পর্দা নারীর রক্ষাকবচ (শেষ কিস্তি)
নিযামুদ্দীন
আসাদুল্লাহ আল-গালিব 10412 বার পঠিত
উপস্থাপনা :
মানুষকে আশরাফুল মাখলূকাত তথা সৃষ্টির সেরা হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান, প্রজ্ঞা, আকৃতি-প্রকৃতি সর্বদিক থেকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ গুণে গুণান্বিত করেছেন। আদি পিতামাতা আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) আল্লাহর ফিতরাতী সৃষ্টির প্রথম মানব-মানবী, পুরুষ ও নারী। আর পুরুষ জাতির অন্যতম ফেতরাতী তথা আল্লাহ সৃষ্ট নির্দশন হল দাড়ি। দাড়ি রাখা একজন মুসলিম পুরুষের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য। এতে যেমন দুনিয়াবী কল্যাণ রয়েছে তেমনি আখেরাতে রয়েছে অফুরন্ত প্রতিদান। নিম্নে আমরা দাড়ি কেন রাখব? এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কুরআন, সুন্নাত ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
দাড়ি রাখা আনুগত্যের প্রতীক :
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়ছালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে নিজস্ব কোন ফায়ছালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই’ (আহযাব ৩৩/৩৬)। তিনি আরো বলেনفَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ‘অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে’ (নূর ২৪/৬৩)। দাড়ি রাখা সম্পর্কে স্পষ্ট হাদীছ এসেছে, ِعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ أَمَرَ بِإِحْفَاءِ الشَّوَارِبِ وَإِعْفَاءِ اللِّحْيَةِ. ইবনে ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন ‘তিনি মোচ ছোট করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ দিয়েছেন’।[1]
অন্যত্র এসেছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা মোচ ছাঁট ও দাড়ি রাখ; অগ্নিপূজকদের বিপরীত কর’।[2]
অন্যত্র এসেছে, ‘দাড়ি কামানো ও মোচ ওয়ালা দুইজন ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসল। রাসূল (ছাঃ) তাদের দুইজনকে দেখে অপসন্দ করলেন। তাদেরকে বললেন, তোমাদের ধ্বংস হৌক! এটা করতে তোমাদের কে আদেশ দিয়েছে? তারা বলল, আমাদের প্রতিপালক অর্থাৎ ‘সম্রাট কিসরা’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, কিন্তু আমার প্রভু আমাকে দাড়ি লম্বা করতে ও মোচ ছাঁটতে আদেশ করেছেন’।[3]
এখানে আমর বা নির্দেশ বাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা থেকে বোঝা যায় যে এটি সাধারণ নির্দেশ নয়। বরং তা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে বর্ণনা করে। যার উপর আমলকারী ব্যক্তি নেকী পাবে এবং পরিত্যাগকারী ব্যক্তি শাস্তি পাবে।
দাড়ি কামানো অবাধ্যতার শামিল :
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, সে ব্যক্তি স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হবে’ (আহযাব ৩৩/৩৬)। তিনি আরো বলেন,وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَجَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ‘আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে’ (জ্বীন ৭২/২৩)।
দাড়ি রাখা রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ। সুতরাং এর অবাধ্যতা করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ‘রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর’(হাশর ৫৯/৭)।
এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَاجْتَنِبُوهُ ‘আমি তোমাদের যে বিষয়ে নিষেধ করি তা থেকে বিরত থাক’।[4] সুতরাং নির্দেশ হ’ল দাড়ি রাখা ও বড় করা। আর আবশ্যক হ’ল দাড়ি না কামানো ও সর্বদা ছোট করা থেকে বিরত থাকা। মনে রাখতে হবে দাড়ি ছোট করা যা কামানোর শামিল। কোন বিষয়ে নির্দেশ পাবার অর্থ হ’ল তার বিপরীত বিষয় থেকে বিরত থাকা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا تَنْتِفُوا الشَّيْبَ، فَإِنَّهُ نُورُ الْمُسْلِمِ ‘তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা সেটা মুসলিমের জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ’।[5] ফলে দাড়ি তোলা ও চুল তোলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
অন্য হাদীছে এসেছে, عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ يُكْرَهُ أَنْ يَنْتِفَ الرَّجُلُ الشَّعْرَةَ الْبَيْضَاءَ مِنْ رَأْسِهِ وَلِحْيَتِه-ِ আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত ‘কোন ব্যক্তির জন্য তার সাদা চুল তোলা অপসন্দনীয়, সেটা মাথার চুল হোক অথবা দাড়ি’।[6]
যিনি দাড়ি কামান, তিনি কালো চুলের মধ্যে সাদা চুলকে অতিরিক্ত মনে করেন অথচ তা মুসলমানের নূর। ‘ওমর ইবনু খাত্তাব ও আবু ইয়ালা (রাঃ) মদিনায় ফায়ছালা প্রদান কালে দাড়ি কামানো ব্যক্তিদের সাক্ষ্য প্রত্যাখান করতেন’।[7]
ইমাম গাযালী ও ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, نتفها)) ‘নাতফ’-এর ব্যাখ্যায় বলেন, তা উপড়িয়ে ফেলা অর্থাৎ দাড়ি উঠার শুরুতেই উপড়িয়ে ফেলা যেটি ‘মুরদ’-এর অনুসরণ করা। আর মুরদ হলো যে লোক মোচ কেটে ফেলে ও দাড়ি উপড়িয়ে ফেলে। যা বড় অন্যায় অপকর্ম’।[8]
দাড়ি লম্বা করা সুন্নাতে মুহাম্মাদীর বৈশিষ্ট্য :
মহান আল্লাহ বলেন,لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে’ (আহযাব ৩৩/২১)। তিনি আরো বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ ‘আমরা রাসূল পাঠিয়েছি কেবল এই উদ্দেশ্যে যে, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তার আনুগত্য করা হবে’ (নিসা ৪/৬৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, خَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ ‘সর্বোত্তম পথ হল রাসূল (ছা)-এর পথ’।[9] রাসূল (ছাঃ)-এর চারিত্রিক গুণাবলী থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে তিনি দাড়ি লম্বা রাখার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করতেন। এ সম্পর্কে হাদীছ, عَن أنس كَانَت لحيته قد مَلَأت من هَهُنَا إِلَى هَهُنَا وَمد بعض الروَاة يَدَيْهِ على عارضيه- হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) এর দাড়ি এখান থেকে এই পর্যন্ত পরিপূর্ণ; এই বলে তিনি তার হাতকে গালের দুই অংশে নিয়ে যেতেন’।[10]
عَنْ أَبِى مَعْمَرٍ قَالَ قُلْنَا لِخَبَّابٍ أَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِى الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ قَالَ نَعَمْ. قُلْنَا بِمَ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ ذَاكَ قَالَ بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ.
আবু মা‘মার (রাঃ) বলেন, আমরা খাববাব (রাঃ)-কে বললাম, রাসূল (ছাঃ) কি যোহর ও আসরের ছালাতে ক্বিরা‘আত পড়তেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা বললাম, আপনারা কিভাবে তা বুঝতেন। তিনি বললেন, তাঁর দাড়ি নড়া দেখে’।[11] রাসূল (ছাঃ) ‘যখন ওযু করতেন তখন তিনি এক চুল্লি পানি নিয়ে কণ্ঠনালীতে দিতেন। অতঃপর সে পানি দ্বারা দাড়ি খিলাল করতেন’।[12] রাসূল (ছাঃ)-এর দাড়ি যে লম্বা বড় ছিল তা এ সমস্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়। আশ্চর্যের বিষয় হল যে যারা রাসূল (ছাঃ)-কে ভালবাসার দাবীদার অথচ তারা রাসূলের সুশ্রী দাড়িযুক্ত অবয়ব, গঠন-আকৃতি ভালবাসে না। বরং তাঁর শত্রুদের গঠন আকৃতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আর মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ ‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন’ (আলে ইমরান ৩/৩১)। ভালবাসা হলো প্রেমিক তার মনের মানুষটিকে অজান্তেই ভালবেসে ফেলে তার অনুকরণপ্রিয় হয়ে যায়। জোর করে কোন কিছু আদায়ের নাম ভালবাসা নয়, সেটি অন্য কিছু।
রাসূল (ছাঃ) আদর্শের মূর্ত প্রতীক :
হযরত সাদ বিন ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি ইবনে ওমর (রাঃ)-এর সাথে সফরে ছিলাম। অতঃপর আমি আরোহী থেকে নামলাম ও বিতর পড়লাম। অতঃপর তিনি বললেন, কি কারণে তুমি পরে আসলে। আমি বললাম আমি বিতর ছালাত পড়ছিলাম। তিনি বললেন, রাসূল (ছাঃ) কি তোমার জন্য উত্তম আদর্শের ব্যক্তি নন। আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূল (ছাঃ) উটের উপর সাওয়ারী অবস্থাতেই বিতর ছালাত পড়তেন’।[13] হে দাড়ি কর্তনকারী! যখন আপনাকে রাসূল (ছাঃ) ধরবেন যে, ‘আমি কি তোমার জন্য উত্তম আদর্শ নই’? তখন আপনার জওয়াব কি হবে বলুন!
দাড়ি কাটা রাসূলের পথ থেকে বিচ্যুতি :
মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের উপর আমরা আপনাকে রক্ষকরূপে প্রেরণ করিনি’ (নিসা ৪/৮০)। রাসূলের সুন্নাত হল তার কথা, কর্ম ও সমর্থন দাড়ি রাখার উপর। আর দাড়ি কামানো তার সুন্নাত বিরোধী। অথচ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِى فَلَيْسَ مِنِّى ‘যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়’।[14] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا، فَهْوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যাতে আমার নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[15]
সুতরাং আপনি কিভাবে দাড়ি কামান? যে দৃশ্য দেখে (বাদশাহ কিসরা ঘটনা) রাসূল (ছাঃ) কষ্ট পেয়েছেন এবং ঐ দু’জন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তোমার ধ্বংস হোক, তোমাকে কে এই নির্দেশ দিয়েছেন?[16]
দাড়ি লম্বা করা মানবীয় গুণাবলীর অর্ন্তভুক্ত:
আল্লাহ তাআলা বলেন, فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ‘অতএব তুমি নিজেকে একনিষ্ঠভাবে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর ধর্ম, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ (রূম ৩০/৩০)। অর্থাৎ তুমি আল্লাহ প্রদত্ত ইবরাহীমের একনিষ্ঠ দ্বীনের প্রতি অবিচল থাক। আর আল্লাহ তার সৃষ্টিজীবকে তার নিরাপদ ফেতরাতী জীবনব্যবস্থাকে আবশ্যক করতে তাকীদ দিয়েছেন। আর সেটি হলো আল্লাহকে চেনা, তার একত্ববাদকে বুঝা ও তাঁর পথে চলা।
হাদীছে এসেছে, عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ. قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ- হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, গোঁফ খাটো করা, দাড়ি বড় করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, আঙ্গুলের গিরাগুলি ঘষে মেজে ধৌত করা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা, নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোম মুড়িয়ে ফেলা এবং মলমূত্র ত্যাগের পর পানি ব্যবহার করা। যাকারিয়া বলেন, মুস‘আব বলেছেন, দশম কাজটি আমি ভুলে গেছি, তবে আমার ধারণা তা হবে কুলি করা’।[17]
ফেতরাতের বৈশিষ্ট্যাবলী :
আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা যে অবস্থায় তাঁর সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন এবং তাঁর সৃষ্টির মাঝে কাজের প্রবণতা, ঝোঁক, সৌন্দর্য, ইতিবাচক ও নেতিবাচক মানসিকতা প্রক্ষিপ্ত করেছেন; এমতাবস্থায় যদি সে সেগুলি পরিত্যাগ করতে চায়, তাহলে তা মানবতার সৃষ্টিসত্বা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নামান্তর হবে। তাহলে সে কেমন মুসলমান ও কেমন ফেতরাতী দ্বীনের অনুসারী যে দাড়ি মুন্ডনকারী? এবং সে কিভাবে ফেতরাতী সৌন্দর্যকে অস্বীকার করতে পারে? অপরপক্ষে সে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল প্রদর্শিত শরী‘আতের কিভাবে অবাধ্যতা করতে পারে? জনৈক পন্ডিত ফেতরাতের ব্যাখ্যায় বলেন, এটি আদি অনুসৃত নীতি যা আম্বিয়ায়ে কেরাম কর্তৃক পসন্দনীয়, ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক প্রদর্শিত; যেন এটি একটি স্বভাবসুলভ আদেশ যা মানবতার একমাত্র প্রেসক্রিপশন।
(ক্রমশঃ)
[লেখক : ৪র্থ বর্ষ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]
[1]. মুসলিম হা/৬২৪, উল্লেখ্য যে, এ নির্দেশটি বিভিন্ন শব্দে ব্যবহার হয়েছে। যেমন :أعفوا، أوفوا، أرخوا (أرجوا، فرواএই সবগুলি শব্দের অর্থই হলো তার অবস্থার উপরই ছেড়ে দাও।
[2]. মুসলিম হা/৬২৬।
[3]. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/২৭০, হাদীছটি হাসান- লেখক।
[4]. মুসলিম হা/১৩০।
[5]. আবুদাঊদ হা/৪২০২; শারহুস সুন্নাহ হা/৩১৮১; হাদীছটিকে আলবানী হাসান ছহীহ বলেছেন।
[6]. মুসলিম হা/১০৪; ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৯৮৫।
[7]. ফাতাওয়া শাবাকাতুল ইসলাম ২/৯৭৬ পৃঃ।
[8]. মুসলিম ৩/১৪৯ পৃঃ।
[9]. মুসলিম হা/৪৩।
[10]. জামে‘ঊল আহাদীছ হা/৩৬১২১; ইবনু আসাকীর হা/১৮৫৫৫।
[11]. বুখারী হা/৭৪৬,৭৬০; আবু দাঊদ হা/৮০১; ইবনু মাজাহ হা/৮২৬।
[12]. আবুদাঊদ হা/১৪৫; ইবনু মাজাহ হা/৪৬১।
[13]. ফাতাওয়া শাবাকাতুল ইসলাম ২/৯৭৬ পৃঃ।
[14]. ইবনু মাজাহ হা/১২৫৬।
[15]. বুখারী হা/২০; মুসলিম হা/৪৫৯০।
[16]. আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৪/২৭০ পৃঃ।
[17]. মুসলিম হা/৬২৭; আবুদাউদ হা/৫৩।