মূল্যহীন দুনিয়ার প্রতি অনর্থক ভালোবাসা (৩য় কিস্তি)

আব্দুর রহীম 2638 বার পঠিত

মানুষ যদি দুনিয়া সম্পর্কে বাস্তব সত্যটি বুঝত তাহ’লে দুনিয়ার এই মায়া জালে আটকে যেত না। কাড়ি কাড়ি টাকা, পাহাড় সম সম্পদের স্বপ্নজাল মানুষ বুনত না। জীবন বাতাসে দোল খাওয়া কচুর পাতার পানির মতই। একদিন এ দুরন্তপনা থাকবে না, থাকবে না অথৈ সম্পদের মিছে মায়া। হিসাবহীন দুনিয়া মানুষের পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ের মোক্ষম সময়। হঠাৎ একদিন সবকিছু ফেলে পরকালে পাড়ি জমাতে হবে, যেখানে শুধু হিসাব আর হিসাব। শাস্তি নতুবা শান্তি। সেজন্য এই দুনিয়ায় অধিক সম্পত্তি পাওয়ার নেশায় মত্ত হওয়া যাবে না। হাদীছে অধিক সম্পদ প্রাপ্তির নেশাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে,

عن عَلِيّ بْن أَبِي طَالِبٍ، يَقُولُ: إِنَّا لَجُلُوسٌ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي المَسْجِدِ إِذْ طَلَعَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ مَا عَلَيْهِ إِلَّا بُرْدَةٌ لَهُ مَرْقُوعَةٌ بِفَرْوٍ فَلَمَّا رَآهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَكَى لِلَّذِي كَانَ فِيهِ مِنَ النِّعْمَةِ وَالَّذِي هُوَ اليَوْمَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَيْفَ بِكُمْ إِذَا غَدَا أَحَدُكُمْ فِي حُلَّةٍ وَرَاحَ فِي حُلَّةٍ وَوُضِعَتْ بَيْنَ يَدَيْهِ صَحْفَةٌ وَرُفِعَتْ أُخْرَى وَسَتَرْتُمْ بُيُوتَكُمْ كَمَا تُسْتَرُ الكَعْبَةُ ؟ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مِنَّا اليَوْمَ نَتَفَرَّغُ لِلْعِبَادَةِ وَنُكْفَى المُؤْنَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَأَنْتُمُ اليَوْمَ خَيْرٌ مِنْكُمْ يَوْمَئِذٍ-

আলী ইবনু আবু তালিব (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ)-এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় চামড়কয় তালিযুক্ত একটি ছেড়া চাঁদর গায়ে জড়িয়ে মুসআ‘ব ইবনু উমায়ের (রাঃ) এসে আমাদের সামনে হাযির হন। রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) তার বর্তমান করুণ অবস্থা দেখে এবং তার পূর্বের স্বচ্ছল অবস্থার কথা মনে করে কেঁদে ফেললেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সে সময় তোমাদের কি অবস্থা হবে, যখন তোমাদের কেউ সকালে এক জোড়া পোশাক পরবে আর বিকেলে পরবে অন্য জোড়া। আর তার সামনে খাদ্যভর্তি একটি পেয়ালা রাখা হবে আর অন্যটি উঠিয়ে নেয়া হবে। তোমরা তোমাদের ঘরগুলো এমনভাবে পর্দায় ঢেকে রাখবে, যেভাবে কা'বা ঘরকে গেলাফে ঢেকে রাখা হয়। ছাহাবীগণ আরয করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো তখন বর্তমানের চাইতে অনেক স্বচ্ছল থাকব। বিপদাপদ ও অভাব-অনটন হ’তে নিরাপদ থাকব। ফলে ইবাদত-বন্দেগীর জন্য যথেষ্ট অবসর পাব। রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) বললেন; বরং বর্তমানটাই তোমাদের জন্য তখনকার তুলনায় অনেক ভালো’।[1]  অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ : نَظَرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْجُوعِ فِي وجُوهِ أَصْحَابِهِ، فَقَالَ : أَبْشِرُوا، فَإِنَّهُ سَيَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ يُغْدَى عَلَى أَحَدِكُمْ بِالْقَصْعَةِ مِنَ الثَّرِيدِ وَيُرَاحُ عَلَيْهِ بِمِثْلِهَا ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ، نَحْنُ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ، قَالَ : بَلْ ، أَنْتُمُ الْيَوْمَ خَيْرٌ مِنْكُمْ يَوْمَئِذٍ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) তার ছাহাবীগণের চেহারায় ক্ষুধার্তের ছাপ লক্ষ্য করলেন। তিনি বললেন, তোমরা শুভ সংবাদ গ্রহণ কর। খুব শীঘ্রই তোমার নিকট এমন অবস্থা আসবে যে, সকালে এক  পেয়ালা ছারীদ দেওয়া হবে এবং বিকালে আবার অনুরূপ কিছু দেওয়া হবে। ছাহাবীগণ আরয করেন, হে আল্ল­াহর রাসূল! আমরা তো তখন বর্তমানের চাইতে অনেক স্বচ্ছল থাকব (বিপদাপদ ও অভাব-অনটন হ’তে নিরাপদ থাকব। ফলে ইবাদত বন্দেগীর জন্য যথেষ্ট অবসর পাব)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, বরং বর্তমানটাই তোমাদের জন্য তখনকার তুলনায় অনেক ভালো’।[2] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، دَخَلَ عَلَى بِلَالٍ وَعِنْدَهُ صُبْرَةٌ مِنْ تَمْرٍ، فَقَالَ: مَا هَذَا يَا بِلَالُ ؟  قَالَ: تَمْرٌ ادَّخَرْتُهُ، قَالَ: أَمَا تَخْشَى يَا بِلَالُ، أَنْ يَكُونَ لَهُ بُخَارٌ فِي نَارِ جَهَنَّمَ ؟ أَنْفِقْ بِلَالُ وَلَا تَخْشَ مِنْ ذِي الْعَرْشِ إِقْلَالًا-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নবী করীম (ছাঃ) (পীড়িত) বেলাল (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন। বেলাল তাঁর জন্য এক স্তূপ খেজুর বের করলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে বেলাল! একি?! বেলাল বললেন, আমি আপনার জন্য ভরে রেখেছিলাম, হে আল্ল­াহর রাসূল! তিনি বললেন, তুমি কি ভয় কর না যে, তোমার জন্য জাহান্নামের আগুনে বাষ্প তৈরী করা হবে? হে বেলাল! তুমি খরচ করে যাও। আর আরশ-ওয়ালার নিকটে (মাল) কম হয়ে যাওয়ার ভয় করো না’।[3]  পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি এবং অসহায় ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য কিছু সম্পদ আগামী দিনের জন্য সঞ্চয় করে রাখা একদম অবৈধ নয়। কিন্তু অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে সবটুকু খরচের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে বেলাল (রাঃ) মানবীয় গুণাবলীর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছতে পারেন। অন্যত্র এসেছে,

عَنْ أَبِي حَرْبٍ، أَنَّ طَلْحَةَ حَدَّثَهُ، وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: أَتَيْتُ الْمَدِينَةَ وَلَيْسَ لِي بِهَا مَعْرِفَةٌ، فَنَزَلْتُ فِي الصُّفَّةِ مَعَ رَجُلٍ فَكَانَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ كُلَّ يَوْمٍ مُدٌّ مِنْ تَمْرٍ، فَصَلَّى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ الصُّفَّةِ: يَا رَسُولَ اللهِ أَحْرَقَ بُطُونَنَا التَّمْرُ، وَتَخَرَّقَتْ عَنَّا الْخُنُفُ، فَصَعِدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَخَطَبَ ثُمَّ قَالَ: وَاللهِ: لَوْ وَجَدْتُ خُبْزًا، أَوْ لَحْمًا لَأَطْعَمْتُكُمُوهُ، أَمَا إِنَّكُمْ تُوشِكُونَ أَنْ تُدْرِكُوا، وَمَنْ أَدْرَكَ ذَاكَ مِنْكُمْ أَنْ يُرَاحَ عَلَيْكُمْ بِالْجِفَانِ، وَتَلْبَسُونَ مِثْلَ أَسْتَارِ الْكَعْبَةِ، قَالَ: فَمَكَثْتُ أَنَا وَصَاحِبِي ثَمَانِيَةَ عَشَرَ يَوْمًا وَلَيْلَةً، مَا لَنَا طَعَامٌ إِلَّا الْبَرِيرَ، حَتَّى جِئْنَا إِلَى إِخْوَانِنَا مِنَ الْأَنْصَارِ فَوَاسَوْنَا وَكَانَ خَيْرَ مَا أَصَبْنَا هَذَا التَّمْرُ-

আবু হারব হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, তালহা বর্ণনা করেন, যিনি রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবী ছিলেন। আমি মদীনায় আসলাম। সেখানে কেউ আমার পরিচিত ছিল না। একজন লোকের সাথে আমি ছুফ্ফার সদস্য হলাম। প্রতিদিন তার সাথে আমার এক মুদ খেজুরে অংশীদার করা হত। একদিন রাসূল (ছাঃ) ছালাত পড়ালেন। সালাম ফিরালে একজন ছুফফা সদস্য বলল, হে আল্লাহর রাসূল! খেজুর আমাদের পেটকে পুড়িয়ে দিল এবং বক্ষ বিদীর্ণ করে দিল। রাসূল (ছাঃ) মেম্বারে আরোহণ করে খুৎবায় বললেন, আল্লাহর কসম আমার নিকট যদি রুটি বা গোশত থাকত অবশ্যই তোমাদের খাওয়াতাম। তবে জেনে রেখ, খুব শীঘ্রই এটা পাবে। তোমাদের মধ্যে যারা সে সময় পাবে, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় পেয়ালা ভর্তি খাবার পরিবেশন করা হবে এবং কা‘বার পর্দার ন্যায় দামী পোষাক পরিধান করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এবং আমার সাথী সেখানে আঠার দিন অবস্থান করলাম। সেসময়ে আমাদের ভাগ্যে আরাক (কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ) বৃক্ষের ফল ব্যতীত কোন কিছু জুটেনি। এরপর যখন আনছারী ভাইদের নিকট আসলাম এবং তাদের সাথে সমন্বয় হ’ল তখন সেখানে যা পেয়েছিলাম তার মধ্যে খেজুরই শ্রেষ্ঠ ছিল’।[4]  অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,  إِنَّهَا سَتُفْتَحُ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا حَتَّى تُنَجِّدُوا بُيُوتَكُمْ كَمَا تُنَجَّدُ الْكَعْبَةُ قُلْنَا: وَنَحْنُ عَلَى دِينِنَا الْيَوْمَ قَالَ: وَأَنْتُمْ عَلَى دِينِكُمُ الْيَوْمَ. قُلْنَا: فَنَحْنُ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ أَمِ الْيَوْمَ قَالَ: بَلْ أَنْتُمُ الْيَوْمَ خَيْرٌ. ‘তোমাদের জন্য দুনিয়ার ধনভান্ডার খুলে দেওয়া হবে। ফলে তোমরা তোমাদের বাড়ি-ঘরগুলোকে নতুন করে সাজাবে যেভাবে কা‘বাকে প্রতি বছর নতুনভাবে সাজানো হয়। আমরা বললাম, আমরা কি আজকের এই দ্বীনের উপর থাকব? তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের আজকের দ্বীনের উপরেই থাকবে। আমরা বললাম, তাহ’লে আমরা সেসময়ে ভালো থাকব নাকি বর্তমানে ভালো অবস্থায় রয়েছি? তিনি বললেন, বরং বর্তমানটাই তোমাদের জন্য তখনকার তুলনায় অনেক ভালো’।[5]  অন্যত্র এসেছে,

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: دُعِيَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ إِلَى طَعَامٍ، فَلَمَّا جَاءَ رَأَى الْبَيْتَ مُنَجَّدًا، فَقَعَدَ خَارِجًا وَبَكَى قَالَ: فَقِيلَ لَهُ: مَا يُبْكِيكَ؟ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا شَيَّعَ جَيْشًا بَلَغَ عَقَبَةَ الْوَدَاعِ قَالَ: أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكُمْ وَأَمَانَتَكُمْ وَخَوَاتِمَ أَعْمَالِكُمْ قَالَ: فَرَأَى رَجُلًا ذَاتَ يَوْمٍ قَدْ رَقَعَ بُرْدًا لَهُ بِقِطْعَةٍ، فَاسْتَقْبَلَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَقَالَ: هَكَذَا، وَمَدَّ يَدَيْهِ وَمَدَّ عَفَّانُ يَدَيْهِ وَقَالَ: تَطَالَعَتْ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، أَيْ أَقْبَلَتْ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنْ تَقَعَ عَلَيْنَا، ثُمَّ قَالَ: أَنْتُمُ الْيَوْمَ خَيْرٌ أَمْ إِذَا غَدَتْ عَلَيْكُمْ قَصْعَةٌ وَرَاحَتْ أُخْرَى، وَيَغْدُو أَحَدُكُمْ فِي بُرْدَةٍ وَيَرُوحُ فِي أُخْرَى، وَتَسْتُرُونَ بُيُوتَكُمْ كَمَا تُسْتَرُ الْكَعْبَةُ " فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ: أَفَلَا أَبْكِي فَقَدْ بَقِيتُ حَتَّى تَسْتُرُونَ بُيُوتَكُمْ بِهِ كَمَا تُسْتَرُ الْكَعْبَةُ-

মুহাম্মাদ বিন কা‘ব হ‘তে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্ল­াহ ইবনু ইয়াযিদকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হ’ল। তিনি এসে দেখলেন, বাড়িকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। বাইরে বসে কান্না শুরু করলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল কেন আপনি কাঁদছেন? তিনি বললেন, রাসূল (ছাঃ) যখন কোন সৈন্যদলকে বিদায় জানাতেন তখন তিনি বিদায় স্থানে গিয়ে বলতেন, أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكُمْ وَأَمَانَتَكُمْ وَخَوَاتِيمَ أَعْمَالِكُمْ- অর্থ : ‘তোমাদের দ্বীন, তোমাদের আমানত এবং তোমাদের শেষ আমল আল্ল­াহর নিকট সোপর্দ করলাম’। তিনি একদিন জনৈক লোককে দেখলেন, তার চাদরটি ছিড়ে টুকরো করে সূর্যালোক পড়ে এমন স্থানে আসলেন। আর এভাবে হস্ত সম্প্রসারিত করলেন এবং দুই হাত উঁচুতে প্রসারিত করে বললেন, দুনিয়া তোমাদের উপর উদিত হবে/আগমন করবে- একথাটি তিনবার বললেন, অর্থাৎ আগমন করবে। আমি ধারণা করছিলাম দুনিয়া সত্যিই আমাদের উপর পড়ে যাবে।  তিনি বললেন, বর্তমানটাই তোমাদের জন্য অনেক ভালো নাকি যখন তোমাদের নিকট সকাল-সন্ধ্যা পেয়ালা ভর্তি খাবারের আগমন ঘটবে, সকালে এক পোষাক পরে বের হবে ও বিকালে আরেক পোষাক পরে ফিরবে এবং তোমাদের বাড়িগুলোকে কা‘বাকে সাজানোর ন্যায় সাজাবে তখন উত্তম হবে? তখন আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযিদ বললেন, তাহ’লে আমি কেন কাঁদব না? আমি বেঁচে আছি আর তোমরা কা‘বাকে নতুনভাবে পর্দা পরানোর ন্যায় তোমাদের বাড়িগুলোকে পর্দা পরিয়েছ? [6]  অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنِ الأَحْنَفِ بْنِ قَيْسٍ قَالَ قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فَبَيْنَا أَنَا فِى حَلْقَةٍ فِيهَا مَلأٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ أَخْشَنُ الثِّيَابِ أَخْشَنُ الْجَسَدِ أَخْشَنُ الْوَجْهِ فَقَامَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ بَشِّرِ الْكَانِزِينَ بِرَضْفٍ يُحْمَى عَلَيْهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ فَيُوضَعُ عَلَى حَلَمَةِ ثَدْىِ أَحَدِهِمْ حَتَّى يَخْرُجَ مِنْ نُغْضِ كَتِفَيْهِ وَيُوضَعُ عَلَى نُغْضِ كَتِفَيْهِ حَتَّى يَخْرُجَ مِنْ حَلَمَةِ ثَدْيَيْهِ يَتَزَلْزَلُ قَالَ فَوَضَعَ الْقَوْمُ رُءُوسَهُمْ فَمَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنْهُمْ رَجَعَ إِلَيْهِ شَيْئًا، قَالَ: فَأَدْبَرَ وَاتَّبَعْتُهُ حَتَّى جَلَسَ إِلَى سَارِيَةٍ فَقُلْتُ مَا رَأَيْتُ هَؤُلاَءِ إِلاَّ كَرِهُوا مَا قُلْتَ لَهُمْ. قَالَ إِنَّ هَؤُلاَءِ لاَ يَعْقِلُونَ شَيْئًا إِنَّ خَلِيلِى أَبَا الْقَاسِمِ صلى الله عليه وسلم دَعَانِى فَأَجَبْتُهُ فَقَالَ : أَتَرَى أُحُدًا. فَنَظَرْتُ مَا عَلَىَّ مِنَ الشَّمْسِ وَأَنَا أَظُنُّ أَنَّهُ يَبْعَثُنِى فِى حَاجَةٍ لَهُ فَقُلْتُ أَرَاهُ. فَقَالَ : مَا يَسُرُّنِى أَنَّ لِى مِثْلَهُ ذَهَبًا أُنْفِقُهُ كُلَّهُ إِلاَّ ثَلاَثَةَ دَنَانِيرَ. ثُمَّ هَؤُلاَءِ يَجْمَعُونَ الدُّنْيَا لاَ يَعْقِلُونَ شَيْئًا. قَالَ قُلْتُ مَا لَكَ وَلإِخْوَتِكَ مِنْ قُرَيْشٍ لاَ تَعْتَرِيهِمْ وَتُصِيبُ مِنْهُمْ. قَالَ لاَ وَرَبِّكَ لاَ أَسْأَلُهُمْ عَنْ دُنْيَا وَلاَ أَسْتَفْتِيهِمْ عَنْ دِينٍ حَتَّى أَلْحَقَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ.

আহনাফ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসার পর একদা কুরাইশদের এক সমাবেশে বসা ছিলাম। সেখানে তাদের (গোত্রীয় নেতা) দলপতিও উপস্থিত ছিল। এমন সময় মোটা কাপড় পরিহিত সুঠাম দেহের অধিকারী ও রুক্ষ চেহারার এক ব্যক্তি আসল। এসে দাঁড়িয়ে বলল, সম্পদ কুক্ষিগতকারীদের সুসংবাদ দাও যে, একটি পাথর জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে, তাদের কারো বুকের মাঝখানে রাখা হবে। এমনকি তার কাঁধের হাড় ভেদ করে বেরিয়ে যাবে এবং কাঁধের হাড়ের উপর রাখা হ’লে তা স্তনের বোটা ভেদ করে বেরিয়ে যাবে এবং পাথরটি (আগুনের উত্তাপের ফলে) কাঁপতে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, উপস্থিত লোকেরা সবাই মাথা নত করে থাকল এবং তার বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে কাউকে কিছু বলতে দেখলাম না। অতঃপর সে পেছন দিকে ফিরে এসে একটি খুঁটির কাছে বসে পড়ল, আমিও তাকে অনুসরণ করলাম। অর্থাৎ তার কাছে এসে বসলাম। তারপর আমি বললাম যে, এরা তো তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছে বলে আমি দেখতে পাচ্ছি। তিনি (উত্তরে) বললেন, এরা (দ্বীন সম্পর্কে) কিছুই বোঝে না বা জ্ঞান রাখে না। আমার বন্ধুবর আবুল কাসিম (ছাঃ) একবার আমাকে ডাকলেন এবং আমি উপস্থিত হলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তুমি ওহুদ পাহাড় দেখতে পাচ্ছ? আমি তখন সূর্যের দিকে আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম এবং ধারণা করলাম, হয়ত তিনি আমাকে তার কোন কাজে পাঠাবেন। আমি বললাম, হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি বললেন, আমি এটা চাই না যে, এ পাহাড় আমার জন্য সোনা হোক আর যদি এত অঢেল সম্পদের মালিক আমি হয়েও যাই তাহলে ঋণ পরিশোধের জন্য শুধু তিন দীনার রেখে বাকি সব খরচ করে দিব। অতঃপর এরা শুধু দুনিয়া সঞ্চয় করছে, আর কিছুই বুঝছে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে বললাম, তুমি ও তোমার কুরাইশ গোত্রীয় ভাইদের কী হয়েছে; তুমি তাদের কাছে প্রয়োজনে কেন যাও না, মেলামেশা করো না আর কেনই বা কোন কিছু গ্রহণ করো না? উত্তরে সে বলল, তোমার প্রভুর শপথ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে সাক্ষাতের পূর্বে (অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত) তাদের কাছে পার্থিব কোন কিছু চাই না এবং দ্বীন সম্পর্কেও কোন কিছু জিজ্ঞেস করব না’।[7]  অন্যত্র এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّهُ كَانَ مَعَ أَبِي ذَرٍّ فَخَرَجَ عَطَاؤُهُ وَمَعَهُ جَارِيَةٌ لَهُ فَجَعَلَتْ تَقْضِي حَوَائِجَهُ قَالَ فَفَضَلَ مَعَهَا سَبْعٌ قَالَ فَأَمَرَهَا أَنْ تَشْتَرِيَ بِهِ فُلُوسًا قَالَ قُلْتُ لَهُ لَوْ ادَّخَرْتَهُ لِحَاجَةٍ تَنُوبُكَ أَوْ لِلضَّيْفِ يَنْزِلُ بِكَ قَالَ إِنَّ خَلِيلِي عَهِدَ إِلَيَّ أَنْ أَيُّمَا ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ أُوكِيَ عَلَيْهِ فَهُوَ جَمْرٌ عَلَى صَاحِبِهِ حَتَّى يُفْرِغَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ-

আব্দুল্ল­াহ ইবনুছ ছামেত হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, তিনি আবু যার (রাঃ)-এর সাথে ছিলেন। তিনি তার সম্পদগুলো বের করলেন। এসময় তার সাথে দাসীও ছিল। তিনি সে অর্থ দ্বারা নিজ প্রয়োজন পূরণ করতে থাকলেন। তিনি বলেন, তার সাথে অতিরিক্ত সাতটি দিলেন। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন যাতে তা দ্বারা কিছু মুদ্রা কেনা হয়। আমি তাকে বললাম, যদি আপনি এগুলো প্রয়োজনে জমা রাখেন তাহ’লে উন্নয়নে কাজে লাগবে বা বাড়িতে আগত মেহেমানের জন্য খরচ করতে পারবেন’। তখন তিনি বললেন, আমার বন্ধু আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, যে স্বর্ণ বা রৌপ্যকে পাত্রে ভরে মুখ বন্ধ করে রেখে দেওয়া হ’ল তা হবে মালিকের জন্য অঙ্গার যতক্ষণ না তা আল্লাহর পথে দান করে দেওয়া হবে’।[8]  আনাস (রাঃ) বলেন, كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يَدَّخِرُ شَيْئًا لِغَدٍ ‘রাসূলুল­াহ (ছাঃ) এর অভ্যাস ছিল, তিনি আগামীকালের জন্য কিছু জমা রেখে দিতেন না’।[9]  ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাসূলুল­াহ (ছাঃ) কোন কিছু আগামী দিনের জন্য জমা করে রাখতেন না। সবই দান করে দিতেন। এটাই ছিল আল­াহ তা‘আলার উপর তাঁর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুলের নিদর্শন। তাঁর ওপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, (যেমন বিবিগণ) তাদের এক বছরের খরচ তিনি একত্রে দিয়ে দিতেন। তাঁরা প্রয়োজনে খরচ করতেন এবং আল্ল­াহর রাস্তায় দান করতেন। ফলে কখনো এমন হতো যে, ঘরে রান্না করার মতো কিছুই থাকত না। অন্য আরেক হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى ذَرٍّ قَالَ انْتَهَيْتُ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ جَالِسٌ فِى ظِلِّ الْكَعْبَةِ. فَلَمَّا رَآنِى قَالَ : هُمُ الأَخْسَرُونَ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ . قَالَ فَجِئْتُ حَتَّى جَلَسْتُ فَلَمْ أَتَقَارَّ أَنْ قُمْتُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فِدَاكَ أَبِى وَأُمِّى مَنْ هُمْ قَالَ : هُمُ الأَكْثَرُونَ أَمْوَالاً إِلاَّ مَنْ قَالَ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا  مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ وَعَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ  وَقَلِيلٌ مَا هُمْ مَا مِنْ صَاحِبِ إِبِلٍ وَلاَ بَقَرٍ وَلاَ غَنَمٍ لاَ يُؤَدِّى زَكَاتَهَا إِلاَّ جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْظَمَ مَا كَانَتْ وَأَسْمَنَهُ تَنْطِحُهُ بِقُرُونِهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلاَفِهَا كُلَّمَا نَفِدَتْ أُخْرَاهَا عَادَتْ عَلَيْهِ أُولاَهَا حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ.-

আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি কাবা গৃহের ছায়ায় উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে বললেন, কা‘বা গৃহের মালিকের শপথ, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। আবু যার (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর নিকট গিয়ে বসলাম, কিন্তু বিলম্ব না করে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম, হে আল্ল­াহর রাসূল! আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোক, তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হ’ল অধিক সম্পদের মালিকরা। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা এদিক ওদিকে (ডানে, বামে, সন্মুখে, পশ্চাতে) ব্যয় করেছে। তবে এদের সংখ্যা অনেক কম। উট ও গরু মোটা-তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট আসবে এবং তাকে ওদের শিং দ্বারা আঘাত করবে ও খুর দ্বারা পদদলিত করতে থাকবে। পদদলিত করে যখনই সর্বশেষটি চলে যাবে, তৎক্ষণাৎ প্রথমটি পুনরায় ফিরে আসবে এবং তা চলতে থাকবে লোকদের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত’।[10]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ : وَيْلٌ لِلْمُكْثِرِينَ إِلاَّ مَنْ قَالَ بِالْمَالِ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا. أَرْبَعٌ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ وَمِنْ قُدَّامِهِ وَمِنْ وَرَائِهِ.- আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) বলেন, প্রাচুর্যের মালিকদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য, তবে যারা ডানে, বাঁয়ে, সামনে পেছনে (আল্ল­াহর পথে) নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে তারা ব্যতীত’।[11] অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, كُنْتُ أَمْشِى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى نَخْلٍ لِبَعْضِ أَهْلِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ : يَا أَبَا هُرَيْرَةَ هَلَكَ الْمُكْثِرُونَ إِلاَّ مَنْ قَالَ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا. ثَلاَثَ مَرَّاتٍ حَثَى بِكَفِّهِ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ وَبَيْنَ يَدَيْهِ ، وَقَلِيلٌ مَا هُمْ. ثُمَّ مَشَى سَاعَةً فَقَالَ  يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ. فَقُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ : قُلْ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ وَلاَ مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلاَّ إِلَيْهِ  ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে মদীনার একটি বাগানে হাটছিলাম। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! সম্পদশালীরা ধ্বংস হয়ে গেল। তবে এরা ব্যতীত। তিনি তিনবার বললেন এবং তিনি হস্ততালু দ্বারা ডানে-বামে ও সামনে-পিছনে ইশারা করলেন। আর তাদের সংখ্যা খুবই কম। কিছুক্ষণ চলার পর আবার বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি তোমাকে জান্নাতের একটি ধনভান্ডারের সংবাদ দিব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তুমি বল, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ وَلاَ مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلاَّ إِلَيْهِ ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল­াবিল­া-হি ওয়ালা মালজা’ মিনাল­াহি ইল­া ইলাইহে’ (নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্ল­াহ ব্যতীত আল­াহর নিকট ছাড়া আশ্রয় স্থানও নেই’।[12] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, الأَكْثَرُونَ هُمُ الأَسْفَلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلاَّ مَنْ قَالَ بِالْمَالِ هَكَذَا وَهَكَذَا وَكَسَبَهُ مِنْ طَيِّبٍ ‘সম্পদশালীরা ক্বিয়ামতের দিন সর্বনিম্ন স্তরে উপনীত হবে। কিন্তু যারা নিজেদের মাল এদিক সেদিক (আল্লাহর পথে) খরচ করে এবং পবিত্র পন্থায় তা উপার্জন করে তারা এর ব্যতিক্রম’।[13]  আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আলক্বামা বলেন, كَانَ ابن مسعود يُعْطِي النَّاسَ عَطَايَاهُمْ ، فَجَاءَ رَجُلٌ فَأَعْطَاهُ أَلْفَ دِرْهَمٍ ثُمَّ ، قَالَ : خُذْهَا فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، يَقُولُ : إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ الدِّينَارُ وَالدِّرْهَمُ وَهُمَا مُهْلِكَاكُمْ. ‘ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তাঁর সম্পদ দান করে দিতেন। অতঃপর জনৈক লোক আসলে তাকে এক হাযার দিরহাম দিয়ে বললেন, এটি গ্রহণ কর। কারণ আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতকে দীনার ও দিরহাম ধ্বংস করে দিয়েছে এবং এ দু’টো তোমাদেরকেও ধ্বংস করে দিবে’।[14]

ক্বিয়ামতের দিন সম্পদের আধিক্য পুলছিরাত্ব অতিক্রম করার সময় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ পৃথিবীতে যার যেমন সম্পদ থাকবে সে পরিমাণ সম্পদ বহন করে জাহান্নামের উপর নির্মিত রাস্তা পার হ’তে হবে। বোঝা হালকা হ’লে সহজে তা অতিক্রম করে জান্নাতে যাওয়া যাবে। আর বোঝা ভারী হ’লে অবস্থা কঠিন হয়ে যাবে। সেজন্য রাসূল (ছাঃ) অবৈধ পন্থায় সম্পদের পিছনে ছুটতে নিষেধ করেছেন। যেমন  হাদীছে এসেছে,

عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ قَالَتْ: قُلْتُ لِأَبِي الدَّرْدَاءِ: أَلَا تَبْتَغِي لِأَضْيَافَكَ مَا يَبْتَغِي الرِّجَالُ لِأَضْيَافِهِمْ ؟ فَقَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ أَمَامَكُمْ عَقَبَةً كَئُودًا , لَا يُجَاوِزُهَا الْمُثْقِلُونَ , فَأُحِبُّ أَنْ أَتَخَفَّفَ لِتِلْكَ الْعَقَبَةِ-

উম্মে দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবুদ দারদাকে বললাম, কী ব্যাপার তুমিও কেন অমুক অমুকের মতো করে মেহমানের জন্য (দুনিয়া বা সম্পদ) তলব করো না? তখন তিনি উত্তরে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তোমাদের সামনে এমন সংকটময় গিরি রয়েছে যা (পার্থিব সম্পদের বোঝায়) ভারী লোকেরা অতিক্রম করতে পারবে না। তাই আমি ঐ গিরি অতিক্রম করার জন্য হালকা থাকতে চাই’।[15] তিনি আরো বলেন,إِنَّ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ عَقَبَةً كَئُودًا لَا يَنْجُو  مِنْهَا إِلَّا كُلُّ مُخِفٍّ ‘অবশ্যই তোমাদের সম্মুখে এমন এক ভয়ংকর গিরিপথ রয়েছে যা হালকা বোঝা ওয়ালা ছাড়া কেউ নাজাত পাবে না।[16] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى أَسْمَاءَ أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى أَبِى ذَرٍّ وَهُوَ بِالرَّبَذَةِ وَعِنْدَهُ امْرَأَةٌ لَهُ سَوْدَاءُ مُسْغِبَةٌ لَيْسَ عَلَيْهَا أَثَرُ الْمَجَاسِدِ وَلاَ الْخَلُوقِ قَالَ : فَقَالَ: أَلاَ تَنْظُرُونَ إِلَى مَا تَأْمُرُنِى بِهِ هَذِهُ السُّوَيْدَاءُ تَأْمُرُنِى أَنْ آتِىَ الْعِرَاقَ فَإِذَا أَتَيْتُ الْعِرَاقَ مَالُوا عَلَىَّ بِدُنْيَاهُمْ: إِنَّ خَلِيلِي  صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  عَهِدَ إِلَيَّ أَنَّ دُونَ جِسْرِ جَهَنَّمَ طَرِيقًا ذَا دَحْضٍ وَمَزِلَّةٍ، وَأَنَّا إِنْ نَأْتِيَ عَلَيْهِ وَفِي أَحْمَالِنَا اقْتِدَارٌ وَاصْطِبَارٌ أَحْرَى أَنْ نَنْجُوَ مِنْ أَنْ نَأْتِيَ عَلَيْهِ وَنَحْنُ مَوَاقِيرُ-

আবু আসমা হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু যার (রাঃ) রাবাযা নামক স্থানে অবস্থানকালে তার নিকট গমন করেন। তখন তার সাথে তার ক্ষুধার্ত কালো বর্ণের স্ত্রী ছিল। যার দেহে কোন যা‘ফরান বা সুগন্ধির কোন চিহ্ন ছিল না। রাবী বলেন, তিনি বললেন, তোমরা কি লক্ষ্য করবে না কী বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছে? কী নির্দেশ দিচ্ছে এই ছোট কালো মহিলাটি। সে বলে যাতে আমি ইরাকে গমন করি। আর আমি ইরাকে গমন করলে তারা দুনিয়ার সবকিছু নিয়ে আমার প্রতি ঝুঁকে পড়বে। অথচ আমার বন্ধু মুহাম্মাদ (ছাঃ) আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, জাহান্নামের পুলের সামনে একটি ধারালো পদস্খলনকারী রাস্তা রয়েছে। আর আমরা যদি সেখানে এমন অবস্থায় আগমন করি যখন আমাদের পিঠে হালকা বোঝা থাকবে তাহ’লে নাজাত পাব। ভারী বোঝা নিয়ে গমন করলে যা সম্ভব নয়’।[17]

উল্লে­খ্য যে, ছিরাত একটি ভয়াবহ পথ যা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে। লোকেরা তাদের আমল অনুপাতে তার পার হয়ে জান্নাতে যাবে। আবার কেউ জাহান্নামে পড়ে যাবে। ছিরাত সর্বপ্রথম অতিক্রম করবেন শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। তিনি বলেন, وَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَىْ جَهَنَّمَ فَأَكُونُ أَنَا وَأُمَّتِى أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُ وَلاَ يَتَكَلَّمُ يَوْمَئِذٍ إِلاَّ الرُّسُلُ وَدَعْوَى الرُّسُلِ يَوْمَئِذٍ اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ. وَفِى جَهَنَّمَ كَلاَلِيبُ مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ هَلْ رَأَيْتُمُ السَّعْدَانَ. قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ : فَإِنَّهَا مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ غَيْرَ أَنَّهُ لاَ يَعْلَمُ مَا قَدْرُ عِظَمِهَا إِلاَّ الله تَخْطَفُ النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ فَمِنْهُمُ الْمُؤْمِنُ بَقِىَ بِعَمَلِهِ وَمِنْهُمُ الْمُجَازَى ‘ইত্যবসরে জাহান্নামের উপর দিয়ে ছিরাত (রাস্তা) স্থাপন করা হবে। আর আমি ও আমার উম্মাতই হব প্রথম এ পথ অতিক্রমকারী। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত অন্য কেউ মুখ খোলারও সাহস করবে না। আর রাসূলগণও কেবল এ দো’আ করবেন, হে আল্লাহ! নিরাপত্তা দাও, নিরাপত্তা দাও। আর জাহান্নামে থাকবে সা‘দান বৃক্ষের কাটার মত অনেক কাঁটাযুক্ত লৌহ দন্ড। তোমরা সা‘দান বৃক্ষটি দেখেছ কি? ছাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, দেখেছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তা সা‘দান বৃক্ষের কাটার মতই, তবে সেটা যে কত বিরাট তা আল্ল­াহ ব্যতীত কেউ জানেন না। মানুষকে তাদের আমল অনুযায়ী পাকড়াও করা হবে। কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, আর কেউ আমলের শাস্তি ভোগ করবে’।[18]

(চলবে)

 [লেখক : গবেষণা সহকারী, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ]


[1]. তিরমিযী হা/২৪৭৬; মিশকাত হা/৫৩৬৬; ছহীহাহ হা/২৩৮৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[2]. বাযযার হা/১৯৪১;  মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৮২৭৮; ছহীহুত তারগীব হা/২১৪১, ৩৩০৮।

[3]. তাবারাণী কাবীর হা/১০২০; মিশকাত হা/১৮৮৫; ছহীহাহ হা/২৬৬১; ছহীহুত তারগীব হা/৯২১।

[4]. আহমাদ হা/১৬০৩১; তাবারী, তাহযীবুল আছার ৬২৯; ছহীহাহ হা/২৪৪৮-এর আলোচনা।

[5]. বাযার হা/৪২২৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮২৮০; ছহীহাহ হা/২৪৮৬।

[6]. আহমাদ, আয-যুহুদ ১/১৯৭; আল-মাতালিবুল আলিয়া হা/৩২৮৩; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৪৫৮৭; ছহীহাহ হা/২৩৮৪।

[7]. মুসলিম হা/৯৯২; আহমাদ হা/২১৪৬২; ইবনু হিববান হা/৩২৫৯।

[8]. আহমাদ হা/২১৪২১; মাজমা‘উয যাওয়য়েদ হা/১৭৭৬২; ছহীহুত তারগীব হা/৯২৯।

[9]. তিরমিযী হা/২৩৬২; ছহীহুত তারগীব হা/৯৩০।

[10]. বুখারী হা/৬৬৩৮; মুসলিম হা/৯৯০।

[11]. ইবনু মাজাহ হা/৪১২৯; ছহীহাহ হা/২৪১২।

[12]. আহমাদ হা/৮০৭১; ছহীহাহ হা/২৪১২; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৬১।

[13]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৩০; আহমাদ হা/২১৪৩৭; ছহীহাহ হা/১৭৬৬; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৬০।

[14]. মুসনাদে বাযযার হা/১৬১২; ছহীহুত তারগীব হা/৩২৫৮।

[15]. হাকেম হা/৮৭১৩; মিশকাত হা/৫২০৪; ছহীহাহ হা/২৪৮০।

[16]. ছহীহাহ হা/২৪৮০।

[17]. আহমাদ হা/২১৪৫৪; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৭৮।

[18]. বুখারী হা/৮০৬; মুসলিম হা/১৮২; মিশকাত হা/৫৫৮১।



আরও