মহাকবি ইকবালের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

মোহাম্মদ মওলা বখশ নদভী 224 বার পঠিত

ভারত উপমহাদেশের দশকোটি সুপ্ত মুসলমান যাঁহার তকবীর ধ্বনিতে নিদ ভাঙিয়া জাগিয়া উঠিয়াছে, যাঁহার তেজদীপ্ত অভয় বাণীতে আত্মবিস্মৃত মুসলিম জাতি পুনঃ আত্মচেতনা লাভ করিয়াছে, যাঁহার অমর কাব্যের বলদৃপ্ত সুর ঝঙ্কারের আকর্ষণে বিচ্ছিন্ন পথিকের দল এক কাফেলায় আসিয়া সমবেত হইয়াছে এবং যাঁহার ব্যাখ্যাকৃত ইসলামের আদর্শকে রূপায়িত করার জন্য পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, দুঃখের বিষয় সেই মহান জাতীয় কবিকে পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ আজও সম্যকভাবে চিনিতে পারেন নাই অথবা চিনিবার চেষ্টা করেন নাই। তাঁহার সহিত রবীন্দ্রনাথ কিম্বা নজরুল ইসলামের তুলনা চলিতে পারে না। কারণ তাঁহার আসন স্বতন্ত্র ও অনুপম এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে মহিমান্বিত। তাঁহার লক্ষ্যস্থল সুনির্দিষ্ট, চলার পথ সুনির্ধারিত, তাঁহার দৃষ্টিভঙ্গি পৃথক, কাব্য ঝঙ্কার আলাহিদা।

ইহা অদৃষ্টের পরিহাস যে, আমরা তাঁহাকে জাতীয় কবি রূপে ঘোষণা করিতে গর্ব অনুভব করি, কিন্তু তাঁহাকে সঠিকভাবে বুঝিবার এবং তাঁহার আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ার চেষ্টা করি না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁহার আসল রূপ যেদিন পরিপূর্ণরূপে উদঘাটিত হইবে এবং আমরা তাঁহাকে সত্যিকার ভাবে উপলব্ধি করিতে পারিব সেই দিনই তাঁহাকে জাতীয় কবি রূপে বরণ করা আমাদের সার্থক হইবে। কিন্তু আমার আশঙ্কা হয়, তাঁহার সত্য স্বরূপ প্রকাশিত হওয়ার পর আমাদের ইংরাজী শিক্ষিত ও তরুণ দলের নিকট হয়ত তাঁহার ভাগ্যে বিরূপ সম্বর্ধনাই মিলিবে! আজ কাল ইসলামী রীতি নীতি সম্বন্ধে অতি প্রয়োজনীয় উপদেশ দিতে গেলে, এমন কি নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাত সম্বন্ধে তাকিদ দিতে গেলেও যখন কথায় কথায় ‘কাঠমোল্লা’, ‘গোড়া’ ‘সেকেলে’ ইত্যাদি উপাধিগুলি লাভ করিতে হয়, তখন ঐ গুলির মহিমাকীর্তনকারী খাঁটি ইসলামী দৃষ্টি সম্পন্ন কবির ভাগ্যে যে কি ঘটিতে পারে তাহা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু ইকবালের ন্যায় একজন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার মহা পন্ডিত ব্যক্তির ক্ষুরধার লেখনী আমাদের পাশ্চাত্য শিক্ষা ভিমানী দলের অন্ধ পাশ্চাত্য প্রীতি ও গোড়ামির মূলে আঘাত হানিতেও পারে এই আশায় এবং ভরসায় তাঁহার কিঞ্চিৎ পরিচয় দানের চেষ্টা করিব। তাঁহার কাব্য বাগিচা হইতে অতি অল্প সংখ্যক কুসুম চয়নপূর্বক প্রিয় পাঠক পাঠিকাবৃন্দের সম্মুখে তুলিয়া ধরিব এবং আমি স্বয়ং যেভাবে উপলব্ধি করিয়াছি সেই ভাবেই বর্ণনার প্রয়াস পাইব। 

ইকবালের নিকট মানব জীবনের সাফল্য ও পৃথিবীর সু-এনতেযাম ও সুশৃঙ্খলা নির্ভর করে একমাত্র খুদি বা আমিত্বের (Ego) প্রতিষ্ঠার উপর। নিজেকে ফানা করিয়া দিয়া কিম্বা জগতের কাছে স্বীয় আত্মাকে অতি নগন্য, হেয় ও ক্ষুদ্ররূপে প্রকাশ করিয়া উহা কস্মিনকালে সম্ভবপর নয়। ইকবাল বলেন,

پیکر هستی ز آثار خودی است + هر چه می بینی ز اسرار خودی است

অস্তিত্বের এ কলেবর আমিত্বেরি ফল।

যা কিছু সব আমিত্বের গূঢ় রহস্য বল্।

ইকবাল আমিত্বের প্রতিষ্ঠা চান। কিন্তু সে প্রতিষ্ঠা ফেরআউন বা নমরুদের প্রতিষ্ঠা নয়। তাঁহার নিকট প্রেম ও মহববত ব্যতীত আমিত্বের দৃঢ়তা সাধিত হয় না এবং যে আমিত্বে অকৃত্রিম ভালবাসা ও আত্মনিবেদন নাই তাহা কখনও মজবুত স্থায়ী হইতে পারেনা। তাই তিনি বলেন,

از محبت می شود پائنده تو + زنده تر سو زنده تر تابنده تر-

প্রেমের দ্বারা আমিত্ব হয় সবল দৃঢ়তর;

সজীবতর, জলন্ততর আর উজ্জ্বলতর।

ইকবালের প্রেম কি? এবং কেইবা তাঁহার প্রেমাস্পদ? কবি বলেন,

عاشقی آموز و محبوبی طلب + چشم نوحی، قلب ایوبی طلب-

هست معشوقی نهان اندر دلت + چشم اگر داری بیا بنمایمت-

শিক্ষা করো প্রেম করা আর প্রিয়ার করো অন্বেষণ,

নুহের দৃষ্টি তলব করো, আইউবী দিল চাও আপন। দিলের মাঝে লুকিয়ে আছে তোমারই যে প্রাণপ্রতীম

দৃষ্টি যদি থাকে এসো, দেখিয়ে দিব তাহার চিন।

কে এই প্রিয়তম? ইকবাল পরিষ্কারভাবে মুসলমানের প্রিয়তমের নাম ঘোষণা করিতেছেন,

در دل مسلم مقام مصطفی است + آبروی ما ز نام مصطفی است

طور موجی از غبار خانه اش + کعبه را بیت الحرم کاشانه اش-

মুসলমানের দিল হইল মোহাম্মদ মোছতফার ধাম,

মোদের সকল মান ইজ্জত সবের মূলে তাঁহার নাম

তাহার ঘরের ধূলিকণার তরঙ্গেরি তূর পাহাড়,

কাবার হেরেমখানা হলো তাহার কুটীর দ্বার।

আমিত্বের প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেমের আবশ্যকতা স্বীকৃত হইল এবং প্রেমাস্পদও নির্দিষ্ট হইল, এখন কোন পথে ও কি উপায়ে উহার সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব তাহা জানা আবশ্যক। কবির মতে, আমিত্বের বিকাশের যে পথ উহার ৩টি মনজিল। এই মনজিল অতিক্রম করিয়া তবে মনজিল মকছেদে পৌছিতে হইবে।

১ম মনজিল : এতাআত বা বশ্যতা স্বীকার

প্রিয়তম প্রদর্শিত একটা সুনির্ধারিত আইন কানুনের নিকট মাথা নত করিয়া আন্তরিকভাবে তাহার অনুসরণ করার নাম এতা‘আত। এই এতা‘আতের স্বরূপ কি? ইকবাল বলেন, এতা‘আতের জন্য পরিশ্রম স্বীকার, কষ্ট ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন এবং ধৈর্য্য অবলম্বন প্রয়োজন। এ বিষয়ে উটের মত স্বভাব সম্পন্ন হইতে হইবে এবং কোন প্রকার ওজর আপত্তি না তুলিয়া হৃষ্টচিত্তে প্রভুর আদেশ তামিল করিয়া যাইতে হইবে। এজন্য নির্ধারিত আইন কানুন ও নিয়ম শৃঙ্খল মানিয়া চলা অপরিহার্য। আল্লাহর সৃষ্ট প্রকৃতিরাজ্যে সর্বত্রই এই নিয়মের প্রতি নিষ্ঠা পরিলক্ষিত হয়। আকাশ ও উহার চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি পৃথিবী ও উহার গাছ বৃক্ষ, নদীনালা, পাখী, পশু সব কিছুই এক বাধা ধরা নিয়মের অধীন চলিতেছে। আল্লাহর প্রতিনিধি ও সেরা সৃষ্টি রূপে মানুষদিগকে এই সমস্তই বশীভূত করার মত শক্তি তাহাদের হৃদয়ভান্তরে দেওয়া হইয়াছে। এই শক্তিকে স্ফুরিত করিয়া আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ পর্যন্ত আপন আধিপত্য কায়েম করিতে হইলে আগে নিজেদের জীবনকেই নিয়মের অধীন সুনিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করিতে হইবে। বিশ্ব প্রভু আল্লাহর নির্ধারিত এই নিয়ম মানিয়া চলার নামই এতা‘আত বা বশ্যতা স্বীকার। কবি এই ভাবটিকেই সুন্দর ভাবে ব্যক্ত করিয়াছেন নিম্নে ধৃত কবিতায়,

خدمت ومحنت شعار اشتر است + صبر و استقلال کار اشتر است-

توهم از بار فرائض سر متاب + برخوری از عنده حسن المأب-

هر که تسخیر مه و پروین کند + خویش را زنجیری آئين کن-

উটের স্বভাব হলো সেবা এবং কষ্ট করা,

বিপদ কালে ছবর করা আর ধৈর্য ধরা।

তুমিও স্বীয় ফরজ হতে ফিরাইওনা মুখ,

প্রভুর কাছে শেষে তুমি পাবে অশেষ সুখ।

চাঁদ তারাকে বশ করিতে হইবে ধরায় যাকে,

এক আইনের শিকল আগে পরতে হবেই তাকে।

অন্যত্র তিনি বলেন,

هر که بر خود نیست فرمانش روان + می شود فرمان پزیر از دیگران-

নিজের হুকুম চলবে নাক যাহার, নিজের পর;

করবে তামিল পরের হুকুম, সে এ ধরার পর?

নিয়ম শৃঙ্খলার প্রথম মনজিল অতিক্রম করার পর দ্বিতীয় মনজিলে আসিতে হইবে।

২য় মনজিলের নাম ضبط نفس বা আত্মসংযম :

এই আত্মসংযম কোথায় এবং কিভাবে শিখিতে হইবে? ইকবালের মতে ৫টি জিনিসের ভিতর মুছলমান আত্মসংযমের পাঠ গ্রহণ করিবে। আর এই গুলিই হইল ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ।

প্রথম, ঈমান বা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন, তাহার উপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা এবং নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তাহার পদতলে সমর্পণ করিয়া দেওয়া। ইহা করিতে পারিলেই তাহার অন্তর অন্য সব কিছুর ভীতি হইতে মুক্ত হইবে এবং সেই মুক্ত হৃদয় লইয়া একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সুনির্ধারিত এবাদতগুলি সঠিকভাবে সম্পাদন করিতে পারিবে আর এই প্রত্যেকটি এবাদত তাহাকে আত্মসংযমের সাধনায় সিদ্ধি প্রদান করিয়া তৃতীয় মনজিল তক পৌঁছাইয়া দিবে। ইকবাল দ্বিতীয় মনজিলের এই ঈমান এবং ইবাদতগুলি সম্বন্ধে কি বলেন তাহা গভীর মনোযোগের সহিত লক্ষ্য করা আবশ্যক।

(১) বিশ্বাস ও উহার নতিজা :

تا عصائی لا اله داری بدست + هر طلسم خوف را خواهی شکست-

লা ইলাহা’র লাঠি যদি তোমার হাতে রয়,

ভাঙ্গবে তুমি সহজে সব তেলেসমাতের ভয়।

هر که حق باشد چو جان اندر تنش + خم نگردد پیش باطل گردنش-

 সত্য যদি প্রাণের যত দেহের ভিতর রয়,

কভু অসত্যের সামনে মাথা নত নাহি হয়।

خوف را درسینہ او راه نیست + خاطرش مرعوب غیر الله نیست

ঢুকতে বুকে ভয়-ভীতি তার পায়না যে পথ আর,

আল্লাহ ছাড়া সামনে কারো দিল কাঁপেনা তার।

می کند از ماسوی قطع نظر + می نهد ساطور برحلق پسر -

পড়ে নাক তাহার নজর কোনই মায়ায়, ছলে,

নির্ভয়ে সে চালায় ছুরি নিজের ছেলের গলে।

(২) নামাজ :

لا اله باشد صدف گوهر نماز + قلب مسلم را حج اصغر نماز-

লা ইলাহা ঝিনুক এবং নামাজ মুক্তা তার,

মোমিন দিলে নামাজ হলো ছোট হজ্ব এক আর

(৩) রোজা :

روزه بر جوع وعطش شبخون زند + خیبر تن پروری را بشکند-

হামলা করে রোজা মোদের ভুখ পিয়াসার পর

দেয় ভাঙ্গিয়া উদর-সেরার সেরা ‘খয়বর’।

(৪) হজ্ব :

مؤمنان را فطرت افروز است حج +هجرت آموز و وطن سوزست حج

হজ্ব পরিচয় প্রকৃতিরই করায় মোমিনদের,

দেয় সে ছবক ভিটা ভাঙ্গার এবং হিজরতের

(৫) যাকাত :

حب دولت را فنا سازد زکوة + هم مساوات آشنا سازد زكوة-

অর্থ-লোভ ও ধন-লালসা ধ্বংস করে দেয় যাকাত,

সাম্য-অনুরাগ বাড়ায়ে দেয় আমাদের এই যাকাত।

৩য় মনজিল : نیابت الهیবা আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব! মুসলমানকে পূর্ণ আত্মসমর্পন এবং সংযমের সাধনার পর এই ৩য় মনজিলে পেঁŠছিতে হইবে এবং এইখানেই মুছলিম জীবনের সবর্বশ্রেষ্ঠ গৌরবময় দায়িত্ব তাহার উপর অর্পিত হইবে। এই মনজিলে তাহার স্বরূপ এবং যোগ্যতার বর্ণনায় কবি বলিতেছেন,

نائب حق همچو جان عالم است + هستی او ظل اسم اعظم است

ধরার পরে খোদার নায়েব, সারা ধরার প্রাণস্বরূপ,

হেথায় তাহার হাস্তি যে ‘ইছমে আযম’ ছায়া স্বরূপ।

از رموز جزو و کل آگه بود + در جهان قائم بامرالله بود-

ক্ষুদ্র বৃহৎ সব কিছুরই রহস্য ভেদ করবে সে,

জগত মাঝে প্রভুর কাজে অটল হয়ে থাকবে সে।

نوع انسان را بشیر و هم نذیر + هم سیاهی هم سپهگر هم امیر-

মানব জাতির তরে হলো ’বশির, নযির’ সে মুছলিম,

খোদ সিপাহী, সেনাপতি, স্বয়ং আমীর সে মুছলিম।

আমিত্বের প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা এবং উহার বিকাশের পথ ও মনযিলগুলির পরিচয় প্রদান করা হইল। কিন্তু মানুষের সামাজিক জীবনকে সুন্দর এবং পৃথিবীতে শাস্তি ও শৃঙ্খলা বিধান ও সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য এই আমিত্বগুলির পৃথক পৃথক বিকাশই যথেষ্ট নয়, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। একতাই জামাতী জীবনের শক্তি আর বিচ্ছিন্নতাই মরণ। কবি বর্তমান মুছলমান সমাজের বিভেদের মরণ-চিহ্নগুলি দেখিয়া অন্তরে কি বেদনাই না অনুভব করিয়াছেন। ইকবালের নিকট জামাআত হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া ব্যক্তিগত জীবন ধারণ অসম্ভব। এই বিচ্ছিন্নতা জাতীয় জীবনে যে কি অভিশাপ ডাকিয়া আনে কবি তাহা অতি সুন্দর ভাবে ব্যক্ত করিয়াছেন নিম্নোধৃত চরণ কয়টিতে-

ڈالي گئي جو فصل خزاں ميں شجر سے ٹوٹ

ممکن نہيں ہري ہو سحاب بہار سے

গ্রীষ্মে গাছের যে শাখটি পড়লো ভেঙ্গে তলে,

অসম্ভব তার সবুজ হওয়া, বসন্ত বাদলে।

ہے لازوال عہد خزاں اس کے واسطے

کچھ واسطہ نہيں ہے اسے برگ و بار سے

গ্রীষ্ম তাহার ভাগ্যে লিখা রইবে চিরদিন,

পাতা এবং ফলের কোনই থাকবেনাক চিন।

কিন্তু ইকবাল দুঃখবাদী (Pessimist) ছিলেন না। মুসলমানদের বর্তমান অনৈক্য, বিভেদ ও দুর্বলতার জন্য বিলাপ করিলেও তিনি তাহাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নিরাশ হন নাই। তিনি বিশ্বাস করিতেন, মুসলমান চিরদিন এইরূপ বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত ও দুর্বল হইয়া থাকিতে পারে না। তাহাদের সম্মুখে বিরাট দায়িত্ব রহিয়াছে, সে দায়িত্ব তাহাদিগকে পালন করিতে হইবেই। এই জন্য কবি তাহাদিগকে অনৈক্যের পরিণাম সম্বন্ধে সাবধান করিয়া দিয়া জাতীয় ঐক্য ও মিল্লাতের সংহতি বজায় রাখিতে উপদেশ দিয়াছেন। গ্রীষ্মের আগমনে তাহাদের যে শক্তি লুপ্ত হইয়া পড়িয়াছে তিনি আশা করেন, তাহা পুনরায় বসন্তের শুভাগমনে জাগরিত হইবে,

شاخ بریدہ سے سبق اندوز هر که تو

نا آشنا هي قاعده روزگار سے -

বৃক্ষচ্যুত শাখা হ’তেই শিক্ষা তুমি লও,

রীতি নীতি এই দুনিয়ার অবগত নও।

ملت کے ساتھ رابطہء استوار رکھ + پيوستہ رہ شجر سے، اميد بہار رکھ!-

জাতির সঙ্গে নিজের বাঁধন শক্ত করে রাখো,

বসন্তেতরই আশায় তুমি বৃক্ষ সাথেই থাকো

বর্ত্তমান জড় সভ্যতা ও উহার বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষকে যেরূপ অশান্তি ও দুঃখ কষ্টের গহবরে টানিয়া লইতেছে এবং মুসলমানগণ এই বাহ্যিক চাকচিক্যে আকৃষ্ট হইয়া যেভাবে আপনার ধ্বংসকেই ডাকিয়া আনিতেছে তিনি যেন দিব্যচক্ষে উহা দেখিতে পাইয়াছেন। তাই তিনি তাহাদের সন্মুখে নিপুণ হস্তেত এই সভ্যতার স্বরূপ অঙ্কিত করিয়া তুলিয়া ধরিয়াছেন এবং মুছলমানদিগকে এই পথ পরিত্যাগ করিয়া স্বীয় নবী প্রদর্শিত উজ্জল পথের দিকেই আহবান করিয়াছেন। এই সভ্যতা সম্বন্ধে তিনি বলিতেছে,

حرارت ہے بلا کی بادہ تہذیب حاضر میں
بھڑک اٹھا بھبھوکا بن کے مسلم کا تن خاکی

গরম কত! বর্ত্তমানের সভ্যতার এই মদিরায়, মুসলমানের মাটির দেহ উদ্বেলিত ফেনের প্রায়।

حیاتِ تازہ اپنے ساتھ لائی لذّتیں کیا کیا

رقابت، خود کشی، ناشکیبائی، ہوسناکی

নতুন জীবন আনলো সাথে কতই মজার চীজ,

আত্ম হত্যা, রেষারেষি, লোভ, অধৈর্য্যের বীজ।

تو اے پروانہ! ایں گرمی ز شمعِ محفلے داری

چو من در آتشِ خود سوز اگر سوزِ دلے داری (فیىضى(

হে পতঙ্গ! সভার চেরাগ হতে লওয়া এ তাপ তোমার, নিজ

আগুনে জ্বলো, যদি গুপ্ত আগুন রয় সে হিয়ার।

[প্রবন্ধটি মাসিক তর্জুমানুল হাদীছ, চতুর্থ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, পৌষ-মাঘ, ১৩৫৯ বাংলা হ’তে গৃহীত।]




বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও