অলসতা ও গাফলতি থেকে বাঁচার উপায়

আসাদুল্লাহ আল-গালিব 26 বার পঠিত

ভূমিকা : মানুষ তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে চাইলেও বিভিন্ন উপায়ে শয়তান তার অন্তরে মন্দ কুমন্ত্রণার জন্ম দেয়। যাতে সে আল্লাহর পথ হ’তে বিচ্যুত হয়। শয়তানের কুমন্ত্রণার মধ্যে অন্যতম একটি অলসতা। কোন ব্যক্তির অন্তরে অলসতা ঢুকিয়ে দিতে পারলে সে আপনাতেই তার ঈমানী শক্তির সক্রিয়তা হারিয়ে ফেলে। পাপ কাজ করলেও তার অন্তরে কোন প্রভাব পড়েনা। তখন তাকে কি করতে হবে, সে বিষয়ে তার কোন ইচ্ছা শক্তি থাকে না। তাকে আল্লাহ কেন সৃষ্টি করেছেন, তাও সে ভুলে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে সে অন্ধকার জগতে হারিয়ে যায়। এক পর্যায়ে শয়তানের দোসররা তার বন্ধুতে পরিণত হয়। এজন্য অন্তরকে সবসময় অলসতা মুক্ত রাখতে হবে। নিম্নে অলসতা অন্তরের উপর কী প্রভাব ফেলে এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে কিছু আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

অলসতা : এর আরবী শব্দ غفلة। অর্থ অমনোযোগিতা, অন্যমনস্কতা, অসতর্কতা, গাফলতি ইত্যাদি’।[1] মন যা চায় তাই করা, জীবনের কোন লক্ষ্য না থাকা, ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কোন কাজ করা বা না করাও অলসতা।

অলসতা ও ভুল করা : অলসতা ও ভুল করা এক নয়। অলসতার মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে আগ্রহ ও অনাগ্রহের প্রকাশ হয়ে থাকে। আর ভুল অনিচ্ছায় হয়ে যায়। এজন্য অলসতার জন্য শাস্তি থাকলেও ভুলের জন্য শান্তি নয়। তবে বারংবার যেন ভুল না হয় সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আর অলসতা থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ- ‘আর তুমি গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আ‘রাফ ৭/২০৫)। অত্র আয়াতে আল্লাহ গাফেল তথা অলস বা উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হ’তে নিষেধ করেছেন।

আর অনিচছাকৃত ভুলের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা কখনই তার বান্দাকে পাকড়াও করবেন না। যেমন হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ وَضَعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ، وَالنِّسْيَانَ، وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ- ‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি এবং যার উপর তাকে নিরুপায় করা হয়, তার পাপকে মার্জনা করেন’।[2]

অন্তর অলস হওয়ার কারণ সমূহ :

১. দুনিয়ার প্রতি মোহ : দুনিয়ার প্রতি মোহগ্রস্থ হলে অন্তর অলস হয়ে যায়। তখন পার্থিব জীবন সুন্দর করাই তার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দঁাড়ায়। পরকালীন স্থায়ী জীবনে সুখময় প্রাপ্তির জন্য তার যে নিত্য-নৈমত্তিক কিছু আমলের প্রয়োজনীয়তা আছে, তা সে একদম ভুলে যায়। আর এ ধরনের মানুষ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُونَ- ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই তৃপ্ত থাকে ও তার মধ্যেই নিশ্চিন্ত হয় এবং যারা আমাদের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে উদাসীন’ (ইউনুস ১০/৮)

দুনিয়াবী মোহ যত বৃদ্ধি পাবে, আল্লাহর ইবাদতে তত অলসতা বৃদ্ধি পাবে। আর এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ، فَرَّقَ اللهُ عَلَيْهِ أَمْرَهُ، وَجَعَلَ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ، وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا مَا كُتِبَ لَهُ، ‘পার্থিব চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসঙ্গী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ আছে’।[3]

২.দীর্ঘদিন বাঁচার আকাংখা : দীর্ঘদিন বাঁচার আকাংখা আল্লাহর ইবাদত থেকে অলস বানিয়ে দেয়। দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য খাদ্যাভাস, লাইফস্টাইল সহ যা যা করা দরকার তার পেছনে সে সবচেয়ে মনোযোগী থাকে। মানুষের দীর্ঘ জীবন কামনা করা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَى حَيَاةٍ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنَ الْعَذَابِ أَنْ يُعَمَّرَ وَاللهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ- ‘তুমি তাদেরকে দীর্ঘ জীবনের ব্যাপারে অন্যদের চাইতে অধিক আকাংখী পাবে এমনকি মুশরিকদের চাইতেও। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে যেন সে হাযার বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাদেরকে শাস্তি থেকে দূরে রাখতে পারবে না। বস্ত্তত তারা যা করে, সবই আল্লাহ দেখেন’ (বাক্বারাহ ২/৯৬)

মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভে কত যে আগ্রহী, তা হাসপাতাল, ফার্মেসী ও আয়ুর্বেদিক চেম্বারগুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়। মানুষ সামান্য খড়-কুড়া ধরে হলেও আর কিছু দিন বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। আর এজন্যই রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,قَلْبُ الشَّيْخِ شَابٌّ عَلَى حُبِّ اثْنَتَيْنِ: حُبِّ الْعَيْشِ وَالْمَالِ- ‘বৃদ্ধ মানুষের হৃদয় দু’টি বস্ত্তর ভালবাসার ব্যাপারে অত্যন্ত তরুণ- (১) জীবনের মায়া ও (২) ধন সম্পদের মায়া’।[4]

৩. আল্লাহর যিকর ছেড়ে মনের ইচ্ছার অনুসরণ করা : আল্লাহর ইবাদতসহ যে কোন কাজই হৌক না কেন সে বিষয়ে শারঈ নির্দেশনা আছে কি না তার অনুসরণ করতে হবে। মন যা চায় তার অনুসরণ করলেই পাপের মধ্যে নিমজ্জিত হ’তে হবে। কারণ মানবাত্মা মন্দ কাজের দিকে প্ররোচিত হয়ে থাকে। সেকারণ যে উপায়েই হোক মনের ইচ্ছাকে দমন করে শারঈ বিধান অনুযায়ী দৃঢ় পদে চলতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا- ‘আর তুমি ঐ ব্যক্তির আনুগত্য করোনা যার অন্তরকে আমরা আমাদের স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে গেছে’ (কাহফ ১৮/২৮)

৪. অযথা সময় নষ্ট করা : সময়ের কাজ সময়ের মধ্যেই করতে হবে। যদি সময় ক্ষেপণ করা হয় তাহ’লে অন্তর শক্ত ও অলস হয়ে যায়। পরবর্তীতে মন চাইলেও সে কাজ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। যেমন আল্লাহ বলেন,وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِنْهُمْ فَاسِقُونَ- ‘আর তারা তাদের মত হবে না যাদেরকে ইতিপূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর তাদের উপর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। পরে তাদের হৃদয়সমূহ শক্ত হয়ে গেছে এবং তাদের বহু লোক পাপাচারী হয়েছে’ (হাদীদ ৫৭/১৬)

৫. অন্তর কঠিন বানিয়ে ফেলা : মানুষের অন্তর যখন কঠিন হয়ে যায়, তখন তার মধ্যে ভাল-মন্দ, সঠিক-বেঠিক যাচাইয়ের জ্ঞান থাকে না। তার মন যা চায়, তাই সে করতে পারে। পাপ কাজে তার আফসোসবোধ টুকুও লোপ পেয়ে যায়। আর এসব ব্যক্তিদের উদাহরণ দিয়ে আল্লাহ বলেন,ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً ‘অতঃপর তোমাদের অন্তরগুলি এমন কঠিন হয়ে গেল, যেন তা পাথরের মত অথবা তার চাইতে কঠিন’ (বাক্বারাহ ২/৭৪)

৬. নারীর ফিৎনা : আল্লাহ মানুষকে দুর্বলভাবে সৃষ্টি করেছেন। কখনোই তিনি মানুষের উপর বোঝা স্বরূপ কিছু চাপিয়ে দেন না। বরং তিনি চান মানুষের জীবন সহজতর হৌক। যেমন আল্লাহ বলেন,يُرِيدُ اللهُ أَنْ يُخَفِّفَ عَنْكُمْ وَخُلِقَ الْإِنْسَانُ ضَعِيفًا- ‘আল্লাহ চান তোমাদের উপর বোঝা হাল্কা করতে। (কেননা) মানুষ দুর্বল রূপে সৃষ্ট হয়েছে’ (নিসা ৪/২৮)

আল্লাহ শোভনীয় বস্ত্ত দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। আর শোভনীয় বস্ত্তর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হ’ল নারী। মানুষের জন্য শোভনীয় বস্ত্ত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا، ‘মানুষের জন্য শোভনীয় করা হয়েছে তাদের আসক্তি সমূহকে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি, স্বর্ণ ও রৌপ্যের রাশিকৃত সঞ্চয় সমূহের প্রতি, চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদিপশু ও শস্যক্ষেত সমূহের প্রতি। এসবই পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্ত্ত মাত্র’ (আলে-ইমরান ৩/১৪)

একজন পুরুষের জন্য শয়তানের কুমন্ত্রণা দুর্বল হলেও নারীর ফিৎনা সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ মনের ইচ্ছা শক্তি দৃঢ় থাকলে শয়তানের কুমন্ত্রণা কাজে লাগেনা। কিন্তু নারীর ফিৎনা থেকে বঁাচা সহজতর নয়, বরং খুবই কঠিন। যেমন আল্লাহ বলেন,فَلَمَّا رَأَى قَمِيصَهُ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ قَالَ إِنَّهُ مِنْ كَيْدِكُنَّ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ- ‘অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া, তখন সে (স্বীয় স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে) বলল, এটা তোমাদের ছলনা মাত্র। নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্মক’ (ইউসুফ ১২/২৮)

আর এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً هِيَ أَضَرُّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ- আমি আমার (ইন্তিকালের) পরে পুরুষদের জন্য মহিলাদের ফিৎনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোন ফিৎনা রেখে যাইনি’।[5] আর এজন্য নিয়তের গুরুত্বপূর্ণ হাদীছে নারীদের বিষয় টেনে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ- ‘উল্লেখ্য যে, যার হিজরত পার্থিব কোন লাভ বা কোন মহিলাকে বিবাহের উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যের হিজরত বলেই গণ্য হবে’।[6]

৭. মন্দ লোকদের সাথে চলাফেরা : একজন মানুষকে চিনতে হলে তার বন্ধুদের দেখতে হবে তারা কেমন। কারণ একজন বন্ধুর আচরণ তার মধ্যে প্রভাব ফেলে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلْ ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে। সুতরাং তার বন্ধু নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, সে কাকে বন্ধু নির্বাচন করছে’।[7] 

আর ক্বিয়ামতের দিন মানুষ তার মন্দ বন্ধুর জন্য আফসোস করবে। সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا- يَاوَيْلَتَا لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا- لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا- ‘যালেম সেদিন নিজের দু’হাত কামড়ে বলবে, হায়! যদি আমি (দুনিয়াতে) রাসূলের পথ অবলম্বন করতাম! -হায় দুর্ভোগ আমার! যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! -আমার কাছে উপদেশ (কুরআন) আসার পর সে আমাকে পথভ্রষ্ট করেছিল। বস্ত্তত শয়তান হ’ল মানুষের জন্য সত্যচ্যুতকারী’ (ফুরক্বান ২৫/২৭-২৯)

মন্দ বন্ধু এত ভয়ানক যে, রাসূল (ছাঃ) তার চাচা আবু তালিবকে হয়তো কালেমা পাঠ করাতে পারতেন। কিন্তু ঐ সময় আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ ইবনু আবী উমাইয়া প্ররোচনায় তিনি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেনি। রাসূল (ছাঃ) তার চাচাকে যখনই শাহাদাহ পাঠের আহবান করতেন, তখনই তারা দু’জন বলত,يَا أَبَا طَالِبٍ، أَتَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ؟ ‘হে আবু তালিব! তুমি কি আব্দুল মুত্তালিবের দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে?[8]

এছাড়াও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গ সম্পর্কে চমৎকার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন,إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ، وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ، كَحَامِلِ الْمِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيرِ: إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً- সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গের উদাহরণ মিশক বিক্রেতা ও অগ্নিকুন্ডে ফুৎকারকারীর (কামারের) ন্যায়। মিশক বিক্রেতা হয়ত তোমাকে কিছু দিবে। (সুগন্ধি নেয়ার জন্যে হাতে কিছুটা লাগিয়ে দিবে) অথবা তুমি তার কাছ হতে সামান্য ক্রয় করতে পারবে কিংবা তুমি তার থেকে সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর অগ্নিচুলায় ফুৎকারকারী হয়ত তোমার কাপড়কে পুড়াবে কিংবা তুমি তার দুর্গন্ধপ্রাপ্ত হবে।[9]

৮. পাপ বৃদ্ধি পেলে : পাপ বেশী হয়ে গেলে অন্তরে ব্যাপক মরিচা পড়ে। ফলে অন্তর অলস হয়ে যায়। তখন মানুষ তার অন্তরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিয়ন্ত্রণহীন অন্তর তখন যা চায় তাই করতে পারে। পাপ বা অপকর্ম যে অন্তরে মরিচা ফেলে সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ- ‘কখনই না। বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৪)। ইবনু আববাস বলেন, মানুষ যখন পাপ কাজ করে তখন তার চেহারা কৃষ্ণবর্ণ হয়, অন্তর অন্ধকার হয়ে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রিযিক হ্রাস পায় এবং অন্যের প্রতি ঘৃণাবোধ তৈরী হয়’।[10]

৯. জুম‘আর ছালাত পরিত্যাগ করলে : সাপ্তাহিক জুম‘আর ছালাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জুম‘আর ছালাত ছেড়ে দেয়, তাহ’লে তার অন্তর অলস হয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ، ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ- ‘লোকেরা যেন জুম‘আ ত্যাগ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকে; নচেৎ আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবেন, তারপর তারা অবশ্যই উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে’।[11] অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ تَرَكَ ثَلَاثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا، طَبَعَ اللهُ عَلَى قَلْبِهِ- ‘যে ব্যক্তি (বিনা কারণে) অলসতা করে পরপর তিনটি জুম‘আ ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন’।[12]

অধিক হাসাহাসি ও আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত থাকা : অধিক হাসাহাসি ও আমোদ-প্রমোদ ঠিক নয়। এতে অন্তর মরে যায়। আর অন্তর মারা গেলে তা অলসতায় পূর্ণ হয়ে যায়। এসম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিষিদ্ধ ও হারাম জিনিস থেকে বেঁচে থাক, তাহ’লে তুমি মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বড় আবেদ (ইবাদতকারী) গণ্য হবে’। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তাতেই পরিতুষ্ট থাক, তবে তুমিই মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনী হবে’। প্রতিবেশীর প্রতি অনুগ্রহ কর, তাহ’লে তুমি একজন (খাঁটি) মুমিন বিবেচিত হবে। মানুষের জন্যও তা-ই পছন্দ কর, যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ কর, তাহ’লে তুমি একজন (খাঁটি) মুসলিম গণ্য হবে। আর খুব বেশী হাসবে না, কারণ, অধিক হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে’[13]

 [ক্রমশ]

[কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]

 

[1]. আল-মু‘জামুল ওয়াফী, ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান, (২৮তম মুদ্রণ ২০১৮ খৃ.) ৭৪১ পৃ.।

[2]. ইবনু মাজাহ হা/২০৪৫; মিশকাত হা/৬২৮৪ ‘।

[3]. ইবনু মাজাহ হা/৪১০৫; তিরমিযী হা/২৪৬৪।

[4]. মুসলিম হা/১০৪৬।

[5]. বুখারী হা/৫০৯৬; মুসলিম হা/২৭৪০; মিশকাত হা/৩০৮৫। 

[6]. বুখারী হা/১; মুসলিম ১৯০৭; মিশকাত হা/১; নাসাঈ আলবানী হাকীম হা/৭৫।

[7]. আহমাদ হা/৮৩৯৮; হাকেম হা/৭৩১৯; মিশকাত হা/৫০১৯।

[8]. বুখারী হা/৪৭৭২; মুসলিম হা/২৪।

[9]. বুখারী হা/২১০১; মুসলিম হা/২৬২৮; মিশকাত হা/৫০১০।

[10]. আল-জাওয়াবুল কাফী, ইবনুল ক্বাইয়িম, ১০৬ পৃ.।

[11]. মুসলিম হা/৮৬৫; মিশকাত হা/১৩৭০ ‘ছালাত’ অধ্যায়।

[12]. আবুদাঊদ হা/১০৫২; নাসাঈ হা/১৩৬৯; মিশকাত হা/১৩৭১।

[13]. তিরমিযী হা/২৩০৫; আহমাদ হা/৮০৮১; মিশকাত হা/৫১৭১।



বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও