জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবার কতিপয় কারণ
ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
দুনিয়াবী ব্যস্ততার কোলাহল মুক্ত হয়ে মসজিদের কোণে নিবিষ্টচিত্তে আত্মনিবেদনের যে সৌন্দর্য, তা সত্যিই অপার্থিব। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেখানে হিসাব-নিকাশে বাঁধা, যেখানে চিন্তার জালে আবৃত থাকে মন, সেখান থেকে পরকালীন পাথেয় অর্জনে ই‘তিকাফ একটি সুবর্ণ সুযোগ হ’তে পারে। এই ইবাদত যেন এক সেতুবন্ধন। যা বান্দাকে নিয়ে যায় দুনিয়া থেকে আখিরাতের পানে। কোলাহল থেকে নিস্তব্ধতায়। রবের একান্ত সান্নিধ্যে। মানুষের জীবন বহুধাবিচ্ছিন্ন। পরিবার, সমাজ, স্বপ্ন, দায়িত্ব, প্রত্যাশা এতসব টানাপোড়েনে অন্তরের যে নিভৃত কক্ষ, যেখানে শুধু সৃষ্টিকর্তার সঙ্গ প্রয়োজন, সেটি ব্যস্ততার ধুলোয় ঢাকা পড়ে যায়। ই‘তিকাফ সেই ধুলো ঝেড়ে বান্দাকে নিয়ে যায় তার আসল ঠিকানা আল্লাহর সান্নিধ্যে। এটি কেবল কিছুদিনের নির্জনতা নয়, বরং এক গভীর আত্মশুদ্ধি, এক পরম নিবেদন। যেখানে আল্লাহর ভালোবাসায় আত্মহারা হওয়ার সুযোগ মেলে। সুতরাং হে ই‘তিকাফকারী! আপনার ই‘তিকাফকে সাফল্য মন্ডিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে। আলোচ্য প্রবন্ধে একজন ই‘তিকাফকারী যেন তার দিনগুলোর সঠিক ও সদ্ব্যবহার করে আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হ’ল।
শেষ দশকে ই‘তিকাফ : রাসূল (ছাঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে নববীতে রামাযানের শেষ দশকে নিয়মিত ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রীগণও ই‘তিকাফ করেছেন’।[1] অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে মহানবী (ছাঃ) রামাযানের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতেন। যা অন্য সময়ে করতেন না’।[2] এই দিনগুলোতে অনেকটা নিদ্রাবিহীন রাত পার করতেন। রাসূল (ছাঃ) প্রথম ২০ দিন ছালাত আদায় করতেন এবং ঘুমাতেন। কিন্তু শেষ ১০ দিন ঘুমাতেন না। বরং পরিধেয় বস্ত্রকে মযবুত করে বেঁধে ছালাতে মনোনিবেশ করতেন’।[3]
সারকথা হ’ল রামাযানের শেষ ১০ দিন মহানবী (ছাঃ) অন্য সময়ের চেয়ে বেশি আমল করতেন। এই ১০ দিন সব ধরনের ইবাদত তথা ছালাত, কুরআন তেলাওয়াত, যিকর ও ছাদাক্বা ইত্যাদি বেশি বেশি করতেন। এটি খুবই আশ্চর্যজনক যে মুসলমানেরা ই‘তিকাফ করছে না। অথচ নবী করীম (ছাঃ) মদীনাতে আসার পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ই‘তিকাফ বাদ দেননি। নিম্নে ই‘তিকাফকে সফল করার উপায়গুলো আলোকপাত করা হ’ল।-
১. ই‘তিকাফের মাধ্যমে জীবনের ঘটে যাওয়া ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যত পাপ রয়েছে, তা ক্ষমা লাভের বিশুদ্ধ নিয়ত করা। অতঃপর সৎকর্ম সমূহ যতটা সম্ভব সম্পাদন করা।
২. ফজরের পূর্বে ঘুম থেকে ওঠার সময় দো‘আ পড়ে নেওয়া। অতঃপর ওযূ করে সম্ভব হলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার গ্রীবাদেশে তিনটি গিট দেয়। প্রতি গিটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত। তারপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়, পরে ওযূ করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়, তারপর ছালাত আদায় করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, প্রফুল্ল মনে ও নির্মল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে’।[4]
৩. তাকবীরে তাহরীমাসহ ছালাত আদায় করা। ই‘তিকাফকারী মসজিদে অবস্থান করার কারণে তাঁর জন্য তাকবীরে তাহরীমা সহ ফরয ছালাত আদায় করা সহজ। তাই জামা‘আত শুরুর পূর্বেই নিজেকে প্রস্ত্তত করা। যাতে কোন ভাবেই তা ছুটে না যায়।
৪. কাতারের প্রথম সারিতে ছালাত আদায় করা। কেননা প্রথম সারিতে ছালাত আদায় করা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আযান ও প্রথম সারিতে ছালাত পড়ায় এতো বেশি ছওয়াব রয়েছে তা যদি মানুষ জানতে পারত, অতঃপর তা পাওয়ার জন্য লটারি দেওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর না থাকত, তাহ’লে তারা তা পাওয়ার জন্য অবশ্যই লটারি দেওয়ারই আয়োজন করত’।[5]
৫. সুন্নাহ ছালাত সমূহ নিয়মিত আদায় করা। যেমন ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করা। কেননা তা দুনিয়া এবং দুনিয়ার সকল কিছুর চাইতে উত্তম’।[6] দিবারাত্রির ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করা, যার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে। যোহরের পূর্বে চার, পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই ও ফজরের পূর্বে দুই’।[7]
৬. যোহরের পূর্বে ৪ রাকা‘আত এবং পরে ৪ রাকা‘আত ছালাত আদায় করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত যোহরের পূর্বে ৪ ও পরে ৪ রাক‘আত ছালাত পড়ে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামকে হারাম করে দেন’। [8]
৭. ছালাতুয যোহা পড়া। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হ’ল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে ছাদাক্বা করা। ছাহাবীগণ বললেন, কার শক্তি আছে এই কাজ করার, হে আল্লাহর নবী? তিনি বললেন, চাশতের দু’রাক‘আত ছালাতই এজন্য যথেষ্ট’।[9] এর সময় সম্পর্কে শাইখ মুহাম্মাদ বিন ওছায়মীন (রহঃ) বলেছেন, ‘এটি সূর্য উঠার পর আঠারো বা ত্রিশ মিনিটের মধ্যে শুরু হয় এবং যোহরের আগের শেষ দশ মিনিট থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত শেষ হয়’।[10] অপর এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে পড়ে, অতঃপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে বসে থাকে, অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ ও ওমরাহর নেকী লেখা হয়। রাবী বলেন, রাসূল (ছাঃ) تَامَّةٍ ‘পূর্ণ’ কথাটি তিনবার বলেছেন’।[11]
৮. আছরের পূর্বে ৪ রাক‘আত ছালাত আদায় করা। যেমন ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ রহম করুন যে ব্যক্তি আছরের পূর্বে ৪ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করে’। [12]
৯. শেষ দশক হ’ল অত্যন্ত মহা মূল্যবান সময়। যার প্রতিটি মূহুর্তকে আমাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষকরে ফযীলতপূর্ণ সকাল-সন্ধ্যা, ছালাতের মধ্যবর্তী ও পরবর্তী দো‘আ সমূহ পাঠ করা। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হ’ল :- (ক) ‘বিস্মিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াযুর্রু মা‘আ ইসমিহী শাইয়ুন ফিল্ আর্যি ওয়া লা ফিসসামা-ই ওয়া হুয়াস সামী‘উল ‘আলীম’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, দো‘আটি সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত এবং সকালে পড়লে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকস্মিক কোন বিপদ তার উপরে আপতিত হবে না’।[13]
(খ) লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর। যে ব্যক্তি এই দো‘আটি সকালে ১০০ বার পাঠ করবে তার জন্য ১০টি ন্যায়পারায়ণ গোলাম আযাদ করার নেকী হবে। ১০০টি নেকী ও ১০০টি গুনাহ মাফ করা হবে। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হ’তে নিরাপত্তা লাভ করবে’।[14]
(গ) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহিয় ওয়া ইয়মীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিব নামাযের পর এই দো‘আটি দশবার পড়বে, তাহ’লে আল্লাহ তার জন্য একদল সশস্ত্র ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তাকে সকাল পর্যন্ত শয়তান থেকে রক্ষা করবেন। তার জন্য আল্লাহ (জান্নাত) আবশ্যককারী দশটি নেকী লিখে দিবেন। ধ্বংসকারী দশটি গুনাহ তার থেকে মাফ করে দিবেন। আর তাকে দশজন ঈমানদার কৃতদাস মুক্ত করার ছওয়াব দেয়া হবে’।[15]
(ঘ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে সেটা তার জন্য ১০০টি কুরবানীর পশুর চাইতেও উত্তম হবে’। যে ব্যক্তি সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে সেটা তার জন্য আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহৃত ১০০টি ঘোড়ার চাইতেও উত্তম হবে’। যে ব্যক্তি সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে সেটা তার জন্য ১০০টি গোলাম আযাদের চাইতেও উত্তম হবে।[16]
(ঙ) নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার দো‘আটি দিনে পাঠ করে সন্ধ্যার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর রাতে পাঠ করে সকাল হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।[17] এছাড়াও ফযীলতপূর্ণ দো‘আগুলি বেশি বেশি পড়া, যাতে মীযানের পাল্লায় ছওয়াবের পাল্লা ভারী হয়।
১০. যে ব্যক্তি জামা‘আতে ইমামের পিছনে তারাবীহ পড়বে এবং ইমাম শেষ করলে সেও শেষ করবে তার নেকীর খাতায় পূর্ণ রাত ছালাত আদায় করার ছওয়াব লিপিবদ্ধ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ছালাত আদায় করে এবং তার ছালাত শেষ করা পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকে (ইক্তেদা করে) সেই ব্যক্তির জন্য সারা রাত্রি ক্বিয়াম করার ছওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়’।[18] তাই ইমামের সাথে বিতর পর্যন্ত জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে সারারাত্রি ছালাত আদায়ের ছওয়াব পাওয়া যাবে।
১১. এছাড়া কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি মনযোগী হওয়া এবং রামাযান মাসে কুরআনকে একাধিকবার খতম করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত ‘জিব্রাইল (আঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রতিবছর একবার কুরআন পাঠ করতেন। আর যে বছর তিনি মারা যান সে বছর দুইবার পাঠ করেন’।[19] রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণে সালাফে ছালেহীনদের আদর্শ ছিল রামাযান মাসে কুরআন খতম করা। সুতরাং চেষ্টা করলে তারাবীহর শেষ দশকেও কয়েকবার কুরআন খতম করা সম্ভব হবে ইনশআল্লাহ।
১২. সক্ষমতা থাকলে ছিয়াম পালনকারীদের ইফতার করাতে সাহায্য করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ছিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাল, তারও ছিয়াম পালনকারীর ন্যায় ছওয়াব হবে; তবে ছিয়াম পালনকারীর ছওয়াব বা নেকি বিন্দুমাত্র কমানো হবে না’।[20] শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘ছিয়াম পালনকারীকে ইফতার করানো দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে পেট ভরে তৃপ্ত করানো’।[21]
১৩. ই‘তিকাফ অবস্থায় অধিক পরিমাণে তাসবীহ-তাহলীল ও দো‘আ-যিকর করা। বিশেষত নিজের গুনাহ-খাতা ক্ষমা ও মৃত পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য দো‘আ করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে নেক বান্দার মর্যাদা উন্নত করেন। তখন সে বলে, হে রব! আমার এটা (মর্যাদা) কিভাবে হ’ল? আল্লাহ বলেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে’।[22]
১৪. ই‘তিকাফরত অবস্থায় মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা কমিয়ে দেওয়া এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নত করা। কারণ এই ১০টি দিনের প্রতিটি সেকেন্ড আপনার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। যা হারিয়ে গেলে আর পাওয়া সম্ভব নয়। তাই দুনিয়াবী যাবতীয় কার্য-কলাপ বন্ধ রেখে শুধুমাত্র রবের সান্নিধ্য লাভে ব্রত হওয়া।
১৫. অন্তরের যত্ন নেওয়া, আত্মসমীক্ষা করা এবং নিজেকে সঠিকভাবে পরিচালনায় সচেষ্ট রাখা। কেননা অন্তরাত্মাকে সঠিক রাখতে পারলে, সবকিছুই ঠিক থাকে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَإِنَّ فِى الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ. أَلاَ وَهِىَ الْقَلْبُ ‘জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি মাংসের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে মাংসের টুকরোটি হল কলব’।[23]
১৬. আযানের জওয়াব দেওয়া এবং আযান পরবর্তী দো‘আ পাঠ করা। ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে এবং ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘ফালা-হ’ শেষে ‘লা-হাওলা অলা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ (নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত) বলে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।[24]
১৭. ছালাতের পরে পঠিতব্য দো‘আ সমূহ পাঠ করা। যেমন সুবহা-নাল্লা-হ (৩৩ বার)। আলহাম্দুলিল্লা-হ (৩৩ বার)। আল্লাহু-আকবার (৩৩ বার)। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ; লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর (১ বার)। অথবা আল্লা-হু আকবার (৩৪ বার)। ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর উক্ত দো‘আ পাঠ করবে, তার সকল গোনাহ মাফ করা হবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়’।[25] এছাড়াও অন্যান্য দো‘আগুলি বেশি বেশি পাঠ করতে হবে।
১৮. আল্লাহর কাছে দো‘আ করার প্রতি যত্নশীল হৌন। বিশেষ করে ইফতারের সময়, দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে, রাতের ছালাতে এবং সিজদায়। কেননা এ সময়গুলো দো‘আ কবুল হয়ে থাকে।
১৯. ই‘তিকাফরত অবস্থায় অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা। সাথে সাথে কিছু সূরা ও আয়াতের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলদ্ধি করা। যার মাধ্যমে মুমিন হৃদয়ে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তা করা। কেননা আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন,إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ- الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকেদের জন্য নিদর্শন রয়েছে’। ‘যারা দঁাড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে,) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এ নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর’ (আলে ইমরান ৩/১৯০-১৯১)।
২০. রাসূল (ছাঃ) ঘুমানোর আগে যেসব আমল করতেন তা অনুসরণ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পাঠ করে রাতে ঘুমাবে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষী থাকবে, যে সকাল হওয়া পর্যন্ত শয়তানকে তার নিকট ভিড়তে দিবে না’।[26] যে ব্যক্তি ওযূ অবস্থায় ঘুমায়, তার পাশে একজন ফেরেশতা অবস্থান করে। যখন সে জাগ্রত হয়, তখন ফেরেশতা বলে, হে আল্লাহ! তুমি তোমার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ সে পবিত্র অবস্থায় ঘুমিয়েছিল’।[27]
আসাদুল্লাহ আল-গালিব
[কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ]
[1]. বুখারী হা/২০২৬; মুসলিম হা/১১৭২; মিশকাত হা/২০৯৭।
[2]. মুসলিম হা/২৬৭৮।
[3]. বুখারী হা/২০২৪; মুসলিম হা/১১৭৪; মিশকাত হা/২০৯০।
[4]. বুখারী হা/১১৪২; মুসলিম হা/৭৭৬; মিশকাত হা/১২১৯।
[5]. বুখারী হা/৬১৫; মুসলিম হা/৪৩৭।
[6]. মুসলিম হা/৭২৫; মিশকাত হা/১১৬৪।
[7]. তিরমিযী হা/৪১৫; মুসলিম হা/৭২৮; মিশকাত হা/১১৫৯।
[8]. তিরমিযী হা/৪২৮ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১১৬৭।
[9]. আবুদাঊদ হা/৫২৪২; মুসলিম হা/৭২০; মিশকাত হা/১৩১৫, ১৩১১।
[10]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৪/৩০৬ পৃ.।
[11]. তিরমিযী হা/৫৮৬; মিশকাত হা/৯৭১।
[12]. তিরমিযী হা/৪৩০ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১১৭০।
[13]. তিরমিযী হা/৩৩৮৮, ইবনু মাজাহ হা/৩৮৬৯, আবুদাঊদ হা/৫০৮৮, মিশকাত হা/২৩৯১।
[14]. বুখারী হা/৩২৯৩।
[15]. তিরমিযী হা/৩৫৩৪; ছহীহুত তারগীব হা/৪৭৩।
[16]. নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০৫৮৮; ছহীহুত তারগীব হা/৬৫৮।
[17]. বুখারী হা/৬৩০৬; আবূদাঊদ হা/৫০৭০; তিরমিযী হা/৩৩৯৩; নাসাঈ হা/৫৫২২; মিশকাত হা/২৩৩৫।
[18]. তিরমিযী হা/৮০৬; আবুদাঊদ হা/১৩৭৫; মিশকাত হা/১২৯৮।
[19]. বুখারী হা/৪৬১৪
[20]. তিরমিযি হা/৮০৭, ইবনে মাজাহ ১৭৪৬।
[21]. আল ইখতিয়ারাত, ১৯ পৃ. ।
[22]. আহমাদ হা/১০৬১৮।
[23]. বুখারী হা/৫২; মুসিলম হা/১৫৯৯; মিশকাত হা/২৭৬২।
[24]. মুসলিম হা/৩৮৫; মিশকাত হা/৬৫৮।
[25]. মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৭।
[26]. বুখারী হা/২৩১১; মিশকাত হা/২১২৩।
[27]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/১০৫১; ছহীহাহ হা/২৫৩৯।