ইসলামের দৃষ্টিতে শিশু অধিকার
আযীযুর রহমান
মুহাম্মাদ তোফায়েল আহমাদ 416 বার পঠিত
উপস্থাপনা : আরবী শব্দ ইছলাহ (إصلاح)-এর পঁাচের অধিক অর্থ রয়েছে। যেমন- সংশোধন করা, সৎকাজ করা, বিরোধ মীমাংসা করা, উন্নতিসাধন করা, বন্ধুত্ব স্থাপন করা ইত্যাদি। কুরআন-হাদীছেও একাধিক অর্থে ইছলাহ শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়। তন্মধ্যে আত্মসংশোধন ও পারস্পরিক সন্ধি অন্যতম। নিজের ভুল সংশোধন ও দু’ভাইয়ের মাঝে পারস্পরিক সন্ধির মাধ্যমে সুসম্পর্ক স্থাপন চরিত্রের দু’টি মহৎ গুণ, যা আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আলোচ্য প্রবন্ধে আত্মসংশোধন ও পারস্পরিক সন্ধির গুরুত্ব ও পদ্ধতি আলোকপাত করা হ’ল।
আত্মসংশোধনের গুরুত্ব :
জীবন পরিক্রমায় মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ভুল বা অন্যায় করে থাকে। আর মানুষ হিসাবে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ভুল বুঝতে পেরে সেখান থেকে ফিরে আসা একজন উত্তম মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلُّ بَنِي آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। আর সর্বোত্তম ভুলকারী তারাই, যারা সর্বাধিক তওবাকারী’।[1] সুতরাং আত্মসংশোধন বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে।
(১) আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া লাভ : অজ্ঞতাবশে মন্দ কাজের পর তওবার মাধ্যমে আত্মসংশোধন করলে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া লাভ হয়। আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অজ্ঞতাবশে কোন মন্দ কাজ করে, অতঃপর যদি সে তওবা করে ও নিজেকে সংশোধন করে, তাহ’লে তিনি (তার ব্যাপারে) ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আন‘আম ৬/৫৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,فَمَنْ تَابَ مِنْ بَعْدِ ظُلْمِهِ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللهَ يَتُوْبُ عَلَيْهِ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ ‘অতঃপর সীমালংঘন করার পর কেউ তওবা করলে ও নিজেকে সংশোধন করলে নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (মায়েদাহ ৫/৩৯)। সুতরাং তওবা কবুলের জন্য নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সংশোধন করতে হবে। আর কখনই সেই মন্দ কাজে না জড়ানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। যদি তওবার সাথে মন্দ কাজও চলমান থাকে, তাহ’লে তওবা কবুল হবেনা।
(২) ভয় ও চিন্তা থেকে মুক্তি : যখন কোন ব্যক্তির মধ্যে পাপ থাকে, তখন সে ভীত ও চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হ’ল আত্মসংশোধন করে নেওয়া। আল্লাহ বলেন, فَمَنْ آمَنَ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‘অতঃপর যারা ঈমান আনে ও নিজেদের সংশোধন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (আন‘আম ৬/৪৮)।
আত্মসংশোধনের পদ্ধতি :
(১) অন্যায়ের পরপরই তওবা করা ও ভালো কাজ করা : আল্লাহ বলেন,ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ عَمِلُوا السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَحِيمٌ ‘অতঃপর যারা অজ্ঞতাবশে কোন অন্যায় করে, অতঃপর তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে, তোমার পালনকর্তা এসবের পরও তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নাহল ১৬/১১৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,إِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا وَأَصْلَحُوْا وَبَيَّنُوْا فَأُوْلَئِكَ أَتُوْبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ ‘তবে যারা তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে এবং সত্য প্রকাশ করে দেয়, আমি তাদের তওবা কবুল করব। আর আমিই সর্বাধিক তওবা কবুলকারী ও দয়ালু’ (বাক্বারাহ ২/১৬০)।
আবু যর (রাঃ) একদিন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে উপদেশ দিন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ ‘তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর’।[2]
(২) সত্য ও সঠিক কথা বলা : আল্লাহর একনিষ্ঠ ভয় ও সঠিক কথা বলার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বান্দার পাপসমূহ ক্ষমা করেন এবং মন্দ কর্মগুলো সংশোধন করে দেন। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا- يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’। তাহ’লে তিনি তোমাদের কর্মসমূহকে সংশোধন করে দিবেন ও তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন’ (আহযাব ৩৩/৭০-৭১)।
(৩) অন্যকে সংশোধন করা : আত্মসংশোধনের পাশাপাশি অন্যদের সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الْمُؤْمِنُ مِرْآةُ أَخِيهِ، إِذَا رَأَى فِيْهَا عَيْبًا أَصْلَحَهُ ‘একজন মুমিন তাঁর ভাইয়ের জন্য আয়নাস্বরূপ। সে তার কোন ভুল দেখলে সংশোধন করে দেয়’।[3] সুতরাং কোন দ্বীনী ভাইয়ের মধ্যে ভুল পরিলক্ষিত হওয়ার পরও যদি তাকে সংশোধন না করা হয়, তাহ’লে সে পরিপূর্ণ মুমিন নয়।
(৪) সংশোধনের নামে বিশৃংখলা তৈরী না করা : সংশোধন করতে গিয়ে বিশৃংখলা তৈরী যেন না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। যেমন আল্লাহ হযরত মূসা ও হারূন (আঃ)-এর মাধ্যমে যার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,وَوَاعَدْنَا مُوْسَى ثَلَاثِينَ لَيْلَةً وَأَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيْقَاتُ رَبِّهِ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً وَقَالَ مُوْسَى لِأَخِيْهِ هَارُوْنَ اخْلُفْنِيْ فِيْ قَوْمِيْ وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيْلَ الْمُفْسِدِيْنَ ‘আর আমরা মূসাকে ত্রিশ রাতের ওয়াদা দিয়েছিলাম। অতঃপর তা আরও দশ রাত দ্বারা পূর্ণ করি এবং এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত চল্লিশ রাত সময় পূর্ণ হয়। আর এ সময় মূসা তার ভাই হারূণকে বলে, আমার সম্প্রদায়ে তুমি আমার স্থলাভিষিক্ত হবে ও তাদের সংশোধন করবে। আর সাবধান! তুমি বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না’ (আ‘রাফ ৭/১৪২)।
(৫) অপরের সংশোধনে দরদী হওয়া : অহির আলোয় উদ্ভাসিত ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সাধ্যমত অন্যদের সংশোধনে চেষ্টা করবেন। জোরজবরদস্তি বা তাড়াহুড়ার মাধ্যমে নয়; বরং সহনশীলতার সাথে দরদ নিয়ে সমাজ সংস্কারের কাজ করতে হবে। নবীগণ সর্বদা তাদের স্বজাতির সংশোধনে প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছেন। যেমন আল্লাহ নূহ (আঃ)-এর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন,قَالَ يَاقَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَى بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَرَزَقَنِي مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًا وَمَا أُرِيْدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ إِنْ أُرِيْدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ وَمَا تَوْفِيْقِيْ إِلَّا بِاللهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيْبُ- ‘সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি মনে কর, যদি আমি আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর কায়েম থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর পক্ষ হ’তে উত্তম রিযিক (নবুঅত) দান করে থাকেন (তাহ’লে কিভাবে আমি তা গোপন করতে পারি?)। আর আমি চাই না যে, আমি তোমাদের বিপরীত সেই কাজ করি, যে কাজ থেকে আমি তোমাদের নিষেধ করি। আমি আমার সাধ্যমত তোমাদের সংশোধন চাই মাত্র। আর আমার কোনই ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত। আমি তাঁর উপরেই নির্ভর করি এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাই’ (হূদ ১১/১৪২)।
পারস্পরিক মীমাংসার গুরুত্ব :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানব দেহের ন্যায়। যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা’।[4] সুতরাং দু’জন মুমিনের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ কখনই কাম্য নয়। যদি এরূপ পরিলক্ষিত হয়, তাহ’লে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করা অপর মুমিনের কর্তব্য।
(১) মীমাংসা করা আল্লাহর নির্দেশ : যখন মুমিনদের কেউ পারস্পরিক বিবাদে লিপ্ত হয়, তখন নিরপেক্ষ কেউ তাদের মাঝে সন্ধি করে দিবেন। এটা মহান আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ বলেন,وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ اقْتَتَلُوْا فَأَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِيْ تَبْغِيْ حَتَّى تَفِيْءَ إِلَى أَمْرِ اللهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوْا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوْا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِيْنَ ‘যদি মুমিনদের দুই দল পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহ’লে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর সীমালংঘন করে, তাহ’লে তোমরা ঐ দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যে দল সীমালংঘন করে। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের (সন্ধির) দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি তারা ফিরে আসে, তাহ’লে তোমরা উভয় দলের মধ্যে ন্যায়ানুগভাবে মীমাংসা করে দাও এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালবাসেন’ (হুজুরাত ৪৯/৯)।
(২) মীমাংসাতেই পুরস্কার : সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, অধিকাংশ শলা-পরামর্শ হয় নিরর্থক। তবে যদি সে পরামর্শ হয় পারস্পরিক মীমাংসার জন্য, তাহ’লে এর বিনিময়ে রয়েছে আল্লাহর পুরস্কার। আল্লাহ বলেন,لَا خَيْرَ فِي كَثِيْرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوْفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ أَجْرًا عَظِيْمًا ‘তাদের অধিকাংশ শলা-পরামর্শে কোন মঙ্গল নেই। কিন্তু যে পরামর্শে তারা মানুষকে ছাদাক্বা করার বা সৎকর্ম করার কিংবা লোকদের মধ্যে পরস্পরে সন্ধি করার উৎসাহ দেয় সেটা ব্যতীত। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সেটা করে, সত্বর আমরা তাকে মহা পুরস্কার দান করব’ (নিসা ৪/১১৪)।
(৩) মীমাংসা আল্লাহর রহমত আনায়নকারী : পারস্পরিক সন্ধির মাধ্যমে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘মুমিনগণ তো কেবল পরস্পরের ভাই। অতএব তোমাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে’ (হুজুরাত ৪৯/১০)।
(৪) মীমাংসায় পরস্পরকে ক্ষমা করা অতীব কল্যাণময় : আল্লাহ তা‘আলা মানুষের স্ব স্ব কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য দিয়ে থাকেন। ফলে সৎ কাজের ভাল প্রতিদান ও অসৎ কাজের মন্দ প্রতিদান আল্লাহর নিকট নির্ধারিত। যা তিনি ক্বিয়ামতের দিন প্রদান করবেন। সুতরাং যে ব্যক্তি পারস্পরিক সন্ধির জন্য অপরজনকে ক্ষমা করে, তার উত্তম পুরস্কার আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللهِ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ- وَلَمَنِ انْتَصَرَ بَعْدَ ظُلْمِهِ فَأُوْلَئِكَ مَا عَلَيْهِمْ مِنْ سَبِيْلٍ ‘আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই হয়ে থাকে। অতঃপর যে ব্যক্তি ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার তো আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি অত্যাচারীদের ভালবাসেন না’। ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ নেয়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন সুযোগ নেই’ (শূরা ৪২/৪০-৪১)।
সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি অত্যাচারিত হওয়ার পরেও ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে সেটা আরও উৎকৃষ্ট কাজ। মহান আল্লাহ অত্র সূরার পরবর্তী আয়াতে বলেন,وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ ‘আর যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে ও ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই সেটি হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ’ (শূরা ৪২/৪৩)।
সুতরাং লোকদের মাঝে সংশোধন করতে গিয়ে যদি মিথ্যা বলা লাগে, আর তাতে কারো ক্ষতির আশংকা না থাকে, তবে সেটা মিথ্যা হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لَيْسَ بِالكَاذِبِ مَنْ أَصْلَحَ بَيْنَ النَّاسِ فَقَالَ خَيْرًا أَوْ نَمَى خَيْرًا ‘যে ব্যক্তি লোকদের মাঝে সংশোধন করার চেষ্টা করে সে মিথ্যাবাদী নয়। সে (যা বলেছে) ভাল বলেছে অথবা ভালকাজের অগ্রগতি ঘটিয়েছে’।[5] সুতরাং প্রয়োজনে মীমাংসার তাকীদে যদি কখনও মিথ্যা বলা হয়ে যায়, তাহ’লে সেটা মিথ্যা হিসাবে গৃহীত হবে না।
উপসংহার : মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হবে সর্বদা পরস্পরের সংশোধনের চেষ্টা করা। আর নিজেকে সেই ব্যক্তিদের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যারা মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী করে না, বরং মীমাংসা করে। পাশাপাশি মুসলিম ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মুমিনদের মাঝে বিবাদ মীমাংসা করে দিতে হবে; যাতে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি না হয়। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগুলির মধ্যে এমন দূরদর্শী লোক কেন হ’ল না, যারা জনপদে বিপর্যয় সৃষ্টিতে বাধা দিত? তবে অল্প কিছু লোক ব্যতীত (হূদ ১১/১১৬)। অতএব আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদেরকে আত্মসংশোধন করা ও পারস্পরিক মীমাংসার মাধ্যমে উত্তম ব্যক্তি হওয়ার তওফীক দান করুন।-আমীন!
মুহাম্মাদ তোফায়েল আহমাদ
[ছানাবিয়া ২য় বর্ষ, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী]
[1]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫১; দারেমী হা/২৭২৭; মিশকাত হা/২৩৪১।
[2]. আহমাদ হা/২১৪৪১; তিরমিযী হা/১৯৮৭; মিশকাত হা/৫০৮৩।
[3]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৩৭; ছহীহাহ হা/৯২৬।
[4]. মুসলিম হা/৬৪৮০।
[5]. আবুদাঊদ হা/৪৯২০; তিরমিযী হা/১৯৩৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৮১৫।