কাদিয়ানীদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস (৪র্থ কিস্তি)
মুখতারুল ইসলাম
মুহাম্মাদ ফাহিদুল ইসলাম 11517 বার পঠিত
ভূমিকা :
‘মসজিদ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সিজদা করার স্থান বা জায়গা’।[1] পৃথিবীর যে কোন স্থানে মানুষ সিজদা করে সেটাই তার জন্য ‘মসজিদ’। যেমন রাসূল (ছাঃ)-কে হাদীছে বর্ণিত কয়েকটি জিনিস গণীমত হিসেবে দেয়া হয়েছে, যা অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) স্বয়ং বলেছেন, وَجُعِلَتْ لِىَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا، فَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِى أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ فَلْيُصَلِّ ‘সমস্ত যমীনকেই আমার জন্য পবিত্র ও ছালাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কোন লোক ওয়াক্ত হলেই ছালাত আদায় করতে পারবে’।[2]
তবুও আমরা পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করার লক্ষ্যে নির্মিত ঘরকেই ‘মসজিদ’ হিসাবে গণ্য করে থাকি। আর সম্মানিত স্থান হিসাবে এমন কিছু কাজ রয়েছে যা মসজিদে করা নিষিদ্ধ। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।
১. মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দো’আ না পাঠ করা :
মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দো’আ পড়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِى أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ. وَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন এই দো‘আ পড়ে আল্লা-হুম্মাফতাহলী আবওয়া-বা রাহমাতিকা। অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি আমার উপর তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও। আর যখন বের হয় তখন বলবে, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিকা। অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি’।[3]
২. তাহিইয়াতুল মসজিদ ছালাত আদায় না করা :
মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাক’আত ছালাত আদায় করা সুন্নাত, যাকে তাহিইয়াতুল মসজিদ বলে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّىَ رَكْعَتَيْنِ ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’ রাকআত ছালাত আদায় করার পূর্বে বসবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে সে যেন বসার পূর্বে দু’ রাক‘আত ছালাত আদায় করে নেয়’।[4]
৩. আযানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়া :
বিনা ওযরে আযানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়া ঠিক নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا أَذَّنَ الْمُؤَذِّنُ فَلاَ يَخْرُجْ أَحَدٌ حَتَّى يُصَلِّيَ
‘যখন মুওয়াযযিন আযান দেয়, তখন কেউ যেন ছালাত আদায় না করে মসজিদ থেকে বের না হয়’।[5]
৪. মসজিদকে রাস্তা হিসাবে গ্রহণ না করা :
তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার ও ইবাদত ব্যতীত কেবল চলাচলের জন্য মসজিদকে রাস্তা হিসাবে গ্রহণ করতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,لاَ تَتَّخَذُوْا الْمَسَاجِدَ طُرُقًا إِلاَّ لِذِكْرٍ أَوْ صَلاَةٍ ‘তোমরা মসজিদকে রাস্তা হিসাবে গ্রহণ কর না। সেটা কেবল যিকর ও ছালাতের জন্য’।[6]
৫. মসজিদে কণ্ঠস্বর উচ্চ না করা বা শোরগোল না করা :
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক পসন্দনীয় জায়গা হ’ল মসজিদ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হ’ল বাযার। সুতরাং এখানে কোন বিষয়ে হৈ চৈ করা যাবে না। এটি হচ্ছে ইবাদতের জায়গা, এখানে ইবাদত ছাড়া অন্য কিছু করা উচিৎ নয়। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
قَالَ اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى الْمَسْجِدِ فَسَمِعَهُمْ يَجْهَرُونَ بِالْقِرَاءَةِ فَكَشَفَ السِّتْرَ وَقَالَ أَلاَ إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ فَلاَ يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا وَلاَ يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِى الْقِرَاءَةِ أَوْ قَالَ فِى الصَّلاَةِ-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে ই‘তিকাফকালে ছাহাবীদেরকে উচ্চৈঃস্বরে ক্বিরাআত পড়তে শুনে পর্দা সরিয়ে বললেন, জেনে রেখ! তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় রবের সাথে গোপনে মুনাজাতে রত আছ। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে ক্বিরাআতে অথবা ছালাতে আওয়ায উঁচু করো না’।[7] ইবনু ওমর ও আব্দুল্লাহ ইবনু আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
خَرَجَ عَلَى النَّاسِ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَقَدْ عَلَتْ أَصْوَاتُهُمْ بِالْقِرَاءَةِ فَقَالَ إِنَّ الْمُصَلِّيَ يُنَاجِي رَبَّهُ فَلْيَنْظُرْ بِمَا يُنَاجِيهِ بِهِ وَلَا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقُرْآنِ-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদল লোকের নিকট আগমন করলেন, সে সময় তারা ছালাত আদায় করছিল এবং উচ্চকন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করছিল। তা দেখে তিনি বললেন, ছালাত আদায়কারী ছালাতরত অবস্থায় তার প্রতিপালকের সাথে মুনাজাত করে। তাই তার উচিত সে কিরূপে মুনাজাত করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে’।[8]
অনুরূপভাবে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, গল্প-গুজব, হৈ চৈ থেকে বিরত থাকা যরূরী। সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমার দিকে একটা কাঁকর নিক্ষেপ করল। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)। তিনি বললেন, যাও, এ দু’জনকে আমার নিকট নিয়ে এসো। আমি তাদেরকে নিয়ে তাঁর নিকটে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা কারা? অথবা তিনি বললেন, তোমরা কোথাকার লোক? তারা বলল, আমরা তায়েফের অধিবাসী। তিনি বললেন, لَوْ كُنْتُمَا مِنْ أَهْلِ الْبَلَدِ لأَوْجَعْتُكُمَا، تَرْفَعَانِ أَصْوَاتَكُمَا فِى مَسْجِدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم- ‘তোমরা যদি এই মদীনার বাসিন্দা হ’তে তবে মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলার কারণে আমি দু’জনকেই কঠোর শাস্তি দিতাম’।[9] এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى مَسْعُودٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِى الصَّلاَةِ وَيَقُولُ اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ لِيَلِنِى مِنْكُمْ أُولُو الأَحْلاَمِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ قَالَ أَبُو مَسْعُودٍ فَأَنْتُمُ الْيَوْمَ أَشَدُّ اخْتِلاَفًا-
আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতে আমাদের বাহুমূল সমূহকে পরস্পরে মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, সোজা হয়ে দাঁড়াও এবং বিভিন্নরূপে দাঁড়িও না, তাতে তোমাদের অন্তরসমূহ বিভিন্ন হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুদ্ধিমান, তারাই যেন আমার নিকটে (প্রথম সারিতে) থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের নিকটবর্তী তারা। তৎপর যারা উভয় ব্যাপারে এদের নিকটবর্তী তারা। অতঃপর আবু মাসঊদ বলেন, দুঃখের বিষয়, তোমরা আজ অত্যন্ত বিক্ষিপ্ত’।[10] মুসলিমের অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيَلِنِى مِنْكُمْ أُولُو الأَحْلاَمِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثَلاَثًا وَإِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأَسْوَاقِ-
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত বলেন, রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুদ্ধিমান তারাই যেন আমার নিকটে দাঁড়ায়, অতঃপর যারা এদের নিকটবর্তী। এরূপ তিনি তিনবার বললেন। তৎপর বললেন, সাবধান! মসজিদে বাযারের ন্যায় হৈ চৈ করা হতে বেঁচে থাকবে’।[11]
কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে অনেক মসজিদে দেখা যায় এমন সব লোকেরা ইমামের কাছাকাছি স্থানে অবস্থান করেন যারা ইমামের কোন সমস্যা হলে সে সমস্যা মোকাবিলা করার জ্ঞান রাখেনা। মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, গল্প-গুজব, হৈ চৈ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। এমনকি উচ্চৈস্বরে কুরআন পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে হবে’।[12]
৬. জুনুবী, হায়েয ও নেফাসওয়ালীদের মসজিদে অবস্থান না করা :
গোসল ফরয হওয়ার পর জুনুবী অবস্থায় এবং হায়েয-নেফাস অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা সমীচীন নয়। এমর্মে হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاوِلِينِي الْخُمْرَةَ مِنَ الْمَسْجِدِ فَقُلْتُ إِنِّي حَائِضٌ فَقَالَ إِنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَتْ فِي يَدِكِ ‘একদা নবী করীম (ছাঃ) আমাকে বললেন, মসজিদ থেকে আমাকে মাদুরটি এনে দাও। আমি বললাম, আমি হায়েযা বা ঋতুবতী। তিনি বললেন, তোমার হায়েয তোমার হাতে নেই’।[13]
৭. ময়লা-আবর্জনা দ্বারা মসজিদকে অপরিচ্ছন্ন করা থেকে বিরত থাকা :
ময়লা-আবর্জনা ফেলে মসজিদ নোংরা বা অপরিচ্ছন্ন করা নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَالْقَذَرِ، إِنَّمَا لِذِكْرِ اللَّهِ، وَالصَّلَاةِ، وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ- ‘এই মসজিদসমূহে পেশাব ও ময়লা দ্বারা অপবিত্রকরণের কোন কাজ করা জায়েয নয়। বরং এটা শুধু আল্লাহর যিকির, ছালাত ও কুরআন পাঠের জন্য’।[14]
৮. মহিলাদের মসজিদে সুগন্ধি মেখে ও বেপর্দা অবস্থায় না আসা :
মহিলারা মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায় করতে পারে। তবে তাদের জন্য কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। যেমন (ক) সুগন্ধি না মাখা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا شَهِدَتْ إِحْدَاكُنَّ الْمَسْجِدَ فَلَا تَمَسَّ طِيبًا ‘তোমাদের মধ্যে কোন নারী মসজিদে গেলে সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে’।[15] (খ) বেপর্দা হয়ে না আসা এবং সৌন্দর্য প্রকাশ না করা (নূর ২৪/৩০; আহযাব ৩৩/৩৩)।
৯. মসজিদে থুথু ফেলা :
যেখানে সেখানে থুথু ফেলা উচিৎ নয়। সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা যেখানে সেখানে ক্বফ ও থুথু ফেলে থাকে, এমনকি দুনিয়ার উত্তম স্থান মসজিদেও অনেকে থুথু ফেলে, যা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْبُزَاقُ فِى الْمَسْجِدِ خَطِيئَةٌ، وَكَفَّارَتُهَا دَفْنُهَا ‘মসজিদে থুথু ফেলা পাপ, তার প্রতিকার হ’ল তা মিটিয়ে ফেলা’।[16] অন্য বর্ণনায় এসেছে,أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى فِى جِدَارِ الْقِبْلَةِ مُخَاطًا أَوْ بُصَاقًا أَوْ نُخَامَةً فَحَكَّهُ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদের কিবলার দিকের দেওয়ালে শিকনী বা থুথু অথবা কফ লেগে থাকতে দেখে তা খুচিয়ে উঠালেন।[17] আয়েশা (রাঃ) হ’তে অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِى الدُّورِ وَأَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহল্লায় বা জনবসতিপূর্ণ স্থানে মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন’।[18]
এ সম্পর্কে অপর একটি হাদীছ- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نُخَامَةً فِى قِبْلَةِ الْمَسْجِدِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ فَقَامَتِ امْرَأَةٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَحَكَّتْهَا وَجَعَلَتْ مَكَانَهَا خَلُوقًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا أَحْسَنَ هَذَا- ‘আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) মসজিদে কিবলার দিকে থুথু দেখতে পেয়ে খুবই রাগান্বিত হন, এমন কি তাঁর চেহারা রক্তিমবর্ণ ধারণ করে। এক আনছারী মহিলা এসে তা (থুথু) মুছে ফেলেন এবং সে স্থানে সুগন্ধি লাগিয়ে দেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, এটা (সুগন্ধি) কতই উত্তম! [19] অপর হাদীছে পাওয়া যায়-
عَنْ أَبِى ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ عُرِضَتْ عَلَىَّ أُمَّتِى بِأَعْمَالِهَا حَسَنِهَا وَسَيِّئِهَا فَرَأَيْتُ فِى مَحَاسِنِ أَعْمَالِهَا الأَذَى يُنَحَّى عَنِ الطَّرِيقِ وَرَأَيْتُ فِى سَيِّئِ أَعْمَالِهَا النُّخَاعَةَ فِى الْمَسْجِدِ لاَ تُدْفَنُ-
আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেন, আমার উম্মাতের ভাল ও মন্দ কার্যাবলী আমার সামনে পেশ করা হ’লে, আমি তাদের ভাল কার্যাবলীর মধ্যে যাতায়াতের পথ থেকে তাদের কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরানোও অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলাম এবং তাদের নিকৃষ্ট কষ্টদায়ক বস্ত্তর মধ্যে মসজিদে থুথু ফেলাও অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলাম যা (মাটি দিয়ে) ঢেকে দেয়া হয়নি।[20] অতএব মসজিদে থুথু ফেলার ক্ষেত্রে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
১০. হারানো জিনিস খোঁজা :
মানুষের জীবন পরিক্রমায় অনেক সময় অনেক জিনিস হারিয়ে যায়, কেউ তা পায় আবার কেউ তা পায় না। অনেকেই অনেক পদ্ধতিতে হারানো জিনিস খোঁজেন, কিন্তু কিছু লোক আছেন যারা হারানো জিনিস খোঁজার জন্য মসজিদ ব্যবহার করে থাকে। কেউ জামা‘আতে ছালাত আদায়ের পর, আবার কেউ মসজিদের মাইকে। যা অবশ্যই পরিহার করা আবশ্যক। এ সম্পর্কে হাদীছে পাওয়া যায়-
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَجُلٌ مَنْ دَعَا إِلَى الْجَمَلِ الأَحْمَرِ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ وَجَدْتَهُ إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ-
সুলাইমান বিন বুরায়দাহ হ’তে বর্ণিত তিনি তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) ছালাত পড়লেন, এক ব্যক্তি (দাঁড়িয়ে) বলল, কে (আমাকে) লাল উটের খোঁজ দিতে পারবে? (অর্থাৎ উটটি হারিয়ে গেছে), নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তুমি যেন তা (উটটি) না পাও। মসজিদ যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে তা সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে’।[21]
অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ سَمِعَ رَجُلًا يَنْشُدُ ضَالَّةً فِي الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلْ لَا رَدَّهَا اللَّهُ عَلَيْكَ، فَإِنَّ الْمَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ لِهَذَا-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ) বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজার ঘোষণা দিতে শুনলে সে যেন বলে ‘আল্লাহ তোমাকে যেন তা ফিরিয়ে না দেন’ কারণ এজন্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি’।[22] অপর হাদীছে পাওয়া যায়-
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ إِنْشَادِ الضَّالَّةِ فِى الْمَسْجِدِ. ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি তার পিতা, তিনি তার দাদা হ’তে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজার ঘোষণা দিতে নিষেধ করেছেন’।[23]
সুতরাং মসজিদে হারানো জিনিসের ঘোষণা দেওয়া যাবে না। কেননা মসজিদ শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্যই তৈরী করা হয়েছে। তবে দ্বীনী আলোচনা ও দ্বীনী ঘোষণা প্রদান করা যাবে। মসজিদ শুধুমাত্র দ্বীনী কাজেই ব্যবহার হবে অন্য কোন কাজের জন্য নয়।
১১. মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় :
মানবজীবনে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রয়োজন আছে। মানুষ ক্রয়-বিক্রয় করবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। আর এজন্যই অনেক পূর্ব থেকেই হাট-বাযারের প্রচলন হয়েছে। একাজে ইসলামে কোন নিষেধ নেই, কিন্তু মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ।
এ সম্পর্কে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْبَيْعِ وَالاِبْتِيَاعِ وَعَنْ تَنَاشُدِ الأَشْعَارِ فِى الْمَسَاجِدِ-
আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হ’তে, তার পিতা তার দাদা হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) মসজিদ সমূহে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং কবিতা আবৃত্তি করতে নিষেধ করেছেন’।[24] অপর হাদীছে পাওয়া যায়-
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَبِيعُ أَوْ يَبْتَاعُ فِى الْمَسْجِدِ فَقُولُوا لاَ أَرْبَحَ اللَّهُ تِجَارَتَكَ وَإِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَنْشُدُ فِيهِ ضَالَّةً فَقُولُوا لاَ رَدَّ اللَّهُ عَلَيْكَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মসজিদের ভিতরে তোমরা কোন লোককে বেচা-কেনা করতে দেখলে বলবে, ‘আল্লাহ যেন তোমার ব্যবসায় কোন লাভ প্রদান না করেন’। মসজিদের মধ্যে কোন লোককে হারানো জিনিসের ঘোষণা দিতে দেখলে বলবে, ‘তোমার হারানো জিনিসকে যেন আল্লাহ ফিরিয়ে না দেন’।[25] তাই সকলকে একাজ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
১২. দুই খুঁটির মাঝখানে কাতার করা :
জামা‘আতে ছালাত আদায় করার জন্য মসজিদ একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনের তাগিদে গ্রাম-গঞ্জে ও শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মসজিদ। আর বড় বড় মসজিদ গুলোর মাঝে রয়েছে প্রয়োজনীয় খুঁটি। বড় মসজিদগুলোতে খুঁটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) এর যুগেও মসজিদের মাঝে খুঁটি ছিল। কিন্তু সে যুগে দুই খুঁটির মাঝখানে কাতার করা হ’ত না, যা বর্তমানে অনেক মসজিদের দেখা যায়। যা পরিত্যাগ করা আবশ্যক। এ সম্পর্কে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ مَحْمُودٍ قَالَ صَلَّيْنَا خَلْفَ أَمِيرٍ مِنَ الأُمَرَاءِ فَاضْطَرَّنَا النَّاسُ فَصَلَّيْنَا بَيْنَ السَّارِيَتَيْنِ فَلَمَّا صَلَّيْنَا قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ كُنَّا نَتَّقِى هَذَا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم-
আব্দুল হামীদ ইবনু মাহমুদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা জনৈক আমীরের পিছনে ছালাত আদায় করলাম। লোকের এত ভিড় হ’ল যে-আমরা বাধ্য হয়ে খুঁটির মাঝখানে ছালাতে দাঁড়ালাম। যখন ছালাত শেষ করলাম, তখন আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সময়ে (এভাবে দাঁড়ানো) এড়িয়ে যেতাম’।[26] অপর হাদীছে পাওয়া যায়,
عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كُنَّا نُنْهَى أَنْ نَصُفَّ بَيْنَ السَّوَارِى عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنُطْرَدُ عَنْهَا طَرْدًا-
মু‘আবিয়া ইবনু কুর্রাহ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় আমাদেরকে দুই খুঁটির মাঝখানে কাতারবন্দী হ’তে নিষেধ করা হ’ত এবং আমাদেরকে (এটি হ’তে) কঠোরভাবে বিরত রাখা হ’ত’।[27] এই হাদীছ দু’টি খুঁটির মাঝখানে কাতারবন্দী না হওয়ার সুস্পষ্ট দলীল। তাই ওয়াজিব হ’ল খুঁটি থেকে সামনে কিংবা পিছনে দাঁড়ানো’।[28] উল্লেখ্য যে, দুই পিলারের মাঝে দাঁড়িয়ে একাকী ছালাত আদায় করা যাবে’।[29]
১৩. পেঁয়াজ-রসুন কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত বস্ত্ত খেয়ে মসজিদে গমন :
কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, সিগারেট ও বিড়ি খেলে মুখে এমন দুর্গন্ধ হয় যে তার নিকটে অবস্থান করা দায় হয়ে পড়ে। মসজিদের পূত-পবিত্র পরিবেশ কলুষিত হয়, সৌন্দর্য বিঘ্নিত হয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ ‘হে বনু আদম! তোমরা প্রতি ছালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্যকে ধারণ কর (আরাফ ৭/৩১)। অর্থাৎ তোমরা পোশাক পরিধান কর ও শালীন পরিবেশ বজায় রাখ। কিন্তু দুর্গন্ধ পরিবেশকে কলুষিত করে তোলে। হযরত জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلاً فَلْيَعْتَزِلْنَا، أَوْ قَالَ: فَلْيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا، وَلْيَقْعُدْ فِى بَيْتِهِ ‘যে ব্যক্তি রসুন কিংবা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং নিজ বাড়ীতে বসে থাকে’।[30] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ الثُّومِ فَلاَ يُؤْذِينَا بِهَا فِى مَسْجِدِنَا هَذَا- ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এই গাছ অর্থাৎ রসুন খায়, সে যেন তার দ্বারা আমাদের এই মসজিদে এসে আমাদেরকে কষ্ট না দেয়।[31]
হযরত ওমর (রাঃ) একদা জুম‘আর খুৎবায় বলেছিলেন, হে লোক সকল! তোমরা দু’টি গাছ খেয়ে থাক। আমি ঐ দু’টিকে কদর্য ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। সে দু’টি হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি, إِذَا وَجَدَ رِيحَهُمَا مِنَ الرَّجُلِ فِى الْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيعِ ‘কারো মুখ থেকে তিনি এ দুটির গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। ফলে তাকে বাক্বী গোরস্থানের দিকে বের করে দেওয়া হ’ত। সুতরাং কাউকে তা খেতে হলে সে যেন পাকিয়ে খায়’।[32] মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الْبَقْلَةِ الثُّومِ وَقَالَ مَرَّةً مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ-
‘যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন ও কুর্রাছ (কুর্রাছ এক প্রকার গন্ধযুক্ত সব্জি। এর কতক পেঁয়াজ ও কতক রসুনের মত দেখায়) খাবে, সে যেন কখনই আমাদের মসজিদ পানে না আসে। কেননা বনী আদম যাতে কষ্ট পায় ফিরিশতারাও তাতে কষ্ট পায়’।[33]
অনেকেই কাজ-কর্ম শেষে হাত-মুখ ধুয়ে তা ঠান্ডা হওয়ার আগেই মসজিদে ঢুকে পড়ে। এদিকে ঘামের জন্য তার বগল ও মোযা দিয়ে বিশ্রী রকমের গন্ধ বের হ’তে থাকে। এ ধরনের লোকও উক্ত বিধানের আওতায় পড়বে। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল ধূমপায়ীরা। তারা হারাম ধূমপান করতে করতে মুখে চরম দুর্গন্ধ জন্মিয়ে নেয়। এ অবস্থায় মসজিদে ঢুকে তারা আল্লাহর মুছল্লী বান্দা ও ফেরেশতাদের কষ্ট দেয়।
১৪. ছালাতরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা :
কোন ব্যক্তি ছালাত আদায়রত অবস্থায় থাকলে তার সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে না। আর ছালাতের সামনে দিয়ে যাওয়ার অপরাধটি মসজিদেই বেশি হয়ে থাকে। অনেক ব্যক্তি আছেন যারা সময়কে অত্যাধিক মূল দিতে গিয়ে এই কাজটি করে ফেলেন। আবার অনেকেই আছে যারা ছালাতের সামনে দিয়ে যাওয়াকে অপরাধ মনে করে না; যা অবশ্যই ভ্রান্তি। রাসূল (ছাঃ) ছালাতের সামনে দিয়ে যেতে নিষেধ করেছেন।
এ সম্পর্কে হাদীছে পাওয়া যায়-
عَنْ بُسْرِ بْنِ سَعِيدٍ أَنَّ زَيْدَ بْنَ خَالِدٍ أَرْسَلَهُ إِلَى أَبِى جُهَيْمٍ يَسْأَلُهُ مَاذَا سَمِعَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى الْمَارِّ بَيْنَ يَدَىِ الْمُصَلِّى فَقَالَ أَبُو جُهَيْمٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَىِ الْمُصَلِّى مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ قَالَ أَبُو النَّضْرِ لاَ أَدْرِى أَقَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ شَهْرًا أَوْ سَنَةً-
বুসর ইবনু সাঈদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ছালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য ছাহাবীগণ আমাকে যায়েদ ইবনু খালিদ (রাঃ) এর নিকট পাঠালেন। তিনি আমাকে অবহিত করলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ছালাতরত কোন ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চাইতে চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। আবু নযর (রহঃ) বলেন, ৪০ দ্বারা তিনি ৪০ বছর, না মাস, না দিন বুঝিয়েছেন তা আমি অবগত নই’।[34] অপর হাদীছে পাওয়া যায়-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ يُصَلِّى فَلاَ يَدَعْ أَحَدًا يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّ مَعَهُ الْقَرِينَ وَقَالَ الْمُنْكَدِرِىُّ فَإِنَّ مَعَهُ الْعُزَّى-
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ছালাত পড়ে, তখন সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়। যদি সে অস্বীকার করে (অর্থাৎ তবুও ছালাতের সামনে দিয়ে যায়) তবে সে (ছালাতরত ব্যক্তি) যেন তার সাথে লড়াই করে। কেননা তার সাথে তার সহযোগী (শয়তান) রয়েছে। আল-মুনকাদিরী (রহঃ) বলেন, নিশ্চয় তার সাথে উযযা (মূর্তি) রয়েছে।[35]
উল্লেখ্য যে, মসজিদে একাকী ছালাত আদায় করার সময় অন্য মুছল্লী তার সামনে দিয়ে যরূরী প্রয়োজনে সিজদার স্থানের বাহির দিয়ে অতিক্রম করতে পারবে।[36] উক্ত হাদীছে بَيْنَ يدي المصلي দ্বারা মুছল্লীর সিজদার স্থান পর্যন্ত বুঝানো হয়েছে।[37]
১৫. মসজিদে হাত মটকানো :
ছালাতের জন্য ওযূ করার পর থেকেই হাত মটকানো নিষেধ রয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِى ثُمَامَةَ الْحَنَّاطُ أَنَّ كَعْبَ بْنَ عُجْرَةَ أَدْرَكَهُ وَهُوَ يُرِيدُ الْمَسْجِدَ أَدْرَكَ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ قَالَ فَوَجَدَنِى وَأَنَا مُشَبِّكٌ بِيَدَىَّ فَنَهَانِى عَنْ ذَلِكَ وَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ خَرَجَ عَامِدًا إِلَى الْمَسْجِدِ فَلاَ يُشَبِّكَنَّ يَدَيْهِ فَإِنَّهُ فِى صَلاَةٍ.
আবূ ছুমামাহ আন-হান্নাত সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, তিনি মসজিদে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কা‘ব ইবনু উজরাহ (রাঃ)-এর সাথে তার সাক্ষাত হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে আমার দু’হাতের আঙুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে মটকাতে দেখতে পেয়ে আমাকে এরূপ কর্ম করতে নিষেধ করলেন। তিনি আরো বললেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ উত্তমরূপে অযূ করে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলে সে যেন তার দু’হাতের আঙুল না মটকায়। কেননা সে তখন ছালাতের মধ্যে থাকে (অর্থাৎ ঐ অবস্থায় তাকে ছালাত আদায়কারী হিসাবেই গণ্য করা হয়’।[38]
উপসংহার : মসজিদ হ’ল পবিত্রতম স্থান। এর পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের। তাই আমরা প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় সচেষ্ট হই। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদেরকে মসজিদের আদব রক্ষা করার তাওফীক দান করুন-আমীন!
[লেখক : ছানাবিয়া ২য় বর্ষ, লক্ষীকোলা, শেরপুর, বগুড়া]
[1]. আল-মু‘জামুল ওয়াফী, ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান (ঢাকা: রিয়াদ প্রকাশনী, ১৯তম মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারী ২০১৬) পৃ.৯৪১।
[2]. বুখারী হা/৩৩৫।
[3]. মুসলিম হা/৬৪ (৭১৩); নাসাঈ হা/৭২৯; ইবনু মাজাহ হা/৭৭২।
[4]. বুখারী হা/১১৬৩; মুসলিম হা/১৬৮৭।
[5]. ছহীহুল জামে হা/২৯৭; মিশকাত হা/১০৭৪, সনদ হাসান।
[6]. হাকেম, ছহীহাহ হা/১০০১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭২১৫।
[7]. আহমাদ হা/১১৯১৫; আবু দাউদ হা/১৩৩২; ছহীহাহ হা/১৫৯৭।
[8]. মুওয়াত্ত্বা হা/২৬৪; মিশকাত হা/৮৫৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭১৪; ছহীহাহ হা/১৬০৩।
[9]. বুখারী হা/৪৭০; মিশকাত হা/৭৪৪।
[10]. মুসলিম হা/১২২ (৪৩২); মিশকাত হা/১০৮৮।
[11]. মুসলিম হা/১২৩; মিশকাত হা/১০৮৮।
[12]. তাবারানী, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭১৪।
[13]. মুসলিম হা/২৯৮; আবু দাউদ হা/২৬১; মিশকাত হা/৫৪৯ ‘হায়েয’ অনুচ্ছেদ।
[14]. বুখারী হা/১২২১; মুসলিম হা/২৮৫; মিশকাত হা/৪৯২।
[15]. মুসলিম হা/৪৪৩ (১০২৫); মিশকাত হা/১০৬০।
[16]. বুখারী হা/৪১৫; মুসলিম হা/৫৫২; মিশকাত হা/৭০৮।
[17]. বুখারী হা/৪০৭; মুসলিম হা/৫৪৯; নাসাঈ হা/৭২৪।
[18]. আবু দাউদ হা/৪৫৫; তিরমিযী হা/৫৯৪, সনদ ছহীহ।
[19]. নাসাঈ হা/ ৭২৮; ইবনু মাজাহ হা/৭৬২।
[20]. ইবনু মাজাহ হা/ ৩৬৮৩।
[21]. ইবনু মাজাহ হা/৭৬৫।
[22]. মুসলিম হা/৭৯ (৫৬৮); মিশকাত হা/৭০৬।
[23]. ইবনু মাজাহ হা/ ৭৬৬; খুযায়মাহ হা/১৩০৪।
[24]. আবু দাঊদ হা/ ৯৯১; ইবনু মাজাহ হা/ ৭৪৯, হাদীছটি হাসান ।
[25]. তিরমিযী হা/ ১৩২১; মিশকাত হা/৭৩৩।
[26]. তিরমিযী হা/২২৯; ইবনু মাজাহ হা/১০০২।
[27]. ইবনু মাজাহ হা/ ১০০২; আবু দাঊদ হা/৬৭৭; ছহীহাহ হা/৩৫৫।
[28]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৫।
[29]. বুখারী হা/৫০৪; ৫০৫।
[30]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪১৭৯।
[31]. ইবনু মাজাহ হা/ ১০১৫।
[32]. মুসলিম হা/৫৬৭।
[33]. মুসলিম হা/৫৬৪।
[34]. বুখারী হা/ ৫১০; নাসাঈ হা/ ৭৫৬; আবু দাউদ হা/ ৭০১; তিরমিযী হা/৩৩৬; ইবনু মাজাহ হা/৯৪৪।
[35]. ইবনু মাজাহ হা/ ৯৫৫; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৫৬২।
[36]. বুখারী হা/৫০৯; মুসলিম হা/৫০৫।
[37]. ইবনু হাযার, ফৎহুল বারী ঐ হাদীছের ব্যাখ্যা।
[38]. আবু দাঊদ হা/৫৬২; ইবনু মাজাহ হা/৯৬৭; তিরমিযী হা/৩৮৬।