ড. রবার্ট ডিকসন ক্রেন-এর ইসলাম গ্রহণ

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 466 বার পঠিত

[হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক উপ-পরিচালক ও মার্কিন যুক্তরাষ্টের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদদের অন্যতম ড. রবার্ট ডিকসন ক্রেন ১৯২৯ সালের ১২ই মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছয়টি ভাষায় পারদর্শী ড. রবার্ট ক্রেন ১৯৮০ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। পরে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ফারুক আব্দুল হক। ইসলাম গ্রহণের পর আমেরিকাসহ সমগ্র বিশ্বে ইসলামের সুমহান বাণী সমুন্নত করতে তিনি সার্বিক প্রচেষ্টা চালান। ২০২১ সালের ১২ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন]

১৯৪৫ সালে ১৬ বছর বয়সে তিনি আন্তর্জাতিক সাংবাদিক হওয়ার প্রথম ধাপ হিসাবে রাশিয়ান ভাষা অধ্যয়নের জন্য বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে অধিকৃত জার্মানির কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতিপ্রাপ্ত প্রথম আমেরিকান হিসাবে তিনি মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। জার্মানিতে থাকাকালীন তিনি ধর্মীয় সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন এবং সর্বগ্রাসী শাসন এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের আধ্যাত্মিক গতিশীলতার উপর একটি বই প্রস্ত্তত করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে ড. ক্রেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক আইন ব্যবস্থায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। হার্ভার্ড সোসাইটি অব ইন্টারন্যাশনাল ল-এর তিনি প্রথম সভাপতি হন। তখন তিনি আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ও হার্ভার্ড জার্নাল ফর ইন্টারন্যাশনাল ল প্রতিষ্ঠা করেন। পাবলিক ও আন্তর্জাতিক আইন এবং তুলনামূলক আইনে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ড. রবার্ট ক্রেন ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ অ্যাডভাইজারি সেন্টারে প্রায় এক দশক ধরে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপ-পরিচালক নিযুক্ত করেন।

প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্দেশে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইসলামী মৌলবাদ ও ইসলাম বিষয়ক একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন তৈরী করে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সময়ের অভাবে তিনি ড. ক্রেনকে এ প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত করার দায়িত্ব দেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। ইসলাম সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন তাকে মুগ্ধ করে। এভাবে ইসলামের প্রতি তার প্রাথমিক আকর্ষণ ও মুগ্ধতার শুরু হয়।

১৯৮০ সালে সরকারের নির্দেশে তিনি বিভিন্ন ইসলামী সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন ইসলামী স্কলার ও দাঈদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল সুদানের প্রখ্যাত মুসলিম স্কলার ড. হাসান তুরাবী।

এক সেমিনারে শায়েখ তুরাবী ইসলামের পরিচয়মূলক দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। এরপর শায়েখকে তিনি ছালাতে সিজদারত অবস্থায় দেখে প্রথমে ভাবলেন, এভাবে বিনয় ও অসহায়ত্ব প্রকাশ ব্যক্তি ও মানবতার জন্য চরম অবমাননাকর। কিন্তু যখন তিনি চিন্তা করলেন, শায়েখ হাসান তুরাবী তো স্রষ্টার জন্য মাথা ঝুঁকাচ্ছেন, স্রষ্টার দরবারে সিজদা করছেন, তখন নিশ্চিত হ’লেন, এটাই সঠিক কাজ। উপরন্তু দামেস্কের অধ্যাপক রোজিয়া গ্যারৌদির সঙ্গে সাক্ষাতে ইসলাম নিয়ে আলোচনা করেন। রোজিয়ার চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি স্থির করেন, ইসলামই সব সমস্যার সমাধান। ইসলামী শরী‘আতের বিধি-বিধান রাষ্ট্রীয়, সামজিক ও ব্যক্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও ন্যায়নীতি বিদ্যমান।

একজন আইনজীবী হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে মানব রচিত আইনের অসারতা দেখে তিনি এরকম মূলনীতির পিছনে ছুটছিলেন। তিনি চিন্তা দেখলেন, তার প্রত্যাশিত সবকিছুই ইসলামে বিদ্যমান। এভাবে ইসলামের প্রতি তিনি অনুপ্রাণিত হ’তে থাকেন। সবশেষে ১৯৮০ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আর ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেন।

তিনি বলেন, আইনের ছাত্র হিসাবে আমি যেসব আইন অধ্যয়ন করেছি, তার সবকিছু ইসলামে পেয়েছি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বছরের অধ্যয়ন সময়ে আইনের বইগুলোতে সামগ্রিক অর্থে আদালত বা ন্যায়বিচার-ন্যায়নীতির খেঁাজ পাইনি। অথচ ইসলামী বিচার ব্যবস্থা প্রকৃত ন্যায়ের মানদন্ডে প্রতিষ্ঠিত। আর তাতে মুগ্ধ হয়ে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।

ইসলাম গ্রহণের পর থেকে ড. ফারুক আব্দুল হক আমেরিকায় ইসলামের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। দক্ষিণ আমেরিকায় ইসলামের ভবিষৎ নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে ২৯শে আগস্ট থেকে ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আমেরিকার ইত্তিহাদে ইসলামীর ২৪তম কনফারেন্সে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তবনা পেশ করেন। ইসলাম নিয়ে পক্ষপাত ও বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি যেভাবে পশ্চিমাদের সমালোচনা করেন, ঠিক তেমনিভাবে প্রাচ্য বা প্রতীচ্যের যেসব মুসলমান ইসলামী বিধান বুঝে না বা বুঝেও বাস্তবায়ন করে না তাদেরও কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, পশ্চিমে বসবাসরত অনেক মুসলমান ইসলামের নিয়ম-কানুন মেনে জীবন যাপন করে না। তাই অমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। [সূত্র : ইন্টারনেট]




আরও