অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চার মাস : কিছু কথা
আহসান শেখ
আহসান শেখ 13 বার পঠিত
ভূমিকা : গত জুলাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশ উত্তাল ছিল। সে আন্দোলনে শত শত ছাত্র-যুবক এমনকি অনেক সাধারণ লোকজন তৎকালীন হাসিনা সরকারের পুলিশদের গুলিতে আহত ও নিহত হয়। অবশেষে ছাত্র-জনতার ১ দফা আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সোমবার গণঅভ্যুত্থান হয়। এতে সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসক হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও পতন হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন : হাসিনা সরকারের পদত্যাগের সাথে সাথেই শ্রেণী-পেশা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। যেখানে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মাদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা হন। ০৮ আগস্ট রাতে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রথমে ১৬ জন উপদেষ্টাকে নিয়োগ করে তাদের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় যার মাধ্যমে দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির অবসান ঘটে। আবারও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অটুট অবিচল রেখে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কারের কাজ শুরু হয়। শুরু থেকেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন ও নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশে পূর্ণাঙ্গ শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসে। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার সরকারের পতন ও ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চার মাস পার হ’তে চলেছে।
কিছু পরামর্শ ও দাবী : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের পরামর্শ থাকবে বিগত ১৫ বছরে খুন-গুম হত্যাকান্ড দুর্নীতিতে স্বৈরাচারী হাসিনা সহ আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের মধ্যে যারা বিদেশে পালিয়েছে তাদেরকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে ট্রাইবুনালে বিচার করা। বিপ্লব বা জুলাইয়ের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ বা বেহাত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উচিৎ হবে মবতন্ত্র/মবোক্রেসি বা মব উস্কানি ঠেকানো। নিম্নে কিছু পরামর্শ ও দাবী তুলে ধরা হল।
(১) সংস্কার কমিশনের কাজ দ্রুত শেষ করা : ড. মুহাম্মাদ ইউনুস রাষ্ট্র সংস্কারে প্রথমে ৬ টি কমিশন গঠনের কথা বলেন। সেই ৬ কমিশন হ’ল সংবিধান সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। পরে আরও চারটি সংস্কার কমিশন (স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন) সহ মোট ১০ টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে কমিশনগুলো। সংস্কার কমিশনের সদস্যদের দেওয়া রিপোর্টগুলো স্বচ্ছতার সাথে গ্রহণ করা এবং উত্তম পন্থায় সমাধান করতে হবে।
(২) দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার ধরে রাখা : দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে জনসমর্থন ধরে রাখতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এ জন্য ধীরগতিতে হলেও সরকার যে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পেরেছে, তা দেখাতে হবে। দৈনন্দিন কাজের গতি বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে উপদেষ্টার সংখ্যা আরও বাড়ানো। কারণ বর্তমানে কিছু উপদেষ্টা একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন, যা তাঁদের উপর বাড়তি চাপের কারণ হতে পারে। আরেকটি বিষয় হ’ল, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে উপদেষ্টার দায়িত্বে আনা।
(৩) দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকানো : ভয়েস অব আমেরিকা, বাংলার এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ করছে অথবা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। জরিপে দেখা গেছে, ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, চাল, মাছ, সবজি, ডিম, মাংস, তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ করেছে। এতে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাই দ্রুত এর কার্যকরী সমাধান করা।
(৪) মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা : মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। এর মধ্যে একটি হ’তে পারে রাষ্ট্রীয় সেবাদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে গেঁড়ে বসা দুর্নীতি মোকাবিলা। সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পারলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরবে। পুলিশকে সড়কে ফেরাতে পারলে ঢাকার তীব্র যানজট মোকাবিলায় তা কাজে লাগবে। বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্থনীতির জন্য যেমন আশীর্বাদ হ’তে পারে, তেমনি এতে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
(৫) ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা : মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার কীভাবে করা হবে, অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সেটা সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময়ে হওয়া মামলা ও শেখ হাসিনার শাসনামলে পুরোনো মামলা উভয় ক্ষেত্রে করতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। তবে মামলার নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে, এমন অভিযোগও উঠতে পারে। এসবের সঙ্গে দ্রুত বিচার করার যে দাবি উঠেছে, তার ভারসাম্য রক্ষার একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বিচারব্যবস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষকে যুক্ত করলে সেটা হবে সবচেয়ে উত্তম পন্থা। ভাল-মন্দ মিলিয়ে অতীত যে অভিজ্ঞতা, সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার বিচার করতে হলে ১৯৭৩ সালের যে আইনে এই ট্রাইব্যুনালের ভিত্তি তৈরী হয়েছিল, সেই আইনে সংস্কার আনতে হবে। এই ট্রাইব্যুনালে অন্তত একজন আন্তর্জাতিক বিচারক রাখতে হবে। অন্যদিকে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত। এ ছাড়া পর্যাপ্ত প্রমাণাদি ছাড়া ঢালাও মামলায় যাতে কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশকে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশ দেওয়া উচিত।
আরও বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, সরকারের উচিত হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে কথিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে, তার লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করা। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল এমন অভিযোগে অনেককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিশোধপরায়ণ এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হয়েছে, সেটা সবার কাছেই বোধগম্য। কিন্তু এতে যেটা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আর এসব পদে নতুন করে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের কারণেও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
(৬) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুশৃঙ্খল রাখা : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়তে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশের অনুপস্থিতি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাকান্ড জনমনে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও উত্তরায় প্রথম দিকে ঘন ঘন ডাকাতির খবর পাওয়া যায়। পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় হলে সাম্প্রতিক সময়ে এসব ডাকাতি-ছিনতাই অনেকাংশে কমে এসেছে।
(৭) দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শতাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের প্রায় সবার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
(৮) রাষ্ট্রীয় তিনটি স্তম্ভ ঠিক রাখা : রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ। সর্বাগ্রে জনকল্যাণমূলক আইনের ফার্স্ট অপশন হ’ল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত আইন। কেননা সৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আইনই কল্যাণকর। একটি ঘড়ি যেমন আর একটি নষ্ট ঘড়িকে ঠিক করতে পারে না, তেমনি সৃষ্টি মানুষ অন্য মানুষের জন্য সঠিক আইন দিতে পারে না।
বিগত দিনের অবিচার, বিচারহীনতা, বিরোধীপক্ষকে হয়রানি, নামে-বেনামে মামলা, গায়েবি মামলা, বিচারকদের রাজনীতি, মামলার জটসহ বিদ্যমান সমস্যা দূরীকরণে সবার আগে দরকার সেপারেশন অব পাওয়ার। বিচারকদের বিচারিক কাজ মনিটর করার জন্য মনিটরিং সেল তৈরি করা। বর্তমান আইন কমিশনকে ঢেলে সাজানো। বিচারকদের বিচারিক কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিচারক বৃদ্ধি, বিচার কার্যালয় বৃদ্ধি, রিমোট হিয়ারিং সিস্টেমের ব্যবস্থা, আদালতে আধুনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা, বিচারকদের আধুনিক ট্রেনিং দেয়া এবং আদালতপাড়ায় দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। দল-মত নির্বিশেষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা না গেলে রাজনৈতিক যে সরকারই ক্ষমতায় আসবে তারাও ঠিক তাদের পূর্ববর্তীদের মতো বিচার বিভাগের গলা চেপে ধরবে, আর সাধারণ জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।
(৯) স্থাপনার নাম পরিবর্তন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বেশকিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে। সাভারের ‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের’ নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নাম পরিবর্তনের কার্যক্রম শুরু করে অন্তর্বতীকালীন সরকার। ওই প্রতিষ্ঠানের নাম করা হয় জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। এরইমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে’র নাম পরির্তন করে ‘গাজীপুর সাফারি পার্ক’ নামকরণসহ শেখ মুজিব, শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সাথে সাথে বাকী নাম গুলোও পরিবর্তন করতে হবে।
(১০) দেশকে স্থিতিশীল রাখা : চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের খবর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ‘ইসকন’কে বাংলাদেশে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি যেকোনো সহিংসতা বা অসহিষ্ণুতা এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের উচিৎ হবে দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদী ও মবোক্রেসি কারীদের থেকে মুক্ত রাখা।
(১১) শিক্ষা খাত সমৃদ্ধ করা : শিক্ষা খাত বাংলাদেশের দুর্বলতম খাতগুলোর অন্যতম। এই খাতে বাজেট বরাদ্দ তলানিতে। কয়েক দিন পরপর শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে কাটাছেঁড়া চলেছে। শিক্ষার নিম্নমান, দলীয় পরিচয়ে অযোগ্য-অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষা বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং ব্যবসা, ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, কারিগরি শিক্ষার অপ্রতুলতা ইত্যাদি সমস্যার কারণে শিক্ষার মান ক্রমাগত নিম্নমুখী।
তাই এই সরকারের উচিত হবে, শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতি বন্ধ করা, মেধাবীদের মূল্যায়ন করা, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, মেধা পাচার বন্ধ, ব্যবসায়িক শিক্ষার প্রসার, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা আবশ্যক করা, সত্যিকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে অগ্রাধিকার দেয়া। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন দলের পরামর্শে শিক্ষা, সিলেবাস, দলীয় বিষয় অন্তর্ভুক্তি আইনের মাধ্যমে বন্ধ করা। পাশাপাশি গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষকদের ট্রেনিং, আধুনিক অবকাঠামো বৃদ্ধি, প্রয়োজনে অনলাইন ক্লাস চালু করা, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা।
(১২) চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করা : দেশে মানসম্মত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যাও বিদ্যমান। আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যরূরী। প্রতিটি যেলা শহরে আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলা, সরকারিভাবে সম্ভব না হলেও বেসরকারি উদ্যোগে বড় ও সর্বাধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলা। যতটা সম্ভব বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার। প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ করা না গেলেও প্রাইভেট চিকিৎসার একটি ফী কাঠামো তৈরি করা, রোগীকে অহেতুক হয়রানি না করা, বিনা প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংস্কৃতি বন্ধ করা, চিকিৎসাব্যয় কমানো, চিকিৎসকদের জবাবদিহির আওতায় আনা, কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করা, রোগীদের ডাটাবেজ তৈরি ও সমন্বয়ের স্বার্থে রেকর্ড শেয়ার করা। এ জন্য একটি টেকসই নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
উপসংহার : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান মানুষের মনে নতুন স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে। এ স্বপ্নকে বাস্তবরূপ দিতে হ’লে সরকারকে যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা এই সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যোগ্যতা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।
আহসান শেখ
[শিক্ষার্থী বিবিএ, ৩য় বর্ষ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বি আই ইউ, ঢাকা]