যে কান্নায় আগুন নেভে [৩য় কিস্তি]

আব্দুল্লাহ 21 বার পঠিত

রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ পড়া বা শোনার সময় ক্রন্দন : (১) ইবনুল জাওযী বলেন, আমি যখন হাফেয আবুল বারাকাত আল-আনমাত্বীর নিকট হাদীছ পড়তাম, তখন তিনি ক্রন্দন করতেন। আর আমি তার রেওয়ায়েত বর্ণনার চেয়ে তার ক্রন্দন দ্বারা বেশী উপকৃত হয়েছি। আমি তার মাধ্যমে যতটুকু উপকৃত হয়েছি, তা অন্যদের নিকট থেকে পাইনি’।[1]

(২) আহমাদ ইবনু ইসহাক জবঈ বলেন, আমি ইসমাঈল ইবনু সালামী-এর নিকট থেকে হাদীছ শোনার জন্য তার নিকট যাতায়াত করতাম। তখন আমার বয়স ছিল আট বছর। তিনি মানুষ হিসাবে দুনিয়াবিমুখ এবং পরহেযগার ছিলেন। তিনি আমাদের কাছে আসতেন ও নুড়ি পাথরের উপর বসতেন। তখন তার হাতে হাদীছের কিতাব থাকত। অতঃপর তিনি আমাদেরকে ক্রন্দনরত অবস্থা হাদীছ বর্ণনা করতেন’।[2]

(৩) আবু ইয়াকুব বিন ইউসুফ আল-হামাদানী বলেন, আবুল হাসান একজন বধির ছিলেন। তিনি নিজেই আমাদের নিকটে হাদীছ পড়তেন। একদিন আমাদের নিকট দুই ফেরেশতা (মুনকার ও নাকীর)-এর হাদীছ পড়াচ্ছিলেন। অতঃপর তিনি ভীষণভাবে কঁাদলেন এবং উপস্থিত সকলকেই কঁাদালেন’।[3]

রাসূল (ছাঃ)-এর কষ্টের জীবন স্মরণ করে ক্রন্দন : হাফছা বিনতে ওমর (রাঃ) তার পিতাকে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহ রিযিক প্রশস্ত করেছেন এবং অনেক এলাকা জয় হয়েছে, যেখান থেকে আমরা প্রচুর সম্পদ উপার্জন করেছি। এখন আপনি এর চাইতে নরম কাপড় পরতে পারেন এবং উত্তম খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। অতঃপর ওমর উত্তর দিলেন, আমি অবশ্যই তোমার সাথে বিতর্ক করব। তুমি কি স্মরণ করবে না, আল্লাহর রাসূলের জীবনে তিনি কি কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন। এ কথা বলতে বলতে তিনি তাকে কাঁদিয়ে দিলেন। অতঃপর বললেন, আল্লাহর কসম আমি আল্লাহর রাসূল ও আবুবকরের মত কঠিন কষ্ট করার চেষ্টা করছি, যাতে পরকালীন জীবনে তাদের সাথে জান্নাতে থাকতে পারি’।[4]

জাহান্নামকে স্মরণ করে ক্রন্দন করা : (১) আবু আব্দুল্লাহ সিনওয়ার বলেন, যখন আত্বা আস-সুলামীকে তার অধিক কান্নাকাটির জন্য ভৎর্সনা করা হচ্ছিল, তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই যখন আমি জাহান্নামীদের কথা স্মরণ করি, তখন আমি তাদের স্থানে আমাকে কল্পনা করি। তাহ’লে কেন ওই অন্তর চিৎকার করে ক্রন্দন করবে না? যাকে হাত হ’তে ঘাড় পর্যন্ত বেঁধে জাহান্নামের দিকে টেনে নেওয়া হবে। তাহ’লে কেন ঐ অন্তর ক্রন্দন করবে না?[5]

(২) মিসমা‘ ইবনু আছেম বলেন, কোন একটি তীরবর্তী স্থানে আমি, আব্দুল আযীয ইবনু সুলায়মান, ক্বিলাব বিন জারীর এবং সালমান আল-আরয রাত্রিযাপন করলাম। হঠাৎ ক্বিলাব কান্নাকাটি করতে লাগলেন। এমনকি আমি তার মৃত্যুর শঙ্কা করলাম। তখন তার ক্রন্দনের কারণে আব্দুল আযীযও কান্না করতে লাগলেন। অতঃপর তাদের দু’জনের কারণে সালমানও কান্না শুরু করলেন। আর আমিও তাদের সবার কারণে কান্নাকাটি করতে লাগলাম। কিন্তু আমি জানিনা যে কিসে তাদেরকে কান্না করিয়েছে। পরে আমি আব্দুল আযীযকে (কান্নার কারণ) জিজ্ঞেস করলাম যে, হে আবু মুহাম্মাদ! ঐদিন রাত্রে কোন জিনিস আপনাকে ক্রন্দন করিয়েছিল? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহর শপথ! আমি সমুদ্র-তরঙ্গগুলোর দিকে দেখছিলাম। ঐগুলো তরঙ্গায়িত হচ্ছিল এবং ঘোরাফেরা করছিল। তখন আমি জাহান্নাম এবং তার দীর্ঘশ্বাসের কথা স্মরণ করলাম। আর ওই বিষয়টাই আমাকে ক্রন্দন করিয়েছে। অতঃপর আমি ক্বিলাবকেও আব্দুল আযীযের অনুরূপ জিজ্ঞাসা করলাম। আল্লাহর শপথ যেন তিনি তার গল্পটি শুনেছেন এবং আমাকে ঐরূপই উত্তর দিলেন। সব শেষ আমি সালমান আল-আরযকে ওদের দু’জনের অনুরূপ জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, কওমের মধ্যে আমার চেয়ে মন্দ কেউ ছিলনা। আর আমার ক্রন্দনটা ছিল রহমতের আশায়, যেমন তারা নিজেদের মনের কল্পনা অনুযায়ী ক্রন্দন করেছিলেন’।[6]

(৩) ইউনুস বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন মুগীছের সাথী আবু আহমাদ ইবনু মাহাদী বলেন, ‘যখনই আমি তার (ইউনুস) সাথে আখেরাতের কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম, তখন তার চেহারা হলুদ বর্ণ ধারণ করত এবং তিনি চাইলেও কান্না থামাতে পারতেন না। কিন্তু কখনো কখনো তার ক্রন্দনটা তার ওপর বিজয় লাভ করত’।[7]

(৪) বকর আল-মুযানী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আবু মূসা আশ‘আরী বছরায় মানুষের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তখন তিনি জাহান্নামের আলোচনা করছিলেন। অতঃপর তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে মিম্বরের উপর পড়তে শুরু করল। আর সেদিন উপস্থিত সকল মানুষ প্রচুর পরিমাণে কান্না করেছিল’।[8]

(৫) হাসানকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, আপনার অধিক পরিমাণে ক্রন্দন করার কারণ কি? তিনি উত্তর দিলেন, আমি ভয় করি যে আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয় কিনা। কেননা জাহান্নাম কোন পরওয়া করবে না।[9]

(৬) আমিনা বিনতে ওয়াররি‘ ছিলেন ইবাদাতগুযার বান্দী। যখন জাহান্নামের কথা স্মরণ করতেন তখন বলতেন, তোমাদেরকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হলে, তোমাদের খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থান হবে উতপ্ত আগুনের। অতঃপর তিনি দীর্ঘ কান্না শুরু করেন। আর যখনই তিনি জাহান্নাম ও জাহান্নাম বাসীদের অবস্থা বর্ণনা করতেন, তখন নিজে ক্রন্দন করতেন ও উপস্থিত নারীদেরও ক্রন্দন করাতেন’।[10]

(৭) একদা ওমর ইবনু আব্দুল আযীয চুপ থাকলে লোকেরা তাকে বলল, আপনার কি হয়েছে হে আমীরুল মুমিনীন? তিনি বললেন, আমি চিন্তা করছিলাম জান্নাতীদেরকে নিয়ে যে, কিভাবে তারা সেখানে ঘুরে বেড়াবে। আর যখন জাহান্নামীদের নিয়ে চিন্তা করলাম, তখন ভাবলাম কিভাবে জাহান্নামবাসীরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করবে। অতঃপর তিনি ক্রন্দন শুরু করলেন’।[11]

(৮) আবু মা‘শার বলেন, আমরা ক্বারী আবু জাফরের সাথে কোন এক জানাযায় ছিলাম। হঠাৎ তিনি কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, যায়েদ ইবনু আসলাম আমাকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই জাহান্নামবাসীরা শ্বাস নিতে পারবে না। আর এ জিনিসটিই আমাকে কঁাদিয়েছে’।[12]

কবর যিয়ারতকালে এবং কবরবাসীর অবস্থা স্মরণে ক্রন্দন :

(১) ওছমান (রাঃ)-এর আযাদকৃত ক্রীতদাস হানী বলেন, ওছমান (রাঃ) যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন খুবই ক্রন্দন করতেন। এমনকি তার দাড়ি ভিজে যেত। তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, জান্নাত-জাহান্নামের কথা আলোচনা করা হলে আপনি ক্রন্দন করেন না। অথচ এই ক্ষেত্রে আপনি এত কঁাদছেন কেন? তখন ওছমান (রাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আখিরাতের মানযিলসমূহের প্রথম মানযিল হ’ল কবর। যে ব্যক্তি এখানে মুক্তি পেয়ে যাবে তার জন্য পরবর্তী মানযিলসমূহ আরো সহজ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এখানে মুক্তি পাবে না তার জন্য পরবর্তী মানযিলসমূহ আরো কঠিন হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি এমন কোন দৃশ্য কখনো দেখিনি যার থেকে কবর ত্রাসজনক নয়’।[13]

(২) ইবনু ওমর (রা.)-এর ক্রীতদাস নাফে‘ উপস্থিত হয়ে ক্রন্দন করতে লাগলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল কেন আপনি কান্না করছেন? তিনি উত্তর বললেন, আমার সা‘দ ইবনু মুয়ায ও তঁার কবরের কষ্টের কথা স্মরণ হয়েছে’।[14]

(৩) ছাবেত আল বুনানী একদা কবরস্থানে গিয়ে কান্নাকাটি করলেন এবং বললেন, তাদের দেহগুলো পচে গেছে কিন্তু তাদের পরীক্ষা সমূহ রয়ে গেল। অঙ্গীকার নিকটবর্তী এবং সাক্ষাৎ সুদূর পরাহত’।[15]

(৪) হুসাইন আল-জা’ফী হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি একটি খননকৃত কবরের নিকটে আসলেন। অতঃপর কবরের দিকে তাকিয়ে প্রচুর কান্নাকাটি করলেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ! তুমি আমার প্রকৃত ঘর। আল্লাহর শপথ! যদি আমি সক্ষম হ’তাম তাহ’লে তোমার মধ্যেই থাকতাম’।[16]

(৫) মাইমুন বিন মিহরান হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি ওমর ইবনু আব্দুল আযীযের সাথে কবরস্থানে গেলাম। অতঃপর যখন তিনি কবরগুলোর দিকে তাকালেন, তখন ক্রন্দন করলেন। তিনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, এগুলো আমার পিতৃপুরুষ বনু মারওয়ানের কবরস্থান। তারা দুনিয়াবাসীর আনন্দ ও জীবিকায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। তুমি তাদের ধ্বংসস্ত্তপ দেখতে পাচ্ছ। তাদের অঙ্গ বিকৃত হয়ে গেছে। তাদের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তাদের দেহগুলোতে দ্বিপ্রহরের সময়ও পোকামাকড় আপতিত হয়েছে। অথচ তাদের করার কিছুই নেই। অতঃপর তিনি কান্না-কাটি করলেন এবং বেহুঁশ হয়ে গেলেন। অতঃপর যখন তার হুঁশ আসল তখন তিনি বললেন, চলো। আল্লাহর কসম! আমি জানিনা এই কবরগুলি আল্লাহর নে‘মত প্রাপ্ত হয়েছে, না আযাব প্রাপ্ত হয়েছে’।[17]

(৬) আবু আছেম ইবনু হীতী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াসি’র সাথে হাটছিলাম। অতঃপর আমরা একটি কবরস্থানে পেঁŠছলাম। তখন তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। তিনি আমাকে বললেন, হে আবু আছেম! তাদের নিরবতা যেন তোমাকে ধোকায় না ফেলে। কেননা তাদের কেউ কেউ কবরের মধ্যে আনন্দিত, আবার কেউ কেউ উদ্বিগ্নতার মধ্যে আছে’।[18]

ছাহাবীদের স্মরণ করে কান্নাকাটি করা : হাকেম বলেন, আমি আলী বিন আবী তালেবের এক যুগের কিছু সময় সাহচর্য পেয়েছি। আর আমি শুনতাম যে, যখনই তিনি ওছমান (রাঃ)-এর কথা স্মরণ করতেন, তখনই আহা শহীদ! বলতেন এবং ক্রন্দন করতেন। আর আয়েশা (রাঃ)-এর কথা স্মরণ হলে বলতেন, আহা সত্যবাদীর মেয়ে সত্যবাদিনী! আহা রাসূলের প্রিয়তমা স্ত্রী। অতঃপর তিনি ক্রন্দন করতেন’।[19]

আল্লাহর অবাধ্যতায় ক্রন্দন : ছালেহ মুহাম্মাদ তিরমিযী জাহমিয়া ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি মদ বিক্রি করতেন এবং তা পানের বৈধতা দেন। আর ইহসাক ইবনে রাহবী যখন তার কথা স্মরণ করতেন, তখন আল্লাহর প্রতি তার ঔদ্ধত্য প্রদর্শনে ভীত হয়ে ক্রন্দন করতেন’।[20]

ছিয়াম ও ক্বিয়ামের সাথে সম্পর্কহীনতায় ক্রন্দন করা : আমের বিন ক্বায়েস যখন মৃত্যুমুখে পতিত হলেন, তখন তিনি কান্না করতে আরম্ভ করলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হ’ল, কিসে আপনাকে কঁাদাচ্ছে? তিনি বললেন, আমি মৃত্যুর ভয়ে কিংবা হায়াত বৃদ্ধির লোভে ক্রন্দন করছি না। বরং আমি ক্রন্দন করছি দ্বিপ্রহরের প্রবল তৃষ্ণা (ছিয়াম পালন) ও শীতের রাতের ছালাতের সুযোগ হারানোর জন্য’।[21]

ক্বিয়ামত দিবসে একত্রিত না হওয়ার ভয়ে ক্রন্দন : ফুযাইল বিন আইয়ায বলেন, আমার ছেলে আলীকে ক্রন্দন করতে দেখে আমি তাকে বললাম, ‘হে বেটা! কি কারণে তুমি কঁাদছ? তখন সে বলল, আমি ভয় করছি যে, ক্বিয়ামত আমাদেরকে একত্রিত করবে কি না’।[22]

বিচারক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় ক্রন্দন : আব্দুল্লাহ বিন ফারুখ একজন সৎ, পরহেযগার এবং সত্যবাদী ছিলেন। রূহ বিন হাতেম আল-মাহলাবী তাকে বিচারক নির্বাচন করেন। তখন তিনি কঁাদতে শুরু করলেন এবং বললেন, তোমরা আমার প্রতি দয়া কর, আল্লাহও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। পরে তাকে বিচারকের পদ হ’তে অব্যাহতি দেওয়া হয়’।[23]

ছাহাবীদের মধ্যকার বিষয়াদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে ক্রন্দন করা : ইয়াহইয়া বিন আদম হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি শারীককে বলতে শুনেছি, যে তিনি বলতেন, আমি ইব্রাহীম বিন আদহামকে আলী এবং মু‘আবিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি কান্না করলেন। তখন তাকে আমার প্রশ্নের জন্য লজ্জিত হলাম। অতঃপর তিনি মাথা উঁচু করলেন এবং বললেন, যে তার নিজের ব্যাপারে জানে, সে অন্যদের থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেয়। আর যে তার রবকে জানে, সে সমস্ত কিছু থেকে তার রবের দিকে ফিরে যায়’।[24]

দুর্ভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ভয়ে ক্রন্দন : আত্বা আল-খাফফাফ বলেন, আমি যখনই সুফিয়ান ছাওরীর সাথে সাক্ষাৎ করেছি তখনই তিনি ক্রন্দন করতেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতাম, আপনার কি হয়েছে? তিনি বলতেন, কুরআনে বর্ণিত ‘দুর্ভাগ্যবান’ ব্যক্তিদের মত আমি হয়ে যাই কিনা এই ভয়ে ক্রন্দন করি’।[25]

জান্নাতের দরজা বন্ধ হওয়ার ভয়ে ক্রন্দন : যখন উম্মে ইয়াস বিন মু‘আবিয়া মৃত্যুবরণ করেন, তখন ইয়াস কান্না শুরু করেন। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হ’ল, কিসে আপনাকে কঁাদাচ্ছে? তিনি বললেন, আমার জন্য জান্নাতে যাওয়ার দু’টি দরজা খোলা ছিল। কিন্তু একটি বন্ধ হয়ে গেল’।[26]

জামা‘আতে ছালাত নষ্ট হওয়ার জন্য ক্রন্দন : মুহাম্মাদ মুবারক আস-সূরী বলেন, আমি সাঈদ বিন আব্দুল আযীযকে দেখেছি, যখন তার জামা‘আতে ছালাত ছুটে যেত, তখন তিনি ক্রন্দন করতেন’।[27]

আল্লাহর আদেশের প্রতি মানুষের অবহেলার জন্য ক্রন্দন : জাফর বিন সুলায়মান বলেন, আমরা অসুস্থ আবী তাইয়াহকে দেখতে গেলাম। তখন তিনি বলেন, এখানকার সময়ে কোন মুসলিমের জন্য উচিত নয় যে, যখন সে মানুষের মধ্যে আল্লাহর কোন আদেশের প্রতি অবহেলা দেখতে পাবে, তখন সে আমলটাই বেশী বেশী করবে। অতঃপর তিনি ক্রন্দন করলেন’।[28]

কাফেরদের বিপক্ষে মুসলিমদের জয়ে খুশীতে ক্রন্দন : যখন স্পেন বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেকের নিকট বার্তাবাহক আসলো তিনি ওযূ করে মসজিদে প্রবেশ করে আল্লাহর জন্য দীর্ঘ সিজদা করেন, তার প্রশংসা করেন এবং ক্রন্দন করেন’।[29]

নিজের অক্ষমতার জন্য ক্রন্দন : কৃতদাস উৎবা ছিলেন খুবই বিনয়ী, আল্লাহর প্রতি অনুগত্যশীল এবং একনিষ্ঠ বালক। আব্দুল ওয়াহেদ বিন যায়েদ বলেন, আমি উৎবাকে বললাম, সে যেন তার নিজের প্রতি রহম করে। তখন সে ক্রন্দন করল এবং বলল, আমি তো আমার অক্ষমতার জন্য ক্রন্দন করি’।[30]

 [ক্রমশ]

[লেখক : ২য় বর্ষ, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।]


[1]. তাযকিরাতুল হুফফায, শামসুদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ ইবনুল জাওযী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ ১৯৯৮ খৃ./১৪১৯ হি.) পৃ. ৪/৫৪; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (মিসর : দারুল হাদীছ ২০০৬ খৃ./১৪২৭ হি.) পৃ. ৮/১৫।

[2]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১৩/৩৪৪ পৃ.।

[3]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১৩/৪০৪, ১৭/২৪৩ পৃ.।

[4]. ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন সা’দ ওরফে ইবনু সা’দ (বৈরূত দারু ছাদের ১৯৬৮ খৃ. ৮ খন্ডে সমাপ্ত) ৩/২৭৭ পৃ.।

[5]. আত-তাবছিরাহ, জামালুদ্দীন আবুল ফারজ মুহাম্মাদ জাওযী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ ১৯৮৬ খৃ./১৪০৬ হি.) পৃ. ১/৩০৮; মুহাসাবাতুন নাফস, আবুবকর আব্দুল্লাহ ইবনু আবিদ্দুনিয়া (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) হা/১৩৬, ১/১৩১ পৃ.।

[6]. হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নু‘আইম আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল আরবী ১৯৭৪ খৃ./১৩৯৪ হি.) ৬/২৪৪ পৃ.।

[7]. তারীখু ক্বযাতিল আন্দালুসি, আবুল হাসান আলী আন্দালুসী (বৈরূত: দারুল আফাক্বিল জাদীদাহ ১৯৮৩ খৃ./১৪০৩ হি.) ১/৯৬ পৃ.।

[8]. আত-তাখবীফু মিনান্নার, যায়নুদ্দীন আব্দুর রহমান হাম্বলী (দিমাশক্ব : দারুল বায়ান ১৯৮৮ খৃ./২৪০৯ হি.) ১/৪৪ পৃ.; আররিক্বাহ ওয়াল বুকা, ইবনু আবিদ্দুনিয়া (বৈরূত : দারু ইবনু হযম) হা/৫৭, পৃ. ১/৫৭।

[9]. আল-যাওয়াবুল কাফী, ইবনুল কাইয়িম জাওযী, (মরক্কো : দারুল মা‘রেফাহ ১৯৯৭ খৃ./১৪১৮ হি.) ১/২৮ পৃ.।

[10]. শো‘আবুল ঈমান, হা/৯৩১, ২/৩০০ পৃ.; ছিফাতুছ ছফওয়া, জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ জাওযী (মিসর : দারুল হাদীছ ২০০০ খৃ./১৪২১ হি.) ২/৩৫৮ পৃ.।

[11]. আত-তাখবীফু মিনান্নার, ১/১৩২ পৃ.; আররিক্বাহ ওয়াল বুকা হা/৬৪, ১/৭১ পৃ.।

[12]. তারীখু দিমাশক্ব, আবুল কাসেম ইবনু আসাকির, ৬৫/৩৫৯ পৃ.।

[13]. তিরমিযী হা/২৩০৮; মিশকাত হা/১৩২ ‘ঈমান’ অধ্যায়।

[14]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৫/৯৯ পৃ.; তারীখুল ইসলাম ৭/৪৮৯ পৃ.।

[15]. আল-বুহূরুয যাখেরাহ, সুলায়মান নিসাপুরী ১/৩৮১ পৃ.।

[16]. আহওয়ালুল কুবুর যায়নুদ্দীন বাগদাদী (মিসর : দারুল গাদ্দিল জাদীদ ২০০৫ খৃ./১৪২৬ হি.) ১/১৪০ পৃ.।

[17]. হিলইয়াতুল আউলিয়া ৫/২৬৯ পৃ.।

[18]. আহওয়ালু কুবূর ১/১৩৯; আল-কুবূর, ইবনু আবিদ্দুনিয়া, ১/৪৬ পৃ.।

[19]. তারিখুল ইসলাম ২৬/১২২; আল-অফী ১২/২৬৬ পৃ.।

[20]. তারিখুল ইসলাম ১৭/৯৭ পৃ.।

[21]. আয-যুহদ ওয়ার-রাক্বায়েক্ব, আবু আব্দুর রহমান আল-মারয়াযী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিইয়াহ, তাবি) হা/২৮০, ১/৯৫ পৃ.।

[22]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/৪০৭ পৃ.।

[23]. তারিখুল ইসলাম ১১/২১৫ পৃ.।

[24]. তারিখুল ইসলাম ১০/৫৭ পৃ.।

[25]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৬/৬৪৩, তারিখুল ইসলাম ১০/২৩৩ পৃ.।

[26]. হিলইয়াতু আউলিয়া ৩/১২৩, তারিখুল ইসলাম ৮/২৩ পৃ.।

[27]. তারিখুল ইসলাম ১০/২২০ পৃ.।

[28]. তারিখুল ইসলাম ৯/৩০৯ পৃ.।

[29]. তারিখুল ইসলাম ৬/৫০০ পৃ.।

[30]. তারিখুল ইসলাম ১০/৩৪৯ পৃ.।



বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও