তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 285 বার পঠিত
আল-কুরআনুল কারীম :
১- يَمْحَقُ اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ-
(১) ‘আল্লাহ সূদকে নিঃশেষ করেন ও ছাদাক্বায় প্রবৃদ্ধি দান করেন। বস্ত্তত আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৭৬)।
২-يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ- فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللهِ وَرَسُولِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ-
(২) ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের বকেয়া পাওনা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।’ অতঃপর যদি তোমরা তা না কর, তাহ’লে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যাও। আর যদি তোমরা তওবা কর, তাহ’লে তোমরা তোমাদের মূলধনটুকু পাবে। তোমরা অত্যাচার করো না এবং অত্যাচারিত হয়ো না’ (বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯)।
৩- يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ-
(৩) ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সূদ খেয়ো না। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (আলে ইমরান ৩/১৩০)।
৪- فَبِظُلْمٍ مِنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيرًا- وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوا عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا-
(৪) ‘অতঃপর ইহূদীদের সীমালংঘনের কারণে আমরা তাদের উপর হারাম করেছিলাম বহু পবিত্র বস্ত্ত, যা তাদের জন্য হালাল ছিল এবং এ কারণে যে, তারা বহু মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিত’ । ‘আর এ কারণে যে, ওরা সূদ নিত। অথচ তাদেরকে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছিল। আর তারা অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ গ্রাস করত। বস্ত্তত আমরা তাদের মধ্যেকার কাফেরদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (নিসা ৪/১৬০-৬১)।
৫-وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ رِبًا لِيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلاَ يَرْبُو عِنْدَ اللهِ وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ-
(৫) ‘লোকদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে মনে করে তোমরা যে সূদ প্রদান করে থাক,আল্লাহর নিকটে তা বৃদ্ধি পায়না। পক্ষান্তরে আল্লাহর চেহারা কামনায় তোমরা যে ছাদাক্বা দিয়ে থাক, তারা তার বহুগুণ বেশী লাভ করে থাকে’ (রূম ৩০/৩৯)।
হাদীছের বাণী :
৬- عَنْ جَابِرٍ قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ-
(৬) জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূদখোর, সূদদাতা, সূদের লেখক এবং তার উপর সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ করেছেন, আর বলেছেন, ওরা সকলেই সমান’।[1]
৭- عَنْ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَمَانِعَ الصَّدَقَةِ وَكَانَ يَنْهَى عَنِ النَّوْحِ-
(৭) আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অভিশাপ দিতে শুনেছেন সূদখোর, সূদদাতা, সূদের লেখক ও ছাদাক্বা প্রদানে বাধাদানকারীর প্রতি। আর মৃতের জন্য বিলাপ করা হ’তে তিনি নিষেধ করতেন’।[2]
৮- عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قُلٍّ
(৮) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সূদ যতই বৃদ্ধি পাক, এর পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা’।[3]
৯- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ-
(৯) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা (২) যাদু করা (৩) আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মুমিনাদের অপবাদ দেয়া’।[4]
১০- عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ يَظْهَرُ الرِّبَا، وَالزِّنَا، وَالْخَمْرُ-
(১০) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন ক্বিয়ামতের পূর্বে সূদ, ব্যভিচার এবং মদের ব্যাপকতা প্রকাশ পাবে’।[5]
১১- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا ظَهَرَ الزِّنَا وَالرِّبَا فِي قَرْيَةٍ، فَقَدْ أَحَلُّوا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللهِ-
(১১) ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করমী (ছাঃ) বলেন, যখন কোন জনপদে ব্যভিচার ও সূদ ব্যাপকতা লাভ করে তখন সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের জন্য আল্লাহর আযাব বৈধ (অবধারিত) করে নেয়’।[6]
১২- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ حَنْظَلَةَ غَسِيلِ الْمَلَائِكَةِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دِرْهَمُ رِبا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلاَثِيْنَ زَنْيَةً-
(১২) যাকে ফেরেশতা শেষ গোসল দিয়েছিলেন, সেই হানযালার পুত্র আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘সূদের একটি মাত্র দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) যদি কেউ জেনেশুনে ভক্ষণ করে তাহ’লে তা হবে ৩৬ বার ব্যভিচার করার চাইতেও জঘন্য’।[7]
১৩- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا إِثْمًا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ-
(১৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সূদের পাপের ৭০টি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে কোন ব্যক্তির নিজ মাতাকে বিবাহ করা’।[8]
১৪- عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرِّبا اثْنانِ وَسَبْعُونَ بَاباً أدْنَاهَا مِثْلُ إِتْيانِ الرَّجُلِ أُمَّهُ وَإِنَّ أَرْبَى الرِّبَا اسْتِطالَةُ الرَّجُلِ فِي عَرْضِ أَخِيهِ
(১৪) বারা‘ বিন ‘আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সূদের পাপ ৭২ প্রকার। যার মধ্যে সবচেয়ে ছোট পাপ মায়ের সাথে ব্যভিচার করার মত! আর সূদের সবচেয়ে বড় পাপ হ’ল মুসলিম ভাইয়ের সম্ভ্রম নষ্ট করা’।[9]
১৫- عَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ شَفَعَ لِأَخِيهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا.
(১৫) আবু উমামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কারো জন্য সুফারিশ করল এবং সেই সুফারিশের প্রতিদান স্বরূপ তাকে কিছু উপহার দিল। যদি সে তা গ্রহণ করে তাহ’লে সে সূদের দরজাসমূহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হ’ল’।[10]
মনীষীদের বক্তব্য :
১. ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, ‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সূদ খাওয়া অথবা সূদ সংক্রান্ত কাজের সাথে জড়িত হওয়া কাবীরা গোনাহ’ (তাফসীরে কুরতুবী ৩/৬৪১ পৃ.)।
২. শাওক্বানী (রহঃ) বলেন, ‘যদি কর্যের কারণে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মাঝে হাদিয়া বা উপঢৌকন আদান-প্রদান হ’লে এটা সূদ বা ঘুষ হিসাবে গণ্য হবে’ (নায়লুল আওত্বার ৫/২৫৭ পৃ.)।
৩. শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, সূদ বরকতকে বিনষ্ট করে। তাই আমাদের উচিত সেখান থেকে বিরত থাকা’ (মাজমা‘ ফাতাওয়া ৭/২৮৯ পৃ.)।
সারবস্ত্ত :
১. ইসলামী শরী‘আতে সূদ সম্পূর্ণরূপে হারাম। দুনিয়া ও আখিরাতে এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। ২. পৃথিবীর আদিকাল থেকে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একে নিকৃষ্ট পাপ মনে করতেন। ৩. সূদের কারণে পারস্পরিক সহানুভূতি দূর হয়ে জন্ম নেয় সীমাহীন অর্থলিপ্সা ও স্বার্থপরতা। জাহেলী যুগে যেমন সূদের প্রসার ঘটেছিল বর্তমানেও তেমনি সূদ ব্যপকতা লাভ করেছে। তাই এর ভয়াবহতা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা যরূরী। আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় সূদ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।-আমীন!
[1]. মুসলিম হা/১৫৫৮।
[2]. নাসাঈ হা/৫১০৩, মিশকাত হা/২৮২৯।
[3]. আহমাদ হা/৩৭৫৪; ছহীহুল জামে হা/৩৫৪২; মিশকাত হা/২৮২৭।
[4]. বুখারী হা/২৭৬৬, ৬৮৫৭; মুসলিম হা/৮৯; মিশকাত হা/৫২।
[5]. ত্বাবরাণী কাবীর হা/৭৬৯৫; ছহীহুত তারগীব হা/১৮৬১।
[6]. ত্বাবারাণী হা/৪৬৩; হাকেম হা/২২৬১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭৯।
[7]. আহমাদ হা/২২০০৭; মিশকাত হা/২৮২৫; ছহীহাহ হা/১০৩৩।
[8]. ইবনু মাজাহ হা/২২৭৪; মিশকাত হা/২৮২৬, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৩৭।
[9]. ত্বাবারাণী আউসাত্ব হা/৭১৫১, ছহীহাহ হা/১৮৭১।
[10]. আবুদাঊদ হা/৩৫৪১, সনদ হাসান; মিশকাত হা/৩৭৫৭।