মনুষ্যত্বের ছিন্ন মস্তক
মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
আসাদুল্লাহ আল-গালিব 463 বার পঠিত
১২. ভালো-মন্দ যাচাই করা : ভালো আর মন্দ এক নয়। ভালোকে কেউ গ্রহণ করুক বা না করুক সকলেই তা ভালো বলে স্বীকার করে। যদি কোন ব্যক্তি মন্দকে গ্রহণ করে তা’হলে সেটা তার জন্য জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। সুতরাং জীবনে যে কোন পরিস্থিতিই আসুক না কেন ভালোকেই গ্রহণ করতে হবে। নচেৎ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,لِيَمِيزَ اللهُ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيثَ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ فَيَرْكُمَهُ جَمِيعًا فَيَجْعَلَهُ فِي جَهَنَّمَ أُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ- ‘এটা এ জন্য যে, আল্লাহ মন্দকে ভালো থেকে পৃথক করে নিবেন এবং মন্দগুলিকে একে অপরের উপর জমা করবেন। অতঃপর সবগুলিকে স্তূপ করবেন। অতঃপর সেটিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আর এরাই হ’ল ক্ষতিগ্রস্ত’ (আনফাল ৮/৩৭)।
১৩. হালাল রূযী ভক্ষণ করা : হালাল রূযী ভক্ষণ করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। এই নির্দেশনা আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তঁার প্রত্যেক নবী-রাসূলদের দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ- ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে ভক্ষণ কর এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, সবই আমি অবগত’ (মুমিনূন ২৩/৫১)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা আমভাবে বলেছেন, يَاأَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ- ‘হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ ২/১৬৮)।
১৪. বায়‘আত পূর্ণ করা : কোন ব্যক্তি বায়‘আতবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে তাহ’লে সে নিজের ক্ষতি নিজেই করবে। তথাপি যদি সে বায়‘আত পূর্ণ করে তাহ’লে সে মহান আল্লাহর নিকট থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত হবে। আল্লাহ বলেন,فَمَنْ نَكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا- ‘অতঃপর যে ব্যক্তি বায়‘আত ভঙ্গ করে, সে তার নিজের ক্ষতির জন্যই সেটা করে। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, সত্বর আল্লাহ তাকে মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন’ (ফাৎহ ৪৮/১০)।
১৫. পবিত্র জীবন যাপন করা : একজন মুমিন ব্যক্তির জীবন যাপন হবে পবিত্রতাময়। যা সৎকর্মের মাধ্যমে অর্জিত হবে। আর এর বদৌলতে মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ- ‘পক্ষান্তরে (শিরকমুক্ত) পবিত্র জীবনযাপনকারীদের যখন ফেরেশতারা মৃত্যু ঘটায়, তখন তারা বলে, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হৌক! তোমরা যে সৎকর্ম করতে তার পুরস্কার স্বরূপ তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর’ (নাহল ১৬/৩২)।
১৬. অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা :জান্নাত লাভের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা। আর পরিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী ব্যক্তিরাই কেবল জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বলেন,قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى- وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٌ- ‘নিশ্চয়ই সফল হয় সেই ব্যক্তি, যে পরিশুদ্ধ হয়’। ‘এবং তার প্রভুর নাম স্মরণ করে। অতঃপর ছালাত আদায় করে’ (আলা ৮৭/১৪-১৫)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا- وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا- ‘সফল হয় সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে পরিশুদ্ধ করে’। ‘এবং ব্যর্থ হয় সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে কলুষিত করে’ (শামস ৯১/৯-১০)।
১৭. আমলের ছওয়াব প্রাপ্তিতে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ নেই : আমলের ছওয়াব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ কোন ভেদাভেদ করেন না। নারী-পুরুষ যেই আমল করুক না কেন আল্লাহ তাকে পূর্ণ ছওয়াব প্রদান করবেন। আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘পুরুষ হৌক বা নারী হৌক মুমিন অবস্থায় যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে, আমরা তাকে অবশ্যই পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা অধিক উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)।
১৮. অধিকাংশের রায় মেনে না নেওয়া : হকের পক্ষে লোক সংখ্যা কম থাকলেও তা গ্রহণ করতে হবে। আর বাতিলের পক্ষে লোক সংখ্যা যতই বেশী হোক না কেন তা পরিত্যাগ করতে হবে। হক ব্যতিরেকে অধিকাংশের রায় মেনে নিলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ হ’তে বিচ্যুতির কারণ হয়ে দঁাড়াবে। আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ- ‘অতএব যদি তুমি জনপদের অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহ’লে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুৎ করবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং তারা তো কেবল অনুমান ভিত্তিক কথা বলে’ (আন‘আম ৬/১১৬)।
১৯. চক্রান্তকারীর চক্রান্তে ভয় না পাওয়া : যারা মেধাকে বুদ্ধিবৃত্তিক মন্দ কাজে লাগায়, তারা তাদেরই ফঁাদে পড়ে থাকে। সুতরাং চক্রান্তের শিকার ব্যক্তিদের সামান্য সমস্যা হ’লে আল্লাহ তা দূর করে দিবেন। আল্লাহ বলেন,وَأَقْسَمُوْا بِاللهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَئِنْ جَاءَهُمْ نَذِيرٌ لَيَكُونُنَّ أَهْدَى مِنْ إِحْدَى الْأُمَمِ فَلَمَّا جَاءَهُمْ نَذِيْرٌ مَا زَادَهُمْ إِلَّا نُفُوْرًا- اسْتِكْبَارًا فِيْ الْأَرْضِ وَمَكْرَ السَّيِّئِ وَلَا يَحِيْقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلَّا بِأَهْلِهِ فَهَلْ يَنْظُرُوْنَ إِلَّا سُنَّتَ الْأَوَّلِينَ فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللهِ تَبْدِيْلًا وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللهِ تَحْوِيْلًا- ‘তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর কসম করে বলত যে, তাদের নিকট কোন সতর্ককারী আসলে তারা অন্যসব সম্প্রদায় অপেক্ষা বেশী সুপথের অনুসারী হবে। অতঃপর যখন তাদের কাছে সতর্ককারী (মুহাম্মাদ) এল, তখন তাদের বিমুখতাই কেবল বৃদ্ধি পেল’। ‘জনপদে প্রাধান্য লাভের জন্য এবং কূট চক্রান্তের জন্য। অথচ কূট চক্রান্ত কেবল চক্রান্তকারীকেই বেষ্টন করে। তবে কি তারা তাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস রীতির অপেক্ষা করছে? বস্ত্ততঃ তুমি কখনো আল্লাহর রীতির পরিবর্তন পাবে না এবং তুমি কখনো আল্লাহর রীতির ব্যতিক্রম পাবে না’ (ফাতির ৩৫/৪২-৪৩)।
সুতরাং কখনও চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রের কবলে পড়লে ধৈর্যধারণ করতে হবে। সাথে আল্লাহভীরুতা ও সৎকর্ম আরো বাড়িয়ে দিতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেন, وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللهِ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِمَّا يَمْكُرُوْنَ- إِنَّ اللهَ مَعَ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَالَّذِيْنَ هُمْ مُحْسِنُوْنَ- ‘তুমি ধৈর্যধারণ কর। আর তোমার ধৈর্যধারণ হবে কেবল আল্লাহর সাহায্যে। তাদের উপর দুঃখ করো না এবং তাদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ো না। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন যারা আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ’ (নাহল ১৬/১২৭-২৮)।
আল্লাহ আরও বলেন, إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوْا بِهَا وَإِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لاَ يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطٌ- ‘তোমাদের কোন কল্যাণ স্পর্শ করলে তারা নাখোশ হয়। আর তোমাদের কোন অকল্যাণ হ’লে তারা খুশী হয়। কিন্তু যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও আল্লাহভীরু হও, তাহ’লে ওদের চক্রান্ত তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে, সবই আল্লাহ বেষ্টন করে আছেন’ (আলে-ইমরান ৩/১২০)।
২০. বিদ্রোহী না হওয়া : কোনক্রমেই বিদ্রোহী হওয়া যাবে না। কেননা বিদ্রোহ করলে নিজেরই ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَاالنَّاسُإِنَّمَا بَغْيُكُمْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ - ‘হে মানুষ! তোমাদের বিদ্রোহ তোমাদের জন্যই ক্ষতিকর’ (ইউনুস ১০/২৩)।
২১. চিন্তান্বিত না হওয়া : কখনও হাতাশা-দুশ্চিন্তা আসলে আরও দৃঢ় প্রত্যয়ী হ’তে হবে। কেননা যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক না কেন মুমিন কখনও ভেঙ্গে পড়ে না। আল্লাহ বলেন, وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ- ‘আর তোমরা হীনবল হয়ো না, চিন্তান্বিত হয়ো না। তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও’ (আলে ইমরান ৩/১৩৯)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ- ‘মনে রেখ (আখেরাতে) আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (ইউনুস ১০/৬২)।
২২. দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে করা : দুনিয়ার চাকচিক্যকে নগণ্য মনে করা এবং আখেরাতের জীবনে চুড়ান্ত সাফল্য লাভের আশা পোষণ করা। সুতরাং সকল পথ ও মতকে পরিত্যাগ করে একমাত্র ইলাহী পথ ছিরাতে মুস্তাকিমের পথকে আকড়ে ধরতে হবে। আল্লাহ বলেন,وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ- ‘আর এটিই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না। তাহ’লে তা তোমাদেরকে তঁার পথ থেকে বিচ্যুৎ করে দিবে। এসব বিষয় তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা সতর্ক হও’ (আন‘আম ৬/১৫৩)।
আল্লাহ বলেন, قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا- ‘তুমি বল, দুনিয়ার সম্পদ তুচ্ছ। আর আখেরাতই হ’ল মুত্তাক্বীদের জন্য উত্তম। সেদিন তোমরা সুতা পরিমাণও অত্যাচারিত হবে না’ (নিসা ৪/৭৭)।
২৩. ফাসেক ব্যক্তির কথা যাচাই-বাছাই করা : যে সংবাদই আসুক না কেন সকলের উচিত সর্বাগ্রে তা যাচাই-বাছাই করে নেওয়া। তারপর পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কেননা সংবাদদাতা যদি ফাসেক হয়, তাহ’লে ক্ষতি সাধন হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ- ‘হে মুমিনগণ! যদি কোন ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের নিকট কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা সেটা যাচাই কর, যাতে অজ্ঞতাবশে তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধন না করে বস। অতঃপর নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হও’ (নূহ ৪/৬)।
২৪. সত্য কথা বলা : সত্য কথা যে কোন পরিস্থিতে বলতে হবে। কেননা প্রকৃত কল্যাণ সত্য বলার মধ্যেই রয়েছে। সত্য বলা এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা মানুষকে ক্বিয়ামতের দিন মুক্তি দান করবে। আল্লাহ বলেন,قَالَ اللهُ هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ- ‘আল্লাহ বলবেন, এটা সেই দিন যেদিন সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের কাজে আসবে। তারা জান্নাত প্রাপ্ত হবে, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আর এটাই হ’ল মহা সফলতা’ (মায়েদাহ ৫/১১৯)।
আর আল্লাহ সত্যবাদীদের মহান পুরষ্কার প্রদান করবেন। তিনি বলেন,إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ... أَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا- ‘নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী,... এদের জন্য আল্লাহ প্রস্ত্তত রেখেছেন ক্ষমা ও মহা পুরস্কার’ (আহযাব ৩৩/৩৫)।
২৪. আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা : মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর উপর সর্বাবস্থায় ভরসা রাখে। কেননা তাক্বদীরে মহান আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তা-ই তিনি প্রদান করবেন। এজন্য একজন প্রকৃত মুমিন কোন কিছু প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্ধারিত ফায়ছালা মেনে নেয়। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ- ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পেঁŠছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’ (তাওবা ৯/৫১)।
২৫. শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত হওয়া : মুমিন ব্যক্তিকে হ’তে হবে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। মুমিন ব্যক্তি যে কোন কাজের প্রতি যত্নবান ও দক্ষ হবেন। আর তাতে বিশ্বস্ততা থাকলে সফলতা আসা অবশ্যই সম্ভব। মাদইয়ানবাসীদের নিকটে প্রেরিত বিখ্যাত নবী হযরত শু‘আয়েব (আঃ)-এর কন্যা মূসা (আঃ) সম্পর্কে বলেছিলেন,يَاأَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ- ‘হে পিতা! একে কর্মচারী নিযুক্ত করুন! নিশ্চয়ই আপনার কর্মসহায়ক হিসাবে সেই ব্যক্তি উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত’ (ক্বছাছ ২৮/২৬)।
মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ- ذِي قُوَّةٍ عِنْدَ ذِي الْعَرْشِ مَكِينٍ- مُطَاعٍ ثَمَّ أَمِينٍ- ‘নিশ্চয় এই কুরআন সম্মানিত বাহকের (জিব্রীলের) আনীত বাণী’। যিনি শক্তিশালী এবং আরশের অধিপতির নিকটে মর্যাদাবান’। ‘যিনি সকলের মান্যবর ও সেখানকার বিশ্বাসভাজন’ (তাকভীর /১৯-২১)। আল্লাহ বলেন,قَالَ اجْعَلْنِي عَلَى خَزَائِنِ الْأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ- ‘ইউসুফ বলল, আপনি আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বে নিযুক্ত করুন। নিশ্চয়ই আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও বিজ্ঞ’ (ইউসুফ ১২/৫৫)।
আল্লাহ তা‘আলা শক্তি বা ক্ষমতা ও বিশ্বস্ততার উদাহরণ দিয়ে বলেন,قَالَ يَاأَيُّهَا الْمَلَأُ أَيُّكُمْ يَأْتِينِي بِعَرْشِهَا قَبْلَ أَنْ يَأْتُونِي مُسْلِمِينَ- قَالَ عِفْرِيتٌ مِنَ الْجِنِّ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ تَقُومَ مِنْ مَقَامِكَ وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ- قَالَ الَّذِي عِنْدَهُ عِلْمٌ مِنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهُ، ‘সুলায়মান বলল, হে আমার সভাসদবর্গ! তোমাদের মধ্যে কে আছ যে আমার কাছে রাণীর সিংহাসনটা নিয়ে আসবে, তারা আত্মসমর্পণ করে আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার আগেই? ‘তখন শক্তিশালী এক জিন নেতা বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার পূর্বেই আমি ওটা আপনার কাছে এনে দিব। আর আমি এ ব্যাপারে অবশ্যই ক্ষমতাশালী ও বিশ্বস্ত’। (অন্যদিকে) কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, তুমি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি ওটা তোমার কাছে এনে দিব। অতঃপর সুলায়মান যখন সেটিকে তার সামনে স্থির হ’তে দেখল, তখন বলল, এটি আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ’ (সূরা নমল ২৭/৩৮-৩৯)। সুতরাং যে যত বেশী দক্ষ ও অভিজ্ঞ হবেন তিনি তত অগ্রাধিকার পাবেন।
২৬. প্রচেষ্টার মাধ্যমে সফলতা : কোন কিছু অর্জন করতে হ’লে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। বিনা পরিশ্রমে কোন কিছুই অর্জিত হয় না। আল্লাহ বলেন,وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى- ‘আর মানুষ কিছুই পায় না তার চেষ্টা ব্যতীত।’ (নজম ৫৩/৩৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে’ (রা‘দ ১৩/১১)।
(ক্রমশঃ)
আসাদুল্লাহ আল-গালিব
[কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]