মুহাম্মাদ হাসান আল-দোদো

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 415 বার পঠিত

[মুহাম্মাদ হাসান আল-দোদো (৬১)। তিনি আশ-শানক্বিতী নামেও ব্যাপক পরিচিত। তিনি একজন মৌরিতানীয় সালাফী বিদ্বান, লেখক, গবেষক, কবি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তিনি মৌরিতানিয়ার ওলামা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সভাপতি এবং আবদুল্লাহ বিন ইয়াসীন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। তিনি দেশটির ‘সেন্টার ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব স্কলার্সে’র প্রধান। ২০১৪ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং বর্তমানে এর সদস্য। তিনি সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও দাওয়াতী সম্মেলনে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকার পঞ্চাশটিরও বেশি দেশ সফর করেছেন।]

জন্ম ও পরিচয় : মুহাম্মাদ হাসান আল-দোদো ১৯৬৩ সালের ৩১শে অক্টোবর মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকচোট থেকে ১৫০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত বুটিলিমিট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি প্রসিদ্ধ শিক্ষিত পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তার নানা মুহাম্মদ আলী ‘আদূদ ছিলেন দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম। তার মামা মুহাম্মাদ সালেম ‘আদূদও একজন নামকরা আলেম ছিলেন।

শিক্ষা জীবন : মুহাম্মাদ হাসান আল-দোদো তাঁর পিতা-মাতার কাছে ৫ বছর বয়সে কুরআন অধ্যয়ন শুরু করেন এবং ৭ বছর বয়সে কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। তিনি তার মায়ের কাছে কুরআনের দশ ক্বিরাআত অধ্যয়ন করেছিলেন। অতঃপর তিনি নানা মুহাম্মদ আলী আদূদের সংস্পর্শে ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞানার্জন শুরু করেন এবং ১৯৮২ সালে নানার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তার কাছেই ছিলেন।

১৯৮৬ সালে তিনি নোয়াকচট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন এবং উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। অতঃপর ১৯৮৮ সালে নোয়াকচটে অনুষ্ঠিত এক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি রিয়াদে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ লাভ করেন। সেখানে তিনি শরী‘আহ অনুষদের তৃতীয় বর্ষে ভর্তি হন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সুনামের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইসলামী আইনশাস্ত্রে বিচারকদের অবদান’।

বিভিন্ন দেশের আলেমদের নিকট হাদীছ অধ্যয়ন ও সনদ সংগ্রহ করা তার একটি নেশা ছিল। তার হাদীছশাস্ত্রের শিক্ষকদের মধ্যে সঊদী আরবের শায়খ মুহাম্মাদ ইয়াসীন ফাদানী ও শায়খ সুলায়মান লাহীবী, মিশরের মুহাম্মাদ আবু সানাহ, সিরিয়ার শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবুল গুদ্দাহ, মরক্কোর মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনু ছিদ্দীক আল-গুমারী, ইয়েমেনের কাযী মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আল-উমরানী, ভারতের আবুল হাসান ইবনু আব্দুল হাই নাদভী ও শায়খ নেমাতুল্লাহ দেওবন্দী অন্যতম।

কর্ম জীবন : কর্মজীবনে শায়খ মুহাম্মাদ হাসান নোয়াকচটে মৌরতানিয়া ওলামা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান নিযুক্ত হন। যেখানে ইসলামী শরীআতের বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী আলেম তৈরীর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে ৫২টি বিষয়ের উপর অভিজ্ঞ আলেমগণ প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। একই সাথে তিনি নোয়াকচটের মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বিন ইয়াসীন বিশ্বকবদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি মৌরিতানিয়ার ফিউচার সোসাইটি ফর কালচার অ্যান্ড এডুকেশনে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বর্তমানে এর একজন সক্রিয় সদস্য।

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ : মুহাম্মাদ হাসান আল-দোদো অনেক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল (১) ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলার্সের বোর্ড অফ ট্রাস্টির সম্মেলন। (২) মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের ফিক্বহ সম্মেলন। (৩) ইসলামী আইনশাস্ত্র একাডেমীর ফিক্বহ সম্মেলন। (৪) ইয়েমেনের আল-ঈমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান। এছাড়া তিনি আরব ও ইসলামী বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এবং ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও আমেরিকাতে বক্তৃতা দেন। তিনি সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও দাওয়াতী সম্মেলন উপলক্ষ্যে বিশ্বের পঞ্চাশটিরও বেশি দেশ সফর করেছেন।

গ্রন্থ রচনা : শায়খ মুহাম্মাদ হাসান আল-দোদো বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হ’ল : (১) মুখাত্ববাতুল কুযাত ফীল ফিক্বহীল ইসলামী। (২) মুক্বাওয়িমাতুল উখুওয়াতুল ইসলামিয়াহ। (৩) মুশাহাদুল হাজ্জ্ব ওয়া আছারুহা ফী যিয়াদাতিল ঈমান। (৪) কিতাবু মুহাববাতিন নবী (ছাঃ)। (৫) কিতাবু ফিক্বহিল খিলাফ। (৬) শারহু ওয়ারাকাতি ইমামিল হারামায়ন ফীল উছূল। (৭) কিতাবুল ইয়াওমিল আখের : মুশাহাদ ওয়া হিকাম। (৮) আত-তাকফীর : শুরূতুহু ওয়া যাওয়াবিতুহু ওয়া আখত্বারুহু ওয়া মাযালিকুহু।

এছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি ইলেকট্রিক মিডিয়াতেও বিশুদ্ধ ইসলাম প্রচার ও প্রসারে ব্যাপক সময় দিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র ইউটিউবেই তার ৭ হাযারের অধিক ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। তিনি ফিলিস্তীনী ভাইদের স্বাধীনতার জন্য আরব নেতাদের প্রতি জোরালোভাবে কিছু করার জন্য আহবান জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি তিনি আল-জাযীরায় একটি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তিনি ২০১২ সালে হামাসের ২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিছুটা ইখওয়ানী ভাবধারা এবং বিভিন্ন অপ্রচলিত ফৎওয়ার কারণে তিনি বিতর্কিতও হয়েছেন অনেকবার। আল্লাহ যেন এই বিদ্বানকে রক্ষা করুন এবং দ্বীনের খেদমতে উত্তরোত্তর আরো ভূমিকা রাখার তাওফীক দান করুন।-আমীন!



আরও