Islam on trade and commerce
MJ Mohammed Iqbal
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন জিনিসই আবিষ্কার হয়েছে। প্রত্যেক আবিষ্কারকই একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা চালান। তিনি কি আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন এবং তা করতে তার কি কি উপাদান লাগতে পারে, সেটা আগে থেকেই চিন্তা-ভাবনা করে রাখেন। যদিও সব ক্ষেত্রে একজন উদ্ভাবক সফলতা পান না, তবু তিনি কি আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন তা তার কাছে স্পষ্ট এবং সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে পৃথিবীতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে, যা আসলে আবিষ্কার করতে চাননি আবিষ্কারক। যা হওয়ার তা হয়েছে দুর্ঘটনাবশত।
১. পেনিসিলিন : আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং তখন গবেষণা করেন লন্ডনের সেন্ট মেরি হাসপাতালে। বিখ্যাত এই অণুজীব বিজ্ঞানীর গবেষণাগার ছিল খুবই নোংরা। ওই সময় তিনি কাজ করছিলেন স্ট্যাফাইলোকাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে। একবার সাপ্তাহিক ছুটিতে বাসায় চলে যাওয়ার আগে তিনি ব্যাকটেরিয়ার পাত্রগুলোকে একটি স্থানে সন্নিবেশিত করে রাখেন। অসাবধানতাবশত একটি পাত্র পড়ে যায় নোংরার মাঝে। ৩রা সেপ্টেম্বর ১৯২৮ সালে ছুটি থেকে ফিরে ফ্লেমিং লক্ষ্য করলেন, নোংরায় পড়ে থাকা ওই পাত্রটি এক ধরনের ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে। নমুনাটি অকাজে নষ্ট হ’ল ভেবে ফেলে দেবেন ভাবতেই তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, এ পাত্রের ব্যাক্টেরিয়াগুলো মারা গেছে; যেখানে অন্য পাত্রগুলোর ব্যাক্টেরিয়া স্বাভাবিক রয়ে গেছে। ফ্লেমিং আবিষ্কার করেন, ছত্রাকটি ছিল পেনিসিলিয়াম ক্রাইসোজেনাম প্রজাতির এবং এটি একাধিক প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়া নিধনে কাজ করে।
২. এক্স-রে : ক্যাথোড রে আবিষ্কার হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু গবেষকরা তখনও জানতেন না, এটি ব্যবহার করে মানবদেহের কঙ্কালের ছবি তোলা সম্ভব। ১৮৯৫ সালে জার্মান পদার্থবিদ উইলহেম রঞ্জন কালো কার্ডবোর্ডে ঢাকা গ্লাস টিউবে ক্যাথোড রশ্মি চালিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। মূলত তার উদ্দেশ্য ছিল গ্লাস থেকে ক্যাথোড রে বের হয় কি না তা দেখা। কিন্তু এ সময় তিনি লক্ষ্য করেন, যেখানে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তার কয়েক ফুট দূরে এক ধরনের আলোকরশ্মি দেখা যাচ্ছে। তিনি ধারণা করলেন, কার্ডবোর্ড কোথাও ফেটে গিয়ে হয়ত আলো বের হচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখলেন, কার্ডবোর্ড ফেটে নয়, বরং কার্ডবোর্ড ভেদ করে রশ্মি বের হচ্ছে। হঠাৎ তার মাথায় এলো, যে রশ্মি কার্ডবোর্ড ভেদ করতে পারছে- তা মানবদেহ কেন পারবে না? তিনি তার স্ত্রীর হাত সামনে রেখে পরীক্ষা চালালেন এবং মানবদেহের কঙ্কালের ফটোগ্রাফিক ইমেজ তৈরীতে সক্ষম হলেন। পরে তিনি এর নাম দেন এক্স-রে।
৩.পেসমেকার : আমেরিকান প্রকৌশলী উইলসন গ্রেটব্যাচ একটি ডিভাইস তৈরী করেছিলেন, যা দ্বারা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন রেকর্ড করা যেত। একবার ভুলবশত যন্ত্রটিতে অন্য একটি রেজিস্টার লাগানো হ’লে গ্রেটব্যাচ দেখতে পান, যন্ত্রটি একবার স্পন্দিত হয়ে থেমে আবার স্পন্দন দিচ্ছে। গ্রেটব্যাচের মনে হ’ল, এটি মানুষের হৃদস্পন্দনের অনুরূপ। পরীক্ষা করে তিনি দেখলেন, তিনি যা ভেবেছিলেন তা-ই ঠিক। তৈরী করলেন প্রথম ইমপ্লানটেবল কার্ডিয়াক পেসমেকার, যা বাঁচিয়ে দিচ্ছে লাখ লাখ দুর্বল হার্টের রোগীকে।
৪. মাইক্রোওয়েভ ওভেন : মাইক্রোওয়েভ ওভেন বিশ্বের একটি অন্যতম জনপ্রিয় গৃহস্থালি যন্ত্র। কিন্তু কীভাবে আবিষ্কৃত হ’ল চমৎকার এই যন্ত্রটি তা খুব কম লোকই জানে। সম্পূর্ণ এক আকস্মিক ঘটনার মাধ্যমে বিজ্ঞান পেয়েছিল ‘মাইক্রোওয়েভ ওভেন’। ১৯৪৫ সালে আমেরিকান প্রকৌশলী পার্সি লেবারন স্পেন্সার কাজ করছিলেন ম্যাগনিট্রনস ডিভাইস নিয়ে। এ ডিভাইস কাজে লাগত রাডারে মাইক্রোওয়েভ রেডিও সংকেত তৈরীর জন্য। কাজ করার প্রয়োজনে একটি চালু ডিভাইসের সামনে দাঁড়ানোর সময় স্পেন্সারের পকেটে ছিল চকোলেট বার। এ সময় তিনি টের পান, চকোলেটটি গলে গেছে। স্পেন্সার ঠিক বুঝে উঠতে না পারলেও মাইক্রোওয়েভ যে এর পিছনে কাজ করেছে- তা আন্দাজ করতে পারলেন। তিনি দ্রুত কিছু পপকর্ন এনে ডিভাইসটির সামনে রাখলেন। ফটফট শব্দ তুলে দ্রুতই রুমে ছড়িয়ে পড়ল পপকর্ন। স্পেন্সারের বুঝতে বাকি রইল না, হঠাৎ করে নিজের অজান্তেই তিনি মাইক্রোওয়েভ ওভেন আবিষ্কার করে ফেলেছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে মাইক্রোওয়েভ ওভেন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। এখন তো পৃথিবীজুড়ে মাইক্রোওয়েভ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় যন্ত্র।
৫. পটেটো চিপস : জনপ্রিয় এ খাবারটি তৈরী হয়েছে কিছুটা ভুল আর কিছুটা ক্ষোভবশত। আমেরিকার সারাটোগা স্প্রিংস শহরের এক হোটেলের বাবুর্চি ছিলেন জর্জ ক্রোম। ১৮৫৩ সালের ২৪শে আগস্ট রাতে তার এখানে এক খদ্দের এসে আলু ভাজার অর্ডার দেন। সরবরাহ করার পর ভদ্রলোক তা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন যে, আলুগুলো খুব বেশী মোটা করে কাটা হয়েছে এবং এগুলো খুব বেশী আর্দ্র। আবার সরবরাহ করার পর খদ্দের একই অভিযোগ করেন এবং বলেন, খাবারে লবণও কম দেয়া হয়েছে। ম্যানেজারের ভৎর্সনা শুনে ক্ষেপে যান বাবুর্চি ক্রোম। তিনি এবার কাগজের মতো পাতলা করে আলুগুলো কাটলেন ও কড়া করে তেলে ভাজলেন, যাতে খদ্দের কাঁটাচামচ দিয়ে খেতে না পারেন। সবশেষে আলু ভাজার ওপর ছড়িয়ে দিলেন মাত্রাতিরিক্ত লবণ। খদ্দেরকে শায়েস্তা করাই ছিল ক্রোমের উদ্দেশ্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হ’ল, নিমিষেই আলু ভাজা সাবাড় করে ফেললেন ভদ্রলোক। অর্ডার দিলেন আরও এমন আলুভাজা নিয়ে আসার জন্য। এভাবেই জন্ম নিল মুখরোচক পটেটো চিপসের।
৬. স্যাকারিন : জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে খনিজ আলকাতরা নিয়ে গবেষণা করছিলেন ইরা রেমসন ও সি ফাহালবার্গ। ১৮৭৮ সালে একদিন কাজ করে ক্ষুধার্ত রেমসন ও ফাহালবার্গ খেতে বসলেন। তড়িঘড়ি খেতে বসায় হাত ধুতে ভুলে গেলেন ফাহালবার্গ। খাওয়ার সময় তিনি টের পেলেন, খাবার মিষ্টি মিষ্টি লাগছে। রেমসনকে এ ব্যাপারে জানালে দু’জনই টের পেলেন, যে পদার্থ নিয়ে তারা গবেষণা করছেন, তা থেকে কৃত্রিম চিনি জাতীয় পদার্থ উৎপাদন করা সম্ভব। পরে ফাহালবার্গ এটির নাম দেন স্যাকারিন।
৭. সুপার গ্লু : স্বচ্ছ প্লাস্টিক আবিষ্কারের জন্য সিয়ানোএক্রিলেটস নিয়ে ১৯৪২ সালে কোডেক ল্যাবরেটরিসে কাজ করছিলেন ড. হ্যারি কুভার ও তার সহকারী ফ্রেড। তখন তিনি দেখতে পান, নতুন তৈরী হওয়া পদার্থটি খুব বেশী আঠালো এবং তা সবকিছুতেই শক্তভাবে লেগে যাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় ভেবে প্রকল্পটি বাতিল করলেন কুভার। এর ঠিক ছয় বছর পর আবার একদিন কুভার কাজ করছিলেন বিমানের ককপিটের ওপর স্বচ্ছ আচ্ছাদন তৈরীর জন্য। এক্ষেত্রেও তিনি সিয়ানোএক্রিলেটস ব্যবহারে একই সমস্যায় পড়েন। কোনো তাপ বা চাপ ছাড়াই এটি খুব বেশী আঠালো লাগছিল কুভারের কাছে। এবার আর ভুল করলেন না কুভার। প্রকল্পটি বাতিল না করে দু’টি গ্লাসকে সিয়ানোএক্রিলেটস দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে সফল হলেন। ১৯৫৮ সালে সুপার গ্লু নামে বাজারে ছাড়লেন নতুন এ আঠা।
৮. রান্নাঘরে নন-স্টিক প্যান : রান্নাঘরে নন-স্টিক প্যানের ব্যবহার আমাদের সকলেরই জানা। এই আবিষ্কারের পিছনে রয় প্লাঙ্কেটের অবদান রয়েছে। কিন্তু তার আসল উদ্দেশ্য রান্না করার পাত্র তৈরী ছিল না। উন্নতমানের ক্লোরোফ্লুরো কার্বন বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। তার পরিবর্তে উচ্চ গলনাঙ্কবিশিষ্ট পদার্থ তৈরী করে ফেলেন। এই নতুন আবিষ্কার কী কাজে লাগতে পারে তা ভাবতে গিয়ে বানিয়ে ফেলেন নন-স্টিক প্যান।
৯. দেশলাই : ১৮২৬ সালে জন ওয়াকার নামে এক ব্রিটিশ রসায়নবিদ ভুল করে দেশলাই আবিষ্কার করে ফেলেন। তার গবেষণাগারে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে একটি কাঠের টুকরো মিশে যায়। পরে তাতে ঘষা লাগায় হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। এই ঘটনা দেখেই তিনি দেশলাই আবিষ্কারের পরিকল্পনা করেন।
১০. সেফটি গ্লাস : ১৯০৩ সালে এডওয়ার্ড বেনেডিক্টাস নামের এক রসায়নবিদ গবেষণাগারে কাজ করতে গিয়ে তার হাত থেকে হঠাৎ করে একটি কাঁচ মেঝেতে পড়ে যায়। তিনি ভাবেন, কাচটি ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তিনি দেখলেন, কাচের কোনো ভাঙা টুকরো মেঝেতে পড়ে নেই। কাচটি একেবারে আস্ত অবস্থাতেই রয়েছে। কাচের মধ্যে সামান্য ফাটল ধরেছে মাত্র। কাঁচের আকারেও কোন পরিবর্তন আসেনি। এর কারণ পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন, কাচের মধ্যে ভুলবশত সেলুলোজ নাইট্রেট পড়ে যায়। সেই মিশ্রণের কারণেই কাঁচের এই বদল। এই ঘটনা থেকেই তিনি সেফটি গ্লাস আবিষ্কার করেন যা পড়ে গেলেও ভাঙবে না। এছাড়া এটি গুলি প্রতিরোধক হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।
১১. ক্লোরোফর্ম : ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের পূর্বে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার জন্য চেতনা-নাশক হিসেবে কিছু ব্যাবহার করা হ’ত না। অর্থাৎ রোগীকে অজ্ঞান না করেই অপারেশন করা হ’ত। তবে ১৮৪৭ সালে ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের পরে অস্ত্রপ্রচার সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চেতনা নাশক হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। স্যার জেমস ইয়ং সিম্পসন চেতনা-নাশক নিয়ে দীর্ঘ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। ১৮৪৭ সালের কোন একদিন এডিনবার্গে নিজ বাড়ীতে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে তার মনে হ’ল নিজের আবিষ্কার পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়? তিনি একটি শিশিতে করে ক্লোরোফর্ম অতিথিবৃন্দের সামনে আনলেন। তারপর আর কারো কিছু মনে নেই! হুঁশ ফিরল পরদিন সকালে, এদিকে অতিথিরা একেকজন বেহুঁশ হয়ে এদিক ওদিক পড়ে আছেন। শুরুতে তিনি ভয়ই পেয়ে গেলেন। পরে সবার জ্ঞান ফিরলে আশ্বস্ত হন।
যদিও পরবর্তীতে এমন বিপজ্জনক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন তিনি। কারণ বর্ণহীন এই যৌগটি খোলা জায়গায় রেখে দিলে উড়ে যেতে থাকে। বাতাসে ক্লোরোফর্মের পরিমাণ খুব বেশী হয়ে গেলে তা মারাত্মক ক্ষতিকর। যেহেতু এটি সরাসরি স্নায়ুর ওপর ক্রিয়া করে, তাই বেশী পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা থেকে শুরু করে কিডনি ও লিভারের স্থায়ী সমস্যা তৈরী হ’তে পারে। সিম্পসন অবশেষে ১৯৪৭ সালে এই আবিষ্কারের কথা সবাইকে জানান এবং মাত্র তিন বছরের মাথায় শুরু হয়ে যায় রোগীদের অপারেশনের বেলায় অজ্ঞান করার কাজে আন্তর্জাতিকভাবে ক্লোরোফর্মের ব্যবহার।
১২. ডিনামাইট : আসসিয়ানো সোব্রেরো নামটি অনেকেরই কাছে অপরিচিত। বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ আবিষ্কারে এই লোকটির অনেক অবদান রয়েছে। তিনি ১৮১২ সালে ইতালির ক্যাসালে মনফেরাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং পেশায় ছিলেন একজন রসায়নবিদ। ১৮৪০-এর দশকে প্যারিসের একটি পরীক্ষাগারে কাজ করার সময় তিনি নাইট্রোগ্লিসারিন নামে একটি পদার্থ আবিষ্কার করেছিলেন, যা ছিল একটি তৈলাক্ত এবং অত্যন্ত বিস্ফোরক তরল। কিন্তু সোব্রেরো তা আবিষ্কারের সম্ভাব্য বাণিজ্যিক ব্যবহার দেখে যেতে পারেন নি। তবে সেই কাজটি করে দেখাতে পেরেছেন অ্যালফ্রেড নোবেল নামের একজন সুইডিশ কেমিস্ট।
আসসিয়ানো সোব্রেরো আবিষ্কৃত বিস্ফোরক তরলটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হওয়ায় সেটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার মত কোন পরিস্থিতি তখন তৈরী হয়নি। তাই নোবেল ভাবলেন, তিনি যদি কোনোভাবে এই পদার্থটিকে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারেন, তাহ’লে তৎকালীন গতানুগতিক বিস্ফোরকের একটি ভালো ও কার্যকর বিকল্প তৈরী করতে সক্ষম হবেন।
পড়াশোনা শেষ করার পর, আলফ্রেড এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। তবে এই গবেষণা চালাতে তাকে বেশ চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল। একবার গবেষণা চলাকালে তার কারখানায় এক ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কয়েকজন শ্রমিক সহ তার ভাই ‘এমিল’ মারা যায়। ভাইয়ের মৃত্যুতে নোবেল ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। এই ঘটনার পর আলফ্রেড নোবেল নিরাপদভাবে বিস্ফোরণ ঘটানোর উপকরণ আবিষ্কারের জন্য উঠে-পড়ে লাগেন। তবে তার শত চেষ্টা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত আবিষ্কারটি দেখা দেয় আরেকটি দুর্ঘটনার মাধ্যমে।
একবার নাইট্রোগ্লিসারিন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার সময় নোবেল দেখেন একটি পাত্র ছিদ্র হয়ে খুলে গেছে। দেখা গেল পাত্র মোড়ানো ছিল যে জিনিসটি দিয়ে সেটি ভয়াবহ বিস্ফোরক নাইট্রোগ্লিসারিনকে খুব ভালোভাবে শোষণ করেছে। কিয়েসেলগার নামে এক ধরনের পাললিক শিলার মিশ্রণ দিয়ে পাত্রগুলো মোড়ানো ছিল। নাইট্রোগ্লিসারিন যেহেতু তরল অবস্থায় খুব বিপদজনক, তাই নোবেল সিদ্ধান্ত নেন এই কিয়েসেলগারকে তিনি বিস্ফোরকের স্ট্যাবিলাইজার হিসাবে ব্যবহার করবেন। ১৮৬৭ সালে নোবেল তার আবিষ্কৃত নিরাপদ কিন্তু মারাত্মক শক্তিশালী এই বিস্ফোরকটি ‘ডিনামাইট’ নামে আবিষ্কার করেন।
১৩. কৃত্রিম রঙ : ১৮ বছর বয়সী উইলিয়াম পারকিন লন্ডনে একজন ল্যাব সহকারী হিসাবে কাজ করতেন। তাকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন তৈরীর একটি নতুন উপায় আবিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৮৬৪ সালের দিকে তিনি যখন এটি নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে ব্যবহৃত বিকারের নীচে একটি শক্তিশালী বেগুনি থকথকে পদার্থ দেখতে পেলেন। এটি ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে পারকিন এটি পরীক্ষা করেছিলেন এবং শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি একটি কৃত্রিম রং তৈরী করেছেন যা অন্যান্য প্রাকৃতিক রঙ এর চেয়ে বেশি জীবন্ত।
১৪. তেজস্ক্রিয়তা : আমরা জানি, হেনরি বেকরেল তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। তবে তার এই আবিষ্কার কিন্তু খানিকটা অজ্ঞতাবশেই হয়ে গেছে। মূলত কিছু মৌল আছে যাদের নিউক্লিয়াসের অস্থিতিশীলতার জন্য বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে। আর একেই তেজস্ক্রিয়তা বলে। ১৮৯৬ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল ইউরেনিয়াম স্ফটিক নিয়ে একটি পরীক্ষা করছিলেন। তিনি এই স্ফটিকটি রোদে রাখেন এবং তারপর একে কালো কাগজে মুড়িয়ে ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপর রাখেন। তার উদ্দেশ্য ছিল যে ইউরেনিয়াম স্ফটিকটি সূর্য থেকে শক্তি নিয়ে তা এক্স-রে হিসাবে নির্গত করবে। কিন্তু ২৬-২৭ ফেব্রুয়ারী প্যারিসের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তিনি তার এই পরীক্ষাটি প্রমাণ করে দেখাতে পারেন নি। কিন্তু যখন তিনি ইউরেনিয়াম স্ফটিকটি বের করেন, তিনি দেখতে পান যে সূর্যের আলো বা অন্য কোন বাহ্যিক শক্তির সরবরাহ ছাড়াই স্ফটিক থেকে কোন বিকিরণ হয়েছে যা ফটোগ্রাফিক প্লেটে ছোপছোপ দাগ সৃষ্টি করেছে, যার কারণ হিসেবে দায়ী ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা।
উপসংহার : বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো থেকে যে আমরা কেবল কিছু মজার গল্প জেনেছি তা নয়। বরং একটি চমৎকার শিক্ষাও পেয়েছি। তা হ’ল মানুষের কাজ কোন কিছু করার চেষ্টা করা। ফলাফল আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারণ করবেন। আপনি যা করতে চেয়েছিলেন তার থেকে ভালো কিছুও হয়ে যেতে পারে। তাই প্রত্যেক ব্যর্থতার পর হতাশাকে দূরে ঠেলে নতুন করে শুরু করতে হবে। আর ভুল করে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতি নযর বুলাতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন।-আমীন!