আল্লাহর পথে যত পরীক্ষা
আব্দুল্লাহ
ভূমিকা : মানুষ হ’ল আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আল্লাহ তাকে বিবেক-বুদ্ধি ও সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি এই মানুষকে একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যেমন মানুষের মধ্যে নবী-রাসূলগণ হলেন শ্রেষ্ঠ। আবার আল্লাহ একজন নবীর উপর অপর নবীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এভাবে রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাসূল নির্বাচন করেছেন। আর সমস্ত নবী-রাসূলদের মধ্যে একজনকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আর তিনি হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আর নবী মুহাম্মাদের উম্মত হিসাবে আমরা হলাম শ্রেষ্ঠ উম্মত এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদান। এই উম্মতের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা এমন কিছু আমল বাতলিয়ে দিয়েছেন যা পালন করলে দ্বিগুণ ছওয়াব লাভ করা যায়। নিম্নে তা বর্ণিত হ’ল।
১. আহলে কিতাবের অনুসারীর ইসলাম গ্রহণ : ইসলাম একটি শ্বাশত জীবন বিধান। আর এই ইসলাম প্রকাশিত হওয়ার পর আহলে কিতাবের কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তাহ’লে তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ ছওয়াব। মহান আল্লাহ বলেন,إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ قَالُوا آمَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ- أُولَئِكَ يُؤْتَوْنَ أَجْرَهُمْ مَرَّتَيْنِ، ‘যখন তাদের নিকট এটি পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে আমরা এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এটা আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে আগত সত্যবাণী। আর আমরা ইতিপূর্বেও আজ্ঞাবহ ছিলাম’। তারা দ্বিগুণ পুরস্কারপ্রাপ্ত হবে’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৩-৫৪)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তিন ধরনের ব্যক্তির জন্য দু’টি ছওয়াব রয়েছে, তন্মেধ্যে একটি হ’ল- (১)رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، آمَنَ بِنَبِيِّهِ، وَآمَنَ بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- আহলে কিতাব যে ব্যক্তি তার নবীর ওপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপরও ঈমান এনেছে’।[1]
২. কষ্ট সত্ত্বেও কুরআন তেলাওয়াতকারী : কুরআন হ’ল মানুষের হেদায়াতের পথনির্দেশিকা। ফলে এই কুরআন শেখন-পঠন সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা জীবনের প্রথম দিকে কুরআন না শেখার কারণে শেষ বয়সে এসে কুরআনে শেখা কষ্টকর হয় অথবা অনেকের স্বাভাবিকভাবে কুরআন শেখা কষ্টকর হয়। আর এমন ব্যক্তিদের জন্য কুরআন পাঠে দ্বিগুণ ছওয়াব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهُوَ مَاهِرٌ بِهِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِى يَقْرَؤُهُ وَهُوَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِ فَلَهُ أَجْرَانِ، ‘কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন পড়ার সময় আটকে যায় এবং কষ্ট করে তেলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ ছওয়াব’।[2]
৩. নিকটাত্মীয়দের দানকারী : দান করার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ছওয়াব রয়েছে। তথাপি যদি কেউ নিকটাত্মীয়কে দান করে তাহ’লে সেই ছওয়াবের সাথে আত্মীয়তা রক্ষার ছওয়াব যোগ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِيْنِ صَدَقَةٌ وَهِىَ عَلَى ذِى الْقَرَابَةِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ- ‘দরিদ্রকে দান করলে কেবল ছাদাক্বার ছওয়াব মেলে। আর আত্মীয়কে দান করলে ছাদাক্বার ছওয়াব ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার ছওয়াব উভয়ই পাওয়া যায়’।[3]
৪. আছরের ছালাত হেফাযতকারী : পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছালাত হ’ল ফজর ও আছর ছালাত। আবু বাছরাহ গিফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুখাম্মাস নামক স্থানে আমাদের নিয়ে আছরের ছালাত আদায় করে বললেন, إِنَّ هَذِهِ الصَّلاَةَ عُرِضَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَضَيَّعُوهَا فَمَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَ لَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ ‘এ ছালাত তোমাদের পূর্ববর্তীদের নিকট পেশ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা এ ছালাত ধ্বংস করেছিল। যে ব্যক্তি এ ছালাতের প্রতি যত্নবান হবে তাকে দ্বিগুণ ছওয়াব দেয়া হবে’।[4]
৫.তায়াম্মুম দ্বারা ছালাত আদায়ের পর পানি পাওয়ায় ওযূ দ্বারা আবারও ছালাত আদায়কারী : আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, দু’জন লোক সফরে বের হ’ল। পথিমধ্যে ছালাতের সময় হলে তাদের কাছে পানি ছিল না। তাই তারা পবিত্র মাটিতে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করে। অতঃপর ছালাতের সময়ের মধ্যেই তারা পানি পেলে তাদের একজন ওযু করে আবার ছালাত আদায় করে এবং দ্বিতীয়জন তা করল না। এরপর তারা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে তা বর্ণনা করে। যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করেনি তাকে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি সুন্নাতের উপরই ছিলে। এ ছালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করেছে তাকে বললেন, لَكَ الْأَجْرُ مَرَّتَيْ ‘তোমার জন্য দ্বিগুণ ছওয়াব রয়েছে’।[5]
৬. সঠিক বিচারক : একজন বিচারকের আবশ্যকীয় কর্তব্য হ’ল সঠিক বিচার করা। তিনি যদি প্রলুব্ধ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দ্বারা সর্বোকৃষ্ট ফায়ছালা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাহ’লে তিনি দ্বিগুণ ছওয়াব পাবেন। আমর বিন ‘আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ- ‘বিচারক যখন বিচারকার্য সম্পাদন করেন অতঃপর ইজতিহাদ করেন আর তা যদি সঠিক হয় তবে তার জন্য দ্বিগুণ ছওয়াব রয়েছে। আর বিচারকের ইজতিহাদ যদি ভুল হয়, তবুও তার জন্য একগুণ ছওয়াব রয়েছে’।[6]
৭. সমুদ্রে ডুবে মারা গেলে : উম্মু হারাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,الْمَائِدُ فِي الْبَحْرِ الَّذِي يُصِيبُهُ الْقَيْءُ لَهُ أَجْرُ شَهِيدٍ وَالْغَرِيقُ لَهُ أَجْرُ شَهِيدَيْنِ- ‘নৌযানে সফরকালীন মাথা ঘোরার ফলে বমি (ইত্যাদি সমস্যা) হ’লে একজন শহীদের ন্যায় ছওয়াবের অধিকারী হবে। আর সমুদ্রে ডুবে মৃত্যুবরণ করলে দু’জন শহীদের সমপরিমাণ ছওয়াব অর্জিত হবে’।[7]
৮. জিহাদে জন্য দানকারী : আল্লাহর পথে জিহাদ একটি উত্তম কাজ। যৌক্তিক কারণে যদি কেউ জিহাদে যেতে না পেরে কোন মুজাহিদকে রসদ-পত্র সরবরাহ করেন তাহ’লে তিনি দান ও মুজাহিদের দু’ই ছওয়াব পাবেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لِلْغَازِي أَجْرُهُ وَلِلْجَاعِلِ أَجْرُهُ وَأَجْرُ الْغَازِي মুজাহিদ জিহাদ থেকে গাযী হয়ে ফিরে আসার পূর্ণ ছওয়াবের অধিকারী হবেন। আর জিহাদের জন্য রসদ-পত্র দানকারী জিহাদে শামিল হওয়া ও দান করা উভয়ের (দু’টি) ছওয়াবের অধিকারী হবেন’।[8]
অন্যত্র যায়েদ বিন খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেন, مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللهِ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَجْرِ الْغَازِي شَيْئًا ‘যে ব্যক্তি (জিহাদের জন্য) কোন যোদ্ধাকে (তার রসদ সহ) সাজিয়ে দেয়, সেই ব্যক্তিও ঐ যোদ্ধার সমপরিমাণ ছওয়াব লাভ করে, এতে ঐ যোদ্ধার ছওয়াবও কিছু পরিমাণ কম হবে না’।[9]
৯. মুওয়াযযিন : আমাদের সমাজে ইমাম মুওয়াযযিনের মর্যাদা না থাকলেও আল্লাহর নিকট অফুরন্ত সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে। ক্বিয়ামাতের দিন তাদের গরদান সবচেয়ে উচু হবে। এছাড়াও তাদের আযান দেওয়ার নেকী এবং তাদের আযানের আহবানে যত মানুষ ছালাত আদায় করবে তারও নেকী পাবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَهُ مَدَّ صَوْتِهِ وأجره مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّى مَعَهُ ‘মুওয়াযযিনকে তার আযানের ধ্বনি যতদূর পৌঁছবে ততদূর পর্যন্ত ক্ষমা করা হয়। আর প্রত্যেক সজীব ও নির্জীব বস্ত্ত যে তার আযান ধ্বনি শুনবে সবাই তার সত্যায়ন করে। যারা তার সাথে ছালাত আদায় করবে তার অনুরূপ ছওয়াবও তাকে লিখে দেওয়া হবে’।[10]
১০. ছায়েমকে ইফতার করানো ব্যক্তি : আল্লাহ নৈকট্য লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম হ’ল ছিয়াম। ছিয়াম সাহারী ছুবহে ছাদিকের পূর্বে নিয়তের সাথে খানা-পিনার মাধ্যমে শুরু হয় এবং শেষ হয় ইফতার করার মাধ্যমে। আর এই ছায়েমকে যদি কোন ব্যক্তি ইফতার করায়, তাহ’লে সে ছায়েমের মত ছওয়াব লাভ করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا ‘যে ব্যক্তি ছায়েমকে ইফতার করাবে, তার জন্য ঐ ছায়েমদের অনুরূপ ছওয়াব রয়েছে। অথচ তাদের ছওয়াবে কোন কমতি করা হবে না’।[11]
১১. দ্বীনী ইল্ম শিক্ষাদানকারী : দ্বীনী ইল্ম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয। আর এই সম্মানিত শিক্ষদানের কাজে যিনি নিয়োজিত থাকেন তিনি দ্বিগুণ ছওয়াব লাভ করবেন। সাহল বিন মু‘আয বিন আনাস স্বীয় পিতা (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا فَلَهُ أَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهِ لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الْعَامِلِ شيء- ‘যে ব্যক্তি ইসলামের জ্ঞান শিক্ষা দিবে, সে তদানুযায়ী আমলকারীর অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। এতে আমলকারীর প্রতিদান কোন অংশে কম হবে না’।[12]
১২. জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণকারী : কোন ব্যক্তি যদি জানাযা শেষে দাফন কার্য সম্পাদন করে, তাহ’লে সে জানাযার জন্য এক ক্বীরাত এবং দাফন দেওয়ার জন্য আরও এক ক্বীরাত ছওয়াব অর্জন করবে। মুসাইয়াব ইবনু রাফি হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু ‘আযেব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ تَبِعَ جَنَازَةً حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ قِيرَاطٌ وَمَنْ مَشَى مَعَ الْجَنَازَةِ حَتَّى تُدْفَنَ كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ قِيرَاطَانِ وَالْقِيرَاطُ مِثْلُ أُحُدٍ- ‘যে ব্যক্তি জানাযার ছালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযার অনুগমন করে তার জন্য এক ক্বীরাত ছওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি দাফন করা পর্যন্ত জানাযার অনুগামী হয় তার জন্য দুই ক্বীরাত ছওয়াব রয়েছে। এক ক্বীরাত উহুদ পাহাড়ের সমপরিমাণ’।[13]
১৩. ঋতুবতী মহিলাদের ত্বাওয়াফে ইফাযাহ : আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি ওমরার ইহরাম বাঁধলেন, এরপর (মক্কায়) পৌঁছলেন এবং বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ না করতেই ঋতুবতী হলেন। এরপর তিনি হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন এবং এর যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন ত্বাওয়াফ ব্যতীত। নবী করীম (ছাঃ) মিনায় অগ্রসর হওয়ার দিন তাকে বললেন, তোমার (একবারের) ত্বাওয়াফই তোমার হজ্জ ও ওমরাহ উভয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তিনি তাতে তৃপ্ত হলেন না। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে তার ভাই আব্দুর রহমানের সাথে তানঈম পাঠালেন। অতএব তিনি হজ্জের পর (এখান থেকে) ইহরাম বেঁধে ওমরাহ করলেন’।[14]
১৪. মুনিব ও আল্লাহর হক আদায়কারী কৃতদাস : একজন কৃতদাস যদি সে তার মুনিবের যথাযথ হক আদায়ের সাথে আল্লাহর হকও আদায় করতে পারে, তাহ’লে সে দ্বিগুণ ছওয়াব পাবে। আবু মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ ছওয়াব রয়েছে। তন্মন্ধে একটি হ’ল,وَالْعَبْدُ الْمَمْلُوكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللهِ وَحَقَّ مَوَالِيهِ ‘যে ক্রীতদাস যথা নিয়মে আল্লাহর হক আদায় করেছে পুনরায় নিজের মুনীবের হকও আদায় করেছে’।[15]
অপর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الْمُصْلِحِ أَجْرَانِ وَالَّذِي نَفْسُ أَبِي هُرَيرَةَ بِيَدِهِ لَوْلاَ الجِهَادُ فِي سَبيلِ اللهِ وَالحَجُّ وَبِرُّ أُمِّي لأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوتَ وَأنَا مَمْلُوكٌ ‘আল্লাহ ও নিজ মনিবের) হক আদায়কারী অধীনস্থ দাসের দ্বিগুণ ছওয়াব অর্জিত হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আবু হুরায়রার জীবন আছে! যদি আল্লাহর পথে জিহাদ, হজ্জ ও আমার মায়ের সেবা না থাকত, তাহ’লে আমি পরাধীন গোলাম রূপে মৃত্যুবরণ করা পছন্দ করতাম’।[16]
১৫. ক্রীতদাসীকে বিবাহকারী : কোন ব্যক্তি যদি তার কৃতদাসীকে উত্তম শিক্ষাদানের পর স্বাধীন করে দেওয়ার পর বিবাহ করেন, তাহ’লে তিনি দ্বিগুণ ছওয়াব পাবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَرَجُلٌ كَانَتْ عِنْدَهُ أَمَةٌ يَطَؤُهَا فَأَدَّبَهَا فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا وَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمَهَا ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا فَلَهُ أَجْرَانِ،‘যার তত্ত্বাবধানে ক্রীতদাসী ছিল, সে তার সঙ্গে সহবাস করেছে, তাকে উত্তমরূপে আদব-কায়দাও শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে মুক্ত করে দিয়ে স্বীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে’।[17]
১৬. সুন্নাহ পুনর্জীবিতকারী : কোন মৃত সুন্নাতকে যদি কোন ব্যক্তি চালু করেন তাহ’লে পরবর্তীদের সমপরিমাণ ছওয়াব পাবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ- ‘ইসলামে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ চালু করলো সে এ চালু করার ছওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ ছওয়াব সে পাবে। অথচ এদের ছাওয়াব কিছু কমবে না’।[18]
অপর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ- ‘যে ব্যক্তি কাউকে কোন কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শন করে, সে উক্ত কার্য সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব পাবে’।[19]
১৭. কোন নারী যদি স্বামী-সন্তানদের জন্য খরচ করে : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদের স্ত্রী যয়নব অন্য একজন আনছার মহিলা বেলালের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে প্রশ্ন পাঠাল এই মর্মে যে, তারা তাদের অভাবগ্রস্থ স্বামী ও সন্তানদের ছাদাক্বা দিতে পারবে কি না? জওয়াবে রাসূল (ছাঃ) বলে পাঠালেন, পারবে। তিনি আরও বলেন, لَهُمَا أَجْرَانِ أَجْرُ الْقَرَابَةِ وَأَجْرُ الصَّدَقَةِ- ‘তাদের জন্য দু’টি পুরস্কার রয়েছে। আত্মীয়তা রক্ষার পুরস্কার ও ছাদাক্বার পুরস্কার’।[20]
উপসংহার : আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তার প্রিয় বান্দার ছওয়াবের পাল্লা ভারী করার জন্য নানাবিধ আমলের পদ্ধতি নবী করীম (ছাঃ)-এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং বান্দা হিসাবে আমাদেরকে সেই আমলগুলির প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে উপরোক্ত আমলগুলি সাধ্যমত করার তাওফীক দান করুন।-আমীন!
[1]. বুখারী হা/৯৭; মুসলিম হা/১৫৪; মিশকাত হা/১১।
[2]. বুখারী হা/৪৯৩৭ আবুদাঊদ হা/১৪৫৪; তিরমিযী হা/২৯০৪।
[3]. তিরমিযী হা/৬৫৮; মিশকাত হা/১৯৩৯, সনদ ছহীহ।
[4]. মুসলিম হা/৮৩০; নাসাঈ হা/৫২১।
[5]. আবুদাউদ হা/৩৩৮; দারেমী হা/৭৪৪; মিশকাত হা/৫৩৩, সনদ ছহীহ।
[6]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩৫২; মুসলিম হা/১৭১৬; মিশকাত হা/৩৭৩২।
[7]. আবুদাঊদ হা/২৪৯৩; মিশকাত হা/৩৮৩৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৩৪৩।
[8]. আবুদাঊদ হা/২৫২৬; মিশকাত হা/৩৮৪২; ছহীহহা হা/২১৫৩।
[9]. ইবনু মাজাহ হা/২৭৫৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৯৪।
[10]. নাসাঈ হা/৬৪৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৫।
[11]. তিরমিযী হা/৮০৭; ইবনু মাজাহ হা/১৭৪৬; মিশকাত হা/১৯৯২।
[12]. ইবনু মাজাহ হা/২৪০; ছহীহুত তারগীব হা/৮০।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/২৪০; ছহীহুত তারগীব হা/৮০।
[14]. মুসলিম হা/১২১১; আহমাদ হা/২৪৯৭৬।
[15]. বুখারী হা/৯৭; মুসলিম হা/১৬৬৬; মিশকাত হা/১১।
[16]. মুসলিম হা/১৬৬৫; আহমাদ হা/৯২১৩।
[17]. বুখারী হা/৯৭; মুসলিম হা/১৬৬৬; মিশকাত হা/১১।
[18]. মুসলিম হা/১০১৭; মিশকাত হা/২১০।
[19]. মুসলিম হা/১৮৯৩; মিশকাত হা/২০৯।
[20]. বুখারী হা/১৪৬৬; মুসলিম হা/১০০০ (৪৫); মিশকাত হা/১৯৩৪।