দাড়ি রাখার গুরুত্ব (২য় কিস্তি)

আসাদুল্লাহ আল-গালিব 2527 বার পঠিত

দাড়ি কামানো আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করার শামিল :

মহান আল্লাহ বলেন, لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ‘আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ (রূম ৩০/৩০)। এ আয়াতে তাফসীরে বলা হয় যে এটা একটি সংবাদ অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করো না আর যে আকৃতির উপর আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। আর তা আল্লাহর একত্ববাদকে জানা, তাঁর সৃষ্টিগত সহজসুলভ বৈশিষ্টগুলিকে মানা। আল্লাহ তা‘আলা ইবলীস সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ ِ ‘এবং তাদেরকে আদেশ করব যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে’ (নিসা ৪/১১৯)। আর এটা সুস্পষ্ট ভাষ্য যে, শরী‘আতের অনুমতি ব্যতীত আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা হল শয়তানের আদেশের আনুগত্য করা এবং রহমানের নাফরমানী করা। আল্লাহ বলেন, وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ ‘এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন এবং সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি’ (তাগাবুন ৬৪/৩)। এটি একটি ইঙ্গিতসূচক আদেশ  যে, আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম আকৃতিতে ও পরিপূর্ণ, পরিপাটি করে সৃষ্টি করেছেন। অতএব সেটাকে কিছু করে পরিবর্তন করো না যা তাকে কুৎসিত করবে ও বিকৃতি করে ফেলবে। অথবা সেভাবে হেফাযত কর যেভাবে তার সৌন্দর্যকে অব্যাহত ধারায় বৃদ্ধি করবে। আর তোমরা এ বিষয়ে শয়তানের আনুগত্য করবে না। আল্লাহ সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা  থেকে সতর্ক হও। নবী (ছাঃ) বলেছেন, لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُوتَشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ ‘আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন ঐ সমস্ত নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকন করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভুরু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সে সব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনায়ন করে’।[1]

তিনি (ছাঃ) লা‘নত করার কারণ উল্লেখ করেছেন যা এর হারাম হওয়ার পক্ষে নিম্মোক্ত কথা দলীল হিসাবে বহন করে। الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ ‘সে সব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনায়ন করে’। সুতরাং সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে স্বীয় দাড়ি কামানো ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তনকারীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বরং সে সর্বাগ্রে শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেননা শরীআতে একজন পুরুষের জন্য যতটুকু সৌন্দর্য নির্ধারণ করেছে সে তার চাইতে অধিক সৌন্দর্যকরণ বিধানভুক্ত করেছে। সুতরাং একজন নারীর ভ্রু এর চুল উপড়ানো আর একজন পুরুষ তার দাড়ি কামানো তার চাইতে অধিক নিকৃষ্ট।

দাড়ি লম্বা করা নবীদের বৈশিষ্ট্য :

দাড়ি লম্বা করা যে নবীদের সুন্নাত তার বর্ণনা পূর্বে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ ‘আর যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কতগুলি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর সে তা পূর্ণ করল’ (বাক্বারাহ ২/১২৪)। كَلِمَاتٍ শব্দটির ব্যাখ্যায় ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, এই শব্দটি দ্বারা ইবরাহীম (আঃ)-এর পরীক্ষা করার বুঝানো হয়েছে যা ফেতরাতের বৈশিষ্ট্যের অর্ন্তভুক্ত। যেমনভাবে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে হারূন (আঃ)-এর লম্বা দাড়ির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মুসা (আঃ)-এর শানে মহান আল্লাহ বলেন, قَالَ يَبْنَؤُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي وَلَا بِرَأْسِي ‘(হারূণ বলল) হে আমার সহোদর ভাই! আমার দাড়ি ও মাথার চুল ধরে টেনো না’ (ত্বহা ২০/৯৪)। যদি তার দাড়ি না থাকত তাহলে তিনি তার দাড়ি ধরার কথা ছোট ভাই নবী মুসা (আঃ)-কে এ কথা বলতে পারতেন না। সুতরাং দাড়ি রাখা নবীদের বৈশিষ্ট্য।  আল্লাহ তা‘আলা  আরো বলেন,

أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ-

‘এরাই হল ঐসব মানুষ যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত দান করেছেন। অতএব তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর’ (আনআম ৬/৯০) । আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নবীকে আদেশ করেছেন তাঁকে অনুসরণের জন্য। এটি আমাদের জন্য আদেশ এ জন্য যে, কেননা তিনি অনুসরণীয় আদর্শ প্রাণপুরুষ। আল্লাহ বলেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ-

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে’ (আহযাব ৩৩/২১)

দাড়ি লম্বা করা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য :

মহান আল্লাহ বলেন, كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ ‘তোমরাই হ’লে শ্রেষ্ঠ জাতি। যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য’ (আলে ইমরান ৩/১১০)। তিনি আরো বলেন,  وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ‘আর যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে, তুমি তার রাস্তা অবলম্বন কর’ (লোক্বমান ৩১/১৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ‘সর্বোত্তম মানুষ হ’ল আমার যুগের মানুষ অতঃপর তার পরবর্তীগণ অতঃপর তার পরবর্তীগণ’।[2] অপর হাদীছে রাসূলল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ ‘তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুনণাতকে ধারণ কর। তোমরা সেগুলি কঠিনভাবে আঁকড়ে ধর এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে ধর। আর তোমরা ধর্মের নামে নতুর সৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’।[3]

এটা প্রমাণিত হয় যে, খুলাফায়ে রাশেদীন, ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ঈযাম সকলেই বড় বড় দাড়িওয়ালা ব্যক্তি ছিলেন। যেমন আবু বকর (রাঃ)-এর দাড়ি ঘন ছিল। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)-এর দাড়ি প্রচুর ছিল। হযরত উসমান (রাঃ)-এর দাড়ি অনেক লম্বা ছিল। হযরত আলী (রাঃ)-এর দাড়ি প্রশস্ত ছিল। ঐ সময় তারা সকলের নিকট সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি হিসাবে স্বীকৃত ছিলেন। পরবর্তীতে তাদেরই অনুসরণ করেছিল নেককার, মুজাহিদ ও সত্যবাদী ব্যক্তিরা। তাদের দ্বারা রোম ও পারস্য বিজিত হয়েছিল এবং তাদের পদনমিত হয়েছিল পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত। অথচ তাদের কেউ দাড়ি কামানো ব্যক্তি ছিলেন না। যদি ইসলামের ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলি অনুসন্ধান করা হয় তাহলে কোথাও পাওয়া যাবে না যে, উম্মতের পথ প্রদর্শক ও আলোর কান্ডারী ব্যক্তিরা দাড়ি কামাতেন। নিশ্চয় এই ভ্রষ্টতা আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। কিছু মুসলমান কাফেরদের সাথে উঠা-বসা, চলাফেরায় দাড়ি না থাকাকে সুখকর মনে করে। ফলে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পথ ছেড়ে বিপথগামী ব্যক্তিদের অনুসরণ করে থাকে। এমনকি তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে ইহুদী-নাছারাদের হুবহু অনুসরণ করার চেষ্টা করে থাকে।

দাড়ি কামানো কাফেরদের সাদৃশ্য :

মহান আল্লাহ বলেন,ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ‘তারপর আমি তোমাকে দীনের এক বিশেষ বিধানের উপর প্রতিষ্ঠত করেছি। সুতরাং তুমি তার অনুসরণ কর এবং যারা জানে না তাদের খেয়াল- খুশীর অনুসরণ কর না’ (জাছিয়া ৪৫/১৮)। যারা দাড়ি কামায় তারা শরী‘আত বিরোধী কাজ করে। তার মন যা চায় তাই করে। কিন্তু মুশরিকরা তার হেদায়াতের ধারক বাহক নয়। তাদের ধর্ম হ’ল বাতিল। মহান আল্লাহ  বলেন,أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِنْهُمْ فَاسِقُونَ  ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাযিল হয়েছে তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতিপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারপর তাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হল, অতঃপর তাদের অন্তরসমূহ কঠিন হয়ে গেল। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক’ (হাদীদ ৫৭/১৬)

মহান আল্লাহর বাণী (وَلَا يَكُونُوا) ‘আর তারা যেন না হয়’ শব্দটি দ্বারা তাদের সাথে সাদৃশ্য না রাখার সাধারণ নিষেধ বুঝায়। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আল্লাহ  তা‘আলা এই শব্দটি দ্বারা তাদের সাথে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সাদৃশ্য রাখতে নিষেধ করেছেন’।[4] সুতরাং কাফেরদের কথা, কর্ম ও প্রবৃত্তির সাথে সাদৃশ্য রাখা হ’তে বিরত থেকে কুরআনুল কারীম ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত শরী‘আতের বিধি-বিধান মেনে চলা যরূরী। যেমন- ছালাত, ছিয়াম, আতিথেয়তা, পোশাক-পরিচ্ছেদ, সৌন্দর্য, শিষ্টাচার, আচার-ব্যবহার ইত্যাদি। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ عَمِلَ بِسُنَّةِ غَيْرِنَا ‘সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় যে অন্যের সুন্নাতকে পালন করে’।[5]

মনে রাখা যরূরী যে, মদীনার ইহুদীরাও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে বলেছিল, مَا يُرِيدُ هَذَا الرَّجُلُ أَنْ يَدَعَ مِنْ أَمْرِنَا شَيْئًا إِلاَّ خَالَفَنَا فِيهِ ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ) আমাদের প্রতিটি বিষয়ে বিরোধিতা করতে চায়’।[6] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘কোন ব্যক্তি যদি কোন কওমের সাদৃশ্য রাখে তাহলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত’।[7] হযরত হাসান (রহঃ) বলেন, ‘কেউ যদি কোন কওমের সাদৃশ্য রাখে তাহলে সে তাদের সাথেই মিলিত হখে অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে। কয়েকজন আনছারী ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ) কে বলল, يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ يَقُصُّونَ عَثَانِينَهُمْ وَيُوَفِّرُونَ سِبَالَهُمْ. قَالَ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم قُصُّوا سِبَالَكُمْ وَوَفِّرُوا عَثَانِينَكُمْ وَخَالِفُوا أَهْلَ الْكِتَابِ ‘হে আল্লাহর রাসূল নিশ্চয় আহলে কিতাবরা দাড়িকে ছোট করে এবং মোচকে বড় করে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা মোচকে ছোট কর এবং দাড়িকে বড় কর এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা কর।[8] অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ ‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর। মোচ ছোট কর ও দাড়ি লম্বা কর’।[9] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ ‘তোমরা মোচকে ছাট এবং দাড়িকে লম্বা কর। এবং মূর্তিপূজকদের বিরোধীতা কর’।[10] আর মোচ কাটার বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর অপর হাদীছ, مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে ব্যক্তি মোচ কাটে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[11]

দাড়ি লম্বা করা বীরত্ব ও পুরুষত্বের প্রতীক :

আল্লাহ নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। চুল দাড়ি ও মোচ গজানো উভয়েরই সাধারণ নিয়ম। কেননা এই দু’টি দ্বারা পুরুষকে নারী হতে আলাদা করা যায়। কোন পুরুষ যদি দাড়ি রেখে মহিলার পোষাক পরিধান করে তাহলে তাকে পুরুষই মনে হবে। কেননা দাড়ি হ’ল উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট পার্থ্যককারী।

দাড়ি কাটা মহিলাদের সাদৃশ্য স্বরূপ :

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ. ‘রাসূল (ছাঃ) নারীদের সাদৃশ্যধারণকারী পুরুষ ও পুরুষের সাদৃশ্যধারণকারী নারীদের উপর লা‘নত করেছেন’।[12] আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) একজন চিকন মহিলাকে দেখলেন, সে পুরুষের ন্যায় হাটছে। অতঃপর তিনি বললেন, سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِالرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ وَلاَ مَنْ تَشَبَّهَ بِالنِّسَاءِ مِنَ الرِّجَالِ. ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি সে পুরুষ আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় যে নারীদের সাদৃশ্য ধারণ করে এবং যে নারী পুরুষের সাদৃশ্য ধারণ করে’।[13]

সুতরাং কোন সন্দেহ নেই যে, দাড়ি কামানো মহিলাদের সাদৃশ্য বহন করে।

দাড়ি লম্বা করা সৌন্দর্য ও সম্মানের প্রতীক :

মহান আল্লাহ  বলেন, وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ ‘আমরা আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি’ (ইসরা ১৭/৭০)। কিছু ওলামা বলেন, বনী আদমের সৌন্দর্য হ’ল আল্লাহ তাদেরকে পরিপূর্ণ ও সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। কিছু ওলামা বলেন, এই সৌন্দর্য্য হ’ল, পুরুষের দাড়ি এবং মহিলাদের লম্বা চুল মহান আল্লাহ  বলেন, لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ ‘অবশ্যই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম অবয়বে’ (ত্বীন ৯৫/৪)। তিনি আরো বলেন, يَاأَيُّهَا الْإِنْسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ- الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ- فِي أَيِّ صُورَةٍ مَا شَاءَ رَكَّبَكَ ‘হে মানুষ! কোন বস্ত্ত তোমাকে তোমার মহান প্রভু থেকে বিভ্রান্ত করল? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন, অতঃপর সুষম করেছেন। তিনি তোমাকে তেমন আকৃতিতে গঠন করেছেন, যেভাবে তিনি চেয়েছেন’ (ইনফিতার ৮২/৬৮)।  মহান আল্লাহ বলেন, صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ ‘এটা আল্লাহর কারুকার্য। যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত’ (নামল ২৭/৮৮)। আল্লাহর প্রত্যেক সৃষ্টিই সুন্দর।

সুতরাং দাড়ি আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য নে‘মত ও সম্মান স্বরূপ দিয়েছেন। কোন সন্দেহ নেই যে দাড়ি কেটে ফেলা আল্লাহর এই মহিমান্বিত নে‘মতকে অস্বীকার করা এবং রাসূল (ছাঃ) এর সঠিক পথ থেকে অবনতি ঘটার শামিল। আল্লাহ আমাদের সকলকেই দাড়ি রাখার তাওফীক দান করুন- আমীন।

(ক্রমশঃ)

(মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইসমাঈল ( الْلحية لماذا؟দাড়ি কেন রাখব? বই অবলম্বনে লিখিত)

 [লেখক : ৪র্থ বর্ষ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]

[1]বুখারী হা/৪৮৮৬

[2]বুখারী হা/২৬৫২মুসলিম হা/২৫৩৩

[3]আহমাদআবু দাঊদমিশকাত হা/১৩৫

[4]তাফসীর ইবনু কাছীর ৮/২০ পৃঃ

[5]সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৭

[6]মুসলিম হা/৩০২

[7]আবু দাঊদ হা/৪০৩৩মিশকাত হা/৪৩৪৭

[8]আহমাদ হা/২২৩৩৮

[9]বুখারী হা/৫৮৯২মুসলিম হা/২৫৯মিশকাত হা/৪৪২১

[10]মুসলিম হা/২৬০মিশকাত হা/৪৪২১

[11]তিরমিযী হা/২৭৬১

[12]বুখারী হা/৫৮৮৫

[13]আহমাদ হা/৭০৫৪




বিষয়সমূহ: সুন্নাত
আরও