সাক্ষাৎকার : রাহুল হোসাইন

তাওহীদের ডাক ডেস্ক 18378 বার পঠিত

[রাহুল হোসাইন ওরফে রূহুল আমীন (২৬) ভারতের মুর্শিদাবাদের অধিবাসী একজন তরুণ ইসলাম প্রচারক। গত কয়েক বছরে তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে তুলনামূলক বিতর্কে অংশগ্রহণ করে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। এছাড়া অনলাইনে রয়েছে তার সরব পদচারণা। ইসলামের নামে প্রচলিত ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহের প্রচারকদের সাথেও তিনি বিতর্কে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তরুণ বয়সেই দ্বীন প্রচারে তার সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বিভিন্ন জালসা ও ওয়ায মাহফিলে তিনি এখন নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকেন। দ্বীনের খাদেম হিসাবে এই তরুণ এগিয়ে যেতে চান আরও অনেক দূর। সম্প্রতি রাজশাহী সফরে এলে বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন তাওহীদের ডাক-এর সহকারী সম্পাদক মুখতারুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি অনুলিখিত আকারে সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্য পত্রস্থ হ’ল-সম্পাদক ]

তাওহীদের ডাক :আপনার জন্মস্থান ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই। আপনি কি হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছিলেন?

রাহুল হোসাইন : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ যেলার জলঙ্গী গ্রামে ১৯৯২ সালে আমার জন্ম। আমার আববার নাম বেলায়েত হুসাইন ও মায়ের নাম রহীমা বিবি। আমরা দুই ভাই ও দুই বোন। আমার ছোট ভাইয়ের নাম আব্দুর রাজ্জাক (রাজা) সউদী আরবে থাকে। আর পরিবারে আমি তৃতীয়। মূলতঃ আমি মুসলিম পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু আমার আববা ইতিপূর্বে হিন্দু ছিলেন। তার নাম ছিল বিমল দাস। পরে আমার মায়ের সাথে বিবাহের পূর্বে ১৯৭৮ সালের দিকে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

তাওহীদের ডাক :আপনার পড়াশোনা, বেড়ে উঠা ও দ্বীনের পথে ফিরে আসার পেছনের গল্পটা কী?

রাহুল হোসাইন : আমার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি মূলত গ্রামের প্রাইমারী স্কুল ও হাই স্কুলে। এরপর আমি ২০১৬ সালে নদীয়া যেলার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক (বিএ) সম্পন্ন করি। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মুসলমান ব্রেলভী আক্বীদার। নববই শতাংশ হিন্দুর দেশ ভারতে অধিকাংশ মুসলমানের আক্বীদা-আমলের সাথে হিন্দু সংস্কৃতি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। তারা পূজাতে অঞ্জলী বা চাঁদা দেয়, সকলে মিলে পূজামন্ডপে যায়, প্রসাদ খায়, পূজা উদযাপনে এমন কোন কাজ নাই যা মুসলমানরা করে না। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এটাই হ’ল মূলমন্ত্র। যেন একটা শান্তিপূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে বসবাস। আমার পরিবারেও ইসলামের কোন চর্চা ছিল না। আমি নিজেও কখনও ঈদ ছাড়া ছালাত আদায় করিনি। মজার ব্যাপার হ’ল ২০১১ সালের দিকে আমি তখন হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। পূজার প্রসাদ নিয়ে বাঁধল গোলমাল। আমরা সকলেই সকাল ৯টা থেকে প্রসাদ খাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সিরিয়াল পেতে আমাদের বেশ দেরী হচ্ছিল। আমরা সকল বন্ধুরা মিলে হৈচৈ শুরু করে দিলাম। কেননা আমরা অর্থাৎ মুসলিম বন্ধুরাও হিন্দুদের স্কুলে পূজার চাঁদা পুরোপুরি দিয়েছিলাম। আমাদের অধিকারটা মোটেও কম ছিলনা। আর আমার ব্যাপারটা আরো একটু ভিন্ন। কেননা আমার পিতা হিন্দু পরিবারের সদস্য ছিল বিধায় মাসী, পিশী সকলেই হিন্দু। ফলে আমরা মুসলমানরা রাগ করে সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীতে আমরা মীলাদ দেব। আর সরস্বতী পূজার পরিবর্তে জালসা করব। ২০১২ সালে যখন আমার মনে এমন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল তখনই ডাঃ যাকির নায়েক সম্পর্কে আমার জানাশোনা হয়। আমি তাঁর ‘কুরআন এন্ড মডার্ন সায়েন্স’ বক্তব্যটি শুনি। পরবর্তীতে তাঁর অন্যান্য প্রায় সকল বক্তব্য শুনেছি। তাঁর মাধ্যমেই আমি ধর্মের প্রতি উৎসাহিত হই এবং মনে মনে দাওয়াতের বীজ বপন করতে শুরু করি। বক্তব্য প্রদানের অভ্যাস স্কুলজীবন থেকেই ছিল। ফলে সাহস করে একদিন কলেজের এক অনুষ্ঠানে ‘কনসেপ্ট অফ গড’ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করি। যেখানে অধিকাংশ শ্রোতাই ছিল হিন্দু। আমার বক্তব্যে বেশ সাড়া পড়ল। এতে স্কুলে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ বাঁধার ভয়ে কর্তৃপক্ষ পূজা ও ধর্মীয় জলসা/বক্তৃতা সবই বন্ধ করে দিল। কেননা ভারতে আইন আছে যে, সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কোন ধর্ম চর্চা নিষিদ্ধ। ফলে তখন থেকে ঐ স্কুলে পূজার কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেল। এই সফলতার সূত্র ধরে আমি দ্বীনের খেদমতে আরও আগ্রহী হই এবং ব্যাপকভাবে পড়াশোনা শুরু করি।

তাওহীদের ডাক :আপনার নাম রাহুল হোসাইন আবার রূহুল আমীন দেখি। ব্যাপারটা আসলে কি?

রাহুলহোসাইন : সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার নাম রাহুল হোসাইন। আমার জাতীয় পরিচয়পত্র ও পার্সপোটেও এই নাম রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মাওলানা আব্দুল্লাহ সালাফী আমার নাম রূহুল আমীন রাখেন। এজন্য আমি দু’টি নামই ব্যবহার করি।

তাওহীদের ডাক :আপনার নামের সাথেব্রাদার’ লক্বব কেন?

রাহুলহোসাইন : আসলে সত্য বলতে ‘ব্রাদার’ লক্ববটি ইন্ডিয়াতে যথেষ্ট ব্যবহৃত হয়। আমার মতই জেনারেল শিক্ষিত যারা ডা. জাকির নায়েকের ধর্মপ্রচারে অনুপ্রাণিত হয়ে দ্বীনের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেছেন তারা অনেকেই ‘ব্রাদার’ লকব ব্যবহার করেন। মাদরাসার প্রথাগত শিক্ষালাভ না করা এমন প্রায় দশজন দাঈ ভাই ভারতে রয়েছেন। যেমন- হায়দারাবাদে আছেন ব্রাদার ইমরান, কেরালায় ব্রাদার এম এন আকবার। আবার ব্রাদার সিরাজুর রহমান ও ব্রাদার শাফী রয়েছেন যারা যথাক্রমে তেলেগু ও মালালায়ম ভাষায় কাজ করেন। এছাড়া আরও রয়েছেন ব্রাদার নাছিরুদ্দীন ইবনু মঈনুদ্দীন, এ্যাডভোকেট ফায়েয সাহেব প্রমুখ। আমি তাদের অনুসরণ করি মাত্র। 

তাওহীদের ডাক :আপনি পাবলিক লেকচার কবে থেকে শুরু করলেন?

রাহুল হোসাইন : ২০১৫ সালে মূলত আমার পাবলিক লেকচার শুরু। সে বছরেই সাতাশটি প্রোগ্রামে বক্তব্য দিই। তখন হিন্দুধর্ম সম্পর্কেই বক্তব্য দিতাম কিন্তু শিরক-বিদ‘আত বুঝতাম না। এমনকি বক্তৃতা দেওয়ার সময়ও আমার হাতে তাবীজ ছিল। তখন এইটুকু বুঝতাম যে কেবল মূর্তিপূজা হ’ল শিরক।

তাওহীদের ডাক :আপনি মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত নন। তবুও ধর্মীয় বিষয়ে আপনি পুরোদমে আলোচনা রাখেন? এটা কিভাবে শুরু করলেন?

রাহুল হোসাইন : আসলে আমি হিন্দুদের সাথে বাহাছ-মুনাযারা করার জন্য তাদের গ্রন্থগুলো পড়তাম। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করি বিপদে পড়ে। বিশেষ করে ধর্ম পালনে আমি ডা. জাকির নায়েকের অনুসরণ করতাম। যখন তিনি বুকের উপর হাত বাঁধা সম্পর্কে আবু দাউদের ৭৫৯ নং হাদীছটি পেশ করেন ও নাভীর নীচে হাত বাঁধার যঈফ হাদীছটির ব্যাখ্যা করে দেন, তখন কিছু না বুঝেই আমি সেটার ওপর আমল শুরু করি। তখন মসজিদের মুছল্লীরা আমাকে তিরস্কার করে বলতে থাকল যে, ডা. জাকির নায়েক তো ফারায়েযী, ওহাবী। তখন আমার মনে দাগ কাটে যে, এগুলো আবার কি? তারপর থেকে ইন্টারনেট ভিত্তিক কুরআন ও হাদীছ পড়া শুরু করি। এসময় ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্যগুলো থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হই। অতঃপর ২০১৪ সালে হঠাৎ করেই দেওবন্দী আক্বীদার উপর একটা সিডি পেলাম, যার আলোচক ছিলেন শায়খ মতিউর রহমান মাদানী। এভাবে আমার ইসলাম সম্পর্কে জানার দরজা খুলে যায়। অবশেষে মাযহাবী মুসলমান ভাইদের অপপ্রচারের মুকাবিলায় তাদের সাথে বাহাছ-মুনাযারা শুরু করতে বাধ্য হই। এভাবেই ধর্মীয় বিষয়ে আমার পড়াশোনা আরম্ভ হয়।

তাওহীদের ডাক :আপনি সংস্কৃত ভাষায় অনেক শ্লোক বলেন। আপনি কি সংস্কৃত ভাষা শিখেছেন?

রাহুল হোসাইন : আমাদের ভারতে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে সংস্কৃত পড়ানো হয়। সেখান থেকেই মূলত আমার সংস্কৃত শেখা। আর সংস্কৃত শ্লোকগুলো আমি গীতা বা বেদের প্রকৃত ছন্দে ও আবৃতিতে পড়ে থাকি যা আমি ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিখেছি।

তাওহীদের ডাক :আপনাকে বক্তব্যে নিয়মিত রেফারেন্স দিতে দেখা যায়। এর জন্য বিশেষ কোন চর্চা করেন নাকি?

রাহুল হোসাইন : আমি যখন কোন বই পড়ি তখন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ি এবং প্রয়োজনীয় অংশগুলো তখনই আত্মস্থ করে নিই। আর পড়ার সময় আমি লাল ও নীল কালি ব্যবহার করি এবং প্রয়োজনীয় স্থানগুলো চিহ্নিত করে রাখি। তাছাড়া পড়ার পর পঠিত বইয়ের শুরুতে বইয়ের নির্বাচিত অংশগুলি সম্পর্কে লিখে ফেলি। এতে আমার মুখস্ত রাখা সহজ হয়। তাছাড়া নিয়মিত অনুশীলনের কারণে আমি কোন কিছু মুখস্ত করলে সহজে ভুলিনা, আলহামদুলিল্লাহ।

তাওহীদের ডাক :আপনি কতগুলো ধর্মগ্রন্থ পড়েছেন?

রাহুল হোসাইন : আমি হিন্দু ধর্মের চার খানা বেদ, আঠারটি উপনিষদ, আঠারটি পুরাণ পড়েছি। এছাড়া মনুসংহিতা, যা আমাদের ফিকহ গ্রন্থের মত এবং গীতার প্রায় পয়ত্রিশখানা ব্যাখ্যা পড়েছি, যা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। সেই সাথে খৃষ্টানদের বাইবেলও পড়েছি। সত্য বলতে কি, কুরআন পড়ার আগে আমি হিন্দু ও খিস্টানদের ধর্মগ্রন্থই প্রথমে পড়েছি। আমি জানতাম না যে বাংলা ভাষায় কুরআনের অনুবাদ আছে। পরে আমার বন্ধু ইখলাছুদ্দীন আমাকে সর্বপ্রথম বাংলা কুরআন পড়তে দেয়।

তাওহীদের ডাক :আপনার ফোন বিতর্কের ব্যাপারে কিছু বলবেন কি?

রাহুল হোসাইন : আসলে একটা ঘটনার সূত্র ধরে আমার এই পথে আসা। আমাদের এলাকার জনৈক দেওবন্দী মাওলানা কামারুযযামান আমাদের ছহীহ হাদীছের প্রচার-প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়ান। ডোমকলে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন জালসায় তিনি আমাদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন এবং আমাদের হেনস্থা করতে চান। বিশেষ করে আমাকে তারা টার্গেটে পরিণত করেন। তারা আমার সাথে সরাসরি বসতে চাইনেন না। ফলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আমি ফোন বিতর্কের আশ্রয় গ্রহণ করি। সেই মাওলানা এবং আমার মধ্যকার ফোন বিতর্কটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সবাই সত্যটা জানতে পারে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে ফোন বিতর্কে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশের অনেক আলেমের সাথেও আমার ফোন বিতর্ক হয়েছে যেমন লূৎফর রহমান ফরায়েযী, রেযওয়ান রফিকী বা আরো অনেক আলেমের সাথে যা ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে। এছাড়া নাস্তিক মুফাস্সিল ইসলাম, আসিফ মুহীউদ্দীন, আব্দুল্লাহ মাসউদের সাথেও আমার ফোনে বিতর্ক হয়েছে এবং তাতে যথেষ্ট সফলতাও অর্জিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

তাওহীদের ডাক :কোন ফোন বির্তক ইন্টারনেটে ছাড়ার আগে প্রতিপক্ষের অনুমতি নেন? না নিলে এটা নৈতিকভাবে কতটা সঠিক?

রাহুল হোসাইন : প্রথমবার আমি নিজে থেকে ফোন বিতর্ক ইন্টারনেটে ছাড়িনি। কে বা কারা প্রথমে এটা ছেড়েছে, আমি জানি না। তবে পরবর্তীতে যখন এটা জনপ্রিয় হয়, তখন আমি নিজের পক্ষ থেকেও ইন্টারনেটে দিয়ে থাকি। আর অনুমতি না নিলেও আমি মনে করি শরী‘আতের স্বার্থে এটি মানুষকে জানানো প্রয়োজন। কেননা আমি প্রতিপক্ষের কোন আলেমকে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিনি। আমি শুধু তার ভুলটা ধরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি। 

দ্বিতীয়তঃ ফোন বিতর্ক যখন চারিদিকে ভাইরাল হয়ে যায় তখন আমি এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের আহলেহাদীছ আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ সালাফীকে প্রশ্ন করলে তিনি আমাকে পরিস্থিতির বিবেচনায় অনুমতি প্রদান করেছিলেন।

তাওহীদের ডাক :আপনি কখন সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন?

রাহুল হোসাইন : বাংলাদেশে প্রথম ২০১৭ সালের ১৭ই অক্টোবর প্রোগ্রাম এসেছিলাম মাদারীপুর। কিন্তু প্রোগ্রামটি হয় নাই। অতঃপর ঢাকার সুরিটোলা আহলেহাদীছ মসজিদে ‘গুলু ফিদ দ্বীন’ বিষয়ে সর্বপ্রথম বক্তব্য দেই।

তাওহীদের ডাক :এবারে একজন বিতর্কিক হিসাবে চলমান কিছু বিতর্ক প্রসঙ্গে আপনার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা। যেমন ছালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাতের ব্যাপারে আপনার ধারণা কি?

রাহুল হোসেন : যেহেতু আমি আহলেহাদীছ। অতএব আমার মানহাজ আহলেহাদীছদের থেকে ভিন্ন নয়। সম্মিলিত দো‘আর ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় আমার সাথে মুনাযারা হয়। আমি কুরআন ও হাদীছ থেকে দলীল দেওয়ার পূর্বে বিরোধীদের বই দিয়েই তাদের জবাব দেই। যেমন ইমাম আবু হানীফা সহ চার ইমামের কোন ইমাম সম্মিলিত মুনাজাত বা দো‘আ জায়েয বলেননি। এমনকি ফাতাওয়া আলমগীরীতে ষাট হাযার ফৎওয়ার মধ্যেও এ বিষয়ে কোন দলীল পাবেন না। জায়েয হলে অবশ্যই বিষয়টি তাতে থাকত। এমনকি প্রখ্যাত হানাফী পন্ডিত আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী এটিকে নাজায়েয বলে ফৎওয়া দিয়েছেন। সুতরাং এ বিষয়ে বিরোধীদেরই বিতর্কের সুযোগ নেই। 

তাওহীদের ডাক :সালাফী মানহাজ সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?

রাহুল হোসাইন : আক্বীদার বিষয়ে বলতে গেলে সালাফী মানহাজ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। পরবর্তীতে সৃষ্ট সমস্ত মত ও মাযহাব বাতিল। যেমন ব্রেলভী বা দেওবন্দী আক্বীদা যদি সঠিক হত তাহলে মাওলানা সাহারানপুরীকে ‘আল-মুহান্না্দ ওয়াল মুফান্নাদ’ লিখতে হত না। কেননা অত্র বইটিতে তাদের বিখ্যাত ৬৪ জন মুফতীর সমর্থনে দেওবন্দী আকবীদাকে যাহির করা হয়েছে। কিন্তু ‘আল-মুহান্না্দ ওয়াল মুফান্নাদ’-এর পূর্বে তাদের আক্বীদার উপরে স্বতন্ত্র কোন গ্রন্থ নেই। কিন্তু সালাফী আক্বীদার উপরে সালাফদের অসংখ্য গ্রন্থ আছে। যেমন ইমাম খুযায়মার ‘আত-তাওহীদ’ আছে। জাহামিয়াদের বিপক্ষে ‘কিতাবুত তাওহীদ’ ছহীহ বুখারীতে মওজুদ আছে। অতএব এগুলো প্রমাণ করে যে, সালাফরা আক্বীদার বিষয়গুলোকে আগে থেকেই পরিস্কার করে রেখেছেন। রাসূল (ছাঃ) নূরের তৈরী নাকি মাটির তৈরী, তিনি ইলমে গায়েব জানেন ও সর্বত্র হাযির নাযির ইত্যাদি বিষয়গুলো সাম্প্রতিক ইংরেজ আমলে তৈরী। যদি তাই না হ’ত তাহ’লে অবশ্যই পূর্ববর্তী সালাফগণ এবিষয়ে কলম ধরতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। অতএব সালাফে ছালেহীনের মানহাজ তথা মানহাজে আহলেহাদীছ যে সত্যসেবী মানহাজ, তাতে সামান্যতম সংশয়ের অবকাশ নেই।

তাওহীদের ডাক :নিজেকে আহলেহাদীছ বলতে বা দাবী করতে আপনার কোন আপত্তি আছে?

রাহুল হোসাইন : না, বরং আমি সবসময়ই নিজেকে আহলেহাদীছ হিসাবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আর এ বিষয়ে আমি বইও লিখেছি ‘আহলেহাদীছ ও হানাফী মাযহাব : ইখতিলাফ নিরসন’ শিরোনামে। অনেক হানাফী ভাই বলেন, আহলেহাদীছ বলতে শুধুমাত্র মুহাদ্দিছগণদের বুঝানো হয়েছে, আমজনতাকে নয়। আর আহলেহাদীছরা ইংরেজদের আমলে সৃষ্ট আর ইংরেজদের পূর্বে এদের অস্তিত্ব ছিলনা। এর উত্তরে এটাই বলতে হয় যে, আহলেহাদীছ মূলত দু’শ্রেণীর লোককে বুঝানো হয়। একটি হ'ল ‘আলিম ফিল হাদীছ’ ও ‘আমিল ফিল হাদীছ’। আলিম ফিল হাদীছ বলতে ইমাম বুখারী সহ সকল মুহাদ্দিছ। আর আমিল ফিল হাদীছ বলতে সকল আম জনতা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হাদীছের উপর আমল করে। হানাফী আলেম মাওলানা আব্দুল মতীনসহ অনেক এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তাহ’লে এ বিষয়ে তারাই স্ববিরোধিতায় লিপ্ত। এবার আসুন দেখি, দেওবন্দী হানাফী কারা? দেওবন্দী হানাফী আলেম লূৎফর রহমান ফরায়েযী দেওবন্দে পড়াশোনা করেছেন? উত্তর-না। তাহলে তিনি কিভাবে নিজেকে দেওবন্দী বলে দাবী করেন। এজন্য যে, তিনি দেওবন্দী আক্বীদার অনুসারী। অতএব একই দৃষ্টিতে হাদীছের অনুসারী সকল আমজনতাও আহলেহাদীছ। এবার আসুন দেখি কারা ইংরেজদের আমলে সৃষ্ট? ১৮৬৬ সালের পূর্বে পৃথিবীতে দেওবন্দী বলে কিছু ছিল না, যেমনভাবে আদম (আঃ)-এর পূর্বে কোন মানুষ ছিল না। আর ১৮৬৬ সাল হ’ল ইংরেজদের আমল। অর্থাৎ দেওবন্দীদেরই সৃষ্টি হয়েছে ইংরেজদের আমলে। অন্যদিকে ইবনে কাছীর (রহঃ) প্রমাণ করেছেন যে, হাদীছে মুক্তিপ্রাপ্ত ও বিজয়ী দল হিসাবে যাদেরকে বলা হয়েছে তারাই হ’ল আহলেহাদীছ। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর সকল ছাহাবীরাও আহলেহাদীছ ছিলেন। অর্থাৎ আহলেহাদীছদের সৃষ্টি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগ থেকেই। 

তাওহীদের ডাক :যারা মুসলিম সমাজে বসে নিজেদের পরিচয় ‘মুসলিম’ প্রদান করে, তাদেরকে আপনি কিভাবে রদ করবেন?

রাহুল হোসাইন : সূরা হজ্জের ৭৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ আমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম। আল্লাহ মুসলিম নাম রেখেছেন এতে উম্মাতের ইজমা আছে। সুনান তিরমিযীতে এসেছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে একটি দল যাবে জান্নাতে। অর্থাৎ তারা সকলে মুসলিম, তবুও জান্নাতে সবাই যাবে না। রাসূল (ছাঃ) একটি জান্নাতী দল বলতে তাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন-যারা আমার ও আমার ছাহাবীদের আদর্শে থাকবে। মোদ্দাকথা হ'ল মুসলিম হলেই জান্নাতী হবেনা বরং বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বা গুণগত মুসলিম হ’তে হবে। নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করার মধ্যে বিশেষ কিছু নেই। তাহ’লে আমি একজন মানুষ হ্ওয়া সত্ত্বে্ও আমার নাম রূহুল আমীন কেন? এখন তারা যদি বলে, রাসূল (ছাঃ)-এর নাম যেহেতু মুহাম্মাদ ছিল তাই আমরাও বিশেষ নাম রেখেছি। তাহ’লে এর উত্তরে বলব, যে কোন জিনিসের বৈশিষ্ট্যগত নাম রয়েছে। যেমন কুরআন, আল্লাহ ও তাঁর নবীর অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যগত নাম রয়েছে। যেমন ছাহাবীদের ছাহাবী, তাবেঈদের তাবেঈ বলে ডাকা হয়। কেননা সেগুলো তাদের বৈশিষ্ট্যগত নাম। সুতরাং আহলেহাদীছও এমন একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম, যা মুসলিমদেরই একটি দলকে বলা হয়। সুতরাং এ বিষয়ে বিতর্ক অর্থহীন।

তাওহীদের ডাক :জঙ্গীবাদ নিয়ে আপনার কি ধারণা ?

রাহুল হোসাইন : জঙ্গীবাদ ইসলাম সমর্থন করেনা বরং জঙ্গিবাদ নির্মূল করাই এর কাজ। জিহাদ ও জঙ্গীবাদের মধ্যে আকাশ-যমীন পার্থক্য রয়েছে। জিহাদ ইসলামে ফরয আর জঙ্গীবাদ ইসলামে হারাম। যেমন ভারত হ’ল আমার নিকট দারুদ দাওয়াহ; দারুল কুফফার নয়। যদিও ভারতে প্রায় আশি শতাংশ মানুষ অমুসলিম। আমাদের জিহাদ হবে দাওয়াতের মাধ্যমে, অস্ত্রের মাধ্যমে নয়। আর বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে বলতে হয় বাংলাদেশের অবস্থা ঐ হজ্জযাত্রী মহিলার মত যার কাছে কোটি কোটি টাকা ও সার্বিক সামর্থ্য আছে; কিন্তু তার মাহরাম নাই। ফলে তার জন্য হজ্জে যাওয়া সম্ভব নয় অর্থাৎ তার খলীফা বা আমীর নাই। অতএব তাগুতের ধোঁয়া তুলে সরকার বা সরকারী চাকুরীজীবীদের তাগুত ভেবে নিরীহ মানুষ হত্যার সুযোগ ইসলামে নেই। আর সত্য বলতে কি, সকল যুগের আলেম-ওলামাদের সাথে সরকারের বিরোধ থাকলেও কেউ কখনো প্রতিষ্ঠিত সরকারকে তাগুত ফতোয়া দেননি। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ), ইমাম মালেক (রহঃ), ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) প্রমুখ আমাদের জন্য প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অতএব প্রচলিত জঙ্গীবাদ মূলত সন্ত্রাসবাদ, যা প্রকৃত মুসলমানের কখনো কাম্য নয়।

তাওহীদের ডাক :সংগঠন করা যাবে কি যাবেনা এ নিয়ে বাংলাদেশে আহলেহাদীছদের মধ্যে যে ফিৎনা ছড়ানো হচ্ছে এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?

রাহুল হোসাইন : আমি মনে করি সংগঠন মানে হ'ল ঐক্যবদ্ধ হওয়া আর এটি দাওয়াতের বড় মাধ্যমও বটে। কুরআনের একাধিক আয়াত ও বহু হাদীছ দ্বারা সংঘবদ্ধতা প্রমাণিত। হকের উপরে একটি দল চিরকাল বিজয়ী থাকবে এবং বাতিলপন্থীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে যদি কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত কোন সংগঠন থেকে বের হয়ে যায়, তাহ’লে তাকে খারেজী, চরমপন্থী বা অন্য কোন নামে অভিহিত করার পক্ষপাতী আমি নই, যদি কিনা সে সালাফী মানহাজের উপর কায়েম থাকে। আর যারা বলে সংগঠন করা যাবে না তারাও তো সংগঠিত হয়ে সংগঠনের মতই কাজ করছে। আবার কেউ বলে সংগঠন করলে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। তাহ’লে তো তারাই প্রকারান্তরে বিদ্বেষের মধ্যে পড়ে আছে। এখানে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ দায়ী, সংগঠন নয়। আর সালাফদের মানহাজই হ'ল ঐক্যবদ্ধ থাকা, যার বাস্তব রূপ হ’ল সংগঠন।

তাওহীদের ডাক :এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনার বোধহয় দাওয়াতী ময়দানে কিছুটা নমনীয়তা অবলম্বন করা উচিৎ। কি বলবেন এ বিষয়ে?

রাহুল হোসাইন : আসলে সত্য বলতে কি, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে দাওয়াতের ধরণ একটু পাল্টাতে হয়। যেমন ভারতে আমার আলোচনাগুলো হয় গঠনমূলক কিন্তু বাংলাদেশের আলোচনাগুলো সমালোচনামূলক। কেননা দুই দেশের পরিবেশ ভিন্ন রকম। বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়, তার তুলনায় ভারতে অনেক কম। যাইহোক সাধ্যমত চেষ্টা করছি ভারসাম্য বজায় রাখতে।

তাওহীদের ডাক :‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি ধারণা রাখে?

রাহুল হোসাইন : বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য হক্বের সবচেয়ে নিকটবর্তী যদি কোন সংগঠনকে মনে করি, তবে তা হ’ল ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’। আমাদের ভারতে এই সংগঠনটির প্রভাব অনেক বেশী। হাদীছ ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন বই, লিফলেট, প্রকাশনা, জুম‘আর খুতবা, লেকচার ইত্যাদি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সুপরিচিত। বিশেষ করে ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ বইয়ের কথা বলাই বাহুল্য। এই বইটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমি নিজেও বইটি প্রচুর পরিমানে বিলি করেছি। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর সাংগঠনিক কর্মপদ্ধতি আমরা পশ্চিমবঙ্গেও অনুসরণ করার চেষ্টা করি।

তাওহীদের ডাক :ভারতে মাসিক আত-তাহরীক-এর কেমন প্রভাব রয়েছে?

রাহুল হোসাইন : মাসিক আত-তাহরীক ছহীহ দ্বীন প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ভারতে। মাসের ২৭/২৮ তারিখ থেকে আমি ইন্টারনেটের দিকে দৃষ্টি রাখি। নেটে আসা মাত্র পড়তে শুরু করে দিই। বিশেষ করে সূচি দেখার পর যরূরী প্রবন্ধগুলো এবং প্রশ্নোত্তর পড়ে থাকি। ভারতে বর্তমানে আত-তাহরীক প্রায় ৭/৮ হাযার কপি ছাপানো হচ্ছে। 

তাওহীদের ডাক :তাওহীদের ডাক পাঠকের জন্য কিছু বলুন।

রাহুল হোসাইন : পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলব, সবাইকে দাওয়াতী ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যার লেখার সামর্থ্য আছে লিখবে; যার বলার সামর্থ্য আছে বলবে; যার অর্থ আছে সে অর্থ দিয়ে দ্বীন প্রচারে সার্বিক সহযোগিতা করবে। আর যার কিছুই নাই সে অন্ততঃ রাস্তায় দাঁড়িয়ে দ্বীনী লিফলেট বিলি করে হলেও দ্বীন প্রচারে সাহায্য করতে হবে। এমনকি মানুষের সুন্দর আচরণও একটি দাওয়াত। প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় সূরা তাওবার ২২ নং আয়াত। যেখানে বলা হয়েছে যে, তোমরা কেউ জিহাদে যাবে আবার কেউ দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করবে। আর নাসাঈতে ছহীহ সনদে একটি হাদীছে এসেছে এ মর্মে যে, সামর্থ্যহীন একজন ব্যক্তি জিহাদে যাওয়ার কথা বললে রাসূল (ছাঃ) বললেন, যাও তুমি উটের রশিটা বেঁধে দাও। তোমার জন্য এটাই জিহাদের নেকী। এসকল দলীল থেকে এটাই বুঝা যায় যে, ব্যক্তির সাধ্যানুযায়ী দ্বীন প্রচারে সাহায্য করবে।

রাহুল হোসাইন :ভাই, আমাকে আপনাদের পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শ দিন।

তাওহীদের ডাক : আপনি জেনারেল শিক্ষিত ছাত্র। আর যে ময়দানে নেমেছেন তাতে শারঈ জ্ঞানের বিষয়ে আপনার জানা-অজানা নিয়ে নানান প্রশ্ন আসবে। তার যুক্তিসংগত কারণও আছে। তাই বলব, যেহেতু আপনার বয়স কম, সেহেতু নিয়মতান্ত্রিকভাবে আপনার শারঈ জ্ঞান অর্জনের যথেষ্ট সময় ও সুযোগ আছে। আপনার প্রতি আমাদের নছীহত হ’ল, দেশে বা দেশের বাইরে কোন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর সময় ব্যয় করে ইলমী ভিত্তিটা আরো মযবুত করে নিন এবং সে সকল প্রতিষ্ঠান থেকে একটা সার্টিফিকেশন বা ইজাযাহ অর্জন করুন, যা পূর্ববর্তী আলেম-ওলামারও ছিল। তাতে আপনার জ্ঞানের গভীরতা্ও আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং প্রতিপক্ষ এ বিষয়ে আর প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে না। আরেকটা বিষয় হ'ল দাওয়াতী ময়দানে যে ফিৎনাগুলো চলছে সে বিষয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বিগত সময়ে দেখেছি কোন ভাই শুরুতে যখন দাওয়াতী ময়দানে আসেন তখন একটা জোরালো ভুমিকা নিয়ে জনসম্মুখে উপস্থিত হন। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে তার অবস্থান নড়বড়ে হ’তে থাকেন। অবশেষে এক সময় হারিয়ে যান। আর এটা বিভিন্ন কারণে হ’তে পারে- ১. ইখলাছের অভাব অর্থাৎ অধিক জনপ্রিয়তা লাভের ফলে অহংকারে পেয়ে বসা। ২. অর্থের পিছনে পড়ে যাওয়া। সুতরাং পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আপনার অজান্তে কোন ফিৎনা এসে যেন আপনাকে গ্রাস না করে ফেলে। আরও কিছু বিষয় যেমন- যখনই কোন নতুন ধ্যান-ধারণা বা সামাজিক কোন ফিৎনা এসে হাযির হয় তখন খুব ভেবে-চিন্তে, হিসাব-নিকাশ করে সামনে পা বাড়ানো। আবেগী না হয়ে বিচক্ষণতার সাথে সিদ্ধান্ত নেয়া। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে নছীহত করা এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করা। আর সর্বশেষ কথা হ’লো আপনি যে দাওয়াতী ময়দানে এসেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এবং পবিত্র ময়দান। আপনাদের মত উদ্যমী দাঈদের এ ময়দানে খুবই প্রয়োজন। সুতরাং এই ময়দান ও তাতে নিজের ভূমিকার গুরুত্ব সর্বদা অন্তরে লালন করবেন। তাহ’লে হক্বের ওপর টিকে থাকা্ও ইস্তিকামাত অর্জন করা সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন!



আরও