চলমান শিক্ষানীতির ভ্রান্ত গতিপথ ও আমাদের করণীয়

ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব 2379 বার পঠিত

শিক্ষাব্যবস্থার দিশাহীনতা আর ভ্রান্ত নীতি নিয়ে আমাদের দেশে আলোচনা-পর্যালোচনার অন্ত নেই। দুনিয়াবী শিক্ষা হোক, আর দ্বীনী শিক্ষা হোক, শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগত কিংবা পদ্ধতিগত উভয় দিক থেকেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেন টালমাটাল অবস্থায় উত্তাল সাগরে খাবি খাচ্ছে। ১৯৪৭ সালে একটি বিশেষ আদর্শ ও চিন্তাধারাকে সম্বল করে মুসলিমদের পৃথক আবাসস্থল হিসাবে এ দেশের জন্ম হলেও অদ্যাবধি সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কোন শিক্ষানীতি প্রণীত হয়নি। এমনকি পোপের চেয়ে বেশী খৃষ্টান হওয়ার মত কীভাবে প্রচলিত সেক্যুলার থেকে আরো বেশী সেক্যুলার হওয়া যায়, সেই প্রতিযোগিতাই যেন লক্ষ্য করা গেছে এসব শিক্ষানীতিতে। ফলশ্রুতিতে ধর্মহীন, নাস্তিক্যবাদী, বিজাতীয় সংস্কৃতিনির্ভর, বস্ত্তবাদী ও পুঁজিবাদী চিন্তাধারাপুষ্ট শিক্ষানীতিই হয়ে উঠেছে আমাদের শিক্ষানীতির সাধারণ বৈশিষ্ট্য। যার কারণে ইসলামের নামে আমরা আলাদা দেশ পেয়েছি বটে; কিন্তু ইসলাম এদেশের শিক্ষানীতিতে স্রেফ অন্যান্য ধর্মের মত একটা ধর্মশিক্ষা হিসাবে পড়ানো হয়। ইসলামের তাওহীদী বিশ্বাস ও জীবনাচারের প্রতিফলন ঘটানো এখানে মোটেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। আর এজন্যই এই শিক্ষাব্যবস্থায় দেশের জনগণের আদর্শিক ও নৈতিক অবস্থানের কোন প্রতিফলন নেই। বরং মুসলমানের সন্তান হয়েও এ দেশের সন্তানরা বেড়ে উঠছে নাস্তিক্যবাদী, সংশয়বাদী এবং নিরেট বস্ত্তবাদী চিন্তাধারায়। এর মধ্যেও যা কিছু সংখ্যক ইসলামী চিন্তা-চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠছে, তারা মূলতঃ অভিভাবকদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়, শিক্ষকের বিশেষ পরিচর্যা কিংবা পারিপার্শ্বিক ধর্মীয় পরিবেশের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে। এতে এই শিক্ষাব্যবস্থার কোন অবদান নেই।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার এই আদর্শিক মেরুদন্ডহীন অবস্থান তৈরীতে মূল অবদান হ’ল ইংরেজদের। আমরা কেবল তাদের অন্ধ তাবেদারমাত্র। বৃটিশ শাসনের যুগে ১৮৩৫ সালে ইংরেজ শিক্ষাবিদ থমাস মেকলে (১৮০০-১৮৫৯) ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তাঁর Minute on Indian Education নামক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এবং এতে তিনি স্পষ্টই উল্লেখ করেন যে, আমাদেরকে অবশ্যই এমন একটি শ্রেণী তৈরী করতে হবে, যারা রক্তে ও বর্ণে হবে ভারতীয়; কিন্তু অভিরুচি, চিন্তাধারা, মতামত, আদর্শ এবং বুদ্ধিবৃত্তিতে হবে ইংরেজ (a class of persons, Indian in blood and colour, but English in tastes, in opinions, in morals and in intellect) (৩৪ নং প্রস্তাব)। বলা যায়, তাঁর এই চিন্তাধারাই ভারত উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি। আর তার এই বক্তব্যেরই যেন হুবহু বাস্তবায়ন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।

রক্তে, বর্ণে বাংলাদেশী হ’লেও, বৃটিশরা পৌনে এক শতাব্দী পূর্বে বিদায় গ্রহণ করলেও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে, চিন্তা-চেতনায়, চলনে-বলনে, সংস্কার-সংস্কৃতিতে আমরা অদ্যাবধি সেই পশ্চিমাদের উত্তরাধিকারই বহন করে চলেছি। আমাদের জাতে ওঠার নিক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে কে কতটুকু ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছি বা ন্যাটিভ উচ্চারণে ইংরেজী বলতে পারছি কিংবা কে কতটুকু পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি তার উপর।

অপরদিকে শিক্ষার পদ্ধতিগত দিক থেকেও আমরা চরমভাবে পিছিয়ে। যেমন: প্রথমতঃ আমাদের জ্ঞান চর্চা হ’ল পরীক্ষানির্ভর, শিখন নির্ভর নয়। পাঠ্যপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখল, কী জানল তা খুব কমই বিশ্লেষণ করা হয়। বরং পরীক্ষায় কে কতটুকু ভাল করতে পারল, সেটাই হয় মুখ্য। ফলে আমরা উত্তম পরীক্ষার্থী তৈরীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছি। উত্তম শিক্ষার্থী কিংবা জ্ঞানসাধক তৈরীর সক্ষমতা এই শিক্ষাব্যবস্থার নেই বললেই চলে।

দ্বিতীয়তঃ এই শিক্ষাব্যবস্থায় কোন সৃজনশীলতা নেই, মহৎ কোন টার্গেট নেই, নিত্য-নতুন জ্ঞান-গবেষণার প্রয়াস নেই, অর্জিত বিদ্যার প্রয়োগ নেই, মেধার সাধারণ মূল্যায়ন পর্যন্ত নেই। একজন বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার্থীকেও সাধারণ জ্ঞান কিংবা বাংলা/ইংরেজী সাহিত্যের নামে এমন অনেক কিছু পড়তে হয়, যা তার বাস্তব জীবনে কোনই কাজে আসবে না। যেমন একজন চিকিৎসককে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বাংলা সাহিত্যের সহস্রাব্দ প্রলম্বিত ইতিহাসের মহাসাগর অবগাহনে নামিয়ে দেয়া হয়, যা সম্পূর্ণই অপ্রয়োজনীয়। অন্যদিকে। ফলে একদিকে দক্ষতা ও যোগ্যতা যেমন তৈরী হচ্ছে না, তেমনি অর্জিত যোগ্যতার প্রয়োগক্ষেত্র না থাকায় যোগ্য লোকেরা সঠিক জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, অপরদিকে দেশের মেধাগুলো বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে পদ্ধতিগতভাবেই এ দেশে মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক জনসম্পদ গড়ে ওঠার পরিবেশ নেই।

তৃতীয়তঃ ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’র মত এর সাথে যুক্ত হয়েছে শিক্ষা উপর রাজনীতির কালো হাত। ফলে শিক্ষক নিয়োগে মেধার পরিবর্তে ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয়ই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিচ্ছে দুর্নীতিবাজ অমেধাবীরা। যাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা না পাচ্ছে জ্ঞান, না পাচ্ছে আদর্শের শিক্ষা। এদের হাতে গড়ে উঠছে জাতির জন্য বোঝা এক বিশাল মেধাহীন প্রজন্ম। শিক্ষার হার বাড়াতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের আত্মঘাতি নির্দেশনা হ’ল শিক্ষার্থী যত মেধাহীনই হোক, তাকে অকৃতকার্য দেখানো যাবে না। সাদা খাতা জমা দিলেও তাকে পাশ করাতে হবে। অন্যদিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কখনও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব, নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক ব্যবধান ঘুচানো, যৌনতা ও সমকামিতাকে স্বাভাবিকীকরণ, ইসলামী আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইতিহাসের বিকৃতি, ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রপাগান্ডা, সূদী অর্থনীতির বিকাশ, বিজাতীয় বিশেষত হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির অযাচিত অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে।

অপরদিকে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা নামে ক্বওমী, খারেজী বা আলিয়া নামক যে ধারাগুলি প্রচলিত রয়েছে, তার অবস্থাও তথৈবচ। এতে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক থাকলেও চরম বিভ্রান্তি ঢুকেছে শিক্ষাপদ্ধতির দিক থেকে। যেমন :

প্রথমতঃ এই শিক্ষাপদ্ধতিতে ইসলামী জ্ঞানার্জনের মূলসূত্র তথা কুরআন ও হাদীছকে গ্রহণ করা হয়েছে মূলতঃ বরকতের কিতাব হিসাবে। আর এর পরিবর্তে বিভিন্ন মাযহাব, তরীকা, আকাবির-বুযুর্গকে জ্ঞানচর্চার মূল মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। কুরআনকে রাখা হয়েছে অর্থ অনুধাবন ছাড়া মুখস্থ তেলাওয়াত, শবীনা খতম করা, কুরআনখানী করার জন্য। আর হাদীছ গ্রন্থগুলো রাখা হয়েছে দাওরায়ে হাদীছ শিক্ষাবর্ষের শেষাংশে এসে বরকতময় পাঠের জন্য। জ্ঞানাহরণ কিংবা অনুসরণের জন্য কুরআন ও হাদীছের কোন গুরুত্ব এই শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। ফলে ৫০ বছর ধরে বুখারী খতম করানো মুফতী ছাহেব ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ছালাত আদায় করতে সক্ষম হন না। শিরক-বিদ‘আত, কুসংস্কারপূর্ণ রসম-রেওয়ায, বিজাতীয় সংস্কৃতির জঞ্জালকে উচ্ছেদের পরিবর্তে আপন আপন স্বার্থ সযত্ন লালন করাকেই তারা তাদের কর্তব্য মনে করেন। দলীলের অনুসরণের পরিবর্তে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণকেই মুক্তির পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন। অপরদিকে ইজমা-ক্বিয়াসের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল বানানোর অপকৌশল তারা রপ্ত করেছেন। আর দুনিয়াবী জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সিলেবাস বহির্ভুত রেখে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ এতে ছাহাবীদের নীতি-আদর্শ তথা সালাফী মানহাজের অনুসরণ নেই। ফলে কুরআন ও হাদীছের ভুল ব্যাখ্যাকে প্রতিরোধের কোন বিজ্ঞানসম্মত উপায় নেই। যে যার মত কুরআন ও হাদীছের অপব্যাখ্যা করলেও তা অপনোদনের কোন সূত্র নেই। ফলে ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জনের পথ এতে খোলা নেই। ফলে স্বভাবতই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে জিহাদ পরিণত হয়েছে জঙ্গীবাদে, দাওয়াত পরিণত হয়েছে প্রচলিত ছয় উছূলের তাবলীগে, ইক্বামতে দ্বীন পরিণত হয়েছে ইক্বামতে হুকুমত তথা প্রচলিত ভ্রান্ত ইসলামী রাজনীতিতে, তাযকিয়া বা আত্মিক পরিশুদ্ধি পরিণত হয়েছে ছূফীবাদে। এমনকি এ কারণে খোদ আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর স্বরূপ কিংবা সত্ত্বাগত পরিচয় সম্পর্কে পর্যন্ত অধিকাংশ মুসলমান সঠিক আক্বীদা রাখে না। সাধারণ মানুষরা তো দূরের কথা, বিজ্ঞ আলেমরা পর্যন্ত এই অপব্যাখ্যার মধ্যে নিমজ্জিত। এছাড়া শুধু কুরআন মানার দাবী করা, গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে আল্লাহ প্রেরিত বিশেষ পুরুষ দাবী করা ইত্যাকার নানা দল-উপদলের তো কোন হিসাবই নেই, যাদের উদ্ভব ঘটেছে সালাফে ছালেহীনের মানহাজ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে।

তৃতীয়তঃ এতে ইছলাহ বা ভুল সংশোধনের কোন প্রয়াস নেই। কোন গঠনমূলক কর্মসূচীও নেই। ইজতিহাদের অবকাশ নেই। সৃজনশীলতা নেই। বৃহত্তর উম্মাহকেন্দ্রিক কোন চিন্তার প্রসারতা নেই। সত্যকে সত্য বলা, মিথ্যা মিথ্যা বলার দৃঢ়চিত্ততা নেই। ফলে যুগ যুগ ধরে ভুলকে তারা কোন অবস্থাতেই সংশোধনকামী নন। বরং জেনেশুনে তা জিইয়ে রাখার ঘোর তাকলীদী মানসিকতাকে উল্টো তারা গর্বের সাথে লালন করেন।

ফলে এই শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামের নামে পরিচালিত হ‘লেও নীতি-পদ্ধতিগতভাবে তা বিশুদ্ধ ইসলাম তথা রাসূল (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না।

এমতাবস্থায় স্বভাবতঃই প্রশ্ন আসে যে, শিক্ষার এই দুরবস্থা দূরীকরণে আমাদের করণীয় কী হ’তে পারে?

উপরোক্ত আলোচনায় ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, প্রচলিত সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার মূল সমস্যা হ’ল লক্ষ্যহীনতা। একজন মুসলিম হিসাবে এবং একটি মুসলিম দেশে এই লক্ষ্যহীন, অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা কোনক্রমেই কাম্য হতে পারে না। সুতরাং আমাদের সবচেয়ে বড় করণীয় হবে এর লক্ষ্য নির্ধারণ (Ontological framework)-কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। আর এজন্যই আল্লাহ রাববুল আলামীন পবিত্র কুরআনের প্রথম আয়াতটি নাযিল করে আমাদের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন- পড়, তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন (আলাক্ব ১)। তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি জিন এবং ইনসানকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন (যারিয়াত ৫৬)। সুতরাং আল্লাহকে জানা, তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে জানা এবং সেই মোতাবেক জীবনকে পরিচালনাকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হবে তাওহীদ, আখেরাত ও রিসালাত ভিত্তিক। আমাদের ভাষা, সাহিত্য, কলা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন যাবতীয় পাঠ্যবস্ত্তর লক্ষ্য হবে এই মৌলিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে। 

কেউ বলতে পারেন, এদেশে অমুসলিমরাও রয়েছে। অতএব কোন নির্দিষ্ট ধর্মের অনুকূলে কোন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা তাদের প্রতি কি অবিচার নয়? আমরা বলব, অন্য ধর্মের অনুসারীরা তাদের ক্লাসে নিজ নিজ ধর্মশিক্ষা গ্রহণ করবে। কিন্তু মৌলিক শিক্ষানীতি হবে ইসলামেরই অনুকূলে, যা চিরসত্য ও কল্যাণকর। কেউ মিথ্যার পক্ষে অবস্থান নিলে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু সে কারণে সত্যের অবস্থান নড়চড় হবে না। যেমনভাবে এই যুগে এসে কেউ যদি দাবী করে যে, পৃথিবী সমতল- তবে স্রেফ তার দাবীর ভিত্তিতে পাঠ্যতালিকায় তা গ্রহণযোগ্য মত হিসাবে উল্লেখ করার সুযোগ নেই। কেননা যা ভ্রান্ত তা ভ্রান্তই। বিরাট সংখ্যক মানুষ তার পক্ষ নিলেও তা সত্য হয়ে যায় না। সুতরাং ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্মকে ধর্তব্য মনে করার অবকাশ নেই। কেননা ইসলামের আগমনের পর অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদ বাতিলযোগ্য (আলে-ইমরান ৩/১৯)

দ্বিতীয়তঃ লক্ষ্য নির্ধারণের পর লক্ষ্য অর্জনের পথ ও পদ্ধতিও (Epistemological framework) সঠিক হতে হবে। জ্ঞানার্জনের মূল সূত্র (Main Text) নির্ধারণ করতে হবে আল্লাহর অহি তথা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। যা কিনা সালাফে ছালেহীনের বুঝ (Right understanding of the main text) অনুযায়ী অনুসৃত হবে। এই পদ্ধতিই সত্যকে জানা ও মানার একমাত্র মাধ্যম, যা কিনা মানুষের ইজতিহাদ এবং আল্লাহ প্রদত্ত হিকমত ও হেদায়াতের মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞানে পরিণত হয়।

প্রিয় পাঠক, প্রকৃত শিক্ষা হ’ল স্রষ্টাকে জানা ও সবকিছুতে তাঁর তাওহীদ বা একত্বের স্বীকৃতি প্রদানের শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষাপদ্ধতি হ’ল স্রষ্টার প্রদর্শিত শিক্ষাপদ্ধতি। কবরে বান্দাকে যে চারটি প্রশ্ন করা হবে তাতেই আমরা এই শিক্ষাদর্শন স্পষ্টভাবে খুঁজে পাই। কবরে প্রথম তিনটি প্রশ্নই হবে- তোমার রব কে, নবী কে এবং ধর্ম কী? যা আমাদের লক্ষ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর সর্বশেষ প্রশ্ন হবে- কিভাবে সত্য জেনেছ? যার উত্তর হবে-আল কুরআন; যা আমাদের শিক্ষাপদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এই দু’টি মৌলিক বিষয়কে সামনে রেখে শিক্ষানীতি নির্ধারণ করাই কাম্য, যার উপর নির্ভর করছে আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা। একটি মুসলিম দেশে বৃটিশদের রেখে যাওয়া আধুনিক নামধারী আদর্শহীন, ইংরেজী নির্ভর শিক্ষা কখনই আমাদের জন্য বরণীয় হ’তে পারে না। অপরদিকে ইসলামী শিক্ষার নামে তাক্বলীদী অন্ধত্বপূর্ণ শিক্ষাও ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা নয়। সুতরাং প্রকৃতঅর্থে জ্ঞান অর্জন করতে গেলে আমাদেরকে সঠিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে সঠিক পদ্ধতিতে জ্ঞানার্জনের পথ অবলম্বন করতে হবে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সে অনুযায়ী ঢেলে সাজাতে হবে। তবেই তা দেশ ও জাতির প্রকৃত কল্যাণমুখী শিক্ষা হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন!



আরও