন্তঃকরণ দান করছেন তা দিয়ে সত্য বুঝতে হবে বিশুদ্ধ আমল করতে হবে। নতুবা জাহান্নামের ভয়াবহ প্রজ্বলিত অগ্নিতে দগ্ধ হয়ে বলতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ ‘আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তাহলে আমরা জলন্ত অগ্নির অধিবাসীদের মধ্যে থাকতাম না’ (মূলক ৬৭/১০)। আল্লাহ আমাদের চোখ দিয়েছেন অবলোকন করার জন্য। তাই আমাদের উচিত ইনটারনেটে ছড়িয়ে থাকা কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক লেখনি অবলোকন করা এবং আলেম উলামাদের কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক যত লেকচার আছে তা সংগ্রহ পূর্বক শ্রবণ করা। এভাবে অন্তঃকরণ, চোখ ও শ্রবণ শক্তির সদ্ব্যবহার করা।
পর্ণো মুভি ও সিরিয়াল দেখা বন্ধ করুন :
হে মুসলিম মা ও বোন। আপনাকে বলছি, বন্ধ করুন ঐ সমস্ত নোংরা, হিংসাত্মক, বিদ্বেষমূলক সিরিয়াল দর্শন বন্ধ করুন। এ সমস্ত সিরিয়াল আপনাদের মত লাখো মা-বোনের সম্মান-ইজ্জত ভুলণ্ঠিত করছে, সৃষ্টি করছে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বনদ্ব-সংঘাত এবং ধবংস করছে সোনার সংসার। তবুও কি আপনার বোধদয় হবে না? যুবক তোমাকে বলছি, যৌন উত্তেজনকর পর্ণো মুভি ও সিরিয়াল দেখা অনতিবিলম্বে বন্ধ কর। তুমি কি জান, তোমার মতো লাখো যুবকের রক্তের উপর গড়া মঞ্চে এ সমস্ত নোংরামি দৃশ্য তৈরি করে তোমাকে উপহার দেওয়া হচ্ছে? তুমি কি জান পর্ণো তারকাদের গড় আয়ু ৩৭ বছর। তারা তাদের জীবন বিসর্জন দিয়ে তোমাকে নষ্ট করে জাহান্নামের সঙ্গী বানাতে চাচ্ছে, তুমি কি তা বুঝবে না? তোমার বিবেকে বলছি, অবশ্যই এ সমস্ত অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাক। ঐ শোন আল্লাহর বাণী, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ ‘লোকদের মধ্যে কেউ কেউ আছে, তারা তাদের অজ্ঞতা বশে বাজে কথা খরিদ করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুৎ করার জন্য এবং তারা আল্লাহর পথকে বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে হীনকর শাস্তি’ (লোকমান ৩১/৬)। তিনি আরো বলেন, إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آَمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। বস্ত্ততঃ আল্লাহ জানেন কিন্তু তোমরা জানো না’ (নূর ২৪/১৯)। কাজেই হে মুসলিম নর-নারী! পরকালের শাস্তিকে ভয় করুন এবং পরিবার ও স্ব-স্ব মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার থেকে ঐ সমস্ত অশ্লীল দৃশ্য, গান-বাজনা নির্বাসনে পাঠান।
অন্তরের গহীন থেকে চিন্তা কর :
প্রিয় বন্ধু! আজ যে যৌবনের তাড়নায় অশ্লীল পর্ণো নিয়ে কালাতিপাত করছ অচিরেই এ যৌবন শেষ হয়ে যাবে। বার্ধক্যকে যখন শরীরে চামড়া গুছিয়ে-নুয়ে পড়বে, দুর্বলতার সকল দিক যখন নিজেকে আচ্ছন্ন করবে; যৌবনের সেই তাড়না আর কাজ করবে না তখনকার এই মর্মান্তিক চিরবাস্তবতার কথা কখনো কি ভেবেছ? ঐ শোন আল্লাহর বাণী وَالْتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ ‘আর জড়িয়ে যাবে এক পায়ের নলা আরেক পায়ের নলার সাথে’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/২৯)। এমন দিনে উপমিত হওয়ার কথা ভেবে সকল নেংরামি, অশ্লীল তা দেখা বন্ধ কর।
প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ :
প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা দিয়ে আল্লাহ জাহান্নামকে ঘিরে দিয়েছেন। তাই আল্লাহ রাসূল (ছাঃ)-একাজ কে ভয় করেছেন। আবু বারযা (রাঃ) নবী করিম (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, إِنَّ مِمَّا أَخْشَى عَلَيْكُمْ شَهَوَاتِ الْغَيِّ فِي بُطُونِكُمْ وَفُرُوجِكُمْ وَمُضِلاَّتِ الْفِتَنِ ‘আমি কেবলই তোমাদের জন্য তোমাদের পেট তথা খাওয়া-দাওয়ার ও যৌন সংক্রান্ত অবৈধ সম্ভোগ এবং শরী‘আত বিরুদ্ধে কামনা বাসনা চরিতার্থ করার ভয় করি’।[13] কু-প্রবৃত্তির অনুসরণের দরুন মানুষ জাহান্নামের লাঞ্ছনাকর মহাশাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করা যরূরী। হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) বলেছেন, ‘পৌরুষ হ’ল কামনা-বাসনা বর্জন এবং কু-প্রবৃত্তির বিরোধিতার নাম। কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ পৌরুষকে ব্যাধিগ্রস্থ করে দেয়, আর তার বিরোধিতায় পৌরুষ সুস্থ-সবল থাকে’।[14] যে যুবক যৌবনের চাহিদায় প্রবৃত্তির দ্বারা তাড়িত হয়। আর যে যুবক তার যৌবনের চাহিদার উপর আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী প্রাধান্য দেয়, কুপ্রবৃত্তির কামনা-বাসনা থেকে নিজেকে দমিয়ে রাখে সেই হ’ল মর্যাদাবান মানুষ। ইবরাহীম ইবনে আদহাম বলেছেন, ‘প্রবৃত্তি ধ্বংস ডেকে আনে’। তাই তো আব্দুল হামিদ ফাইযী বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস নিয়ন্ত্রণ করা যরূরী; জিহবা, রাগ ও প্রবৃত্তি’। প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা বড়ই কঠিন কিন্তু তার ফল বড়ই সুখময়। মহান আল্লাহ বলেন, وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا ‘তারা যে কঠোর ধৈর্য (সহিষ্ণুতা) প্রদর্শন করেছে তার পুরষ্কার স্বরূপ (আল্লাহ) তাদেরকে জান্নাতে রেশমী পোশাক দান করবেন’ (দাহর ৭৬/১২)। অতএব হে যুবক! শত কষ্টের পরেও কু-প্রবৃত্তির গলায় লাগাম পরিয়ে অশ্লীল তা, নোংরামী থেকে নিজেকে সেভ করতে হবে। মহান আল্লাহর কাছে বলতে হবে, اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি মন্দ স্বভাব, আমল ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে’।[15]
ঢের যুদ্ধ চালিয়ে চাওয়া :
আমি জানি অনেক মুসলিম ভাই ও বোন আছেন যারা প্রতিনিয়ত পর্ণোগ্রাফীর আগ্রাসন থেকে বাঁচার জন্য প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পেরে উঠছেন না। আমি বলব, আপনি নোংরামি, অশ্লীল তার বিরুদ্ধে ঢের যুদ্ধ অব্যাহত রাখুন। কেননা কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে (যুদ্ধ) জিহাদই সর্বোত্তম জিহাদ’।[16] কবি আবুল আতাহিয়া ও ইবরাহীম বিন আদহাম বলেছেন, ‘কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদই সবচেয়ে কঠিন জিহাদ। যে নিজের মনকে প্রবৃত্তির তাড়না থেকে হেফাযত করতে পারবে, সে দুনিয়ার বালা মুছীবত থেকে স্বাচ্ছন্দে থাকবে। সে দুনিয়ার কষ্ট থেকেও রক্ষা পাবে’ (শুআবুল ঈমান পৃ. ৮৭৬, হিলয়াতুল আওলিয়া ৮/১৮)। পৃথিবীতে সুখ-স্বাচ্ছন্দে বসবাসের জন্য এবং পরকালে মুত্তির জন্য প্রবৃত্তির তাড়নায় নোংরামি থেকে বাঁচার জন্য মরণ-প্রাণ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক। আল্লাহর রাসুল (ছাঃ) বলেন, ‘সত্যিকারে মুহাজির সে ব্যক্তি যে আল্লাহ তা‘আলার নিষেদ্ধ বস্ত্তগুলি পরিত্যাগ করতে পেরেছে’।[17]
অশ্লীলতার সঙ্গী না হওয়া :
পর্ণোগ্রাফী ভোক্তাদের সাথে উঠা-বসা ও যে জিনিসের মধ্যে পর্ণো আছে তাদের সঙ্গী বনে যাওয়া আদৌ কোন মুসলিমের কাজ নয়। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا ‘একজন খাঁটি মুমিন ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু বানাবে না’।[18] বন্ধুর প্রভাব বন্ধুর উপর সুদূর প্রসারী; বন্ধুর প্রভাবেই মানুষ ভাল হয় আবার বন্ধুর প্রভাবেই মানুষ নষ্ট হয়। নোংরা, অশ্লীল পর্ণোভোক্তার প্রতিনিয়ত হাযার হাযার মানুষকে পাপের সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছে। তাই তাদের সংস্পর্শে থাকা ও তাদের কাছ থেকে ব্লুটুথ বা শেয়ারিট এর মাধ্যমে কোন নোংরা, অশ্লীল পর্ণো গ্রহণ করা সমীচীন নয়। পর্ণো ভোক্তার মূলত পার্থিব খেল-তামাশায় মত্ত। তাই মহান আল্লাহ বলেন, وَذَرِ الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَعِبًا وَلَهْوًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ‘যারা নিজেদের দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্ত্ততে পরিণত করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে, তাদেরকে তুমি পরিত্যাগ কর’ (সূরা আন’ আম ৬/৭০)। মানুষ নানাভাবে পাপ করে নিজের উপর যুলুম করে। তাই তো মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ ‘আর তোমরা যালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না। তাহলে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে’ (হুদ ১১/১১৩)।পর্ণোভোক্তারা মূলত এক প্রকার যালেম। তাই জাহান্নামের শাস্তির ভয়ে তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা যরূরী। আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) একদা হিজরবাসীদের সম্পর্কে বলেনلاَ تَدْخُلُوا عَلَى هَؤُلاَءِ الْمُعَذَّبِينَ ‘তোমরা এ শাস্তি প্রাপ্ত সম্প্রদায়ের এলাকায় যেও না’।[19] একাকী থাকা ভাল তবুও নোংরা, অশ্লীল তা চর্চাকারী, প্রকাশকারীদের সাথে থাকা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে নিমণ হাদীছ স্মরণ যোগ্য। রাসূল (ছাঃ) বলেনيُوشِكُ أَنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالِ الْمُسْلِمِ غَنَمٌ يَتْبَعُ بِهَا شَعَفَ الْجِبَالِ وَمَوَاقِعَ الْقَطْرِ، يَفِرُّ بِدِينِهِ مِنَ الْفِتَنِ ‘অচিরেই একজন মুসলমানের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হবে ছাগল। যা নিয়ে সে একা পাহাড়ের চূড়ায় উঠবে ও পানির জায়গায় যাবে ফিতনা থেকে রক্ষার মানসে’।[20]
উত্তম সঙ্গী গ্রহণ করা :
ফিতনা থেকে বাঁচার মানসে একাকী থাকা ভাল। আর কল্যাণ লাভের মানসে সৎ সঙ্গ গ্রহণ হিতকর। প্রবাদে আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। রাসূল (ছাঃ)-এর এক হাদীছ থেকে একথার বাস্তব প্রমাণ মেলে। যেমন তিনি বলেন, কোন এক ব্যক্তি তার প্রয়োজনে ভাল ব্যক্তিদের মজলিসে একত্রিত হওয়ার কারণে আল্লাহর ক্ষমা ও মাগফিরাত থেকে সে বঞ্চিত হয়নি’।[21] ভাল মানুষেরা কখনো অন্যকে বিপাকে ফেলে না। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম কে? তিনি বলেন, يَتَّقِى اللَّهَ، وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ ‘এমন ব্যক্তি যে আল্লাহকে ভয় করে এবং নিজের অনিষ্ট থেকে অন্যদেরকে রেহায় দেয়’।[22] তাইতো আবুল ফযল জাওহারী (রহঃ) বলেন, ‘যে নেককারদেরকে ভালবাসে সে তাদের বরকত পাবে’। উছমান বিন হাকীম (রহঃ) বলেন, ‘তুমি এমন ব্যক্তির সঙ্গী হও যে ধার্মিকতার দিক দিয়ে তোমার চেয়েও উপরে এবং দুনিয়ার দিক দিয়ে তোমার চেয়েও নিচে’।[23] আত্ত্বায়ী এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, মুত্তাক্বীদের সাথী হও। কারণ তারা দুনিয়ার মধ্যে তোমার সব চেয়ে কম খরচের ও সব চেয়ে বেশি সাহায্যকারী বন্ধু। এতদাসত্ত্বেও যদি মানুষ দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট মানুষকে সঙ্গী-সাথী বানায় তাহলে তাকে কিবয়ামতে আফসোস করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘যালেম সেদিন নিজের দু’হাত কামড়ে বলবে, হায়! যদি (দুনিয়াতে) রাসূলের পাথ অবলম্বন করতাম। হায় দুর্ভোগ আমার! যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম’ (ফুরক্বান ২৫/২৭-২৮)। অতএব প্রিয় বন্ধু! পরহেযগার-মুত্ত্বাকী সাথী গ্রহণ না করে যদি পথভ্রষ্ট নেতা ও সাথীর দ্বারা প্রভাবিত হন, তাহলে চতুর্মুখী বিপদ সেদিন আপনাকে গ্রাস করবে। (ক্রমশ)
[লেখক : ৪র্থ বর্ষ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]
[1] . বুখারী হা/৫৯৫০; মুসলিম হা/৫৯৫৯।
[2] . মুসলিম হা/৫৬৬২।
[3] . তিরমিযী হা/২৭৮৬; মিশকাত হা/১০৬৫।
[4] . আবুদাউদ হা/২১৪৯; তিরমিযী হা/২৭৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/ ৭৯৫৩।
[5] . তিরমিযী হা/১১৭১; মিশকাত হা/৩১১৮।
[6] . বুখারী হা/ ৫২৩২; মুসলিম হা/৫৮০৩; তিরমিযী হা/১১৭১।
[7] . সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৪৫।
[8] . দৈনিক সংগ্রাম, ১৫ মে, ২০১৫।
[9] . ঐ ।
[10] . ঐ ।
[11] . দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ পৃঃ ৮।
[12]. বুখারী হা/৩০৪।
[13]. আহমাদ হা/২০৩০৩; ছহীহ তারগীব হা/৫২।
[14] . রাওযাতুল মুহিববীন, পৃঃ ৪৭৭-৪৭৮।
[15] . তিরমিযী হা/৩৫৯১; মিশকাত হা/২৪৭১।
[16] . ইবনু মুফলিহ, আল-আদাবুশ শারঈয়াহ ২৫১ পৃঃ।
[17] . বুখারী হা/১০।
[18] . আবুদাউদ হা/৪৮৩২; তিরমিযী হা/২৩৯৫।
[19]. বুখারী হা/ ৪৩৩; মুসলিম হা/৩৮।
[20]. বুখারী হা/১৯।
[21]. বুখারী হা/ ৬৪০৮; মুসলিম হা/২৬৮৯।
[22]. বুখারী হা/২৭৮৬; মুসলিম হা/১৮৮৮।
[23]. আল-ইখওয়ান, ১২৫ পৃঃ।