এক ফোঁটা মধু
মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
একদিন একজন বিখ্যাত দার্শনিক এবং তার শিষ্য সকালে হাঁটছিলেন। হাঁটার সময় তারা এক জোড়া পুরোনো জুতা দেখতে পান, যা রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। জুতাটি ছিল পাশের ক্ষেতে কাজ করা একজন গরিব কৃষকের, যিনি কিছুক্ষণ পর তার কাজ শেষ করতে চলেছিলেন।
শিষ্যটি দার্শনিকের দিকে তাকিয়ে বলল, চলুন আমরা কিছুক্ষণ মজা করি। এই জুতা জোড়া লুকিয়ে রাখি এবং গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখি, লোকটি যখন তার জুতা খুঁজে পাবে না, তখন কী প্রতিক্রিয়া দেখায়। দার্শনিক উত্তরে বললেন, বৎস! কখনোই গরীব মানুষের দুর্দশা দেখে আনন্দ করা উচিত নয়। বরং তুমি অন্যভাবে আরও বেশি আনন্দ পেতে পার। চল আমরা প্রতিটি জুতার মধ্যে একটি করে স্বর্ণমুদ্রা রাখি। তারপর গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখি, এতে লোকটির প্রতিক্রিয়া কেমন হয়। শিষ্যটি দার্শনিকের কথা মতো কাজ করল। প্রতিটি জুতার মধ্যে একটি করে স্বর্ণমুদ্রা রাখল এবং তারা গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেল।
কৃষকটি তার কাজ শেষ করে জুতার কাছে ফিরে এলো। কৃষকটি প্রথমে তার জামা পরল। তারপর সে ডান পায়ে প্রথম জুতা পরে কিছু একটা শক্ত বস্ত্ত অনুভব করল। অবাক হয়ে সে জুতাটি খুলল এবং দেখল ভেতরে একটি স্বর্ণমুদ্রা। লোকটির চোখে-মুখে তখন বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠল। সে মুদ্রাটিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল, হাত দিয়ে অনুভব করল এবং বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করল, এটি আসল কি-না।
এরপর সে চারপাশে তাকাল, কিন্তু আশেপাশে কাউকে দেখতে পেল না। তাই সে মুদ্রাটি পকেটে রাখল এবং দ্বিতীয় জুতাটি পরার জন্য এগিয়ে গেল। কিন্তু দ্বিতীয় জুতাটি পরতেই সে আরো একটি মুদ্রা পেল। এবার তার বিস্ময় দ্বিগুণ হয়ে গেল।
লোকটি আনন্দে এবং আবেগে অভিভূত হয়ে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ল। সে আকাশের দিকে মুখ তুলে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলল, রববুল আলামীন! তুমিই একমাত্র জানো আমার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা, যাকে দেখার মতো কেউ নেই। তুমি জানো আমার ছোট ছোট সন্তানদের কথা, যারা গত কয়েকদিন যাবৎ না খেয়ে আছে। তুমি জানো কেমন করে এই টাকা আমাকে সাহায্য করতে পারে। তোমার প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা।
দৃশ্যটি দার্শনিক এবং তার শিষ্যটির হৃদয় গভীরভাবে স্পর্শ করল। তার চোখে পানি চলে এলো। তখন দার্শনিক শিষ্যকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এখন আগের তুলনায় বেশী আনন্দ অনুভব করছ না? এই লোকটিকে অপদস্থ করার পরিবর্তে তুমি তার জীবনে ভালো কিছু প্রভাব রাখতে পেরেছ। শিষ্যটি আবেগ ভরা কণ্ঠে উত্তর দিল, হ্যাঁ। এই অভিজ্ঞতা আমাকে এমন এক শিক্ষা দিয়েছে, যা আমি সারা জীবন মনে রাখব। আজ আমি প্রকৃত আনন্দ লাভ করলাম, যা আমি আগে কখনোই উপলব্ধি করতে পারিনি।
মূল : মুহসিন জববার; অনুবাদ : নাজমুন নাঈম
[সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাবি শাখা]