মাহে রামাযান : মুছে যাক যাবতীয় গ্লানি
মুযাফফর বিন মুহসিন
ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব 614 বার পঠিত
গত ২০০ বছর ধরে এদেশের সিংহভাগ মানুষের আক্বীদা-বিশ্বাসের উপর আঘাত হানার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নাস্তিক্যবাদী যে নিয়মিত চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে, তার একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত হল এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বৃটিশদের চাকুরীজীবী, পেশাজীবী ও কেরানী তৈরী করার লক্ষ্যে নিবেদিত ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দর্শনে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা এদেশের আম জনমানসের শাখায়-প্রশাখায় এমনভাবে পাশ্চাত্যের ভোগবাদী জীবনাদর্শকে ঢুকিয়ে দিয়েছে, যা থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় যেন নেই। স্বাধীনতার পর যতগুলো শিক্ষাক্রম এসেছে, প্রতিটি শিক্ষাক্রমেই একটু একটু করে গেড়ে দেয়া হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বীজ, আর পাল্লা দিয়ে কমানো হয়েছে মুসলিম হিসাবে আত্মপরিচয় গঠনের সুযোগগুলো।
এই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এদেশের মুসলমানদের আত্মপরিচয় গঠনের মূলে আরো এক গভীর কুঠারাঘাত। এতদিন ইসলামী শিক্ষার নামে যৎসামান্য কিছু শেখার ব্যবস্থা থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রমে ‘ইসলামী শিক্ষা’ নামে কোন বিষয় নেই। এর পরিবর্তে ‘মূল্যবোধ ও নৈতিকতা’ নামক যে বিষয়টি রয়েছে, সেটিও আবার দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষার তালিকায় নেই। ২০১৩ সালে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টির নামকরণ যখন ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ করা হয়, তখন সম্ভবত পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভেবেই রাখা হয়েছিল, যা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। অপরদিকে কলেজে ২০১২ শিক্ষাক্রম থেকেই ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। কেবল মানবিক বিভাগে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা নিয়ে কারসাজির এই ধারাবাহিকতা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, কিভাবে পাঠ্যসূচী থেকে ইসলাম শিক্ষাকে স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত করা যায়-সেটাই পিছনের কুশীলবদের মূল লক্ষ্য।
অপরদিকে স্বয়ং সরকারী মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাতেই এখন ইসলামী শিক্ষার বিপণ্ণ অবস্থা। ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতি লালনই যে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য, সেখানেই এখন ইবতিদায়ী শ্রেণীতে সালামের পরিবর্তে শেখানো হচ্ছে ‘গুড মর্নিং’। ‘ইসলামের ইতিহাস’ বিষয়টি এখন আর সিলেবাসেই নেই। মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষাকে একই মানে নিয়ে আসতে ১৯৮৫ সালে দাখিলকে এসএসসি এবং ১৯৮৭ সালে আলিমকে এইচএসসির সমমান প্রদান করা হয়। কিন্তু তাতে মাদ্রাসার মূল সিলেবাসে হাত দেয়া হয়নি। কিন্তু বর্তমানে স্কুল ও মাদ্রাসার সিলেবাস সমন্বয় করতে গিয়ে মাদ্রাসা এবং স্কুলের মধ্যকার পৃথক বৈশিষ্ট্য প্রায় হারিয়েই যাচ্ছে। স্কুলের সিলেবাসের সমস্ত বই মাদ্রাসার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে এসকল মাদ্রাসায় পড়ে কেউ ভালো আলেম হতে পারবে-এ কথা খোদ আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররাও বিশ্বাস করে না। যদিও মাদ্রাসা শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে ২০০৬ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’র অধীনে ফাযিল ও কামিলকে যথাক্রমে ডিগ্রী ও মাস্টার্স সমমান দিয়েছিল। অতঃপর ২০১৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্বতন্ত্র ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার মাধ্যমে সারা দেশের ফাযিল ও কামিল মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সরকারী ভাবে ঘোষণা আসে কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী দাওরায়ে হাদীছকে মাস্টার্স সমমান প্রদানের। তবে এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য যে মূলতঃ ইসলামী শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নয়; বরং রাজনৈতিক মতলবপ্রসূত, তা তাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম থেকে সুস্পষ্ট। লর্ড মেকলেরা ইংরেজ শাসনামলেও যা করেননি, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা তা কর্যকর করেছে। এ এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যার সাথে আমাদের ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা, আদর্শিক ও সাংস্কৃতি মূল্যোবোধের কোন সম্পর্ক নেই।
দুঃখের বিষয় হল- কেবল ধর্মীয় শিক্ষাই নয়, সামগ্রিকভাবে শিক্ষার উন্নয়নকল্পে কোন সরকারের পক্ষ থেকে একটি যুক্তিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ আমাদের নযরে আসেনি। অবকাঠামো খাতে সরকারের বিশাল ব্যয় দেখে আমরা আনন্দিত হই। স্কুল-কলেজের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিশাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কোটি কোটি সেখানে ব্যয় হয়। তবে দিনশেষে সেটা হয় একদল মানুষের স্বার্থে; যারা দুর্নীতির মচ্ছবে লিপ্ত হয়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ গোছায়। আঙগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। আর সেটাই হয়ে যায় আমাদের উন্নয়নের মাপকাঠি।
অথচ শিক্ষার গুণগত মানবৃদ্ধির জন্য কোন বরাদ্দ কিংবা শিক্ষা উন্নয়নের জন্য গবেষণামূলক কোন উচ্চতর প্রতিষ্ঠান আমাদের নযরে আসে না। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষায়িত কোন কমিশনও গঠন করা হয় না। এক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা তো দূরের কথা, কোন বিনিয়োগই নেই! এমনকি সরকার নিজেও বোধহয় জানে না যে, শিক্ষার নামে দেশে আসলে কী নৈরাজ্য চলছে। ফলে শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা শুরু হলে কেউ এর দায়দায়িত্ব নিতে চায় না। একে অপরকে দায়ী করার মধ্যখান থেকে বাস্তবায়ন হয়ে যায় আড়ালের কুশীলবদের গভীর ষড়যন্ত্র। এত বিশৃংখল শিক্ষাব্যবস্থাপনা পৃথিবীর আর কোন একটি দেশেও আছে কিনা সন্দেহ। সরকারী কিংবা এমপিওভুক্ত অনার্স, মাস্টার্স স্তরের ৮২০টি কলেজ বর্তমানে রয়েছে। এগুলোর একমাত্র কাজ সার্টিফিকেট প্রদান করা। সেখানে কোন পড়াশোনা নেই। শিক্ষক-ছাত্র কেউ ক্লাসে উপস্থিত হয় না। যা হয়, তা স্রেফ দায়সারা গোছের। শিক্ষিত জাতি গড়ার আকাঙ্খা তো দূরের থাক, শিক্ষার নূন্যতম কোন লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টাও সেখানে অনুপস্থিত।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক এক জরিপ রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে, দেশে অলস সময় পার করছেন ৩৯ শতাংশ তরুণ। এর বাস্তবতা আমরা অনার্স কলেজগুলো দেখলেই অনুধাবন করতে পারি। দেশের উপযেলা, ইউনিয়ন লেভেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেসব কলেজ রয়েছে, তার প্রায় শতভাগেই ক্লাস করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ক্লাসে আসা-না আসা শিক্ষার্থীর ইচ্ছাধীন। পরীক্ষা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় আয় করে এবং শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট পায়। অনার্স/মাস্টার্স পাশ করার পর শিক্ষার্থীরা এতটুকুই জানে যে, তারা অমুক বিষয়ে পড়েছে। কিন্তু কী শিখেছে তা তারা জানে না। আবার সার্টিফিকেট থাকায় কিছু যে শিখেনি তা-ও বলতে পারে না। আবার সার্টিফিকেট থাকার কারণে তারা ‘ছোটখাটো’ কাজও করতে চায় না। কেবল অফিসার হতে চায়, যার যোগ্যতা তার নেই। সেকারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল সার্টিফিকেটধারী বেকার তৈরীর কারখানা ছাড়া আর কিছু বলার উপায় নেই।
অপরদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিষয়ের পড়া পড়ে না। বরং তারা তাদের সমস্ত মেধা ও শক্তি ব্যয় করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য। সেজন্য দক্ষতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীও সেভাবে তৈরী হচ্ছে না। মাদ্রাসাগুলো ফাযিল বা কামিলের নামে যা হচ্ছে, তা স্রেফ প্রহসন।
চোখের সামনে সবকিছু চলছে, কিন্তু এই অচল শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি ভীষণ উদার ও সহানুভুতিশীল। এ ব্যাপারে তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। ঠুনকো বিষয় নিয়েও এদেশে মিছিল-মিটিং দিনরাত চলমান থাকলেও জাতির এই নীরব অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কারো কোন মিছিল-মিটিং দেখা যায় না। না শিক্ষকদের পক্ষ থেকে, না শিক্ষার্থীদের। এভাবে মাস শেষে শিক্ষকদের বেতন গোনা আর বছর শেষে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ফী প্রদানের বিপরীতে অনার্স-মাস্টার্স সার্টিফিকেট অর্জনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে এদেশের অন্তঃসারশূন্য শিক্ষাব্যবস্থা।
দায়িত্বহীন শিক্ষক-শব্দবন্ধটি বাংলাদেশের মত এত প্রাসঙ্গিক বোধহয় পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নেই। মানুষ গড়ার রক্ষক হয়ে কিভাবে ভক্ষক হয়ে যান, কিভাবে নিজের রুটি-রুযী ঠিক রাখতে অবলীলায় জাতির ভবিষ্যতের বিনাশ সাধনে ভূমিকা রাখতে পারেন, তার দৃষ্টান্ত বোধহয় কেবল বাংলাদেশই। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা গোল্লায় যাক, তাতে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। ছাপোশা কেরানীর মত তাদের নযর কেবল প্রমোশন আর বেতন বৃদ্ধির খবরে। জাতি গঠনের সামান্যতম দায়ও যেন তারা বোধ করেন না। ফলে সমাজ গড়ার কারিগরদের নামই এখন বেশী আসে দূর্নীতি ও অপকর্মের হোতাদের তালিকায়।
এদেশের ব্যবসায়ীরাও দেশের জনগণের শিক্ষার উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন না, বরং রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণে রেখে বিদেশে টাকা পাচার করাই তাদের কামিয়াবীর দর্শন। নতুবা খেলাধুলা আর বিনোদনে যেভাবে তারা দেদারছে অর্থ বিলান, শিক্ষার উন্নয়নে সেরূপ কোন উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ে না। কখনও শোনা যায়নি যে, গবেষণার জন্য কোন শিল্প গোষ্ঠী বড় কোন বরাদ্দ দিয়েছেন। ধর্মীয় শিক্ষার জন্য যাকাতের টাকা থেকে কিছু বরাদ্দ রেখেই তারা তাদের দায়িত্ব শেষ মনে করেন। ফলে এদেশে উন্নয়নের মহড়া আছে, কিন্তু বাস্তবে কিছু নেই। দেশে কোন মেধাবী টেক জায়ান্ট নেই, বিজনেস জায়ান্ট নেই, শিক্ষা জায়ান্ট নেই, বড় আলম বা বিদ্বান নেই। আছে কেবল ভাবধরা বুদ্ধিজীবী সমাজ। যাদের মুখঃনিসৃত জ্ঞান বিতরণ কেবল সেমিনার কক্ষেরই রওনক বৃদ্ধি করে, জাতির উন্নয়নে বিশেষ কাজে আসে না।
এদেশে শিক্ষার যা কিছু এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, তার পিছনে মূল অবদান বেসরকারী ও অনানুষ্ঠানিক খাতের। বেসরকারী স্কুল-মাদ্রাসাগুলো হাযারো বাধা-বিঘ্নতার মধ্যে সাধ্যমত এদেশের শিক্ষার উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কোচিং বাণিজ্য নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও মূলতঃ এদেশের শিক্ষাঙ্গনকে বলার মত অবস্থানে রেখেছে কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলোই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গাছাড়াভাবের মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য শেষ ভরসা এই কোচিং সেন্টার। যেহেতু প্রতিযোগিতা করতে হয়, তাই কোচিং সেন্টারকে প্রথাগত নিয়োগবাণিজ্য নেই, সেরা শিক্ষক নির্বাচনেও দ্বিধা নেই। ফলে সেখানে দক্ষ, যোগ্য ও আন্তরিক শিক্ষক স্টাফ পাওয়া যায়। প্রতিযোগিতামূলক সার্ভিস থাকায় আশানুরূপ যত্নও পায় শিক্ষার্থীরা। এভাবে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে পড়েছে কোচিং সেন্টার নির্ভর। প্রি-প্রাইমারী থেকে বিসিএস পর্যন্ত পর্যন্ত সর্বত্রই রয়েছে কোচিং সেন্টারের প্রাসঙ্গিকতা। সুতরাং যত সমালোচনাই হোক, কোচিং সেন্টারই এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে।
শিক্ষাব্যবস্থার এই গহীন অমানিশার মাঝেও আমরা নিরাশার ঘোরে সবকিছু হারাতে চাই না। বরং এর মধ্যেও আমরা কিছু আশার আলো দেখছি একারণে যে, আমাদের অনেক অভিভাবকই এখন তাদের সন্তানদের সুকলে পাঠানোর পরিবর্তে মাদ্রাসায় পাঠানো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। এত যে নাস্তিক্যবাদী প্রচারণা চলমান রয়েছে, তবুও শিক্ষার্থীদের মাঝে বোরকা, হিজাব এবং দাঁড়ি রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং এই চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে আমরা হতাশবাদী নয়; বরং এ অবস্থা সামাল দিতে হলে আমরা কিছু করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। যেমন -
১. সরকারীভাবে পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেয়ার চিন্তা করা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ হবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষাপদ্ধতি ও মূল্যায়নব্যবস্থা চালু রাখা। কেননা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেয়া এক সর্বনাশা সিদ্ধান্ত, যা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার মনোভাব দূরীভূত করে তাদেরকে একটা লক্ষ্যহীন হযবরল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তাই তবে গতানুগতিক মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে এমসিকিউ/বিষয়ভিত্তিক ধারণা পরিষ্কার করা/বিশ্লেষণ দক্ষতা যাচাই মূলক প্রশ্ন রাখতে হবে।
২. ক্যারিয়ার ভাবনা বিষয়ক সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা যরূরী, যেন দাখিল/এসএসসির মধ্যেই তারা পেশাগত লক্ষ্য স্থির করে ফেলে। গতানুগতিক অনার্স/ মাস্টার্স/বিসিএস-এর মত সময়সাপেক্ষ উচ্চাভিলাসী চিন্তার পিছনে না ছুটে প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে বাস্তবভিত্তিক হালাল রূযী উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ব্যবসা/কারিগরী/টেকনিক্যাল প্রভৃতি সেক্টর এখন বিপুল সম্ভাবনাময় এবং কম সময়ক্ষেপনকারী। এজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই ‘ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং’ বিভাগ থাকা আবশ্যক, যেন শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে যথাযথ পরামর্শ প্রদান করা যায়।
৩. শিক্ষার প্রতিটি স্তরে দ্বীন শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করতে হবে। এজন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য বৈকালিক মক্তব/সাপ্তাহিক মক্তব/আফটার স্কুল মক্তব/অনলাইন পাঠশালা প্রভৃতি অনানুষ্ঠানিক ধারাগুলো শক্তিশালী করতে হবে, তেমনি যুবক ও বৃদ্ধদের জন্যও মসজিদভিত্তিক এবং অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাধারাকে সহজলভ্য করতে হবে।
৪. অভিভাবকদের সচেতন করাও অতীব যরূরী, যেন শিক্ষাব্যবস্থার এই বিপর্যয় থেকে তারা সন্তানকে রক্ষার উদ্যোগ নেন। এজন্য সন্তানদের জন্য সঠিক দ্বীনী প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা যরূরী। প্রয়োজনে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য নিজেই উদ্যোগ নিতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে অনানুষ্ঠান শিক্ষা উদ্যোগগুলোর সাথে সন্তানকে বাধ্যতামূলক যুক্ত করে দিতে হবে।
৫. সর্বোপরি এই শিক্ষাক্রম বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং যুগোপযোগী শিক্ষার্থী গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন!