গাযওয়াতুল হিন্দ : একটি পর্যালোচনা
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আসাদুল্লাহ আল-গালিব 2587 বার পঠিত
কবর :
কবরের নাম শুনলেই গা শিউরে উঠে। যে কোন সময় শাস্তি বা শান্তি নেমে আসতে পারে। হয়ে যেতে পারে জীবন লন্ডভন্ড। কবর তথা বারযাখী জীবন মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত জালীলুর কদর ছাহাবীগণ পর্যন্ত অঝোর নয়নে কেঁদেছেন। বক্ষমান প্রবন্ধে পোকা-মাকড়ের ঘর কবর সংক্রান্ত আলোচনার প্রয়াস পাব।
কবরের বারযাখী জীবনে কেউ সুখ-শান্তি লাভ করবে আর কেউবা আযাব বা শাস্তির সম্মুখীন হবে। একজন ব্যক্তি কবরে সমাহিত হোক বা না হোক তাকে কবরের শাস্তি বা শান্তির দ্বারা আচ্ছাদিত হ’তে হবে। যেমন কোন ব্যক্তি অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভষ্মীভূত হয়ে গেল অথবা হিংস্র জন্তু তাকে খেয়ে ফেলল। তথাপি নিশ্চয় সে বারযাখী জীবনে নেক আমলের জন্য শান্তি লাভ করবে অথবা মন্দ আমলের জন্য শাস্তি ভোগ করবে।
ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) কবরের শাস্তি সম্বন্ধে বলেন, নিশ্চয় কবরে শাস্তি শুরু হয়ে যাবে মাইয়েতকে দাফন করার পর থেকেই। আর আল্লাহ কাফেরদের শাস্তি দিবেন যদিও তাদের কবরে দাফন না হয়। আর এই শাস্তির প্রক্রিয়াটি আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা জীবিত মানুষ থেকে আড়াল করে রেখেছেন’।[1]
একজন ব্যক্তির শরীর আগুনে পুড়ে ছাই হওয়ার পরও আল্লাহ তাকে শাস্তি বা শান্তি দিতে পারেন। এ সংক্রান্ত একটি হাদীছ,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ كَانَ رَجُلٌ يُسْرِفُ عَلَى نَفْسِهِ، فَلَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ قَالَ لِبَنِيهِ إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَحْرِقُونِى ثُمَّ اطْحَنُونِى ثُمَّ ذَرُّونِى فِى الرِّيحِ، فَوَاللَّهِ لَئِنْ قَدَرَ عَلَىَّ رَبِّى لَيُعَذِّبَنِّى عَذَابًا مَا عَذَّبَهُ أَحَدًا فَلَمَّا مَاتَ فُعِلَ بِهِ ذَلِكَ فَأَمَرَ اللَّهُ الأَرْضَ، فَقَالَ اجْمَعِى مَا فِيكِ مِنْهُ فَفَعَلَتْ فَإِذَا هُوَ قَائِمٌ، فَقَالَ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ قَالَ يَا رَبِّ خَشْيَتُكَ فَغَفَرَ لَهُ-
হযরত
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, পূর্বযুগে এক লোক তার
নিজের উপর অনেক যুলুম করেছিল। যখন তার মৃত্যুকাল ঘনিয়ে এলো সে তার
পুত্রদেরকে বলল, মৃত্যুর পর আমার দেহ হাড়-মাংসসহ পুড়িয়ে ছাই করে নিও এবং
প্রবল বাতাসে তা উড়িয়ে দিও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ আমাকে ধরে ফেলেন, তবে
তিনি আমাকে এমন কঠিনতম শাস্তি দিবেন যা অন্য কাউকে দেননি। যখন তার মৃত্যু
হ’ল, তার সঙ্গে সেভাবেই করা হ’ল। অতঃপর আল্লাহ যমীনকে আদেশ করলেন, তোমার
মাঝে ঐ ব্যক্তির যা আছে জমা করে দাও। যমীন তা করে দিল। এ ব্যক্তি তখনই
দাঁড়িয়ে গেল। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে তোমাকে এই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ
করলো? সে বলল, হে প্রতিপালক! তোমার ভয়। অতঃপর তাকে ক্ষমা করা হ’ল’ ।[2]
কবরের আযাব অথবা শান্তি হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছীনে কেরাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, কবরে শাস্তি এবং মুনকার-নাকীরের সওয়াল-জওয়াবের অধিকাংশ হাদীছগুলি রাসূল (ছাঃ) হ’তে মুতাওয়াতির পর্যায়ে বর্ণিত হয়েছে’।[3] কবর জীবনের শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, فَوَقَاهُ اللَّهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوا وَحَاقَ بِآلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ-النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ- ‘অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্টসমূহ থেকে রক্ষা করলেন। আর ফেরাঊন গোত্রকে নিকৃষ্ট শাস্তি গ্রাস করল। সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের উপর আগুনকে পেশ করা হবে এবং যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। (বলা হবে) তোমরা ফেরাঊন সম্প্রদায়কে কঠিন আযাবের মধ্যে প্রবেশ করাও’ (মুমিন ৪০/৪৫-৪৬)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু ক্বুতাইবা (রহঃ) বলেন, তাদের মৃত্যুর পর তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যা জাহান্নামের শাস্তি দেওয়া হবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত। আর ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে আরো মর্মান্তুক শাস্তি’।[4] আবু আব্দুল্লাহ কুরতুবী (রহঃ) বলেন, মুজাহিদ, ইকরিমা, মুক্বাতিল, মুহাম্মাদ বিন কা‘ব প্রমূখ বলেছেন, এই আয়াত প্রমাণ করে যে, দুনিয়ায় কবরে এবং আখিরাতেও শাস্তি সংঘটিত হবে’।[5] ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নিকট এই আয়াতটি বড় দলীল বারযাখী কবর জীবনে শাস্তির’। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ- ‘যদি তুমি দেখতে যখন কাফেররা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে, আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলে, এবার তোমাদের আত্মাগুলিকে (তোমাদের দেহ থেকে) বের করে দাও (কারণ কাফেরের আত্মা দুনিয়া ছাড়তে চায় না)। আজ তোমাদের নিকৃষ্টতম আযাব দেওয়া হবে’ (আন‘আম ৬/৯৩)।
এই
আয়াত কবরের আযাবের দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমতঃ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو
أَيْدِيهِمْ ‘ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে’ অর্থাৎ তারা আযাবের বেষ্টিত থাকবে এবং
ফেরেশতামন্ডলী তাদের সামনে ও পশ্চাতে প্রহার করতে থাকবে। ইবনু আববাস (রাঃ)
বলেন, এমন পরিস্থিতি মৃত্যুর সময় ঘটবে।البسط ‘প্রসারিত’ বলতে এর দ্বারা
যালেমদের সামনে ও পেছনে প্রহার করা হবে’।[6]
ইমাম তাবারী (রহঃ) বলেন, وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ -এর দ্বারা ফেরেশতামন্ডলী তাদের যেভাবে প্রহার করবে তা মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ ‘অতঃপর কেমন হবে তাদের অবস্থা যখন ফেরেশতারা তাদের মুখে ও পিঠে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে’? (মুহাম্মাদ ৪৭/২৭)।
দ্বিতীয়তঃ
ফেরেশতামন্ডলী মন্দ লোকদের আত্মা কবযের সময় যে বলে, الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ
عَذَابَ الْهُونِ ‘আজ তোমাদের নিকৃষ্টতম আযাব দেওয়া হবে’ এটা হ’ল বারযাখী
জীবন। ইবনু আতিয়া (রহঃ) বলেন, এই বর্ণনাটি ফেরেশতামন্ডলী তাদের জান কবযের
সময় বলে থাকে’।[7]
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى ‘আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবন-জীবিকা সংকুচিত হবে এবং আমরা তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠাব’ (ত্বোয়াহা ২০/১২৪)।
এ
আয়াতের ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বয়ং বলে দিয়েছেন, তোমরা কি জান কি
জন্য এ আয়াত নাযিল হয়েছে। আর مَعِيشَةً ضَنْكًا ‘জীবন-জীবিকা সংকুচিত’ বলতে
কি বুঝ? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা
হ’ল কবরে কাফেরদের শাস্তি’।[8]
মহান আল্লাহ বলেন, وَمِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِنَ الْأَعْرَابِ مُنَافِقُونَ وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مَرَدُوا عَلَى النِّفَاقِ لَا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَى عَذَابٍ عَظِيمٍ- ‘আর তোমাদের আশ-পাশের বেদুঈনদের মধ্যে মুনাফিক রয়েছে এবং মদীনাবাসীদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে মুনাফেকীতে চরম। তুমি তাদেরকে জানো না। আমরা তাদেরকে জানি। আমরা তাদেরকে অবশ্যই দু’বার শাস্তি দেব। অতঃপর তারা মহা শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে’ (তাওবা ৯/১০১)।
ক্বাতাদাহ
বলেন, سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ‘আমরা তাদেরকে অবশ্যই দু’বার শাস্তি
দেব’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল কবরের শাস্তি জাহান্নামে শাস্তি’।[9] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কবরের আযাব ক্বিয়ামতের আযাবের পূর্বেই সংঘটিত হবে’।[10]
মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ- ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে মৃত ভেবো না। বরং তারা জীবিত। তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট হ’তে জীবিকাপ্রাপ্ত হয়’ (আলে ইমরান ৩/১৬৯)। এ আয়াত দ্বারা আল্লাহর পথের শহীদরা যে নে‘মত প্রাপ্ত হবে সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ হাদীছ দ্বারা প্রমাণ :
হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما قَالَ مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى قَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيرٍ، أَمَّا هَذَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَأَمَّا هَذَا فَكَانَ يَمْشِى بِالنَّمِيمَةِ-
আব্দুল্লাহ
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে
যাচ্ছিলেন। এমন সময় বললেন, এদের উভয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোন বড়
পাপের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজন পেশাব থেকে বেঁচে থাকত না। আর
অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) একটা তাজা খেজুর শাখা নিয়ে
সেটিকে দুই ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। ছাহাবীগণ
জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল (ছাঃ) এরূপ কেন করলেন? উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বললেন,
যে পর্যন্ত ডাল দু’টি না শুকায় সে পর্যন্ত তাদের শাস্তি লঘু করা হবে এই
আশায়’।[11]
ইবনু হিববান (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে চোগলখোরীর জন্য কবরে শাস্তির সম্মুখিন হ’তে হয়’।[12] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এ হাদীছে কবরের আযাব হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে’।[13] অপর হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَنَّ يَهُودِيَّةً دَخَلَتْ عَلَيْهَا فَذَكَرَتْ عَذَابَ الْقَبْرِ فَقَالَتْ لَهَا أَعَاذَكِ اللَّهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَسَأَلَتْ عَائِشَةُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَقَالَ نَعَمْ عَذَابُ الْقَبْرِ قَالَتْ عَائِشَةُ رضى الله عنها فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدُ صَلَّى صَلاَةً إِلاَّ تَعَوَّذَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ زَادَ غُنْدَرٌ عَذَابُ الْقَبْرِ حَقٌّ-
হযরত
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, একদিন জনৈকা ইহুদী মহিলা তাঁর নিকটে এল
এবং কবরের আযাব প্রসঙ্গে আলোচনা করল। অতঃপর তাঁকে (দো‘আ করে) মহিলাটি বলল,
আল্লাহ তোমাকে কবরের আযাব হ’তে পানাহ দিন!’ অতঃপর আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে কবরের আযাব বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, হ্যাঁ। কবরের আযাব
সত্য। আয়েশা বলেন, এরপর থেকে আমি এরূপ কখনো দেখিনি যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
ছালাত আদায় করেছেন, অথচ কবরের আযাব হ’তে আল্লাহর নিকটে পানাহ চাননি’।[14]
ইবনু
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মুসলমানসহ সকল জাতি গোষ্ঠী ক্বিয়ামত সংগঠিত হওয়ার
ব্যাপারে একমত। আর মানুষ কবরে প্রোথিত হবে। তথাপি সেখানে শাস্তি ও শান্তি
রয়েছে যা ক্বিয়ামত অবধি চলতে থাকবে। এটি পূর্ববর্তী সালাফে ছালেহীন ও আহলুস
সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অভিমত। তবে কিছু বিদ‘আতপন্থী এটা অস্বীকার করে
থাকে’।[15]
কবরে শাস্তি বা শান্তির সময় আত্মার প্রত্যাবর্তন :
ইবনু
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, কবরের বারযাখী জীবনের শাস্তি বা শান্তি আত্মা ও শরীর
উভয়ের সাথে সংঘটিত হয়, যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অভিমত’।[16]
হযরত বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হ’তে মারফ‘ু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তার শরীরে আত্মা ফিরে আসে।[17]
হযরত
আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الْعَبْدُ
إِذَا وُضِعَ فِى قَبْرِهِ، وَتُوُلِّىَ وَذَهَبَ أَصْحَابُهُ حَتَّى
إِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ فَأَقْعَدَاهُ
‘বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তারা সাথীরা চলে যায়
তখনো সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। এমন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা এসে
তাকে বসিয়ে দেন’।[18]
অনুরূপভাবে
শুধুমাত্র আত্মার উপর শাস্তি বা শান্তি বর্ষিত হয় সেটাও হাদীছ দ্বারা
প্রমাণিত। হযরত কা‘ব বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّمَا نَسَمَةُ الْمُؤْمِنِ طَائِرٌ فِى شَجَرِ الْجَنَّةِ حَتَّى
يَبْعَثَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى جَسَدِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘নিশ্চয় মুমিনদের রূহ জান্নাতের গাছের পাখীর রূপ ধারণ করে থাকবে।
ক্বিয়ামতের দিন তাদের স্বীয় শরীরে পুনঃস্থাপন করা পর্যন্ত।[19]
কবরের আযাব সাময়িক না চিরস্থায়ী :
কবরের আযাব দুই ধরণের : (১) সাময়িক (২) চিরস্থায়ী। যে ব্যক্তির উপর চিরস্থায়ী শাস্তি নির্ধারিত হবে তার উপর ক্বিয়ামত অবধি শাস্তি চলতে থাকবে। আর এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى فِى حُلَّةٍ تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ مُرَجِّلٌ جُمَّتَهُ إِذْ خَسَفَ اللَّهُ بِهِ فَهْوَ يَتَجَلَّلُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘এক ব্যক্তি আকর্ষণীয় জোড়া কাপড় পরিধান করতঃ চুল অাঁচড়াতে অাঁচড়াতে পথ চলছিল। হঠাৎ আল্লাহ তাকে মাটির নীচে ধ্বসিয়ে দেন। ক্বিয়ামত অবধি সে এভাবে ধ্বসে যেতে থাকবে’।[20] এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ক্বিয়ামত অবধি শাস্তি বা শান্তি চলতে থাকবে।
কাফেরদের শাস্তি সাময়িক হবে না। তবে তারা দুই ফুৎকারের মাঝে ঘুমিয়ে পড়বে। মহান আল্লাহ বলেন, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُمْ مِنَ الْأَجْدَاثِ إِلَى رَبِّهِمْ يَنْسِلُونَ قَالُوا يَاوَيْلَنَا مَنْ بَعَثَنَا مِنْ مَرْقَدِنَا هَذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ- ‘আর যখন শিঙ্গায় ফুঁকে দেওয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে উঠে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে আসবে’। ‘তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? দয়াময় (আল্লাহ) তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ তো সত্য কথাই বলেছিলেন’ (ইয়াসীন ৩৬/৫১-৫২)।
ক্বাতাদাহ
(রহঃ) বলেন, قَالُوا يَاوَيْلَنَا مَنْ بَعَثَنَا مِنْ مَرْقَدِنَا ‘তারা
বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো?’ এটা
হ’ল পথভ্রষ্টদের কথা আর الرقد ‘নিদ্রা’ হ’ল দুই ফুৎকারের মাঝে সংঘটিত
হবে’।[21] ইবনু কাছীর বলেন, উবাই ইবনু কাব, মুজাহিদ, হাসান, ক্বাতাদা প্রমুখ বলেছেন, তারা পুনরুত্থানের পূর্বে ঘুমাবে’।[22]
কবরে আযাবের কারণ :
(১) শিরক করা :
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ ‘যদি তুমি দেখতে যখন কাফেররা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে, আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলে, এবার তোমাদের আত্মাগুলিকে (তোমাদের দেহ থেকে) বের করে দাও (কারণ কাফেরের আতমা দুনিয়া ছাড়তে চায় না)। আজ তোমাদের নিকৃষ্টতম আযাব দেওয়া হবে। কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য কথা বলতে এবং তোমরা তাঁর আয়াত সমূহে অহংকার প্রদর্শন করতে’ (আন‘আম ৬/৯৩)।
এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
عَنْ زَيْد بْن ثَابِتٍ قَالَ بَيْنَمَا النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فِى حَائِطٍ لِبَنِى النَّجَّارِ عَلَى بَغْلَةٍ لَهُ وَنَحْنُ مَعَهُ إِذْ حَادَتْ بِهِ فَكَادَتْ تُلْقِيهِ وَإِذَا أَقْبُرٌ سِتَّةٌ أَوْ خَمْسَةٌ أَوْ أَرْبَعَةٌ قَالَ كَذَا كَانَ يَقُولُ الْجُرَيْرِىُّ فَقَالَ مَنْ يَعْرِفُ أَصْحَابَ هَذِهِ الأَقْبُرِ فَقَالَ رَجُلٌ أَنَا قَالَ فَمَتَى مَاتَ هَؤُلاَءِ قَالَ مَاتُوا فِى الإِشْرَاكِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ تُبْتَلَى فِى قُبُورِهَا فَلَوْلاَ أَنْ لاَ تَدَافَنُوا لَدَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِى أَسْمَعُ مِنْهُ-
যায়েদ
বিন ছাবিত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূল (ছাঃ) বনু নাজ্জার
গোত্রের প্রচীর ঘেরা একটি বাগানে তাঁর একটি খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন। এ সময়
আমরাও তার সাথে ছিলাম। হঠাৎ খচ্চরটি লাফিয়ে উঠলো এবং রাসূল্লাহ (ছাঃ)-কে
প্রায় মাটিতে ফেলে দেবার উপক্রম করলো। দেখা গেল, সামনে ছয়টি কিংবা পাঁচটি
অথবা চারটি কবর রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, জুরাইরী (রাঃ) এমনটিই বর্ণনা
করতেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এ কবরবাসীদের কে চিনে? এক ব্যক্তি
বলল, আমি রাসূলুল্লাহ! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এরা কবে মারা গেছে? সে বলল
শিরকের যুগে। রাসূল (ছাঃ) এ উম্মত তথা কবরবাসীরা তাদের কবরে পরীক্ষায়
পড়েছে। তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা ছেড়ে দিবে এ আশংকা না থাকলে আমি
আল্লাহর কাছে দো‘আ করতাম, তিনি যেন তোমাদের কাউকে কবরের আযাব শুনান যে
কবরের আযাব আমি শুনতে পাচ্ছি’...।[23]
(২) মুনাফিকী করা :
নিশ্চয় মুনাফিকরা কাফেরদের চেয়ে বেশী ইসলামের মধ্যে ক্ষতি করে। এজন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তাদের কবরে আগুন প্রজ্জলিত করবেন যেমন তারা দুনিয়াতে ফেৎনার আগুন মুসলিম সমাজে লাগিয়েছিল। মুনাফিকদের কবরে শাস্তি সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
وَإِنْ كَانَ مُنَافِقًا قَالَ سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ فَقُلْتُ مِثْلَهُ لاَ أَدْرِى فَيَقُولاَنِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ ذَلِكَ فَيُقَالُ لِلأَرْضِ الْتَئِمِى عَلَيْهِ فَتَلْتَئِمُ عَلَيْهِ فَتَخْتَلِفُ فِيهَا أَضْلاَعُهُ فَلاَ يَزَالُ فِيهَا مُعَذَّبًا حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ-
‘মৃত লোকটি যদি মুনাফিক হয় তাহ’লে (প্রশ্নের উত্তরে) সে বলবে, তার প্রসঙ্গে লোকেরা একটা কথা বলত আমিও তাই বলতাম। এর বেশী কিছু আমি জানিনা। ফেরেশতা দু’জন তখন বলবেন, আমরা জানতাম এ কথাই তুমি বলবে। তখন যমীনকে বলা হয়, একে চাপ দাও। সুতরাং যমীন তার উপর এমনভাবে চাপা দেবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো পরস্পরের মাঝে ঢুকে পড়বে। সেকারণে সে এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে তার স্থান হ’তে উঠাবেন’।[24]
(৩) আল্লাহর স্মরণে বিমুখ :
মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى ‘আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবন-জীবিকা সংকুচিত হবে এবং আমরা তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠাব’ (ত্বোয়াহা ২০/১২৪)।
(৪) মিথ্যা বলা :
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَدِيدٍ وَإِذَا هُوَ يَأْتِى أَحَدَ شِقَّىْ وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرَهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنَهُ إِلَى قَفَاهُ قَالَ وَرُبَّمَا قَالَ أَبُو رَجَاءٍ فَيَشُقُّ قَالَ ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الْجَانِبِ الآخَرِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالْجَانِبِ الأَوَّلِ-
‘আমরা
চললাম, এরপর আমরা চিৎ হয়ে শোয়া এক লোকের কাছে আসলাম। এখানেও দেখলাম, তার
নিকট এক লোক লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে
এটা দ্বারা মুখমন্ডলের একদিক মাথার পিছন পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে নাসারন্ধ্র
চোখ ও মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। এরপর ঐ লোকটি শায়িত লোকটির অপর
দিকে যায় এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেমন আচরণ করছে তেমন আচরণই অপরদিকের সঙ্গেও
করে। ঐ দিক হ’তে অবসর হ’তে না হ’তেই প্রথম দিকটি আগের মত ভাল হয়ে যায়
তারপর আবার প্রথমবারের মত আচরণ করে...। হাদীছের শেষে এই দৃশ্যের বর্ণনাটি
এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, দু’জন ফেরেশতা রাসূল (ছাঃ)-কে বলেছিলেন, أَمَّا
الرَّجُلُ الَّذِى أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُشَرْشَرُ شِدْقُهُ إِلَى قَفَاهُ
وَمَنْخِرُهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنُهُ إِلَى قَفَاهُ فَإِنَّهُ الرَّجُلُ
يَغْدُو مِنْ بَيْتِهِ فَيَكْذِبُ الْكَذْبَةَ تَبْلُغُ الآفَاقَ ‘আর ঐ
ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে, তার মুখের এক ভাগ মাথার পিছন দিক
পর্যন্ত এমনিভাবে নাসারন্ধ্র ও চোখ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা
হচ্ছিল সে হ’ল ঐ ব্যক্তি, যে সকালে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে যা
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে’।[25]
(৫) সুদ খাওয়া :
এ সম্পর্কে হাদীছ এসেছে,
فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ أَحْمَرَ مِثْلِ الدَّمِ وَإِذَا فِى النَّهَرِ رَجُلٌ سَابِحٌ يَسْبَحُ وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهَرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً كَثِيرَةً وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ مَا يَسْبَحُ ثُمَّ يَأْتِى ذَلِكَ الَّذِى قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ الْحِجَارَةَ فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ فَيُلْقِمُهُ حَجَرًا فَيَنْطَلِقُ يَسْبَحُ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِ كُلَّمَا رَجَعَ إِلَيْهِ فَغَرَ لَهُ فَاهُ فَأَلْقَمَهُ حَجَرًا-
তিনি
(রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমরা চললাম এবং একটা নদীর (তীরে) গিয়ে পৌছলাম। রাবী
বলেন, আমরা যতদূর মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, নদীটি ছিল রক্তের মত লাল। আর
দেখলাম, এই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অন্য এক ব্যক্তি
আছে এবং সে তার কাছে অনেকগুলি পাথর একত্রিত করে রেখেছে। আর ঐ সাতরানো লোকটি
বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সে লোকের কাছে এসে পৌঁছে যে নিজের নিকট পাথর
একত্রিত করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার মুখ খুলে দেয় আর ঐ লোক তার মুখে
একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে চলে যায়, সাঁতার কাটতে থাকে, আবার তার কাছে
ফিরে আসে। যখনই সে তার কাছে ফিরে আসে তখনই সে তার মুখ খুলে দেয় আর ঐ
ব্যক্তি তার মুখে একটা পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এই ঘটনার শেষ হ’ল وَأَمَّا
الرَّجُلُ الَّذِى أَتَيْتَ عَلَيْهِ يَسْبَحُ فِى النَّهَرِ وَيُلْقَمُ
الْحَجَرَ فَإِنَّهُ آكِلُ الرِّبَا ‘ঐ ব্যক্তি যার কাছে পৌঁছে দেখেছিলেন
যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে, সে হ’ল
সুদখোর’।[26]
(৬) যিনা করা :
فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللَّهَبُ ضَوْضَوْا- তিনি (রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমরা চললাম এবং চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল। তিনি বলেন, আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে বের হওয়া আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। এই হাদীছে শেষে বলা হয়েছে, وَأَمَّا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ الْعُرَاةُ الَّذِينَ فِى مِثْلِ بِنَاءِ التَّنُّورِ فَإِنَّهُمُ الزُّنَاةُ وَالزَّوَانِى ‘আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের ভিতর আছে তারা হ’ল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর দল।[27]
(৭-৮) ফরয ছালাতের সময় ঘুমানো এবং কুরআন শিক্ষার পর ত্যাগ করা :
وَإِنَّا
أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ، وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ
بِصَخْرَةٍ، وَإِذَا هُوَ يَهْوِى بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ، فَيَثْلَغُ
رَأْسَهُ فَيَتَهَدْهَدُ الْحَجَرُ هَا هُنَا، فَيَتْبَعُ الْحَجَرَ
فَيَأْخُذُهُ، فَلاَ يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأْسُهُ كَمَا
كَانَ، ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ، فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ
الْمَرَّةَ الأُولَى-‘আমরা কাত হয়ে শুয়ে থাকা এক লোকের কাছে আসলাম। দেখলাম,
অন্য এক লোক তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে তার মাথায় পাথার
নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর পাথর নিচে গিয়ে পড়ছে। এরপর
আবার সে পাথরটি অনুসরণ করে তা আবার নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির
মাথা আগের মত আবার ভাল যায়। ফিরে আসে আবার তেমনি আচরণ করে, যা পূর্বে
প্রথমবার করেছিল...। এ হাদীছের শেষে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَمَّا الرَّجُلُ
الأَوَّلُ الَّذِى أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُثْلَغُ رَأْسُهُ بِالْحَجَرِ،
فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَأْخُذُ الْقُرْآنَ فَيَرْفُضُهُ وَيَنَامُ عَنِ
الصَّلاَةِ الْمَكْتُوبَةِ ‘ঐ যে প্রথম ব্যক্তি যার কাছে আপনি পৌঁছেছিলেন,
যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হ’ল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন
গ্রহণ করে তা ছেড়ে দিয়েছে। আর ফরয ছালাত ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে’।[28]
(৯) অহংকার বশত টাখনুর নীচে কাপড় পরা :
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,بَيْنَمَا رَجُلٌ يَجُرُّ إِزَارَهُ مِنَ الْخُيَلاَءِ خُسِفَ بِهِ فَهْوَ يَتَجَلْجَلُ فِى الأَرْضِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ এক ব্যক্তি গর্ব ও অহংকারের সাথে লুঙ্গি টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পথ চলছিল। এই অবস্থায় তাকে যমীনে ধসয়ে দেয়া হ’ল এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত সে এমনি অবস্থায় নীচের দিকেই যেতে থাকবে’।[29]
অপর
হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى فِى حُلَّةٍ
تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ مُرَجِّلٌ جُمَّتَهُ إِذْ خَسَفَ اللَّهُ بِهِ ،
فَهْوَ يَتَجَلَّلُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘এক ব্যক্তি আকর্ষণীয় জোড়া
কাপড় পরিধান করতঃ চুল অাঁচড়াতে অাঁচড়াতে পথ চলছিল; হঠাৎ আল্লাহ তাকে মাটির
নীচে ধ্বসিয়ে দেন। ক্বিয়ামত অবধি সে এভাবে ধ্বসে যেতে থাকবে’।[30]
(১০) কোন প্রাণীকে বেঁধে শাস্তি দেওয়া :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, عُرِضَتْ عَلَىَّ النَّارُ فَرَأَيْتُ فِيهَا امْرَأَةً مِنْ بَنِى إِسْرَائِيلَ تُعَذَّبُ فِى هِرَّةٍ لَهَا رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ...‘আমার সামনে জাহান্নাম পেশ করা হয়েছিল। সেখানে বনী ইসরাঈলের একটি মহিলাকে দেখতে পেলাম। তাকে একটা বিড়ালের কারণে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল, খানাপানি কিছু দেয়নি। আর ছেড়েও দেয়নি যে তা যমীনের পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করত’।[31]
(১১) ঋণ পরিশোধ না করা :
ঋণ
পরিশোধ না করলে কবরে যে শাস্তি হবে তার প্রমাণে হাদীছে এসেছে,عَنْ سَعْدِ
بْنِ الأَطْوَلِ أَنَّ أَخَاهُ مَاتَ وَتَرَكَ ثَلاَثَمِائَةِ دِرْهَمٍ
وَتَرَكَ عِيَالاً فَأَرَدْتُ أَنْ أُنْفِقَهَا عَلَى عِيَالِهِ فَقَالَ
النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَخَاكَ مُحْتَبَسٌ بِدَيْنِهِ
فَاقْضِ عَنْهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ أَدَّيْتُ عَنْهُ إِلاَّ
دِينَارَيْنِ ادَّعَتْهُمَا امْرَأَةٌ وَلَيْسَ لَهَا بَيِّنَةٌ قَالَ
فَأَعْطِهَا فَإِنَّهَا مُحِقَّةٌ- সা‘দ ইবনু আতওয়াল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
তার ভাই ইন্তিকাল করেন এবং তিনশত দিরহাম ও কতক অসহায় সন্তান রেখে যান। আমি
সেগুলি তার সন্তানদের জন্য খরচ করতে মনস্থ করলাম। নবী (ছাঃ) বললেন, তোমার
ভাই দেনার কারণে আটক রয়েছে। অতএব তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করো। সা‘দ (রাঃ)
বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! আমি তার পক্ষ থেকে সব দেনা পরিশোধ করেছি,
কেবল এক মহিলার দাবীকৃত দু’টি দীনার বাকী আছে। কিন্তু তার কাছে কোন প্রমাণ
নেই। তিনি বললেন, তাকে দিয়ে দাও, কারণ সে সত্যবাদিনী’।[32]
(১২) মাইয়েতের জন্য অসঙ্গতভাবে কাঁদা :
রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبَعْضِ بُكَاءِ أَهْلِهِ
عَلَيْهِ ‘মৃত ব্যক্তির জন্য তার আপনজনের কোন কোন কান্নার কারণে অবশ্যই
তাকে আযাব দেয়া হয়।[33] অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ
بِبُكَاءِ الْحَىِّ إِذَا قَالُوا وَاعَضُدَاهْ وَاكَاسِيَاهْ.
وَانَاصِرَاهْ وَاجَبَلاَهْ وَنَحْوَ هَذَا يُتَعْتَعُ وَيُقَالُ أَنْتَ
كَذَلِكَ أَنْتَ كَذَلِكَ ‘জীবিতদের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি
দেয়া হয়, যখন তারা বলে হে আমাদের বাহুদয়, হে আমাদের ভরণপোষণের
সংস্থাপনকারী, হে আমাদের সাহায্যকারী, হে আমাদের পাহাড়সম পরমাত্মীয়
ইত্যাদি’।[34]
(১৩) রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা :
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيْبَرَ أَقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ صَحَابَةِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا فُلاَنٌ شَهِيدٌ فُلاَنٌ شَهِيدٌ حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ فَقَالُوا فُلاَنٌ شَهِيدٌ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَلاَّ إِنِّى رَأَيْتُهُ فِى النَّارِ فِى بُرْدَةٍ غَلَّهَا أَوْ عَبَاءَةٍ-
‘খায়বারে
অমুক অমুক শহীদ হয়েছেন। অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে তারা বললেন যে, সেও
শহীদ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, কখনই না। গনীমতের মাল থেকে চাদর
আত্মসাৎ করার কারণে আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি’।[35]
(১৪) চুরি করা :
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيهَا صَاحِبَ الْمِحْجَنِ يَجُرُّ
قُصْبَهُ فِى النَّارِ كَانَ يَسْرِقُ الْحَاجَّ بِمِحْجَنِهِ فَإِنْ
فُطِنَ لَهُ قَالَ إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِى وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ
ذَهَبَ بِهِ- ‘আমি জাহান্নামের মধ্যে লৌহশলাকাধারীকে (আমর ইবনু মালিক)
দেখলাম সে জাহান্নামের মধ্যে নিজের নাড়ীভুঁড়ি টানছে। এক ব্যক্তিকে দেখলাম
যে, নিজ লাঠি দ্বারা হজ্জ যাত্রীদের মালপত্র চুরি করত। এরপর যদি ধরা পড়ে
যেত তখন বলত আহ! আমার শলাকার সাথে লেগে গেছে। আর কেউ অসাবধান থাকলে তা নিয়ে
যেত’।[36]
(১৫) বিনা কারণে রামাযানের ছিয়াম ভঙ্গ করা :
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘একদা আমি ঘুমন্ত ছিলাম। তখন দু’জন ব্যক্তি আমার নিকট আসল। তারা আমার দু’বাহু ধরে একটি পাহাড়ের নিকট নিয়ে আসল। বলল, পাহাড়ে আরোহণ করুন। আমি বললাম, আমি চড়তে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সহযোগিতা করছি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তখন আমি আরোহণ করলাম। এমনকি আমি প্রায় পাহাড়ের সমতল স্থানে পৌঁছে গেলাম। পথিমধ্যে আমি একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি বললাম, এটি কিসের শব্দ। তারা বলল, এটা জাহান্নামবাসীদের আর্তনাদ। অতঃপর আমাকে সামনে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে হাঁটুর সাথে ঝুলন্ত চোয়াল বিদীর্ণ করা কিছু লোক দেখতে পেলাম যাদের চোয়াল থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা হচ্ছে ঐ সকল লোক যারা ছিয়াম থেকে হালাল হওয়ার পূর্বে তথা ইফতারের সময় হওয়ার পূর্বে ইফতার করত’।[37]
(১৬) বিনা কারণে সন্তানকে দুধ না দেওয়া :
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
ثُمَّ انْطَلَقَ بِي فَإِذَا أَنَا بِنِسَاءٍ تَنْهَشُ ثُدِيَّهُنَّ الْحَيَّاتُ قُلْتُ مَا بَالُ هَؤُلاَءِ قَالَ هَؤُلاَءِ يَمْنَعْنَ أَوْلاَدَهُنَّ أَلْبَانَهُنَّ ‘অতঃপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হ’ল। সেখানে কিছু নারীকে দেখলাম যাদেরকে সর্প তাদের স্তনে দংশন করছে। আমি বললাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা ঐ সমস্ত মহিলা যারা তাদের সন্তানদের দুধদানে বিরত ছিল’।[38]
(১৭) ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া, কিন্তু নিজে না করা :
এ
সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِى رِجَالاً
تُقْرَضُ شِفَاهُهُمْ بِمَقَارِيضَ مِنْ نَارٍ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَنْ
هَؤُلاَءِ قَالَ هَؤُلاَءِ خُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ يَأْمُرُونَ النَّاسَ
بِالْبِرِّ وَيَنْسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتَابَ
أَفَلاَ يَعْقِلُونَ ‘মিরাজের রজনীতে আমি এমন লোকদের দেখেছি যাদের ঠোট
আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল। অতঃপর আমি বললাম, হে জিবরাইল! এরা কারা?
তিনি বললেন, এরা দুনিয়ার বক্তারা, যারা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিত কিন্তু
নিজেরা তা ভুলে থাকত। তারা কিতাব (কুরআন) তেলাওয়াত করত কিন্তু অনুধাবন করত
না’।[39]
(১৮) পেশাব থেকে সতর্ক না থাকা ও মানুষের মাঝে চোগলখুরী করা :
এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ النَّبِىّ صلى الله عليه وسلم بِقَبْرَيْنِ فَقَال إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيرٍ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِى بِالنَّمِيمَةِ ثُمَّ أَخَذَ جَرِيدَةً رَطْبَةً فَشَقَّهَا نِصْفَيْنِ فَغَرَزَ فِى كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ فَعَلْتَ هَذَا قَالَ لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيبَسَاْ-
আব্দুল্লাহ
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে
যাচ্ছিলেন। এমন সময় বললেন, এদের উভয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোন বড়
পাপের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজন পেশাব থেকে বেঁচে থাকত না। আর
অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত’। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) একটা তাজা খেজুর শাখা নিয়ে
সেটাকে দুই ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। ছাহাবীগণ
জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল (ছাঃ) এইরূপ কেন করলেন? উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বললেন,
যে পর্যন্ত ডাল দু’টি না শুকায় সে পর্যন্ত তাদের শাস্তি লঘু করা হবে এই
আশায়’।[40]
(১৯) কথার মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেওয়া :
রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন,هَذَانِ رَجُلانِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا عَذَابًا
شَدِيدا فِي ذَنْب هَين قُلْنَا فيمَ ذَاك قَالَ أَحَدُهُمَا لَا
يَسْتَنْزِهُ مِنَ الْبَوْلِ وَكَانَ الآخَرُ يُؤْذِي النَّاسَ
بِلِسَانِهِ وَيَمْشِي بَيْنَهُمْ بِالنَّمِيمَةِ ‘এই দু’জন ব্যক্তিকে
তুচ্ছ পাপের কারণে তাদের কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আমরা বললাম, সেটা কি হে
আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তাদের একজন পেশাব থেকে বেঁচে থাকত না। অপরজন
হ’ল সে তার কথা দ্বারা মানুষকে কষ্ট দিত এবং চোগলখোরী করে বেড়াত’। [41]
(২০) পরনিন্দা করা :
রাসূল
(ছাঃ)-এর অপর এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে এভাবে যে, وَمَا يُعَذَّبَانِ إِلاَّ
فِى الْبَوْلِ وَالْغِيبَةِ ‘তাদেরকে কেবল পেশাব ও পরনিন্দার কারণে শাস্তি
দেওয়া হচ্ছে’।[42]
(ক্রমশ)
[লেখক : মাস্টার্স, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]
[1]. ফৎহুল বারী, ৩/২৩৩ পৃঃ।
[2]. বুখারী হা/৩৪৮১; মিশকাত হা/২৩৬৯।
[3]. মাজমু‘ ফাতাওয়া ৪/২৮৫।
[4]. তা’বীলু মুখতালিফিল হাদীছ, ২২৭ পৃঃ।
[5]. তাফসীরে কুরতুবী ১৫/৩১৯।
[6]. তাফসীরে তাবারী ১১/৫৩৭ পৃঃ।
[7]. আল-মুহার্রারুল আযীয ফি তাফসীরিল কিতাবিল আযীয ২/৩২৩।
[8]. ইবনু হিববান ৮/৩৯৩; ইবনু কাছীর ৫/৩২৪পৃঃ ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ৩/২১৭ পৃঃ।
[9]. ইছবাতু আযাবিল কবর ৫৬ পৃঃ।
[10]. প্রাগুক্ত, ৬৩ পৃঃ।
[11]. বুখারী হা/৬০৫২; মিশকাত হা/৩৩৮।
[12]. ছহীহ ইবনু হিববান ৭/৩৯৮পৃঃ।
[13]. আল-মিনহাজ শরহু ছহীহিল মুসলিম ৩/২০২ পৃঃ।
[14]. বুখারী হা/১৩৭২; মুসলিম হা/৯০৩; নাসাঈ হা/২০৬৫; মিশকাত হা/১২৮।
[15]. মাজমু‘ ফাতওয়া ৪/২৬২ পৃঃ।
[16]. প্রাগুক্ত, ৪/২৭২ পৃঃ।
[17]. প্রাগুক্ত, ৫৩ পৃঃ।
[18]. বুখারী হা/১৩৩৮।
[19]. নাসাঈ হা/২০৭৩; আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
[20]. বুখারী হা/৫৭৮৯।
[21]. তাফসীরে তাবারী ২০/৫৩২পৃঃ।
[22]. ইবনু কাছীর ৬/৫৮১পৃঃ।
[23]. মুসলিম হা/২৮৬৭ (৬৭)।
[24]. তিরমিযী হা/১০৭১; ছহীহাহ হা/১৩৯১; মিশকাত হা/১৩০।
[25]. বুখারী হা/৭০৪৭।
[26]. প্রাগুক্ত।
[27]. প্রাগুক্ত।
[28]. প্রাগুক্ত।
[29]. বুখারী হা/৩৪৮৫।
[30]. বুখারী হা/৫৭৮৯।
[31]. মুসলিম হা/৯ (৯০৪)।
[32]. ইবনু মাজাহ হা/২৪৩৩; আহমাদ হা/২০০৮০।
[33]. বুখারী হা/১২৮৭।
[34]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৯৪; আলবানী হাদীছটিকে হাসান বলেছেন।
[35]. মুসলিম হা/১৮২ (১১৪)।
[36]. মুসলিম হা/১০ (৯০৪)।
[37]. হাকেম হা/ ১৫৬৮; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭৪৯১।
[38]. হাকেম হা/ ২৮৩৭; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭৪৯১।
[39]. ছহীহাহ হা/২৯১; ছহীহুল জামে‘ হা/১১৯।
[40]. বুখারী হা/২১৮; মুসলিম হা/১১১ (২৯২); মিশকতা হা/৩৩৮।
[41]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৮২৪।
[42]. আহমাদ হা/২০৩৮৯; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৮৪১।