মৃত্যুর জন্য উত্তম প্রস্ত্ততি
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
শরীফুল ইসলাম মাদানী 626 বার পঠিত
ভূমিকা : আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলূকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর তাদের সার্বিক জীবন পরিচালনার জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করে তার যাবতীয় বিধি-বিধান অহি মারফত জানিয়ে দিয়েছেন। অতএব আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম বাস্তবায়িত হবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রদর্শিত পদ্ধতিতে। সুতরাং একজন ব্যক্তির চুড়ান্ত সফলতা অর্জনের একমাত্র মুক্তির সোপান ইত্তিবায়ে সুন্নাহকে নিজের জীবনে আকড়ে ধরা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই আল্লাহ তা‘আলা দ্বীন-ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। যার মধ্যে সামান্যতম সংযোজন-বিয়োজন করার অধিকার পৃথিবীর কোন মানুষকে দেওয়া হয়নি। নিম্নে ইত্তিবায়ে সুন্নাহর গুরুত্ব আলোচনা করা হ’ল।
(১) ইবাদত কবুলের মাধ্যম : ইবাদত কবুলের অন্যতম মাধ্যম হ’ল ইত্তিবায়ে সুন্নাহর অনুসরণ করা। অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ)-এর আনীত বিধি-বিধান পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করা। কেননা কোন ব্যক্তি যদি কুরআন মানে আর হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহ’লে সে কখনই অহির প্রকৃত মর্মমূলে আসতে পারবে না। আর এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ- ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহ্কে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর’ (হাশর ৫৯/৭)।
এ আয়াতে আল্লাহর নির্দেশ হ’ল, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যতটুকু নিয়ে এসেছেন ততটুকু মানতে হবে। তথাপি আনীত বিধানের বাইরে কোন কিছুই গ্রহণীয় নয়। আল্লাহ বলেন,فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ- ‘যারা তাঁর (রাসূলের) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা এ ব্যাপারে সতর্ক হৌক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (নূর ২৪/৬৩)।
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ করবে তাদের উপর বিপর্যয় ও আযাব নেমে আসবে। অতএব মানুষ যেন তার প্রতিটি কথা ও কর্ম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কথা ও কর্মের আলোকে বিশ্লেষণ করে। যেগুলো তাঁর কথা ও কর্মের সাথে মিলে যাবে সেগুলো কেবল গ্রহণ করবে। আর যা মিলবে না তা প্রত্যাখ্যাত করবে’।[1]
আর এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত’।[2] তিনি আরো বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[3]
সুফিয়ান ইবনু উয়ায়নাহ (রহঃ) বলেন,إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم هُوَ المِيْزَانُ الْأَكْبَرُ، فَعَلَيْهِ تُعْرَضُ الْأَشْيَاءُ، عَلَى خُلُقِهِ وَسِيْرَتِهِ وَهَدْيِهِ، فَمَا وَافَقَهَا فَهُوَ الْحَقُّ، وَمَا خَالَفَهَا فَهُوَ الْبَاطِلُ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হ’লেন সবচেয়ে বড় মানদন্ড। অতএব সকল কিছুই রাসূল (ছাঃ)-এর চরিত্র, পথ-পদ্ধতি ও নীতিমালার উপর পেশ করতে হবে। যা তার সাথে মিলে যাবে তাই কেবল হক বলে গণ্য হবে। আর যা তার বিপরীত হবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে’।[4]
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) বলেন,كُلُّ عِبَادَةٍ لَمْ يَتَعَبَّدْهَا أَصْحَابُ رَسُوْلِ الله صلى الله عليه وسلم فَلاَ تَعْبُدُوْهَا فَإِنَّ الأَوَّلَ لَمْ يَدَعْ لِلْآخِرِ مَقَالاً فَاتَّقُوْا اللهَ يَا مَعْشَرَ القُرَّاء وَخُذُوْا بِطَرِيْقِ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ- ‘যে সকল ইবাদত রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ করেননি, সে সকল ইবাদত তোমরাও করো না। কেননা পূর্ববর্তী লোকেরা পরবর্তী লোকদের জন্য কোন অসম্পূর্ণতা রেখে যান না। অতএব হে মুসলিম সমাজ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পূর্ববর্তীদের রীতি-নীতি গ্রহণ কর’।[5]
ফুযায়েল ইবনু ইয়ায (রহঃ) বলেন, إنَّ الْعَمَلَ إذَا كَانَ خَالِصًا وَلَمْ يَكُنْ صَوَابًا لَمْ يُقْبَلْ، وَإِذَا كَانَ صَوَابًا وَلَمْ يَكُنْ خَالِصًا لَمْ يُقْبَلْ، حَتَّى يَكُوْنَ خَالِصًا صَوَابًا، وَالْخَالِصُ أَنْ يَكُوْنَ لِلَّهِ، وَالصَّوَابُ أَنْ يَكُوْنَ عَلَى السُّنَّةِ- ‘আমল খালেছ হ’লেও যদি তা সঠিক না হয়, তাহ’লে তা (আল্লাহর নিকট) কবুল হবে না। আর আমল সঠিক হ’লেও যদি তা খালেছ না হয়, তাহ’লেও তা কবুল হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত আমলটি খালেছ ও সঠিক না হয়। খালেছ হ’ল, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই ইবাদত করা আর আমলের শুদ্ধতা হ’ল, রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী হওয়া’।[6]
অতএব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যতটুকু ইবাদত করেছেন, করতে বলেছেন এবং সমর্থন করেছেন, আমাদের জন্য ঠিক ততটুকু ইবাদতই পালনীয়। আর রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত বহির্ভূত আমল মানুষের নিকট যতই ভালো কাজ হিসাবে বিবেচিত হোক না কেন তা অবশ্যই বর্জনীয়।
হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি আমাকে এমন কিছু আমলের কথা বলে দিন, যে আমলগুলি করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। ফরয ছালাত সমূহ আদায় করবে। নির্ধারিত যাকাত প্রদান করবে এবং রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করবে। লোকটি বলল, ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ (আপনি যতটুকু ইবাদতের কথা বললেন) আমি কখনো এর চেয়ে সামান্যতম বেশী করব না এবং সামান্যতম কমও করব না। অতঃপর লোকটি চলে গেলে রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘যে ব্যক্তি কোন জান্নাতী লোককে দেখতে চায় সে যেন এই লোকটিকে দেখে’।[7]
অত্র হাদীছে উল্লিখিত রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে আগমনকারী বেদুঈন লোকটি পূর্বে তেমন কোন আমল করেনি। হঠাৎ এসে কিছু আমলের কথা জানতে চাইল। যে আমলগুলোর মাধ্যমে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। রাসূল (ছাঃ) তাকে কিছু আমলের কথা বলে দিলেন। লোকটি চলে যাওয়ার সাথে সাথে রাসূল (ছাঃ) তাকে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিলেন। অথচ লোকটি সেই আমলগুলো শুরুই করতে পারেনি। এর কারণ হ’ল, লোকটি বলেছিল, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে যতটুকু আমলের কথা বললেন, আমি ততটুকুই পালন করব। এর থেকে সামান্যতম বেশী করব না এবং কমও করব না’। এই একটি কথার কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিলেন।
অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা তিন জনের একটি দল রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের বাড়ীতে আসল। তারা রাসূল (ছাঃ)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীরা যখন তাদেরকে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে সংবাদ দিলেন তখন তারা এটিকে কম মনে করল। অতঃপর বলল, রাসূল (ছাঃ) কোথায় আর আমরা কোথায়? তাঁর পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তারপর তিনজনের একজন বলল, আমি প্রত্যহ সারা রাত জেগে ছালাত আদায় করব। অপর ব্যক্তি বলল, আমি প্রতিদিন ছিয়াম পালন করব, কখনো ছিয়াম ত্যাগ করব না। অপর ব্যক্তি বলল, আমি কোন নারীর নিকটবর্তী হব না এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হব না। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদের নিকট আসলেন এবং বললেন, ‘তোমরাই কি তারা, যারা এরূপ এরূপ মন্তব্য করেছ? সাবধান! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের চাইতে আল্লাহকে বেশী ভয় করি এবং আমি সবচেয়ে বেশী পরহেযগার। কিন্তু আমি রাত্রের কিছু অংশে (নফল) ছালাত আদায় করি এবং কিছু অংশ ঘুমাই। কোন কোন দিন (নফল) ছিয়াম পালন করি এবং কোন কোন দিন ছিয়াম ত্যাগ করি। আর আমি বিবাহ করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হ’তে বিমুখ হবে (সুন্নাত পরিপন্থী আমল করবে) সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[8]
অত্র হাদীছে উল্লিখিত তিন জন ছাহাবীর কারো উদ্দেশ্যই খারাপ ছিল না। পর্যাপ্ত ছালাত আদায় করা, ছিয়াম পালন করা অবশ্যই ভালো কাজ। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করাই তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। আরেকজন বিবাহ না করে সর্বদা আল্লাহর ইবাদত করতে চেয়েছিল, তার উদ্দেশ্যও ভালো ছিল। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয় এমন কোন ভালো কাজ ইসলামী শরী‘আতে বৈধ হ’লে, সেদিন তিনি উল্লিখিত তিন ব্যক্তিকে হুঁশিয়ার করতেন না। বরং তাদেরকে আরো উৎসাহিত করে বলতেন, তোমরা খুব ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছ। তোমরা আরো বেশী বেশী ইবাদত করে যাও। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে এরূপ উৎসাহ না দিয়ে হুঁশিয়ার করে দিলেন যে, তোমাদের ইবাদত যদি আমার সুন্নাত পরিপন্থী হয় তাহ’লে তোমরা আমার উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
অতএব কেবল মানুষের বিবেকের মানদন্ডে ভালো কাজ হলেই তা ভালো কাজ হিসাবে গণ্য হবে না। বরং কোন কাজ ভালো হিসাবে গণ্য হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। (১) কাজটি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী হওয়া (২) কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের বুঝ অনুযায়ী হওয়া (৩) বিদ‘আত মুক্ত হওয়া’।[9] আর কুরআন ও ছহীহ হাদীছ পরিপন্থী কোন আমল ইসলামী শরী‘আতের মানদন্ডে ভালো কাজ নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِيْنَ أَعْمَالاً، الَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِيْ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا- ‘আপনি বলে দিন, আমরা কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে খবর দিব? দুনিয়ার জীবনে যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়েছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমল করে যাচ্ছে’ (কাহফ ১৮/১০৩-১০৪)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা একজন আমলকারীকে ক্ষতিগ্রস্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেননা তার আমলসমূহ মানুষের দৃষ্টিতে ভালো মনে হ’লেও ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে সৎ আমল নয়।
(২) জান্নাত লাভের মাধ্যম : ইত্তিবায়ে সুন্নাত তথা রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী ইবাদত করার মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوْهٌ فَأَمَّا الَّذِيْنَ اسْوَدَّتْ وُجُوْهُهُمْ أَكَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ فَذُوْقُوْا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ- ‘যেদিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং কিছু চেহারা বিবর্ণ হবে। অতঃপর যাদের চেহারা বিবর্ণ হবে, তাদের বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কাফের হয়েছিলে? অতএব তোমরা এখন অবিশ্বাসের শাস্তি ভোগ কর’ (আলে-ইমরান ৩/১০৬)।
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তাঁর হ’লেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত তথা সুন্নাতের অনুসারীগণ। আর যাদের মুখ কালো হবে তারা হ’ল, বিদ‘আতীরা’।[10]
রাসূল (ছাঃ) বলেন,كُلُّ أُمَّتِيْ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِيْ دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ أَبَى- ‘আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু অস্বীকারকারী ব্যতীত। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হয় সে-ই অস্বীকার করে’।[11]
(৩) আল্লাহকে ভালোবাসা লাভের মাধ্যম : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ- قُلْ أَطِيْعُوْا اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِيْنَ- ‘বল, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। বল, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ তো কাফেরদেরকে পসন্দ করেন না’ (আলে ইমরান ৩/৩১-৩২)।
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘অত্র আয়াতটি ঐ সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফায়ছালাকারী, যারা আল্লাহ্কে ভালোবাসার দাবী করে, অথচ মুহাম্মাদী তরীকার উপরে নেই। ঐ ব্যক্তি তার দাবীতে নিরেট মিথ্যাবাদী, যতক্ষণ না সে তার প্রত্যেকটি কথায় ও কর্মে মুহাম্মাদী শরী‘আতের আনুগত্য করে’।[12]
(৪) পূর্ণ মুমিন হওয়ার মাধ্যম : হাদীছে এসেছে,عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ- ‘আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, তার সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তর হব’।[13]
একদা ওমর ফারূক (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন,يَا رَسُوْلَ اللهِ لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ إِلاَّ مِنْ نَفْسِيْ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لَا وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ فَإِنَّهُ الْآنَ وَاللهِ لأَنْتَ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ نَفْسِيْ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم الْآنَ يَا عُمَرُ- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার জীবন ছাড়া আপনি আমার নিকট সবকিছু অপেক্ষা অধিক প্রিয়। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, না, যঁার হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম! তোমার কাছে আমি তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় না হওয়া পর্যন্ত (পূর্ণ মুমিন হ’তে পারবে না)। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশী প্রিয়। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে ওমর! এখন (তুমি সত্যিকার ঈমানদার হ’লে)’।[14]
আর দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে অধিক ভালোবাসার প্রমাণ হ’ল, তাঁর সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا دُعُوْا إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ- وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَائِزُوْنَ- ‘মুমিনদের উক্তি তো এই যে, যখন তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আর তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হ’তে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম’ (নূর ২৪/৫১-৫২)।
(৫) তাক্বওয়া অর্জনের মাধ্যম : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ- ‘এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটাতো তার হৃদয়ের তাক্বওয়ারই বহিঃপ্রকাশ’ (হজ্জ ২২/৩২)। অত্র আয়াতে বর্ণিত شَعَائِرَ اللهِ বলতে আল্লাহর নির্দেশকে বুঝানো হয়েছে, যার অন্যতম হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করা। অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণ করা।
উল্লিখিত আলোচনায় প্রমাণিত হয় যে, মানুষের জন্য একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তি হ’ল অহির বিধান এবং একমাত্র অনুকরণীয় ইমাম হ’লেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অহির বিধান হিসাবে একমাত্র কুরআন ও সুন্নাতকেই আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। তিনি বলেন,تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ، لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ- ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে দু’টিকে অঁাকড়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হ’ল, আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত’।[15] তিনি আরো বলেন,قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا، لاَ يَزِيْغُ عَنْهَا بَعْدِيْ إِلاَّ هَالِكٌ-‘আমি তোমাদেরকে একটি উজ্জ্বল পরিষ্কার দ্বীনের উপর রেখে গেলাম। যার রাত দিনের মতই (উজ্জ্বল)। ধ্বংসশীল ব্যক্তি ছাড়া কেউই তা থেকে সরে আসতে পারে না’।[16]
অতএব মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালিত হবে একমাত্র অহির বিধান তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী। অহির বিধানকে বাদ দিয়ে অন্য কোন পথের অনুসরণ করলে মানুষ সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হবে। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,خَطَّ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَطًّا ثُمَّ قَالَ هَذَا سَبِيْلُ اللهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوْطاً عَنْ يَمِيْنِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ هَذِهِ سُبُلٌ مُتَفَرِّقَةٌ عَلَى كُلِّ سَبِيْلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُوْ إِلَيْهِ- ‘আমাদেরকে (বুঝানোর জন্য) রাসূল (ছাঃ) একটি সরল রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর রাস্তা। অতঃপর এর ডানে-বামে আরো কতগুলি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলিও রাস্তা; তবে এর প্রত্যেক রাস্তার উপর একটি করে শয়তান দঁাড়িয়ে আছে; সে লোকদেরকে সেদিকে আহবান করে। অতঃপর (এর প্রমাণে কুরআনের এই আয়াতটি) তেলাওয়াত করলেন,وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْماً فَاتَّبِعُوْهُ وَلاَ تَتَّبِعُوْا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهِ ‘এটাই আমার সরল-সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এটারই অনুসরণ করবে এবং অন্যান্য পথগুলোর অনুসরণ করবে না, করলে এটা তোমাদেরকে তাঁর পথ হ’তে বিচ্ছিন্ন করে দেবে’ (আন‘আম ৬/১৫৩)।[17]
অন্য হাদীছে এসেছে, জাবের (রাঃ) বলেন, ‘একদা একদল ফেরেশতা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। তিনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ফেরেশতাগণ পরস্পরে বললেন, তোমাদের এই বন্ধুর জন্য একটি উদাহরণ রয়েছে। তাঁর নিকট উদাহরণটি পেশ কর। তখন কেউ বললেন, তিনি ঘুমন্ত। আবার কেউ বললেন, তাঁর চক্ষু ঘুমন্ত হ’লেও তাঁর অন্তর জাগ্রত। তখন তাদের কেউ বললেন, তাঁর উদাহরণ এই যে, এক ব্যক্তি একটি ঘর প্রস্ত্তত করেছেন এবং খাদ্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। অতঃপর (লোকদেরকে আহবান করার জন্য) একজন আহবায়ক পাঠালেন। এখন যে ব্যক্তি আহবায়কের আহবানে সাড়া দিল, সে ঘরে প্রবেশ করতে পারল এবং খাদ্য খেতেও পেল। আর যে আহবায়কের আহবানে সাড়া দিল না, সে ঘরেও প্রবেশ করতে পারল না, খেতেও পেল না। অতঃপর তারা পরস্পরে বললেন, তঁাকে এ উদাহরণের তাৎপর্য বলে দাও, যাতে তিনি বুঝতে পারেন।
তারা বললেন, ঘরটি হচ্ছে জান্নাত, আর আহবায়ক হচ্ছেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)। সুতরাং ‘যে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ (ছাঃ) হ’লেন মানুষের মাঝে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের মানদন্ড’।[18] সুতরাং ক্বিয়ামতের বিভীষিকাময় দিনে ইত্তিবায়ে সুন্নাহ একমাত্র অনুসারী ব্যক্তিরাই রাসূল (ছাঃ) শাফা‘আত লাভে ধন্য হবে। আর সুন্নাহ প্রত্যাক্ষাণকারী ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলবেন, سحقا سحقا لمن غير بعدي- ‘দূর হও! দুর হও! যে ব্যক্তি আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ’।[19]
উপসংহার : সার্বিক জীবনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ইত্তিবায়ে সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। তবেই তো আমরা আমাদের কাঙ্খিত জান্নাত অর্জন করতে পারব। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদের সকলকে যথাযথভাবে ইত্তিবায়ে সুন্নাত বুঝার ও তদানুযায়ী আমল করার এবং এর বিনিময়ে জান্নাত অর্জনের তওফীক দান করুন।- আমীন!
-মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম
[লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]
[1]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৩/৩০৮ পৃ., উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[2]. মুসলিম হা/১৭১৮।
[3]. বুখারী হা/২৬৯৭; মুসলিম হা/১৭১৮; মিশকাত হা/১৪০।
[4]. খতীব বাগদাদী, আল-জামে‘ লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে‘ হা/৮।
[5]. আবু ইসহাক আশ-শাতেবী, আল-ই‘তিছাম ২/১৩২; নাছিরুদ্দীন আলবানী, আত-তাওয়াস্সুল, ১/১৬ পৃ.।
[6]. শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া, আল-‘উবূদিয়াহ ২/৪৭৬ পৃ.; ড. সাইয়েদ আব্দুল গনী, আল-আক্বীদাতুছ ছাফিয়া লিল ফিরক্বাতিন নাজিয়াহ, পৃ. ২৫৯।
[7]. বুখারী হা/১৩৯৭; মুসলিম হা/১৪; মিশকাত হা/১৪।
[8]. বুখারী হা/৫০৬৩; মিশকাত হা/১৪৫, ‘কিতাব ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।
[9]. তাফসীরুল কুরআন (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় সংষ্করণ, মে ২০১৩), পৃ. ৪৬৪।
[10]. তাফসীর ইবনু কাছীর ২/৯২ পৃ.; উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[11]. বুখারী হা/৭২৮০, ‘কুরআন ও সান্নাহকে অঁাকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১৪৩।
[12]. তাফসীর ইবনু কাছীর ২/৩২ পৃ.; উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[13]. বুখারী হা/১৫, ‘ঈমান’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৪৪; মিশকাত হা/৭।
[14]. বুখারী হা/৬৬৩২, ‘শপথ ও মানত’ অধ্যায়।
[15]. মুওয়াত্তা মালেক হা/৩৩৩৮, মিশকাত হা/১৮৬, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অঁাকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১/১৩২ পৃ.; আলবানী, সনদ হাসান।
[16]. ইবনু মাজাহ হা/৪৩, ‘খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের অনুসরণ’ অনুচ্ছেদ; সিলসিলা ছহীহা হা/৯৩৭।
[17]. মুসনাদে আহমাদ হা/৪১৪২; মিশকাত হা/১৬৬, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অঁাকড়ে ধরা’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১/১২৩ পৃ.; আলবানী, সনদ হাসান।
[18]. বুখারী হা/৭২৮১, ‘কুরআন ও সান্নাহকে অঁাকড়ে ধরা’ অনুচ্ছে; মিশকাত হা/১৪৪।
[19]. বুখারী হা/৬৫৮৪; মুসলিম হা/২৬; মিশকাত হা/৫৫৭১।