আইরিশ সঙ্গীতজ্ঞ সিনাড ওকনরের ইসলাম গ্রহণ

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 33 বার পঠিত

[পুরা নাম সিনাড মারি বার্নাডেট ওকনর (৫৬)। ইসলাম গ্রহণ পরবর্তী নাম শুহাদা ছাদাক্বাত। জন্ম ৮ই ডিসেম্বর ১৯৬৬ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। তিনি একাধারে প্রসিদ্ধ গায়ক, গীতিকার ও সঙ্গীতজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৭ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘দ্য লায়ন অ্যান্ড দ্য কোবরা’ যা তাকে আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দেয়। অতঃপর ১৯৯০ সালে ‘আই ডোন্ট ওয়ান্ট হোয়াট আই হ্যাভ নট গোট’ অ্যালবামটি ছিল তার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সাফল্য। যা বিশ্বব্যাপী সাত মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল। ২০১৮ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। অবশেষে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ২৬শে জুলাই ২০২৩ হার্ন হিল, লন্ডন, ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন]

সিনাডের শৈশব ছিল খুবই কঠিন। কিশোর বয়সে ডাবলিনের অ্যান গ্রিয়ানান ট্রেনিং সেন্টারে তাকে রাখা হয়েছিল। যা মূলত অল্পবয়সী মেয়েদের বন্দী রাখার জন্য তৈরী করা হয়েছিল। ঐ সময় ওকনরকে একজন সন্ন্যাসী গিটার কিনে দিয়েছিলেন এবং একজন সংগীত শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন। সেখান থেকে সংগীত ক্যারিয়ারে তার এগিয়ে যাওয়া যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘দ্য লায়ন অ্যান্ড দ্য কোবরা’ প্রকাশ হয়। যা যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ৪০-এ মধ্যে অবস্থান করে নেয়।১৯৯০ সালে রিলিজ করা ‘নাথিং কমপেয়ার্স টু ইউ’ গানটির জন্যে তিনি সবচেয়ে সুপরিচিত। ওই বছরের সবচেয়ে হিট গানের তালিকায় ছিল এই গানটি। ১৯৮৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তার ১০টি স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে।

বিখ্যাত আইরিশ গায়িকা সিনিড ওকনর ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। তিনি একজন আইরিশ ইমাম শেখ ড. উমর আল-কাদরী এর নিকট কালেমা পাঠের মধ্যদিয়ে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেন। তিনি জানিয়েছিলেন নাম পরিবর্তন করে তিনি নিজের নাম রেখেছেন শুহাদা ছাদাক্বাত। টুইটারে দেয়া বার্তায় তাকে সাপোর্ট করার জন্য অন্য মুসলমানদের তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁর এই সিদ্ধান্ত ‘যেকোনো বুদ্ধিমান ধর্মতত্ববিদের সফরের স্বাভাবিক পরিণতি’। তিনি নিজের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন, যাতে দেখা যায় যে তিনি আযান দিচ্ছেন।

টুইটার বার্তায় আইরিশ গায়িকা আরও বলেছিলেন, প্রত্যেকটি ধর্মীয় গ্রন্থ ইসলামের দিকে পরিচালিত করে এবং ইসলাম অন্য ধর্মগ্রন্থগুলোকে অকার্যকর ও অনাবশ্যক করে দেয়। ফলে অন্য সব ধর্মগ্রন্থ অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়’। তিনি বলেছিলেন, আমি ঘোষণা করছি, একজন মুসলিম হয়ে আমি গর্ব বোধ করছি। আর যেসকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা আমার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই। ইসলাম গ্রহণের পরই তিনি নিজের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন। সেখানে তাকে হিজাব পরিহিত ছবিতে দেখা গিয়েছিল। একটি টুইটের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছিলেন, প্রথম হিজাবটি তিনি তার বান্ধবী এলেনের কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন আমি আমার গায়ে হিজাব জড়াই, তখন আমার শরীরে শীতলাবহ বয়ে যায়’।

আরেকটি টুইটবার্তায় শুহাদা বলেছিলেন, আমার বলা উচিত যে, পবিত্র কুরআন পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোকে সত্যায়িত করে। তবে সেখানে যেসব অনৈতিক পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে, তা সমর্থন করে না। আগের ধর্মগ্রন্থগুলোতে এমন কিছু লোক পরিবর্তন এনেছে, যারা আল্লাহর আনুগত্য করে না এবং নিজেকে তার কাছে সমর্পিত করেনি’।

তবে ধর্ম নিয়ে ওকনর এই প্রথমবারের মত কথা বলেছেন, তা নয়। ও'কনর শিশু নির্যাতন, মানবাধিকার, বর্ণবাদ এবং নারীর অধিকারের মতো বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি একটি মার্কিন টেলিভিশনের এক লাইভ অনুষ্ঠানে তিনি ক্যাথলিক চার্চে অপব্যবহারের প্রতিবাদে পোপ ‘জন পল’-এর একটি ছবি ছিঁড়ে ফেলেন বিতর্কের জন্ম দেয়।

৩ অক্টোবর ১৯৯২-এ, ও'কনর আমেরিকান টেলিভিশন প্রোগ্রাম শনিবার নাইট লাইভ ( এসএনএল ) এ উপস্থিত হন এবং ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন । শিশু নির্যাতন সম্পর্কিত নতুন গানের সাথে বব মার্লির ১৯৭৬ সালের গান ‘ওয়ার’-এর একটি ক্যাপেলা পরিবেশন করার পর তিনি আট বছর আগে তার মায়ের বেডরুমের দেয়াল থেকে তোলা পোপ জন পল-এর একটি ছবি ছিঁড়ে ফেলে বলেছিলেন, ‘প্রকৃত শত্রুর সাথে যুদ্ধ কর’ এবং ছবির টুকরোগুলো মেঝেতে ফেলে দিয়েছিলেন। ওকনর পরে বলেছিলেন যে, তিনি শিশু হিসাবে যে শারীরিক, যৌন এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তার জন্য ক্যাথলিক চার্চ কিছু দায় বহন করে। তিনি বলেছিলেন, ক্যাথলিক যাজকরা বছরের পর বছর ধরে শিশুদের নির্যাতন করে আসছে। জন পল প্রকাশ্যে ক্যাথলিক চার্চে শিশু যৌন নির্যাতনের কথা স্বীকার করার নয় বছর আগেই তার এই প্রতিবাদ হয়েছিল। ২০১৪ সালে তিনি ফিলিস্তীনীদের প্রতি সংহতি স্থাপন করে ইস্রাঈলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে সেদেশে খেলতে যাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করতে সরব হয়েছিলেন।

শুহাদা ছাদাক্বাতের ইসলাম গ্রহণের পূর্ব জীবন দেখতে অনেক সুন্দর হলেও প্রকৃত অবস্থা ছিল হতাশজনক। তিনি প্রশান্তির মাদকসহ নানাবিধ অপরাধে জড়ালেও কোথাও শান্তি খুঁজে পাননি। অবশেষে ইসলাম গ্রহণের ফলেই তিনি প্রকৃত প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন।



আরও