ইসলামে নারীর অবস্থান

কামাল হোসাইন 295 বার পঠিত

ভূমিকা : আমাদের সমাজে নারীর অবস্থান ও অধিকার নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা আমরা শুনে থাকি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম যে অনন্য অবদান রেখেছে তা বলাই বাহুল্য। জাহেলী যুগে নারী জীবন্ত হত্যার ফিরিস্তি ছিল অত্যন্ত ভয়ানক। ইসলাম শুধু নারী নয়, প্রত্যেক বনু আদমের যথাযথ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু শয়তান নারী অধিকারের নামে তার লালায়িত স্বপ্ন পুনরুদ্ধার করতে চায়। ফলে শয়তানের শিখন্ডীরা আবার নতুন করে প্রোপাগ্রান্ডা শুরু করে দিয়েছে। পুরুষ ও নারী আদর্শ সমাজে বিনির্মাণে যেখানে একে অপরের সহযোগী, সেখানে শয়তান নারী অধিকারের নামে পরস্পরকে প্রতিযোগী হিসাবে দাঁড় করিছে। এতে করে মানুষের সুখের সংসার ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। অথচ ইসলামে নারীর সুসংহত অবস্থান রয়েছে। আলোচন্য প্রবন্ধে তা আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

নারী সমাচার : বিভিন্ন ধর্মে নারীর যে বর্ণনা রয়েছে তাতে তাদেরকে নিয়ে খুবই ন্যাক্কারজনক বিষয় উল্লেখ রয়েছে। সেখানে মা-বোনদের কৃত অধিকার ও সম্মান খর্ব করা হয়েছে। কখনও বা তাদেরকে বিশ্বে সকল অন্যায় অপকর্মের মূল উৎস হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। আবার বর্তমান সমাজেও একজন নারী তুচ্ছ ও অপমানিত হয়ে থাকেন। এ ছাড়াও সমাজে বিভিন্নভাবে, অসম্মান, অপমান, নোংরা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবহেলিত অবস্থায় বসবাস করতে হয়। নারীকে বিবস্ত্র করার জন্য সর্বদা সমাজের তথাকথিত প্রগতিশীলরা আধুনিকতার মায়াজালে ফেলে সম-অধিকারের নামে স্বাধীনচেতা মনোভাব ঢুকিয়ে দিয়েছে।

কন্যা শিশু প্রতিপালন সেযুগ-এযুগ : বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন মিডিয়ার মাধ্যমে কোন না কোন জায়গায় নবজাতককে বস্তায় বন্দী, ড্রেন-ঝোঁপঝাড় বা ডাস্টবিনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অন্যদিকে জাহেলী আরবে কন্যাদের জীবিত কবর দেওয়া হ’ত। ফলে ইসলাম বনাম জাহেলী আরবের কন্যা প্রতিপালনের দিকে খেয়াল করলে পরিষ্কার হয়ে যাবে আজকের আধুনিক সমাজ জাহেলী আরবের চেয়ে কতটা নিম্নে। অথচ ইসলাম তাদেরকে সুমহান মর্যাদা করেছে। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ- بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ- ‘আর যখন জীবিত কবর দেওয়া কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে (তাকবীর ৮১/৮-৯)।

একটু চিন্তা করলেই অনুমেয় যে, আল্লাহ তা‘আলা নারী শিশু সন্তানকে হত্যাকারীর ভয়াবহ কি শাস্তি রেখেছেন।

অথচ অনেক দেশে মানব ভ্রূণ হত্যা সরকারী মদদেই হচ্ছে। যেমন চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে যে তথ্য অবমুক্ত করেছে, তাতে দেখা যায়, ১৯৭১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চীনে ৩৩ কোটি ৬০ লাখ গর্ভপাত হয়েছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার চেয়েও বেশী।[1] বর্তমানে তার হিসাব আরো অনেক বেশী হবে। পার্শ্ববর্তী ভারতেও থেমে নেই নারী ও শিশু হত্যা। বিভিন্ন অযুহাতে, সম্পদের ক্ষতি ইত্যাদির কথা ভেবে নারী নিশ্চিত হ’লেই ভ্রূণ ও শিশু হত্যা নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বা ইউএনএফপিএর প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে ভারতে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ মেয়ে 'নিখোঁজ' হয়ে গেছে। প্রতি বছর দেশটিতে গর্ভপাত ঘটিয়ে ৪৬ লাখ কন্যা ভ্রূণ নষ্ট করে ফেলা হয়।[2]

তাছাড়া বাংলাদেশেও খুব কৌশলে শিশু হত্যা ক্রমশ বাড়ছে। পরিবার পরিকল্পনার কথা বলে শত শত পিতা-মাতা নিয়ন্ত্রণে রাখছে সন্তান জন্ম। তাদের দেওয়া প্রবাদ-দু’টি সন্তানের বেশি নয়, একটি হ’লে ভাল হয়।

কন্যা শিশু প্রতিপালনে ইসলাম : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ- يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ- ‘তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং সে চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে পড়ে’। ‘প্রাপ্ত সংবাদের দুঃখে সে সম্প্রদায়ের লোকদের থেকে আত্মগোপন করে। সে ভাবতে থাকে, গ্লানি সত্ত্বেও সে কন্যাটিকে রেখে দিবে, না তাকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলবে? সাবধান! তারা যে সিদ্ধান্ত নেয় তা কতই না নিকৃষ্ট!’ (নাহল ১৬/৫৮-৫৯)।

অন্য হাদীছে নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الْأُمَّهَاتِ وَوَأْدَ الْبَنَاتِ وَمَنَعَ وَهَاتِ. وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ- ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য মায়ের অবাধ্যতা, কন্যাদের জীবন্ত প্রোথিতকরণ, কৃপণতা ও ভিক্ষাবৃত্তি হারাম করেছেন। আর তোমাদের জন্য বৃথা তর্ক-বিতর্ক, অধিক প্রশ্ন করা ও সম্পদ বিনষ্ট অপসন্দ করেছেন’।[3]

কন্যা সন্তান প্রতিপালনের ফযীলত : কথিত আধুনিকতার জরাজীর্ণ এ সমাজ যেখানে নারীদের ভ্রূণ হত্যা নিয়ে ব্যস্ত সেখানে ইসলাম তাদের তাদের জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য প্রস্ত্তত। আর তা নবী করীম (ছাঃ) সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে এ জাতীয় হায়েনাদের কবল থেকে নারীদের রক্ষা ও সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচবার জন্য জোরালো নির্দেশনা জারি করেছেন। সাথে সাথে তাদের সবচেয়ে আদর সেণহ, মায়া-মহববত ও সুশিক্ষিতা করে সুন্দরভাবে মানুষ করতে হবে, আর এ ব্যপারেও জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

জান্নাতে রাসূলের সাথে অবস্থান : ইসলামে কন্যা সন্তানদের লালন-পালনে বিষয়ে যথাযথ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর যে ব্যক্তি যথাযথভাবে তা আদায় করতে পারবে, সে জান্নাতে রাসূলের সাথে অবস্থান করার তাওফীক অর্জন করবে। যেমন হাদীছে এসেছে,عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ هَكَذَا- ‘আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দু’টি কন্যাকে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে, সে ব্যক্তি ও আমি ক্বিয়ামতের দিন এভাবে একত্রিত হব, যেমন এ দু’টি আঙুল। এ বলে তিনি নিজের দু’টি আঙুল একত্রে মিলালেন’।[4]

জাহান্নামের আগুন থেকে প্রতিবন্ধক : হাদীছে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ دَخَلَتْ امْرَأَةٌ مَعَهَا ابْنَتَانِ لَهَا تَسْأَلُ فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِي شَيْئًا غَيْرَ تَمْرَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا إِيَّاهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا وَلَمْ تَأْكُلْ مِنْهَا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ فَدَخَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيْنَا فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ مَنْ ابْتُلِيَ مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ بِشَيْءٍ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنْ النَّارِ- আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ভিখারিনী দু’টি শিশু কন্যা সঙ্গে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইলো। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু’ভাগ করে কন্যা দু’টিকে দিয়ে দিল। এরপর ভিখারিনী বেরিয়ে চলে গেলে নবী (ছাঃ) আমাদের নিকট আসলেন। তাঁর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেন, যাকে এরূপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরূপ পরীক্ষা করা হয়, সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হ’তে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে’।[5]

অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ، وَأَطْعَمَهُنَّ، وَسَقَاهُنَّ، وَكَسَاهُنَّ مِنْ جِدَتِهِ كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘কারো তিনটি কন্যা সন্তান থাকলে এবং সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করলে, যথাসাধ্য তাদের পানাহার করালে ও পোশাক-পরিচ্ছদ দিলে, তারা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম থেকে অন্তরায় হবে’।[6]

ভাবুন! একজন মেয়েকে সঠিকভাবে লালন-পালন করলে পিতা-মাতার জন্য জাহান্নাম প্রতিবন্ধক হবে, জান্নাত হবে তার ঠিকানা। অতএব মেয়েকে সঠিকভাবে দেখভাল করতে হবে। সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে।

ইসলামে নিঃস্ব নারীদের অবস্থান : ইসলাম সর্বাবস্থায় যে কোন মুহূর্তে সকল নারীদের অধিকার একই রকম। হোক সে পিতৃহীন, বিধবা কিংবা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী বা উন্নত শ্রেণীর, তাদের সকলের ক্ষেত্রেই সমভাবে ইসলামে নারী অধিকার প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا- ‘আর যদি তোমরা আশংকা কর যে পিতৃহীনগণের প্রতি সুবিচার করতে পারবেনা, (মানে আর দশ জন নারীর মত সম্মান, সুবিধা ইত্যাদি যদি না পারে) তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও’ (নিসা ৪/৩)। অত্র আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কোন পিতৃহীন মেয়ের লালন-পালনের দায়িত্ব যদি তোমাদের উপর ন্যাস্ত থাকে এবং তোমরা তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা কর। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে কোনভাবেই হেয় প্রতিপন্ন কিংবা কোন সুবিধা থেকে যেন বঞ্চিত না হয়, যে অধিকার অন্যরা পেত। কিন্তু যেহেতু তার অন্য কেউ নেই, কাজেই তোমরা এরূপ করনা (সুযোগে পেয়ে) যে তাকে মোহর কম দিয়ে স্ত্রী রূপে ব্যবহার করবে। এমনটি করা যাবে না।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একটি পিতৃহীনা বালিকা ছিল তার মাল ধনও ছিল এবং বাগানও ছিল। যে ব্যক্তি তাকে লালন পালন করেছিল সে কেবল মাত্র ধন সম্পদের লালসায় পূর্ণ মোহর নির্ধারণ না করেই তাকে বিয়ে করে নেই তখনই অত্র আয়াতে কারিমা অবতীর্ণ হয়। ছহীহ বুখারীতে এসেছে,

ইবনু শিহাব (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে এ আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, হে ভাগ্নে! এটা পিতৃহীন বালিকার বর্ণনা যে তার অভিভাবকের অধিকার রয়েছে এবং তার মালে অংশ রয়েছে। আর সে বালিকার মাল ও সৌন্দর্য তার চোখে লেগেছে। সুতরাং সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্ত অন্য যায়গায় বালিকাটি যতটা মোহর ইত্যাদি পেতো ততোটা সে পায়না। সুতরাং সে অভিভাবককে নিষেধ করা হয়েছে যে সে যেন বাসনা পরিত্যাগ করে এবং অন্যান্য স্ত্রী লোকদেরকে পসন্দমত বিয়ে করে নেয়। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ)-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, উক্ত কথা ঠিক, তবে ন্যায় এর সাথে ও পূর্ণ মোহর নির্ধারণ করতে পারলে তাদের বিয়ে করতে দোষ নেই’।[7]

ইসলামে নারী শিক্ষা : কথিত নারী অধিকার সংগঠনের কিছু লোকেরা নারী শিক্ষাকে ইসলাম প্রাধান্য দেয়না বলে জনগনের সামনে তারা বিভিন্নভাবে প্রচার করার চেষ্টা করে। তারা বোঝানোর চেষ্টা করে যে ইসলামী ভাবাদর্শের কেউ সামনের দিকে যেতে পারবে না। আসলেই কি তাই? ইসলাম নারী সহ সকলকে শিক্ষার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে। তাহ’লে তাদের এ কথার মানে কি? চোখ বন্ধ করে ঢিল ছোড়ার মত যে ঢিল উপরে ছোড়ে কিছু পরে ঐ ঢিল তার মাথায় এসে পড়ে।

নারী শিক্ষার ব্যাপারে হাদীছ,عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النِّسَاءَ قُلْنَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم اجْعَلْ لَنَا يَوْمًا فَوَعَظَهُنَّ وَقَالَ أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَ لَهَا ثَلاَثَةٌ مِنْ الْوَلَدِ كَانُوا حِجَابًا مِنْ النَّارِ قَالَتْ امْرَأَةٌ وَاثْنَانِ قَالَ وَاثْنَانِ- আবু সা‘ঈদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, মহিলাগণ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট নিবেদন করলেন, আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন। অতঃপর তিনি একদা তাদের ওয়ায-নছীহত করলেন এবং বললেন, যে স্ত্রী লোকের তিনটি সন্তান মারা যায়, তারা তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হবে। তখন এক মহিলা প্রশ্ন করলেন, দু’টি সন্তান মারা গেলে? তিনি বললেন, দু’টি সন্তান মারা গেলেও’।[8] এ হাদীছ দ্বারা বেশ কিছু শিক্ষাণীয় বিষয় রয়েছে, নারীরা চাইলেই শিক্ষা অর্জন করতে পারে তাও পছন্দের ও সঠিক শিক্ষা দেয় এমন শিক্ষকের কাছে শিখতে পারে।

ইসলামে চিকিৎসা সেবায় নারীর অবস্থান : প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ইসলাম নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করে, যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান। প্রাক ইসলামী যুগে বিভিন্নভাবে নারীরা বিভিন্ন যায়গায় চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যেমন ওহোদ যুদ্ধে আহত সৈনিকদের সুচিকিৎসা ও তাদের পানি পান করান এই নারীরাই। হাদীছের ভাষায়-রুবায়ঈ বিনতু মু’আওয়ায ইবনু আফরা হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতাম। তখন আমরা লোকজনকে পানি পান করাতাম, তাদের সেবা-শুশ্রুষা করতাম এবং নিহত ও আহতদের মদীনায় নিয়ে যেতাম’।[9] অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, নারীরাও চিকিৎসাসেবা ও নার্সিং পেশায় ভূূমিকা রাখতে পারে। পর্দার সাথে ইসলাম তাদের চিকিৎসকের অধিকার দিয়েছে।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,عَنْ أَبِي حَازِمٍ، سَمِعَ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ السَّاعِدِيَّ،، وَسَأَلَهُ النَّاسُ، وَمَا بَيْنِي وَبَيْنَهُ أَحَدٌ بِأَىِّ شَىْءٍ ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏- আবু হাযম বলেন যে, যখন আমার এবং সাহল ইবনু সা‘দ আস-সা‘ঈদী (রাঃ)-র মাঝখানে কেউ ছিল না, তখন লোকে তার নিকট আরয করল, (উহুদ যুদ্ধে) কী দিয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর যখমের চিকিৎসা করা হয়েছিল? তখন তিনি বললেন, এ ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক জানে এমন কেউ জীবিত নেই। আলী (রাঃ) তাঁর ঢালে করে পানি আনছিলেন আর ফাতেমা (রাঃ) তাঁর মুখমন্ডল হ’তে রক্ত ধুয়ে দিলেন। অবশেষে চাটাই পুড়িয়ে (তার ছাই) তাঁর ক্ষতস্থানে দেয়া হ’ল’।[10]

স্ত্রী পরিবার-পরিজনের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা : যেমন হাকীম ইবনু মু‘আবিয়াহ আল-কুশায়রী (রহঃ) তাঁর পিতা হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! স্ত্রীগণ আমাদের ওপর কি অধিকার রাখে? উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلَا تُقَبِّحْ وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ- ‘তুমি যখন খাও, তখন তাকেও খাওয়াও; তুমি পরলে তাকেও পরিধান করাও, (প্রয়োজনে মারতে হ’লে) মুখমন্ডলে আঘাত করো না, তাকে গালি দিও না, (প্রয়োজনে তাকে ঘরে বিছানা পৃথক করতে পার), কিন্তু একাকিনী অবস্থায় রাখবে না’।[11]

(ক্রমশঃ)

কামাল হোসাইন

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ,
রাজশাহী পশ্চিম সাংগঠনিক যেলা ]


[1]. দৈনিক প্রথম আলো, ৮ই নভেম্বর ২০১৫।

[2]. দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২০।

[3]. মিশকাত হা/৪৯১৫।

[4]. মুসলিম হা/৬৫৮৯; মিশকাত হা/৪৯৫০।

[5]. বুখারী হা/১৪১৮; মুসলিম হা/২৬২৯,৩০; তিরমিযী হা/১৯১৫।

[6]. তিরমিযী হা/১৯১৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬৯।

[7]. তাফসীর ইবনে কাছীর,৪,৫,৬/২৭৮,২৭৯ পৃ.।

[8]. বুখারী হা/১২৪৯,৭৩১০; মুসলিম হা/২৬৩৩; আহমাদ হা/১১২৯৬।

[9]. বুখারী হা/২৮৮২,৪০৬৪ ।

[10]. বুখারী হা/২৪৩, ৪০৭৫।

[11]. আবুদাউদ হা/২১৪২; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫০;মিশকাত হা/৩২৫৯।



বিষয়সমূহ: নারী
আরও