মূল্যহীন দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালোবাসা (৮ম কিস্তি )
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আসাদ বিন আব্দুল আযীয 1033 বার পঠিত
ঙ. হাদীছে বর্ণিত গুনাহ মাফের আমলসমূহ :
১. আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা : আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার নিকট যখনই কোন বান্দা একনিষ্ঠচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করে তখনই তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেন। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,قَالَ اللهُ يَا يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ، وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً- ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যেমনই হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহ’লে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব’।[1]
২. স্বল্প হলেও একনিষ্ঠভাবে আমল হওয়া : বান্দার একনিষ্ঠ আমল আল্লাহ কবুল করে থাকেন যদিও তা স্বল্প পরিমাণে হয়। বারা ইবনু আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, লৌহ বর্মে আবৃত এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করব, না ইসলাম গ্রহণ করব? তিনি বললেন, أَسْلِمْ، ثُمَّ قَاتِلْ ‘ইসলাম গ্রহণ কর, তারপর যুদ্ধে যাও’। তারপর সে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাতবরণ করল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, عَمِلَ قَلِيلًا وَأُجِرَ كَثِيرًا ‘সে অল্প আমল করে বেশী পুরস্কার পেল’।[2]
অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জারীর বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজালী (রাঃ) বলেন, একজন ব্যক্তি এসে ইসলাম গ্রহণ করল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাকে ইসলাম শিক্ষা দিলেন। যাওয়ার পথে রাস্তায় তার ঘোড়ার পা গর্তে পড়ে গেলে তাকে ফেলে দেয়। ফলে সে মারা যায়। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তার নিকট এসে বললেন, عَمِلَ قَلِيلًا وَأُجِرَ كَثِيرًا ‘সে অল্প আমল করে বেশী পুরস্কার পেল’।[3]
৩. মন্দ কাজের পর ভাল কাজ করা : ভাল কাজ সর্বদা কল্যাণ বয়ে আনে। সুতরাং যখন কোন ব্যক্তির দ্বারা মন্দ কাজ হয়ে যায় তখনই তার ভাল কাজ করা উচিত। কেননা ভাল কাজ মন্দকে দূরীভূত করে। আবু যর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, আপনি আমাকে উপদেশ দিন, তখন তিনি বললেন, যখন তুমি মন্দ কাজ করে ফেলবে তখনই কোন ভাল কাজ কর যা মন্দকে দূরীভূত করে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ কি যথেষ্ট হবে। তিনি বললেন, هِىَ أَفْضَلُ الْحَسَنَاتِ ‘সেটা হ’ল উৎকৃষ্ট নেকী’।[4]
আবু যর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,اتَّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَن- ‘তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর’।[5]
আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার বড় অনুগ্রহ এই যে, যখন কোন ব্যক্তি কোন মন্দ কাজের নিয়ত করবে কিন্তু যদি সে বাস্তবায়ন না করে তাহ’লেও সে নেকী পায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ ভাল-মন্দ লিখে দিয়েছেন। এরপর সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে করল না, আল্লাহ তার কাছে এর জন্য পূর্ণ নেকী লিখবেন। আর সে ভাল কাজের ইচ্ছা করল এবং তা বাস্তবায়ন করল তবে আল্লাহ তাকে দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অধিক নেকী লিখে দেন। আর যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তার কাছে তার জন্য পূর্ণ নেকী লিখবেন। আর যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে, তবে তার জন্য আল্লাহ মাত্র একটা গুনাহ লিখেন’।[6]
হাদীছে পাপের পর পুণ্যময় কাজের একটি চমৎকার উদাহরণ রয়েছে। উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ مَثَلَ الَّذِى يَعْمَلُ السَّيِّئَاتِ ثُمَّ يَعْمَلُ الْحَسَنَاتِ كَمَثَلِ رَجُلٍ كَانَتْ عَلَيْهِ دِرْعٌ ضَيِّقَةٌ قَدْ خَنَقَتْهُ ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً فَانْفَكَّتْ حَلْقَةٌ ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً أُخْرَى فَانْفَكَّتْ حَلْقَةٌ أُخْرَى حَتَّى يَخْرُجَ إِلَى الأَرْضِ- ‘যে ব্যক্তি কোন পাপ করার পরপরই পুণ্যকর্ম করে, সেই ব্যক্তির উপমা এমন একজনের মত যার দেহে ছিল সংকীর্ণ বর্ম; যা তার শ্বাসরোধ করে ফেলেছিল। অতঃপর সে যখন একটি পুণ্যকর্ম করে, তখন বর্মের একটি আংটা খুলে যায়। তারপর আর একটি পুণ্য করলে আরও একটি আংটা খুলে যায়। ফলে সে সংকীর্ণতার কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে’।[7]
৪. ওযূর মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় : পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হ’ল ওযূ। ওযূ যেমন একজন ব্যক্তিকে দৈহিকভাবে পবিত্র করে অনুরূপভাবে তার গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দিয়ে তার অন্তরকেও কলুষমুক্ত করে। ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম (কিংবা বলেছেন কোন মুমিন) বান্দা যখন যখন ওযূ করে, তখন মুখ ধোয়ার সাথে (অথবা বলেছেন পানির শেষবিন্দুর সাথে) তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যার দিকে তার দু’চোখের দৃষ্টি পড়েছিল; এবং যখন দু’হাত ধোয়, তখন পানির সাথে অথবা বলেছেন পানির শেষবিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যেগুলো তার দু’হাতে ধরেছিল; এবং যখন দুই পা ধোয় তখন পানির সাথে অথবা বলেছেন পানির শেষবিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যেগুলোর দিকে তার দু’পা অগ্রসর হয়েছিল। ফলে (ওযূ শেষে) লোকটি তার সমুদয় গুনাহ থেকে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে ওঠে’।[8]
অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ، حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ ‘যে ব্যক্তি ওযূ করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমুদয় গুনাহ বের হয়ে যায়, এমন কি তার নখের ভিতর থেকেও (গুনাহ) বের হয়ে যায়’।[9]
৫. ওযূর পরে ছালাত আদায় করা : আল্লাহর নৈকট্যলাভের অন্যতম মাধ্যম হ’ল ছালাত। উত্তমরূপে ওযূর পর ছালাত আদায় করলে গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَا يَتَوَضَّأُ رَجُلٌ مُسْلِمٌ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ فَيُصَلِّي صَلَاةً إِلَّا غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلَاةِ الَّتِي تَلِيهَا ‘যে মুসলিম ব্যক্তি ওযূ করবে এবং ওযূকে সুন্দরভাবে আদায় করবে, অতঃপর ছালাত আদায় করবে সেই ব্যক্তির এই ছালাত এবং তার পূর্ববর্তী ছালাত-এর মধ্যবতী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’।[10]
৬. আযান দেওয়ার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় : আযান দেওয়ার বিবিধ ফযীলত রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম একটি হ’ল আযানের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْمُقَدَّمِ، وَالْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَهُ بِمَدِّ صَوْتِهِ وَيُصَدِّقُهُ مَنْ سَمِعَهُ مِنْ رَطْبٍ وَيَابِسٍ، وَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ صَلَّى مَعَهُ ‘আল্লাহ প্রথম কাতারের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। মুআয্যিনকে তার আযানের আওয়াযের উচ্চতা অনুযায়ী ক্ষমা করা হয়। তার আযান শ্রবণকারী প্রত্যেক সরস বা নীরস বস্ত্ত তার কথার সত্যায়ন করে থাকে। তার সাথে যারা ছালাত পড়ে তাদের সকলের নেকীর সমপরিমাণ তার নেকী লাভ হয়’।[11]
৭. পবিত্র অবস্থায় মসজিদে গমন করলে : পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম জায়গা হ’ল মসজিদ। সেই মসজিদে পবিত্রাবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে ইবাদতের জন্য গেলে তার গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্র হয়ে এই সকল মসজিদের একটির দিকে অগ্রসর হবে তার প্রত্যেক ধাপের জন্য একটি করে নেকী লেখা হবে এবং তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং একটি গুনাহ মাফ করা হবে। তারপর একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ছাড়া আর কাউকে জামা‘আত থেকে বাদ পড়তে আমরা দেখিনি। অনেক লোক দু’জনের কাঁধে ভর করে হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে মসজিদে আসত এবং তাদের সারিতে দাঁড় করে দেয়া হত’।[12]
অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا الصَّلَاةُ، لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلَّا رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ- ‘সে যখন উত্তমরূপে ওযূ করল, অতঃপর একমাত্র ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা হ’ল তখন তার প্রতি ধাপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়’।[13]
অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلَاةِ لَمْ يَرْفَعْ قَدَمَهُ الْيُمْنَى إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ حَسَنَةً، وَلَمْ يَضَعْ قَدَمَهُ الْيُسْرَى إِلَّا حَطَّ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَنْهُ سَيِّئَةً ‘তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন ওযূ করে, অতঃপর ওযূকে সুন্দররূপে সম্পাদন করে। তারপর ছালাতের জন্যে বের হয় যখনই সে ডান পা উঠায় তখনই তার জন্যে আল্লাহ একটি নেকী লিখে দেন। যখনই বাম পা রাখে তখনই আল্লাহ তার একটি গুনাহকে মাফ করে দেন’।[14]
৮. দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের মাধ্যমে : আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হ’ল ছালাত। যা আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা নির্দিষ্ট বয়সের সকল ব্যক্তির উপর দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যার মাধ্যমে বান্দা তার গুনাহ মাফ করে নিতে পারে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন,الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ থেকে আরেক জুম‘আ পর্যন্ত এবং এক রামাযান থেকে অপর রামাযান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের জন্য (গুনাহ) কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে’।[15]
৯. নফল ছালাত আদায় করা :
ফরয ইবাদতের পরে শ্রেষ্ঠ ইবাদত নফল ছালাত। এর মর্যাদাও অনেক বেশী। এজন্য নফল ছালাত আদায়ের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে সিজদার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। যার বদৌলতে আমাদের গুনাহগুলো মাফ করে নিতে পারি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ لِلَّهِ، فَإِنَّكَ لَا تَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً، إِلَّا رَفَعَكَ اللهُ بِهَا دَرَجَةً، وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيئَةً- ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক সিজদা কর। কেননা, তুমি যখনই আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মোচন করে দিবেন’।[16]
অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً، وَمَحَا عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً، وَرَفَعَ لَهُ بِهَا دَرَجَةً، فَاسْتَكْثِرُوا مِنَ السُّجُودِ ‘যখন কোন বান্দা আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে একটি নেকী দান করেন, তার একটি গুনাহ মাফ করেন এবং তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করেন। অতএব তোমরা অধিক সংখ্যায় সিজদা কর’।[17]
১০. ছালাতান্তে ক্ষমা প্রার্থনা করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا، فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللهَ، إِلَّا غَفَرَ اللهُ لَهُ- ‘যখন কোন বান্দা কোনরূপ গুনাহ করার পর উত্তমরূপে ওযূ করে দাঁড়িয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন’।[18]
১১. তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করা : তাহাজ্জুদ ছালাত সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের অন্যতম আমল। যার দ্বারা বান্দা তার গুনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ، فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمَكْفَرَةٌ لِلسَّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ عَنِ الْإِثْمِ ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদাত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের নিত্য আচরণ ও প্রথা। রাতের ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, পাপকর্মের প্রতিবন্ধক, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং দেহের রোগ দূরকারী’।[19]
১২. জুম‘আর ছালাত আদায় করা :
জুম‘আ হ’ল মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। জুম‘আর দিনের নানাবিধ ফযীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে। এরপর বের হয় এবং দু‘জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে। তারপর তার নির্ধারিত ছালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তাহ’লে তার এক জুম‘আ থেকে আরেক জুম‘আ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়’।[20]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنِ اغْتَسَلَ؟ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ، ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَعَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى، وَفَضْلُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ- ‘জুম‘আর দিনে যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুম‘আর জন্য যায় এবং সমর্থ অনুযায়ী ছালাত আদায় করে, এরপর ইমাম খুৎবা সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত নীরবে থাকে, এরপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করে। তবে তার এ জুম‘আ হ’তে পরবতীঁ জুম‘আ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়’।[21]
১৩. জুম‘আর দিনের কতিপয় আদব রক্ষায় গুনাহ মাফ হয় : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করাবে (জুম‘আর নামাযের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা সুগন্ধিযুক্ত দ্রব্যাদি দ্বারা উত্তমরূপে গোসল করবে, অতঃপর সকাল সকাল মসজিদে গিয়ে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে বসে খুৎবা শুনবে এবং যাবতীয় প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্ম হ’তে বিরত থাকবে। তার মসজিদে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপে এক বছর দিনে ছিয়াম এবং রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়ের ছওয়াবের সমতুল্য হবে’।[22]
১৪. বালা-মুছীবতের সময় ধৈর্য ধারণ করা : বালা-মুছীবত, রোগ-ব্যাধি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে তার বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য। সুতরাং এই কঠিন সময়ে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। যেমনটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ، وَلَا وَصَبٍ، وَلَا هَمٍّ، وَلَا حُزْنٍ، وَلَا أَذًى، وَلَا غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا خَطَايَاهُ- ‘মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ ব্যাধি, উদ্রেক-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমন কি তার দেহে যদি কাটাও বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন’।[23]
অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُشَاكُ شَوْكَةً، فَمَا فَوْقَهَا إِلَّا كُتِبَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ- ‘যদি কোন মুসলিমের গায়ে কাটা বিদ্ধ হয় কিংবা তার চাইতে অধিক (কোন আঘাত লাগে), তার পরিবর্তে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়’।[24]
অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى مِنْ مَرَضٍ، فَمَا سِوَاهُ إِلَّا حَطَّ اللهُ بِهِ سَيِّئَاتِهِ، كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا- ‘কোন মুসলিম ব্যক্তির জ্বর কিংবা অন্য কোন কারণে বিপদ আপতিত হলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা এমনভাবে তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন যেভাবে গাছ তার পাতা ঝরায়’।[25]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেছেন,مَا يَزَالُ البَلاَءُ بِالمُؤْمِنِ وَالمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ- ‘মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়’।[26]
১৫. মাইয়েতকে গোসল দেওয়া : মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। যার স্বাদ সকলকেই আস্বাদন করতে হবে। একজন মাইয়েতকে দাফন-কাফনের পূর্বে গোসল দিতে হয়। এই সময়ে বেশ কিছু গোপনীয় বিষয় থাকে। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি এই গোপনীয় বিষয় গোপন রাখতে পারে তাহ’লে তার জন্য আল্লাহ ক্ষমার দুয়ার উন্মুক্ত করে দিবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ غَسَّلَ مَيِّتًا فَكَتَمَ عَلَيْهِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ أَرْبَعِينَ مَرَّةً ‘যে ব্যক্তি মৃতকে গোসল দেবে এবং তার দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তাকে চল্লিশবার ক্ষমা করবেন’।[27]
১৬. ছাদাক্বা প্রদান করা : একজন মুমিন ব্যক্তির গুনাহ মাফ করে নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হ’ল দান-ছাদাক্বা করা। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ، كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ ‘পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয়, তেমনি দান-ছাদাক্বাও গুনাহসমূহ দূরীভূত করে দেয়’।[28]
অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন লোকের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি ও প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে যে বিপদ অর্থাৎ ক্রটি-বিচ্যূতি হয়- এগুলোর জন্য ছালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বা, সৎকাজের প্রতি আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে কাফফারা স্বরূপ’।[29]
১৭. আরাফার দিনে ছিয়াম পালন করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ ‘আর আরাফাত দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তা পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে’।[30]
১৮. আশুরার ছিয়াম পালন করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ ‘আশুরার ছিয়াম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফ্ফারা হয়ে যাবে’।[31]
১৯. ইসলাম গ্রহণ করা : ইসলাম হ’ল শান্তির ধর্ম। এই শান্তির ধর্মে কোন ব্যক্তি যদি ফিরে আসে তাহলে তার পূর্বে কৃত গুনাহসমূহ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ‘ইসলাম গ্রহণ পূর্বেকার সকল গুনাহ বিনাশ করে দেয়’।[32]
২০. হিজরত করা : মুসলিম জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি হ’ল হিজরত। যখনই ইসলাম পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে, তখন ইসলাম পালনে অনুকূল জায়গায় হিজরতে রয়েছে ক্ষমা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا ‘হিজরত সে সকল গুনাহ মাফ করে দেয়, যা হিজরতের পূর্বে করা হয়েছে’।[33]
২১. হজ্জ পালন করা : আর্থিক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ পালন করা ফরয। আর হজ্জ পালনে রয়েছে গুনাহসমূহ ক্ষমা করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ‘এমনিভাবে হজ্জ তার পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়’।[34] অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةَ- ‘হজ্জ ও ওমরা সাথে সাথে কর। কারণ এ দু’টি দারিদ্র ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবুলযোগ্য হজ্জের ছওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়’।[35]
২২. ওমরা পালন করা : কাবা গৃহে গুনাহসমূহ ক্ষমা করে নেওয়ার আরও একটি মাধ্যম হ’ল ওমরা পালন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ- ‘একটি ওমরা পরবর্তী ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্রটিমুক্ত (আল্লাহর নিকট গৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’।[36]
২৩. হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা : উমাইর (রহঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, ‘ভীড় ঠেলে হ’লেও ইবনু ওমর (রাঃ) হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর নিকটে যেতেন (তা স্পর্শ করার জন্য)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অন্য কোন ছাহাবীকে আমি এরূপ করতে দেখিনি। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান! আপনি ভীড় ঠেলে হ’লেও এই দুই রুকনে গিয়ে পৌঁছেন, কিন্তু আমি তো ভীড় ঠেলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অন্য কোন ছাহাবীকে সেখানে যেতে দেখিনি। তিনি বললেন, আমি এরূপ কেন করব না? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, এই দু’টি রুকন স্পর্শ করলে গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যায়’।[37]
২৪. তাওয়াফ করা : আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চারদিকে সাতবার তাওয়াফ করবে ও তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করবে, তবে তা তার জন্য গোলাম মুক্ত করে দেবার সমতুল্য হবে। এটা ছাড়াও তাঁকে (ইবনু ওমর (রাঃ)-কে) বলতে শুনেছি, কোন লোক এতে এক পা ফেলে অপর পা উঠানোর আগেই বরং আল্লাহ তা‘আলা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন ও তার জন্যে একটি ছওয়াব নির্ধারণ করেন’।[38]
২৫. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা : আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ، وَرُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ- ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে’।[39]
২৬. দ্বীনী মজলিসে বসা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ قَوْمٍ اجْتَمَعُوا يَذْكُرُونَ اللَّهَ لاَ يُرِيدُونَ بِذَلِكَ إِلاَّ وَجْهَهُ إِلاَّ نَادَاهُمْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ قُومُوا مَغْفُوراً لَكُمْ قَدْ بُدِّلَتْ سَيِّآتُكُمْ حَسَنَاتٍ- ‘যে কোন সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে আল্লাহর স্মরণ করবে এবং এর দ্বারা তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন, সেই সম্প্রদায়কে আসমানের কোন এক ঘোষণাকারী ডেকে বলবে, তোমরা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে যাও যে, তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গুনাহসমূহকে পরিবর্তন করে ছওয়াবে পরিণত করা হয়েছে’।[40]
২৭. বার্ধক্যের পরিপক্ক চুল গোপন না করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সাদা চুল উপড়াতে নিষেধ করেছেন। কেননা সুফিয়ান (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, ‘যে মুসলিমের চুল ইসলামের উপর সাদা হয়, তা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য নূর স্বরূপ হবে’। রাবী ইয়াহ্ইয়ার বর্ণনায় আছে যে, ঐ সাদা চুলের বিনিময়ে একটি নেকী লেখা হবে এবং একটি গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে’।[41]
শেষকথা : মুমিন কখনও গুনাহের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে না। তবে গুনাহ হওয়াটাও তার জন্য অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে সর্বদা সতর্ক থাকে যেন তওবার মাধ্যমে এবং কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত মাধ্যমসমূহকে অসীলা করে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। সর্বদা তার চেষ্টা থাকে সে যেন আল্লাহর কাছে পাপমুক্ত অবস্থায় উপস্থিত হ’তে পারে। এজন্য উপরোক্ত পাপমুক্তির অসীলাগুলোকে সবসময় ধারণ করা মুমিনের জন্য কর্তব্য।
লেখক : ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ।
[1]. তিরমিযী হা/৩৫৪০; ছহীহাহ হা/১২৭; মিশকাত হা/২৩৩৬।
[2]. বুখারী হা/২৮০৮; মুসলিম হা/১৯০০; ছহীহুত তারগীব হা/১৩১১।
[3]. আহমাদ হা/১৯১৫৮।
[4]. আহমাদ হা/২১৫২৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৬২; ছহীহাহ হা/১২৭৩।
[5]. আহমাদ হা/২১৫২৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৬২; ছহীহাহ হা/১২৭৩।
[6]. বুখারী হা/৬৪৯১; মুসলিম হা/১৩১; মিশকাত হা/২৩৭৪।
[7]. আহমাদ হা/১৭৩৪৫; ছহীহাহ হা/২৮৫৪; মিশকাত হা/২৩৭৫।
[8]. মুসলিম হা/২৪৪; তিরমিযী হা/২; দারেমী হা/৭১৮; মিশকাত হা/২৮৫।
[9]. মুসলিম হা/২৪৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৮২; মিশকাত হা/২৮৪।
[10]. মুসলিম হা/২৭৭।
[11]. নাসাঈ হা/৬৪৬; আহমাদ হা/১৮৫২৯; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৫।
[12]. মুসলিম হা/৬৫৪; আহমাদ হা/৩৯৩৬; মিশকাত হা/১০৭২।
[13]. বুখারী হা/৬৪৭; মুসলিম হা/৬৪৯; মিশকাত হা/৭০২।
[14]. আবুদাঊদ হা/৫৬৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩০১।
[15]. মুসিলম হা/২৩৩; মিশকাত হা/৫৬৪।
[16]. মুসিলম হা/৪৮৮; আহমাদ হা/২২৪৩১; মিশকাত হা/৮৯৭।
[17]. ইবনু মাজাহ হা/১৪২৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩৮৬।
[18]. আবুদাঊদ হা/১৫২১; ছহীহুত তারগীব হা/১৬২১।
[19]. তিরমিযী হা/৩৫৪৯; ছহীহুত তারগীব হা/৬২৪; মিশকাত হা/১২২৭।
[20]. বুখারী হা/৮৮৩; মিশকাত হা/১৩৮১।
[21]. মুসলিম হা/৮৫৭; মিশকাত হা/১৩৮২।
[22]. বুখারী হা/ হা/৮৮৩; মিশকাত হা/১৩৮১।
[23]. বুখারী হা/৫৬৪১; মুসলিম হা/২৫৭৩; মিশকাত হা/১৫৩৭।
[24]. মুসলিম হা/২৫৭২; হিববান হা/২৯০৬; আহমাদ হা/২৫৪৪২।
[25]. বুখারী হা/৫৬৪৮; মুসলিম হা/২৫৭১; মিশকাত হা/১৫৩৮।
[26]. তিরমিযী হা/২৩৯৯; ছহীহাহ হা/২২৮০।
[27]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৬৫৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৯২।
[28]. তিরমিযী হা/৬১৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৬২; মিশকাত হা/২৯।
[29]. বুখারী হা/৫২৫; মুসলিম হা/১৪৪; মিশকাত হা/৫৪৩৫।
[30]. মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৪।
[31]. প্রাগুক্ত।
[32]. মুসলিম হা/১২১; ছহীহুত তারগীব হা/১০৯৭; মিশকাত হা/২৮।
[33]. প্রাগুক্ত।
[34]. প্রাগুক্ত।
[35]. তিরমিযী হা/৮১০; নাসাঈ হা/২৬৩০; মিশকাত হা/২৫২৪।
[36]. বুখারী হা/১৭৭৩; মুসলিম হা/১৩৪৯; মিশকাত হা/২৫০৮।
[37]. তিরমিযী হা/৯৫৯; মিশকাত হা/২৫৮০।
[38]. প্রাগুক্ত।
[39]. নাসাঈ হা/১২৯৭; দারেমী হা/২৭৭২; মিশকাত হা/৯২২।
[40]. আহমাদ হা/১২৪৭৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৫০৪।
[41]. আবুদাঊদ হা/৪২০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৬৩।