আমি ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 425 বার পঠিত
[জোরাম ভ্যান ক্লাভেরেন ১৯৭৯ সালের ২৩শে জানুয়ারী নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভিইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্বে পড়াশোনা করেছেন। ক্লাভেরেন দেশটির চরম ডানপন্থী ফ্রিডম পার্টির (পিভিভি) এমপি হিসাবে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি বোরকা ও মিনার নিষিদ্ধের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা নেদারল্যান্ডে ইসলামের কোন ছিটাফোঁটাও দেখতে চাই না’। কিন্তু কট্টর ডানপন্থী ও ইসলাম বিদ্বেষী এই সাবেক এমপি ২০১৮ সালের ২৬শে অক্টোবর ইসলাম ধর্ম গ্রহণকরেন। নিম্নে তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা পাঠকের সমীপে উপস্থাপন করা হ’ল।]
জোরাম ভ্যান ক্লাভেরেন : বছরের পর বছর ধরে একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে ইসলামের সাথে লড়াই করার জন্য আমার যা কিছু ছিল সবই দিয়েছি। আমি নেদারল্যান্ডসের সমস্ত ইসলামিক স্কুল বন্ধ করার জন্য আইন পাস করার চেষ্টা করেছি। আমার দেশের প্রতিটি মসজিদ বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। এমনকি কুরআনকে নিষিদ্ধ করারও চেষ্টা করেছি। যেটাকে কিনা আমি বিষাক্ত গ্রন্থ বলতাম। একজন সক্রিয় সংসদ সদস্য হিসাবে ইসলামকে বিপদ আখ্যায়িত করে সে সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার জন্য যা করতে পেরেছি তা-ই করেছি। আমি ইসলামকে সত্যিকারের ধর্ম হিসাবে মেনে নিতে পারিনি। এটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক রাজনৈতিক মতাদর্শ বলতাম। আমি জানতাম ইসলাম সহিংস, নারী বিরোধী, খ্রিষ্টান বিরোধী এবং সন্ত্রাসবাদ প্রচার করে।
ত্রিত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান, যিশু খ্রিষ্টের প্রভুত্বকে প্রত্যাখ্যান এবং তাঁর পাপকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে খ্রিষ্টান প্রচারকরা ইসলামকে একটি মন্দ ধর্মবিশ্বাস হিসাবে দেখে। বিশেষ করে আমি যে সম্প্রদায়ের মধ্যে বড় হয়েছি সেখানকার প্রচারকরা। আমার এই ধারণাগুলো বদ্ধমূল হয়েছিল যখন আমি ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর প্রথম কলেজে যাই। কিছুদিন পরে, থিও ভ্যান গগ নামে নেদারল্যান্ডসের একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তার পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। ঘটনাটি আমস্টারডামে আমার পুরানো বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে ঘটে। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমার দেশকে রক্ষা করতে এই দুষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে নিজের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করব। কিন্তু আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।
আমি রাজনীতি ছাড়ার পর ইসলাম বিরোধী বই লেখা শুরু করেছিলাম। এটা আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল। আমি রাজনীতি করতে গিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যা বলেছি তার একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তথ্য অনুসন্ধানের সময় আমি এমন অনেক তথ্যের মুখোমুখি হয়েছিলাম, যেগুলো ইসলাম সম্পর্কে আমি যা ভাবতাম তার সাথে সাংঘর্ষিক ছিল। তখন আমি নতুন প্রশ্ন করতে শুরু করি। যেহেতু আমি বইটিকে বাস্তবসম্মত এবং তথ্যপূর্ণ করতে চেয়েছিলাম, সেজন্য মুসলিম পন্ডিতদের কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা শুরু করলাম। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রফেসর আব্দুল হাকীম মুরাদ। আমি ভেবেছিলাম তিনি হয়ত আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন না। কারণ আমি একজন মুসলিম বিদ্বেষী দলের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তিনি সাগ্রহে উত্তর দিয়েছেন। বিভিন্ন বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এবং অন্যান্য পন্ডিতদের নামও বলেছিলেন যাদের কাছে আমি তথ্য নিতে পারব। ইতিমধ্যে আমি খ্রিষ্টান মতবাদ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করি। স্রষ্টা সম্পর্কে আমার ধারণা বদলাতে থাকে। আমি আমার খ্রিষ্টান প্রশ্নের ইসলামিক উত্তর পেতে থাকি। আমার বইতে ইসলামের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা লিখি। আমার বইয়ের শেষটা ছিল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নবুওয়াত সম্পর্কে। যখন আমি তাঁর জীবন ও চরিত্র অধ্যয়ন করলাম, আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, তিনি সত্যিই আল্লাহর রাসূল ছিলেন। রাসূলের প্রতি আমার গ্রহণযোগ্যতা আমাকে প্রকৃতপক্ষে একজন মুসলিম করে তুলেছে। কিন্তু যে রাতে আমি বুঝলাম, তখনও একটা ঘৃণাবোধ কাজ করছিল। আমি লেখা শেষ করার পরে ইসলামকে সত্য বলে উপলব্ধি করি। কিন্তু তখনও সেটা মন থেকে মেনে নিতে পারিনি। আমি মুসলমান হ’তে চাইনি। আমি বুক শেলফে বই রাখার সময় অনেকগুলো বই সেখান থেকে পড়ে যায়। বইগুলোর মধ্যে একটি ছিল কুরআন। যখন আমি এটি তুলেছিলাম, আমার বৃদ্ধাঙ্গুলী সূরা হজ্জের ৪৬ নম্বর আয়াতের উপর ছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘চোখ অন্ধ নয় বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়’। আসলে এটাই ছিল আমার সমস্যা। আমার চোখ অন্ধ ছিল না। সত্য দেখতে পারতাম কিন্তু দেখিনি। কেউ আমাকে বই লেখতে বাধ্য করেনি। বরং আমি নিজের ইচ্ছাতেই লিখেছি। সুতরাং এটা আমার চোখের কিংবা জ্ঞানের সমস্যা নয়। বরং আমার অন্তরের অন্ধত্ব। হয়ত আমার কথাগুলো রূপকথার মত শোনাচ্ছে কিন্তু আমি যা বলছি বাস্তবে তাই ঘটেছে।
আমি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বলেছিলাম, আমাকে সত্য বোঝার জন্য একটি ইশারা দাও। পরদিন কোনই নিদর্শন পাইনি। কোন রংধনু উঠেনি কিংবা সোনার তারা পড়েনি। কিন্তু আমি জেগে ওঠার পরে, আমার ঘৃণা এবং উদ্বেগের অনুভূতি সম্পূর্ণরূপে চলে যায়। আমি হৃদয়ে শক্তি এবং আন্তরিক সুখ অনুভব করছিলাম। সেদিন আমি আমার স্ত্রী ও মাকে বললাম, আমি মুসলমান হয়েছি। আমার মা কাঁদতে শুরু করলেন। আমার স্ত্রী বলল, ‘যদি এটাই আপনার ইচ্ছা হয় তাহ’লে আমার আর কি-ই বা বলার আছে’। ইসলাম গ্রহণের কারণে যারা আমাকে ভোট দিয়েছিল তাদের কাছ থেকে ২০০০ বার হত্যার হুমকি এসেছে। আমার সন্তানদের হত্যা করতে, আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল তারা। আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি প্রতিবেশীরা শুনে তো বিশ্বাসই করতে পারেনি। সকলেই হতবাক হয়ে গিয়েছিল।
[সূত্র : ইন্টারনেট]