মহানায়কদের স্রোত
আহসান সাদী আল-আদেল
২১. হজ্জ পালন করা : আর্থিক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ পালন করা ফরয। আর হজ্জ পালনে রয়েছে গুনাহসমূহ ক্ষমা করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ‘এমনিভাবে হজ্জ তার পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়’।[1] অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةَ- ‘হজ্জ ও ওমরা সাথে সাথে কর। কারণ এ দু’টি দারিদ্র ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবুলযোগ্য হজ্জের ছওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়’।[2]
২২. ওমরা পালন করা : কাবা গৃহে গুনাহসমূহ ক্ষমা করে নেওয়ার আরও একটি মাধ্যম হ’ল ওমরা পালন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ- ‘একটি ওমরা পরবর্তী ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্রটিমুক্ত (আল্লাহ্র নিকট গৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’।[3]
২৩. হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা : উমাইর (রহঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, ‘ভীড় ঠেলে হ’লেও ইবনু ওমর (রাঃ) হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর নিকটে যেতেন (তা স্পর্শ করার জন্য)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অন্য কোন ছাহাবীকে আমি এরূপ করতে দেখিনি। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান! আপনি ভীড় ঠেলে হ’লেও এই দুই রুকনে গিয়ে পৌঁছেন, কিন্তু আমি তো ভীড় ঠেলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অন্য কোন ছাহাবীকে সেখানে যেতে দেখিনি। তিনি বললেন, আমি এরূপ কেন করব না? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, এই দু’টি রুকন স্পর্শ করলে গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যায়’।[4]
২৪. তাওয়াফ করা : আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র চারদিকে সাতবার তাওয়াফ করবে ও তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করবে, তবে তা তার জন্য গোলাম মুক্ত করে দেবার সমতুল্য হবে। এটা ছাড়াও তাঁকে (ইবনু ওমর (রাঃ)-কে) বলতে শুনেছি, কোন লোক এতে এক পা ফেলে অপর পা উঠানোর আগেই বরং আল্লাহ তা‘আলা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন ও তার জন্যে একটি ছওয়াব নির্ধারণ করেন’।[5]
২৫. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা : আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ، وَرُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ- ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর আল্লাহ্র নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে’।[6]
২৬. দ্বীনী মজলিসে বসা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ قَوْمٍ اجْتَمَعُوا يَذْكُرُونَ اللَّهَ لاَ يُرِيدُونَ بِذَلِكَ إِلاَّ وَجْهَهُ إِلاَّ نَادَاهُمْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ قُومُوا مَغْفُوراً لَكُمْ قَدْ بُدِّلَتْ سَيِّآتُكُمْ حَسَنَاتٍ- ‘যে কোন সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে আল্লাহ্র স্মরণ করবে এবং এর দ্বারা তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন, সেই সম্প্রদায়কে আসমানের কোন এক ঘোষণাকারী ডেকে বলবে, তোমরা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে যাও যে, তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গুনাহসমূহকে পরিবর্তন করে ছওয়াবে পরিণত করা হয়েছে’।[7]
২৭. বার্ধক্যের পরিপক্ক চুল গোপন না করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সাদা চুল উপড়াতে নিষেধ করেছেন। কেননা সুফিয়ান (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, ‘যে মুসলিমের চুল ইসলামের উপর সাদা হয়, তা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য নূর স্বরূপ হবে’। রাবী ইয়াহ্ইয়ার বর্ণনায় আছে যে, ঐ সাদা চুলের বিনিময়ে একটি নেকী লেখা হবে এবং একটি গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে’।[8]
শেষকথা : মুমিন কখনও গুনাহের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে না। তবে গুনাহ হওয়াটাও তার জন্য অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে সর্বদা সতর্ক থাকে যেন তওবার মাধ্যমে এবং কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত মাধ্যমসমূহকে অসীলা করে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। সর্বদা তার চেষ্টা থাকে সে যেন আল্লাহর কাছে পাপমুক্ত অবস্থায় উপস্থিত হ’তে পারে। এজন্য উপরোক্ত পাপমুক্তির অসীলাগুলোকে সবসময় ধারণ করা মুমিনের জন্য কর্তব্য।
লেখক : ছাত্র বিষয়ক সম্পাদ
[1]. প্রাগুক্ত।
[2]. তিরমিযী হা/৮১০; নাসাঈ হা/২৬৩০; মিশকাত হা/২৫২৪।
[3]. বুখারী হা/১৭৭৩; মুসলিম হা/১৩৪৯; মিশকাত হা/২৫০৮।
[4]. তিরমিযী হা/৯৫৯; মিশকাত হা/২৫৮০।
[5]. প্রাগুক্ত।
[6]. নাসাঈ হা/১২৯৭; দারেমী হা/২৭৭২; মিশকাত হা/৯২২।
[7]. আহমাদ হা/১২৪৭৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৫০৪।
[8]. আবুদাঊদ হা/৪২০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৬৩।