হারামে জর্জরিত জীবন
সারোয়ার মেছবাহ
প্রকৃত তওবার শর্তাবলী :
মানুষের প্রতিটি মঙ্গলময় কাজই শর্ত-মাশরুতের মধ্যে দিয়ে সম্পাদিত হয়। আর তওবা এমনই একটা বিষয়। ফলে যার তওবা কবুল করা হবে, সে সমাজে উচু মর্যাদায় স্থান করে নিবে। তওবা সত্য হওয়া, সঠিক হওয়া এবং কবুল হওয়ার কিছু শর্তাবলী রয়েছে যা নিম্নরূপ :
(১) আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিতপ্রাণ হওয়া :
তওবাকারী ব্যক্তি পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী ভাল হয়ে যায় এবং প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর শান-মানের ব্যাপারে অনেক বেশী সচেতন হয় ও একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি কামনা করে; আর অধিক পুণ্য অর্জনে ব্রতী হয় ও আল্লাহর শাস্তিকে সর্বদা ভয় পায়। কোন কাজে আল্লাহর সৃষ্টিজীবের প্রতি নতজানু হয়না। দুনিয়ার ক্ষণস্থানী সমস্ত বস্ত্তকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। মহান আল্লাহ বলেন, إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُولَئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا- ‘তবে তারা ব্যতীত, যারা তওবা করে ও সংশোধিত হয় এবং আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে ও আল্লাহর জন্য তাদের আনুগত্যকে বিশুদ্ধ করে, তারাই মুমিনদের সাথী। আর সত্বর আল্লাহ মুমিনদের মহা পুরস্কার দান করবেন’ (নিসা ৪/১৪৬)।
(২) পাপ-পঙ্কিলতা বিমুক্ত আমল :
তওবা কবূলের অন্যতম শর্ত হ’ল পাপ-পঙ্কিলতা বিমুক্ত আমল শুরু করা। প্রকৃত তওবারকারীকে চেনা যায় তার আমলের ধরন দেখে। কেননা সে ভুলবশতঃ হলেও পুরাতন পাপের পুনরাবৃত্তি করেনা। তার মাকবূলকৃত তওবা তাকে অন্য আরেকটি তওবার মুখাপেক্ষী করেনা। আর তার পরিচ্ছন্ন জীবন নতুনের পথে পা বাড়ায়, সুখময় জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করে।
(৩) ক্ষণে ক্ষণে ভুলের স্বীকারোক্তি :
প্রকৃত তওবাকারী সারাক্ষণ নিজের পাপ বা ভুলের ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকে। নিজেকে ভাল মানুষ, নির্দোষ ভেবে মুখে অহংকারের বুদবুদ উঠায় না। অন্যের ভুল ধরতে নিজের মুখকে গীবতের বাষ্পে পরিণত করেনা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
وَاللَّهِ إِنِّى لأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً.
‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি’।[1]
(৪) কৃত পাপে অনুতপ্ত হওয়া :
পূর্বে কৃত পাপে অনুতপ্ত হওয়া। কেননা পাপে মুমিন হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত ও অনুশোচিত হয়। আর পূর্বে কৃত পাপের রেকর্ড তাকে আরো ভাবায়। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, النَّدَمُ تَوْبَةٌ অনুশোচনা হ’ল তওবা’।[2]
(৫) পাপ না করার দৃঢ় সংকল্প করা :
ভবিষ্যতে পাপ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা হ’ল একজন সফল তওবাকারীর চরিত্র। অতএব সফল তওবার বড় শর্ত হ’ল, তা দ্বিতীয়বার কখনো লংঘনীয় নয়।
(৬) মাযলূম জনতার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া :
হক দুই প্রকার। একটি আল্লাহর হক অন্যটি বান্দার হক। আল্লাহ বান্দাকে মাফ করেন। প্রকৃত তওবারকারীর অন্যতম কাজ হ’ল বান্দা সংশ্লিষ্ট কোন হক বা অধিকারের ক্ষেত্রে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোন হকের ক্ষেত্রে পাপ বা অন্যায় সহজে মাফ করিয়ে নিতে পারলেও জনগণের সাথে সম্পৃক্ত অন্যায় অত সহজ নয়, যা ব্যক্তির জীবনে কাটার মত বিঁধে। কিন্তু মানুষের হক মানুষের কাছ থেকে মাফ করার পর আল্লাহ মাফ করেন। কেননা জন অধিকার অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। অতএব প্রকৃত তওবাকারী সাবধান১ রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَحَدٍ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَىْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ، قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ ، إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ، وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ. ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হ’তে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দীনার বা দিরহাম থাকবেনা। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তার নিকট থেকে নেয়া হবে। আর কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হ’তে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে’।[3]
(৭) তওবা কবূল না হওয়া :
সফল তওবাকারীকে মৃত্যু আসার পূর্বেই তওবা করতে হবে। নচেৎ তার তওবা কবুল হবেনা। অতত্রব তওবা করার সময়ও একটা মুখ্য বিষয়। তাই জীবনের সাঁঝ বেলায় নয় বরং তা হ’তে হবে যথাশিঘ্র মৃত্যুর পূর্বেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ. ‘রূহ কন্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত মহামহিম আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন’।[4] রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন,
إِنَّ اللهَ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ وَبِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا- ‘রাতে আল্লাহ তা‘আলা তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তওবা করে এমনিভাবে দিনে তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তওবা করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত’।[5]
তওবা কবুলের নিদর্শনাবলী :
(১) তওবাকারীর সৎকর্মের প্রতিফলন :
সফল তওবাকারীর তওবার মধ্যে ঈমানের ছটা পরিলক্ষিত হয়। সে নিজেকে এলাহী আধ্যাত্মিকতায় সঁপে দেয়। সৎ বা ভাল আমল সর্বদা তার হৃদয়কে পুলকিত করে।
(২) পাপ সঙ্গ ত্যাগ :
জ্ঞানী আল্লাহর বিধি-বিধানের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখে। জান কবযের ভয়ে সে সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকে। যখন মুমিন হৃদয় আল্লাহর অভয় বাণী শোনে তখন তার সমস্ত দুশ্চিন্তা দুরীভূত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ- ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। অতঃপর তার উপর অবিচল থাকে, তাদের উপর ফেরেশতামন্ডলী নাযিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না ও চিন্তান্বিত হয়ো না। আর তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হয়েছিল’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩০)।
(৩) নিজের পাপকে ভয়ানক বিপদ ভাবা :
রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ- ‘ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নীচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ট ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়’।[6]
জনৈক সালাফ বলেছেন, ‘পাপকে ছোট মনে করো না বরং কি পাপ করেছ সেদিকে দেখ’।
(৪) তওবায় ব্যক্তির নমনীয়তা বৃদ্ধি পায় ও দম্ভ চূর্ণ হয় :
তওবার ফলে আল্লাহর এত খুশী হন যে বান্দার অন্য কোন কাজে তিনি তত খুশী হননা। আর অহংকার বিচূর্ণ হয়ে বান্দা কোমল হৃদয়ের হয়ে যায় যা তাকে আল্লাহর কাছে আরো প্রিয়তর করে তোলে।
(৫) সকল অঙ্গের হেফাযত :
তওবাকারী বান্দা তার জিহবাকে মিথ্যা কথা, গীবত, চোগলখোরী, বাচালতা থেকে বাঁচিয়ে কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর যিকিরে মগ্ন রাখে। তার পেট কখনো হারাম খাদ্য ভক্ষণ করেনা। তার চোখ খেয়ানত করেনা ও হারাম জিনিসের প্রতি ভ্রক্ষেপ করেনা। কান অন্যায় গান-বাজনা, মিথ্যা, গীবতের কথা শোনেনা। হাত হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকে। পা কখনো পাপের পথ মাড়ায় না। অন্তর হিংসা, বিদ্বেষ, রিয়া, শ্রুতি ও জবরদস্তিকে না করে; আল্লাহর আনুগত্যে ও তাঁর সন্তোষ কামনায় সদা ব্যস্ত থাকে। মোদ্দাকথা হলো সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর দেয়া সুস্থির সত্যের পথে পরিচালিত হয়। ফলে হাত, পা, কান, চোখ, নাক সহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর অবিচ্ছেদ্য সাক্ষীর ব্যাপারে কিয়ামতের মাঠে তওবাকারী বান্দার অনুকূলে হয়ে যাবে, যা বান্দাকে জান্নাতের উচ্চ মাকামে স্থান করে দেবে।
সুতরাং হে দ্বীনী ভাই! তওবা করতে পিছপা হওয়া নয়। কেননা মানুষ জানে না কখন তার মৃত্যু এসে যাবে। তার আয়ুষ্কাল-ই বা কত বাকী রয়েছে। নানা ভাবনা তওবাকে পিছিয়ে দেয়। মন বলে অনেক বয়স বাকী, জীবনকে উপভোগ কর। এখনও তওবার সময় হয়নি। বুড়া হ’লে তওবা হবে। এগুলো শয়তানী ভাবনা ছাড়া আর কিছু নয়। মনে রাখুন দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। শয়তান মানুষকে স্থায়ীত্বের ভাবনা ভাবায়। কিন্তু আসলে কি তাই? তওবা জলদি করুন, জলদি করুন। বিলম্ব, গাফলতি, আশা-আকাঙ্খার ফিরিস্তি থেকে সাবধান। আশা-আকাঙ্খা বেশী হয়ে গেলে সবশেষ।
হে দ্বীনী ভাই! কিছু মানুষ আছে যারা পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবে থাকে। তাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখালে বা কোন বিষয়ে নছীহত করলে তারা বলে অনেক মানুষ রাত-দিন পাপ করে দুনিয়া ভরে দিল তাতে কিছু যায় আসেনা। আর আমি তো সামান্যই করেছি। এরপরেও তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছে তাদের তো কিছুই হয় না। তারা বিশ্বাস করে ‘খাও দাও ফূর্তি কর, দুনিয়াটা মস্ত বড়। তারা এ কথা বেমালুম ভুলে যায় যে, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ায় সাময়িক খেল-তামাশার সুযোগ দিয়েছেন মাত্র। আল্লাহ যখন তাদের ধরবেন তখন তাদের পালাবার কোন পথ থাকবেনা। এ মর্মে আল্লাহ বর্ণনা করেন, وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لاَ يَعْلَمُونَ- وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ ‘যারা আমাদের আয়াত সমূহে মিথ্যারোপ করে আমরা তাদেরকে ক্রমান্বয়ে পাকড়াও করব এমনভাবে যে তারা বুঝতেও পারবে না’। ‘আর আমি তাদেরকে অবকাশ দেই। নিশ্চয়ই আমার কৌশল অতি সুনিপুণ’ (আ‘রাফ ৭/১৮২-৮৩; ক্বলম ৬৭/৪৪-৪৫)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ- ‘অতঃপর তারা যখন ঐসব উপদেশ ভুলে গেল যা তাদের দেওয়া হয়েছিল, তখন আমরা তাদের জন্য প্রত্যেক বস্ত্তর (সচ্ছলতার) দুয়ার সমূহ খুলে দিলাম। এভাবে তারা যখন নে‘মত সমূহ পেয়ে খুশীতে মত্ত হয়ে গেল, তখন তাদেরকে আমরা হঠাৎ পাকড়াও করলাম। ফলে তারা হতাশ হয়ে পড়ল’ (আন‘আম ৬/৪৪)।
হাদীছে এসেছে,
إِذَا رَأَيْتَ اللَّهَ يُعْطِى الْعَبْدَ مِنَ الدُّنْيَا عَلَى مَعَاصِيهِ مَا يُحِبُّ فَإِنَّمَا هُوَ اسْتِدْرَاجٌ. ثُمَّ تَلاَ رَسُولُ اللَّهِ-صلى الله عليه وسلم- (فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَىْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ- ‘ওক্ববা বিন ‘আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তুমি দেখবে যে, আল্লাহ তার বান্দাকে তার চাহিদা মত দিচ্ছেন, অথচ সে তার পাপসমূহের উপর দৃঢ় আছে, মনে রেখ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য অবকাশ মাত্র। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) অত্র আয়াতটি তেলাওয়াত করেন’।[7]
উপসংহার :
আল্লাহ তওবাকারীকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দার তওবায় সে লোকের চেয়ে বেশী খুশী হন, যে লোক কোন ধ্বংসকারী মরুভূমিতে পৌঁছেছে, আর তার সাথে তার বাহন রয়েছে যার উপরে কিছু খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। সেখানে সে যমীনে কিছুক্ষণ মাথা রাখল এবং ঘুমালো এবং জেগে দেখল তার বাহন পালিয়ে গেছে। সে তা খুঁজতে শুরু করল। অবশেষে গরম, তৃষ্ণা আর দুঃখ-বেদনা তাকে দুর্বল করে ফেলল। তখন সে সিন্ধান্ত নিল, আমি যেখানে ছিলাম সেখানে গিয়ে আমৃত্যু শুয়ে থাকব সুতরাং সে সেখানে গিয়ে নিজের বাহুর উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল, যেন সে মৃত্যুবরণ করেছে। হঠাৎ এক সময় জেগে দেখল যে তার বাহন তার কাছে। আর বাহনের উপর তার খাদ্য-সামগ্রীও আছে। তখন সে তার বাহন ও খাদ্য-সামগ্রী ফিরে পাওয়ার আকস্মিকতায় যেরূপ আনন্দিত হয় আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দার তওবায় তার চেয়ে বেশী খুশী হন’।[8]
হে দ্বীনী ভাই! তওবার দিকে ধাবিত হৌন! খেল-তামাশা থেকে পলায়ন করুন। পাপ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করুন। গুনাহগুলিকে মুছে ফেলুন। প্রবৃত্তির খোলস থেকে বেরিয়ে আসুন। সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই একনিষ্ঠ তওবাকারী হয়ে যান। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে আবারও ভাবুন। যাবতীয় জাহেলী জঞ্জাল থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। দুনিয়া নামক জিঞ্জির নয় আখেরাতী বালাখানাই মুমিনের কাম্য। হে আল্লাহ! সকল অনুতপ্ত প্রাণকে তুমি তোমার একনিষ্ঠ তওবাকারী বান্দা হিসাবে কবুল করে নাও-আমীন!
[লেখক : কাদাকাটি, আশাশুনি, সাতক্ষীরা]
[1]. বুখারী হা/৬৩০৭; মিশকাত হা/২৩২৩।
[2]. হাকেম হা/৭৬১২; ইবনু মাজাহ হা/৪২৫২।
[3]. বুখারী হা/২৪৪৯; মিশকাত হা/৫১২৬।
[4]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৩; তিরমিযী হা/৩৫৩৭; মিশকাত হা/২৩৪৩।
[5]. মুসলিম হা/৬৮৮২; মিশকাত হা/২৩২৯।
[6]. বুখারী হা/৬৩০৮; মিশকাত হা/২৩৫৮।
[7]. আহমাদ হা/১৭৩৪৯; মিশকাত হা/৫২০১; ছহীহাহ হা/৪১৩।
[8]. বুখারী হা/৬৩০৮; মুসলিম হা/২৭৪৪ ।