আল্লাহর নিকট তওবা

নাজমুন নাঈম 338 বার পঠিত

ফাতেমা খুব মেধাবী ও সচ্চরিত্রা মেয়ে। বুদ্বিদীপ্ততা ও সদাচারণের কারণে প্রতিবেশীদের নিকট সে সর্বদা প্রশংসিত হয়। তার পিতা-মাতাও তার জন্য গর্ববোধ করে। কিন্তু একদিন একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটল, যা দেখে তার মা হতবাক হয়ে গেলেন।

একদিন প্রতিবেশী এক ভদ্রমহিলা তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলেন। তাকে দেখে তার মা সম্ভাষণ জানাতে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু ফাতেমা তার জায়গায় চুপচাপ বসে থাকল। প্রথমে এ আচরণে তার মা কিছুটা বিস্মিত হ’লেও তেমন ভ্রুক্ষেপ করলেন না। প্রতিবেশী ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে তার সাথে কুশল বিনিময়ের উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু ফাতেমা তাঁর সাথে মুছাফাহা না করে উদাসীন হয়ে বসে রইল।

ফাতেমার এমন অনাকাঙ্খিত আচরণে তার মা বিস্মিত হলেন এবং ধমক দিয়ে বললেন, ওঠো, তোমার খালাকে সম্মান কর। ফাতেমা তার মায়ের কথা অগ্রাহ্য করে এমন ভাব করল, যেন সে শুনতেই পায়নি। প্রতিবেশী মহিলা এতে খুবই দুঃখ পেলেন এবং তার হাত গুটিয়ে নিলেন। তিনি এটাকে চূড়ান্ত অপমান মনে করে চলে যাওয়ার মনস্থ করলেন এবং বললেন, সম্ভবত আমি ভুল সময়ে চলে এসেছি।

ভদ্র মহিলা চলে যাওয়ার উপক্রম হ’লে ফাতেমা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল এবং তার হাত ধরে কপালে চুমু দিল। অতঃপর বলল, আমাকে মাফ করে দিন খালা! আল্লাহর কসম আমি আপনার সাথে খারাপ আচরণ করতে চাইনি। সে তার দিকে সম্মান ও সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়ে দিল এবং তাকে বসার অনুরোধ জানাল। সে বলল, আপনি তো জানেন খালা! আমি আপনাকে কত ভালোবাসি এবং শ্রদ্ধা করি।

অনেক অনুনয় করে ফাতেমা তার প্রতিবেশীর রাগ কমাতে ও তার মনে সৃষ্ট ব্যথা মুছে ফেলতে সক্ষম হ’ল। কিন্তু তার মা তখনো তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন। ইতোমধ্যে ভদ্রমহিলা ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। ফাতেমাও তাঁকে বিদায় দানের জন্য দাঁড়াল। সে তার এক হাত মুছাফাহার জন্য বাড়িয়ে দিল এবং অন্য হাত দিয়ে ভদ্রমহিলার ডান হাত ধরল। যেন সে বুঝাতে চাইল, তার প্রসারিত হাতই স্বাভাবিক। প্রথমবার তার হাত না বাড়ানো ভুল ছিল। সে যেন এতে কষ্ট না পায়। ভদ্রমহিলা তাকে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরে বলল, তোমার প্রতি আমার কোন দুঃখ নেই। আমি বিশ্বাস করি তুমি ইচ্ছা করে অসদাচরণ করোনি।

ভদ্রমহিলার প্রস্থানের পর ফাতেমার মা তাকে রাগতস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, কীসে তোমাকে এই আচরণে বাধ্য করল? ফাতেমা বলল, আমি জানি, আপনি খুব কষ্ট পেয়েছেন মা! আমাকে ক্ষমা করুন! তার মা বললেন, তিনি তোমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পরও তুমি মুছাফাহা না করে কেন? চুপচাপ তোমার জায়গায় বসে থাকলে। ফাতেমা বলল, মা! আপনিও তো এমন কাজ করেন। তার মা চিৎকার করে বললেন, তুমি কী বলছ? আমি এমন করি? ফাতেমা বলল, হ্যাঁ, আপনি দিন-রাত এমন আচরণ করেন।

ঝাঁঝালো কণ্ঠে তার মা বললেন, আমি দিন-রাত কী করি? ফাতেমা বলল, কেউ তোমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে তুমি তাঁর দিকে হাত বাড়াও না। প্রায় চিৎকার করে তার মা বললেন, কে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, যাকে আমি ফিরিয়ে দিই? ফাতেমা বলল, আল্লাহ, মা। আল্লাহ আপনার দিকে দিনে-রাতে তওবার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু আপনি তওবা করেন না। আল্লাহর দিকে ফিরে আসেন না।

ফাতেমার কথায় তার মা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি চুপচাপ বসে রইলেন। ফাতেমা আবার বলতে শুরু করল, আমি প্রতিবেশীর দিকে মুছাফাহার জন্য হাত বাড়াইনি তাই আপনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আমিও প্রতিদিন যখন দেখি, আল্লাহ আপনার দিকে দিন-রাত হাত প্রসারিত করছেন, কিন্তু আপনি তওবা করছেন না তখন খুব ভয় পাই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা রাতে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে দিনে পাপকারী তওবা করে। আবার তিনি দিনে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে রাতে পাপকারী তওবা করে। তিনি এভাবে করতে থাকবেন যতদিন না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে (ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে)’(মুসলিম হা/২৭৫৯)। ফাতেমা তার মাকে বলল, দেখেছেন আল্লাহ আপনার দিকে প্রতিদিন দুইবার হাত বাড়িয়ে দেন। অথচ আপনি আপনার হাত গুটিয়ে রাখেন। তওবার মাধ্যমে আপনার হাত বাড়িয়ে দেন না। ফাতেমার কথা শুনে মায়ের চোখ কান্নায় ভিজে গেল।

ফাতেমা আরও বলল, আমি আপনার জন্য আল্লাহর শাস্তির ভয় করি। আপনি ছালাত আদায় করেন না। অথচ আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ছালাতের হিসাব গ্রহণ করবেন। আপনার ছালাতের হিসাব সঠিক না হলে কি পরিণতি হবে তা একবার ভেবে দেখেছেন? আর আপনি বেপর্দা হয়ে বাড়ির বাইরে যান। অথচ আল্লাহ পর্দা ফরয করেছেন। প্রতিবেশীর প্রতি আমার আচরণে আপনি যেমন অপমানবোধ করেছেন, আপনার এভাবে বেপর্দা চলাফেরা সম্পর্কে আমার বান্ধবীরা যখন জানতে চায় তখন আমারও এমন অপমান বোধ হয়।

মায়ের দু’গাল বেয়ে তখন অঝোরে অশ্রু প্রবাহিত হ’ল। ফাতেমাও তার মায়ের সাথে কান্নায় ভেঙে পড়ল। তারপর সে উঠে তার মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তিনি তাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন, আমি তওবা করছি, প্রভু! আমি তওবা করছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করলে কিংবা নিজের উপর কোন যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে। অতঃপর স্বীয় পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কে আছে?’(আলে ইমরান ৩/১৩৫)

শিক্ষা : প্রিয় পাঠক! আপনি যখন এই আয়াতটি পড়ছেন আল্লাহ আপনাকে দেখছেন। আপনার মনের অবস্থাও তিনি জানেন। তিনি আপনার তওবার অপেক্ষায় আছেন। আল্লাহ আমাদের তার দিকে তওবাকারীরূপে দেখতে চান বিশেষ করে আমাদের সুস্থ-সবল ও নিরাপদ অবস্থায়। তওবা করার সুযোগ আপনার কাছে আর নাও আসতে পারে। আগামী বছর এই সময়ের পূর্বে আপনি মৃত্যুবরণ করতে পারেন।

মূল : মুহসিন জববার,

অনুবাদ : নাজমুন নাঈম



আরও