আলাহর জন্য বন্ধুত্ব ও শত্র“তা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 393 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
১- وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا- وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا-
(১) ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তুমি তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল’। ‘আর তুমি তাদের প্রতি মমতাবশে বিনয়াবনত থাক এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছিলেন’ বনু ইস্রাঈল ১৭/২৩-২৪)।
২-
২- وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ ১৪) وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا-
(২) ‘আর আমরা মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। অতএব তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। মনে রেখ, আমার নিকটেই তোমার প্রত্যাবর্তন’। ‘কিন্তু যদি তোমার পিতা-মাতা তোমাকে চাপ দেয় আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহ’লে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না। অবশ্য পার্থিব জীবনে তুমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করে যাবে’ লোকমান ৩১/১৪-১৫)।
৩- وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا-
(৩) ‘আর আমরা মানুষকে আদেশ দিয়েছি তাদের পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের জন্য। তার মা তাকে কষ্টের সাথে গর্ভে ধারণ করেছে ও কষ্টের সাথে প্রসব করেছে। আর তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধ ছাড়াতে সময় লেগেছে ত্রিশ মাস’ আহক্বাফ ৪৬/১৫)।
৪- وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُونَ-
(৪) ‘আর স্মরণ কর) যখন আমরা বনু ইস্রাঈলের নিকট হ’তে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারু দাসত্ব করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও ইয়াতীম, মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষের সাথে সুন্দর কথা বলবে এবং ছালাত কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে কিছু সংখ্যক ব্যতীত। এমতাবস্থায় তোমরা অগ্রাহ্যকারী ছিলে’ বাক্বারাহ ২/৮৩)।
৫- قُلْ تَعالَوْا أَتْلُ ما حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً وَبِالْوالِدَيْنِ إِحْساناً-
৫) ‘তুমি বল, এস আমি তোমাদেরকে ঐ বিষয়গুলি পাঠ করে শুনাই যা তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের উপর হারাম করেছেন। আর তা হ’ল এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে’ আন‘আম ৬/১৫১)।
হাদীছের বাণী :
৬- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضى الله عنه سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى مِيقَاتِهَا قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللهِ-
(৬) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল ছা-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বললেন, সময় মত ছালাত আদায় করা। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন, অতঃপর পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ।[1]
৭- عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ - رَضِيَ اللهُ عَنْهُ- قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: أُمَّكَ ، قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: أُمَّكَ قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ قَالَ: أَبَاكَ، ثُمَّ الْأَقْرَبَ فَالْأَقْرَبَ-
(৭) বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) তার পিতার মাধ্যমে তার পিতামহ হ’তে বর্ণনা করেছেন যে, তার পিতামহ বলেছেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কার সাথে উত্তম আচরণ করব? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি বললাম, অতঃপর কার সাথে? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কার সাথে? এবার তিনি বললেন, তোমার বাবার সাথে, তারপর তোমার নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের সাথে, তারপর তাদের নিকটতম আত্মীয়দের সাথে ।[2]
৮- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: أَتَى رَجُلٌ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي جِئْتُ أُرِيدُ الْجِهَادَ مَعَكَ، أَبْتَغِي وَجْهَ اللهِ وَالدَّارَ الْآخِرَةَ، وَلَقَدْ أَتَيْتُ وَإِنَّ وَالِدَيَّ لَيَبْكِيَانِ، قَالَ: فَارْجِعْ إِلَيْهِمَا، فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا-
(৮) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ছা-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এসেছি। আর আমি আমার পিতা-মাতাকে কাঁদিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, তাদের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মুখে হাসি ফুটাও, যেভাবে তুমি তাদেরকে কাঁদিয়ে এসেছ’।[3]
৯- عَنْجَابِرِبْنِعَبْدِاللهِ،أَنَّرَجُلًاقَالَ: يَارَسُولَاللهِإِنَّلِيمَالًاوَوَلَدًا،وَإِنَّأَبِييُرِيدُأَنْيَجْتَاحَمَالِي،فَقَالَ: أَنْتَوَمَالُكَلِأَبِيكَ-
(৯) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পদও আছে, সন্তানও আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বলেন, তুমি ও তোমার সম্পদ সবই তোমার পিতা’।[4]
১০- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: رِضَى الرَّبِّ فِي رِضَى الوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ-
(১০) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রতিপালক আল্লাহর সন্তুষ্টিতে পিতার সন্তুষ্টি এবং প্রতিপালক আল্লাহর অসন্তুষ্টি, পিতার অসন্তুষ্টি’।[5]
১১- عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَتْ تَحْتِي امْرَأَةٌ أُحِبُّهَا وَكَانَ أَبِي يَكْرَهُهَا فَأَمَرَنِي أَبِي أَنْ أُطَلِّقَهَا، فَأَبَيْتُ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ طَلِّقْ امْرَأَتَكَ-
(১১) ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার এক স্ত্রী আমি ভালোবাসি, কিন্তু তাকে আমার পিতা পছন্দ করে না। তিনি আমাকে নির্দেশ দেন তাকে তালাক প্রদানের জন্য। কিন্তু আমি তা অস্বীকার করি। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে আমি উল্লেখ করলে তিনি বললেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর! তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দাও’।[6]
১২- عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ: قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فِي عَهْدِ قُرَيْشٍ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ أُمِّي قَدِمَتْ عَلَيَّ وَهِيَ رَاغِبَةٌ أَفَأَصِلُهَا؟ قَالَ: نَعَمْ صِلِيهَا-
(১২) আসমা বিনতু আবুবকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমার মা আমার কাছে আসলেন। তিনি ছিলেন মুশরিকা। এ ঘটনা ঐ সময়ের, যখন কুরায়েশদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়েছিল। আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা আমার কাছে এসেছেন, তিনি ইসলামের প্রতি অসন্তুষ্ট। সুতরাং আমি কি তার সাথে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তার সাথে উত্তম আচরণ কর’।[7]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. ইয়ামনের এক ব্যক্তি তার মাকে তার পিঠে বহন করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিল। তার এ কাজের প্রতিদান সম্পর্কে জানতে চাইলে ইবনু ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি তার একটি দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদানও দাওনি’।[8]
২. ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচরণের চেয়ে উত্তম কোন কাজ আমার জানা নেই’।[9]
সারবস্ত্ত :
১. কুরআনুল কারীমে পিতা-মাতার হক সমূহকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ও আনুগত্যের সাথে যুক্ত করে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২. পৃথিবীর বুকে পিতা-মাতার সম্মান ও মর্যাদা শীর্ষস্থানীয়। ৩. পিতা-মাতার সাথে সর্বাবস্থায় নম্র-ভদ্র ও শালীন আচরণ করতে হবে। সর্বোপরি পবিত্র কুরআন ও হাদীছের আলোকে পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তোষজনক ব্যবহারের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রতী হ’তে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন।-আমীন!
[1]. বুখারী হা/৫২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০; মুসলিম হা/৮৫।
[2]. মুসলিম হা/১৫৬; মিশকাত হা/৫৫০৭।
[3]. ইবনু মাজাহ হা/২৭৮১।।
[4]. ইবনু মাজাহ হা/২২৯১; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪১০।
[5]. তিরমিযী হা/১৮৯৯; মিশকাত হা/৪৯২৭; ছহীহাহ হা/৫১৬।
[6]. তিরমিযী হা/১১৮৯ হাদীছ হাসান; আহমাদ হা/৫১৪৪।
[7]. বুখারী হা/৩১৮৩; মুসলিম হা/১০০৩; মিশকাত হা/৪৯১৩।
[8]. আবুদাঊদ হা/৫১৩৯; তিরমিযী হা/১৯৯৭; মিশকাত হা/৪৯২৯।
[9]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪, সনদ ছহীহ।