আল্লাহর পথে হিজরত

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 272 বার পঠিত

আল-কুরআনুল কারীম :

1- إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَتَ اللَّهِ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ-

(১) ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে ও আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর রহমত আশা করে। বস্ত্তত আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (বাক্বারাহ ২/২১৮)

2- وَمَنْ يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا-

(২) ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দেশ ত্যাগ করবে, সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে। আর যে ব্যক্তি তার গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর মৃত্যু তাকে গ্রাস করে। তার প্রতিদানের ভার আল্লাহর উপর ন্যস্ত হয়েছে। বস্ত্তত আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নিসা ৪/১০০)

3- وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مَا ظُلِمُوا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَلَأَجْرُ الْآخِرَةِ أَكْبَرُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ-

(৩) ‘আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, আমরা অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দান করব। আর আখেরাতের পুরস্কারই তো শ্রেষ্ঠ, যদি তারা জানত’ (নাহল ১৬/৪১)

4- ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ هَاجَرُوا مِنْ بَعْدِ مَا فُتِنُوا ثُمَّ جَاهَدُوا وَصَبَرُوا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَحِيمٌ

(৪) ‘অতঃপর যারা (আল্লাহর পথে) নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করেছে। অতঃপর জিহাদ করেছে ও ধৈর্যধারণ করেছে, নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক এসবের পর তাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নাহল ১৬/১১০)

5- وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوْا وَنَصَرُوا أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ-

(৫) ‘যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে এবং যারা তাদের আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে, তারা হ’ল সত্যিকারের মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও উত্তম জীবিকা’ (আনফাল ৮/৭৪)

6- وَمَنْ يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ

الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا -

(৬) ‘আর যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, আমরা অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দান করব। আর আখেরাতের পুরস্কারই তো শ্রেষ্ঠ, যদি তারা জানত’ (সূরা ১৬/৪১)

7- وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

(৭) আর যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে ও নিহত হয়েছে কিংবা মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই (জান্নাতে) উত্তম রিযিক দান করবেন। আর আল্লাহ, নিশ্চয় তিনিই তো শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা’ (হজ্জ ২২/৫৮)

হাদীছে নববী :

8- عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ، فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ، وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا، أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ-

(৮) হযরত ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকে কেবল অতটুকু পাবে, যতটুকুর জন্য সে নিয়ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি হিজরত করেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে। আর যে ব্যক্তি হিজরত করেছে দুনিয়া পাওয়ার জন্য বা কোন নারীকে বিবাহ করার জন্য, সে ব্যক্তির হিজরত সেদিকেই হয়েছে’।[1]

9- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ الْهِجْرَةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: أَنْ تَهْجُرَ مَا كَرِهَ رَبُّكَ عَزَّ وَجَلَّ- وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَـ - الْهِجْرَةُ هِجْرَتَانِ: هِجْرَةُ الْحَاضِرِ، وَهِجْرَةُ الْبَادِي، فَأَمَّا الْبَادِي، فَيُجِيبُ إِذَا دُعِيَ وَيُطِيعُ إِذَا أُمِرَ، وَأَمَّا الْحَاضِرُ، فَهُوَ أَعْظَمُهُمَا بَلِيَّةً، وَأَعْظَمُهُمَا أَجْرًا-

(৯) আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন হিজরত সর্বোত্তম? তিনি বললেন, তোমার ঐ বস্ত্ত ত্যাগ করা, যা আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়। তিনি আরও বললেন, হিজরত দুই প্রকার, (১) নগরবাসীর হিজরত; (২) বেদুঈনের হিজরত। যখন তাকে প্রয়োজনবশত ডাকা হয়, তখন সে চলে আসবে; আর কোন আদেশ দিলে তা পালন করবে, নগরবাসীর উপর বিপদ অনেক এবং সর্বাধিক ছওয়াব তারই’।[2]

10- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ: أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ، أَبْتَغِي الْأَجْرَ مِنَ اللهِ، قَالَ: فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَيٌّ؟ قَالَ: نَعَمْ، بَلْ كِلَاهُمَا قَالَ: فَتَبْتَغِي الْأَجْرَ مِنَ اللهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا-

(১০) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এল। এরপর সে বলল, আমি আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের জন্য বায়‘আত গ্রহণ করব। এতে আমি আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও বিনিময় আশা করি। তিনি বললেন, তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ জীবিত আছে কি? সে বলল, হ্যঁা উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি আল্লাহর কাছে বিনিময় আকাঙ্খা করছ? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের দু’জনের সঙ্গে সদাচরণপূর্ণ জীবন যাপন কর’।[3]

11- عَنْ أَنَّ أَبِي فَاطِمَةَ حَدَّثَهُ، أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، حَدِّثْنِي بِعَمَلٍ أَسْتَقِيمُ عَلَيْهِ وَأَعْمَلُهُ، قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عَلَيْكَ بِالْهِجْرَةِ، فَإِنَّهُ لَا مِثْلَ لَهَا-

(১১) আবু ফাতেমা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল সম্পর্কে বলুন, যা আমি স্থিরভাবে পালন করতে পারি এবং সে অনুযায়ী আমল করতে পারি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি হিজরত করাকে অবধারিত করে নাও। কেননা কোন কাজই এর মত নেই’।[4]

12- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فُقَرَاءُ المُهَاجِرِينَ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَائِهِمْ بِخَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ-

(১২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ ধনীদের পাঁচশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবেন’।[5]

13- وَعَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ- صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْعِبَادَةُ فِي الْهَرْجِ كَهِجْرَةٍ إِلَيَّ

(১৩) মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)) বলেছেন, ফিতনার সময় ইবাদতে ব্যস্ত থাকার প্রতিদান আমার দিকে হিজরত করে আসার সমপরিমাণ’।[6]

14- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صـ - لْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ-

(১৪) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত হ’তে অন্য মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির সে-ই, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজসমূহ পরিত্যাগ করে’।[7]

15- عَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ حَتَّى تَنْقَطِعَ التَّوْبَةُ، وَلَا تَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا-

(১৫) মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, হিজরতের ধারাবাহিকতা বন্ধ হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তাওবার দরজা বন্ধ না হয়। আর তাওবার দরজা বন্ধ হবে না, সূর্য পশ্চিমাকাশে উদয় না হওয়া পর্যন্ত’।[8]

মনীষীদের বক্তব্য :

১. ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘ইসলাম, হিজরত ও হজ্জ প্রতিটিই পূর্ববর্তী সকল পাপ মুছে দেয়’।[9]

২. ইমাম ইয বিন আব্দুস সালাম (রহঃ) বলেন, ‘হিজরত দুই প্রকার : (১) নিজ ভূমি ত্যাগের হিজরত (২) পাপ ও অন্যায় ত্যাগের হিজরত। এর মধ্যে সর্বোত্তম হ’ল পাপ ও অন্যায় থেকে হিজরত। কারণ এতে রয়েছে দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং মানবিক কুপ্রবৃত্তি ও শয়তান নিয়ন্ত্রিত হয়’।[10]

সারবস্ত্ত :

১. হিজরত হ’ল কুফরের দেশ থেকে ইসলামের দেশে যাওয়া এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ সমূহ থেকে বিরত হওয়া। ২. ফিতনা-দুর্যোগের সময় ইবাদত করা হিজরত সমতুল্য। ৩. দ্বীন রক্ষা ও পরকালের সংশোধনের জন্য হিজরত অত্যাবশ্যক। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা রামাযান মাসে আমাদেরকে যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে হিজরততুল্য মর্যাদা লাভের তাওফীক দান করুন।-আমীন!

[1]. বুখারী হা/১; মুসলিম হা/১৯০৭; মিশকাত হা/১।

[2]. নাসাঈ হা/৪১৬৫; আহমাদ হা/৬৪৮৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৬০৪।

[3]. মুসলিম হা/২৫৪৯।

[4]. নাসাঈ হা/৪১৬৭।

[5]. তিরমিযী হা/২৩৫১; ইবনু মাজাহ হা/৪১২৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪২২৮।

[6]. মুসলিম হা/২৯৪৮; মিশকাত হা/৫৩৯১।

[7]. বুখারী হা/১০; মিশকাত হা/৬।

[8]. আবুদাঊদা হা/২৪৭৯; দারেমী হা/২৫১৩; ছহীহুল জামে হা/৭৪১৩।

[9]. শরহ নববী ২/১৩৮ পৃ.।

[10]. শাজারাতুল মা‘আরেফ ওয়াল আহওয়া হা/৩৮৩ পৃ.।



বিষয়সমূহ: আমল পরকাল
আরও