হাদীছে বর্ণিত গুনাহ মাফের আমলসমূহ

আসাদুল্লাহ আল-গালিব 820 বার পঠিত

(শেষকিস্তি)


১. আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা : আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার নিকট যখনই কোন বান্দা একনিষ্ঠচিত্তে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তখনই তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেন। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছাঃ)বলেছেন,قَالَ اللهُ يَا يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِيوَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَآدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِيغَفَرْتُ لَكَ، وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِيبِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً- ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, ততক্ষণ আমিতোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যেমনই হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদমসন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও,আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীপরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবংআমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহ’লে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়েতোমার নিকট উপস্থিত হব’।[1]

২. স্বল্প হলেও একনিষ্ঠভাবে আমল হওয়া : বান্দার একনিষ্ঠ আমল আল্লাহ কবুল করে থাকেন যদিও তা স্বল্প পরিমাণে হয়।বারা ইবনু আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, লৌহ বর্মে আবৃত এক ব্যক্তিরাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণকরব, না ইসলাম গ্রহণ করব? তিনি বললেন, أَسْلِمْ، ثُمَّ قَاتِلْ ‘ইসলাম গ্রহণ কর, তারপর যুদ্ধে যাও’। তারপর সেব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাতবরণ করল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,عَمِلَقَلِيلًا وَأُجِرَ كَثِيرًا ‘সে অল্প আমল করে বেশী পুরস্কার পেল’।[2]


অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জারীর বিন আব্দুল্লাহবিন বাজালী (রাঃ) বলেন, একজন ব্যক্তি এসে ইসলাম গ্রহণ করল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাকেইসলাম শিক্ষা দিলেন। যাওয়ার পথে রাস্তায় তার ঘোড়ার পা গর্তে পড়ে গেলে তাকে ফেলেদেয়। ফলে সে মারা যায়। আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) তার নিকট এসে বললেন, عَمِلَ قَلِيلًا وَأُجِرَ كَثِيرًا ‘সে অল্প আমল করে বেশী পুরস্কার পেল’।[3]

৩. মন্দ কাজের পর ভাল কাজ করা : ভাল কাজ সর্বদা কল্যাণ বয়ে আনে। সুতরাং যখন কোন ব্যক্তির দ্বারা মন্দ কাজহয়ে যায় তখনই তার ভাল কাজ করা উচিত। কেননা ভাল কাজ মন্দকে দূরীভূত করে। আবু যর(রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, আপনি আমাকে উপদেশদিন, তখন তিনি বললেন, যখন তুমি মন্দ কাজ করে ফেলবে তখনই কোন ভাল কাজ কর যা মন্দকেদূরীভূত করে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ কি যথেষ্টহবে। তিনি বললেন, هِىَأَفْضَلُ الْحَسَنَاتِ ‘সেটা হ’ল উৎকৃষ্ট নেকী’।[4]

আবু যর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ)বলেছেন,اتَّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ،وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍحَسَن-‘তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছেফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর’।[5]

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার বড় অনুগ্রহ এই যে, যখনকোন ব্যক্তি কোন মন্দ কাজের নিয়ত করবে কিন্তু যদি সে বাস্তবায়ন না করে তাহ’লেও সেনেকী পায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ ভাল-মন্দ লিখে দিয়েছেন। এরপর সেগুলোরবর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে করলনা, আল্লাহ তার কাছে এর জন্য পূর্ণ নেকী লিখবেন। আর সে ভাল কাজের ইচ্ছা করল এবং তাবাস্তবায়ন করল তবে আল্লাহ তাকে দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অধিকনেকী লিখে দেন। আর যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না,আল্লাহ তার কাছে তার জন্য পূর্ণ নেকী লিখবেন। আর যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পরবাস্তবেও তা করে, তবে তার জন্য আল্লাহ মাত্র একটা গুনাহ লিখেন’।[6]

হাদীছে পাপের পর পুণ্যময় কাজের একটি চমৎকারউদাহরণ রয়েছে। উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল(ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ مَثَلَ الَّذِى يَعْمَلُ السَّيِّئَاتِ ثُمَّيَعْمَلُ الْحَسَنَاتِ كَمَثَلِ رَجُلٍ كَانَتْ عَلَيْهِ دِرْعٌضَيِّقَةٌ قَدْ خَنَقَتْهُ ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً فَانْفَكَّتْ حَلْقَةٌ ثُمَّعَمِلَ حَسَنَةً أُخْرَى فَانْفَكَّتْحَلْقَةٌ أُخْرَى حَتَّى يَخْرُجَ إِلَىالأَرْضِ- ‘যে ব্যক্তি কোন পাপ করার পরপরই পুণ্যকর্ম করে, সেই ব্যক্তির উপমা এমন একজনের মত যার দেহে ছিলসংকীর্ণ বর্ম; যা তার শ্বাসরোধ করেফেলেছিল। অতঃপর সে যখন একটি পুণ্যকর্ম করে, তখন বর্মের একটি আংটা খুলে যায়।তারপর আর একটি পুণ্য করলে আরও একটি আংটা খুলে যায়। ফলে সে সংকীর্ণতার কষ্ট থেকেমুক্তি লাভ করতে পারে’।[7]

৪. ওযূর মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় : পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হ’ল ওযূ। ওযূ যেমন একজন ব্যক্তিকে দৈহিকভাবেপবিত্র করে অনুরূপভাবে তার গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দিয়ে তার অন্তরকেও কলুষমুক্ত করে।‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম (কিংবাবলেছেন কোন মুমিন) বান্দা যখন যখন ওযূ করে, তখন মুখ ধোয়ার সাথে (অথবা বলেছেন পানিরশেষবিন্দুর সাথে) তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যার দিকে তার দু’চোখের দৃষ্টিপড়েছিল; এবং যখন দু’হাত ধোয়, তখন পানির সাথে অথবা বলেছেন পানির শেষবিন্দুর সাথেতার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যেগুলো তার দু’হাতে ধরেছিল; এবং যখন দুই পা ধোয় তখনপানির সাথে অথবা বলেছেন পানির শেষবিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায়যেগুলোর দিকে তার দু’পা অগ্রসর হয়েছিল। ফলে (ওযূ শেষে) লোকটি তার সমুদয় গুনাহ থেকেসম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে ওঠে’।[8]

অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَخَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ، حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ ‘যে ব্যক্তি ওযূ করে এবংতা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমুদয় গুনাহ বের হয়ে যায়, এমন কি তার নখের ভিতরথেকেও (গুনাহ) বের হয়ে যায়’।[9]

৫. ওযূর পরে ছালাত আদায় করা : আল্লাহ্র নৈকট্যলাভের অন্যতম মাধ্যম হ’ল ছালাত। উত্তমরূপে ওযূর পর ছালাতআদায় করলে গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَا يَتَوَضَّأُ رَجُلٌ مُسْلِمٌ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ فَيُصَلِّي صَلَاةً إِلَّاغَفَرَ اللهُ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلَاةِ الَّتِي تَلِيهَا ‘যেমুসলিম ব্যক্তি ওযূ করবে এবং ওযূকে সুন্দরভাবে আদায় করবে, অতঃপর ছালাত আদায় করবে সেই ব্যক্তির এই ছালাত এবং তার পূর্ববর্তী ছালাত-এরমধ্যবতী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’।[10]

৬. আযান দেওয়ার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় : আযান দেওয়ার বিবিধ ফযীলত রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম একটি হ’ল আযানের মাধ্যমেআল্লাহ তাঁর বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَعَلَى الصَّفِّ الْمُقَدَّمِ، وَالْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَهُ بِمَدِّ صَوْتِهِ وَيُصَدِّقُهُمَنْ سَمِعَهُ مِنْ رَطْبٍ وَيَابِسٍ، وَلَهُ مِثْلُأَجْرِ مَنْ صَلَّى مَعَهُ ‘আল্লাহ প্রথম কাতারের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং  ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। মুআয্যিনকে তার আযানের আওয়াযেরউচ্চতা অনুযায়ী ক্ষমা করা হয়। তার আযান শ্রবণকারী প্রত্যেক সরস বা নীরস বস্ত্ত তারকথার সত্যায়ন করে থাকে। তার সাথে যারা ছালাত পড়ে তাদের সকলের নেকীর সমপরিমাণ তারনেকী লাভ হয়’।[11]

৭. পবিত্র অবস্থায় মসজিদে গমন করলে : পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম জায়গা হ’ল মসজিদ। সেই মসজিদে পবিত্রাবস্থায় আল্লাহসুবহানাহু তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে ইবাদতের জন্য গেলে তার গুনাহ মাফহয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্র হয়ে এই সকল মসজিদেরএকটির দিকে অগ্রসর হবে তার প্রত্যেক ধাপের জন্য একটি করে নেকী লেখা হবে এবং তারএকটি মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং একটি গুনাহ মাফ করা হবে। তারপর একমাত্র প্রকাশ্যমুনাফিক ছাড়া আর কাউকে জামা‘আত থেকে বাদ পড়তে আমরা দেখিনি। অনেক লোক দু’জনের কাঁধেভর করে হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে মসজিদে আসত এবং তাদের সারিতে দাঁড় করে দেয়া হত’।[12]

অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ،ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا الصَّلَاةُ، لَمْ يَخْطُ خُطْوَةًإِلَّا رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ- ‘সে যখন উত্তমরূপে ওযূকরল, অতঃপর একমাত্র ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা হ’ল তখন তার প্রতি ধাপেরবিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়’।[13]

অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَأَحْسَنَالْوُضُوءَ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلَاةِ لَمْ يَرْفَعْ قَدَمَهُ الْيُمْنَى إِلَّاكَتَبَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ حَسَنَةً، وَلَمْ يَضَعْ قَدَمَهُ الْيُسْرَى إِلَّاحَطَّ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَنْهُ سَيِّئَةً ‘তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন ওযূ করে, অতঃপর ওযূকে সুন্দররূপে সম্পাদনকরে। তারপর ছালাতের জন্যে বের হয় যখনই সে ডান পা উঠায় তখনই তার জন্যে আল্লাহ একটিনেকী লিখে দেন। যখনই বাম পা রাখে তখনই আল্লাহ তার একটি গুনাহকে মাফ করে দেন’।[14]

৮. দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত  ছালাতের মাধ্যমে : আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হ’ল ছালাত। যা আল্লাহ সুবহানাহুতা‘আলা নির্দিষ্ট বয়সের সকল ব্যক্তির উপর দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যার মাধ্যমে বান্দা তার গুনাহ মাফকরে নিতে পারে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন,الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُإِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَااجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ থেকে আরেক জুম‘আ পর্যন্ত এবং এক রামাযান থেকেঅপর রামাযান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের জন্য (গুনাহ) কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবীরাগুনাহ থেকে বিরত থাকে’।[15]

৯. নফল ছালাত আদায় করা :

ফরয ইবাদতের পরে শ্রেষ্ঠ ইবাদত নফল ছালাত। এরমর্যাদাও অনেক বেশী। এজন্য নফল ছালাত আদায়ের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে সিজদার সংখ্যাবৃদ্ধি করতে হবে। যার বদৌলতে আমাদের গুনাহগুলো মাফ করে নিতে পারি। রাসূলুল্লাহ(ছাঃ) বলেছেন,عَلَيْكَبِكَثْرَةِ السُّجُودِ لِلَّهِ، فَإِنَّكَ لَا تَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً، إِلَّا رَفَعَكَاللهُ بِهَا دَرَجَةً، وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيئَةً- ‘আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে অধিকসিজদা কর। কেননা, তুমি যখনই আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করবে, তখন আল্লাহতা‘আলা তোমার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মোচন করে দিবেন’।[16]

অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةًإِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً، وَمَحَا عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً، وَرَفَعَلَهُ بِهَا دَرَجَةً، فَاسْتَكْثِرُوا مِنَ السُّجُودِ ‘যখন কোন বান্দা আল্লাহ্র জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকেএকটি নেকী দান করেন, তার একটি গুনাহ মাফ করেন এবং তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করেন।অতএব তোমরা অধিক সংখ্যায় সিজদা কর’।[17]

১০. ছালাতান্তে ক্ষমা প্রার্থনা করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا، فَيُحْسِنُالطُّهُورَ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللهَ، إِلَّاغَفَرَ اللهُ لَهُ- ‘যখন কোন বান্দা কোনরূপ গুনাহ করার পর উত্তমরূপে ওযূকরে দাঁড়িয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে এবং আল্লাহ্র নিকট গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন’।[18]

১১. তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করা : তাহাজ্জুদ ছালাত সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের অন্যতম আমল। যার দ্বারা বান্দা তারগুনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ، فَإِنَّهُدَأْبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمَكْفَرَةٌلِلسَّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ عَنِ الْإِثْمِ ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদাত করবে। কেননা তা তোমাদেরপূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের নিত্য আচরণ ও প্রথা। রাতের ইবাদত আল্লাহ তা‘আলারসান্নিধ্য অর্জনের উপায়, পাপকর্মের প্রতিবন্ধক, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং দেহের রোগদূরকারী’।[19]

১২. জুম‘আর ছালাত আদায় করা :

জুম‘আ হ’ল মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন।জুম‘আর দিনের নানাবিধ ফযীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আরদিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহারকরে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে। এরপর বের হয় এবং দু‘জন লোকের মাঝে ফাঁক নাকরে। তারপর তার নির্ধারিত ছালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে,তাহ’লে তার এক জুম‘আ থেকে আরেক জুম‘আ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়াহয়’।[20]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنِ اغْتَسَلَ؟ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَفَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ، ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ، ثُمَّيُصَلِّي مَعَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى، وَفَضْلُثَلَاثَةِ أَيَّامٍ- ‘জুম‘আর দিনে যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুম‘আর জন্যযায় এবং সমর্থ অনুযায়ী ছালাত আদায় করে, এরপর ইমাম খুৎবা সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত নীরবেথাকে, এরপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করে। তবে তার এ জুম‘আ হ’তে পরবতীঁ জুম‘আপর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়’।[21]

১৩. জুম‘আর দিনের কতিপয় আদব রক্ষায় গুনাহ মাফ হয়: রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আরদিন গোসল করাবে (জুম‘আর নামাযের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবংনিজেও গোসল করবে অথবা সুগন্ধিযুক্ত দ্রব্যাদি দ্বারা উত্তমরূপে গোসল করবে, অতঃপরসকাল সকাল মসজিদে গিয়ে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে বসে খুৎবা শুনবে এবং যাবতীয়প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্ম হ’তে বিরত থাকবে। তার মসজিদে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপে এক বছরদিনে ছিয়াম এবং রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়ের ছওয়াবের সমতুল্য হবে’।[22]

১৪. বালা-মুছীবতের সময় ধৈর্য ধারণ করা : বালা-মুছীবত, রোগ-ব্যাধি আল্লাহ্র পক্ষ থেকেই আসে তার বান্দাকে পরীক্ষাকরার জন্য। সুতরাং এই কঠিন সময়ে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেআল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। যেমনটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ،وَلَا وَصَبٍ، وَلَا هَمٍّ، وَلَا حُزْنٍ، وَلَا أَذًى، وَلَا غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةُيُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا خَطَايَاهُ- ‘মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ ব্যাধি,উদ্রেক-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমন কি তার দেহে যদি কাটাওবিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন’।[23]

অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْمُسْلِمٍ يُشَاكُ شَوْكَةً، فَمَافَوْقَهَا إِلَّا كُتِبَتْلَهُ بِهَا دَرَجَةٌ، وَمُحِيَتْ عَنْهُبِهَا خَطِيئَةٌ- ‘যদি কোন মুসলিমের গায়ে কাটা বিদ্ধ হয় কিংবা তার চাইতে অধিক (কোন আঘাতলাগে), তার পরিবর্তে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গুনাহ মাফ করেদেওয়া হয়’।[24]

অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْمُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًىمِنْ مَرَضٍ، فَمَا سِوَاهُ إِلَّاحَطَّاللهُ بِهِ سَيِّئَاتِهِ،كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا- ‘কোন মুসলিম ব্যক্তির জ্বর কিংবা অন্য কোন কারণেবিপদ আপতিত হলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা এমনভাবে তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেনযেভাবে গাছ তার পাতা ঝরায়’।[25]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেছেন,مَا يَزَالُالبَلاَءُ بِالمُؤْمِنِ وَالمُؤْمِنَةِ فِينَفْسِهِوَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّىيَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِخَطِيئَةٌ- ‘মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদলেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়’।[26]

১৫. মাইয়েতকে গোসল দেওয়া : মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। যার স্বাদ সকলকেই আস্বাদন করতে হবে। একজনমাইয়েতকে দাফন-কাফনের পূর্বে গোসল দিতে হয়। এই সময়ে বেশ কিছু গোপনীয় বিষয় থাকে।সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি এই গোপনীয় বিষয় গোপন রাখতে পারে তাহ’লে তার জন্য আল্লাহক্ষমার দুয়ার উন্মুক্ত করে দিবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ غَسَّلَمَيِّتًا فَكَتَمَعَلَيْهِ غَفَرَ اللَّهُلَهُ أَرْبَعِينَمَرَّةً ‘যে ব্যক্তি মৃতকে গোসল দেবে এবং তার দোষ গোপনরাখবে, আল্লাহ তাকে চল্লিশবার ক্ষমা করবেন’।[27]

১৬. ছাদাক্বা প্রদান করা : একজন মুমিন ব্যক্তির গুনাহ মাফ করে নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হ’ল দান-ছাদাক্বাকরা। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الصَّدَقَةُتُطْفِئُالْخَطِيئَةَ، كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُالنَّارَ ‘পানি যেমন আগুন নিভিয়েদেয়, তেমনি দান-ছাদাক্বাও গুনাহসমূহ দূরীভূত করে দেয়’।[28]

অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন লোকেরপরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি ও প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে যে বিপদ অর্থাৎক্রটি-বিচ্যূতি হয়- এগুলোর জন্য ছালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বা, সৎকাজের প্রতি আদেশ ওমন্দ কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে কাফফারা স্বরূপ’।[29]

১৭. আরাফার দিনে ছিয়াম পালন করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُعَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ ‘আর আরাফাত দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে আমি আল্লাহ্র কাছে আশাবাদী যে, তাপূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে’।[30]

১৮. আশুরার ছিয়াম পালন করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، أَحْتَسِبُعَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ ‘আশুরার ছিয়াম সম্পর্কেআমি আল্লাহ্র কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফ্ফারা হয়েযাবে’।[31]

১৯. ইসলাম গ্রহণ করা : ইসলাম হ’ল শান্তির ধর্ম। এই শান্তির ধর্মে কোন ব্যক্তি যদি ফিরে আসে তাহলেতার পূর্বে কৃত গুনাহসমূহ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَقَبْلَهُ ‘ইসলাম গ্রহণ পূর্বেকার সকল গুনাহ বিনাশ করেদেয়’।[32]

২০. হিজরত করা : মুসলিম জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি হ’ল হিজরত। যখনই ইসলাম পালনেপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে, তখন ইসলাম পালনে অনুকূল জায়গায় হিজরতে রয়েছে ক্ষমা।রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا ‘হিজরত সে সকল গুনাহ মাফকরে দেয়, যা হিজরতের পূর্বে করা হয়েছে’।[33] 

২১. হজ্জ পালন করা : আর্থিক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ পালন করা ফরয। আর হজ্জ পালনে রয়েছেগুনাহসমূহ ক্ষমা করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَقَبْلَهُ‘এমনিভাবে হজ্জ তার পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়েদেয়’।[34] অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,تَابِعُوا بَيْنَالْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُخَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةَ- ‘হজ্জ ও ওমরা সাথে সাথে কর। কারণ এ দু’টি দারিদ্র ওগুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবুলযোগ্যহজ্জের ছওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়’।[35]

২২. ওমরা পালন করা : কাবা গৃহে গুনাহসমূহ ক্ষমা করে নেওয়ার আরও একটি মাধ্যম হ’ল ওমরা পালন।রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْعُمْرَةُ إِلَىالْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَابَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُجَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ- ‘একটি ওমরা পরবর্তী ওমরাপর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্রটিমুক্ত (আল্লাহ্র নিকটগৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’।[36]

২৩. হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা : উমাইর (রহঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, ‘ভীড় ঠেলে হ’লেও ইবনু ওমর (রাঃ) হাজারেআসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর নিকটে যেতেন (তা স্পর্শ করার জন্য)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এরঅন্য কোন ছাহাবীকে আমি এরূপ করতে দেখিনি। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান! আপনিভীড় ঠেলে হ’লেও এই দুই রুকনে গিয়ে পৌঁছেন, কিন্তু আমি তো ভীড় ঠেলে রাসূলুল্লাহ(ছাঃ)-এর অন্য কোন ছাহাবীকে সেখানে যেতে দেখিনি। তিনি বললেন, আমি এরূপ কেন করব না?রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, এই দু’টি রুকন স্পর্শ করলে গুনাহসমূহেরকাফফারা হয়ে যায়’।[37]

২৪. তাওয়াফ করা : আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘আমিরাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র চারদিকে সাতবারতাওয়াফ করবে ও তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করবে, তবে তা তার জন্য গোলাম মুক্ত করে দেবারসমতুল্য হবে। এটা ছাড়াও তাঁকে (ইবনু ওমর (রাঃ)-কে) বলতে শুনেছি, কোন লোক এতে এক পাফেলে অপর পা উঠানোর আগেই বরং আল্লাহ তা‘আলা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন ও তারজন্যে একটি ছওয়াব নির্ধারণ করেন’।[38]

২৫. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা : আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةًصَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ، وَرُفِعَتْلَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ- ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহতা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আরআল্লাহ্র নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে’।[39]

২৬. দ্বীনী মজলিসে বসা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ قَوْمٍاجْتَمَعُوا يَذْكُرُونَ اللَّهَ لاَيُرِيدُونَ بِذَلِكَ إِلاَّ وَجْهَهُإِلاَّ نَادَاهُمْ مُنَادٍمِنَ السَّمَاءِ أَنْ قُومُوا مَغْفُوراًلَكُمْ قَدْ بُدِّلَتْ سَيِّآتُكُمْ حَسَنَاتٍ- ‘যে কোন সম্প্রদায় একত্রিতহয়ে আল্লাহ্র স্মরণ করবে এবং এর দ্বারা তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাঁর সন্তুষ্টিঅর্জন, সেই সম্প্রদায়কে আসমানের কোন এক ঘোষণাকারী ডেকে বলবে, তোমরা এমন অবস্থায়দাঁড়িয়ে যাও যে, তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গুনাহসমূহকেপরিবর্তন করে ছওয়াবে পরিণত করা হয়েছে’।[40]

২৭. বার্ধক্যের পরিপক্ক চুল গোপন না করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সাদা চুল উপড়াতে নিষেধ করেছেন। কেননা সুফিয়ান (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, ‘যে মুসলিমের চুল ইসলামের উপরসাদা হয়, তা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য নূর স্বরূপ হবে’। রাবী ইয়াহ্ইয়ারবর্ণনায় আছে যে, ঐ সাদা চুলের বিনিময়ে একটি নেকী লেখা হবে এবং একটি গুনাহ্ মাফ হয়েযাবে’।[41]

শেষকথা : মুমিন কখনও গুনাহের সাথেসম্পর্ক রাখতে পারে না। তবে গুনাহ হওয়াটাও তার জন্য অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেসর্বদা সতর্ক থাকে যেন তওবার মাধ্যমে এবং কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত মাধ্যমসমূহকেঅসীলা করে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। সর্বদা তার চেষ্টা থাকে সে যেন আল্লাহরকাছে পাপমুক্ত অবস্থায় উপস্থিত হ’তে পারে। এজন্য উপরোক্ত পাপমুক্তির অসীলাগুলোকেসবসময় ধারণ করা মুমিনের জন্য কর্তব্য।

লেখক : ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক,বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ।


[1]. তিরমিযী হা/৩৫৪০;ছহীহাহ হা/১২৭; মিশকাত হা/২৩৩৬।

[2]. বুখারী হা/২৮০৮;মুসলিম হা/১৯০০; ছহীহুত তারগীব হা/১৩১১।

[3]. আহমাদ হা/১৯১৫৮।

[4].আহমাদ হা/২১৫২৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৬২; ছহীহাহ হা/১২৭৩।

[5].আহমাদ হা/২১৫২৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৬২; ছহীহাহ হা/১২৭৩।

[6]. বুখারী হা/৬৪৯১;মুসলিম হা/১৩১; মিশকাত হা/২৩৭৪।

[7]. আহমাদ হা/১৭৩৪৫;ছহীহাহ হা/২৮৫৪; মিশকাত হা/২৩৭৫।

[8].মুসলিম হা/২৪৪; তিরমিযী হা/২; দারেমী হা/৭১৮; মিশকাত হা/২৮৫।

[9].মুসলিম হা/২৪৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৮২; মিশকাত হা/২৮৪।

[10].মুসলিম হা/২৭৭।

[11].নাসাঈ হা/৬৪৬; আহমাদ হা/১৮৫২৯; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৫।

[12].মুসলিম হা/৬৫৪; আহমাদ হা/৩৯৩৬; মিশকাত হা/১০৭২।

[13].বুখারী হা/৬৪৭; মুসলিম হা/৬৪৯; মিশকাত হা/৭০২।

[14].আবুদাঊদ হা/৫৬৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩০১।

[15].মুসিলম হা/২৩৩; মিশকাত হা/৫৬৪।

[16].মুসিলম হা/৪৮৮; আহমাদ হা/২২৪৩১; মিশকাত হা/৮৯৭।

[17].ইবনু মাজাহ হা/১৪২৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩৮৬।

[18].আবুদাঊদ হা/১৫২১; ছহীহুত তারগীব হা/১৬২১।

[19].তিরমিযী হা/৩৫৪৯; ছহীহুত তারগীব হা/৬২৪; মিশকাত হা/১২২৭।

[20].বুখারী হা/৮৮৩; মিশকাত হা/১৩৮১।

[21].মুসলিম হা/৮৫৭; মিশকাত হা/১৩৮২।

[22].বুখারী হা/ হা/৮৮৩; মিশকাত হা/১৩৮১।

[23].বুখারী হা/৫৬৪১; মুসলিম হা/২৫৭৩; মিশকাত হা/১৫৩৭।

[24].মুসলিম হা/২৫৭২; হিববান হা/২৯০৬; আহমাদ হা/২৫৪৪২।

[25].বুখারী হা/৫৬৪৮; মুসলিম হা/২৫৭১; মিশকাত হা/১৫৩৮।

[26].তিরমিযী হা/২৩৯৯; ছহীহাহ হা/২২৮০।

[27].বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৬৫৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৯২।

[28].তিরমিযী হা/৬১৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৬২; মিশকাত হা/২৯।

[29].বুখারী হা/৫২৫; মুসলিম হা/১৪৪; মিশকাত হা/৫৪৩৫।

[30].মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৪।

[31].প্রাগুক্ত।

[32].মুসলিম হা/১২১; ছহীহুত তারগীব হা/১০৯৭; মিশকাত হা/২৮।

[33].প্রাগুক্ত।

[34].প্রাগুক্ত।

[35].তিরমিযী হা/৮১০; নাসাঈ হা/২৬৩০; মিশকাত হা/২৫২৪।

[36].বুখারী হা/১৭৭৩; মুসলিম হা/১৩৪৯; মিশকাত হা/২৫০৮।

[37].তিরমিযী হা/৯৫৯; মিশকাত হা/২৫৮০।

[38].প্রাগুক্ত।

[39].নাসাঈ হা/১২৯৭; দারেমী হা/২৭৭২; মিশকাত হা/৯২২।

[40].আহমাদ হা/১২৪৭৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৫০৪।

[41].আবুদাঊদ হা/৪২০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৬৩।



আরও