প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
[বাহারুল ইসলাম (৫৬) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর একজন মজলিসে আমেলা সদস্য। দ্বীনের পথে ফেরার পূর্বে তিনি এককালে কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। অতঃপর হকের সন্ধানে কমিউনিস্ট রাজনীতি ছেড়ে কয়েক বছর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। অবশেষে তিনি ‘আন্দোলনে’র দাওয়াত পান এবং বিশুদ্ধ ইসলামকে ধারণ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি ‘আন্দোলনে’র কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং যথাসাধ্য সময় ও শ্রম ব্যয় করে যাচ্ছেন। তাঁর জীবন ঘনিষ্ঠ নিম্নোক্ত সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ‘তাওহীদের ডাক’-এর নির্বাহী সম্পাদক আসাদুল্লাহ আল-গালিব।]
তাওহীদের ডাক : আপনি কেমন আছেন?
বাহারুল ইসলাম : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
তাওহীদের ডাক : কত সালে আপনার জন্ম হয়েছিল?
বাহারুল ইসলাম : ১৯৬৮ সালের ২৪শে অক্টোবর কুষ্টিয়া শহরে নানার বাড়ীতে আমার জন্ম।
তাওহীদের ডাক : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন?
বাহারুল ইসলাম : ১৯৭৩ সালে চুয়াডাঙ্গার প্রভাতী বিদ্যালয়ে আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল। এরপর ১৯৭৮ সালে মেহেরপুর বি.এম প্রাইমারী স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণী পাস করি। ১৯৮৪ সালে মেহেরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৮৬ সালে চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। ১৯৮৭-১৯৯১ সাল পর্যন্ত সময়টা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়। অবশেষে ১৯৯১ সালের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি.এ কোর্সে ভর্তি হই এবং ১৯৯২ সালে ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। ১৯৯৪ সালে সিসিএস (Conscious Consumers Society) এবং ১৯৯৫ সালে বিআইএম (Bangladesh Institute of Management) থেকে দু’টি সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করি। এরপর AMWAB(Association of Mass Welfare Agencies in Bangladesh)-য়েযোগদান করি। অতঃপর ১৯৯৭ সালে প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করি।
তাওহীদের ডাক : বর্তমানে আপনি কোন পেশায় আছেন?
বাহারুল ইসলাম : বর্তমানে আমি একজন প্যারামেডিক হিসাবে কর্মরত আছি। সপ্তাহে ৪ দিন পেশাগত ও পারিবারিক দায়িত্ব পালন করে থাকি। বাকী ৩দিন সাংগঠনিক দাওয়াতী কাজে সময় দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করি।
তাওহীদের ডাক : আপনি কখন ও কেন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন?
বাহারুল ইসলাম : আমি এইচএসসি পাসের পর ১৯৮৭ সালে ছাত্র মৈত্রীর মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় হই। ১৯৮৮ সালে পুরোপুরি সিপিবি (Communist Party of Bangladesh)-এর রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। কারণ ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ কমরেড মণি সিংহ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনের বিপুল গণজাগরণে অনুপ্রাণিত ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি বর্তমান নেত্রকোণা যেলার দুর্গাপুর উপযেলার সুসং-এ কৃষকদেরকে উৎপাদিত শস্যের উপর প্রচলিত খাজনার কয়েক গুণেরও বেশি খাজনা বা ট্যাক্স জমিদারদের প্রদান প্রথার বিরুদ্ধে সফল কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। অতঃপর ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিলেন। তার নেতৃত্বে ১৯ হাযার কমিউনিস্টপন্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাহস তাদের মধ্যে ছিল। আর এগুলিই ছিল আমার কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেওয়ার কারণ।
তাওহীদের ডাক : আপনি কেন কমিউনিস্ট পার্টি ছেড়ে আসলেন? এর প্রেক্ষাপট কি?
বাহারুল ইসলাম : সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতনের ফলে সিপিবি দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কমরেড মনি সিংহ মস্কোপন্থী এবং মোহাম্মাদ তোয়াহা চীনপন্থী ছিলেন। একপক্ষ পার্টির বিলোপ সাধন করে গণতান্ত্রিক ধারায় নতুন দল গঠন করে। অপর পক্ষ মূল ধারায় চলতে চায়। ১৯৯৩ সালের দিকে কমিউনিস্ট পার্টি তার আদর্শচ্যুত হ’লে আমি প্রত্যাবর্তন করি। ঐ সময় থেকে আমি ইসলাম সম্পর্কে পড়া শুরু করি এবং ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রগাঢ় হ’তে থাকে। ফলে ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝিতে আমি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে যুক্ত হই। ঐ বছর অগ্রসর কর্মী এবং ‘সাথী’ বা রুকন প্রার্থী হই।এভাবেই আমার কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ফিরে আসা।
তাওহীদের ডাক : আপনি কিভাবে আহলেহাদীছ হলেন?
বাহারুল ইসলাম : ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ‘যুবসংঘে’র কর্মী ও দায়িত্বশীল রবীউল ইসলাম (মেহেরপুর)-এর মাধ্যমে প্রথম আহলেহাদীছ আক্বীদা সম্পর্কে জানতে পারি। এ বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করতে থাকি। এর কিছুদিন পর বর্তমান ‘আন্দোলনে’র কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক নূরুল ইসলাম ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। আহলেহাদীছ সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানার জন্যে একবার তার সাথে কাজলাস্থ হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এ বই ক্রয়ের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম।
তাওহীদের ডাক : আপনার সাংগঠনিক জীবন কিভাবে শুরু হয়েছিল?
বাহারুল ইসলাম : ১৯৯৯ সালের ১৯শে মার্চ ‘আন্দোলনে’র প্রাথমিক সদস্য ফরম পুরনের মাধ্যমে সংগঠনের সদস্য হই। তখন কুষ্টিয়া-পূর্ব সাংগঠনিক যেলার সভাপতি ছিলেন মুস্তাকীম হোসেন। এছাড়াও ঐ সময় মাষ্টার হাশীমুদ্দীন সরকার, আতিউর রহমান, আবুল কালাম আযাদ, আব্দুল মান্নান, রাহেনুল হকসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের সাথে আমার পরিচয় হয়।
তাওহীদের ডাক : আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যারের সাথে আপনার প্রথম পরিচয় হয় কিভাবে?
বাহারুল ইসলাম : ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে ‘আন্দোলনে’র কর্মী সম্মেলনে মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের সাথে আমার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। আর ঐ সম্মেলনেই আমাকে কুষ্টিয়া-পূর্ব সাংগঠনিক যেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেদিন আমীরে জামা‘আত আমাকে বলেছিলেন, বাহারুল! জীবনে অনেক সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছ। এবার কুষ্টিয়ায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’কে গড়ে তোল। তোমাকে এর বেশী কিছু বলার নেই’। আমীরে জামা‘আতের সেদিনের কথা আজও আমার হৃদয়ে লালন করে আছি।
তাওহীদের ডাক : আমীরে জামা‘আতের সাথে আপনার কোন বিশেষ স্মৃতি আছে কি?
বাহারুল ইসলাম : মুহতারাম আমীরে জামা‘আত স্যারের সাথে আমার বহু স্মৃতিবিজড়িত ঘটনা রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখযোগ্য। যেমন- (১) স্যার ড. লোকমান হোসাইন ভাইকে কুষ্টিয়ায় ‘আন্দোলনে’র সভাপতির দায়িত্ব এবং মজলিসে শূরার অন্তর্ভুক্ত করার পর সকলের আড়ালে আমাকে ডেকে বললেন, ড. লোকমান দুর্বল খুঁটি। তবে তুমি শক্ত প্যালা। খুঁটি ভেঙ্গে যেতে পারে, তবে আমি আশাবাদী তুমি একটুও বেঁকে যাবে না। পরবর্তীতে আমরা স্যারের গভীর দূরদৃষ্টি সত্য হ’তে দেখেছি। ২০০৫ সালে বিএনপি ও ইসলামী মূল্যবোধের সরকারের দ্বারা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-কে জঙ্গী ট্যাগ লাগিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কেন্দ্রীয় ৪ নেতাসহ অসংখ্যা নেতা-কর্মীর উপর নেমে আসে জেল-যুলুম ও নির্যাতন। এ সময় ড. লোকমান হোসাইন ‘আন্দোলনে’র কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক ছিলেন। একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে এই বিভিষীকাময় সময়ে স্যার ড. লোকমান হোসাইনকে ‘আন্দোলনে’র ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিরবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।
(২) ২০০৪ সালের ১৪ই এপ্রিল আমীরে জামা‘আত কুষ্টিয়ার রিযিয়া সা‘দ ইসলামিক সেন্টার মিলনায়তনে ‘শিক্ষা ব্যবস্থায় ধ্বস : কিছু পরামর্শ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় হ’ল এর ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভৌত কাঠামোর শ্রীবৃদ্ধি ঘটলেও শিক্ষার মান ক্রমেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমীরে জামা‘আত সেদিন দেশের পতনোন্মুখ শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলেছিলেন, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান গলদ হ’ল তিনটি। ১. জাতীয় লক্ষ্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা ২. মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা নামে প্রচলিত দ্বিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা ৩. ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাপনা। অতঃপর এগুলির সমাধানে তিনি সুনির্দিষ্ট ১১টি প্রস্তাব সমূহ পেশ করেন। প্রধান আলোচক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-এর দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক ডীন ড. এ.কে.এম. নূরুল আলম বলেন, একটি কেন ১০টি সেমিনার করলেও প্রবন্ধের উপরে আলোচনা শেষ করা যাবে না। মাননীয় প্রবন্ধকার এত সারগর্ভ ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অবতারণা করেছেন যে, এর একটি পয়েন্টের উপরে আলোচনা করতেই একটি সেমিনার শেষ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের খ্যাতিমান আইনজীবী ও প্রবীণ রাজনীতিক, রিযিয়া সা‘দ ইসলামিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জনাব এডভোকেট সা‘দ আহমাদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক ডীন ড. এ. কে.এম. নূরুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লোকমান হোসাইন। আলোচক হিসাবে ছিলেন, জনাব ফরহাদ হোসায়েন (সহকারী অধ্যাপক বাংলা বিভাগ, ইসলামিয়া কলেজ, কুষ্টিয়া), হাফেয আব্দুল করীম (প্রভাষক, ইসলামী শিক্ষা বিভাগ, আফসারুদ্দীন মেমোরিয়াল মহিলা ফাযিল মাদ্রাসা, কুষ্টিয়া)। এছাড়াও সেমিনারে বিশেষ দাওয়াতে অংশগ্রহণ করেন কুষ্টিয়া শহরের গণ্যমান্য শিক্ষানুরাগী আইনজীবী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও সুধীবৃন্দ।
(৩) ২০১০ সালের ১১ই মে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ কুষ্টিয়া যেলার উদ্যোগে বাদ আছর যেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী ময়দানে অনুষ্ঠিত যেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন শেষে স্যার সাথীদের নিয়ে গাড়ীর দিকে এগিয়ে যান। এমন সময় একজন পুলিশ জানালার ধারে এসে সালাম করল। স্যার তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলল, আমি আহলেহাদীছ, বাড়ী খুলনা যেলার রূপসা, চাঁদপুরে। তারপর তিনি আমাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে বললেন, স্যারকে সেভ করার জন্য আমি আছি। অন্য সাথীরা চলে গেছে। তারপর আমরা স্যারকে ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে হোটেল রিভারভিউ-য়ে আসি। সেখানে হোটেল কক্ষে স্যার ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তখন আমি ঐ পুলিশকে সিভিল ড্রেসে দেখলাম কখনও রুমের ভিতরে, কখনও বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। স্যার আমাকে ইঙ্গিত দিলেন। অতঃপর বাইরে গিয়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমি মূলত পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকুরীরত। স্যার আহলেহাদীছের রত্ন। তিনি যখন থাকবেন না তখন আপনারা বুঝবেন তিনি কে ছিলেন। স্যারের উপর জঙ্গী হামলা হ’তে পারে এমন রিপোর্ট আমাদের কাছে আছে। আমি স্যারকে রক্ষার জন্য দুইটা পিস্তল সঙ্গে নিয়ে এসেছি। স্যারের উপরে কোন হামলা হলে আগে দশটা লাশ পড়বে। তারপর আমি মরব’। ওনার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এল। দূর থেকে এসব মানুষ স্যারকে কতটা ভালোবাসে। অথচ আমরা কাছে থেকেও তাঁকে চিনতে পারিনা। পুলিশটির নাম আমি আজও ভুলিনি।
তাওহীদের ডাক : অর্থ সম্পাদক হিসাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?
বাহারুল ইসলাম : ব্যক্তি ও সাংগঠনিক জীবনে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দার জন্য যে রিযিক নির্ধারণ করেছেন তা আমাদের নিকট আসবেই। সুতরাং রিযিক অন্বেষণের জন্য অস্থির হওয়ার কিছুই নেই। সাথে সাথে প্রাপ্ত রিযিক থেকে অপব্যয় ও অপচয় বন্ধ করাও যরূরী। এর মাধ্যমেই ব্যক্তি, সংগঠন ও রাষ্ট্রের উন্নতি হওয়া সম্ভব।
তাওহীদের ডাক : ব্যক্তি জীবনে সফলতার মূলমন্ত্র সম্পর্কে তরুণদের কী বলবেন?
বাহারুল ইসলাম : সর্বাবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে জীবন যাপন করতে হবে। সুতরাং ক্যারিয়ার গঠনের আগে আল্লাহর অনুগত্যশীল বান্দা হ’তে হবে। তবেই জীবনের প্রকৃত সফলতার স্বাদ আস্বাদন করা সম্ভব হবে।
তাওহীদের ডাক : সাংগঠনিক জীবনে সফলতা অর্জনের উপায়গুলি যদি বলতেন?
বাহারুল ইসলাম : সাংগঠনিক জীবনে সফলতার অন্যতম উপায় হ’ল- প্রজ্ঞা অর্জন করা, দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করা, অলসতা ও বিলাসিতা পরিহার করা। একনিষ্ঠভাবে আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের জন্য কাজ করা। এ কয়েকটি গুণ অর্জন করতে পারলে ইনশাআল্লাহ যে কোন স্তরের দায়িত্বশীল তার সাংগঠনিক জীবনে সফল হ’তে পারবেন।
তাওহীদের ডাক : সংগঠন বিমুখ ব্যক্তিদের ব্যাপারে কিছু বলবেন?
বাহারুল ইসলাম : ফলের দোকানে লটকানো থোকায় ঝোলানো আঙ্গুরগুলোর মূল্য বেশী। কিন্তু থোকা থেকে ঝরে পড়া আঙ্গুরের মূল্য অনেক কম। সংগঠনের বাইরে থাকায় তারা জামা‘আতবদ্ধ জীবনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত। তারা এর মর্ম কি বুঝবে? এছাড়াও সংগঠন বিমুখ কিছু ব্যক্তি ঐ লেজকাটা হনুমানের মত। যার হতবুদ্ধিতার কারণে নিজের লেজ কাটা পড়লে অন্যদেরও তার দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। সর্বোপরি যেখানে রাসূল (ছাঃ)-এর দ্ব্যর্থহীন হাদীছ রয়েছে, ‘জামা‘আতবদ্ধ জীবন হ’ল রহমত ও বিচ্ছিন্ন জীবন হ’ল আযাব’। এ হাদীছ জানার পরও কেন আমরা বিচ্ছিন্ন থাকব?
তাওহীদের ডাক : দাওয়াতী জীবনে আপনার কোন স্মৃতি আছে কি?
বাহারুল ইসলাম : মেহেরপুরের রবীউল ইসলাম ভাইয়ের মাধ্যমেই আমার এ সংগঠনে আসা। ২০০১ সালের কোন একদিন সকালে হঠাৎ তার আববা কুষ্টিয়ায় আসেন। অচেনা এক বয়োবৃদ্ধ মুরুববীকে দেখে আমি তার পরিচয় জানতে চাইলাম। তাতে জানলাম যে, তিনি রবীউলের আববা। রবীউলের ভাইয়েরা তার পড়াশুনার খরচ বন্ধ করে দিলে পরিবারের সাথে সে যোগাযোগ বন্ধ করে কুষ্টিয়া শহরে এক মেসে উঠে। তাই ছেলের কোন খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ছেলের খোঁজ করতে কুষ্টিয়া শহরে এসেছেন।
চাচাজীকে রবীউলের সাথে আমার দ্বীনী ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের কথা জানালাম এবং রবীউল ইসলাম যে মাঝে-মধ্যেই আমার সাথে দেখা করে, মাসিক আত-তাহরীক বা হাদীছ ফাউন্ডেশনের বই-পত্র দেয় তা বললাম। আর চাচাজীকে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম। সকালে আমাদের জন্য প্রস্ত্ততকৃত নাশতা চাচাজীকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ালাম। নাস্তা শেষে চাচাজীকে বললাম, আপনার ছেলে কোথায় থাকে বা কোন মেসে থাকে তা আমি জানিনা। তবে সে যখনই আমার সাথে দেখা করতে আসবে, তখনই আমি আপনার সংবাদ তাকে দেব ইনশাআল্লাহ। তিনি সন্তানের খোঁজ পেয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ী ফিরে গেলেন।
পরের বছর মেহেরপুর যেলা সম্মেলনে আগত মেহমানদের আতিথেয়তার ব্যবস্থা রবীউল ভাইয়ের বাড়ীতে করা হয়। আমার সেখানে পৌঁছতে দেরী হওয়ায় প্রায় বিকাল বেলা দুপুরের খাবারের সময় দেখলাম, রবীউলের সেই বৃদ্ধ পিতা আমার আসার অপেক্ষায় না খেয়ে বসে আছেন। খাবারের সময় তিনি বললেন, একজন অপরিচিত মানুষকে তুমি যে আতিথেয়তা দেখিয়েছিলে তার তুলনায় এটা কিছুই না। আমি চাচাজীর কথায় অভিভূত হলাম।
তাওহীদের ডাক : যুবসমাজের জন্য কিছু নছীহত করুন।
বাহারুল ইসলাম : বর্তমানে যুবসমাজ আদর্শহীন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্রে সর্বত্র আদর্শ নিয়ে টিকে থাকা কঠিনতর হচ্ছে। সুতরাং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে নিজেকে গড়তে খালেছ অন্তরে ‘যুবসংঘে’র মত তাওহীদী সংগঠনের পতাকাতলে আসতে হবে। তাহ’লে দুনিয়াবী পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে এবং জান্নাতের পথ সুগম হবে ইনশাআল্লাহ।
তাওহীদের ডাক : ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকার পাঠকদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতেন।
বাহারুল ইসলাম : নতুন নতুন জ্ঞান অর্জনে পড়াশুনার কোন বিকল্প নেই। মাসিক আত-তাহরীক, তাওহীদের ডাক, সোনামণি প্রতিভার মত পত্রিকা সেই পড়াশোনার চর্চাই ছড়িয়ে দিচ্ছে। এজন্য এই পত্রিকাগুলো নিয়মিত পড়া এবং অন্যকে পড়ানোর জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ রইল।
তাওহীদের ডাক : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাহারুল ইসলাম : আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ‘তাওহীদের ডাকে’র সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে পত্রিকার উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করছি। আল্লাহ যেন এই পত্রিকাকে তার দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে কবুল করেন।-আমীন!