সমাজে প্রচলিত শিরকসমূহ : একটি পর্যালোচনা
নূরজাহান বিনতে আব্দুল মজীদ
উপস্থাপনা : জান্নাত অনন্ত সুখ ও শান্তির আধার। প্রতিটি মুমিনের সর্বশেষ ও স্থায়ী ঠিকানা। আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি মানুষকে এ পথেই আহবান করেছেন (ইউনুস ১০/২৫)। তিনি জান্নাতে যাওয়ার সকল পথ অত্যন্ত সহজভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবী মানুষের আসল ঠিকানা নয়; বরং জান্নাতই তার একমাত্র ঠিকানা। সুতরাং প্রকৃত মুমিন সর্বদা সৎ ও ন্যায়পূর্ণ কাজে আত্মনিয়োগ করে এবং আপাদমস্তক মহান রবের দিকে রুজু হয়ে জীবন পরিচালনা করে। আর এমন বান্দার জন্যই পরম করুণাময়ের ঘোষণা হ’ল,وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ- ‘যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করেছে, তারা হ’ল জান্নাতের অধিবাসী। সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ২/৮২)। নিম্নে জান্নাত লাভের কতিপয় আবশ্যকীয় মাধ্যম তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ!
১. নির্ভেজাল তাওহীদে বিশ্বাস : নির্ভেজাল তাওহীদে বিশ্বাসী মানুষ ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ- ‘যে ব্যক্তি কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন না করে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশী স্থাপন মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[1]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যা করলে আমি জান্নাতে যেতে পারব। তিনি বললেন,تَعْبُدُ اللهَ لاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ الْمَكْتُوبَةَ وَتُؤَدِّى الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ قَالَ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا أَبَدًا وَلاَ أَنْقُصُ مِنْهُ فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا- ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোন কিছু অংশী স্থাপন করবে না, ফরয ছালাত আদায় করবে, নির্ধারিত যাকাত দিবে এবং রামাযানের ছিয়াম পালন করবে। তারপর সে বলল, যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম, আমি এর উপর কখনো কিছু বাড়াব না এবং তা থেকে কমও করব না। লোকটি চলে গেলে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, কেউ কোন জান্নাতী লোক দেখে খুশি হ’তে চাইলে একে দেখুক’।[2] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেদুঈন ব্যক্তিকে যে চারটি আমলের কথা বলেছিলেন, তার মধ্যে প্রথমটি ছিল তাওহীদ বা একত্ব। উল্লেখ্য যে তাওহীদ তিন প্রকার-
(ক) ‘তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ’। এর অর্থ হ’ল আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রূযীদাতা, রোগ ও আরোগ্যদাতা, জীবন ও মৃত্যুদাতা প্রভৃতি হিসাবে বিশ্বাস করার নাম ‘তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ’।
(খ) ‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ’। এর অর্থ হ’ল ‘সর্বপ্রকার ইবাদতের জন্য আল্লাহকে একক গণ্য করা’। আর ইবাদত হ’ল ঐসকল প্রকাশ্য ও গোপন কথা বা কাজের নাম, যা আল্লাহ ভালবাসেন ও যাতে তিনি খুশী হন’।
(গ) ‘তাওহীদুল আসমা ওয়া ছিফাত’। এর অর্থ হ’ল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে আল্লাহর নাম ও গুণাবলী যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই আল্লাহর সত্তার সাথে সম্পৃক্ত ও সনাতন বলে বিশ্বাস করা, যা বান্দার নাম ও গুণাবলীর সাথে তুলনীয় নয়। তিনি নিরাকার বা নির্গুণ সত্তা নন। বরং তাঁর আকার রয়েছে। কিন্তু কেমন তা কেউ জানে না। আল্লাহ বলেন,لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ‘তাঁর তুলনীয় কিছুই নেই, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (শূরা ৪২/১১)। তিনি আরো বলেন, وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ‘তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই’ (ইখলাছ ১১২/৪)।
২. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যথাযথ অনুসরণ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে যথাযথভাবে অনুসরণকারী জান্নাতে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ-وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হ’ল মহা সফলতা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমাসমূহ লংঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’ (নিসা ৪/১৩-১৪)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى- ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে যাবে। কেবল অস্বীকারকারী ব্যতীত। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অস্বীকারকারী কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করবে সেই অস্বীকারকারী’।[3]
৩. আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) এবং দ্বীনের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন : যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব হিসাবে পেয়ে ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে নবী হিসাবে পেয়ে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে বিশ্বাস করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَالَ رَضِيتُ بِاللهُ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ ‘যে ব্যক্তি বলে যে আল্লাহকে রব হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে নবী হিসাবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’।[4]
৪. সময়মত ছালাত আদায় করা : সঠিক সময়ে নিয়মিত ছালাত আদায় করা জান্নাত লাভের মাধ্যম। উবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنّ اللهُ عَلَى الْعِبَادِ، مَنْ جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيِّعْ مِنْهُنّ شَيْئًا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهِنّ، كَانَ لَهُ عِنْدَ اللهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنّةَ ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে আদায় করবে, আর অবহেলাহেতু এর কোনটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন’।[5] অন্যত্র আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الأَعْمَالِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا ‘আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম কোন কাজ আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি উত্তরে বললেন, সঠিক সময়ে ছালাত আদায় করা’।[6]
৫. ছিয়াম সাধনা : ছিয়াম সাধনা জান্নাতে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,فِى الْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ فِيهَا بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانَ لاَ يَدْخُلُهُ إِلاَّ الصَّائِمُونَ ‘জান্নাতে আটটি দরজা। তার মধ্যে একটি দরজার নাম হবে রাইয়ান। ছিয়াম পালনকারী ছাড়া অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না’।[7]
৬. হজ্জে মাবরূর : আল্লাহ তা‘আলা শর্ত সাপেক্ষে মুসলিম উম্মাহর উপর হজ্জ ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি পূর্ণ ইখলাছের সাথে পবিত্র হজ্জ পালন করবে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ ‘এক ওমরা থেকে অপর ওমরার মাঝে যে পাপ করা হয়, পরবর্তী ওমরা তার জন্য কাফ্ফারা। আর কবুল হজ্জের একমাত্র প্রতিদান হ’ল জান্নাত’।[8]
৭. যাকাত আদায় করা : যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের উপর যাকাত আদায় করা আবশ্যক। যে ব্যক্তি স্বীয় সম্পদের সুষ্ঠুভাবে যাকাত আদায় করবে তার জন্য অফুরন্ত সুখের নীড় জান্নাত রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,اتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ، وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ، وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ، وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় কর। পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় কর, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন কর, তোমাদের সম্পদের যাকাত প্রদান কর, তোমাদের নেতাদের আনুগত্য কর, তাহ’লে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[9]
৮. জোড়া জোড়া দান : দান জান্নাতে যাওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ হ’তে কোন জিনিস এক জোড়া (দু’গুণ) আল্লাহর পথে সন্তুষ্টির জন্য ছাদাক্বা করবে, জান্নাতের সবগুলো দরজা দিয়ে তাকে সাদর সম্ভাষণ জানানো হবে। আর জান্নাতের অনেক (আটটি) দরজা আছে। ছালাত আদায়কারীকে আহবান করা হবে, বাবুস ছালাত হ’তে। আল্লাহর পথে জিহাদকারীকে আহবান করা হবে, বাবুল জিহাদ হ’তে। দান ছাদাক্বাকারীকে আহবান করা হবে বাবুছ ছাদাক্বা হ’তে। ছিয়াম পালনকারীকে আহবান করা হবে, বাবুর রাইয়ান হ’তে। এ কথা শুনে আবুবকর (রাঃ) জানতে চাইলেন, যে ব্যক্তিকে এসব দরজার কোন একটি দিয়ে আহবান করা হবে, তাকে কি অন্য সকল দরজা দিয়ে আহবানের প্রয়োজন হবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ! (হবে) আর আমি আশা করি যে, তুমি তাদেরই একজন হবে’।[10]
৯. দৈনিক বারো রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করা : আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে ব্যক্তি প্রতিদিন বারো রাক‘আত ছালাত অর্থাৎ ফজরের পূর্বে দু’রাক‘আত, যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত, পরে দু’রাক‘আত, মাগরিবের পরে দু’রাক‘আত, এশার পরে দু’রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلَّا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয ব্যতীত বারো রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’।[11]
১০. বেশী বেশী নফল ইবাদত করা : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) একদিন ফজরের ছালাতের পর বেলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণের পর তোমার এমন কি আমল আছে যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার চলার শব্দ পেয়েছি। বেলাল (রাঃ) বললেন, আমি এর চেয়ে অধিক কোন আমল তো দেখছি না যে, দিনে বা রাতে যখনই আমি ওযূ করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফীক দেন ততটুকু নফল ছালাত আমি আদায় করি’।[12]
উকবা ইবনু আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের উপর দায়িত্ব ছিল উট চরাবার। যখন আমার পালা আসল তখন আমি এক বিকালে সেগুলো ছেড়ে দিয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখলাম যে, তিনি মানুষদের নিয়ে কথা বলছেন, তখন তার যে কথা আমি ধারণ করতে পেরেছি তার মধ্যে ছিল,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ ‘তোমাদের যে কেউ ওযূ করে, আর সে তার ওযূ সুন্দর করে সম্পন্ন করে, তারপর দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল ওযূর ছালাত ভালভাবে আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’।[13] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, জান্নাতে এমন কিছু ঘর আছে যার ভিতর থেকে বাহিরের সবকিছু দেখা যাবে। আবার বাহির থেকে ভিতরের সবকিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ ঘর কার জন্য? তিনি বললেন,لِمَنْ أَطَابَ الْكَلَامَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَدَامَ الصِّيَامَ وَصَلَّى لِلَّهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ ‘যে ভাল ও নরম কথা বলে, অন্যকে আহার করায়, অধিক পরিমাণে নফল ছিয়াম পালন করে, আর যখন লোকেরা আরামে নিদ্রারত থাকে তখন উঠে সে ছালাত আদায় করে’।[14]
১১. ওযূর পর ‘কালেমায়ে শাহাদাত’ পাঠ করা : ভাল করে ওযূ করার পর যে ব্যক্তি ‘কালেমায়ে শাহাদাত’ পাঠ করবে, সে জান্নাতের আটটি দরজার মধ্য হ’তে যে কোন দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করার সুযোগ লাভে ধন্য হবে। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযূ করে এবং ওযূর পর এ দো‘আ পাঠ করে,أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ- ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে তখন যেটি দিয়ে খুশি সেটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।[15]
১২. প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করা : যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কোন বাধা থাকবে না। আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَرَاءَ آيَةَ الْكَرْسِيِّ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَّمُوْتَ ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে আর কোন বাধা নেই’।[16]
১৩. হালাল-হারাম বাছাই করে চলাফেলা করা : শরী‘আতে হালালকৃত বিষয়সমূহকে হালাল এবং হারামকৃত বিষয়সমূহকে হারাম বলে জানা এবং সে অনুযায়ী আমলকারীও জান্নাতী হবে। জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল!أَرَأَيْتَ إِذَا صَلَّيْتُ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ وَصُمْتُ رَمَضَانَ وَأَحْلَلْتُ الْحَلَالَ وَحَرَّمْتُ الْحَرَامَ وَلَمْ أَزِدْ عَلَى ذَلِكَ شَيْئًا أَأَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَالَ نَعَمْ ‘যদি আমি ফরয ছালাত আদায় করি। রামাযানে ছিয়াম পালন করি, শরী‘আতে হালালকৃত বিষয়সমূহকে হালাল বলে জানি এবং শরী‘আতে হারামকৃত বিষয়সমূহকে হারাম বলে জানি। আর এর চেয়ে অধিক কোন কিছু না করি। তাহ’লে আমি কি জান্নাত পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।[17] সুতরাং আল্লাহর দেয়া হালালকে হালাল, হারামকে হারাম মনে করা ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
১৪. ‘লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ ও ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী’ পাঠ করা : যে ব্যক্তি ‘লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের খনি দান করবেন। আবু মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার এক সফরে আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। যখন আমরা উঁচু স্থানে আরোহণ করতাম তখন উচ্চৈঃস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, হে লোকেরা! তোমরা নিজেদের জানের উপর দয়া কর। কারণ তোমরা কোন বধির অথবা অনুপস্থিতকে আহবান করছ না বরং তোমরা আহবান জানাচ্ছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রোষ্টাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি আমার কাছে এলেন, তখন আমি মনে মনে পড়ছিলাম, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’। তখন তিনি বললেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনু কায়েস! তুমি পড়বে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’। কারণ এ দো‘আ হ’ল জান্নাতের রত্ন ভান্ডারগুলোর একটি। অথবা তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কথার সন্ধান দেব না, যে কথাটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার? তা হ’ল, لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهُ ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ বলা’। অর্থাৎ নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত’।[18]
অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বেশি বেশি ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী’ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হবে। জাবের ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهُ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি’ (বড়ত্বের অধিকারী আল্লাহ তাঁর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করছি) এ দো‘আ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়’।[19]
১৫. পিতা-মাতার হক আদায় করা : পার্থিব জীবনে পিতা-মাতা ব্যতীত সন্তানের প্রতি নিঃস্বার্থ ব্যক্তি আর কেউ নেই। পিতা-মাতা সন্তানকে স্বার্থহীনভাবে স্নেহের কোলে দয়া, ভালবাসা আর মমতার চাদরে আবৃত করে বড় করে তোলেন। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা নিজের অধিকারের পর পিতা-মাতার অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি উহ শব্দটিও উচ্চারণ করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। তুমি তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল। আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে শৈশবে দয়াপরবশে লালন-পালন করেছিলেন। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভালভাবেই জানেন। যদি তোমরা সৎকর্ম পরায়ণ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল’ (ইসরা ১৭/২৩-২৫)। এ জন্য পিতা-মাতার হক আদায় করা ও তাদের খেদমত করা খুবই যরূরী। পিতা-মাতার সেবা-যত্নের মাধ্যমে একজন বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে। আবুদ্দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তার কাছে একজন লোক এসে বলল, আমার একজন স্ত্রী আছে। আমার মা আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন তাকে তালাক দেওয়ার জন্য। আবুদ্দারদা (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি জান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে পিতা। তুমি ইচ্ছা করলে এটা ভেঙ্গে ফেলতে পার অথবা এর রক্ষণাবেক্ষণও করতে পার’।[20]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,رَغِمَ أَنْفُهُ رَغِمَ أَنْفُهُ رَغِمَ أَنْفُهُ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلْ الْجَنَّةَ ‘ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক, যে তার পিতা-মাতার একজনকে অথবা উভয়কে বৃদ্ধাস্থায় পেল কিন্তু তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত লাভ করতে পারল না’।[21]
১৬. আল্লাহর নিরানববই নাম মুখস্থ ও হেফাযত করা : আল্লাহর নিরানববই নাম মুখস্থকারী জান্নাতী হবে। আল্লাহর নামসমূহের উপর যথাযথ ঈমান আনা এবং বাস্তব জীবনে নিজের মধ্যে আললাহর নামের বাস্তবায়ন ঘটানো। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ ‘আল্লাহর এক কম একশত অর্থাৎ নিরানববই নাম আছে, যে ব্যক্তি তা মুখস্থ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[22]
১৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা : যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবু আইয়ূব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কোন আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললেন,تَصِلُ ذَا رَحِمِكَ فَلَمَّا أَدْبَرَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم إِنْ تَمَسَّكَ بِمَا أُمِرَ بِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ ‘...তুমি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। যখন ঐ লোক ফিরে যেতে লাগল, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাকে যা করতে বলা হ’ল, যদি সে এর ওপর আমল করে তাহ’লে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[23]
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে রিযিক বৃদ্ধি পায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পসন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে’।[24]
১৮. প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা : প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণকারী জান্নাতী হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা দিনে ছিয়াম রাখে, রাতে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করে, কিন্তু সে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সে জাহান্নামী। অতঃপর ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করল, অন্য এক মহিলা শুধু ফরয ছালাত আদায় করে, আর পনিরের এক টুকরা করে দান করে। কিন্তু সে তার প্রতিবেশীকে কোন কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতী’।[25]
সুতরাং যারা মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের নফল ইবাদত কোন কাজে আসবে না। তাদের ছালাত-ছিয়াম তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না। প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশী স্থাপন করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, কাছের আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পসন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী’ (নিসা ৪/৩৬)।
প্রতিবেশীর হক আদায় করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ. قِيلَ وَمَنْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ الَّذِى لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ ‘আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হ’ল, কে সে হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার হ’তে নিরাপদে থাকতে পারে না’।[26]
১৯. গরীব ও দুর্বল হওয়া : জান্নাতে ধনীদের চেয়ে গরীব-মিসকীন ও দুর্বল লোকদের সংখ্যা বেশী হবে। পক্ষান্তরে যারা অহংকারী, দুশ্চরিত্র ও ঝগড়াটে ব্যক্তি তারা জাহান্নামে যাবে। হারেছা ইবনু ওহাব (রাঃ) নবী (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকদের গুণাবলীর কথা বলব না? ছাহাবীগণ বললেন, জি হ্যাঁ বলুন। তিনি বলেন,كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ ثُمَّ قَالَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ ‘প্রত্যেক দুর্বল, মানুষের চোখে তুচ্ছ বা হেয়, কিন্তু সে যদি কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে কসম করে তাহ’লে আল্লাহ তার কসম পূর্ণ করবেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের কথা বলব না? তারা বললেন, জি হ্যাঁ বলুন। তিনি বললেন, প্রত্যেক ঝগড়াকারী, দুশ্চরিত্র ও অহংকারী ব্যক্তি’।[27]
২০. নরম হৃদয়ের অধিকারী হওয়া : যাদের হৃদয় নরম হবে, কোমল ও সুন্দর মেযাজের অধিকারী হবে, সর্বদা আল্লাহকে ভয় করবে, কারো কোন ক্ষতি করবে না ও ধৈর্যশীল হবে, এমন লোক জান্নাতী হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَقْوَامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثْلُ أَفْئِدَةِ الطَّيْرِ ‘জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি যাদের অন্তরসমূহ হবে পাখির অন্তরের ন্যায়’।[28]
যারা নম্র-ভদ্র ও মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে হারাম করে দিয়েছেন। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, حُرِّمَ عَلَى النَّارِ كُلُّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ سَهْلٍ قَرِيبٍ مِنَ النَّاسِ ‘প্রত্যেক নরম দিল, ভদ্র এবং মানুষের সাথে মিশুক লোকদের জন্য জাহান্নাম হারাম’।[29] যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ক্রমশঃ)
রবীউল ইসলাম
লেখক : কেন্দ্রীয় সহ-পরিচালক, সোনামণি
[1]. মুসলিম হা/৯৩; আহমাদ হা/১৫২৪৭।
[2]. বুখারী হা/১৩৯৭; মুসলিম হা/১৪; আহমাদ হা/৮৭৯৬।
[3]. বুখারী হা/৭২৮০; ছহীহাহ হা/৩১৪১।
[4]. আবুদাঊদ হা/১৫২৯; ছহীহাহ হা/৩৩৪।
[5]. আবুদাঊদ হা/১৪২০; নাসাঈ হা/৪৬১।
[6]. বুখারী হা/৫২৭; মুসলিম হা/৮৫; নাসাঈ হা/৬১০।
[7]. বুখারী হা/৩২৫৭; মিশকাত হা/১৯৫৭।
[8]. বুখারী হা/১৭৭৩; মুসলিম হা/১৩৪৯; মিশকাত হা/২৫০৮।
[9]. তিরমিযী হা/৬১৬; মিশকাত হা/৫৭১।
[10]. বুখারী হা/১৮৯৭; মুসলিম হা/১০২৭; তিরমিযী হা/৩৬৭৪; নাসাঈ হা/২৪৩৯।
[11]. মুসলিম হা/৪২৮; মিশকাত হা/১১৫৯।
[12]. বুখারী হা/১১৪৯; মুসলিম হা/২৪৫৮; মিশকাত হা/১৩২২।
[13]. মুসলিম হা/২৩৪; মিশকাত হা/২৮৮।
[14]. তিরমিযী হা/২৫২৭; আহমাদ হা/১৩৩৭; ছহীহুত তারগীব হা/৬১৭।
[15]. মুসলিম হা/২৩৪; ছহীহুত তারগীব হা/২২৪; মিশকাত হা/১০৩৯।
[16]. ছহীহুত তারগীব হা/১৫৯৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৬৪; নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/৯৮৪৮।
[17]. মুসলিম হা/১৫; আহমাদ হা/১৪৭৮৯।
[18]. বুখারী হা/৬৩৮৪; আহমাদ হা/১৯৭৬০।
[19]. তিরমিযী হা/৩৪৬৪; মিশকাত হা/২৩০৪।
[20]. তিরমিযী হা/১৯০০; হাকেম হা/৭২৫২; মিশকাত হা/৪৯২৮।
[21]. মুসলিম হা/২৫৫১; মিশকাত হা/৪৯১২।
[22]. বুখারী হা/২৭৩৬; মুসলিম হা/২৬৭৭; তিরমিযী হা/৩৫০৬।
[23]. মুসলিম হা/১৩; ছহীহুত তারগীব হা/২৫২৩।
[24]. বুখারী হা/২০৬৭; মুসলিম হা/২৫৫৭; আবুদাঊদ হা/১৬৯৩।
[25]. হাকেম হা/৭৩০৫; বায়হাক্বী হা/৯৫৪৬।
[26]. বুখারী হা/৫৬৭০; মিশকাত হা/৪৯৬২।
[27]. বুখারী হা/৪৯১৮; মুসলিম হা/২৮৫৩; মিশকাত হা/৫১০৬।
[28]. মুসলিম হা/২৮৪০; আহমাদ হা/৮৩৬৪; মিশকাত হা/৫৬২৫ ।
[29]. আহমাদ হা/৩৯৩৮; ছহীহাহ হা/৯৩৮।