আলোচিত ছাত্র আন্দোলন : একটি পর্যালোচনা

সাইফুল ইসলাম 47 বার পঠিত

ছাত্ররাই একটি জাতির ভবিষ্যৎ। প্রজ্ঞা, ন্যায়-নীতি, আদর্শ-মূল্যবোধ ও স্বশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিই হয়ে উঠতে পারে একটি জাতির কর্ণধর। জাতি গঠনের জন মানুষকে নৈতিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা যরুরী। আর এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন ও বৈষম্যহীন আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করতে পারবে কেবল ছাত্রসমাজই। এ জন্যই একটি আদর্শ সমাজ গঠনে ছাত্রসমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। ছাত্রসমাজ যে কোনো অধিকার আদায়ে সচেষ্ট। তবে ছাত্রদের দাবি আদায় করতে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস বহু পুরনো। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে যৌক্তিক অধিকার আদায়ে মাঠে নেমেছে শিক্ষার্থীরা’।[1] নিম্নে যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুতবপূর্ণ আলোচিত কিছু ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরা হ’ল-

১. ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়, চিন : ১৬০ খ্রিস্টাব্দে চীনে বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম ছাত্র আন্দোলন হয়। ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন সরকারের কয়েকটি নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। তাদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন কিছু মেধাবী ছাত্রনেতা। তারা ছিল তুলনামূলকভাবে গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা। এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। প্রায় ৩০ হাযার মানুষ এ আন্দোলনে অংশ নেয় এবং তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে’।[2]

২. ফরাসি বিপ্লব ও বোহেমিয়ান বিদ্রোহ : ফরাসি বিপ্লবের সময় ছাত্ররা বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ফ্রান্সের শিক্ষার্থীরা রাজা ও সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। তারা নতুন এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। ১৮৪৮ সালের বোহেমিয়ান বিদ্রোহের সময়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা জাতীয়তাবাদী এ আন্দোলনে অংশ নেয়।

৩. হোয়াইট রোজ আন্দোলন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে এক অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করে। তারা ‘হোয়াইট রোজ’ নামে একটি গ্রুপ গঠন করে। তাদের এই প্রচেষ্টা নাৎসি সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে সহায়তা করে এবং নাৎসি প্রোপাগান্ডা মেশিনে কিছুটা হলেও ফাটল তৈরী করতে সক্ষম হয়।

৪. গ্রিলবোরো ধর্মঘট : যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার উলওর্থ লাঞ্চ কাউন্টারে সাদা-কালো ভেদাভেদের প্রতিবাদে চারজন কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র ধর্মঘট শুরু করে। তাদের আন্দোলনের সাথে শীঘ্রই আরও ৩০০ শিক্ষার্থী যোগ দেয় এবং এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাঞ্চ কাউন্টার গুলোতে বর্ণ বৈষম্য রহিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালে নাগরিক অধিকার আইন পাস হয়। যা মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একটি মাইলফলক ছিল।

৫. মে ১৯৬৮ মুভমেন্ট : ফ্রান্সের মে ১৯৬৮ মুভমেন্ট ছিল একটি বিশাল ছাত্র আন্দোলন। এই সময়ে ফ্রান্সের শিক্ষার্থীরা সংস্কার এবং সামাজিক ন্যায় বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এই আন্দোলন ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।

৬. জাতিবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন : দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েতোর পাবলিক স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা বর্ণ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন, জোহানেসবার্গে কয়েক হাযার শিক্ষার্থী একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেয়। তবে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায় এবং এতে অনেক শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হয়। এই আন্দোলন ১৯৯৪ পর্যন্ত চলেছিল এবং শেষ পর্যন্ত বর্ণবিদ্বেষী শাসনব্যবস্থার পতন ঘটে এবং নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

৭. তিয়েন আনমেন স্কোয়ার আন্দোলন : চীনের সাবেক কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব হু ইয়াওবাংয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া তিয়েন আনমেন স্কোয়ার আন্দোলনে হাযার হাযার ছাত্র। এছাড়াও সাধারণ মানুষ সরকারের স্বচ্ছতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য অধিকার আদায়ের দাবীতে রাস্তায় নামে। ১৯৮৯ সালের ৪ঠা জুন চীনা সেনাবাহিনী তিয়েন আনমেন স্কয়ারে সমবেত মানুষের ওপর গুলি চালায়। এতে কয়েকশো মানুষ নিহত হয়। এই আন্দোলনের পর চীনে রাজনৈতিক স্বাধীনতা না এলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় কিছুটা উদারনীতি চালু হয়।

৮. ইরানের ছাত্র বিক্ষোভ : ১৯৯৯ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে পুলিশের অযাচিত অভিযান এবং শিক্ষার্থীর ওপর নৃশংস হামলার পর ইরানের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভে অংশ নেন। এই আন্দোলনের ফলে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এবং সর্বোচ্চ ধর্মীয়নেতা পুলিশী অভিযানের সমালোচনা করে সংযমের আহবান জানান। এই আন্দোলন পরবর্তীতে ইরানের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৯. বাহান্নর ভাষা আন্দোলন : ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে মুক্তির পর এই অঞ্চলের ছাত্র সমাজই প্রথম অনুধাবন করেছিল আমাদের প্রকৃত মুক্তি হয়নি। শোষণের জাল বিস্তার করে আছে চতুর্দিকে। দেশভাগের মাত্র সাত মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালের ১১ ই মার্চ বাংলার ছাত্র সমাজকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মাঠে নামতে হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা দেন- Urdu will be the only state language of Pakistan (উর্দু হবে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা) এতে গর্জে ওঠে ছাত্রসমাজ। এই প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে প্রতিবাদ মিছিলে নামে ছাত্ররা। মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। ছাত্র আন্দোলনের মুখে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় সরকার।[3] এমনি করে ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতার সংগ্রাম, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কসহ কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যাবতীয় সামাজিক অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও একটি স্বৈরাচারী শাসকের পতন : ২০২৪ সালের জুলাই মাস এবং আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব ও অভূতশ্রুত গণআন্দোলনের মাধ্যমে বিকারগ্রস্ত স্বৈরতন্ত্রের ধারক শেখ হাসিনা পলায়ন করে জনতার রুদ্র রোষ থেকে জীবন রক্ষা করেন। সমসাময়িক পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি অনন্য সংযোজন। পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাসে এরকম রক্তাক্ত গণআন্দোলনের রেকর্ড বিরল। উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত নবজাগরণের বা রেনেসাঁর উন্মেষ থেকেই নবপর্যায়ের এই গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। দেশের তরুণ ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে।

গত শতাব্দীর অন্যতম ফ্যাসিবাদী শাসক হিটলার তার পতনের বছর কয়েক আগে দম্ভ করে ঘোষণা করেছিলেন, "the third reich will rule the world for one thousand years. ‘অর্থাৎ হিটলারের জার্মানি (তৃতীয় জার্মান রাষ্ট্র বা সাম্রাজ্য) এক হাযার বছর পৃথিবী শাসন করবে। এই ঘোষণার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে হিটলারের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। তার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এক নতুন পৃথিবীর যাত্রা শুরু হয়। ইতালীয় দার্শনিক ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা ভিলফেডো পেরেটো (pareto) মুসোলিনির শাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য তত্ত্ব হাযির করেন -History is the graveyard of aristocracy অর্থাৎ মানব ইতিহাস অভিজাততন্ত্রের সমাধিক্ষেত্র। কিন্তু পেরেটোর তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণিত করে মুসোলিনির ভাগ্যে নেমে আসে করুন পরাজয়। তারও আগে অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি দেশের অত্যাচারী রাজা চতুর্দশ লুই ঘোষণা করেন- I am the state, what I say is law. অর্থাৎ আমি রাষ্ট্র, আমি যা বলি তাই আইন’। এই ঘোষণার কয়েক বছরের মাথায় ষোড়শ লুইয়ের রাজত্বকালে বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। রাজা ষোড়শ লুই ও রানী মেরি আতোয়িকে গিলোটিনে চড়িয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ওই দেশের বীর জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেখানে রাজতন্ত্রের অবসান হয়।

গভীর পরিতাপের বিষয় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্ট ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা প্রায় ১৬ বছর যাবৎ দোন্ড প্রতাপে তার স্বৈরশাসন অব্যাহত রাখে। ফলে জনগণের জীবনে নেমে আসে এক দুর্বিসহ অমানিশার ঘোর অন্ধকার। তার অবিচার, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা, গুম, খুন, সম্পদ লুণ্ঠন, শোষণ, বঞ্চনা ও অধিকার হরণের কাহিনী বিশ্বের যে কোন বিবেকবান মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও শিহরণ সৃষ্টি করবে। অবশেষে গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র জনতার বিদ্রোহ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। দাম্ভিক হাসিনা তার পতনের কিছুদিন আগে ঘোষণা দেন ‘হাসিনা পালায় না’। ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস, এ ঘোষণার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে, নির্লজ্জভাবে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। এক ভয়ংকর লৌহমানবীর দম্ভের পতন দেখল সমগ্র বিশ্ব’।[4]

নতুন প্রজন্মের যারা ৭১ এ গণহত্যা দেখেনি, তারা বলেছে এবার বায়ান্ন, ঊনসত্তর ও ২৫ মার্চের কালো রাত দেখেছে। মাথা উঁচিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা এখনো জীবিত আছেন, ৭১ দেখেছিলেন, স্বৈরাচার আইয়ুব খানকে মোকাবেলা করেছিলেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, বায়ান্ন ও একাত্তরেও তারা এমন সীমাহীন নৃশংসতা ও নারকীয় নির্মমতা দেখেননি। স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে যারা রাজপথে লড়াই করেছিলেন, তাদের অনেকে বলেছেন, স্বৈরাচার হিসেবে হাসিনার কাছে এরশাদ শিশুতুল্য।[5]

স্মর্তব্য যে, হাসিনার সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে কথিত ‘ইসলামী জঙ্গীবাদ’ মিশিয়ে পশ্চিমাদের একটা ধাপ্পা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আর সেটি উঠে আসে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের ২৫ জুলাইয়ের এক বিশ্লেষণে। দেশে কিছু ঘটলেই জামায়াত শিবির ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলিকে দোষারোপ করার অপরাজনীতি আমরা হরহামেশা দেখতাম। ঠিক সেভাবেই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত টাইম ম্যাগাজিনকে বলার চেষ্টা করেন যে, সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতির নেপথ্যে জামায়াত জড়িত। সেকুলারদের সাথে নিয়ে তারা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান (তালেবান) হওয়া থেকে রক্ষা করবেন।

কিন্তু মজার ব্যাপার হ’ল, টাইম ম্যাগাজিন আরাফাতের এই মুখস্ত বয়ান খারিজ করে দিয়ে লিখেছিল, ‘যখন হাসিনার অর্থনৈতিক রেকর্ড বিপর্যয়ের মুখে ধুঁকছে এবং তার পরিবার প্রকাশ্যে উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছে, তখন আওয়ামী লীগ তার অন্যতম পুঁজি ইসলামী চরমপন্থা দমনের গল্পের আশ্রয় নিচ্ছে। এতসত্বেও চলমান অস্থিরতার পেছনে ইসলামী চরমপন্থীদের সক্রিয়তার যে দাবি আরাফাত করেছেন, তার পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। এক্ষেত্রে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে টাইম ম্যাগাজিন ড. আলী রিয়াজের এই বক্তব্য তুলে ধরেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায় করতে এমন একটি বয়ান দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে যে, হাসিনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। যাতে করে তার নৃশংস সমালোচনা বন্ধ করা যায়। আওয়ামী লীগ আগেও এটি ব্যবহার করেছে এবং এখন আবারো চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছিলেন আন্দোনকারীদের ‘রাজাকার’ অভিহিত করে ইস্যুটিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ- বিপক্ষের পুরনো খেলায় রূপ দিতে। তার সেই পুরনো বিভাজনের রাজনীতি সফল হয়নি। বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে ‘রাজাকার’ বা ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ নামক যেই কমন শত্রুর ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছিল হাসিনার সরকার, তা পাকাপাকিভাবে দাফন হয়ে যায়। সেই ন্যারেটিভ ব্যবহার করে যাবতীয় অপকর্ম, যুলুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সব যায়েজ করার চেষ্টা করা হ’ত। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মাটিতে রাতের আঁধারে জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদের জিগির তুলে হেফাযতে ইসলাম তথা কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক আলেম সমাজকে নৃশংসভাবে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ঢাকার মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং সাধারণ জনতা তখন চুপ থাকলেও এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাদের অনেকের সন্তান প্রাণ হারায় পুলিশের গুলিতে। সময় সময়ে প্রত্যেকের চুপ থাকার পাপ ও নিয়তি একে একে সবাইকে গ্রাস করেছিল। যেন সবাইকে যালিমশাহীর যুলুমের স্বাদ পাইয়ে তারপর তার পতন ঘটালেন মহান আল্লাহ। এটি আমাদের সবার জন্য এক বড় শিক্ষা’।[6]

 সাইফুল ইসলাম

লেখক : সভাপতি, দিনাজপুর-পূর্ব সাংগঠনিক যেলা


[1]. আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ছাত্র সমাজ, মাইন উদ্দিন হাসান, ৬ই জুন’২১।

[2]. Dhakatimes 24.com-২৯শে জুলাই ২০২৪।

[3]. ইতিহাসের আলোচিত কয়েকটি ছাত্র আন্দোলন https://www. deshrupantor.com ১৪ই অক্টোবর ২০১৯।

[4]. ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়, ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২৪।

[5]. জনগনের মন জয় করুন, ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৯শে আগস্ট ২০২৪ পৃষ্ঠা ০৬।

[6]. গণহত্যা ও হাসিনার পতন বড় শিক্ষা, তারেকুল ইসলাম, দৈনিক নয়া দিগন্ত, পৃষ্ঠা ০৬, ২৮ আগস্ট ২০২৪।



বিষয়সমূহ: রাজনীতি শিষ্টাচার
আরও