আহমাদ দাহলান (ইন্দোনেশিয়া)
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
তাওহীদের ডাক ডেস্ক 72 বার পঠিত
মুহাম্মাদ দারভীশ ওরফে কাই হাজী আহমাদ দাহলান (১৮৬৮-১৯২৩ খৃ.) ছিলেন একজন ইন্দোনেশিয়ান মুসলিম ধর্মীয় সংস্কারক। তৎকালীন নেদারল্যান্ড তথা ডাচ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম সমাজে ব্যাপক ধর্মীয় কুসংস্কার বিদ্যমান ছিল। তিনি একটি মুসলিম স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠা এবং শিরক-বিদ‘আতসহ ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে ১৯১২ সালে বৃহত্তম মুসলিম সংগঠন ‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠন ১৯৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬১ সালে এক রাষ্ট্রীয় ঘোষণার মাধ্যমে আহমাদ দাহলানকে জাতীয় বীর হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জন্ম ও পরিচয় : আহমাদ দাহলান পিতৃ-মাতৃ উভয় দিক থেকেই সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৬৮ সালের ১লা আগস্ট তিনি ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নিকটবর্তী কুমানে জন্মগ্রহণ করেন। এটি ছিল জাকার্তার ‘মুরতম’ সালতানাতের রাজপ্রাসাদ ও কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছাকাছি একটি এলাকা। ওই মসজিদের ইমাম ছিলেন তার বাবা হাজী আবুবকর সুলায়মান, যিনি মাওলানা মালিক ইব্রাহীমের বংশধর। মাওলানা মালিক ইব্রাহীমের মাধ্যমে খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম এসেছিল। ২০০৪ সালে মাওলানা মালিক ইব্রাহীম ইসলামিক স্টেট ইউনিভার্সিটি, মালং নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আহমাদ দাহলানের মা ছিলেন প্রাসাদের বিচারক হাজী ইব্রাহীম বিন হাজী হাসানের কন্যা।
শিক্ষাজীবন : মুহাম্মাদ দাহলানের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় তার বাবার কাছেই। ছোটবেলায় তিনি কোনো সরকারি স্কুলে ভর্তি হননি। কারণ তখন মুসলমানরা ঔপনিবেশিক সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলোতে সন্তানদের পড়ানোর বিষয়টি এড়িয়ে চলত। তাই তার পিতা তাকে নিজেই ইসলামী শিক্ষার মূলনীতি শেখান। তিনি তাকে কুরআন ও প্রাথমিক ইসলামী নীতিমালা শেখান এবং নিশ্চিত করেন যে তিনি সেগুলো পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পেরেছেন কিনা। এরপর তিনি জাকার্তা ও তার আশেপাশের শহরের কিছু বিদ্বান শায়খ এবং পন্ডিতের কাছ থেকে আইনশাস্ত্র, তাফসীর এবং হাদীছ অধ্যয়ন করেন।
১৫ বছর বয়সে তিনি হজ্জ পালন করতে মক্কায় সফর করেন এবং সেখানেই পাঁচ বছর শিক্ষার্জন করেন। ১৮৮৮ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে আসেন। তবে ১৯০৩ সালে আরও গভীর ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য পুনরায় মক্কায় যান। সেখানে তিনি দুই বছর অবস্থান করেন এবং ক্বিরাআত, তাফসীর, তাওহীদ এবং ফিক্বহ বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন। এসময় তিনি শাফেঈ মাযহাবের বিখ্যাত শিক্ষক শায়খ আহমাদ আল-খতীবের নিকট অধ্যয়ন করেন। তিনি মূলত ইন্দোনেশীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। তার ছাত্ররা স্বাধীনচেতা ও অন্যান্য মাযহাবের অনুসারীদের প্রতি সহনশীল ছিল, যা তাকে প্রভাবিত করেছিল। তার সংস্পর্শে এসে তিনি ইসলামের সংস্কারবাদী চিন্তাধারা গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য মক্কা থেকে ফেরার সময় এক শিক্ষক তার মুহাম্মাদ দারভীশ নাম পরিবর্তন করে আহমাদ দাহলান রাখেন। হজ্জ পালন করার কারণে তার নামের শুরুতে ‘হাজী’ শব্দটি যুক্ত হয়। এছাড়াও দেশে ফেরার পর তার সতীর্থ ও অনুসারীদের দ্বারা তিনি ‘কাই’ উপাধি লাভ করেন।
‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা : আধুনিকতার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ফলে ইন্দোনেশিয়ার অনেক মানুষ কুরআন-হাদীছ উপেক্ষা করে নতুন একটি তথাকথিত ‘শুদ্ধ ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিল। একই সময়ে পশ্চিমা খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের প্রচেষ্টাও ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে তিনি ১৯০৯ সালে ‘বুডি উটোমো’তে যোগদান করে সংস্কার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে চেয়েছিলেন। তবে তাদের কার্যক্রমে ইসলামের প্রকৃত আদর্শের অভাব ছিল। ফলে ১৯১২ সালে তিনি তার সংস্কারবাদী আদর্শ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য ‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনে মানুষ দ্রুত যোগ দিতে থাকে, যা ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পুনরুজ্জীবন এবং স্বাধীনতার চেতনা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া তিনি ১৯১৭ সালে ‘আইসিয়াহ’ নামে একটি মহিলা বিভাগও সংযুক্ত করেছিলেন। যা ইন্দোনেশিয়ান মহিলাদের শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেছিল। আজ ‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংগঠন। ২০ মিলিয়নের অধিক মানুষ এই সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। আর তিনি এই আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখার জন্য ‘জামে‘আ মুহাম্মাদ দাহলান’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্ররা সেখানে পড়তে আসে। তাদের মাধ্যমে তিনি বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটাতে সক্ষম হন।
আহমাদ দাহলানের দাওয়াতী কার্যক্রম : আহমাদ দাহলানের দাওয়াতী কাজের পূর্বে প্রাচীন ইন্দোনেশিয়ানরা পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিল। এই প্রাচীন পৌত্তলিক ধর্মের প্রভাব ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম সমাজে, বিশেষ করে জাভানিজ সমাজে এখনও শক্তিশালী। কারণ জাভা ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজ্যের সদর দফতর। তথাপি ঐতিহাসিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, জাভাতে ইসলামের বিস্তার ধীরগতির ছিল। তারপর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধ স্থাপন করে এবং সেই সাথে স্থানীয় রীতিনীতিগুলিকে এমনভাবে অভিযোজিত করে, যা ইসলামের কিছু নীতির আনুমানিক বলে মনে হয়।
জাভানিজ সমাজকে বিশ্বাস ও সভ্যতায় ইসলামীকরণের লক্ষ্য নিয়েই ‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা। যা তার প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই একটি সংস্কার বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিল। আর এই সংস্কার প্রক্রিয়াটি আজও বিদ্যমান।
দাওয়াতী ময়দানে আহমাদ দাহলানের অকুতোভয় প্রচেষ্টা : ১৮৯৬ সালের দিকে আহমাদ দাহলান লক্ষ্য করেছিলেন যে সালতানাত মসজিদসহ জাকার্তার অন্যান্য মসজিদগুলি ক্বিবলার দিকে সঠিকভাবে মুখ করছে না। তিনি দেখেন যে মসজিদগুলির ক্বিবলা ২২ ডিগ্রি বাঁকা, যা সঠিক নয়। এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করার জন্য তিনি মসজিদে ক্বিবলার দিকে সঠিক লাইন অাঁকতে শুরু করেন, যাতে মুছল্লীরা সঠিকভাবে ক্বিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে পারে।
যখন ‘মুতরম’ প্রাসাদ বিচারক এবং এই মসজিদের দায়িত্বশীলগণ বুঝতে পারেন যে, আহমাদ দাহলান এটি করেছেন, তারা তার সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করেন এবং তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অতঃপর তারা সেই নতুন লাইনগুলি মুছে দেন। আহমাদ দাহলান তাদের প্রতিক্রিয়ার প্রতি খুবই ধৈর্যশীল ছিলেন। তবে তার এই ব্যর্থ প্রচেষ্টা তাকে থামাতে পারেনি। তিনি সঠিক ক্বিবলামুখী একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন। যখন বিচারক এবং তার সহকর্মী আলেম ও শায়খরা এই নতুন মসজিদ এবং মুছল্লীদের লাইন সম্পর্কে জানতে পারলেন, যা সালতানাত মসজিদ এবং অন্যান্য মসজিদের লাইন থেকে আলাদা, তারা আহমাদ দাহলানের প্রতি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন। ফলে বিচারক এবং তার সঙ্গীরা আহমাদ দাহলানের মসজিদটি জ্বালিয়ে দেন।
আহমাদ দাহলান যখন তার প্রচেষ্টায় হতাশ হয়ে পড়েন, তখন তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরের দিন সকালে আহমাদ দাহলান এবং তার স্ত্রী জাকার্তা শহর ত্যাগ করেন। যখন তার ভাই হাজী ছালেহ তার চলে যাওয়ার কথা শুনেন, তিনি দ্রুত তাকে অনুসরণ করেন, তাকে বাধা দেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে তার জন্য আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। এর ফলে তিনি ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তার পিতার মৃত্যুর পর তাকে সালতানাত মসজিদের ইমাম নিযুক্ত করা হয়। ফলে তার দাওয়াতের প্রচার ও প্রসার বিস্তৃত হয়।
সমাজ সংস্কারে কুরআন ও সুন্নাহর প্রাধান্য : আহমাদ দাহলান ইসলামী বিশ্বাসকে বিদ‘আত, কুসংস্কার ও শিরকমুক্ত করার জন্য মূলের দিকে ফিরে যাওয়ার আহবান জানাতেন। একাজের জন্য তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠিত ‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ আন্দোলনকে ইজতিহাদের দরজা খুলে দেওয়া, তাকলীদকে বর্জন করা এবং পরিপূর্ণভাবে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। আহমাদ দাহলান এবং ‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ আন্দোলন এটা বলে না যে, তারা মাযহাবের ইমাম ও প্রতিষ্ঠাতাদের অস্বীকার করেন না। বরং তারা বিশ্বাস করেন যে, তাদের ফৎওয়া ও ইজতিহাদগুলি পর্যালোচনা, আলোচনা এবং সংশোধনযোগ্য এবং যে চিরন্তন সত্য রয়েছে তা হ’ল কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যেই বিদ্যমান। আহমাদ দাহলান এবং ‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ সংগঠন তার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সমাজের বিশ্বাসকে হিন্দু ও বৌদ্ধ পুঁথিগত বিশ্বাস এবং অন্যান্য আগত ভ্রান্ত ধারণাগুলি থেকে মুক্ত করার জন্য কাজ করেছেন, যা ইসলামের মৌলিক আক্বীদা ও মানহাজের সাথে সাংঘর্ষিক, অথচ জাভানিজ সমাজের মধ্যে প্রচলিত ছিল।
একটি ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে যে, এক ব্যক্তি কুমান শহরে অনুষ্ঠিত আহমাদ দাহলান-এর এক শিক্ষা সমাবেশে উপস্থিত হয়। এ ব্যক্তি সুমারাং শহরের বাসিন্দা ছিল। সে আহমাদ দাহলান ও ‘মুহাম্মাদিইয়াহ’ সংগঠনের সদস্যদের গালি দিত এবং তাদের কুফরির অভিযোগ আনত। কারণ তারা প্যান্ট, জ্যাকেট, টাই পরিধান করে এবং ঔপনিবেশিকদের ব্যবহৃত শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে। তার মতে, তারা পশ্চিমা খ্রিস্টানদের অনুকরণ করছে। কারণ তিনি একটি হাদীছ বুঝেছিলেন যে, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি যে কওমের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি সেই কওমের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। তখন আহমাদ দাহলান তাকে প্রশ্ন করেন, ‘তুমি সুমারাং শহর থেকে এখানে কীভাবে এসেছ? ব্যক্তিটি উত্তরে বলল, ‘আমি ট্রেনে এসেছি’। তখন আহমাদ দাহলান তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেন ট্রেনে এসেছ, যা পশ্চিমাদের তৈরি? হাঁটতে হাঁটতে কেন আসলে না? তখন সেই ব্যক্তি চুপ হয়ে যায় এবং উপলব্ধি করে যে, তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন।
মৃত্যুবরণ : আহমাদ দাহলান একজন পরহেযগার ও দ্বীনদার ব্যক্তি ছিলেন, যিনি আল্লাহ তা‘আলাকে অত্যধিক ভয় করতেন। তিনি নিজের জন্য একটি চিরকুট লিখেছিলেন, যা তিনি তার অফিস এবং শয্যার পাশে রেখে দিতেন। এতে লেখা ছিল, ‘হে দাহলান! নিশ্চয়ই ভয়াবহ বিষয়গুলো অনেক বড় এবং তোমার সামনে অনেক বিষয় গোপন রয়েছে, যা তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে। আর তা হয় মুক্তির মাধ্যমে নতুবা ধ্বংসের মাধ্যমে। হে দাহলান! নিজেকে আল্লাহর সঙ্গে একা কল্পনা কর। আর মনে কর, তোমার সামনে মৃত্যু, হিসাব-নিকাশ, জান্নাত এবং জাহান্নামের বিষয়গুলো রয়েছে’। তিনি আল্লাহর এই বাণীতে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতেন, ‘প্রত্যেক প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। আর যে ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই প্রকৃত সফল। আর পার্থিব জীবন তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)। এই বিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি তাক্বওয়া তাকে সৎকর্ম এবং উত্তম কাজের প্রতি উৎসাহিত করত। এই মহান মনীষী ১৯২৩ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী তার জন্মস্থান কুমানে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।-আমীন!