নারীর তিনটি ভূমিকা
লিলবর আল-বারাদী
আসাদুল্লাহ আল-গালিব 576 বার পঠিত
২৭. সামর্থ্যের মধ্যে পরকালীন কাজ করা : আল্লাহ কারো উপর তার সামর্থ্যের বাইরে কিছুই চাপিয়ে দেন না। বরং প্রত্যেককেই তার সামর্থ্যের মধ্যেই আখেরাতের কাজ করতে বলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْياَ- ‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন, তার দ্বারা আখেরাতের গৃহ সন্ধান কর। অবশ্য দুনিয়া থেকে তোমার প্রাপ্য (অপচয়হীন হালাল) অংশ নিতে ভুলো না’ (ক্বাছাছ ২৮/৭৭)।
অন্যত্র তিনি বলেন,فَاتَّقُوْا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا وَأَنْفِقُوْا خَيْرًا لِأَنْفُسِكُمْ وَمَنْ يُوْقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ- ‘অতএব তোমরা সাধ্যমত আল্লাহ্কে ভয় কর। তাঁর কথা শোন ও মান্য কর এবং (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। বস্ত্ততঃ যারা তাদের হৃদয়ের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)।
ইসলাম সর্বাবস্থায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে থাকে। যেমন ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি হ’ল হজ্জ। আর এই ইবাদতও শুধুমাত্র সামর্থবানদের উপর ফরয। আল্লাহ বলেন, وَللهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلاً، ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ ফরয করা হ’ল ঐ লোকদের উপর, যাদের এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে’ (আলে-ইমরান ৩/৯৭)।
২৮. আল্লাহর সাহায্য লাভে আশাবাদী থাকা : অনেক সময় আমরা আল্লাহর রহমত হ’তে নিরাশ হয়ে যাই। এমনকি আমরা তাঁর নিকট দো‘আ করতেও ভুলে যাই। অথচ তিনি তাঁর বান্দার ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্ত্তত। আল্লাহ বলেন,وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ- ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, (তখন তাদের বল যে,) আমি নিকটেই আছি। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেই যখনই সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমাকে ডাকে এবং আমার উপরে বিশ্বাস রাখে, যাতে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয় (বাক্বারাহ ২/১৮৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ- ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে। তারা সত্বর জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়’ (মুমিন ৪০/৬০)।
২৯. আদিষ্ট বিধানে দৃঢ় থাকা : প্রকৃতার্থে আল্লাহর বিধান পালনের মধ্যে প্রশান্তি রয়েছে। এজন্য ইলাহী বিধানকে নিজের জীবনে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ- ‘অতএব তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ সেভাবে দৃঢ় থাক এবং তোমার সাথে যারা (শিরক ও কুফরী থেকে) তওবা করেছে তারাও। আর তোমরা সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের সকল কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করেন’ (হুদ ১১/১১২)।
উল্লেখ্য যে, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর আদিষ্ট বিধান পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের উপর অবতীর্ণ বিধানের মতই। পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতরা তাদের আনীত বিধানের বিরুদ্ধাচারণ করার কারণে দুনিয়াতেই তারা আল্লাহর গযবের সম্মুখীন হয়েছিল। সর্বোপরি শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আনীত বিধান মানলেই কেবল আমরা সুপথ লাভ করতে পারব। আল্লাহ বলেন,شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّيْنِ مَا وَصَّى بِهِ نُوْحًا وَالَّذِيْ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسٰى أَنْ أَقِيْمُوْا الدِّيْنَ وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِيْنَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَيْهِ اللهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِيْ إِلَيْهِ مَنْ يُنِيْبُ- ‘তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের সে পথই নির্ধারণ করেছেন, যার আদেশ তিনি দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা আমরা প্রত্যাদেশ করেছি তোমার প্রতি ও যার আদেশ আমরা দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর ও এতে মতভেদ করোনা। তুমি মুশরিকদের যে বিষয়ের দিকে আহবান কর, তা তাদের নিকট ভারী মনে হয়। আল্লাহ যাকে চান মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে সুপথ প্রদর্শন করেন’ (শূরা ৪২/১৩)।
আর দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকলেই জান্নাত অর্জিত হবে। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَأَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ- ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। অতঃপর তার উপর দৃঢ় থাকে, তাদের উপর ফেরেশতামন্ডলী নাযিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না ও চিন্তান্বিত হয়ো না। আর তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হয়েছিল’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৩০)।
৩০. অণু পরিমাণ পাপ-পুণ্যের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা : আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার প্রতিটি অণু পরিমাণ কর্মও লিপিবদ্ধ করে থাকেন। হোক তা পাপ বা পুণ্য। আল্লাহ বলেন, فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ- وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ- ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে’। ‘আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে’ যিলযাল ৯/৭-৮)। তবে আল্লাহ অণু পরিমাণ পাপ-পুণ্যের লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে কারো উপর যুলম করেন না। বরং তিনি ভালো কাজের পুণ্য দ্বিগুণ করে দেন। আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْرًا عَظِيْمًا- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অণু পরিমাণ যুলুম করেন না। যদি সেটি সৎকর্ম হয়, তাহ’লে তিনি তার ছওয়াব দ্বিগুণ করে দেন। আর আল্লাহ নিজের থেকে মহা পুরস্কার দিয়ে থাকেন’ (নিসা ৪/৪০)।
সুতরাং ছোট-বড় সকল পাপ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। নইলে সেই পাপ গুলোই ক্বিয়ামাতের মাঠে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দঁাড়াবে। আল্লাহ বলেন,وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِيْنَ مُشْفِقِيْنَ مِمَّا فِيْهِ وَيَقُوْلُوْنَ يَاوَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لاَ يُغَادِرُ صَغِيْرَةً وَلاَ كَبِيْرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا وَوَجَدُوْا مَا عَمِلُوْا حَاضِرًا وَلاَ يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا- ‘আর পেশ করা হবে আমলনামা। তখন তাতে যা আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদের দেখবে আতংকগ্রস্ত। তারা বলবে, হায় দুর্ভোগ! এটা কেমন আমলনামা যে, ছোট-বড় কোন কিছুই গণনা করতে ছাড়েনি? আর তারা তাদের সকল কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালক কারু প্রতি অবিচার করেন না’ (কাহফ ১৮/৪৯)।
৩১. অবসরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করা : মানুষ সময় থাকতে সময়ের মূল্য বুঝেনা। এজনই আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে তাঁর অবসর সময় আল্লাহর পথে ব্যয় করতে নির্দেশ দিয়ে বলেন,فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ- وَإِلٰى رَبِّكَ فَارْغَبْ- ‘অতএব যখন অবসর পাও, ইবাদতের কষ্টে রত হও’। ‘এবং তোমার প্রভুর দিকে রুজূ হও’ (শরহ ৯৪/৭-৮)।
৩২. ন্যায় বিচার করা : মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ للهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلٰى أَلَّا تَعْدِلُوْا اعْدِلُوْا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সত্য সাক্ষ্য দানে অবিচল থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে অবিচারে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার কর, যা আল্লাহভীতির সর্বাধিক নিকটবর্তী। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত’ (মায়েদাহ ৫/৮)।
সুতরাং যে কোন মূল্যে ন্যায়ের উপর দৃঢ় থাকতে হবে যদিও তা নিজের বিপক্ষে চলে যায়। কেননা আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ للهِ وَلَوْ عَلٰى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِيْنَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوْا الْهَوٰى أَنْ تَعْدِلُوْا وَإِنْ تَلْوُوْا أَوْ تُعْرِضُوْا فَإِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের কিংবা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়। (বাদী-বিবাদী) ধনী হৌক বা গরীব হৌক, আল্লাহ তাদের সর্বাধিক শুভাকাংখী। অতএব ন্যায়বিচারে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত’ (নিসা ৪/১৩৫)।
(৩৩) বিপদ থেকে বঁাচতে মন্দকর্ম ত্যাগ করা : পৃথিবীতে অনেক বিপদ-বিপর্যয়ের কারণ হ’ল মানুষের কর্ম। যেমন ওহোদ যুদ্ধের সাময়িক বিপর্যয়ের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُمْ مُصِيْبَةٌ قَدْ أَصَبْتُمْ مِثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّى هَذَا قُلْ هُوَ مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِكُمْ إِنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ- ‘যদি (ওহোদের দিন) তোমাদের উপর বিপদ এসে থাকে, তবে তোমরাও (বদরের দিন তাদের উপর) দ্বিগুণ বিপদ চাপিয়েছিলে। তোমরা বললে, কোত্থেকে এ বিপদ এলো? তুমি বল, এটা তোমাদের পক্ষ থেকেই এসেছে (তীরন্দাযদের অবাধ্যতার কারণে)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাশালী’ (আলে-ইমরান ৩/১৬৫)।
সুতরাং মানুষের প্রত্যেকটি অকল্যাণের জন্য তার মন্দ কর্মই দায়ী। আল্লাহ বলেন,مَا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللهِ وَمَا أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُوْلًا وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا- ‘তোমার যে কল্যাণ হয়, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। আর যে অকল্যাণ হয়, তা তোমার (কর্মের) ফলে হয়। বস্ত্ততঃ আমরা তোমাকে মানবজাতির জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছি। আর (এজন্য) সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট’ (নিসা ৪/৭৯)। তিনি আরও বলেন,ظَهَرَ الْفَسَادُ فِيْ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْ النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ- ‘মানুষের কৃতকর্মের ফলে স্থলে ও জলে সর্বত্র বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের কিছু কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে’ (রূম ৩০/৪১)।
(৩৪) শপথ পূর্ণ করা : ব্যক্তিজীবনকে সুশোভিত করতে হ’লে সার্বিক জীবনে শপথ পূর্ণ করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য। কিন্তু পাকড়াও করবেন যেগুলি তোমরা দৃঢ় সংকল্পের সাথে কর। এরূপ শপথ ভঙ্গের কাফফারা হ’ল, দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম মানের খাদ্য প্রদান করা যা তোমরা তোমাদের পরিবারকে খাইয়ে থাক অথবা অনুরূপ মানের পোষাক প্রদান করা অথবা একটি ক্রীতদাস (বা দাসী) মুক্ত করা। অতঃপর যে ব্যক্তি এতে সক্ষম হবে না, সে তিনদিন ছিয়াম পালন করবে। এটাই তোমাদের শপথ সমূহের কাফফারা যখন তোমরা তা করবে। তোমরা তোমাদের শপথ সমূহ রক্ষা কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তার আয়াতসমূহ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর’ (মায়েদাহ ৫/৮৯)।
(৩৫) হৃদয়ের কার্পণ্য দূর করা : হৃদয়ে কার্পণ্য থাকলে কখনোই সুশোভিত জীবন গঠন করা সম্ভব নয়। কৃপণ হৃদয় কখনো জীবনের আসল সৌন্দর্যই উপভোগ করতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوْا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُوْنَ فِيْ صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوْتُوْا وَيُؤْثِرُوْنَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوْقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ- ‘আর যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করত এবং ঈমান এনেছিল। যারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং তাদেরকে (ফাই থেকে) যা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের মনে কোনরূপ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তাদেরই রয়েছে অভাব। বস্ত্ততঃ যারা হৃদয়ের কার্পণ্য হ’তে মুক্ত, তারাই সফলকাম’ (হাশর ৫৯/৯)। মহান আল্লাহ বলেন, فَاتَّقُوْا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوْا وَأَطِيعُوْا وَأَنْفِقُوْا خَيْرًا لِأَنْفُسِكُمْ وَمَنْ يُوْقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ- ‘অতএব তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর। তাঁর কথা শোন ও মান্য কর এবং (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। বস্ত্ততঃ যারা তাদের হৃদয়ের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)।
(৩৬) রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করা : সর্বশেষ নবী হিসাবে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে মান্য করা সকল ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। অন্যথায় রয়েছে পরকালীন শাস্তি। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ- ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত হও। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’ (হাশর ৫৯/৭)। আর এর দ্বারা আল্লাহর আনুগত্য করা হয়। আল্লাহ বলেন, مَنْ يُطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে’ (নিসা ৪/৮০)।
(৩৭) মন্দকে দূরীভূত করতে ভাল কাজ করা : কখনও যদি মন্দ কাজ হয়ে যায় সেই মন্দকে দূরীভূত করার জন্য ভালো কাজ করতে হবে। কেননা সেই ভালো কাজই মন্দকে মিটিয়ে দিবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِيْنَ- ‘আর তুমি ছালাত কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তে ও রাত্রির কিছু অংশে। নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ মন্দ কর্মসমূহকে বিদূরিত করে। আর এটি (কুরআন) হ’ল উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য (সর্বোত্তম) উপদেশ’ (হুদ ১১/১১৪)। মহান আল্লাহ বলেন, إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحًا فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَحِيْمًا- ‘তবে তারা ব্যতীত, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)।
(৩৮) সুপথ প্রাপ্তির জন্য আল্লাহর উপর বিশ্বাসী হওয়া : সর্বাস্থায় আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। আর এতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে সুপথ অর্জন হবে। আল্লাহ বলেন,مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللهِ يَهْدِ قَلْبَهُ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ- ‘কেউ কোন বিপদে পতিত হয় না আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত। বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার হৃদয়কে সুপথে পরিচালিত করেন। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে বিজ্ঞ’ (তাগাবুন ৬৪/১১)।
উপসংহার : নিশ্চয়ই এই কুরআন ইহ ও পরকালীন উত্তম জীবনের পথ-প্রদর্শক। আর কুরীআনী জীবন খুবই মাধুর্যপূর্ণ ও সরল। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় এই কুরআন এমন পথের নির্দেশনা দেয় যা সবচেয়ে সরল’ (ইসরা ১৭/৯)। তাই কুরআনী জীবন গঠন করলে আমাদের ইহ ও পরকালীন জীবন সুশোভিত হবে ইনশাআল্লাহ।
[লেখক : কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]