ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার
ফায়ছাল মাহমূদ
আসাদ বিন আব্দুল আযীয 552 বার পঠিত
২৭. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান : যদি কোন সন্তান পিতা-মাতার অবাধ্য হয় তাহ’লে তার আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় আল্লাহ ঐ ব্যক্তির ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করেন না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,ثَلاَثَةٌ لَا يَقْبَلُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْهُمْ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا، الْعَاقُّ، وَالْمَنَّانُ، وَالْمُكَذِّبُ بِالْقَدَرِ- ‘আল্লাহ তিন ব্যক্তির ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করেন না- (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) দান করে খোঁটা দানকারী (৩) তাক্বদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী’।[1] পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের শাস্তি আল্লাহ দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,بَابَانِ مَعَجَّلانِ عُقُوبَتُهُما فِي الدُّنْيا: البَغْيُ والعُقُوقُ ‘দু’টি এমন দরজা (পাপ) রয়েছে, যার শাস্তি দুনিয়াতেই ত্বরাম্বিত করা হয়- ১. বিদ্রোহ ২. পিতা-মাতার অবাধ্যাচরণ’।[2]
এমনকি ক্বিয়ামতের মাঠে আল্লাহ পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের দিকে তাকাবেন না। রাসূল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,ثَلَاثَةٌ لَا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ، وَالدَّيُّوثُ- ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তাকবেন না। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষের বেশধারী নারী এবং দাইয়ুছ (নিজ স্ত্রীর অশ্লীলতা-ব্যভিচারে যে ঘৃণাবোধ করে না’।[3]
২৮. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ أَعْمَالَ بَنِي آدَمَ تُعْرَض عَلَى اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عشيةَ كُلِّ خَمِيسٍ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ فَلَا يقبلُ عمل قاطِع رحم ‘আদম সন্তানের আমলসমূহ আল্লাহর কাছে বৃহস্পতিবার রাতে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল কবুল হয় না’।[4]
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর শাস্তি আল্লাহ পৃথিবীতেই দিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجِّلَ اللَّهُ لِصَاحِبِهِ العُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنَ البَغْيِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ- ‘বিদ্রোহ ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই। আল্লাহ তার শাস্তি পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখেরাতের জন্য অবশিষ্ট রাখেন’।[5]
আর তাদের জন্য জান্নাত হারাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ ‘আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[6]
২৯. মিথ্যা বলা : মিথ্যা কথা এমন পাপ যা থেকে বেঁচে থাকার জন্য স্বয়ং আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন,فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ- ‘অতএব তোমরা মূর্তিপূজার কলুষ এবং মিথ্যা কথা হ’তে দূরে থাক’ (হজ্জ ২২/৩০)। আর মিথ্যা বলা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে এসেছে,أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلاَثًا قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ قَالَ فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا لَيْتَهُ سَكَتَ- ‘একদা তিনবার বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহগুলো সম্পর্কে অবহিত করব না? সকলে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন; এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, শুনে রাখ! মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, এ কথাটি তিনি বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আর যদি তিনি না বলতেন’।[7]
এই মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، ‘মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপ তা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়’।[8]
আর মিথ্যা এমন পাপ যার কারণে আল্লাহ বান্দার ছিয়াম কবুল করেন না। রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِى أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ‘যে ব্যক্তি (ছিয়ামরত অবস্থায়) মিথ্যা কথা বলা ও এর উপর আমল করা ছেড়ে না দেয়, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’।[9] সুতরাং ছিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ আমল মিথ্যা বলার কারণে তা কবুল না হওয়ায় সারাদিন না খেয়ে কষ্ট করেও তা বিনষ্ট হয়ে যাবে।
৩০. অপসন্দনীয় ইমাম : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ثَلَاثَةٌ لَا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ آذَانَهُمْ: العَبْدُ الآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ، وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ، وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ- ‘তিন ব্যক্তি এমন যাদের ছালাত তাদের কানও অতিক্রম করে না, (১) পলাতক গোলাম, যতক্ষণ না সে (মালিকের কাছে) ফিরে আসে। (২) এমন মহিলা, যে তার স্বামীর অসন্তুষ্টিতে রাত্রি যাপন করে (৩) এমন ইমাম, মুছল্লীরা যাকে অপসন্দ করে’।[10]
৩১. নিজ পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা দাবীকারী : নিজ পিতা ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে পিতা বলে দাবী করা যাবে না। যদি কোন ব্যক্তি এমনটি করে তাহ’লে তার ইবাদত কবুল হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَمَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، أَوِ انْتَمَى إِلَى غَيْرِ مَوَالِيهِ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا، وَلَا عَدْلًا- ‘যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে দাবী করবে অথবা যদি কোন দাস তার মুনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মুনিব বানাবে, তার উপর আল্লাহর, ফিরিশতা ও সমগ্র মানব জাতির লা‘নত বর্ষিত হবে। ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল (ইবাদত) কবুল করবেন না’।[11] অন্য হাদীছে এসেছে,مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، وَهْوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ ‘যে ব্যক্তি অন্য লোককে পিতা বলে দাবী করে অথচ সে জানে যে সে তার পিতা নয়, তাহলে জান্নাত তার জন্য হারাম’।[12]
৩২. নিজেকে মিথ্যাভাবে উচ্চ বংশীয় দাবী করা : ইসলামে বংশীয় কোন মর্যাদা নেই তাক্বওয়া ব্যতীত। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি নিজেকে কোন সম্ভ্রান্ত বংশের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে তাহ’লে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لَيْسَ مِنْ رَجُلٍ ادَّعَى لِغَيْرِ أَبِيهِ وَهُوَ يَعْلَمُهُ إِلَّا كَفَرَ، وَمَنِ ادَّعَى قَوْمًا لَيْسَ لَهُ فِيهِمْ، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘কোন ব্যক্তি যদি নিজ পিতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে তার পিতা বলে দাবী করে তবে সে আল্লাহর (নে‘মতের) কুফরী করল। আর যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সাথে রক্ত সম্পর্কীয় সম্পৃক্ততার দাবী করল, যে বংশের সাথে তার কোন বংশীয় সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরী করে নেয়’।[13]
৩৩. পলায়নকারী দাস : পলায়নকারী দাসের ইবাদত আল্লাহর নিকট গৃহীত হয় না। ফলে সে ইবাদত করলেও তা কবুল না হাওয়ার কারণে বিনষ্ট হয়ে যাবে। জারীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا أَبَقَ الْعَبْدُ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهُ قَالَ: أَيّمَا عبد أبق فقد بَرِئت مِنْهُ الذِّمَّةُ وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهُ قَالَ: أَيُّمَا عَبْدٍ أَبَقَ مِنْ مَوَالِيهِ فَقَدْ كَفَرَ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَيْهِم ‘যে দাস পালিয়ে যায়, তার ছালাত গৃহীত হয় না। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, পলাতক দাসের ওপর (ইসলামের) কোনো দায়ভার নেই। অপর বর্ণনায় আছে যে, তিনি বলেছেন, যে গোলাম স্বীয় মালিক হ’তে পালিয়ে যায়, সে অবশ্যই কুফরী করে যতক্ষণ পর্যন্ত না মালিকের নিকট ফিরে আসে’।[14]
৩৪. বিনা অনুমতি জানাযার ছালাত পড়ানো ইমাম : মাইয়েতের জানাযার ছালাত তার নিকটাত্মীয়ই পড়ানোর হকদার। তথাপি কোন ইমাম যদি আত্ম-অহংকার বা মাযহাবী-গোঁড়ামির কারণে পারিবারিক অনুমতি না নিয়ে জানাযার ছালাত পড়ায় তাহ’লে তার ছালাত কবুল হবে না। আতা ইবনু দিনার আল-হুযালী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ثَلَاثَةٌ لَا تُقْبَلُ مِنْهُمْ صَلَاةٌ، وَلَا تَصْعَدُ إِلَى السَّمَاءِ، وَلَا تُجَاوِزُ رُءُوسَهُمْ: رَجُلٌ أَمَّ قَوْمًا وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ، وَرَجُلٌ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ وَلَمْ يُؤْمَرْ، وَامْرَأَةٌ دَعَاهَا زَوْجُهَا مِنَ اللَّيْلِ فَأَبَتْ عَلَيْهِ- ‘আল্লাহ তা‘আলা তিন ব্যক্তির ছালাত কবুল করেন না, তাদের ছালাত আকাশে উঠে না এবং তাদের মাথার উপরে উঠে যায় না (১) যে ব্যক্তি কোন কওমের ইমামতি করে অথচ তারা তাকে অপসন্দ করে (২) যে ব্যক্তি জানাযার ছালাতে ইমামতি করে অথচ তাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। (৩) যে নারীকে তার স্বামী সহবাসের জন্য ডাকে অথচ সে তা অস্বীকার করে রাত কাটায়’।[15]
৩৫.মুসলিম জামা‘আত পরিত্যাগকারী : জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, -وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا তোমরা সকলে সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না (আলে-ইমরান ৩/১০৩)। আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ- ‘যে ব্যক্তি জামা‘আত (দল) হ’তে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গেছে, সে ইসলামের রশি (বন্ধন) তার গলা হ’তে খুলে ফেলেছে’।[16]
৩৬. কোন মুসলিমকে আশ্রয়দানে বাধাদানকারী : যে কোন ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া কল্যাণকর কাজ। তথাপি কোন ব্যক্তি যদি ঐ কল্যাণকর কাজে বাধা দেয়, তাহ’লে তার ইবাদত কবুল হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,وَذِمَّةُ الْمُسْلِمِينَ وَاحِدَةٌ يَسْعَى بِهَا أَدْنَاهُمْ فَمَنْ أَخْفَرَ مُسْلِمًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لاَ يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلاَ عَدْلٌ- ‘সমস্ত মুসলিমের দায়িত্ব-কর্তব্য-অঙ্গীকার এক। একজন সাধারণ মুসলিমও তা মেনে চলবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের আশ্রয় প্রদানকে বানচাল করে তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতা এবং সকল মানুষের লা’নত। ক্বিয়ামতের দিন তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল হবে না’।[17]
৩৭. মদীনায় বিদ‘আতকারী অথবা কোন বিদ‘আতীকে প্রশয়দানকারী : বিদ‘আত সমূহ ধর্মের নামে করা হ’লেও তা মারাত্মক পাপ। যদি তা মদীনায় হয়, তাহ’লে তার পরিণতি আরও ভয়াবহ। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْمَدِينَةُ حَرَامٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إِلَى ثَوْرٍ فمنْ أحدَثَ فِيهَا حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ ‘মদীনার আয়র ও ছাওর-এর মধ্যবর্তী স্থান হারাম। এখানে যে ব্যক্তি কোন বিদ‘আতী কর্মে লিপ্ত হয় অথবা কোন বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তার ফিরিশতাবর্গ ও সমগ্র মানবজাতির লা’নত। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না।[18]
৩৮. মদীনাবাসীরউপরঅত্যাচারকারী : সায়েব বিন খাল্লাদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اللَّهُمَّ مَنْ ظَلَمَ أَهْلَ الْمَدِينَةِ، وَأَخَافَهُمْ فَأَخِفْهُ، وَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ- ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি মদীনাবাসীদের প্রতি অত্যাচার করে এবং তাদেরকে সন্ত্রস্ত করে, তুমি তাকে সন্ত্রস্ত কর। আর তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতাবর্গ এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ। তার নিকট থেকে নফল-ফরয কোন ইবাদতই কবুল হবে না’।[19]
৩৯. ছাহাবীদের গালিদাতা : ইবনে আববাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ، وَالْمَلَائِكَةِ، وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لَا يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا- ‘যে ব্যক্তি আমার ছাহাবাদের গালি দিবে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতাবর্গ এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ। আল্লাহ তার নিকট থেকে কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না’।[20]
৪০. জাহেলিয়াতের দিকে আহবানকারী : জাহেলিয়াত তথা অন্ধকার যুগের দিকে যদি কোন ব্যক্তি কাউকে আহবান করে তাহ’লে তার ইবাদত কবুল হবে না। আর ইবাদত কবুল না হওয়ার কারণে আমল করেও তা বিনষ্ট হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ ادَّعَى دَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ؟ قَالَ: وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ، فَادْعُوا بِدَعْوَى اللهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ المُسْلِمِينَ المُؤْمِنِينَ، عِبَادَ اللهِ ‘আর যে লোক জাহেলিয়াত আমলের রীতি-নীতির দিকে আহবান করে সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সে ছালাত-ছিয়াম আদায় করলেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, সে ছালাত-ছিয়াম আদায় করলেও। সুতরাং তোমরা সেই আল্লাহর ডাকেই নিজেদেরকে ডাকবে যিনি তোমাদেরকে মুসলিম, মুমিন ও আল্লাহ তা‘আলার বান্দা নাম রেখেছেন’।[21]
৪১. তাক্বদীরে অবিশ্বাসী : তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করা সকল মুমিনের উপর আবশ্যক। কোন কারণে তাক্বদীরে অবিশ্বাস করলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। আবু উমামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,ثَلَاثَةٌ لَا يَقْبَلُ اللهُ لَهُمْ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا: عَاقٌّ، وَمَنَّانٌ، وَمُكَذِّبٌ بِالْقَدَرِ ‘তিন ব্যক্তির নিকট হ’তে আল্লাহ ফরয-নফল কিছুই গ্রহণ করবেন না; পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দান করে প্রচারকারী এবং তাক্বদীর অস্বীকারকারী ব্যক্তি’।[22] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى يُؤْمِنَ بِأَرْبَعٍ: يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ بَعَثَنِي بِالحَقِّ، وَيُؤْمِنُ بِالمَوْتِ، وَبِالبَعْثِ بَعْدَ المَوْتِ، وَيُؤْمِنُ بِالقَدَرِ ‘কোন লোকই ঈমানদার হ’তে পারবে না যে পর্যন্ত না সে চারটি বিষয়ের উপর ঈমান আনবে, (১) সে এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই এবং আমি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, তিনি আমাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন; (২) মৃত্যুর উপর ঈমান আনবে; (৩) মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে ঈমান আনবে এবং (৪) তাক্বদীরের উপর ঈমান আনবে।[23]
উপসংহার : উম্মতে মুহাম্মাদীর বয়স ষাট থেকে সত্তর বছর। এর থেকে অধিক বয়স কম লোকেরই হয়।[24] সুতরাং এ স্বল্প বয়সের মধ্যে কৃত কোন সৎআমল যদি বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহ’লে পরকালীন জীবন দুবির্ষহ হয়ে উঠবে। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা সকলকেই আমল বিনষ্টকারী পাপ থেকে বেঁচে থাকার তওফীক দান করুন।- আমীন!
আসাদ বিন আব্দুল আযীয
লেখক : কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ
[1]. ছহীহ তারগীব হা/২০১৩; বায়হাকী, আল ক্বযা ওয়াল ক্বদর হা/৪২৯।
[2]. হাকেম হা/৭৩৫০; ছহীহাহ হা/১১২০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮১০।
[3]. নাসাঈ হা/ ২৫৬২; আহমাদ হা/ ৬১৮০; ছহীহ হা/১৩৯৭।
[4]. আহমাদ হা/১০২৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৩৮।
[5]. আবুদাউদ হা/৪৯০২; তিরমিযী হা/২৫১১; ইবনু মাজাহ হা/৪২১১।
[6]. বুখারী হা/৫৯৮৪; মুসলিম হা/২৫৫৬; মিশকাত হা/৪৯২২।
[7]. বুখারী হা/২৬৫৪; মুসলিম হা/৮৭।
[8]. বুখারী হা/৬০৯৪; মুসলিম হা/২৬০৭; মিশকাত হা/৪৮২৪।
[9]. বুখারী হা/১৯০৩; মিশকাত হা/১৯৯৯।
[10]. তিরমিযী হা/৩৬০; মিশকাত হা/১১২; ছহীহুত তারগীব হা/৪৮৭।
[11]. মুসলিম হা/১৩৭০; মিশকাত হা/২৭২৮।
[12]. বুখারী হা/৬৭৬৬; মুসিলম হা/৬৩; আবুদাঊদ হা/৫১১৩।
[13]. বুখারী হা/৩৫০৮; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৩২।
[14]. মুসলিম হা/১২৪, ৬৯, ৬৮; মিশকাত হা/৩৩৫০।
[15]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৫১৮; ছহীহাহ হা/৬৫০।
[16]. আবুদাঊদ হা/৪৭৫৮; মিশকাত হা/১৮৫।
[17]. বুখারী হা/৩১৭৯; মুসলিম হা/১৩৭১; মিশকাত হা/২৭২৮।
[18]. বুখারী হা/৬৭৫৫; মুসলিম হা/১৩৭০; মিশকাত হা/২৭২৮।
[19]. তাবারাণী হা/৩৫৮৯; ছহীহাহ হা/৩৫১; ছহীহুত তারগীব হা/১২১৪।
[20]. আহমাদ বিন হাম্বাল, ফাযায়েলুছ ছাহাবা হা/৮; ছহীহাহ হা/২৩৪০।
[21]. তিরমিযী হা/২৮৬৩।
[22]. বায়হাক্বী, আল-ক্বযা ওয়াল ক্বদর হা/৪২৯; ইবনু আছেম, আস-সুন্নাহ হা/৩২৩; ছহীহাহ হা/১৭৮৫; ছহীহুল জামে হা/৩০৬৫।
[23]. তিরমিযী হা/২১৪৫; মিশকাত হা/১০৪।
[24]. তিরমিযী হা/৩৫৫০; ইবনু মাজাহ হা/৪২৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৯৪।